JU Finanacial Crisis: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সংকটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হয়ে সাহায্য চেয়ে পোস্ট ৯২ বছর বয়সী প্রাক্তনীর

গ্লোবাল যাদবপুর ইউনিভার্সিটি অ্যালুমনাই ফাউন্ডেশনের পেজে তিনি ২৩ অক্টোবর একটি ভিডিও পোস্ট করেন।
Jadavpur_University
Jadavpur_University

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: নিজের শিক্ষা পরিষ্ঠানের আর্থিক সংকটের (JU Financial Crisis) কথা জানতে পেরে ফেসবুকে আর্থিক সাহায্যের অনুরোধ করলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯২ বছর বয়সী প্রাক্তনী স্যানফ্রান্সিস্কোর বাসিন্দা রমেন চক্রবর্তী (Ramen Chakrabarti)। ১৯৫৪ সালে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে স্নাতক হন রমেন বাবু। তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যম থেকে তিনি জানতে পারেন ল্যাবরেটারি রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে প্রয়োজনীয় টাকা নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের।

গ্লোবাল যাদবপুর ইউনিভার্সিটি অ্যালুমনাই ফাউন্ডেশনের পেজে তিনি ২৩ অক্টোবর একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে লেখেন, "সংবাদমাধ্যম থেকে আমি জানতে পারি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটারি রক্ষণাবেক্ষণের টাকা নেই। শুধু শিক্ষকদের মায়নে দেওয়ার মতো সামর্থটুকু আছে। আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে আমার বিশ্ববিদ্যালয় এটা ভেবে কান্না পাচ্ছে।" 

তিনি আরও লেখেন। "এরকমটা কেন হবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের কত ছাত্র-ছাত্রী গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, যারা নিজ জীবনে প্রতিষ্ঠিত এবং প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। আমি যাদবপুরের সব ছাত্র-ছাত্রীর কাছে অনুরোধ করতে চাই সবাই নিজের সাধ্যমতো অর্থ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে দাঁড়ান। আমার দেখা বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে যাদবপুর অন্যতম। যাদবপুর আপনাদের দুহাত ভরে দিয়েছে, এবার আপনাদের পালা।" 

আর দু'মাস পরেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সমাবর্তন সভা (Jadavpur University Convocation) অনুষ্ঠিত হবে। তবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় যে আর্থিক সংকটের (Extreme fund crunch) মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তাতে সভার আয়োজন নিয়ে মাথায় হাত পড়েছে কর্তৃপক্ষের। এই নিয়ে রাজ্য সরকারকেও চিঠি লিখেছে কর্তৃপক্ষ। অতিমারির জেরে গত দু'বছর বন্ধ থাকার পর এ বছর ডিসেম্বর মাসে আবার হতে চলেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন। তবে ধাপে ধাপে কমেছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বরাদ্দ। ব্যাপক আর্থিক সংকটের মধ্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। এ বছরে বার্ষিক সমাবর্তন হলেও হবে না বিশেষ বা সাম্মানিক সমাবর্তন। এমনটাই জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রতিবারের মতো এ বারে সমাবর্তন সভা বড় পরিসরে করা যাবে কি না, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে অধ্যাপকদের মনে। ২০১৭ সালের পর থেকেই ধাপে ধাপে কমেছে আর্থিক অনুদান । এরপর করোনা সংক্রমণের জেরে সেই আর্থিক অনুদানের পরিমাণ আরও হ্রাস পায়। এর ফলে থমকে গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়নের কাজ। শুধু তাই নয়, করোনা কালে যখন একটানা দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়, তখন আর্থিক অনুদান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যার সমুখীন হতে হয়েছিল গবেষণার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীদেরও।

আরও পড়ুন: "আমি ভারতের খুব বড় ভক্ত", বললেন চিনা রাষ্ট্রদূত

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, "যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন বাদ দিয়ে বার্ষিক খরচ হয় প্রায় ৪৫ কোটি টাকা। চলতি বছরে দুই ধাপে ১২ কোটি টাকা পেয়েছে কর্তৃপক্ষ। তৃতীয় ধাপের টাকা এলে এই সংখ্যাটা ১৮ কোটিতে গিয়ে দাঁড়াবে। তাই এই আর্থিক সংকটের মধ্যে কত ভালো ভাবে সমাবর্তন সভা করা যাবে, সেই বিষয়টা নিয়েও আমাদের মনে একটা আশংকা রয়েছে। কারণ গত দুবছর করোনা কালের সমাবর্তন সভা করা যায়নি ৷ স্বাভাবিকভাবেই এই বছর যাতে খুব ভালো করে এই সমাবর্তন সভা করা যায় সেটাই আমাদের ইচ্ছা।" 
  
তিনি আরও বলেন, "যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোড রয়েছে, তাদের বৈঠকে উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়ে যেন আটকে থাকা বরাদ্দ টাকা দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার চূড়ান্ত বিভাগ হচ্ছে এই কোড যেখানে প্রতিটি দফতরের প্রধানরা থাকেন।"

চলতি বছরে বেতন বাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজ্য সরকারি ব্যয় বরাদ্দ ২৩ শতাংশ কমেছে । গবেষণার খাতেও টাকা বন্ধ হয়েছে। ডিএসটির মতো প্রজেক্টের ক্ষেত্রে শর্ত চাপানো হয়েছে । জানানো হয়েছে যে, বাজেটের ২৫ ভাগ ব্যয়ভার বহন করতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, "যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারকে এই বিষয়টি জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি খুব দ্রুতই আমাদের আবেদনে সাড়া দেবে সরকার।" প্রসঙ্গত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সমাবর্তনের দুটি ভাগ থাকে। একটি হল স্পেশাল বা বিশেষ সমাবর্তন । আরেকটি হল সাধারণ সমাবর্তন। এ বছর বিশেষ সমাবর্তন করা হবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য, এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারগুলির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা প্রক্তনীদের থেকে আর্থিক সহায়তা পাওয়ার আশায় অ্যালুমনি সেল তৈরি করা হয়েছিল ৷

 ইঞ্জিনিয়ারিং এবং গবেষণার ক্ষেত্রে উপরের তালিকায় রয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। তবে বেশ কয়েকদিন ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিক সংকটে ভুগছে। ফলে কীভাবে এই র‌্যাঙ্কিং ধরে রাখা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সাধারণত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্তনীদের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য চাইলেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এখনও পর্যন্ত প্রক্তনীদের কাছ থেকে পরিকল্পিতভাবে আর্থিক সাহায্য চায়নি। তবে আর্থিক সংকট মেটাতে এখন পরিকল্পিতভাবেই সেই পথে এগোতে চাইছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, ‘প্রাক্তনীরা বিভিন্নভাবে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছেন। মুম্বই, সিঙ্গাপুর আমেরিকায় থাকা প্রাক্তনীরা সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছেন।’ উপাচার্যের আশায় এভাবে প্রক্তনীদের সহায়তায় যাদবপুর এগিয়ে যাবে।  

দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।

 

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles