তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
করোনার (Covid 19) নতুন প্রজাতি শক্তি বাড়িয়েছে। আর তাতেই ফের প্রশ্নের মুখে সরকারি পরিকাঠামো! দিন দুয়েক আগে উত্তর চব্বিশ পরগনার কামারহাটির এক সত্তরোর্ধ্ব নাগরিক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। নানান শারীরিক জটিলতা থাকায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন চিকিৎসক। কিন্তু পরিবারের অভিযোগ, সাগর দত্ত হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁদের জানানো হয়, ওখানে চিকিৎসা হবে না। তাঁদের বেলেঘাটা আইডি-তে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। তারপরে রোগীকে বেলেঘাটা আইডি-তে নিয়ে গেলে জানানো হয়, আসন নেই। অপেক্ষা করতে হবে। করোনা আক্রান্তকে গাড়িতে বসিয়েই দীর্ঘক্ষণ হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষা করে রোগীর পরিবার। দিনভর ভোগান্তির পরে করোনা রোগীকে ভর্তি নেওয়া হয়।
কী জানাচ্ছে চিকিৎসক মহল?
এই ঘটনায় চিকিৎসক মহল জানাচ্ছে, মহামারির একের পর এক ঢেউ পেরিয়েও পরিকাঠামো গড়তে পারল না রাজ্য সরকার। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত দেড় সপ্তাহে করোনা (Covid 19) অ্যাক্টিভ রোগী কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। দু'সপ্তাহ আগে অ্যাক্টিভ করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ১৩ জন। কিন্তু গত চব্বিশ ঘণ্টায় করোনা অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা হয়েছে ৩০৬ জন। করোনার জন্য নির্দিষ্ট বিভাগ সপ্তাহ দুয়েক আগে ফাঁকা থাকলেও, এই কদিন প্রায় শ'খানেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
সমস্যা কোথায়?
স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছে, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত শয্যা নেই হাসপাতালে। অন্য রোগের চিকিৎসা করাতে হাসপাতালে থাকা রোগীর করোনা হলে, কোথায় তার চিকিৎসা হবে, সে নিয়েও নানান জটিলতা হয়। কীভাবে তা সমাধান করা যাবে, সে উত্তর এখনও স্পষ্ট নয়। করোনা (Covid 19) সংক্রমণ বাড়লেই প্রশাসনের শীর্ষ মহল জানায়, বেড বাড়ানো হল। কিন্তু সরকারি হাসপাতালের যে পরিকাঠামো, তাতে অন্যান্য পরিষেবা স্বাভাবিক রেখে কীভাবে বেড বাড়ানো হবে, সেই পরিকল্পনা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অস্বচ্ছ থাকে। তার ফলে একদিকে যেমন হাসপাতালের নিয়মিত স্বাভাবিক পরিষেবায় সমস্যা হয়, আরেক দিকে করোনা রোগীদের ভর্তি নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়।
রোগীর পরিজনদের অভিজ্ঞতা কী?
করোনা রোগীর ভর্তি নিয়ে একাধিক ভোগান্তির অভিযোগ তুলেছেন রোগীর (Covid 19) পরিজনেরা। মহামারির তিনটি ঢেউ পেরিয়েও ভোগান্তির অভিযোগ অব্যাহত। করোনা আক্রান্তকে কোন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা যাবে, সে সম্পর্কে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইটে তথ্য থাকে। কিন্তু রোগীর পরিজনদের অভিজ্ঞতা বলছে সম্পূর্ণ অন্য কথা। তাঁরা জানাচ্ছেন, ওয়েবসাইটে যে হাসপাতালে যত সংখ্যক কোভিড আসন ফাঁকা দেখায়, হাসপাতালে গিয়ে কিন্তু জানা যায়, বেড নেই। তাই অন্য হাসপাতালে যেতে হবে। করোনা আক্রান্ত রোগীকে নিয়েই এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটতে হয়। করোনা সংক্রমণ বাড়তেই সেই প্রবণতা শুরু হয়ে গিয়েছে।
বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কতখানি প্রস্তুত?
এ রাজ্যে চিকিৎসা পরিষেবার জন্য একটা বড় অংশ বেসরকারি হাসপাতালের উপরই নির্ভর করে। শহরের একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানাচ্ছে, তারা করোনা (Covid 19) মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরি হাসপাতালের সিইও রূপক বড়ুয়া জানান, বহু রোগীই অন্য রোগের চিকিৎসা করাতে হাসপাতালে আসছেন। তারপরে করোনা পরীক্ষা করে জানা যাচ্ছে, তিনি সংক্রমিত। ফলে, উপসর্গহীন রোগী যে বাড়ছে, সেই আন্দাজ করা যাচ্ছে। সেই মতো প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। মনিপাল হাসপাতালের অধিকর্তা অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, "কয়েক সপ্তাহ আগেও একজনও করোনা রোগী ছিলেন না। এখন কিন্তু কয়েকজন ভর্তি আছেন। সেই মতো আমরা প্রস্তুতি রাখছি, রোগী পরিষেবা যাতে ঠিকমতো দেওয়া যায়।"
স্বাস্থ্যভবনের কর্তারা কী বলছেন?
স্বাস্থ্যভবনের কর্তারা অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, সরকারি ওয়েবসাইট নিয়মিত আপডেট (Covid 19) করা হবে। যাতে মানুষ কোন হাসপাতালে গেলে পরিষেবা পাবে, সে বিষয়ে জানতে পারেন। কোনও বিভ্রান্তি যাতে না ছড়ায়, সে দিকেও নজর দেওয়া হবে। তারপরেও কোথাও পরিষেবা নিয়ে কোনও অভিযোগ উঠলে, তা খতিয়ে দেখা হবে। তবে সরকারি হাসপাতাল প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours