তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল
বিশ্ব জুড়ে বদলে যাচ্ছে বয়স্কদের সমস্যা। শুধু শরীর নয়, একাধিক মানসিক সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। আবার এমন কিছু সমস্যা রয়েছে, যা শরীর আর মন দুটো দিকেরই ক্ষতি করছে। তেমনই এক স্বাস্থ্য সমস্যা হল অ্যালজাইমার্স। ২১ সেপ্টেম্বর ছিল বিশ্ব অ্যালজাইমার্স সচেতনা দিবস (World Alzheimer's Day)। এই উপলক্ষ্যে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, প্রথম থেকেই সতর্কতা বড় বিপদ এড়াতে পারে। ভালো মানের জীবন যাপনের জন্য প্রথম উপসর্গ দেখা দিলেই সচেতন হওয়া জরুরি।
অ্যালজাইমার্স কী?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, অ্যালজাইমার্স এক ধরনের স্মৃতিশক্তি হারানোর সমস্যা। মানসিক, স্নায়বিক একাধিক সমস্যার কারণে মস্তিষ্কে এই সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত ষাটোর্ধ্ব মানুষদের এই রোগ বেশি হয়। নিত্যদিনের ঘটনা এই রোগে আক্রান্তরা মনে রাখতে পারেন না। সাধারণ ঘটনা এমনকি নিজের পরিবারের সদস্যদের চিনতেও তাঁদের অসুবিধা হয়। আর এই সমস্যার জেরে তাঁদের শারীরিক ক্ষমতাও কমতে থাকে। ফলে, তাঁদের জীবন যাপনের মান কমে (World Alzheimer's Day)।
ভারতে অ্যালজাইমার্স আক্রান্ত কতজন?
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভারতে অ্যালজাইমার্স সমস্যা বাড়ছে (World Alzheimer's Day)। প্রায় ৮০ লাখের বেশি প্রবীণ নাগরিক অ্যালজাইমার্সের সমস্যায় ভুগছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রথম থেকে রোগ নির্ণয় করতে না পারার জেরে তাঁদের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গিয়েছে।
কোন ধরনের উপসর্গ এই রোগের জানান দেয়?
স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া এই রোগের অন্যতম লক্ষণ হলেও একাধিক উপসর্গ রোগের ইঙ্গিত দেয়। এমনই জানাচ্ছেন চিকিৎসক মহল। তাঁরা জানাচ্ছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই রোগে আক্রান্তদের ব্যবহারের পরিবর্তন দেখা যায়। অতিরিক্ত রাগ, কাছের মানুষদের অকারণে দুর্ব্যবহার করা, মানসিক অবসাদে ভোগার মতো উপসর্গ এই রোগের জানান দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগী একাকিত্বে ভোগেন। ফলে, সমস্যা আরও বেড়ে যায়। তাছাড়া অ্যালজাইমার্সের (World Alzheimer's Day) মতো সমস্যা দেখা দিলে পেশির শক্তি কমতে থাকে। স্নায়ু ও পেশির একাধিক সমস্যা হতে থাকে। হাত-পা কাঁপতে থাকে। বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে অসুবিধা হয়। অনেক সময় লেখার ক্ষমতা থাকে না। এছাড়াও খুব অল্প দিন আগের ঘটে যাওয়া কোনও ঘটনা কিংবা খুব পরিচিত মানুষের নাম মনে রাখতে না পারার মতো সমস্যা প্রবীণ মানুষদের বারবার হলে সতর্ক থাকা জরুরি।
কীভাবে মোকাবিলা সম্ভব?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, অ্যালজাইমার্সের (World Alzheimer's Day) মতো সমস্যা থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি সম্ভব নয়। কিন্তু এই ধরনের সমস্যা যেন বাড়াবাড়ি না হয়, সেটা নিশ্চিত করা যেতে পারে। তাই এক্ষেত্রে রোগী ও কেয়ার গিভার, দুজনের যত্ন প্রয়োজন।
অ্যালজাইমার্স আক্রান্তের সব সময় দেখভালের একজন মানুষ প্রয়োজন। আর তিনিই হলেন কেয়ার গিভার। তাঁর যত্ন সমানভাবে জরুরি। অ্যালজাইমার্স আক্রান্ত যাকে সবচেয়ে বেশি ভরসা করেন, তিনিই হন কেয়ার গিভার। সাধারণত পরিবারের কোনও সদস্য কেয়ার গিভারের দায়িত্ব পালন করেন। তাই রোগী ও কেয়ার গিভারের সম্পর্ক যত গভীর হবে, সমস্যা তত কম হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চিকিৎসকদের পরামর্শ, নিয়মিত খবরের কাগজ পড়ার অভ্যাস করতে হবে। অ্যালজাইমার্স আক্রান্তদের পড়ার অভ্যাস মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ধরে রাখতে বিশেষ সাহায্য করে। তাই আক্রান্তের নিয়মিত বই এবং খবরের কাগজ পড়া দরকার। তাছাড়া, খুব সাধারণ হিসাব, যেমন সহজ যোগ, বিয়োগ নিয়মিত করা দরকার। এতে আক্রান্তের মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকবে।
নিয়মিত বাইরে যাওয়া, অন্তত এক ঘণ্টা খোলা মাঠ কিংবা পার্কে সময় কাটানো দরকার। তাতে আক্রান্তের একাকিত্ব বোধ কাটবে। কথা বলার ক্ষমতা বজায় থাকবে।
তবে, আক্রান্তের এই যত্ন ও থেরাপির পাশাপাশি কেয়ার গিভারের যত্ন নেওয়া জরুরি। কারণ, সব সময় আক্রান্তকে ছোট ছোট জিনিস মনে করিয়ে দিতে হয়। খাবার খাওয়া, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নাম ও পরিচয় বারবার দেওয়ার কাজও করতে হয়। অবিরত এই খেয়াল রাখার জন্য কেয়ার গিভারের মধ্যেও অবসাদ, ক্লান্তির মতো নানান সমস্যা দেখা দেয়। তাই তার প্রয়োজনীয় বিশ্রাম এবং বিনোদন জরুরি। যাতে একঘেয়েমি গ্রাস না করে।
আর এই সম্পর্কে সচেতনতা প্রসারের জন্য একাধিক কর্মশালার প্রয়োজন বলে জানাচ্ছে বিশেষজ্ঞ মহল।
DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours