মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: গরু পাচার কাণ্ডে ধৃত বীরভূম জেলায় তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal) এখন তিহার জেলে রয়েছেন। দিল্লিতে এই মামলার বিচার চলছে। এরমধ্যে অনুব্রতের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত বোলপুর শহরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার শিবনাথ রায় সহ চার জনকে দিল্লিতে তলব করেছে ইডি। ৩ অক্টোবর থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে দিল্লিতে ইডির সদর দফতরে তাঁদের হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। যা নিয়ে বীরভূম জেলাজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে।
কেন ইডি-র তলব? (Anubrata Mondal)
পাঁচ বছর আগে রথযাত্রার দিন বোলপুর শহর তৃণমূলের কার্যালয়ের উদ্বোধন করেছিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal) । তিন তলা ভবনটির অধিকাংশ ঘর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। মেঝেয় দামি মার্বেল। রয়েছে ফলস সিলিং। বিল্ডিং জুড়ে বসানো রয়েছে সিসি ক্যামেরা। ঝাঁ চকচকে পার্টি অফিস দেখে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একবার অনুব্রত উত্তর দিয়েছিলেন, '২০১৩ সালে আমি এই বাড়ি ন্যায্য মূল্যে কিনেছিলাম।' এবার সেই বাড়িই এ বার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) নজরে! কার টাকায় এই বিলাসবহুল দলীয় অফিস তৈরি হল, তারই তদন্তে কেন্দ্রীয় সংস্থা। সূত্রের খবর, ভবন তৈরিতে কয়েক কোটি টাকা খরচের উৎস কী, তা তদন্ত করে দেখতে চায় ইডি। সেই সূত্রেই কোন পথে এত টাকা এসেছিল, মূলত সেটা জানতেই এই চার জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে ইডি। ওই দলীয় কার্যালয়ে থাকা মা কালীর বিপুল অঙ্কের গয়নাও তদন্তকারীদের নজরে রয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, বোলপুরের বিশাল দলীয় কার্যালয়টি প্রথমে তৃণমূল নেতা তথা কাউন্সিলার শিবনাথ রায় এবং বোলপুর পুরসভার তিন কর্মীর নামে কেনা হয়েছিল। পরে অনুব্রতের তৈরি করে দেওয়া ট্রাস্টের নামে সেটি হস্তান্তর করা হয়। শিবনাথ-সহ ওই চার জনকেই তলব করা হয়েছে।
অনুব্রত (Anubrata Mondal) ঘনিষ্ঠ তৃণমূল কাউন্সিলার কী বললেন?
তৃণমূল কাউন্সিলার শিবনাথ বলেন, ইডির সমন পেয়েছি। তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় কেনার সময় অনুব্রত আমাদের কয়েক জনকে বেশ কিছু জায়গায় সই করিয়েছিলেন। আমার মনে হয় তার জন্যই ডেকে পাঠানো হয়েছে। তদন্তে সবরকমভাবে সহযোগিতাও করব। তবে এত তাড়াতাড়ির মধ্যে দিল্লি যাওয়া সম্ভব নয় বলে ই-মেল করে জানিয়েছি ইডি-কে।
রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে তরজা
সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, যা কালো টাকা বা যা বেআইনি সম্পদ, তার সবটা অনুব্রত একা নয়, সবাই মিলেই করেছেন। সুতরাং সত্য উদ্ঘাটন করতে গেলে সকলকেই জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। বিজেপির বোলপুর সংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডলের দাবি, অনুব্রতের অনুগামীরা কালো টাকার সঙ্গে যুক্ত আছেন। শুধু সময়ের অপেক্ষা। আরও বহু জনকে ডাকবে। তৃণমূলের জেলা সহ- সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, বোলপুরের জেলা পার্টি অফিসের ট্রাস্টি সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ওই চার জনকে ডাকা হয়েছে বলে জেনেছি। বিরোধীরা ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন।
অন্যদিকে, ইডি-র নজরে পার্টি অফিস থাকার পাশপাশি নানুরের হোসেনপুরের পরে এ বার বোলপুরের বাহিরি-পাঁচশোয়া এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে। সেখানে অনুব্রতের নাম ও ছবি আগেই মোছা হয়েছিল বলে খবর। সেই চুনকাম করা অংশের উপরে সম্প্রতি সাঁটানো হয়েছে তৃণমূলে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও নবনির্বাচিত জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখের ছবি। এমন ঘটনায় ফের তৃণমূলের অন্দরে চর্চা শুরু হয়েছে, দলের জেলা সভাপতি থাকা সত্ত্বেও কি অনুব্রতের অস্তিত্ব ধীরে ধীরে মুছে ফেলতে চাইছে দল?
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours