Ashutosh Mukherjee: বিচারপতির পাশাপাশি ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কারকও, জন্মবার্ষিকীতে আশুতোষ-স্মরণ

আশুতোষ যখন বিশ্ববিদ্য়ালয়ের কর্মভার গ্রহণ করেন বাংলায় তখন স্বদেশীদের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন চলছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কার চেয়েছিলেন।
1606563128_5fc2353861013_ashutosh-mukherjee
1606563128_5fc2353861013_ashutosh-mukherjee

 মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে (Calcutta University) সারা বিশ্বের মানচিত্রে (World map) স্থান করে দিয়েছিলেন 'বাংলার বাঘ' আশুতোষ মুখোপাধ্যায় (Ashutosh Mukherjee)। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাণপুরুষ ছিলেন তিনি। ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থায় লালিত বাঙালিদেরকে ভারতীয় ঐতিহ্য ও বঙ্গসংস্কৃতিতে শিক্ষা দেওয়ার কথা বলেছিলেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। ১৮৬৪ সালের ২৯ জুন জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা গঙ্গাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ছিলেন যশস্বী ডাক্তার। সে কালের কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারি ছাত্রদের বাংলায় লেখা বইয়ের অভাব দেখে প্র্যাকটিসের ফাঁকেই লিখেছিলেন বেশ কয়েকটা বই।  তাঁর প্রেরণাতেই ছোট থেকে বাংলা ভাষার প্রতি ভালবাসা জন্মায় আশুতোষের। 

স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তাঁর কর্মজীবনে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। আশুতোষের জন্ম বৌবাজারের মলঙ্গা লেনের এক ভাড়াটিয়া বাড়িতে। তবে তাঁদের পরিবারের আদি বসবাস ছিল হুগলি জেলার জিরাট-বলাগড় গ্রামে। আগাগোড়া মেধাবী ছাত্র ছিলেন আশুতোষ।  ১৮৭৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। তিনি ১৮৮৪ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি ও ১৮৮৫ সালে গণিতে এম.এ পাস করেন। পরের বছরে পদার্থবিদ্যাতেও এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৮৮৬ সালে প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি অর্জন করেন। আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষ জ্যামিতির ওপর তার কাজের স্বীকৃতি দেন। ১৮৮৮ সালে তিনি বি.এল. ডিগ্ৰি লাভ করেন এবং তখন থেকেই আইন ব্যবসা শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি অ্যাকাডেমিক পড়াশোনাও চালিয়ে যান। ১৮৮০ থেকে ১৮৯০ সালের মধ্যে বিভিন্ন জার্নালে তিনি উচ্চতর গণিতের উপর প্রায় বিশটির মতো প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। ১৯০৪ সালে তিনি কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতির পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯০৬ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদে অধিষ্ঠিত হন। ১৯০৮ সালে তিনি 'ক্যালকাটা ম্যাথেমেটিক্যাল সোসাইটি' প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১৪ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের  দায়িত্ব পালন করেন।

আরও পড়ুন: "দ্রৌপদীদেবীর জয় নিশ্চিত, তা সত্ত্বেও...", মমতাকে চিঠি বঙ্গ বিজেপির

 আশুতোষ যখন বিশ্ববিদ্য়ালয়ের কর্মভার গ্রহণ করেন বাংলায় তখন স্বদেশীদের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন চলছে। অভিযোগ উঠেছিল, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রিত ঔপনিবেশিক শিক্ষা পুঁথিগত, কেতাবি ও অবৈজ্ঞানিক এবং এই শিক্ষাব্যবস্থা ব্রিটিশ রাজের জন্য শুধু কেরানিই তৈরি করে। আশুতোষ এ মত মেনে নেননি। তিনিও স্বাধীনচেতা ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মানুষই ছিলেন। তাঁর মতে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত পাশ্চাত্য শিক্ষাকেও জাতীয় স্বার্থে ব্যবহার করা সম্ভব। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কার চেয়েছিলেন। একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাঁচানোর জন্য সেই সময়ে তাঁর মতো এক ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন ছিল। তবে কখনওই ব্রিটিশ শাসকদের দাবি মেনে নেনি তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচি সংস্কার করলেন, স্নাতকোত্তরে খুললেন নতুন নতুন বিষয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব, ফলিত রসায়ন, প্রাচীন ভারত ও ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃতির মতো বিষয়ের শুরু তাঁর চেষ্টাতেই। নিয়ে এলেন উপযুক্ত শিক্ষক। পদার্থবিদ্যায় সি ভি রমন, রসায়নে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় এলেন পড়াতে। গণেশ প্রসাদ, মেঘনাদ সাহা, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, হাসান সুরাবর্দি সকলেই ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়কে এম এ পাশ করার পরেই এম এ ক্লাসে পড়ানোর ভার দিয়েছিলেন আশুতোষ। দর্শনের চেয়ার-অধ্যাপক করে বসিয়েছিলেন এক দক্ষিণী তরুণকে— নাম সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ। শিক্ষার সংস্কারে আদর্শ শিক্ষক ছিলেন স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়।  ১৯২৩ সালে কলকাতা হাইকোর্ট ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। ১৯২৪ সালের ২৫ মে পাটনায়  প্রয়াত হন 'বাংলার বাঘ'।  

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles