মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সিকিমে বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গও। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিলিগুড়ি, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি। তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা হারিয়েছেন ভিটেমাটি। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর দরকার ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি সে পথে হাঁটেননি। বরং, তাঁর দলের নেতানেত্রীরা এখন রাজভবন অভিযানের নামে রাজনীতি করতে ব্যস্ত। জলপাইগুড়ির দুর্গতদের দেখতে দিল্লি থেকে সরাসরি উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (CV Ananda Bose)। উত্তরবঙ্গের বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। তবে, রাজ্যপালের মতো রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে গেলেও সেখানে রাজ্যের কোনও মন্ত্রী যাওয়া তো দূরের কথা জেলার পুলিশ সুপার এবং জেলাশাসককে দেখা যায়নি। স্থানীয় থানার পুলিশ কর্মীরা ছিলেন। বিপর্যয়ের সময় শাসক দলের মন্ত্রী থেকে আমলাদের এই ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
দুর্গতদের জন্য এক মাসের বেতন দান করলেন রাজ্যপাল (CV Ananda Bose)
রাজ্যপাল (CV Ananda Bose) এদিন বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে সরাসরি হরপা বানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলি পরিদর্শন করতে যান। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সেবক কালিঝোরা সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শনে করেন। কালিঝোরায় তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, 'ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে এই অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেকোনও সময় আসতে পারে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে গেলে এ ধরনের বিপর্যয় ঘটবে। উদ্ধারকার্য চলছে। এখন সমালোচনা করার সময় নয়।' পরে, তিনি সোজা জলপাইগুড়ি জেলার উদ্দেশ্যে রওনা হন। তিনি আটমাইল এলাকায় ধস বিধ্বস্ত এলাকাগুলি ঘুরে দেখেন। রাজ্যপাল দুর্গতদের জন্য নিয়ে আসেন মিষ্টির প্যাকেট। সকলকে মিষ্টি বিতরণ করেন তিনি। রংধামালি ক্যাম্পে আশ্রিত দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন। রাজ্যপালকে দেখে নিজেদের অবস্থার কথা জানান দুর্গতরা। দুর্গতদের এক হাজার টাকা করে অ্যাকাউন্টে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাজ্যপাল। বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ কোনও সাহায্য পাচ্ছেন না সে কথা রাজ্যপালের কাছে দুর্গতরা নালিশ জানান। একশো দিনের কাজ নিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তোলেন। কেন একশো দিনের কাজ বন্ধ? কেনই বা তাঁরা টাকা পাচ্ছেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। রাজ্যপাল তাঁদের অভাব অভিযোগ শুনেছেন। দুই সরকারের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাজ্যপাল। মুখ্যসচিবের কাছে বন্যা কবলিত এলাকার রিপোর্ট তলব করেছিলেন রাজ্যপাল। বোসের কাছে রিপোর্টও পাঠিয়েছেন মুখ্যসচিব। সিকিমের রাজ্যপালের সঙ্গেও কথা বলেছেন বোস। ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে রাজ্যপাল তিস্তার বাঁধ পরিদর্শন করেন। সেখানে দাঁড়িয়ে রাজ্যপাল জানিয়ে দেন, দুর্গতদের জন্য তিনি তাঁর এক মাসের বেতন দান করবেন।
তিস্তায় ভেসে এল ১৫টি দেহ, হতবাক এলাকাবাসী
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জলপাইগুড়ি জেলায় তিস্তার জলে ভেসে আসতে শুরু করেছে দেহ। জেলায় মোট ১৫ টি মৃতদেহ উদ্ধারের খবর পাওয়া গেছে। ময়নাগুড়ি থানা এলাকা থেকে ১২ জন, মালবাজার থানা এলাকা থেকে ১ টি এবং ক্রান্তি ফাঁড়ি এলাকা থেকে ২ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। এদিন সকালে ময়নাগুড়ি দক্ষিণ ধর্মপুর এলাকার বাসিন্দারা তিস্তার চর এলাকায় নিজেদের কাজে গিয়ে মৃত দেহগুলি দেখতে পান। তারাই খবর দেন পুলিশে। ময়নাগুড়ি থানার পুলিশ এসে দেহগুলি উদ্ধার করে। সেগুলিকে ময়না তদন্তের জন্য জলপাইগুড়ি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এলাকার বাসিন্দা শ্যামল রায় বলেন, দেহগুলি দেখে তাদের অত্যন্ত খারাপ লাগছিল। এই মৃতদেহ গুলির মধ্যে কিছু দেহ সেনাবাহিনীর নিঁখোজ হওয়া জওয়ানদের রয়েছে। বাকীরা সাধারণ নাগরিক। এদিন মোতিয়ার চর এলাকা থেকে তিনটি রকেট লঞ্চার উদ্ধার হয়। সেগুলিকে তিস্তা নদীতেই পুঁতে দেওয়া হয়। তিস্তার ঘোলাটে জল গ্রাস করেছে সব কিছু। চটি, জামাকাপড়, বাসনপত্র, রান্নার গ্যাসের অর্ধেক সিলিন্ডার। তিস্তা পাড়ের দু'পাড়ের বাসিন্দাদের জীবিকা মূলত নির্বাহ হয় চাষাবাদ আর চা বাগানে কাজ করে। সঙ্গে বাড়িতে থাকা পোষ্য গরু, ছাগল, হাঁস পালন করে। এখন সবই তিস্তার গ্রাসে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours