মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মাস দুয়েক আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিল কলকাতা। কিন্তু টনক নড়েনি প্রশাসনের। পরিস্থিতি এখন বিপদসীমা পেরিয়ে গিয়েছে। ডেঙ্গির (Dengue) ভয়াবহতার পারদ কলকাতার থেকেও বেশি জেলায়। জেলার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গি আক্রান্তের ভর্তির ভিড় দেখে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা। তিনি নিজেই জানান, গ্রামে যে হারে ডেঙ্গি প্রকোপ ছড়াচ্ছে, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে।
স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, বছরের ৪০ সপ্তাহ থেকে ৪১ তম সপ্তাহে কয়েক গুণ ডেঙ্গি বেড়ে গিয়েছে। পজিটিভিটি রেট ও অনেক বেশি। অক্টোবরের শুরুতেও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মূল চিন্তা ছিল কলকাতাকে নিয়েই। কিন্তু গত এক সপ্তাহের পরিসংখ্যান বলছে কলকাতার পাশপাশি চিন্তা জেলাকে নিয়েও। বিশেষত, উত্তর চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলি ও মুর্শিদাবাদ, এই কয়েকটি জেলায় ডেঙ্গি পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।
আরও পড়ুন: ভোট বাক্সের রাজনীতি! মোমিনপুরের ঘটনায় চুপ কেন অভিষেক? প্রশ্ন অমিত মালব্যর
স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গি আক্রান্তের নিরিখে প্রথমেই আছে উত্তর চব্বিশ পরগনা। বছরের ৪১ তম সপ্তাহে এই জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ১২৫৩ জন। যেখানে আগের সপ্তাহে অর্থাৎ, ৪০তম সপ্তাহে সংখ্যা ছিল ৯৯২ জন। তালিকায় এরপরেই রয়েছে হাওড়া। বছরের শুরু থেকেই কিন্তু হাওড়ার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক ছিল। ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। পুরসভার কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। যদিও অভিযোগ, তারপরেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। আর সেই অভিযোগেই কার্যত সিলমোহর দিল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট। স্বাস্থ্য ভবনের তথ্য বলছে, হাওড়ায় বছরের ৪১ তম সপ্তাহে অর্থাৎ, অক্টোবরের ১০-১৫ তারিখের মধ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৬৩৬ জন। এরপরে তালিকায় আছে কলকাতা। কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬০৬ জন। হুগলির পরিস্থিতিও বেশ ভয়াবহ। সেখানে এই সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০৮ জন। মুর্শিদাবাদে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ৪৫২ জন।
স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি সপ্তাহে ২৪৫৪ জনকে ডেঙ্গি আক্রান্ত হাসপাতাল ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ৯৬ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত শুধুমাত্র মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের পাশপাশি ব্লক স্তরে ও ডেঙ্গি আক্রান্তের ভর্তির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। গত এক সপ্তাহে ৩৭৫ জন গ্রামীণ বা ব্লক স্তরের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মহকুমা বা স্টেট জেনারেল স্তরের হাসপাতালে ১০১৪ জন ভর্তি হয়েছেন। অর্থাৎ, শহরের পাশপাশি জেলা ও চিন্তা বাড়াচ্ছে।
দক্ষিণবঙ্গের পাশপাশি উত্তরবঙ্গের ডেঙ্গি পরিস্থিতিও বেশ ভয়াবহ। স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ১৯০ জন শেষ সাত দিনে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। জেলা হাসপাতালগুলোর মধ্যে ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগী ভর্তির নিরিখে শিলিগুড়িই প্রথমে রয়েছে। এই তথ্য স্পষ্ট করে দেয় উত্তরবঙ্গের ডেঙ্গি পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক।
স্বাস্থ্য কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি রিপোর্ট দেরিতে আসার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। রোগীর চিকিৎসা শুরু করার ক্ষেত্রে ও দেরি হচ্ছে। ফলে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। শুক্রবার স্বাস্থ্য দফতরের বৈঠকে স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, গ্রামাঞ্চলে কতখানি ডেঙ্গি মোকাবিলার কাজ হয়েছে, সে নিয়ে সংশয় হচ্ছে। কারণ, জ্বরে তিন-চারদিন ভুগলেও অনেকে ডেঙ্গি পরীক্ষা করছেন না। ওষুধের দোকান থেকে প্যারাসিটামল কিনে খাচ্ছেন। প্লেটলেট কমছে কিনা, তা বোঝাও যাচ্ছে না। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তারপরে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তাই অনেকটাই সময় অপচয় হচ্ছে।
ডেঙ্গি মোকাবিলায় যে রাজ্য সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ এই বছর তা আরও আরেকবার প্রমাণিত হলো। অথচ, গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সময় মতো সমস্ত বিভাগ একযোগে কাজ করলে, পরিস্থিতি এমন জায়গায় হয়তো পৌছতো না বলেই মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ডেঙ্গিতে প্রত্যেক বছর লোক মারা যায়। প্লেটলেট পাওয়া যায় না। তারপরেও সরকারের হুঁশ ফেরে না। শীত পড়লেই প্রশাসন ও শীত ঘুমে চলে যায়। বছর ভর সমস্ত বিভাগ একযোগে ডেঙ্গি মোকাবিলার কাজ চালিয়ে যাবে, এই সদিচ্ছার বড় অভাব। আর তার জন্য রাজ্যবাসীকে ভুগতে হচ্ছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।
+ There are no comments
Add yours