মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শহরের জাঁকজমক থেকে দূরে সরে আমাদের গ্রাম বাংলায় এমন দুর্গাপুজো হয়, যেগুলি গোটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের নজর কাড়ে। ঠিক সেরকম একটি ঐতিহ্যবাহী পুজো হল সুরুলের রাজবাড়ি তথা সুরুলের সরকার বাড়ির পুজো (Durga Puja 2023)। এই জমিদার বাড়ির প্রত্যেকটি দেওয়ালে আছে ইতিহাসের ছোঁয়া। পুজোর কটা দিন যেন অন্য রূপে সেজে ওঠে সরকার বাড়ি। ষষ্ঠীর দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় পুজো।
কী এই রাজবাড়ির ইতিহাস?
সুরুল রাজবাড়ির ইতিহাস জানতে গেলে একটা কথা প্রথমেই বলে রাখা দরকার। তা হল, এই রাজবাড়ির সমস্ত সদস্যর পদবী সরকার। কিন্তু এটি এঁদের আসল পদবী নয়। ইংরেজদের থেকে পাওয়া পদবী। এঁদের আসল পদবী ঘোষ। প্রায় অষ্টাদশ শতকের প্রথম দিকে বর্ধমানের নীলপুর থেকে সুরুলে আসেন ভরতচন্দ্র সরকার। এখানে বাসুদেব ভট্টাচার্যের বাড়িতে তিনি আশ্রয় নেন। সেখানে তাঁদের একটি পুত্রসন্তান হয়, যার নাম কৃষ্ণ হরি। এর পর থেকে সুরুলেই থাকতে শুরু করে সরকার পরিবার। কৃষ্ণ হরির পরবর্তী প্রজন্ম তাঁর ছেলে শ্রীনিবাস ইংরেজদের সাথে ব্যবসার কাজে যুক্ত ছিলেন এবং খুব সুনাম অর্জন করেছিলেন। এতে তাঁর প্রভাব ও প্রতিপত্তি বেড়েছিল। জাহাজের পাল তৈরির কাপড় এবং নীল চাষের ব্যবসার সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন। সুরুলের সরকার বাড়ির দুর্গাপুজো (Durga Puja 2023) ভরতচন্দ্রের আমল থেকেই শুরু হয়েছিল।
জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের সম্পর্ক
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, সুরুল রাজ পরিবারের সঙ্গে জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারের খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। রবীন্দ্রনাথ নিয়মিত এই সরকার বাড়িতে আসতেন। একবার মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে কবিগুরু এই রাজবাড়িতে একটি রাতও কাটিয়েছেন। এখনও সুরুল রাজবাড়িতে (Durga Puja 2023) তাঁর স্মৃতি ধরে রাখা হয়েছে। শোনা যায়, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এই রাজ পরিবারের কাছ থেকে শান্তিনিকেতনের বেশ অনেকটা জমি পেয়েছিলেন।
কীভাবে হয় সরকার বাড়ির দুর্গাপুজো?
সরকার পরিবারের এক সদস্য জানান, রথের দিন থেকেই প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। প্রতিমাকে ডাকের সাজে সাজিয়ে তোলা হয়। এছাড়াও পুজোর (Durga Puja 2023) কয়েকটি দিন রাজবাড়ির সোনার গহনা দিয়ে মা দুর্গাকে সাজানো হয়। পঞ্চমীর দিন নাটমন্দির থেকে সমস্ত রাজবাড়িতে বেলজিয়াম থেকে আনা রঙিন বাতি আর ঝাড়বাতিতে সাজিয়ে তোলা হয়। আর দেবীর হাতে থাকে প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো অস্ত্রশস্ত্র। এখানে আরও একটি বিশেষত্ব হল, পুজোর দিনগুলিতে কোনও ইলেকট্রিক লাইট ব্যবহার না করে গোটা রাজবাড়িকে তেলের প্রদীপে আলোকিত করা হয়। এখানে সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমী--তিন দিনই বলি হয়। সপ্তমীতে চালকুমড়ো, অষ্টমীতে পাঁঠা, আর নবমীতে চালকুমড়ো ও আখ বলি দেওয়া হয়। এখানে দুর্গা প্রতিমা ছাড়াও নারায়ণের পুজো করা হয়। আর নারায়ণ যেহেতু বলি প্রথার বিরুদ্ধে, তাই বলির সময় নারায়ণকে সরিয়ে অন্য মন্দিরে রেখে আসা হয়। অন্য সময়ে তাঁর নিজের স্থানে ফিরিয়ে আনা হয়। গোটা গ্রাম এই পুজোর কয়েকটা দিন এই রাজবাড়িতে মেতে থাকে। রোজ সন্ধ্যায় মন্দিরের সামনে নাটমন্দিরে যাত্রার আসর বসে। দেশ-বিদেশ থেকে সরকার পরিবারের বর্তমান প্রজন্মরা পুজোর কয়েকটা দিন এখানে আসেন। এভাবেই প্রায় ৩০০ বছরের বেশি দিন ধরে একই ঐতিহ্য বহন করে নিয়ে চলেছে এই সরকার বাড়ি বা সুরুল রাজবাড়ির পুজো।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours