মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: টিকিট কাটার টাকা ছিল না বলে ক'টা দিন পরে যেতে বলেছিলেন বাবা-মা। কিন্তু যাওয়ার জেদ চেপে বসেছিল ছেলের। নিজের মোবাইল বিক্রি করে যেতে চাইলে, শেষমেশ বাধ্য হয়ে আড়াই হাজার টাকা ধার করে বাদলের (২০) হাতে দিয়েছিলেন বাবা বরুণ বিশ্বাস। নিজে টোটো চালিয়ে হাই রোড পর্যন্ত এগিয়েও দিয়েছিলেন ছেলেকে। বাদল আর তাঁর প্রতিবেশী বন্ধু অমিত রায়ের (২১) নিথর দেহ ওড়িশা (Train Accident) থেকে দু'টি অ্যাম্বুল্যান্সে করে রবিবার মাঝরাতে এসে পৌছায় দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমণ্ডির কাঁঠালহাট গ্রামে। সঙ্গে ছিলেন দুই পরিবারের লোকজন।
কেন যেতে হয়েছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেসে (Train Accident)?
দীর্ঘ পাঁচ বছর ভিন রাজ্যে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে অমিতের। দরিদ্র বাবার একমাত্র ছেলে অমিত, দিদির বিয়ের জন্য বৈশাখ মাসে বাড়ি এসেছিলেন। বিয়েতে খরচও করেছেন তিনি। ফের রোজগারের আশায় চেন্নাইয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গেই ভিন রাজ্যে কাজের খোঁজে যাওয়ার জেদ ধরেছিলেন বাদলও। আর তাই বাদল বাবা-মায়ের বারণ উপেক্ষা করেই অমিতের সঙ্গে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। আর পথে যেতেই ওড়িশায় (Train Accident) ঘটল ট্রেন দুর্ঘটনা।
অমিতের পরিবারের বক্তব্য
শুক্রবার রাতে যখন বাড়িতে খবর আসে, সেই থেকে অমিতের মা কল্পনা রায় খানিকক্ষণ পরপর অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। খাওয়াদাওয়া বন্ধ, বলছেন না কোনও কথাও। অমিতের মৃতদেহের সামনে বসে দিদি নমিতা বলতে থাকেন, একটাই ভাই ছিল! আমার বিয়ের জন্য ভাই এসেছিল। ওর বিয়ে দেব, বাড়িঘর সাজাব, কত স্বপ্ন ছিল! সব শেষ হয়ে গেল। শনিবার অমিতের বাবা নকুল রায়, বাদলের মামা এবং জামাইবাবুরা বালেশ্বরে (Train Accident) যান। শনিবার সারাদিন বিভিন্ন মর্গে ঘুরে অবশেষে রবিবার দিন রাতে দেহ খুঁজে পান তাঁরা।
বাদলের বাবা-মায়ের বক্তব্য
অমিতের সঙ্গে যাওয়াটা যে শেষ যাওয়া হবে, বুঝিনি! ভাঙাচোরা মাটির বাড়ির দরজায় বসে এই কথাই বারবার বলছিলেন ট্রেন দুর্ঘটনায় (Train Accident) মৃত বাদলের বাবা বরুণ রায়। কাঁঠালহাটের বাসিন্দা বাদলের বাড়িতে বাবা, মা ও দশম শ্রেণির পড়ুয়া ছোট ভাই রয়েছে। বাবা টোটো চালক। বাদলের মা পলিদেবী ফুঁপিয়ে কেঁদে বললেন, কত বার বললাম, কিছু দিন পরে যা। কিন্তু শুনল না। আমার কথা শুনলে ছেলেটা বেঁচে যেত, সবই নিয়তি!
প্রশাসনের বক্তব্য এবং আরও ১ মৃতদেহ আশার অপেক্ষায়
জেলাশাসক বিজিন কৃষ্ণ বলেন, কুশমণ্ডির দুজনের দেহ রাতে এসেছে। আমরা নিয়মিত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। প্রশাসন তাঁদের পাশে রয়েছে। এদিকে, গঙ্গারামপুরের লালচন্দনপুরের নিখোঁজ সুমন রায়ের দেহ সোমবার শনাক্ত (Train Accident) করেছেন তাঁর বাবা রমাকান্ত রায়। বাবা বলেন, প্রশাসন থেকে মৃতদের ছবি পাঠিয়েছিল। ছবি দেখে চিনতে পেরেছি আমার ছেলেকে। সুমনের দেহ আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours