মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী ইতিহাসে উপেক্ষিত হয়ে থেকে গেছেন যাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন হেমু কালানি (Hemu Kalani)।
জন্ম ও শিক্ষা
২৩ মার্চ ১৯২৪ সালে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের ওল্ড শুক্কুরে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হয় হেমুর। হেমুর (Hemu Kalani) পিতার নাম ছিল পেসুমল কালানি এবং মাতার নাম জেঠিবাঈ কালানি। হেমু ছিলেন তাঁর ভাইদের মধ্যে সবথেকে বড়। শুক্কুররেই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন বলে জানা যায় এবং তাঁর উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন হয় শুক্কুরের তিলক উচ্চ বিদ্যালয়ে। তাঁর কাকা ছিলেন ডক্টর মনঘরাম কালানি। যিনি ছিলেন সেখানকার কংগ্রেস নেতা এবং একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। দেশ সেবার জন্য যাবতীয় প্রেরণা হেমু কালানি (Hemu Kalani) তাঁর কাকার কাছ থেকেই পেয়েছিলেন বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন।
বিপ্লবী সংগঠনে যোগদান
১৯৪২ সালে মহাত্মা গান্ধী শুরু করেছিলেন ভারত ছাড়ো আন্দোলন, সেই আন্দোলনে হেমু কালানি (Hemu Kalani) ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হন। সক্রিয়ভাবে এই আন্দোলনে তিনি অংশগ্রহণও করেন বলে জানা যায়। তিনি সেখানে স্বরাজ সেনা নামের একটি বিপ্লবী দলের সঙ্গে যুক্ত হন এবং কিছুদিনের মধ্যেই এই সংগঠনের শীর্ষে পৌঁছে যান। এই বিপ্লবী সংগঠনের যাবতীয় কাজকর্ম গোপনে চলত।
বিপ্লবী ক্রিয়াকলাপ
সীমান্ত গান্ধী বলা হত খান আব্দুল গফফর খানকে তিনি উত্তর-পশ্চিম প্রদেশে তৈরি করেছিলেন খোদায়ে খিদমতগার বাহিনী। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন সেখানে প্রবল আকার ধারণ করেছিল এই কারণে। ইতিমধ্যে ১৯৪২ সালের ২ অক্টোবর বিপ্লবী সংগঠন স্বরাজ সেনার কাছে একটি বার্তা আসে যে একটি ট্রেনে করে ব্রিটিশ সেনারা তাদের যাবতীয় যুদ্ধ সরঞ্জাম নিয়ে যাবে কোয়েটা থেকে রোহরি পর্যন্ত। সে সময়ে বিপ্লবী সংগঠন স্বরাজ সেনা তাদের গোপন বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয় যে শুক্কুরের কাছেই এই ট্রেনের ফিসপ্লেট খুলে নেওয়া হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের এই গোপন বৈঠকের তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। দায়িত্বে ছিলেন বিপ্লবী হেমু কালানি (Hemu Kalani) এবং তাঁর সঙ্গে আরও দুজন সহযোগী। বাকি দুজন কোনওভাবে পালিয়ে গেলেও ধরা পড়ে যান হেমু কালানি (Hemu Kalani)। ব্রিটিশ পুলিশ তাঁর ওপর ২২ দিন ধরে ব্যাপক অত্যাচার করে। কিন্তু কোনওভাবেই হেমু কালানি তাঁর বাকি দুই সহকারীর নাম এবং বিপ্লবী সংগঠনের বিষয়ে কোনরকম তথ্য দেননি।
১৯ বছর বয়সী হেমুকে ব্রিটিশ সরকার রাজদ্রোহী ঘোষণা করে এবং তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেই সময়ে সিন্ধ প্রদেশে চলছিল মার্শাল শাসন এবং তাঁর মামলা চলছিল শুক্কুরের হায়দ্রাবাদের মার্শাল কোর্টে। এই ধরনের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকে স্বমূলে শেষ করতে একটি উপযুক্ত দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য পরবর্তীকালে এই মামলার রায় যাবজ্জীবন থেকে মৃত্যুদণ্ডতে রূপান্তরিত করা হয়। হেমু কালানির (Hemu Kalani) জনপ্রিয়তা তখন উপলব্ধি করে ব্রিটিশ সরকার। ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দেয় সমগ্র সিন্ধ প্রদেশে। আজকের দিনে ২১ জানুয়ারি ১৯৪৩ সালে ফাঁসি হয়েছিল বিপ্লবী হেমু কালানির। ফাঁসির মঞ্চে এই বিপ্লবী স্লোগান দিতে থাকেন ইনকিলাব জিন্দাবাদ এবং ভারত মাতা কী জয়। কারা কর্তৃপক্ষ যখন তাঁকে তাঁর শেষ ইচ্ছার কথা জানাতে বলে, তখন এই অকুতোভয় বিপ্লবী হেমু বলেন, জাতীয় সংগীত গাইতে গাইতে তিনি মৃত্যু বরণ করতে চান। হেমু কালানির এই আত্মত্যাগের কারণে ২৩ জানুয়ারি ১৯৪৩ সালে সিন্ধি যুব দিবস এবং শহীদ দিবস পালিত হয় তৎকালীন সিন্ধ প্রদেশে। মহান এই বিপ্লবীর দেহ সৎকার করা হয় সিন্ধু নদীর তীরে।
২১ অগাস্ট ২০০৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ি, হেমু কালানির (Hemu Kalani) স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করেন সংসদ ভবনে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।
+ There are no comments
Add yours