মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কলকাতার (Kolkata) পর এবার জলপাইগুড়িতে হাইকোর্টের (Calcutta Highcourt) সার্কিট বেঞ্চে গিয়ে শিক্ষক বদলি মামলায় (Teachers Transfer Case) সিবিআই তদন্তের (CBI probe) নির্দেশ দিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Ganguly)। শিক্ষিকার ঘন ঘন বদলির ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলেন তিনি।
ঠিক কী ঘটনায় এই নির্দেশ?
শান্তা মণ্ডল নামে ওই শিক্ষিকা ২০১৬ সালে শিলিগুড়ি শ্রীগুরু বিদ্যালয়ের সহ-শিক্ষিকা হিসাবে যোগ দেন। ২০১৯ সালে ৩ বছরের মধ্যে তিনি প্রধান শিক্ষিকা হওয়ার জন্য পরীক্ষা দেন। উত্তীর্ণ হয়ে আলিপুরদুয়ার জেলার বীরপাড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা হিসাবে যোগদান করেন তিনি। স্কুলে যোগ দেওয়ার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে শান্তা আবার বদলির জন্য রাজ্যের শিক্ষা দফতরে আবেদন করেন।
আবেদন মঞ্জুর করে মধ্যশিক্ষা পর্যদ তাঁকে শিলিগুড়ির অমিয় পালচৌধুরী স্মৃতি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে বদলি করে শিক্ষা দফতর। কিন্তু সেখানে যোগদান করতে অস্বীকার করেন তিনি। ফের বিশেষ কারণে বদলির আবেদন করেন শান্তাদেবী। এবারও তাঁর সেই আবেদন মঞ্জুর হয়। এবার তাঁকে তাঁর পুরনো স্কুল শ্রীগুরু বিদ্যামন্দিরে বদলির নির্দেশ দেয় শিক্ষা দফতর।
আরও পড়ুন: এসএসসি শিক্ষকদের বদলির নিয়ম 'বদলের' নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের!
বদলি প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন শিলিগুড়ি শ্রীগুরু বিদ্যামন্দির হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রসুনসুন্দর তরফদার। সেই মামলার শুনানিতে তিন সপ্তাহ আগে শান্তাদেবীকে অস্থায়ীভাবে শ্রীগুরু বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিতে বলে হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার মামলাটি জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) সার্কিট বেঞ্চে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে ওঠে।
মামলার সওয়াল-জবাব চলাকালীন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ওই শিক্ষিকাকে ‘বড়ই প্রভাবশালী’ বলে মন্তব্য করেন। শুধু তাই নয়, বিচারপতি তাঁকে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তুলনা করেন। অর্পিতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষিকার কোনও যোগাযোগ রয়েছে কিনা তাও জানতে চান বিচারপতি।
শুনানিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘শিক্ষা দফতরের (Education Department) আইন অনুসারে ৫ বছরের আগে বদলির আবেদন করা যায় না। তাহলে কী করে ১ বছরের মধ্যে বীরপাড়া স্কুল থেকে বদলির আবেদন করলেন শান্তা মণ্ডল? আর সেই আবেদন গৃহীতই বা হল কেন?’ এর পিছনে বড়সড় কোনও প্রভাব রয়েছে বলে উল্লেখ করে বিচারপতি এই বদলির রহস্য উন্মোচনের দায়িত্ব সিবিআইকে (CBI) দেন।
আরও পড়ুন: এসএসসি-দুর্নীতির টাকা পাচার বাংলাদেশে? হাওয়ালা-যোগ খতিয়ে দেখছে ইডি
একইসঙ্গে, শান্তা মণ্ডলকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে আলিপুরদুয়ার জেলার বীরপাড়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে। শুক্রবারের মধ্যে যাতে ওই স্কুলে যোগ দিতে কোনও সমস্যা না হয় সেজন্য আদালতের নির্দেশ সংক্রান্ত সমস্ত কাগজ এদিনই ওই শিক্ষিকার হাতে তুলে দিতে বিচারপতি শান্তার আইনজীবীকে নির্দেশ দেন। ওই শিক্ষিকা যদি শুক্রবার বীরপাড়ার স্কুলটিতে কাজে যোগ না দেন তবে তা তাঁর 'ব্রেক অফ সার্ভিস' হবে বলে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন।
রাজ্যে এক ডজন মামলায় ইতিমধ্যেই তদন্ত করছে সিবিআই। এবার শিক্ষক বদলিতে দুর্নীতির (Teacher Transfer Scam) আঁচ পেয়ে জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে (Circuit Bench Jalpaiguri) বসে তদন্তের নির্দেশ দিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের। সিবিআই তদন্তের নির্দেশের পর মামলাকারী প্রসূনসুন্দর তরফদারের প্রতিক্রিয়া, ‘সত্যের জয় হল। ন্যায় বিচার পেলাম।’
+ There are no comments
Add yours