রামনগরী অযোধ্যা-ছয়
শুভ্র চট্টোপাধ্যায়, অযোধ্যা থেকে ফিরে: প্রভু রামের মন্দিরে ফেরা ২২ জানুয়ারি। তার আগেই অযোধ্যার উৎসবের ঢেউ গিয়ে পড়ছে আসমুদ্র হিমাচলে। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী হোক, অথবা গুজরাট থেকে গুয়াহাটি। সর্বত্রই রামভক্তরা এখন থেকেই আনন্দে মেতেছেন। কেউ হায়দরাবাদ থেকে সোনার জুতো নিয়ে রামনগরীতে (Ram Mandir) পৌঁছাচ্ছেন, তো কোথা থেকে আসছে রামের রথ। তবে ভগবান রামের সব থেকে বড় শিষ্য রাম জন্মভূমির অদূরে তাঁর নিজের মন্দিরেই দীর্ঘকাল বিরাজমান রয়েছেন। অযোধ্যার হনুমানগড়ি মন্দিরও ভক্তদের অন্যতম তীর্থস্থল হিসেবে পরিচিত। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে যখন মন্দির চত্বরে পৌঁছালাম, ঘড়ির কাঁটা তখন রাত ১০টা ছুঁয়েছে। শীতের রাতেও মন্দির প্রাঙ্গণে তিল ধারণের জায়গা নেই। ভক্তদের বিশ্বাস, প্রভু রামচন্দ্রের জন্মস্থানেই থাকেন বজরঙ্গবলী। হনুমানগড়ি মন্দির যেতে রামপথের ওপর দিয়ে সোজা হাঁটতে হবে ঠিক রাম মন্দিরের দিকে। তারপরেই ডানদিকে ভেঙে যাচ্ছে রামপথ। সেখানেই রয়েছে হনুমানগড়ি মন্দির। রাম মন্দিরের মতোই এখানেও ২৪ ঘণ্টাই পুলিশি ব্যারিকেড রয়েছে।
টিলার ওপর বিরাজ করছেন বালক বজরঙ্গবলী (Ram Mandir)
টিলার ওপর বিরাজ করছেন বালক বজরঙ্গবলী। হনুমানের দর্শন পেতে তাই ভাঙতে হবে ৭৬টি সিঁড়ি। হলুদ ধুতি পরা তরুণ পুরোহিতরা ভক্তদের পুজো পৌঁছে দিচ্ছেন হনুমানের চরণতলে। কপালে তিলকও এঁকে দিচ্ছেন তাঁরা। হনুমানের দর্শন পেতে সে কী হুড়োহুড়ি! বোঝাই গেল রাম মন্দির উদ্বোধনের আগে হনুমানগড়িতে যদি এত ভিড় হয়, তাহলে ২২ জানুয়ারির পর ঠিক কী হতে চলেছে। ভগবান রামের পাশাপাশি অযোধ্য়ার উদ্দেশে যাওয়া তীর্থযাত্রীদের গন্তব্য যে হনুমানগড়ি হবে, একথা বলাই যায়। বিরাট মন্দিরকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে চারপাশে অনেক ছোট-বড় ব্যবসায়ী দোকান তৈরি করেছেন, বেশ কিছু নতুন দোকানও তৈরি হচ্ছে দেখা গেল। বোঝাই যাচ্ছে, ব্যবসায়ীরাও আশায় বুক বাঁধছেন রাম মন্দির উদ্বোধনের। মন্দিরের ডানদিক বরাবর সোজা গেলে পড়বে দশরথ ভবন। এই রাস্তাতেই পসরা সাজিয়ে বসেছেন অনেকে। গোটা রামায়ণ যেন মূর্ত হয়ে উঠেছে অযোধ্যার (Ram Mandir) কোনায় কোনায়, পথে পথে, সরযূর জলে।
হনুমানগড়ির পৌরাণিক কথা (Ram Mandir)
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অযোধ্যায় রামের দর্শনের (Ram Mandir) আগে তাঁর প্রিয় ভক্ত বজরঙ্গবলীর দর্শন ও আজ্ঞা নেওয়া জরুরি। হনুমানগড়ি মন্দির অযোধ্যার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মন্দির। এই মন্দিরে ৬ ইঞ্চির বালক বজরঙ্গবলীর প্রতিমা রয়েছে। হনুমানের সঙ্গে তাঁর মা অঞ্জনীও আছেন এই মন্দিরে। মন্দির পরিসরে অঞ্জনীর কোলে দেখা যায় হনুমানকে। মন্দিরের চারপাশের দেওয়ালে হনুমান চালিশার পংক্তি লেখা রয়েছে। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, হনুমানগড়িতে রাজা হিসেবে বজরঙ্গবলীর রাজতিলক করেন রাম। একটি গুহায় বসবাস করে বজরংবলী রামজন্মভূমি ও অযোধ্যাকে রক্ষা করেন। বজরঙ্গবলীর সেবা ও ভক্তিতে প্রসন্ন হয়ে রাম বলেন, যাঁরা অযোধ্যায় আমার দর্শনের জন্য আসবেন, তাঁদের সবার আগে হনুমানের দর্শন, পুজো ও অনুমতি নিতে হবে। হনুমানের অনুমতি না-নিয়ে ও পুজো না-করে রামের দর্শন ও পুজোর ফল পাওয়া যায় না। রামচরিত মানসের সুন্দরকাণ্ডে বলা হয়েছে, বজরংবলী রামের সবচেয়ে প্রিয় ভক্ত। তাই রামের দর্শন ও আশীর্বাদ লাভের জন্য বজরংবলীর দর্শন ও আশীর্বাদ নিতে হয়। এ কারণে হনুমানগড়িতে বজরঙ্গবলীর পুজোর পর রামের দর্শনের পরম্পরা প্রচলিত। রাম মন্দিরের ভূমি পূজনের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সর্বপ্রথম হনুমানগড়িতেই পুজো দেন।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours