মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: তৃণমূলের মাদারের সঙ্গে যুব সংগঠনের বিবাদ। যার জেরে মাদার সংগঠনের নির্বাচিত সদস্য সদস্যাসহ অঞ্চল সভাপতি গণ ইস্তফা দিলেন। ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের বার্ণিশ অঞ্চলে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অঞ্চলে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল একেবারে প্রকাশ্যে চলে এল। সব মিলিয়ে প্রায় ১০০ জন দলীয় বিভিন্ন পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন।
কেন ইস্তফা?
জলপাইগুড়ির (Jalpaiguri) ময়নাগুড়ি বার্ণিশ গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ২৪ টি আসনের মধ্যে ১৮ টি আসনে জয় পেয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের দখল নেয় তৃণমূল। গত বৃহস্পতিবার বোর্ড গঠনের দিন এই গ্রামপঞ্চায়েতে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠির সংঘর্ষ হয়। ওই দিন রাতে তৃণমূলের কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। দলের এক অংশের অভিযোগ, প্রধান পদের জন্য অঞ্চল কমিটির থেকে সর্বসন্মতিক্রমে বৈঠক করে ৩ জনের নাম জেলা নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হলেও সেই তালিকার বাইরে থাকা বিগত দশ বছরের প্রধান কল্যাণী তরফদার দেবনাথকে প্রধান করার জন্য জেলা নেতৃত্বের থেকে খামবন্ধ চিঠি দিয়ে অঞ্চলে নাম পাঠানো হয়। কিন্তু,কল্যাণী তরফদার দেবনাথকে প্রধান পদে মানতে নারাজ ছিলেন অধিকাংশ তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য। বোর্ড গঠনের দিন পুলিশ ও ব্লক প্রশানের উপস্থিতিতে কয়েক জন তৃণমূলের নেতা ও কর্মী বেআইনিভাবে অঞ্চল অফিসের ভিতর প্রবেশ করে কল্যাণী তরফদার দেবনাথকে প্রধান পদে সমর্থন করার জন্য হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি চাপ সৃষ্টি করে বলে অভিযোগ। ওই দিন যুব তৃণমূলের ছত্রছায়ায় থাকা এক অংশের হাতে প্রকাশ্যে আক্রান্ত হন অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি দেবদুলাল বৈদ্য। মারধর করা হয় এক পঞ্চায়েত সদস্যের দাদা ক্ষুদিরাম রায় ও এক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যের স্বামী সদানন্দ সরকার সহ বেশ কয়েকজনকে। এর প্রতিবাদে ময়নাগুড়ি রোড দুর্গাবাড়িতে জড়ো হন বার্ণিশ অঞ্চল তৃণমূল নেতৃত্বের একটি বড় অংশ। তাদের সঙ্গে এই অঞ্চলের শতাধিক তৃণমূল কর্মী উপস্থিত ছিলেন। সেখানে অঞ্চলের মোট ২১ জন বুথ সভাপতির প্রত্যেকে, তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হওয়া ১৪ জন পঞ্চায়েত সদস্য, ৩ জন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য, অঞ্চল কমিটির ৪২ জন সদস্যের প্রত্যেকে দল থেকে পদত্যাগ করেন। জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ও অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি নিগ্রহের সঙ্গে যুক্তদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মীরা।
কী বললেন ইস্তফা দেওয়া জয়ী সদস্য এবং তৃণমূল নেতৃত্ব?
তৃণমূলের নব নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যা অভিযোগ করেন, "দলের কিছু কর্মী আমাকে প্রতিনিয়ত বাড়িতে গিয়ে ধর্ষণের হুমকি ও আমার স্বামীকে খুনের হুমকি দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এভাবে দল করা যায় না। তাই ইস্তফা দিলাম।" বার্ণিশ অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি দেবদুলাল বৈদ্য। দেবদুলালবাবু বলেন, "জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূল করছি। এত বছরে বিরোধীরা পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে কোনওদিন কোনও দুর্নীতির অভিযোগ করেনি। সেখানে দলের কিছু কর্মীর হাতে প্রকাশ্যে হেনস্থা হওয়ায় মানসিকভাবে অত্যন্ত বিদ্ধস্ত অবস্থায় আছি। আমার নিজেরই কোনও নিরাপত্তা নেই। কর্মীদের নিরাপত্তা দেব কীভাবে? তাই দলীয় পদ থেকে ইস্তফা দিলাম। গণ ইস্তফার ঘটনায় জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) জেলা জুড়়ে চর্চা শুরু হয়েছে।"
কী বললেন তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী?
এই বিষয়ে জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী মহুয়া গোপ বলেন, "দলের শীর্ষ নেতৃত্বের থেকে প্রধান, উপ প্রধানদের নাম পাঠানো হয়েছে। জেলা নেতৃত্বের থেকে কিছু ঠিক হয়নি। এই নিয়ে বিভিন্ন ব্লকে কর্মীদের মধ্যে অনেক বিভ্রান্তি আছে। যে সমস্যা রয়েছে তা দলের সৈনিকদের দলের অভ্যন্তরে আলোচনা করে মিটিয়ে নেওয়া উচিত। দলের ভাবমূর্তিকে রাস্তায় নিয়ে এসে এইভাবে প্রতিবাদ করা শোভা পায় না।"
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours