2002 Gujarat riots case: মোদিকেও প্রশ্ন করেছিল সিট, কেউ ধর্না দেয়নি, কংগ্রেসের বিক্ষোভকে কটাক্ষ শাহের

বিশেষ তদন্তকারী দলের জিজ্ঞাসাবাদে বসতে মোদি কখনও না বলেননি। সত্যের জন্য অপেক্ষা করেছেন। তাঁকে জেরা করা হয়েছিল কিন্তু কেউ ধর্না দেয়নি।
congress_bjp
congress_bjp

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় রাহুল গান্ধীকে সমন জারি করে জেরা করেছে ইডি। এর প্রতিবাদে ইডির দফতরের বাইরে তুমুল প্রতিবাদ প্রদর্শন করেন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। এই নিয়েই রাহুলকে বিঁধছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর উদাহরণ দিয়ে  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘সিটের সামনে হাজিরা দিতে মোদিজি কোনও নাটক করেননি। গণতন্ত্রে সংবিধানকে কীভাবে সম্মান করা উচিত, সমস্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছে তার একটি আদর্শ উদাহরণ উপস্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। মোদিজিকেও প্রশ্ন করা হয়েছিল, কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করেনি, সারা দেশের কর্মীরা মোদিজির সাথে সংহতি প্রকাশ করেনি। আমরা আইনের সাথে সহযোগিতা করেছি। আমাকেও গ্রেফতার করা হয়। আমরা প্রতিবাদ করিনি। ’

গুজরাট হিংসার ঘটনায় তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীকে ক্লিনচিট দিয়েছিল সিট। সিটের দেওয়ার তথ্যের ভিত্তিতেই নরেন্দ্র মোদিকে ক্লিনচিটের রায় দেয় গুজরাট হাইকোর্ট। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) মামলা করেছিলেন জাকিয়া জাফরি। শুক্রবার তাঁর সেই মামলা খারিজ করে দেয় দেশের শীর্ষ আদালত। এরপরই বিরোধীদের একহাত নেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রাহুল গান্ধীর নাম না করে তাঁকে কটাক্ষ করে অমিত বলেন, "মোদিজি নাটক করেননি।" শাহ জানান, বিশেষ তদন্তকারী দলের জিজ্ঞাসাবাদে বসতে মোদি কখনও না বলেননি। সত্যের জন্য অপেক্ষা করেছেন। তাঁকে জেরা করা হয়েছিল কিন্তু কেউ ধর্না দেয়নি। কোনও  দলীয় কর্মী তাঁর পাশে দাঁড়াতে আসেনি। তিনি কাউকে সে কথা বলেনওনি। 

আরও পড়ুন: 'শিবের মতো বিষপান করেছেন মোদি', গুজরাট হিংসা প্রসঙ্গে অমিত শাহ

বিজেপির ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’র জেরে ইডি-র মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীদের ‘হেনস্থা’ করা হচ্ছে, এই অভিযোগে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চালায় কংগ্রেস। কিন্তু কংগ্রেস জমানায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দলের সামনে বিভিন্ন মামলায় হাজিরা দিতে হয়েছিল নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহকে। তাঁরা কিন্তু কোনও প্রতিবাদ ছাড়াই তদন্তে সাহায্য করেছিলেন। কোনও নাটক হয়নি বলে দাবি রাজনৈতিক মহলেরও। 

ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় ইডির জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি রাহুল গান্ধী। টানা কয়েকদিন ধরে দফায় দফায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাঁকে। তা নিয়ে প্রথম দিনে থেকেই রাস্তায় নেমেছে কংগ্রেস। দেশজুড়ে বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরে কংগ্রেস কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় খণ্ডযুদ্ধ হয়েছে। উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রায় সব রাজ্যেই একই ছবি। বিহারের পাটনা, ঝাড়খন্ডের রাঁচিতে রাস্তায় নামেন কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা। আন্দোলন ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। বারবার পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। উত্তরপ্রদেশের লখনউতে বিক্ষোভ আন্দোলনে ডাক দেয় হাতশিবির। দিল্লি, বেঙ্গালুরু, জয়পুর, চণ্ডীগড়, আগরতলায়  রাস্তায় নেমেছিলেন কংগ্রেস নেতা ও কর্মীরা। কর্মসূচি ঘিরে ধুন্ধুমার হয় প্রায় সব জায়গাতেই। হায়দরাবাদে আন্দোলন ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠে। গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেস কর্মীরা।

আরও পড়ুন: গুজরাট হিংসায় মোদির ক্লিনচিট বহাল সুপ্রিম কোর্টের, বিরোধীদের নিশানা বিজেপির

উত্তরপ্রদেশের লখনউ তেতে ওঠে কংগ্রেসের বিক্ষোভে। কর্ণাটকে বিরোধী দলনেতা সিদ্দারামাইয়ার নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখিয়েছে কংগ্রেস। রাজস্থানের জয়পুরেও ব্যাপক বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে কংগ্রেসের তরফে। রাহুল গান্ধীকে ইডির জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে দিল্লির রাজপথে বিরোধিতা করেছেন অধীর চৌধুরী, কেসি বেণুগোপাল, ভূপেশ বাঘেল, অজয় মাকেন, গৌরব গগৈয়ের মতো কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা। কিন্তু রাজনৈতিক মহলে বারবার প্রশ্ন উঠেছে একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতার দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছে। তদন্তে সাহায্য করলেই হল। নির্দোষ হলে তো যে কেউ ছাড়া পাবেন, তাহলে এত নাটক কেন? কিসের ভয়?

প্রশ্ন উঠেছে কংগ্রেসের জমানাতে গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে ১২ বছর আগে সিবিআইয়ের জেরার মুখে পড়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ। বিজেপি তো তখন এত বিরোধিতা করেনি! 

আরও পড়ুন: জাকিয়া জাফরির কষ্টকে ব্যবহার করেছেন তিস্তা শেতলবাদ! অভিমত সুপ্রিম কোর্টের

৯ ঘণ্টা জেরা ও ১০০ টি পর পর প্রশ্ন। প্রসঙ্গ ছিল গুজরাতের বুকে ২০০২ সালের বিধ্বংসী হিংসার ঘটনা। যে ঘটনা নিয়ে খোদ সেরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদি পড়েছিলেন সিবিআই জেরার মুখে। একের পর এক প্রশ্ন। অথচ ধৈর্য্য হারাননি। এড়াননি একটা প্রশ্নও। ৯ ঘণ্টার ম্যারাথন জেরায় এক কাপ চা-ও পর্যন্ত নেননি নরেন্দ্র মোদি। গুজরাট দাঙ্গায় মোদিকে জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে এমন সব তথ্য উঠে এসেছিল তদন্তকারী দলের প্রধান আরকে রাঘবনের লেখা বইয়েও।   গান্ধীনগরে সিটের অফিসে জেরার জন্য হাজিরা দিতেও সম্মত হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। সে নিয়ে 'আ রোড ওয়েল ট্রাভেলড' বইয়ে রাঘবন লিখেছেন,''মুখ্যমন্ত্রীর কর্মীদের আমরা বলেছিলাম, সিটের অফিসে তাঁকে আসতে হবে। অন্য কোথাও হলে তা তদন্তে প্রভাবিত করতে পারে। তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন। সিটের অফিসে আসতে সম্মত হন।'' সিটের অফিসে ৯ ঘণ্টার জেরায় ১০০টির কাছাকাছি প্রশ্ন করা হয়েছিল তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। কোনও প্রশ্নই এড়িয়ে যাননি তিনি। এমনকি উত্তর সাজানোর চেষ্টা করেছেন বলেও মনে হয়নি।' ২০১০ সালে মোদিকে টানা ১৩ ঘণ্টা জেরা করেছিল সিট। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে গুজরাট দাঙ্গার তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট দেয় সিট। ক্লিনচিট পান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রিপোর্টে বলা হয়, দোষী সাব্যস্ত করার মতো কোনও প্রমাণই মেলেনি।  

সোহরাবুদ্দিন ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায়  রাজ্যছাড়া ছিলেন অমিত শাহ। গুজরাতে প্রবেশ করতে পারতেন না। তার আগে তাঁকে গ্রেফতারও করেছিল সিবিআই। গ্রেফতারির ঠিক আগে আমদাবাদের বিজেপি দফতরে গিয়ে শাহ বলে এসেছিলেন, সব অভিযোগ মিথ্যা। কিন্তু কোনও দলীয় কর্মীদের নিয়ে জমায়েত করতে যায়নি বিজেপি। পরে আদালতে নিষ্কৃতি পান অমিত। তাহলে সেসময় কি কংগ্রেস তদন্ত সাজিয়েছিল? প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles