শুভ্র চট্টোপাধ্যায়: নবরাত্রির শেষ দিনে পূজিতা হন মাতা সিদ্ধিদাত্রী। এই দেবী মা দুর্গার নবম রূপ বলে পরিগণিত হন। ভক্তদের বিশ্বাস মতে , মাতা সিদ্ধিদাত্রী দেবাদিদেব মহাদেবের শরীরের অংশ। তাই তিনি অর্ধনারীশ্বর নামেও প্রসিদ্ধ। ভক্তদের বিশ্বাস, এই মহাবিশ্ব যখন তৈরী হয়নি, চারিদিকে যখন ঘন অন্ধকার ছিল, প্রাণের চিহ্ন যখন কোথাও ছিল না তখন একটি দৈব আলোকরশ্মি নারী মূর্তির আকার ধারণ করতে থাকে। ইনিই দেবী মহামায়া, মহাশক্তি। এই আদিদেবীর থেকেই জন্ম হয়েছিল ত্রি শক্তির ব্রহ্মা, বিষ্ণু ,
এবং মহেশ্বর। বিশ্ব বা জগত সংসার পরিচালনার জন্য এই আদিমাতা ত্রিদেব কে দায়িত্ব দেন। এরপরে মহাসাগরের তীরে বসে বহু বছর ধরে মহামায়ার তপস্যায় রত ছিলেন ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর। তপস্যায় প্রসন্না হয়ে দেবী তাঁদের সামনে 'সিদ্ধিদাত্রী' রূপে প্রকট হন।
মাতা সিদ্ধিদাত্রী ভগবান ব্রহ্মাকে বিশ্বস্রষ্টার স্রষ্টা, ভগবান বিষ্ণু কে সৃষ্টি ও জগৎ রক্ষার ভূমিকা এবং দেবাদিদেব মহাদেব কে প্রয়োজন হলে জগৎ ধ্বংস করার ভূমিকা প্রদান করেন। ভক্তদের আরো বিশ্বাস , দেবী সিদ্ধিদাত্রী পরবর্তীতে সরস্বতী,লক্ষী, এবং মাতা পার্বতী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। সিদ্ধিদাত্রী মাতা সর্বদাই ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের সাথে শক্তি হিসেবে আছেন , এটা বোঝাতেই তিনি এই ত্রিদেবের পত্নী রূপে অবস্থান করেন। পৌরাণিক আখ্যান অনুযায়ী , দেবী সিদ্ধিদাত্রী জগৎ পরিচালনা, পালন এবং সংহারের জন্য অলৌকিক ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন এই ত্রিদেবকে। অতিপ্রাকৃত এই আটটি শক্তিকে মার্কণ্ডেয় পুরাণে অষ্টসিদ্ধি বলা হয়েছে যা দেবী সিদ্ধিদাত্রী দেন।
সিদ্ধি আট প্রকারের-
অণিমা : এই শক্তির দ্বারা দেহ কে আকারে ছোট করা যায়।
মহিমা: এই শক্তির দ্বারা দেহকে অসীম প্রসারিত করা যায় ।
গরিমা : এই শক্তির দ্বারা দেহকে অকল্পনীয় ভারী করা যায়।
লঘিমা: এই শক্তির দ্বারা দেহ ভারহীন হয়ে যায়।
প্রাপ্তি: এই শক্তির দ্বারা সর্বভূতে বিরাজ করা যায়।
প্রাকাম্য: এই শক্তির দ্বারা সমস্ত মনের কামনা পূর্ণ করা যায়।
ঈশিত্ব : এই শক্তির দ্বারা প্রভুত্ব স্থাপন করা যায়।
বশিত্ব: এই শক্তির দ্বারা সকলকে পরাধীন রাখা যায়।
ভক্তদের বিশ্বাস, মার্কন্ডেয় পুরাণ অনুসারে যে ৮ প্রকার সিদ্ধি ,মাতা সিদ্ধিদাত্রী ব্রহ্মা-বিষ্ণু মহেশ্বর কে প্রদান করেছিলেন,মহানবমীর দিন মাতা সিদ্ধিদাত্রীর আরাধনা করলে ভক্তদের মধ্যে এই সকল শক্তির প্রবেশ ঘটে।
অন্য একটি পৌরাণিক আখ্যান অনুযায়ী, শিব মাতা অম্বিকার সাধনা করেছিলেন এবং মাতা তখন সিদ্ধিদাত্রী হয়ে দেবাদিদেব মহাদেব কে বরপ্রদান করেছিলেন। সর্ব সিদ্ধির অধীশ্বর হওয়ার বর, দেবাদিদেব মহাদেব পেয়েছিলেন, মাতা অম্বিকার কাছ থেকে । তাই ভগবান শিবকে সিদ্ধিনাথ বা সিদ্ধেশ্বর বলা হয়।
অষ্টমীর সন্ধিপূজার সময়ই দুর্গা মাতা মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন বলে অনেক পন্ডিতের মত রয়েছে। আবার সন্ধিপুজোর সময়ই দেবী দুর্গার অন্য রূপ চামুন্ডা মাতা চন্ড ও মুন্ড কে বধ করেছিলেন বলে অনেক ভক্তের ধারণা রয়েছে। অসুরবধের আনন্দে নবমী তিথিতে কাত্যায়ন ঋষির আশ্রমে দেবীর বন্দনায় মেতে উঠেছিলেন দেবতারা। এখানেই নবমী পুজোর মাহাত্ম্য বা গুরুত্ব বলে পন্ডিত দের ধারণা রয়েছে। হিন্দু শাস্ত্র মতে, এদিন তাই দেবীর সম্পূর্ণ পুজো সম্পন্ন হয়। এই তিথিতেই বলি, হোম, কুমারী পূজা এবং ষোড়শ উপাচারের বিধান আছে। দেবীকে প্রসন্ন করতে নৈবেদ্য তে তিল নিবেদন করার রীতি দেখা যায় । ভক্তদের বিশ্বাস ,মাতা সিদ্ধিদাত্রীর কৃপায় জীবনের সমস্ত কুপ্রভাব বিনষ্ট হয় এবং সফলতা আসে জীবনে।
+ There are no comments
Add yours