Durga Puja: নবপত্রিকা স্নান থেকে কুমারী পুজো, জানুন এই রীতিগুলোর মাহাত্ম্য

কলাবউকে গণেশের স্ত্রী ভাবছেন, আপনি ভুল জানেন না তো?
nabapatrika_snan_kumari_puja
nabapatrika_snan_kumari_puja

মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দুর্গাপূজার বিশেষ উল্লেখযোগ্য দুটি রীতি হল নবপত্রিকা স্নান ও কুমারী পুজো। দুটো রীতিরই আলাদা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। অনেকের আবার এই দুই রীতির কী কী মাহাত্ম্য রয়েছে, তা স্পষ্টও নয়। যেমন দুর্গাপূজার সময়ে মন্ডপে ঠাকুর দেখতে গিয়ে গণেশের পাশে কলাবউ-কে দেখতে পেয়ে অনেকেই মনে করেন যে, কলাবউ গণেশের স্ত্রী, কিন্তু আসলে তা সত্যি নয়। ফলে এমনই ভুল ধারণা রয়েছে অনেকেরই, তাই আজ এই রীতিরগুলোর পেছনের কী কী কারণ রয়েছে এবং কী এর মাহাত্ম্য, তা নিয়ে আলোচনা করা হল।

মহাসপ্তমীর 'নবপত্রিকা স্নান'

নবপত্রিকার আক্ষরিক অর্থ হল নয়টি পাতা। কিন্তু এখানে নয়টি উদ্ভিদ দিয়ে নবপত্রিকা গঠন করা হয়। এই নয়টি উদ্ভিদ মা দুর্গার নয়টি শক্তির প্রতীক। এই নয়টি উদ্ভিদ হল কদলী বা রম্ভা (কলাগাছ), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব(বেল), দাড়িম্ব(ডালিম), অশোক, মান ও ধান। এরপর একজোড়া বেল-সহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর আকার দেওয়া হয়। তারপর তাতে সিঁদুর দিয়ে সপরিবার প্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পুজো করা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নাম কলাবউ। তারপর তাতে সিঁদূর দিয়ে দুর্গা ও গণেশের দেবীর ডানপাশে রাখা হয়। আর এই কলাবউ গণেশের স্ত্রী নয়।

এটি দুর্গা অর্থাৎ গণেশের জননী। গণেশের স্ত্রীদের নাম রিদ্ধি ও সিদ্ধি। এই ৯টি গাছের পাতা শক্তির ৯টি রূপকে তুলে ধরে- ব্রহ্মাণী (কলা), কালিকা (কচু), দুর্গা (হলুদ), কার্ত্তিকী (জয়ন্তী), শিব (কদবেল), রক্তদন্তিকা (বেদানা), শোকরহিতা (অশোক), চামুণ্ডা (ঘটকচু), লক্ষ্মী (ধান)। মহাসপ্তমীর দিন সকালে পুরোহিত নিজের কাঁধে করে কাছের কোনও নদী বা জলাশয়ে নবপত্রিকা নিয়ে যান। তাঁর পিছন পিছন ঢাকীরা ঢাক বাজাতে বাজাতে এবং মহিলারা শঙ্খ ও উলুধ্বনি করতে করতে যান। এরপর নবপত্রিকাকে স্নান করানোর পর নতুন শাড়ি পরানো হয়। তারপর পূজা মণ্ডপে নিয়ে এসে নবপত্রিকাকে দেবীর ডান দিকে একটি কাষ্ঠসিংহাসনে স্থাপন করা হয়। এরপর এই চারদিন দেবদেবীদের সঙ্গে এটিও পুজো করা হয়। তবে অনেকে মনে করেন, নবপত্রিকার পূজার মাধ্যমে শস্যদেবীর পূজা করা হয়। এই শস্যবধূকেই দেবীর প্রতীক রূপে গ্রহণ করে প্রথমে পূজা করতে হয়। কারণ মনে করা হয়, শারদীয়া পূজার মূলে রয়েছে শস্য-দেবীর পূজা।

মহাঅষ্টমীর 'কুমারী পুজো'

অষ্টমীর দিন সাধারণত কুমারী পুজো করা হয়। এদিন বাচ্চা মেয়েদের দুর্গার মর্যাদা দিয়ে, দুর্গারূপে তাদের পুজো করা হয়। আগেকার দিনের মুনি-ঋষিরা প্রকৃতিকে নারীর সমান মনে করতেন। তাই কুমারী পুজোর মাধ্যমে প্রকৃতিকে পূজা করতেন তাঁরা। তাঁরা মনে করতেন মানুষের মধ্যেই রয়েছে ঈশ্বর। বিশেষ করে যাদের মন সৎ, যারা নিষ্পাপ তাদের মধ্যেই ভগবানের প্রকট সবথেকে বেশি। আর এই গুণ কেবলমাত্র কুমারীদের মধ্যে থাকতে পারে, এই ভেবেই অষ্টমী তিথিতে তাদের দেবীরূপে পুজো করা হয়।

শাস্ত্র অনুসারে সাধারণত ১ বছর থেকে ১৬ বছরের ঋতুস্রাব না হওয়া বালিকাদের কুমারী রূপে পূজা করা হয়। তাদের নতুন বস্ত্র, ফুলের মালা, মুকুট, পায়ে আলতা, কপালে সিঁদুরের টিপ ও তিলক পরিয়ে সাজিয়ে তাদের পুজো করা হয়।

শাস্ত্র মতে, কোলাসুর-কে বধ করার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় কুমারী পুজোর। গল্পে আছে, কোলাসুর যখন স্বর্গ ও মর্ত্য অধিকার করেন, তখন কোলাসুর-এর থেকে মুক্তি পেতে দেবতাগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হন। দেবতাগণের ডাকে সাড়া দিয়ে দেবী কুমারীরূপে কোলাসুর-কে বধ করেন। এর থেকেই মর্ত্যে কুমারী পুজোর প্রচলন শুরু হয়।

Share:

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn

You may also like

+ There are no comments

Add yours

Recent Articles