তৃতীয় পরিচ্ছেদ
ব্রহ্ম নির্লিপ্ত—জীবেরই সমন্ধে দুঃখাদি (Problem of Evail)
এই জগতে (Ramakrishna) বিদ্যামায়া অবিদ্যামায়া দুই-ই আছে; জ্ঞান-ভক্তি আছে, আবার কামিনী-কাঞ্চনও আছে, সৎও আছে, অসৎও আছে। ভালও আছে আবার মন্দও আছে। কিন্তু ব্রহ্ম নির্লুপ্ত। ভাল-মন্দ জীবের পক্ষে, সৎ-অসৎ জীবের পক্ষে, তাঁর ওতে কিছুই হয় না।
যেমন প্রদীপের সম্মুখে কেউ বা ভগবত পড়ছে, আর কেউ বা জাল করছে। প্রদীপ নির্লিপ্ত।
সূর্য শিষ্টের উপর আলো দিচ্ছে, আবার দুষ্টের উপরও দিচ্ছে।
যদি বল দুঃখ, পাপ, অশান্তি—এ-সকল তবে কি? তার উত্তরে এই যে, ও-সব জীবের পক্ষে। ব্রহ্ম নির্লিপ্ত। সাপের ভিতরে বিষ আছে, অন্যকে কামড়ালে মরে যায়। সাপের কিন্তু কিছু হয় না।
ব্রহ্ম অনির্বচনী অব্যপদেশ্যম—The Unknown and Unknowable
ব্রহ্ম যে কি, মুখে বলা যায় না। সব জিনিস উচ্ছিষ্ট হয়ে গেছে। বেদ, পুরাণ, তন্ত্র, ষড় দর্শন—সব এঁটো হয়ে গেছে! মুখে পড়া হয়েছে, মুখে উচ্চারণ হয়েছে—তাই এঁটো হয়েছে। কিন্তু একটি জিনিস কেবল উচ্ছিষ্ট হয় নাই, সে জিনিসটি ব্রহ্ম। ব্রহ্ম যে কি, আজ পর্যন্ত কেহ মুখে বলতে পারে নাই।
বিদ্যাসাগর (বন্ধুদের প্রতি)—বা! এটি তো বেশ কথা! আজ একটি নতুন কথা শিখলাম।
শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—এক বাপের দুটি ছেলে। ব্রহ্মবিদ্যা শিখবার জন্য ছেলে দুটিকে, বাপ আচার্যের হাতে দিলেন। কয়েক বৎসর পরে তারা গুরুগৃহ ফিরে এল, এসে বাপকে প্রণাম করলে। বাপের ইচ্ছা দেখেন, এদের ব্রহ্মজ্ঞান কিরূপ হয়েছে। বড় ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলেন, বাপ! তুমি তো সব পড়েছ, ব্রহ্ম কিরূপ বল দেখি? বড় ছেলেটি বেদ থেকে নানা শ্লোক বলে বলে ব্রহ্মের স্বরূপ বুঝাতে লাগল! বাপ চুপ করে রইলেন। যখন ছোট ছেলেকে জিজ্ঞাসা করলেন, সে হেঁটমুখে চুপ করে রইল। মুখে কোন কথা নাই। বাপ তখন প্রসন্ন হয়ে ছোট ছেলেকে বললেন, বাপু! তুমি একটু বুঝেছ। ব্রহ্ম যে কি। মুখে বলা যায় না।
আরও পড়ুনঃ “বিদ্যাসাগরের অনেক গুণ...দয়া সর্বজীবে, বিদ্যাসাগর দয়ার সাগর”
আরও পড়ুনঃ “দক্ষিণেশ্বরের পরমহংস সামান্য নহেন, এক্ষণে পৃথিবীর মধ্যে এত বড় লোক কেহ নাই”
আরও পড়ুনঃ "দু-চারটা মাছ এমন সেয়ানা যে, কখনও জালে পড়ে না"
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Whatsapp, Facebook, Twitter, Telegram এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours