মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শূন্যে পাঁচ রাউন্ড গুলি চালিয়ে রায় জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজোর সূচনা করা হয়। ২২৩ বছর ধরে চলে আসা এই রেওয়াজ আজও অব্যাহত মালদা জেলার পূর্বপ্রান্তে হবিবপুর থানার সিঙ্গাবাদ তিলাসন এলাকায় সিঙ্গাবাদ জমিদার বাড়িতে (Durga Puja 2023)। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাজনের ফলে এই জমিদারির সিংহভাগ অংশ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, তথা বর্তমান বাংলাদেশে পড়লেও আজও ভারতীয় ভূখণ্ডে সীমান্তের কাঁটাতার থেকে ৫০ মিটার দূরত্বে অবস্থিত বিশাল রায় জমিদার বাড়ি। সময়ের সাথে জমিদারি চলে গিয়েছে। সুবিশাল বাড়ির বিভিন্ন অংশ জুড়ে ধরেছে ফাটল। কিন্তু এখনও অক্ষুন্ন রয়েছে ঐতিহ্য।
বিপ্লবীদের পরামর্শে দেবী দুর্গার আরাধনা (Durga Puja 2023)
সুদূর উত্তরপ্রদেশ থেকে ডালের ব্যবসা করতে বাংলায় এসেছিলেন অবোধনারায়ণ রায়। মালদা জেলার হবিবপুর থানার সিঙ্গাবাদ স্টেশনে ট্রেনে করে এই ডাল নিয়ে আসতেন তিনি। এরপর নৌকাপথে সেই ডাল ঢাকা, রাজশাহী সহ কলকাতার খিদিরপুর বন্দরে বিক্রির উদ্দেশ্যে যেত। ব্যবসার সুবিধার জন্য এই এলাকায় ব্রিটিশ সরকারের কাজ থেকে তৎকালীন প্রায় তিন হাজার টাকায় জমিদারিত্ব ক্রয় করেন তিনি। এরপর এই এলাকায় শুরু করেন বসবাস। পরবর্তীতে তিনজন বিপ্লবীর পরামর্শে দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। ২২৩ বছর ধরে এই পুজো হয়ে আসছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জমিদারির সিংহভাগ অংশ চলে যায় সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে অর্থাৎ বাংলাদেশে বাকি অংশ রয়ে যায় ভারতবর্ষে।
ব্রিটিশ শাসকের আমল থেকেই জনপ্রিয় (Durga Puja 2023)
ব্রিটিশ শাসকের আমল থেকে এই রায় জমদার বাড়ির পুজো বেশ জনপ্রিয়। হাজার হাজার মানুষ এই পুজোতে অংশগ্রহণ করেন। এমনকি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও সীমান্তের ওপর থেকে মানুষ আসতেন এই পুজো দেখতে। কিন্তু বর্তমানে এখন সেই রকম পরিস্থিতি নেই। তবে রয়ে গেছে ঐতিহ্য। রয়েছে ইতিহাস। প্রাচীন এই জমিদার বাড়ির দেওয়ালে ফাটল ধরলেও এখনও দেওয়ালে রয়েছে বিশাল কুমিরের ছাল, যা পূর্বপুরুষরা শিকার করেছিলেন। এখনও এই পুজো (Durga Puja 2023) উপলক্ষে চারদিন থাকে পাত পেড়ে খাওয়ার ব্যবস্থা। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই সীমান্তবর্তী গ্রামে এই পুজোতে অংশগ্রহণ করতে আসেন মানুষ।
ইতিহাসের সাক্ষী
এই জমিদারির বংশধর রাকেশকুমার রায় জানান, এই বছরও চিরাচরিত প্রথা মেনে সপ্তমীর দিন পুনর্ভবা নদী থেকে পুজোর (Durga Puja 2023) জন্য জল নিয়ে আসা হবে। সেই সময় পাঁচ রাউন্ড শূন্যে গুলি চালিয়ে এই পুজোর সূচনা হয়, এই বছরও তা হবে। এই পুজোতে ভোগ রান্না থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু করেন উত্তরপ্রদেশের মৈথিল ব্রাহ্মণরা। দশমীর দিন এই তিলাসন গ্রামের পাশে পুনর্ভবা নদীতেই প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। তিনি আরও জানান, তাঁর পূর্বপুরুষের আমন্ত্রণে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এই পুজোতে অংশগ্রহণ করতে সিঙ্গাবাদ স্টেশন পর্যন্ত এসেছিলেন। কিন্তু জাতীয় কংগ্রেসের এক জরুরি বৈঠকের সূচনা পেয়েই মাঝপথ থেকে ফিরে যেতে হয় তাঁকে। ইতিহাসের অনেক সাক্ষী এই পুজো আজও সমাদরে পালিত হয়ে আসছে।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours