মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বিশ্বকর্মা পুজোর দিন আজ বাঁকুড়ার (Bankura) কেঞ্জাকুড়ার গ্রাম মেতেছে জাম্বো জিলিপি পরবে। ফি বছর ভাদ্র মাসের সংক্রান্তির দিন ভাদু ও বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষ্যে কেঞ্জাকুড়ার ঘরে ঘরে জাম্বো জিলিপি খাওয়ার পরম্পরা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। আর এমন পেল্লাই সাইজের জিলিপি তৈরির কারিগরদের মুন্সিয়ানা বাংলার মিষ্টান্ন শিল্পের গর্ব।
জাম্বো জিলিপির দাম কত জানেন? (Bankura)
বংশ পরম্পরায় এই কারিগররা জিলিপি তৈরি করে আসছেন। তবে ঠাকুরদা, বাবা, জ্যাঠাদের আমলে যে পেল্লাই সাইজের জিলিপি হত, তা দিন দিন কমতে বসেছে। আগে সাত-আট কেজি পর্যন্ত ওজনের জিলিপি বানানো হত। এখন তা অর্ধেকে এসে ঠেকেছে। এখন সবথেকে বেশি ৩ কেজি পর্যন্ত ওজনের জিলিপি ছাঁকা হচ্ছে। কেজি প্রতি জাম্বো জিলিপির দাম ১৫০ টাকা। কোভিড আবহে টানা দু'বছর এই জাম্বো জিলিপির বাজার মন্দা গিয়েছে। গত বছরও বাজার ভালো ছিল না। এবারও জাম্বো জিলিপির বরাতেও টান পড়েছে। কারণ, এক সময়ের বাঁকুড়ার (Bankura) কাঁসা, পিতলের শিল্প গ্রামের তকমা সাঁটা কেঞ্জাকুড়ায় কাঁসা-পিতল শিল্পতেও এখন ভাটার টান। এলাকার কাঁসা শিল্পীদের রুজিরুটিতে টান। পাশাপাশি, এখানকার তাঁত শিল্পও রুগ্নপ্রায়। সবমিলিয়ে কেঞ্জাকুড়ার গ্রামীণ অর্থনীতির মন্দার আঁচ লেগেছে জাম্বো জিলিপির সাইজে। এবার আর আকার নিয়ে মাথাব্যথা নেই। কেবল পরম্পরা রক্ষায় নাম মাত্র জিলিপির বেচা-কেনা হচ্ছে।
কী বললেন মিষ্টি দোকানের মালিক ও কারিগররা?
মন ভালো নেই জাম্বো জিলিপির দোকানদার নিতাই দত্তের। তিনি বলেন, আগে বড় সাইজের জিলিপি কেনার জন্যই দোকানে ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকত। আগে থেকে অর্ডারও থাকত অনেক। এখন সে সব আর কিছুই নেই। কারিগর ফটিক রায় জানান, এখন আর আগের মতো বিশাল মাপের জিলিপি হয় না। সেই বড় কড়াই, ঝাঝরাও নেই। এখন চাহিদা মতো সাড়ে সাতশো থেকে এক কেজি, দুই কেজি, আড়াই কেজি, সর্ব্বোচ্চ তিন কেজি ওজন পর্যন্ত জিলিপি ঝাঁকা হয়। এই জিলিপি তৈরিতে ব্যবহার করা হয় কলাইয়ের বেসন, চালগুঁড়ি ও রুল ময়দা। আর থাকে বেকিং সোডা। জিলিপি ঝেঁকে ফেলা হয় গরম রসে। তারপর তা শালপাতায় মুড়ে খবরের কাগজের আস্তরণ দিয়ে তুলে দেওয়া হয় ক্রেতার হাতে।
প্রিয়জনদের এই জিলিপি উপহার দেওয়ার চল রয়েছে গ্রামে
প্রদীপ মোদক নামে এক ক্রেতা বলেন, প্রতি বছরের মতো আমার মতো গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা এবারও জিলিপি কিনেছেন। নিজে কেনার পাশাপাশি, অন্যন্য আত্মীয়দেরও তিনি এই জিলিপি পাঠিয়েছেন। প্রিয়জনদের এই জিলিপি উপহার দেওয়ার চল রয়েছে এই গ্রামে। এক সময় এখানকার জমিদারদের মধ্যে কে কত বড় জিলিপি বাড়ি নিয়ে যেতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলত। এমনকী ছেলে বা মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে বাড়িতে জাম্বো জিলিপি পাঠিয়ে নিজের প্রতিপত্তি জাহির করার চল ছিল। এখন সে সব অতীত। নতুন প্রজন্ম এখন ফাস্টফুড মুখী। তাই তারাও জাম্বো জিলিপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় এই শিল্প আর কত দিন টিকে থাকবে? তা নিয়ে আশঙ্কায় এই জিলিপির কারিগররা।
দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।
+ There are no comments
Add yours