মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গে ক্রমশ বেড়েই চলেছে দুষ্কৃতিদের দাপট। খুন, মারামারি, শ্লীলতাহানির মত ঘটনা রাজ্যজুড়ে ঘটেই চলেছে, আর এখন এর প্রতিবাদ করতে গিয়েও দোষীদের কাছেই মারধর খেতে হচ্ছে। আর এমনই এক ঘটনায় মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। জানা গিয়েছে, মেয়ের শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করতে গিয়েই দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হয় বাবা। ঘটনাটি উলুবেড়িয়ার শ্যামপুরের নস্করপুর এলাকার। পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে এলাকারই ৩ যুবকের বিরুদ্ধে। এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছিল আগেই। বাকি ২ অভিযুক্তকেও বুধবার গ্রেফতার করল পুলিশ। ক্ষোভে ফেটে পড়েছে এলাকার বাসিন্দারা। অভিযুক্তদের কঠোরতম শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে বাবার দুষ্কীতিদের হাতে মৃত্যু, বাংলার এই নৃশংস ঘটনায় শাসকদলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে অন্যান্য রাজনৈতিক দল।
ঠিক কী ঘটেছিল?
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই দশম শ্রেণীর ছাত্রী হাওড়ার নস্করপুরের বাসিন্দা। রবিবার সন্ধ্যায় গোবিন্দপুর এলাকায় প্রাইভেট টিউশন পড়তে গিয়েছিল সে। রাত ন’টা নাগাদ টিউশন পড়ে বাড়ি ফিরছিল। অভিযোগ, সেই সময় তার পথ আটকায় ৩ মদ্যপ যুবক। অভিযোগ, ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করা হয়। ওই পড়ুয়া বাড়িতে গিয়ে তার বাবাকে বিষয়টা জানায়। স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ হন তিনি। রবিবার রাতেই ওই দুষ্কৃতীদের কাছে যান নাবালিকার বাবা। ঘটনার প্রতিবাদ করেন।
অভিযোগ, এর পরেই ওই ছাত্রীর বাবাকে আক্রমণ করে দুষ্কৃতীরা। তাঁকে অন্ধকার ফাঁকা মাঠে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। দুষ্কৃতীদের মারধরে অচৈতন্য হয়ে পড়েন ওই ছাত্রীর বাবা। এরপর তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে শ্যামপুরের একটি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় ওই ব্যক্তিকে। এরপর সোমবার রাতে মৃত্যু হয় ওই ব্যক্তির।
আরও পড়ুন:‘সিন্ধ আর অত্যাচার সহ্য করবে না’, জিএম সৈয়দের জন্মদিনে পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি
এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই শ্যামপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে মৃতের পরিবার। ধৃতদের বিরুদ্ধে খুন এবং পকসো আইন-সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। তাঁদের উলুবেড়িয়া আদালতে হাজির করানো হবে বুধবার। অভিযুক্ত ৩ যুবকের মধ্যে এলাকার দুই ভাই রয়েছে বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ এলাকায় মদ বিক্রি প্রচণ্ড বেড়েছে। পুলিশকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। যারা মদের কারবার করে, তাঁরা এলাকায় বেশ প্রভাবশালী।
শাসকদলকে কটাক্ষ বিজেপির
এই নৃশংস ঘটনায় শাসকদল ও রাজ্যের আইনশৃঙ্খলাকে কটাক্ষ করে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, বাংলায় দুষ্কৃতিরা ভয় পায় না। তারা আত্মবিশ্বাসী যে, রাজ্যে কেউ তাদের কোনও ক্ষতি করবে না। তারা পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলাকেও ভয় পায় না। এছাড়াও রাজ্যের অন্যান্য দলের নেতারা প্রশ্ন করেছেন, “এক ব্যক্তি তাঁর মেয়েকে শ্লীলতাহানির হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে মারা গেলেন। এটা নিয়ে কি সরকারের লজ্জা হওয়া উচিত নয়? এটি একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। এই অনাচারের জন্য কি তৃণমূল দায়ী নয়?”
রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন
প্রসঙ্গত, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও নারী নিগ্রহের অভিযোগ সামনে আসে। সেই তালিকায় নতুন সংযোজন উলুবেড়িয়ার এই ঘটনা। যার ফলে রাজ্যে ফের মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
+ There are no comments
Add yours