Category: পরম্পরা

Get updated History and Heritage and Culture and Religion related news from the Madhyom news portal madhyom.com, West Bengal leading news portal Madhyom.com

  • Ramakrishna 309: “কামিনী-কাঞ্চন স্পর্শ করে নাই; অনেকদিন ধরে কামিনী-কাঞ্চন ঘাঁটলে রসুনের গন্ধ হয়”

    Ramakrishna 309: “কামিনী-কাঞ্চন স্পর্শ করে নাই; অনেকদিন ধরে কামিনী-কাঞ্চন ঘাঁটলে রসুনের গন্ধ হয়”

     দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ     

    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১লা মার্চ
    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও তাঁহার নরেন্দ্রকে সন্ন্যাসের উপদেশ

    নরেন্দ্র আসিয়া প্রণাম করিয়া বসিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) নরেন্দ্রের সঙ্গে কথা কহিতেছেন। কথা কহিতে কহিতে মেঝেতে আসিয়া বসিলেন। মেঝেতে মাদুর পাতা। এতক্ষণে ঘর লোকে পরিপূর্ণ হইয়াছে। ভক্তেরাও আছেন, বাহিরের লোকও আসিয়াছেন (Kathamrita)।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (নরেন্দ্রের প্রতি)—ভাল আছিস? তুই নাকি গিরিশ ঘোষের ওখানে প্রায়ই যাস?

    নরেন্দ্র—আজ্ঞে হাঁ, মাঝে মাঝে যাই।

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের নিকট গিরিশ কয়মাস হইল নূতন আসা যাওয়া করিতেছেন। ঠাকুর বলেন, গিরিশের বিশ্বাস আঁকড়ে পাওয়া যায় না। যেমন বিশ্বাস, তেমনি অনুরাগ। বাড়িতে ঠাকুরের চিন্তায় সর্বদা মাতোয়ারা হয়ে থাকেন। নরেন্দ্র প্রায় যান, হরিপদ, দেবেন্দ্র ও অনেক ভক্ত তাঁর বাড়িতে প্রায় যান; গিরিশ তাঁহাদের সঙ্গে কেবল ঠাকুরের কথাই কন। গিরিশ সংসারে থাকেন, কিন্তু ঠাকুর দেখিতেছেন নরেন্দ্র সংসারে থাকিবেন না—কামিনী-কাঞ্চন ত্যাগ করিবেন। ঠাকুর নরেন্দ্রের সহিত কথা কহিতেছেন—

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)— তুই গিরিশ ঘোষের ওখানে বেশি যাস?

    সন্ন্যাসের অধিকারী—কৌমারবৈরাগ্য—গিরিশ কোন্‌ থাকের—রাবণ ও অসুরদের প্রকৃতিতে যোগ ও ভোগ 

    “কিন্তু রসুনের বাটি যত ধোও না কেন, গন্ধ একটু থাকবেই। ছোকরারা শুদ্ধ আধার! কামিনী-কাঞ্চন স্পর্শ করে নাই; অনেকদিন ধরে কামিনী-কাঞ্চন ঘাঁটলে রসুনের গন্ধ হয় (Ramakrishna)।

    “যেমন কাকে ঠোকরান আম। ঠাকুরদের দেওয়া যায় না, নিজেরও সন্দেহ। নূতন হাঁড়ি আর দইপাতা হাঁড়ি। দইপাতা হাঁড়িতে দুধ রাখতে ভয় হয়। প্রায় দুধ নষ্ট হয়ে যায়।

    “ওরা থাক আলাদা। যোগও আছে, ভোগও আছে। যেমন রাবণের ভাব—নাগকন্যা দেবকন্যাও নেবে, রামকেও লাভ করবে (Kathamrita)।

    “অসুররা নানা ভোগও কচ্ছে, আবার নারায়ণকেও লাভ কচ্ছে।”

    নরেন্দ্র—গিরিশ ঘোষ আগেকার সঙ্গ ছেড়েছে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—বড় বেলায় দামড়া হয়েছে, আমি বর্ধমানে দেখেছিলাম। একটা দামড়া, গাই গরুর কাছে যেতে দেখে আমি জিজ্ঞেস কল্লুম, এ কি হল? এ তো দামড়া! তখন গাড়োয়ান বললে, মশাই এ বেশি বয়সে দামড়া হয়েছিল। তাই আগেকার সংস্কার যায় নাই।

    “এক জায়গায় সন্ন্যাসীরা বসে আছে—একটি স্ত্রীলোক সেইখান দিয়ে চলে যাচ্ছে (Kathamrita)। সকলেই ঈশ্বরচিন্তা করছে, একজন আড়চোখে চেয়ে দেখলে। সে তিনটি ছেলে হবার পর সন্ন্যাসী হয়েছিল।

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

  • Ramakrishna 308: “জ্ঞান আর অজ্ঞান কাকে বলে?—যতক্ষণ ঈশ্বর দূরে ততক্ষণ অজ্ঞান; যতক্ষণ হেথা বোধ, ততক্ষণ জ্ঞান”

    Ramakrishna 308: “জ্ঞান আর অজ্ঞান কাকে বলে?—যতক্ষণ ঈশ্বর দূরে ততক্ষণ অজ্ঞান; যতক্ষণ হেথা বোধ, ততক্ষণ জ্ঞান”

    দক্ষিণেশ্বরে নবমীপূজা দিবসে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    প্রথম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৯শে সেপ্টেম্বর

    দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণ নরেন্দ্র, ভবনাথ প্রভৃতি সঙ্গে

    জীবকোটি সংশয়াত্মা (Sceptic)—ঈশ্বরকোটির স্বতঃসিদ্ধ বিশ্বাস 

    শ্রীরামকৃষ্ণ (ভবনাথের প্রতি)—কি জানিস, যারা জীবকোটি, তাদের বিশ্বাস সহজে হয় না। ঈশ্বরকোটির (Ramakrishna) বিশ্বাস স্বতঃসিদ্ধ। প্রহ্লাদ ‘ক’ লিখতে একেবারে কান্না—কৃষ্ণকে মনে পড়েছে! জীবের স্বভাব—সংশয়াত্মক বুদ্ধি! তারা বলে, হাঁ, বটে, কিন্তু—।

    “হাজরা কোনরকমে বিশ্বাস করবে না যে, ব্রহ্ম ও শক্তি, শক্তি আর শক্তিমান অভেদ। যখন নিষ্ক্রিয় তাঁকে ব্রহ্ম বলে কই; যখন সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয় করেন, তখন শক্তি বলি। কিন্তু একই বস্তু; অভেদ। অগ্নি বললে, দাহিকাশক্তি অমনি বুঝায়; দাহিকাশক্তি বললে, অগ্নিকে মনে পড়ে। একটাকে ছেড়ে আর একটাকে চিন্তা করবার জো নাই।

    “তখন প্রার্থনা করলুম, মা, হাজরা এখানকার মত উলটে দেবার চেষ্টা কচ্চে। হয় ওকে বুঝিয়ে দে, নয় এখান থেকে সরিয়ে দে। তার পরদিন, সে আবার এসে বললে, হাঁ মানি। তখন বলে যে, বিভু সব জায়গায় আছেন।”

    ভবনাথ (সহাস্যে)—হাজরার এই কথাতে আপনার এত কষ্ট বোধ হয়েছিল (Kathamrita)?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—আমার অবস্থা বদলে গেছে। এখন লোকের সঙ্গে হাঁকডাক করতে পারি না। হাজরার সঙ্গে তর্ক-ঝগড়া করব, এরকম অবস্থা আমার এখন নয়। যদু মল্লিকের বাগানে হৃদে বললে, মামা, আমাকে রাখবার কি তোমার ইচ্ছা নাই? আমি বললুম, না, সে অবস্থা এখন আমার নাই, এখন তোর সঙ্গে হাঁকডাক করবার জো নাই।

    পূর্বকথা—কামারপুকুরে শ্রীরামকৃষ্ণ—জগৎ চৈতন্যময়—বালকের বিশ্বাস 

    “জ্ঞান আর অজ্ঞান কাকে বলে?—যতক্ষণ ঈশ্বর দূরে এই বোধ ততক্ষণ অজ্ঞান; যতক্ষণ হেথা হেথা বোধ, ততক্ষণ জ্ঞান।

    “যখন ঠিক জ্ঞান হয়, তখন সব জিনিস চৈতন্যময় বোধ হয়। আমি শিবুর সঙ্গে আলাপ করতুম। শিবু তখন খুব ছেলেমানুষ—চার-পাঁচ বছরের হবে। ও-দেশে তখন আছি। মেঘ ডাকছে, বিদ্যুৎ হচ্ছে। শিবু বলছে, খুড়ো ওই চকমকি ঝাড়ছে! (সকলের হাস্য) একদিন দেখি, সে একলা ফড়িং ধরতে যাচ্ছে। কাছে গাছে পাতা নড়ছিল। তখন পাতাকে বলছে, চুপ, চুপ, আমি ফড়িং ধরব। বালক সব চৈতন্যময় দেখছে! সরল বিশ্বাস, বালকের বিশ্বাস না হলে ভগবানকে পাওয়া যায় না। উঃ আমার কি অবস্থা ছিল! একদিন ঘাস বনেতে কি কামড়েছে। তা ভয় হল, যদি সাপে কামড়ে থাকে! তখন কি করি! শুনেছিলাম, আবার যদি কামড়ায়, তাহলে বিষ তুলে লয়। অমনি সেইখানে বসে গর্ত খুঁজতে লাগলুম, যাতে আবার কামড়ায়। ওইরকম কচ্চি, একজন বললে, কি কচ্ছেন? সব শুনে সে বললে, ঠিক ওইখানে কামড়ানো চাই যেখানটিতে আগে কামড়েছে। তখন উঠে আসি। বোধ হয় বিছে-টিছে কামড়েছিল।

    “আর-একদিন রামলালের কাছে শুনেছিলুম, শরতে হিম ভাল। কি একটা শ্লোক আছে, রামলাল বলেছিল। আমি কলকাতা থাকে গাড়ি করে আসবার সময় গলা বাড়িয়ে এলুম, যাতে সব হিমটুকু লাগে। তারপর অসুখ (Kathamrita)!” (সকলের হাস্য)

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও ঔষধ 

    এইবার ঠাকুর ঘরের ভিতর আসিয়া বসিলেন। তাঁর পা দুটি একটু ফুলো ফুলো হয়েছিল। ভক্তদের হাত দিয়ে দেখতে বলেন, আঙুল দিলে ডোব হয় কি না। একটু একটু ডোব হতে লাগল; কিন্তু সকলেই বলতে লাগলেন, ও কিছুই নয়।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (ভবনাথকে)—তুই সিঁথির মহিন্দরকে ডেকে দিস। সে বললে (Kathamrita) তবে আমার মনটা ভাল হবে।

    ভবনাথ (সহাস্যে)—আপনার ঔষধে খুব বিশ্বাস। আমাদের অত নাই।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—ঔষধ তাঁরই। তিনিই একরূপে চিকিৎসক। গঙ্গাপ্রসাদ বললেন, আপনি রাত্রে জল খাবেন না। আমি ওই কথা বেদবাক্য ধরে রেখেছি। আমি জানি, সাক্ষাৎ ধন্বন্তরি।

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

  • Harichand Thakur: মতুয়া ধর্মের প্রবর্তকের আবির্ভাব তিথি, শুরু বারুণীর স্নান, জানুন হরিচাঁদ ঠাকুরের জীবনকথা

    Harichand Thakur: মতুয়া ধর্মের প্রবর্তকের আবির্ভাব তিথি, শুরু বারুণীর স্নান, জানুন হরিচাঁদ ঠাকুরের জীবনকথা

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আজ বৃহস্পতিবার মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রবর্তক শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের (Harichand Thakur) ২১৪তম আবির্ভাব তিথি। এই উপলক্ষ্যেই শুরু হচ্ছে বারুণী মেলার পুণ্যস্নান। জানা যায়, ১৮১২ খ্রীষ্টাব্দে বাংলাদেশের ওড়াকান্দির নিকটবর্তী সাফলিডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মতুয়া ধর্মাবলম্বী মানুষরা বাস করেন। এঁদের সকলের গুরু হরিচাঁদ ঠাকুর। বিগত কয়েক বছর ধরে মতুয়া সম্প্রদায় নিয়ে আগ্রহের সঞ্চার হয়েছে। সামাজিক আন্দোলনে হরিচাঁদ ঠাকুরের কৃতিত্ব প্রশংসার দাবি রাখে। জানা যায়, নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন যশোবন্ত ঠাকুর ও অন্নপূর্ণা দেবী। দুজনেই ছিলেন পরম বৈষ্ণব। এঁদের ঘরেই জন্ম নেন হরিচাঁদ ঠাকুর। অনেকেই তাঁকে গৌতম বুদ্ধ ও চৈতন্যদেবের অবতার হিসেবে মনে করেন। কেউ কেউ তাঁকে ভগবান বিষ্ণুর অবতার মানেন।

    সাদামাঠা জীবনযাপনে অভ্যস্ত হরিচাঁদ ঠাকুর (Harichand Thakur)

    সাদামাঠা জীবনযাপনে অভ্যস্ত হরিচাঁদ ঠাকুর (Harichand Thakur) ছোট থেকে সেভাবে পড়াশোনার সুযোগ পাননি। তিনি নিজেই স্বশিক্ষিত হয়েছেন। হিন্দু, বৌদ্ধশাস্ত্র, দেশীয় চিকিৎসা, ভূমি ব্যবস্থাসহ একাধিক বিষয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। পরবর্তীকালে অবতার পুরুষ হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ হয়। নিজের ব্যক্তিত্ব, কাজ, জনসেবা, ধর্মকথা এসবের মাধ্যমে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এরপর থেকেই হরিচাঁদ ঠাকুরের ভক্তদের মতুয়া বলার প্রচলন হয় এবং ওড়াকান্দি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। বর্তমান বাংলাদেশের এই ওড়াকান্দি তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে যেখানে লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম হয় প্রতি বছর।

    হরিচাঁদ ঠাকুরের সরল ধর্মীয় দর্শন মতুয়া সম্প্রদায়কে জনপ্রিয় করে তোলে

    হরিচাঁদ ঠাকুরের (Harichand Thakur) সরল ধর্মীয় দর্শন খুব তাড়াতাড়ি মতুয়া সম্প্রদায়কে জনপ্রিয় করে তোলে। তাঁর অন্যতম বাণী ছিল, ‘হাতে নাম মুখে কাজ’। এই মূলমন্ত্রকে সঙ্গী করে তিনি সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি ও আর্থসামাজিক পরিস্থিতির উন্নতির জন্য সদা সচেষ্ট ছিলেন জীবনভর। মাত্র ৬৬ বছর বয়সে তাঁর জীবনাবসান হয়। তাঁর মহাপ্রয়াণের আগেই নিজের উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করে যান জ্যেষ্ঠপুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুরকে (Matua Sect)। মতুয়া সম্প্রদায়ের সশক্তিকরণের জন্য অনেক পদক্ষেপ করেছিলেন হরিচাঁদ ঠাকুর।

    মতুয়াদের পরবর্তীকালে সংগঠিত করেন গুরুচাঁদ ঠাকুর

    পরবর্তীকালে, পিতার দেখানো পথেই গুরুচাঁদ ঠাকুর হিন্দু সমাজের অবহেলিতদের একত্র করেছিলেন বলে জানা যায়। তবে একথা উল্লেখ করতেই হবে যে, হরিচাঁদ ঠাকুর এবং ওঁর পুত্র গুরুচাঁদ দুজনেই হিন্দু সমাজের নমঃশূদ্রদের মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেননি। হিন্দু ধর্মের অন্যান্য সম্প্রদায় বরং তেলি, মালি, মাহিষ্যসহ সকল সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করে গিয়েছেন পিতা-পুত্র। দুজনেই মতুয়া ভাবাদর্শ প্রচারের সঙ্গে শিক্ষা বিস্তারেও বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন বলে জানা যায়। জানা যায়, দলিত সমাজের মানুষ হয়ে নিজের পিতার স্বপ্নপূরণ করেন গুরুচাঁদ ঠাকুর। জানা যায়, বর্ণহিন্দুদের জন্য ১৮৮০ সালে গুরুচাঁদ ঠাকুর ওড়াকান্দিতে প্রথম স্কুল স্থাপন করেন এবং ১৯০৮ সালে সরকারি সহায়তায় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে রূপান্তরিত হয় সেটি।

    হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি উপলক্ষে শুরু হয় বারুণী মেলা

    প্রতি বছরই হরিচাঁদ ঠাকুরের (Harichand Thakur) জন্মতিথি উপলক্ষে শুরু হয় বারুণী মেলা। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ঠাকুরনগর ঠাকুরবাড়ির কামনা সাগরে পূণ্য স্নান করেন লক্ষাধিক মতুয়া ভক্ত। দূর দূরান্ত থেকে ব্যাপক ভক্ত সমাগম হয়। এই আবহে ঠাকুরনগরে বসে মতুয়া ধর্ম মহামেলা। সাত দিন ধরে চলা এই মেলাতে মতুয়া সম্প্রদায় ছাড়াও অন্যান্য অনেক মানুষ ভিড় করেন। মতুয়া (Matua Sect) ভক্তরা জানাচ্ছেন, পুরাণেও উল্লেখ পাওয়া যায় বারুণী কথার। তাঁদের মতে, স্কন্দপুরাণে লেখা আছে চৈত্রমাসের কৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে শতভিষা নক্ষত্র যোগ হলে সেই তিথি বারুণী নামে পরিচিত হয়।

    বহুশত গঙ্গাস্নানের ফল মেলে বলে বিশ্বাস ভক্তদের

    মতুয়া ধর্মের ভক্তদের বিশ্বাস, এই তিথিতে স্নান করলে বহুশত গঙ্গাস্নানের ফল পাওয়া যায়। প্রসঙ্গত, হিমালয় কন্যা গঙ্গার অপরনাম বারুণী। মতুয়া ভক্তদের কাছে বারুণী স্নান এখানে গঙ্গা স্নানেরই প্রতিরুপ। বাংলা বছর অনুযায়ী, প্রতি চৈত্র মাসের শতভিষা নক্ষত্রযুক্ত মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে এই স্নান অনুষ্ঠিত হয়। শাস্ত্র মতে, কোনও বছর যদি ঐদিনটি শনিবার হয় তবে ওই বারুণী স্নানের মাহাত্ম্য আরও বেড়ে যায়। ভক্তদের বিশ্বাস, বারুণী স্নানে মেলে পুণ্য, দূর হয় পাপ। হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি যেন মতুয়া ভক্তদের মিলন মেলা।

  • Ramakrishna 307: “চক্ষু উন্মীলন করিয়া দেখেন ঠাকুর মাতোয়ারা হইয়া নৃত্য করিতেছেন, বলিতেছেন—জয় জয় দুর্গে! জয় জয় দুর্গে!”

    Ramakrishna 307: “চক্ষু উন্মীলন করিয়া দেখেন ঠাকুর মাতোয়ারা হইয়া নৃত্য করিতেছেন, বলিতেছেন—জয় জয় দুর্গে! জয় জয় দুর্গে!”

    দক্ষিণেশ্বরে নবমীপূজা দিবসে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    প্রথম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৯শে সেপ্টেম্বর

    দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণ নরেন্দ্র, ভবনাথ প্রভৃতি সঙ্গে

    আজ নবমীপূজা, সোমবার, ২৯শে সেপ্টেম্বর, ১৮৮৪ খ্রীষ্টাব্দ। এইমাত্র রাত্রি প্রভাত হইল। মা-কালীর মঙ্গল আরতি হইয়া গেল। নহবত হইতে রোশনচৌকি প্রভাতী রাগরাগিণী আলাপ করিতেছে। চাঙ্গারি হস্তে মালীরা ও সাজি হস্তে ব্রাহ্মণেরা (Kathamrita) পুষ্পচয়ন করিতে আসিতেছেন। মার পূজা হইবে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) অতি প্রত্যূষে অন্ধকার থাকিতে থাকিতে উঠিয়াছেন। ভবনাথ, বাবুরাম, নিরঞ্জন ও মাস্টার গত রাত্রি হইতে রহিয়াছেন। তাঁহারা ঠাকুরের ঘরের বারান্দায় শুইয়াছিলেন। চক্ষু উন্মীলন করিয়া দেখেন ঠাকুর মাতোয়ারা হইয়া নৃত্য করিতেছেন। বলিতেছেন—জয় জয় দুর্গে! জয় জয় দুর্গে!—

    ঠিক একটি বালক! কোমড়ে কাপড় নাই। মার নাম করিতে করিতে ঘরের মধ্যে নাচিয়া বেড়াইতেছেন।

    কিয়ৎক্ষণ পরে আবার বলিতেছেন—সহজানন্দ, সহজানন্দ! শেষ গোবিন্দের নাম বারবার বলিতেছেন—

    প্রাণ হে গোবিন্দ মম জীবন!

    ভক্তেরা উঠিয়া বসিয়াছেন (Kathamrita)! একদৃষ্টে ঠাকুরের ভাব দেখিতেছেন। হাজরাও কালীবাড়িতে আছেন। ঠাকুরের ঘরের দক্ষিণ-পূর্ব বারান্দায় তাঁহার আসন। লাটুও আছেনও তাঁহার সেবা করেন! রাখাল এ সময় বৃন্দাবনে। নরেন্দ্র মঝে মাঝে আসিয়া দর্শন করেন। আজ নরেন্দ্র আসিবেন।

    ঠাকুরের ঘরের উত্তরদিকে ছোট বারান্দাটিতে ভক্তেরা শুইয়াছিলেন। শীতকাল, তাই ঝাঁপ দেওয়া ছিল। সকলের মুখ ধোয়ার পরে এই উত্তর বারান্দাটিতে ঠাকুর আসিয়া একটি মাদুরে বসিলেন। ভবনাথ ও মাস্টার (Ramakrishna) কাছে বসিয়া আছেন। অন্যান্য ভক্তেরাও মাঝে মাঝে আসিয়া বসিতেছেন।

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

  • Nilamadhaba Temple: স্বপ্নাদেশ পেয়ে ভগবানকে খুঁজতে যান রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন! জানুন ওড়িশার নীলমাধব মন্দিরের মাহাত্ম্য

    Nilamadhaba Temple: স্বপ্নাদেশ পেয়ে ভগবানকে খুঁজতে যান রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন! জানুন ওড়িশার নীলমাধব মন্দিরের মাহাত্ম্য

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সোমবার ওড়িশার কন্টিলোতে অবস্থিত নীলমাধব মন্দির (Nilamadhaba Temple) পরিদর্শন করেন দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। বৈষ্ণব ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মন্দির ওড়িশা তথা ভারতবর্ষের হিন্দু সমাজের কাছে এক উল্লেখযোগ্য তীর্থস্থান। সারা বছর ধরেই প্রচুর ভক্ত নিজেদের মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্য এই মন্দিরে আসেন। নীলমাধব মন্দিরেই প্রতিফলিত হয় হিন্দু জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য। প্রাচীন জনজাতি সমাজের রীতিনীতিও বোঝা যায় এই মন্দিরে পৌঁছালে। এই মন্দির যেন কথা বলে। হাজার হাজার বছর ধরে সমুদ্র, নদী, অরণ্য কীভাবে আমাদের মানব সমাজকে প্রতিমুহূর্তে লালন পালন করে আসছে, সেই কথাই ধ্বনিত হয় এই মন্দিরে। ওড়িশা রাজ্যের প্রচলিত লোককথা অনুযায়ী তথা সে রাজ্যের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস হল, ভগবান জগন্নাথ এই প্রাচীনতম বৈষ্ণব উপাসনা তীর্থে সর্বদাই বাস করেন। তিনি এখানে থেকেই ভক্তদের মঙ্গলের কথা চিন্তা করেন। ভগবান নীলমাধব হলেন ভগবান বিষ্ণুরই অন্যতম রূপ। পুরীতেই ইনি ভগবান জগন্নাথ হিসেবে পূজিত হচ্ছেন। ভক্তদের বিশ্বাস ও ওড়িশা রাজ্যের প্রচলিত লোককথা অনুযায়ী, পুরীতে জগন্নাথদেবের পুজোর আগে থেকেই ভগবান বিষ্ণুর রূপ হিসেবে নীলমাধবের পুজো করা হত। গবেষকরা জানাচ্ছেন, নীলমাধব শব্দটি এসেছে নীলা মাধব থেকে। বিষ্ণুসহস্র নামে উল্লেখ রয়েছে ভগবান বিষ্ণুর ২৪টি প্রধান নামের কথা। এই নামগুলির মধ্যে অন্যতম হল নীলমাধব। ঐতিহাসিক তথ্যসূত্র থেকে জানা যায়, নীলমাধবের পুজো ওড়িশায় প্রায় হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে হয়ে আসছে। এই প্রতিবেদনে জানব নীলমাধবের পুজো কীভাবে শুরু হল?

    নীলমাধবের পুজো চারটি নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল

    ওড়িশা রাজ্যে (Odisha) নীলমাধবের পুজো (Nilamadhaba Temple) চারটি নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল। এই নদীগুলি হল- মহানদী, ঋষিকুল্য, বৈতরণী এবং প্রাচী। যে স্থানে এই মন্দির অবস্থিত সেই কন্টিলো হল ওড়িশার নয়াগড় জেলায় অবস্থিত একটি জনপদ। এই স্থানের দূরত্ব পুরী থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরে। ওড়িশা রাজ্যের লোককথা থেকে জানা যায়, ভগবান বিষ্ণু প্রথমে নীলমাধবের আকারে কাঠের মূর্তি হিসেবে কন্টিলোতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। অর্থাৎ পুরীর মন্দিরের আগে থেকেই কন্টিলোতে চলে আসছে পুজো। প্রসঙ্গত, পুরীর জগন্নাথ মন্দির নির্মাণের সঙ্গে সম্পর্কিত হলেন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন। ভক্তদের বিশ্বাস- জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার মূর্তি স্থাপন করেছিলেন তিনি।

    ভগবান বিষ্ণু স্বপ্নে নির্দেশ দেন রাজাকে (Nilamadhaba Temple)

    কন্টিলোর নীলমাধব মন্দির এবং রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের পৌরাণিক কাহিনীও বেশ জনপ্রিয় হয়ে রয়েছে। প্রচলিত কাহিনী অনুযায়ী, স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু ধর্মপ্রাণ রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নকে একদিন স্বপ্নে দেখা দেন। ভগবান বিষ্ণু এরপর ইন্দ্রদ্যুম্নকে জানান, ওড় দেশের (ওড়িশা) মহানদীর তীরে (Odisha) তিনি নীলমাধব রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। যেখানে তিনি আবির্ভূত হয়েছেন সেখানে শবর জনগোষ্ঠীর প্রধান তাঁকে একটি বড় গাছের নিচে পুজো করছে। এই স্বপ্ন দেখার পরের দিনই ইন্দ্রদ্যুম্ন, তাঁর বিশ্বস্ত ব্রাহ্মণ পুরোহিত বিদ্যাপতিকে নীলমাধবের মূর্তি খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। তিনি আরও বলেন, ওই মূর্তি নিয়ে আসতে হবে পুরুষোত্তম (পুরী) ক্ষেত্রে। সেখানেই একটি মন্দিরে তা স্থাপন করা হবে।

    বিদ্যাপতির শবর রাজ্যে গমন (Nilamadhaba Temple)

    রাজার নির্দেশে বিদ্যাপতি ব্রাহ্মণ বেরিয়ে পড়েন। পথে ঘুরতে ঘুরতে তিনি পৌঁছান সেই শবর রাজ্যে। যে রাজ্যের কথা ভগবান বিষ্ণুর দেওয়া স্বপ্ন থেকে জানতে পেরেছিলেন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন। শবর রাজ্যে পৌঁছে সেখানকার জনজাতি গোষ্ঠীর প্রধান বিশ্ববসুর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। বিশ্ববসুর কাছে বিদ্যাপতি জনজাতি রাজ্যের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে চান। এই সময় বিদ্যাপতি বিশ্ববসুর কন্যা ললিতার প্রেমে পড়েন এবং তাঁকে বিয়ে করেন। পরবর্তীকালে বিদ্যাপতি লক্ষ্য করেন যে বিশ্ববসু প্রায়ই একটি গোপন স্থানে নীলমাধবের পুজো করতে যাচ্ছেন। স্থানটি কোথায় তা দেখা যায় না। কারণ অরণ্যের মধ্যে ঢুকেই অদৃশ্য হয়ে যেতেন বিশ্ববসু।

    বিদ্যাপতির নীলমাধব দর্শন

    এতে বিদ্যাপতির কৌতূহল বাড়তে থাকে। সেই মতো বিদ্যাপতি এ কথা জানান তাঁর স্ত্রী ললিতাকে । ললিতা সেই মতো তাঁর বাবা বিশ্ববসুকে রাজি করান যাতে তিনি বিদ্যাপতিকে নীলমাধবের দর্শনের জন্য নিয়ে যান। কিন্তু বনের গভীরে নিয়ে যাওয়ার সময় বিদ্যাপতির চোখ বেঁধে দেন বিশ্ববসু। বিদ্যাপতি ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমান ব্যক্তি। তিনি হাতে করে সর্ষের বীজ লুকিয়ে রেখেছিলেন। চলার পথে সেই বীজগুলোকে ফেলতে ফেলতে যান। এরপর বিদ্যাপতিকে নীলমাধবের দর্শন করান বিশ্ববসু। পরবর্তীকালে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের কাছে ফিরে গিয়ে বিদ্যাপতি জানান যে, নীলমাধবকে তিনি জনজাতি রাজ্যে খুঁজে পেয়েছেন। পরবর্তীকালে নিজের দলবল নিয়ে বনের মধ্যে বেড়ে ওঠা সরিষা গাছের পথ অনুসরণ করেন রাজা। কিন্তু সে সময় নীলমাধবের দর্শন তিনি পাননি।

    ভগবান বিষ্ণু আবির্ভূত হন রাজার সামনে

    এরপরে ব্যর্থতায় হতাশ হয়ে পড়েন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন। শুরু করেন কঠোর তপস্যা। অন্ন-জল কোনও কিছু গ্রহণ করেননি। সারাক্ষণ ভগবান বিষ্ণুর দেখা পাওয়ার জন্য তিনি ব্যাকুল হয়ে ধ্যান করতে লাগলেন। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, ভগবান বিষ্ণু এরপর হতাশ করেননি তাঁর এই পরম ভক্তকে। প্রকট হন রাজার সামনে। তাঁকে জানান যে, পুরীর সমুদ্র সৈকতে তিনি কাঠের রূপে (দারু ব্রহ্মা) আবির্ভূত হবেন। একইসঙ্গে ভগবান বিষ্ণু রাজাকে পুরীতে বিশাল মন্দির নির্মাণের নির্দেশ দেন। তিনি জানান, ওই মন্দিরেই তিনি জগন্নাথদেব হিসেবে পূজিত হবেন। এর পরবর্তীকালে রাজা দারু ব্রহ্মা বা ঐশ্বরিক কাঠকে খুঁজে পান। পরবর্তীকালে সেগুলোকে তিনি প্রাসাদে নিয়ে আসেন। এরপরে ভগবান বিশ্বকর্মা এক ছুতোরের রূপ ধারণ করে মূর্তি খোদাই এর কাজ শুরু করেন। বিশ্বকর্মা রূপী ওই ছুতোরের শর্ত একটিই ছিল, বন্ধ দরজার পিছনে এই কাজ হবে এবং সম্পূর্ণ গোপনীয়তার সঙ্গে। যদি কাজ করার সময় তাঁকে কেউ বিরক্ত করে তাহলে কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। এভাবেই মূর্তি তৈরির কাজ চলতে থাকল। সাতদিন পরে রাজা ও রানি মূর্তি দেখতে অস্থির হয়ে পড়েন এবং ওই ছুতোর যেখানে কাজ করছিলেন সেই দরজা খুলে দেন। সে সময় দেখা যায় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার তিনটি মূর্তি তৈরি করা হয়েছে বটে তবে তা অসম্পূর্ণ। আজও পুরীতে পূজিত হয় এই তিন মূর্তি। তবে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন জনজাতিদের প্রতি তাঁর কর্তব্য তখনও ভোলেননি। ললিতা যে গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন তাঁদেরকে দৈত্যপতি বলা হত। সেই ললিতার গোত্রকে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে বিশেষ সেবায়েত হিসেবে মর্যাদা দেন রাজা। এইভাবেই শবর জনগোষ্ঠী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে পুরীতে। আজও পর্যন্ত ললিতার সেই বংশধর এবং দৈত্যপতিরা সেবা করে চলেছেন জগন্নাথদেবের।

  • Ramakrishna 306: “ও রাম! ও রাম! আমি ভজনহীন, সাধনহীন, জ্ঞানহীন, ভক্তিহীন—আমি ক্রিয়াহীন! রাম শরণাগত!”

    Ramakrishna 306: “ও রাম! ও রাম! আমি ভজনহীন, সাধনহীন, জ্ঞানহীন, ভক্তিহীন—আমি ক্রিয়াহীন! রাম শরণাগত!”

    রামের বাটীতে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৮শে সেপ্টেম্বর

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে

    সন্ধ্যা হইল। কিঞ্চিৎ বাহ্য লাভ করিয়া ঠাকুর (Ramakrishna) মার নাম করিয়া আনন্দে গান ধরিলেন:

    শিব সঙ্গে সদা রঙ্গে আনন্দে মগনা,
    সুধাপানে ঢল ঢল ঢলে কিন্তু পড়ে না (মা)।
    বিপরীত রতাতুরা, পদভরে কাঁপে ধরা,
    উভয়ে পাগলের পারা, লজ্জা ভয় আর মানে না।

    সন্ধ্যা হইয়াছে। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ হরিনাম করিতেছেন (Kathamrita)। মাঝে মাঝে হাততালি দিতেছেন। সুস্বরে বলিতেছেন—হরিবোল, হরিবোল, হরিময় হরিবোল; হরি হরি হরোবোল।

    আবার রামনাম করিতেছেন,—রাম, রাম, রাম, রাম! রাম, রাম, রাম, রাম, রাম!

    ঠাকুরের প্রার্থনা—How to Pray

    ঠাকুর এইবার প্রার্থনা করিতেছেন—“ও রাম! ও রাম! আমি ভজনহীন, সাধনহীন, জ্ঞানহীন, ভক্তিহীন—আমি ক্রিয়াহীন! রাম শরণাগত! ও রাম শরণাগত! দেহসুখ চাইনে রাম! লোকমান্য চাইনে রাম! অষ্টসিদ্ধি চাইনে রাম! শতসিদ্ধি চাইনে রাম! শরণাগত, শরণাগত! কেবল এই করো—যেন তোমার শ্রীপাদপদ্মে শুদ্ধাভক্তি হয় রাম! আর যেন তোমার ভুবনমোহিনী মায়ায় মুগ্ধ হই না, রাম! ও রাম, শরণাগত!”

    ঠাকুর (Ramakrishna) প্রার্থনা করিতেছেন, সকলে একদৃষ্টে তাঁহার দিকে চাহিয়া রহিয়াছেন। তাঁহার করুণামাখা স্বর শুনিয়া অনেকে অশ্রুসংবরণ করিতে পারিতেছেন না।

    রাম কাছে আসিয়া দাঁড়াইয়াছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (রামের প্রতি)—রাম! তুমি কোথায় ছিলে (Kathamrita)?

    রাম আজ্ঞা, উপরে ছিলাম।

    ঠাকুর ও ভক্তদের সেবার জন্য রাম আয়োজন করিতেছিলেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (রামের প্রতি, সহাস্যে)—উপরে থাকার চাইতে নিচে থাকা কি ভাল নয়? নিচু জমিতে জল জমে, উঁচু জমি থেকে জল গড়িয়ে চলে আসে।

    রাম (হাসিতে হাসিতে)—আজ্ঞা, হাঁ।

    ছাদে পাতা হইয়াছে। রামচন্দ্র ঠাকুর ও ভক্তগণ লইয়া গেলেন ও পরিতোষ করিয়া খাওয়াইলেন। উৎসবান্তে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna), নিরঞ্জন, মাস্টার প্রভৃতি সঙ্গে অধরের বাড়ি গমন করিলেন। সেখানে মা আসিয়াছেন। আজ মহাষ্টমী! অধরের বিশেষ প্রার্থনা, ঠাকুর থাকিবেন, তবে তাঁহার পুজা সার্থক (Kathamrita) হইবে।

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

  • Ramakrishna 305: “কেদার অতি বিনীতভাবে হাতজোড় করিয়া অতি মৃদু ও মিষ্ট কথায় ঠাকুরের কাছে কি নিবেদন করিতেছেন”

    Ramakrishna 305: “কেদার অতি বিনীতভাবে হাতজোড় করিয়া অতি মৃদু ও মিষ্ট কথায় ঠাকুরের কাছে কি নিবেদন করিতেছেন”

    রামের বাটীতে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৮শে সেপ্টেম্বর

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে

    কীর্তনান্তে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna), বিজয় নরেন্দ্র ও অন্যান্য ভক্তেরা আসন গ্রহণ করিলেন। সকলের দৃষ্টি ঠাকুরের দিকে। সন্ধ্যার কিছু বিলম্ব আছে। ঠাকুর ভক্তদের সহিত কথা কহিতেচেন। তাঁহাদের কুশল প্রশ্ন করিতেছেন। কেদার অতি বিনীতভাবে হাতজোড় করিয়া অতি মৃদু ও মিষ্ট কথায় ঠাকুরের কাছে কি নিবেদন করিতেছেন। কাছে নরেন্দ্র, চুনি, সুরেন্দ্র, রাম, মাস্টার ও হরিশ।

    কেদার (শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতি, বিনীতভাবে)—মাথাঘোরাটা কিসে সেরে যাবে?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সস্ন্নেহে)—ও হয়; আমার হয়েছিল! একটু একটু বাদামের তেল দিবেন। শুনেছি, দিলে সারে।

    কেদার—যে আজ্ঞা (Kathamrita)।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) (চুনির প্রতি)—কিগো, তোমরা সব কেমন আছ?

    চুনি—আজ্ঞা, এখন সব মঙ্গল। বৃন্দাবনে বলরামবাবু, রাখাল এঁরা সব ভাল আছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—তুমি অত সন্দেশ কেন পাঠিয়েছ?

    চুনি—আজ্ঞা, বৃন্দাবন থেকে এসেছি —

    চুনিলাল বলরামের সঙ্গে শ্রীবৃন্দাবনে গিয়াছিলেন ও কয়মাস ছিলেন। ছুটি শেষ হইয়াছে, তাই কলিকাতায় সম্প্রতি ফিরিয়াছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (হরিশের প্রতি)—তুই দুই-একদিন পরে যাস। অসুখ করেছে, আবার সেখানে পড়বি।

    (নারাণের প্রতি, সস্নেহে)—‘বোস্‌ কাছে এসে বোস্‌! কাল যাস—গিয়ে সেখানে খাবি। (মাস্টারকে দেখাইয়া) এর সঙ্গে যাবি? (মাস্টারের প্রতি) কিগো?

    মাস্টারের সেই দিনই ঠাকুরের সঙ্গে যাইবার ইচ্ছা। তাই চিন্তা করিতেছেন। সুরেন্দ্র অনেকক্ষণ ছিলেন, মাঝে একবার বাড়ি গিয়াছিলেন। বাড়ি হইতে আসিয়া ঠাকুরের কাছে দাঁড়াইলেন।

    সুরেন্দ্র কারণ পান করেন। আগে বড় বাড়াবাড়ি ছিল। ঠাকুর সুরেন্দ্রের অবস্থা দেখিয়া চিন্তিত হইয়াছিলেন। একেবারে পানত্যাগ করিতে বলিলেন না। বলিলেন, সুরেন্দ্র! দেখ, যা খাবে, ঠাকুরকে নিবেদন করে দিবে। আর যেন মাথা টলে না ও পা টলে না। তাঁকে চিন্তা করতে করতে তোমার আর পান করতে ভাল লাগবে না। তিনি কারণানন্দদায়িনী। তাঁকে লাভ করলে সহজানন্দ (Kathamrita) হয়।

    সুরেন্দ্র কাছে দাঁড়াইয়া আছেন। ঠাকুর (Ramakrishna) তাঁর দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া বলিয়া উঠিলেন, তুমি কারণ খেয়েছ? বলিয়াই ভাবে আবিষ্ট।

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

  • Ramakrishna 304: “ব্রহ্মা পাগল, বিষ্ণু পাগল, আর পাগল শিব, তিন পাগলে যুক্তি করে ভাঙল নবদ্বীপ”

    Ramakrishna 304: “ব্রহ্মা পাগল, বিষ্ণু পাগল, আর পাগল শিব, তিন পাগলে যুক্তি করে ভাঙল নবদ্বীপ”

    রামের বাটীতে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    প্রথম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৮শে সেপ্টেম্বর

    মহাষ্টমীদিবসে রামের বাটীতে শ্রীরামকৃষ্ণ

    বিজয়, কেদার, রাম, সুরেন্দ্র, চুনি, নরেন্দ্র, নিরঞ্জন, বাবুরাম, মাস্টার 

    এই হৃদিপদ্মে বসাইয়ে, মনোমানসে পূজিব ॥
    যদি বল কালী খেলে, কালের হাতে ঠেকা যাব।
    আমার ভয় কি তাতে, কালী ব’লে কালেরে কলা দেখাব ॥
    ডাকিনী যোগিনী দিয়ে, তরকারী বানায়ে খাব।
    মুণ্ডমালা কেড়ে নিয়ে অম্বল সম্বরা চড়াব ॥
    কালীর বেটা শ্রীরামপ্রসাদ, ভালমতে তাই জানাব।
    তাতে মন্ত্রের সাধন, শরীর পতন, যা হবার তাই ঘটাইব ॥

    “উন্মাদের মতন অবস্থা হয়েছিল। এই ব্যাকুলতা (Ramakrishna)!”

    নরেন্দ্র গান গাইতে লাগিলেন:

    আমায় দে মা পাগল করে, আর কাজ নাই জ্ঞানবিচারে।

    গান শুনিতে শুনিতে ঠাকুর আবার সমাধিস্থ।

    সমাধিভঙ্গের পর ঠাকুর গিরিরানীর ভাব আরোপ করিয়া আগমনী গাইতেছেন। গিরিরানী বলছেন, পুরবাসীরে! আমার কি উমা এসেছে? ঠাকুর প্রেমোন্মত্ত হইয়া গান গাইতেছেন।

    গানের পর ঠাকুর ভক্তদের বলিতেছেন (Kathamrita), “আজ মহাষ্টমী কিনা; মা এসেছেন! তাই এত উদ্দীপন হচ্ছে!”

    কেদার—প্রভু! আপনিই এসেছেন। মা কি আপনি ছাড়া?

    ঠাকুর (Ramakrishna) অন্যদিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করিয়া আনমনে গান ধরিলেন:

    তারে কই পেলুম সই, হলাম যার জন্য পাগল।
    ব্রহ্মা পাগল, বিষ্ণু পাগল, আর পাগল শিব।
    তিন পাগলে যুক্তি করে ভাঙল নবদ্বীপ ॥
    আর এক পাগল দেখে এলাম বৃন্দাবন মাঝে।
    রাইকে রাজা সাজায়ে আপনি কোটাল সাজে ॥
    আর এক পাগল দেখে এলাম নবদ্বীপের পথে।
    রাধাপ্রেম সুধা বলে, করোয়া কীস্তি হাতে।

    আবার ভাবে মত্ত হইয়া ঠাকুর গাহিতেছেন:

    কখন কি রঙ্গে থাক মা শ্যামা সুধাতরঙ্গিণী!

    ঠাকুর গান করিতেছেন। হঠাৎ “হরিবোল হরিবোল” (বলিতে Kathamrita) বলিতে বিজয় দণ্ডায়মান। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) ভাবোন্মত্ত হইয়া বিজয়াদি ভক্তসঙ্গে নৃত্য করিতে লাগিলেন।

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

  • Ramakrishna 303: “আমার ভয় কি তাতে, কালী ব’লে কালেরে কলা দেখাব, ডাকিনী যোগিনী দিয়ে, তরকারী বানায়ে খাব”

    Ramakrishna 303: “আমার ভয় কি তাতে, কালী ব’লে কালেরে কলা দেখাব, ডাকিনী যোগিনী দিয়ে, তরকারী বানায়ে খাব”

    রামের বাটীতে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    প্রথম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৮শে সেপ্টেম্বর

    মহাষ্টমীদিবসে রামের বাটীতে শ্রীরামকৃষ্ণ

    বিজয়, কেদার, রাম, সুরেন্দ্র, চুনি, নরেন্দ্র, নিরঞ্জন, বাবুরাম, মাস্টার 

    পূর্বকথা—প্রথম উন্মাদে ব্রহ্মজ্ঞান ও জাতিভেদবুদ্ধি ত্যাগ—কামারপুকুর গমন; ধনী কামারিনী; রামলালের বাপ—গোবিন্দ রায়ের নিকট আল্লামন্ত্র 

    “আমার কামারবাড়ির দাল খেতে ইচ্ছা ছিল; ছেলেবেলা থেকে কামাররা বলত বামুনরা কি রাঁধতে যানে? তাই খেলুম, কিন্তু, কামারে কামারে গন্ধ । (সকলের হাস্য)

    “গোবিন্দ (Kathamrita) রায়ের কাছে আল্লামন্ত্র নিলাম। কুঠিতে প্যাঁজ দিয়ে রান্না ভাত হল। খানিক খেলুম। মণি মল্লিকের (বরাহনগরের) বাগানে ব্যান্নুন রান্না খেলুম, কিন্তু কেমন একটা ঘেন্না হল।

    “দেশে গেলুম; রামলালের বাপ ভয় পেলে (Ramakrishna)। ভাবলে, যার তার বাড়িতে খাবে। ভয় পেলে, পাছে তাদের জাতে বার করে দেয়। আমি তাই বেশি দিন থাকতে পারলুম না; চলে এলুম।”

    বেদ, পুরাণ, তন্ত্রমতে শুদ্ধাচার কিরূপ 

    “বেদ পুরাণে বলেছে শুদ্ধাচার। বেদ পুরাণে যা বলে গেছে — ‘করো না, অনাচার হবে’ — তন্ত্রে আবার তাই ভাল বলেছে।

    “কি অবস্থাই গেছে! মুখ করতুম আকাশ-পাতাল জোড়া, আর ‘মা’ বলতুম (Ramakrishna)। যেন, মাকে পাকড়ে আনছি। যেন জাল ফেলে মাছ হড়হড় করে টেনে আনা (Kathamrita)। গানে আছে:

    এবার কালী তোমায় খাব। (খাব খাব গো দীন দয়াময়ী)।
    (তারা গণ্ডযোগে জন্ম আমার)
    গণ্ডযোগে জনমিলে সে হয় মা-খোকা ছেলে।
    এবার তুমি খাও কি আমি খাই মা, দুটার একটা করে যাব ॥
    হাতে কালী মুখে কালী, সর্বাঙ্গে কালী মাখিব।
    যখন আসবে শমন বাঁধবে কসে, সেই কালী তার মুখে দিব ॥
    খাব খাব বলি মা গো উদরস্থ করিব।
    এই হৃদিপদ্মে বসাইয়ে, মনোমানসে পূজিব ॥
    যদি বল কালী খেলে, কালের হাতে ঠেকা যাব।
    আমার ভয় কি তাতে, কালী ব’লে কালেরে কলা দেখাব ॥
    ডাকিনী যোগিনী দিয়ে, তরকারী বানায়ে খাব।
    মুণ্ডমালা কেড়ে নিয়ে অম্বল সম্বরা চড়াব ॥
    কালীর বেটা শ্রীরামপ্রসাদ, ভালমতে তাই জানাব।
    তাতে মন্ত্রের সাধন, শরীর পতন, যা হবার তাই ঘটাইব ॥

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

  • Ramakrishna 302: “হে ঈশ্বর তুমি আশীর্বাদ কর, যেন আমরা ভক্তি-নদীতে একেবারে ডুবে যাই”

    Ramakrishna 302: “হে ঈশ্বর তুমি আশীর্বাদ কর, যেন আমরা ভক্তি-নদীতে একেবারে ডুবে যাই”

    রামের বাটীতে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    প্রথম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৮শে সেপ্টেম্বর

    মহাষ্টমীদিবসে রামের বাটীতে শ্রীরামকৃষ্ণ

    বিজয়, কেদার, রাম, সুরেন্দ্র, চুনি, নরেন্দ্র, নিরঞ্জন, বাবুরাম, মাস্টার

    কথাগুলি বলিতে বলিতে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) প্রকৃতিস্থ হইলেন। এখন ভক্তদের সহিত কথা কহিতে পারিবেন।

    কেদারকে গান করিতে বলিলেন। কেদার গাইতেছেন:

        (১)   —   মনের কথা কইব কি সই কইতে মানা।
    দরদী নইলে প্রাণ বাঁচে না ॥
    মনের মানুষ হয় যে-জনা,
    ও তার নয়নেতে যায় গো চেনা, সে দুই-এক জনা,
    ভাবে ভাসে রসে ডোবে, ও সে উজান পথে করে আনাগোনা ॥
    (ভাবের মানুষ উজান পথে করে আনাগোনা।)

        (২)   —   গৌর প্রেমের ঢেউ লেগেছে গায়।
    তার হিল্লোলে পাষণ্ড-দলন এ-ব্রহ্মাণ্ড তলিয়ে যায় ॥
    মনে করি ডুবে তলিয়ে রই,
    গৌরচাঁদের প্রেম-কুমিরে গিলেছে গো সই।
    এমন ব্যথার ব্যথী কে আর আছে
    হাত ধরে টেনে তোলায় ॥

        (৩) —যে-জন প্রেমের ঘাট চেনে না।

    গানের পর আবার ঠাকুর ভক্তদের সহিত কথা কহিতেছেন। শ্রীযুক্ত কেশব সেনের ভাইপো নন্দলাল উপস্থিত ছিলেন। তিনি ও তাঁর দুই-একটি ব্রাহ্মবন্ধু ঠাকুরের কাছেই বসিয়াছিলেন (Kathamrita)।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (বিজয়াদি ভক্তদের প্রতি)—কারণের বোতল একজন এনেছিল, আমি ছুঁতে গিয়ে আর পারলুম না।

    বিজয়—আহা!

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—সহজানন্দ হলে অমনি নেশা হয়ে যায়! মদ খেতে হয় না। মার চরণামৃত দেখে আমার নেশা হয়ে যায়। ঠিক যেন পাঁচ বোতল মদ খেলে হয়!

    জ্ঞানী ও ভক্তদের অবস্থা—জ্ঞানী ও ভক্তদের আহারের নিয়ম 

    “এ অবস্থায় সব সময় সবরকম খাওয়া চলে না।”

    নরেন্দ্র—খাওয়া-দাওয়া সম্বন্ধে যদৃচ্ছালাভই ভাল।

    শ্রীরামকৃষ্ণ(Kathamrita)—অবস্থা বিশেষে উটি হয়। জ্ঞানীর পক্ষে কিছুতেই দোষ নাই। গীতার মতে জ্ঞানী আপনি খায় না, কুণ্ডলিনীকে আহুতি দেয়।

    “ভক্তের পক্ষে উটি নয়। আমার এখনকার অবস্থা,—বামুনের দেওয়া ভোগ না হলে খেতে পারি না! আগে এমন অবস্থা ছিল, দক্ষিণেশ্বরের ওপার থেকে মড়াপোড়ার যে গন্ধ আসতো, সেই গন্ধ নাক দিয়ে টেনে নিতাম এত মিষ্ট লাগতো। এখন সব্বাইয়ের খেতে পারি না।

    “পারি না বটে, আবার এক-একবার হয়ও। কেশব সেনের ওখানে (নববৃন্দাবন) থিয়েটারে আমায় নিয়ে গিয়েছিল। লুচি, ছক্কা আনলে। তা ধোবা কি নাপিত আনলে, জানি না (Kathamrita)। (সকলের হাস্য) বেশ খেলুম। রাখাল বললে, একটু খাও।

    নরেন্দ্রের (Ramakrishna) প্রতি—“তোমার এখন হবে। তুমি এতেও আছ, আবার ওতেও আছ! তুমি এখন সব খেতে পারবে।

    (ভক্তদের প্রতি)—“শূকর মাংস খেয়ে যদি ঈশ্বরে টান থাকে, সে লোক ধন্য! আর হবিষ্য করে যদি কামিনী-কাঞ্চনে মন তাকে তাহলে সে ধিক্‌।”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

LinkedIn
Share