ঠাকুর ছোট নরেনকে একদৃষ্টে দেখিতেছেন। দেখিতে দেখিতে সমাধিস্ত হইলেন। শুদ্ধার্থ ভক্তের ভিতর ঠাকুর কি নারায়ণ দর্শন করিতেছেন!
ভক্তেরা এক দৃষ্টে সেই সমাধি চিত্র দেখিতেছেন।
কিয়ৎ পরে সমাধি ভঙ্গ হইল, ঠাকুরের বায়ু স্থির হইয়া গিয়েছিল। এইবার দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিলেন। ক্রমে বহির্জগতে মন আসিতেছে। ভক্তদের দিকে দৃষ্টিপাত করিতেছেন।
এখনও ভাবস্থ হইয়া রহিয়াছেন। এবার প্রত্যেক ভক্তকে সম্বোধন করিয়া কাহার কী হইবে ও কাহার কীরূপ অবস্থা, কিছু কিছু বলিতেছেন।
ছোট নরেনের প্রতি —
“তোকে দেখবার জন্য ব্যাকুল হচ্ছিলাম। তোর হবে, এক একবার। আচ্ছা, তুই কী ভালোবাসিস—জ্ঞান না ভক্তি?”
ছোট নরেন: “শুধু ভক্তি।”
শ্রীরামকৃষ্ণ: “আমাকে না জানলে ভক্তি কাকে করবি?”
(মাস্টারকে দেখাইয়া সহাস্যে)
“তবে শ্রদ্ধার! তা যে কালে বলেছে—শুধু ভক্তি চাই, এর অবশ্য মানে আছে।
আপনা আপনি ভক্তি আসা—সংস্কার না থাকলে হয় না। এইটি প্রেমভক্তির লক্ষণ।
জ্ঞানভক্তি—বিচার করা ভক্তি।”
ছোট নরেনের প্রতি: “দেখি তোর শরীর, জামা খোল দেখি। বেশ বুকের আয়তন! তোর হবে। মাঝে মাঝে আসিস।”
ঠাকুর এখনও ভাবস্থ। অন্য ভক্তদের সস্নেহে এক একজনকে সম্বোধন করিয়া আবার বলিতেছেন—
পল্টুর প্রতি: “তোরও হবে, তবে একটু দেরিতে হবে।”
বাবুরামের প্রতি: “তোকে টানছি না কেন? শেষে কী একটা হাঙ্গামা হবে!”
মোহিনী মোহনের প্রতি:
“তুমি তো আছই—একটু বাকি আছে, সেটুকু গেলে কর্মকাজ, সংসার—কিছু থাকে না। সব কাজ যাওয়া কি ভালো?”
(এই বলিয়া তাহার দিকে একদৃষ্টে সর্বদা তাকাইয়া রহিলেন, যেন তাহার হৃদয়ের অন্তরতম প্রদেশের সমস্ত ভাব দেখিতেছেন। মোহিনী মোহন কী ভাবিতেছিলেন—‘ঈশ্বরের জন্য সব যাওয়াই ভালো।’)
কিয়ৎক্ষণ পরে ঠাকুর আবার বলিতেছেন—
“ভাগবত পণ্ডিতকে একটি পাশ দিয়ে ঈশ্বর রেখে দেন—তা না হলে ভাগবত কে শুনাবে? রেখে দেন লোক শিক্ষার জন্য। মা সেইজন্য সংসারে রেখেছেন।”