Category: পরম্পরা

Get updated History and Heritage and Culture and Religion related news from the Madhyom news portal madhyom.com, West Bengal leading news portal Madhyom.com

  • Ramakrishna 532: “আমি কি হাড়, না মাংস, না রক্ত, না নাড়ীভুঁড়ি? আমি খুঁজতে খুঁজতে ‘তুমি’ এসে পড়ে”

    Ramakrishna 532: “আমি কি হাড়, না মাংস, না রক্ত, না নাড়ীভুঁড়ি? আমি খুঁজতে খুঁজতে ‘তুমি’ এসে পড়ে”

    ৫০ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কলিকাতা নগরে ভক্তমন্দিরে

    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ২৮শে জুলাই
    শ্রীযুক্ত নন্দ বসুর বাটীতে শুভাগমন

    চৈতন্যলাভ ভোগান্তে—না তাঁর কৃপায় 

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তোমরা কোথায়? তিনিই সব হয়েছেন। যতক্ষণ না তাঁকে জানতে পাচ্ছ, ততক্ষণ ‘আমি’ ‘আমি’ করছ!

    “সকলে তাঁকে জানতে পারবে—সকলেই উদ্ধার হবে, তবে কেহ সকাল সকাল খেতে পায়, কেহ দুপুর বেলা কেউ বা সন্ধ্যার সময়; কিন্তু কেহ অভুক্ত থাকবে না! সকলেই আপনার স্বরূপকে জানতে পারবে।”

    পশুপতি — আজ্ঞা হাঁ, তিনিই সব হয়েছেন বোধ হয়।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—আমি কি, এটা খোঁজো দেখি। আমি কি হাড়, না মাংস, না রক্ত, না নাড়ীভুঁড়ি? আমি খুঁজতে খুঁজতে ‘তুমি’ এসে পড়ে, অর্থাৎ অন্তরে সেই ঈশ্বরের শক্তি বই আর কিছুই নাই। ‘আমি’ নাই! — তিনি। তোমার অভিমান নাই! এত ঐশ্বর্য। ‘আমি’ একেবারে ত্যাগ হয় না; তাই যদি যাবে না তবে থাক শ্যালা ঈশ্বরের দাস হয়ে। (সকলের হাস্য) ঈশ্বরের ভক্ত, ঈশ্বরের ছেলে, ঈশ্বরের দাস, এ-অভিমান ভাল। যে ‘আমি’ কামিনী-কাঞ্চনে আসক্ত হয়, সেই ‘আমি’ কাঁচা আমি, সে ‘আমি’ ত্যাগ করতে হয়।

    অহংকারের এইরূপ ব্যাখ্যা শুনিয়া গৃহস্বামী ও অন্যান্য সকলে সাতিশয় প্রীতিলাভ করিলেন।

    ঐশ্বর্যের অহংকার ও মত্ততা

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)— জ্ঞানের দুটি লক্ষণ, প্রথম অভিমান থাকবে না; দ্বিতীয় শান্ত স্বভাব। তোমার দুই লক্ষণই আছে। অতএব তোমার উপর ঈশ্বরের অনুগ্রহ আছে।

    “বেশি ঐশ্বর্য হলে, ঈশ্বরকে ভুল হয়ে যায়; ঐশ্বর্যের স্বভাবই ওই। যদু মল্লিকের বেশি ঐশ্বর্য হয়েছে, সে আজকাল ঈশ্বরীয় কথা কয় না। আগে আগে বেশ ঈশ্বরের কথা কইত।

    “কামিনী-কাঞ্চন একপ্রকার মদ। অনেক মদ খেলে খুড়া-জ্যাঠা বোধ থাকে না, তাদেরই বলে ফেলে, তোর গুষ্টির; মাতালের গুরু-লঘু বোধ থাকে না।”

    নন্দ বসু—তা বটে।

    Theosophy — ক্ষণকাল যোগে মুক্তি — শুদ্ধাভক্তিসাধন 

    পশুপতি—মহাশয়! এগুলো কি সত্য— Spiritualism, Theosophy? সূর্যলোক, চন্দ্রলোক? নক্ষত্রলোক?

    শ্রীরামকৃষ্ণ—জানি না বাপু! অত হিসাব কেন? আম খাও; কত আমগাছ, কত লক্ষ ডাল, কত কোটি পাতা, এ হিসাব করা আমার দরকার কি? আমি বাগানে আম খেতে এসেছি, খেয়ে যাই।

    “চৈতন্য যদি একবার হয়, যদি একবার ঈশ্বরকে কেউ জানতে পারে তাহলে ও-সব হাবজা-গোবজা বিষয় জানতে ইচ্ছাও হয় না। বিকার থাকলে কত কি বলে,—‘আমি পাঁচ সের চালের ভাত খাবো রে’ — ‘আমি একজালা জল খাবো রে।’— বৈদ্য বলে, ‘খাবি? আচ্ছা খাবি!’ —এই বলে বৈদ্য তামাক খায়। বিকার সেরে, যা বলবে তাই শুনতে হয়।”

  • Ramakrishna 531: “পঙ্কে বদ্ধ কর করী, পঙ্গুরে লঙ্ঘাও গিরি..কারে দাও মা! ব্রহ্মপদ, কারে কর অধোগামী”

    Ramakrishna 531: “পঙ্কে বদ্ধ কর করী, পঙ্গুরে লঙ্ঘাও গিরি..কারে দাও মা! ব্রহ্মপদ, কারে কর অধোগামী”

    ৫০ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কলিকাতা নগরে ভক্তমন্দিরে

    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ২৮শে জুলাই
    শ্রীযুক্ত নন্দ বসুর বাটীতে শুভাগমন

    চৈতন্যলাভ ভোগান্তে—না তাঁর কৃপায় 

    “তবে ওকথা বলতে পার তুমি। তোমার নাকি ভোগ করবার ইচ্ছা আছে, তাই তুমি অমন কথা বলছ। ও এক মত আছে বটে, ভোগ শান্তি না হলে চৈতন্য (Ramakrishna) হয় না! তবে ভোগেই বা কি করবে? কামিনী-কাঞ্চনের (Kathamrita) সুখ—এই আছে, এই নাই, ক্ষণিক! কামিনী-কাঞ্চনের ভিতর আছে কি? আমড়া, আঁটি আর চামড়া; খেলে অমলশূল হয়। সন্দেশ, যাই গিলে ফেললে আর নাই!”

    ঈশ্বর কি পক্ষপাতী—অবিদ্যা কেন—তাঁর খুশি

    নন্দ বসু একটু চুপ করিয়া আছেন, তারপর বলিতেছেন,—ও-সব তো বলে বটে! ঈশ্বর কি পক্ষপাতী? তাঁর কৃপাতে যদি হয়, তাহলে বলতে হবে ঈশ্বর পক্ষপাতী?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তিনি নিজেই সব, ঈশ্বর নিজেই জীব, জগৎ সব হয়েছেন। যখন পূর্ণ জ্ঞান হবে, তখন ওই বোধ। তিনি মন, দেহ বুদ্ধি, দেহ—চতুর্বিংশতি তত্ত্ব সব হয়েছেন। তিনি আর পক্ষপাত কার উপর করবেন?

    নন্দ বসু—তিনি নানারূপ কেন হয়েছেন? কোনখানে জ্ঞান, কোনখানে অজ্ঞান?

    শ্রীরামকৃষ্ণ—তাঁর খুশি।

    অতুল—কেদারবাবু (চাটুজ্যে) বেশ বলেছেন। একজন জিজ্ঞাসা করেছিল, ঈশ্বর সৃষ্টি কেন করলেন, তাতে বলেছিলেন যে, যে মিটিং-এ তিনি সৃষ্টির মতলব করেছিলেন, সে মিটিং-এ আমি ছিলাম না। (সকলের হাস্য)

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তাঁর খুশি।

    এই বলিয়া ঠাকুর গান গাইতেছেন (Kathamrita):

    সকলি তোমার ইচ্ছা, ইচ্ছাময়ী তারা তুমি।
    তোমার কর্ম তুমি কর মা, লোকে বলে করি আমি।
    পঙ্কে বদ্ধ কর করী, পঙ্গুরে লঙ্ঘাও গিরি,
    কারে দাও মা! ব্রহ্মপদ, কারে কর অধোগামী ॥
    আমি যন্ত্র তুমি যন্ত্রী, আমি ঘর তুমি ঘরণী।
    আমি রথ তুমি রথী, যেমন চালাও তেমনি চলি ॥

    “তিনি আনন্দময়ী! এই সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয়ের লীলা করছেন। অসংখ্য জীব, তার মধ্যে দু-একটি মুক্ত হয়ে যাচ্ছে, — তাতেও আনন্দ। ‘ঘুড়ির লক্ষের দুটো-একটা কাটে, হেসে দাও মা হাত চাপড়ি’। কেউ সংসারে বদ্ধ হচ্ছে, কেউ মুক্ত হচ্ছে।

    “ভবসিন্ধু মাঝে মন উঠছে ডুবছে কত তরী!”

    নন্দ বসু— তাঁর খুশি! আমরা যে মরি!

  • Ramakrishna 530: “যে যেমন কর্ম করবে সেরূপ ফল পাবে’…ঈশ্বরের শরণাগত হলে কর্ম ক্ষয় হয়”

    Ramakrishna 530: “যে যেমন কর্ম করবে সেরূপ ফল পাবে’…ঈশ্বরের শরণাগত হলে কর্ম ক্ষয় হয়”

    ৫০ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কলিকাতা নগরে ভক্তমন্দিরে

    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ২৮শে জুলাই
    শ্রীযুক্ত নন্দ বসুর বাটীতে শুভাগমন

    ঘরের দেওয়ালের উপর শ্রীযুক্ত কেশব সেনের (Ramakrishna) নববিধানের ছবি টাঙ্গানো ছিল। শ্রীযুক্ত সুরেশ মিত্র ওই ছবি করাইয়াছিলেন! তিনি ঠাকুরের একজন প্রিয় ভক্ত। ওই ছবিতে পরমহংসদেব কেশবকে দেখাইয়া দিতেছেন, ভিন্ন পথ দিয়া সব ধর্মাবলম্বীরা ঈশ্বরের দিকে যাইতেছেন। গন্তব্য স্থান এক, শুধু পথ আলাদা (Kathamrita)।

    শ্রীরামকৃষ্ণন(Ramakrishna)—ও যে সুরেন্দ্রের পট!

    প্রসন্নের পিতা (সহাস্যে)—আপনিও ওর ভিতরে আছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে)—ওই একরকম, ওর ভিতর সবই আছে।—ইদানিং ভাব!

    এই কথা বলিতে বলিতে হঠাৎ ঠাকুর ভাবে বিভোর হইতেছেন। ঠাকুর জগন্মাতার সঙ্গে কথা কহিতেছেন।

    কিয়ৎক্ষণ পরে মাতালের ন্যায় বলিতেছেন, “আমি বেহুঁশ হই নাই।” বাড়ির দিকে দৃষ্টি করিয়া বলিতেছেন, “বড় বাড়ি! এতে কি আছে? ইট, কাঠ, মাটি!”

    কিয়ৎক্ষণ পরে বলিতেছেন, “ঈশ্বরীয় মূর্তিসকল দেখে বড় আনন্দ হল।” আবার বলিতেছেন, “উগ্রমূর্তি, কালী, তারা (শব শিবা মধ্যে শ্মশানবাসিনী) রাখা ভাল নয়, রাখলে পূজা দিতে হয়।”

    পশুপতি (সহাস্যে)—তা তিনি যতদিন চালাবেন, ততদিন চলবে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—তা বটে, কিন্তু ঈশ্বরেতে মন রাখা ভাল; তাঁকে ভুলে থাকা ভাল নয়।

    নন্দ বসু—তাঁতে মতি কই হয়?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Kathamrita)—তাঁর কৃপা কই হয়? তাঁর কি কৃপা করবার শক্তি আছে?

    ঈশ্বর কর্তা—না কর্মই ঈশ্বর 

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) সহাস্যে—বুঝেছি, তোমার পণ্ডিতের মত, ‘যে যেমন কর্ম করবে সেরূপ ফল পাবে’; ওগুলো ছেড়ে দাও! ঈশ্বরের শরণাগত হলে কর্ম ক্ষয় হয়। আমি মার কছে ফুল হাতে করে বলেছিলাম, ‘মা! এই লও তোমার পাপ, এই লও তোমার পুণ্য; আমি কিছুই চাই না, তুমি আমায় শুদ্ধাভক্তি দাও। এই লও তোমার ভাল, এই লও তোমার মন্দ; আমি ভালমন্দ কিছুই চাই না, আমায় শুদ্ধাভক্তি দাও। এই লও তোমার ধর্ম, এই লও তোমার অধর্ম; আমি ধর্মাধর্ম কিছুই চাই না, আমায় শুদ্ধাভক্তি দাও। এই লও তোমার জ্ঞান, এই লও তোমার অজ্ঞান; আমি জ্ঞান-অজ্ঞান কিছুই চাই না, আমায় শুদ্ধাভক্তি দাও। এই লও তোমার শুচি, এই লও তোমার অশুচি, আমায় শুদ্ধাভক্তি দাও।’

    নন্দ বসু—আইন তিনি ছাড়াতে পারেন?

    শ্রীরামকৃষ্ণ—সে কি! তিনি ঈশ্বর, তিনি সব পারেন; যিনি আইন করেছেন, তিনি আইন বদলাতে (Kathamrita) পারেন।

  • Ramakrishna 529: “হনুমানের মাথায় হাত দিয়া শ্রীরাম আশীর্বাদ করিতেছেন, হনুমানের দৃষ্টি শ্রীরামের পাদপদ্মে”

    Ramakrishna 529: “হনুমানের মাথায় হাত দিয়া শ্রীরাম আশীর্বাদ করিতেছেন, হনুমানের দৃষ্টি শ্রীরামের পাদপদ্মে”

    ৫০ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কলিকাতা নগরে ভক্তমন্দিরে

    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ২৮শে জুলাই

    শ্রীযুক্ত নন্দ বসুর বাটীতে শুভাগমন

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) এইবার ছবি দেখিতে গাত্রোত্থান করিলেন। সঙ্গে মাস্টার ও আরও কয়েকজন ভক্ত, গৃহস্বামীর ভ্রাতা শ্রীযুক্ত পশুপতিও সঙ্গ সঙ্গে থাকিয়া ছবিগুলি দেখাইতেছেন।

    ঠাকুর (Ramakrishna) প্রথমেই চতুর্ভুজ বিষ্ণুমূর্তি দর্শন করিতেছেন। দেখিয়াই ভাবে বিভোর হইলেন। দাঁড়াইয়াছিলেন, বসিয়া পড়িলেন। কিয়ৎকাল ভাবে আবিষ্ট হইয়া রহিলেন।

    হনুমানের মাথায় হাত দিয়া শ্রীরাম আশীর্বাদ করিতেছেন। হনুমানের দৃষ্টি শ্রীরামের পাদপদ্মে। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ অনেকক্ষণ ধরিয়া এই ছবি দেখিতেছেন। ভাবে বলিতেছেন, “আহা! আহা!”

    তৃতীয় ছবি বংশীবদন শ্রীকৃষ্ণ কদমতলায় দাঁড়াইয়া আছেন।

    চতুর্থ—বামনাবতার। ছাতি মাতায় বলির যজ্ঞে যাইতেছেন। শ্রীরামকৃষ্ণ বলিতেছেন, “বামন!” এবং একদৃষ্টে দেখিতেছেন।

    এইবার নৃসিংহমূর্তি দর্শন করিয়া ঠাকুর গোষ্ঠের ছবি দর্শন করিতেছেন। শ্রীকৃষ্ণ রাখালদের সহিত বৎসগণ চরাইতেছেন। শ্রীবৃন্দাবন ও যমুনাপুলিন! মণি বলিয়া উঠিলেন—চমৎকার ছবি।

    সপ্তম ছবি দেখিয়া ঠাকুর বলিতেছেন—“ধূমাবতী”; অষ্টম—ষোড়শী; নবম—ভুবনেশ্বরী; দশম—তারা; একাদশ—কালী। এই সকল মূর্তি দেখিয়া ঠাকুর বলিতেছেন—“এ-সব উগ্রমূর্তি! এ-সব মূর্তি বাড়িতে রাখতে নাই। এ-মূর্তি বাড়িতে রাখলে পূজা দিতে হয়। তবে আপনাদের অদৃষ্টের জোর আছে, আপনারা রেখেছেন।”

    শ্রীশ্রীঅন্নপূর্ণা দর্শন করিয়া ঠাকুর ভাবে বলিতেছেন, “বা! বা!”

    তারপরই রাই রাজা। নিকুঞ্জবনে সখীপরিবৃতা সিংহাসনে বসিয়া আছেন। শ্রীকৃষ্ণ (Ramakrishna) কুঞ্জের দ্বারে কোটাল সাজিয়া বসিয়া আছেন। তারপর দোলের ছবি। ঠাকুর অনেকক্ষণ ধরিয়া এর পরের মূর্তি দেখিতেছেন। গ্লাসকেসের ভিতর বীণাপাণির মূর্তি; দেবী বীনাহস্তে মাতোয়ারা হইয়া রাগরাগিনী আলাপ করিতেছেন।

    ছবি দেখা সমাপ্ত হইল। ঠাকুর আবার গৃহস্বামীর কাছে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া গৃহস্বামীকে বলিতেছেন, “আজ খুব আনন্দ হল। বা! আপনি তো খুব হিন্দু! ইংরাজী ছবি না রেখে যে এই ছবি রেখেছেন—খুব আশ্চর্য!”

    শ্রীযুক্ত নন্দ বসু বসিয়া আছেন। তিনি ঠাকুরকে আহ্বান করিয়া বলিতেছেন, “বসুন! দাঁড়িয়ে রইলেন কেন?”

    শ্রীরামকৃষ্ণ (বসিয়া)—এ পটগুলো খুব বড় বড়। তুমি বেশ হিন্দু।

    নন্দ বসু—ইংরাজী ছবিও আছে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) — সে-সব অমন নয়। ইংরাজীর দিকে তোমার তেমন নজর নাই।

  • Ramakrishna 528: “ব্রাহ্মণী কন্যা-শোকে সন্তপ্তা, প্রায় দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণকে দর্শন করিতে জান”

    Ramakrishna 528: “ব্রাহ্মণী কন্যা-শোকে সন্তপ্তা, প্রায় দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণকে দর্শন করিতে জান”

    ৫০- ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কলিকাতা নগরে ভক্তমন্দিরে

    প্রথম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ২৮শে জুলাই

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) ভক্তসঙ্গে বলরামের বৈঠকখানায় বসিয়া আছেন। সহাস্যবদন। এখন বেলা প্রায় তিনটা; বিনোদ, রাখাল, মাস্টার ইত্যাদি কাছে বসিয়া। ছোট নরেনও আসিয়া উপস্থিত হইলেন।

    আজ মঙ্গলবার, ২৮শে জুলাই, ১৮৮৫ খ্রীষ্টাব্দ, (১৩ই শ্রাবণ, ১২৯২) আষাঢ় কৃষ্ণা প্রতিপদ। ঠাকুর বলরামের বাড়িতে সকালে আসিয়াছেন ও ভক্তসঙ্গে আহারাদি করিয়াছেন। বলরামের বাড়িতে শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের সেবা আছে। তাই ঠাকুর বলেন, “বড় শুদ্ধ অন্ন।”

    নারাণ প্রভৃতি ভক্তেরা বলিয়াছিলেন, নন্দ বসুর বাড়িতে অনেক ঈশ্বরীয় ছবি আছে। আজ তাই ঠাকুর তাদের বারি গিয়া অপরাহ্নে ছবি দেখিবেন। একটি ভক্ত ব্রাহ্মণীর বাড়ি নন্দ বসুর বাটীর নিকটে, সেখানেও যাইবেন। ব্রাহ্মণী কন্যা-শোকে সন্তপ্তা, প্রায় দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণকে দর্শন করিতে জান। তিনি অতিশয় ব্যাকুলা হইয়া ঠাকুরকে আমন্ত্রণ করিয়াছেন। তাঁহার বাটীতে যাইতে হইবে ও আর-একটি স্ত্রী ভক্ত গণুর মার বাটীতেও যাইতে হইবে।

    ঠাকুর (Ramakrishna) বলরামের বাটীতে আসিয়াই ছোকরা ভক্তদের ডাকিয়া পাঠান। ছোট নরেন মাঝে বলিয়াছিলেন; “আমার কাজ আছে বলিয়া সর্বদা আসিতে পারি না, পরীক্ষার জন্য পড়া”— ইত্যাদি; ছোট নরেন আসিলে ঠাকুর তাহার সহিত কথা কহিতেছেন —

    শ্রীরামকৃষ্ণ (ছোট নরেনকে)—তোকে ডাকতে পাঠাই নাই।

    ছোট নরেন (হাসিতে হাসিতে)-তা আর কি হবে?

    শ্রীরামকৃষ্ণ — তা বাপু তোমার অনিষ্ট হবে, অবসর হলে আসবে!

    ঠাকুর যেন অভিমান করিয়া এই কথাগুলি বলিলেন(Kathamrita)।

    পালকি আসিয়াছে। ঠাকুর শ্রীযুক্ত নন্দ বসুর বাটীতে যাইবেন।

    ঈশ্বরের (Ramakrishna) নাম করিতে করিতে ঠাকুর পালকিতে উঠিতেছেন। পায়ে কালো বার্ণিশ করা চটি জুতা, পরনে লাল ফিতাপাড় ধুতি, উত্তরীয় নাই। জুতা-জোড়াটি পালকির একপাশে মণি রাখলেন। পালকির সঙ্গে সঙ্গে মাস্টার যাইতেছেন। ক্রমে পরেশ আসিয়া জুটিলেন।

    নন্দ বসুর গেটের ভিতর পালকি প্রবেশ করিল। ক্রমে বাটীর সম্মুখে প্রশস্ত ভূমি পার হইয়া পালকি বাটীতে আসিয়া উপস্থিত হইল।

    গৃহস্বামীর আত্মীয়গণ আসিয়া ঠাকুরকে প্রণাম মরিলেন। ঠাকুর মাস্টারকে চটিজুতা-জোড়াটি দিতে বলিলেন। পালকি হইতে অবতরণ করিয়া উপরের হলঘরে উপস্থিত হইলেন। অতি দীর্ঘ ও প্রশস্ত হলঘর। দেবদেবীর ছবি ঘরের চতুর্দিকে।

    গৃহস্বামী ও তাঁহার ভ্রাতা পশুপতি ঠাকুরকে সম্ভাষণ করিলেন। ক্রমে পালকির পশ্চাৎ পশ্চাৎ আসিয়া ভক্তেরা এই হলঘরে জুটিলেন (Kathamrita)। গিরিশের ভাই অতুল আসিয়াছেন। প্রসন্নের পিতা শ্রীযুক্ত নন্দ বসুর বাটীতে সর্বদা যাতায়াত করেন। তিনিও উপস্থিত আছেন।

  • Ramakrishna 527: “শ্রীরামকৃষ্ণ ভিতরে হাসি আছে, ফল্গুনদীর উপরে বালি—খুঁড়লে জল পাওয়া যায়”

    Ramakrishna 527: “শ্রীরামকৃষ্ণ ভিতরে হাসি আছে, ফল্গুনদীর উপরে বালি—খুঁড়লে জল পাওয়া যায়”

    ৪৯ শ্রীশ্রীরথযাত্রা বলরাম-মন্দিরে

    নবম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১৫ই জুলাই
    শ্রীরামকৃষ্ণের কুষ্ঠি — পূর্বকথা — ঠাকুরের ঈশ্বরদর্শন
    রাম, লক্ষ্মণ ও পার্থসারথি-দর্শন—ন্যাংটা পরমহংসমূর্তি

     শ্রীরামকৃষ্ণের কুষ্ঠি—ঠাকুরের সাধন কেন—ব্রহ্মযোনিদর্শন 

    গিরিশ (সহাস্যে)—আপনার সাধন করা কেন?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) সহাস্যে—ভগবতী শিবের জন্য অনেক কঠোর সাধন করেছিলেন,—পঞ্চতপা, শীতকালে জলে গা বুড়িয়ে থাকা, সূর্যের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকা!

    “স্বয়ং কৃষ্ণ রাধাযন্ত্র নিয়ে অনেক সাধন করেছিলেন। যন্ত্র ব্রহ্মযোনি—তাঁরই পূজা ধ্যান! এই ব্রহ্মযোনি থেকে কোটি কোটি ব্রহ্মাণ্ড উৎপত্তি হচ্ছে।

    “অতি গুহ্যকথা! বেলতলায় দর্শন হত—লকলক করত!”

    পূর্বকথা—বেলতলায় তন্ত্রের সাধন—বামনীর যোগাড়

    “বেলতলায় অনেক তন্ত্রের সাধন হয়েছিল। মড়ার মাথা নিয়ে। আবার … আসন। বামনী সব যোগাড় করত।

    (হরিপদর দিকে অগ্রসর হইয়া)—“সেই অবস্থায় ছেলেদের ধন, ফুল-চন্দন দিয়ে পূজা না করলে থাকতে পারতাম না।

    “আর-একটি অবস্থা হত। যেদিন অহংকার করতুম, তারপরদিনই অসুখ হত।”

    মাস্টার শ্রীমুখনিঃসৃত অশ্রুতপূর্ব বেদান্তবাক্য শুনিয়া অবাক্‌ হইয়া চিত্রার্পিতের ন্যায় বসিয়া আছেন। ভক্তেরাও যেন সেই পূতসলিলা পতিতপাবনী শ্রীমুখনিঃসৃত ভাগবতগঙ্গায় স্নান করিয়া বসিয়া আছেন।

    সকলে চুপ করিয়া আছেন।

    তুলসী—ইনি হাসেন না।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—ভিতরে হাসি আছে। ফল্গুনদীর উপরে বালি,—খুঁড়লে জল পাওয়া যায়।

    (মাস্টারের প্রতি)—“তুমি জিহ্বা ছোল না! রোজ জিহ্বা ছুলবে।”

    বলরাম—আচ্ছা, এঁর (মাস্টারের) কাছে পূর্ণ আপনার কথা অনেক শুনেছেন —

    শ্রীরামকৃষ্ণ—আগেকার কথা—ইনি জানেন (Kathamrita)—আমি জানি না।

    বলরাম—পূর্ণ স্বভাবসিদ্ধ। তবে এঁরা?

    শ্রীরামকৃষ্ণ—এঁরা হেতুমাত্র।

    নয়টা বাজিয়াছে—ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বরে যাত্রা করিবেন তাহার উদ্যোগ হইতেছে। বাগবাজারের অন্নপূর্ণার ঘাটে নৌকা ঠিক করা আছে। ঠাকুরকে ভক্তেরা ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিতেছেন।

    ঠাকুর দুই-একটি ভক্তের সহিত নৌকায় গিয়া বসিলেন, গোপালের মা ওই নৌকায় উঠিলেন, —দক্ষিণেশ্বরে কিঞ্চিৎ বিশ্রাম করিয়া বৈকালে হাঁটিয়া কামারহাটি যাইবেন।

    ঠাকুরের দক্ষিণেশ্বরের ঘরের ক্যাম্পখাটটি সারাইতে দেইয়া হইয়াছিল। সেখানিও নৌকায় তুলিয়া দেওয়া হইল। এই খাটখানিতে শ্রীযুক্ত রাখাল প্রায় শয়ন করিতেন।

    আজ কিন্তু মঘা নক্ষত্র। যাত্রা বদলাইতে (Kathamrita) ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ আগত শনিবারে বলরামের বাটীতে আবার শুভাগমন করিবেন।

  • Ramakrishna 526: “ঈশ্বরীয় রূপ কত যে দর্শন হয়েছে, তা বলা যায় না। সেই সময়ে বড় পেটের ব্যামো”

    Ramakrishna 526: “ঈশ্বরীয় রূপ কত যে দর্শন হয়েছে, তা বলা যায় না। সেই সময়ে বড় পেটের ব্যামো”

    ৪৯ শ্রীশ্রীরথযাত্রা বলরাম-মন্দিরে

    নবম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১৫ই জুলাই
    শ্রীরামকৃষ্ণের কুষ্ঠি — পূর্বকথা — ঠাকুরের ঈশ্বরদর্শন
    রাম, লক্ষ্মণ ও পার্থসারথি-দর্শন—ন্যাংটা পরমহংসমূর্তি

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) ভক্তসঙ্গে সেই ছোট ঘরে কথা কহিতেছেন। মহেন্দ্র মুখুজ্জে, বলরাম, তুলসী, হরিপদ, গিরিশ প্রভৃতি ভক্তেরা বসিয়া আছেন। গিরিশ ঠাকুরের কৃপা পাইয়া সাত-আট মাস যাতায়াত করিতেছেন। মাস্টার ইতিমধ্যে গঙ্গাস্নান করিয়া ফিরিয়াছেন ও ঠাকুরকে প্রণাম করিয়া তাঁহার কাছে বসিয়াছেন। ঠাকুর তাঁহার অদ্ভুত ঈশ্বর-দর্শনকথা একটু একটু বলিতেছেন (Kathamrita)।

    “কালীঘরে একদিন ন্যাংটা আর হলধারী অধ্যাত্ম (রামায়ণ) পড়ছে। হঠাৎ দেখলাম নদী, তার পাশে বন, সবুজ রঙ গাছপালা,—রাম লক্ষ্মণ জাঙ্গিয়া পরা, চলে যাচ্ছেন। একদিন কুঠির সম্মুখে অর্জুনের রথ দেখলাম।—সারথির বেশে ঠাকুর বসে আছেন। সে এখনও মনে আছে।

    “আর একদিন, দেশে কীর্তন হচ্ছে,—সম্মুখে গৌরাঙ্গমূর্তি।

    “একজন ন্যাংটা সঙ্গে সঙ্গে থাকত—তার ধনে হাত দিয়ে ফচকিমি করতুম। তখন খুব হাসতুম। এ ন্যাংটোমূর্তি আমারই ভিতর থেকে বেরুত। পরমহংসমূর্তি,—বালকের ন্যায়।

    “ঈশ্বরীয় (Ramakrishna) রূপ কত যে দর্শন হয়েছে, তা বলা যায় না। সেই সময়ে বড় পেটের ব্যামো। ওই সকল অবস্থায় পেটের ব্যামো বড় বেড়ে যেত। তাই রূপ দেখলে শেষে থু-থু করতুম—কিন্তু পেছেনে গিয়ে ভূত পাওয়ার মতো আবার আমায় ধরত! ভাবে বিভোর হয়ে থাকতাম, দিনরাত কোথা দিয়ে যেত! তার পরদিন পেট ধুয়ে ভাব বেরুত!” (হাস্য)

    গিরিশ (সহাস্যে)—আপনার কুষ্ঠি দেখছি।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে)—দ্বিতীয়ার চাঁদে জন্ম। আর রবি, চন্দ্র, বুধ—এছাড়া আর কিছু বড় একটা নাই।

    গিরিশ—কুম্ভরাশি। কর্কট আর বৃষে রাম আর কৃষ্ণ;—সিংহে চৈতন্যদেব।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—দুটি সাধ ছিল (Kathamrita)। প্রথম—ভক্তের রাজা হব, দ্বিতীয় শুঁটকে সাধু হবো না।

  • Ramakrishna 525: “ওদের কেমন জান,—ফল আগে তারপর ফুল, আগে দর্শন,—তারপর গুণ-মহিমাশ্রবণ, তারপর মিলন!”

    Ramakrishna 525: “ওদের কেমন জান,—ফল আগে তারপর ফুল, আগে দর্শন,—তারপর গুণ-মহিমাশ্রবণ, তারপর মিলন!”

    ৪৯ শ্রীশ্রীরথযাত্রা বলরাম-মন্দিরে

    অষ্টম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১৫ই জুলাই

    ভক্তিযোগের গূঢ় রহস্য—জ্ঞান ও ভক্তির সমন্বয়
    মুখুজ্জে, হরিবাবু, পূর্ণ, নিরঞ্জন, মাস্টার, বলরাম 

    দুই সমাধি-সমাধি প্রতিবন্ধক—কামিনী-কাঞ্চন 

    “সমাধি মোটামুটি দুইরকম।—জ্ঞানের পথে, বিচার করতে করতে অহং নাশের পর যে সমাধি, তাকে স্থিতসমাধি বা জড়সমাধি (নির্বিকল্পসমাধি) বলে। ভক্তিপথের সমাধিকে ভাবসমাধি বলে। এতে সম্ভোগের জন্য, আস্বাদনের জন্য, রেখার মতো একটু অহং থাকে। কামিনী-কাঞ্চনে (Ramakrishna) আসক্তি থাকলে এ-সব ধারণা হয় না।

    “কেদারকে বললুম, কামিনী-কাঞ্চনে মন থাকলে হবে না। ইচ্ছা হল, একবার তার বুকে হাত বুলিয়ে দি,— কিন্তু পারলাম না। ভিতরে অঙ্কট-বঙ্কট। ঘরে বিষ্ঠার গন্ধ, ঢুকতে পারলাম না। যেমন স্বয়ম্ভু লিঙ্গ কাশী পর্যন্ত জড়। সংসারে আসক্তি,—কামিনী-কাঞ্চনে আসক্তি,—থাকলে হবে না।

    “ছোকরাদের ভিতর এখনও কামিনী-কাঞ্চন ঢোকে নাই; তাইতো ওদের অত ভালবাসি। হাজরা বলে, ‘ধনীর ছেলে দেখে, সুন্দর ছেলে দেখে,—তুমি ভালবাস’। তা যদি হয়, হরিশ, নোটো, নরেন্দ্র—এদের ভালবাসি কেন? নরেন্দ্রের ভাত নুন দে খাবার পয়সা জোটে না (Kathamrita)।

    “ছোকরাদের ভিতর বিষয়বুদ্ধি এখনও ঢোকে নাই। তাই অন্তর অত শুদ্ধ।

    “আর অনেকেই নিত্যসিদ্ধ। জন্ম থেকেই ঈশ্বরের দিকে টান। যেমন বাগান একটা কিনেছ। পরিষ্কার করতে করতে এক জায়গায় বসানো জলের কল পাওয়া গেল। একবারে জল কলকল করে বেরুচ্ছে।”

    পূর্ণ ও নিরঞ্জন—মাতৃসেবা—বৈষ্ণবদের মহোৎসবের ভাব

    বলরাম—মহাশয়, সংসার মিথ্যা, একবারে জ্ঞান, পূর্ণের কেমন করে হল?

    শ্রীরামকৃষ্ণ—জন্মান্তরীণ। পূর্ব পূর্ব জন্মে সব করা আছে। শরীরটাই ছোট হয়ে আবার বৃদ্ধ হয়—আত্মা সেইরূপ নয়।

    “ওদের কেমন জান,—ফল আগে তারপর ফুল। আগে দর্শন,—তারপর গুণ-মহিমাশ্রবণ, তারপর মিলন!

    “নিরঞ্জনকে দেখ(Kathamrita)— লেনাদেনা নাই।—যখন ডাক পড়বে যেতে পারবে। তবে যতক্ষণ মা আছে, মাকে দেখতে হবে। আমি মাকে ফুল চন্দন দিয়ে পূজা করতাম। সেই জগতের মা-ই মা হয়ে এসেছেন। তাই কারু শ্রাদ্ধ,—শেষে ঈষ্টের পূজা হয়ে পড়ে। কেউ মরে গেলে বৈষ্ণবদের মহোৎসব হয়, তারও এই ভাব।

    “যতক্ষণ নিজের শরীরের খপর আছে ততক্ষণ মার খপর নিতে হবে। তাই হাজরাকে বলি, নিজের কাশি হলে মিছরি মরিচ করতে হয়, মরিচ-লবণের যোগাড় করতে হয়; যতক্ষণ এ-সব করতে হয়, ততক্ষণ মার খপরও নিতে হয়।

    “তবে যখন নিজের শরীরের খপর নিতে পাচ্ছি না,—তখন অন্য কথা। তখন ঈশ্বরই সব ভার লন।

    “নাবালক নিজের ভার নিতে পারে না। তাই তার অছি (Guardian) হয়। নাবালকের অবস্থা—যেমন চৈতন্যদেবের (Ramakrishna) অবস্থা।”

    মাস্টার গঙ্গাস্নান করিতে গেলেন।

  • Ramakrishna 524: “পূর্ণজ্ঞান আর পূর্ণভক্তি একই, ‘নেতি’ ‘নেতি’ করে বিচারের শেষ হলে, ব্রহ্মজ্ঞান”

    Ramakrishna 524: “পূর্ণজ্ঞান আর পূর্ণভক্তি একই, ‘নেতি’ ‘নেতি’ করে বিচারের শেষ হলে, ব্রহ্মজ্ঞান”

    ৪৯ শ্রীশ্রীরথযাত্রা বলরাম-মন্দিরে

    অষ্টম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১৫ই জুলাই

    ভক্তিযোগের গূঢ় রহস্য—জ্ঞান ও ভক্তির সমন্বয়

    মুখুজ্জে, হরিবাবু, পূর্ণ, নিরঞ্জন, মাস্টার, বলরাম 

    মুখুজ্জে—হরি (বাগবাজারের হরিবাবু) আপনার কালকের কথা শুনে অবাক্‌! বলে, ‘সাংখ্যদর্শনে, পাতঞ্জলে, বেদান্তে—ও-সব কথা আছে। ইনি সামান্য নন।’

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—কই, আমি সাংখ্য, বেদান্ত পড়ি নাই।

    “পূর্ণজ্ঞান আর পূর্ণভক্তি একই। ‘নেতি’ ‘নেতি’ করে বিচারের শেষ হলে, ব্রহ্মজ্ঞান।—তারপর যা ত্যাগ করে গিছিল, তাই আবার গ্রহণ। ছাদে উঠবার সময় সাবধানে উঠতে হয়। তারপর দেখে যে, ছাদও যে জিনিসে—ইট-চুন-সুরকি—সিঁড়িও সেই জিনিসে তৈয়ারী!

    “যার উচ্চ বোধ আছে, তার নিচু বোধ আছে। জ্ঞানের পর, উপর নিচে এক বোধ হয়।

    “প্রহ্লাদের যখন তত্ত্বজ্ঞান হত, ‘সোঽহম্‌’ হয়ে থাকতেন। যখন দেহবুদ্ধি আসত ‘দাসোঽহম্‌’, ‘আমি তোমার দাস’, এই ভাব আসত।

    “হনুমানের (Kathamrita) কখনও ‘সোঽহম্‌’, কখন ‘দাস আমি’, কখন ‘আমি তোমার অংশ’, এই ভাব আসত।

    “কেন ভক্তি নিয়ে থাকো?—তা না হলে মানুষ কি নিয়ে থাকে! কি নিয়ে দিন কাটায়।

    “‘আমি’ তো যাবার নয়, ‘আমি’ ঘট থাকতে সোঽহম্‌ হয় না। সমাধিস্থ হলে ‘আমি’ পুছে যায়, —তখন যা আছে তাই। রামপ্রসাদ বলে (Kathamrita), তারপর আমি ভাল কি তুমি ভাল, তা তুমিই জানবে।

    “যতক্ষণ ‘আমি’ রয়েছে ততক্ষণ ভক্তের মতো থাকাই ভাল! ‘আমি ভগবান’ এটি ভাল না। হে জীব, ভক্তবৎ এটি ভাল না। হে জীব, ভক্তবৎ ন চ কৃষ্ণবৎ!—তবে যদি নিজে টেনে লন, তবে আলাদা কথা। যেমন মনিব চাকরকে ভালবেসে বলছে, আয় আয় কাছে বোস আমিও যা তুইও তা। গঙ্গারই ঢেউ, ঢেউয়ের গঙ্গা হয় না!

    “শিবের (Ramakrishna) দুই অবস্থা। যখন আত্মারাম তখন সোঽহম্‌ অবস্থা, — যোগেতে সব স্থির। যখন ‘আমি’ একটি আলাদা বোধ থাকে তখন ‘রাম! রাম!’ করে নৃত্য।

    “যাঁর অটল আছে, তাঁর টলও আছে।

    “এই তুমি স্থির। আবার তুমিই কিছুক্ষণ পরে কাজ করবে।

    “জ্ঞান আর ভক্তি একই জিনিস। — তবে একজন বলছে ‘জল’, আর-একজন ‘জলের খানিকটা চাপ’।”

  • Ramakrishna 523: “রামলালার উপর যা যা ভাব হত, তাই পূর্ণাদিকে দেখে হচ্ছে! রামলালাকে নাওয়াতাম, খাওয়াতাম, শোয়াতাম”

    Ramakrishna 523: “রামলালার উপর যা যা ভাব হত, তাই পূর্ণাদিকে দেখে হচ্ছে! রামলালাকে নাওয়াতাম, খাওয়াতাম, শোয়াতাম”

    ৪৯ শ্রীশ্রীরথযাত্রা বলরাম-মন্দিরে

    সপ্তম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১৫ই জুলাই
    সুপ্রভাত ও ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ — মধুর নৃত্য ও নামকীর্তন

    এইবার ঠাকুর ভক্তসঙ্গে ছোট ঘরটিতে বসিয়াছেন। দিগম্বর! যেন পাঁচ বৎসরের বালক! মাস্টার, বলরাম আরও দুই-একটি ভক্ত বসিয়া আছেন।

    রূপদর্শন কখন? গুহ্যকথা—শুদ্ধ-আত্মা ছোকরাতে নারায়ণদর্শন

    রামলালা, নিরঞ্জন, পূর্ণ, নরেন্দ্র, বেলঘরের তারক, ছোট নরেন

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—ঈশ্বরীয় রূপ দর্শন করা যায়! যখন উপাধি সব চলে যায়,—বিচার বন্ধ হয়ে যায়,—তখন দর্শন। তখন মানুষ অবাক্‌ সমাধিস্থ হয়। থিয়েটারে গিয়ে বসে লোকে কত গল্প করে,—এ-গল্প সে গল্প। যাই পর্দা উঠে যায় সব গল্প-টল্প বন্ধ হয়ে যায়। যা দেখে তাইতেই মগ্ন হয়ে যায়।

    “তোমাদের অতি গুহ্যকতা বলছি। কেন পূর্ণ, নরেন্দ্র, এদের সব এত ভালবাসি। জগন্নাথের সঙ্গে মধুরভাবে আলিঙ্গন করতে গিয়ে হাত ভেঙে গেল। জানিয়ে দিলে, “তুমি শরীরধারণ করেছ—এখন নররূপের সঙ্গে সখ্য, বাৎসল্য এইসব ভাব লয়ে থাকো।”

    “রামলালার উপর যা যা ভাব হত, তাই পূর্ণাদিকে দেখে হচ্ছে! রামলালাকে নাওয়াতাম, খাওয়াতাম, শোয়াতাম,—সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতাম,—রামলালার জন্য বসে বসে কাঁদতাম, ঠিক এই সব ছেলেদের নিয়ে তাই হয়েছে! দেখ না নিরঞ্জন। কিছুতেই লিপ্ত নয়। নিজের টাকা দিয়ে গরিবদের ডাক্তারখানায় নিয়ে যায়। বিবাহের কথায় বলে, ‘বাপরে! ও বিশালাক্ষীর দ!’ ওকে দেখি যে, একটা জ্যোতিঃর উপর বসে রয়েছে।

    “পূর্ণ উঁচু সাকার ঘর—বিষ্ণুর অংশে জন্ম। আহা কি অনুরাগ!

    (মাস্টারের প্রতি)—“দেখলে না,—তোমার দিকে চাইতে লাগল—যেন গুরুভাই-এর উপর—যেন ইনি আমার আপনার লোক! আর-একবার দেখা করবে বলেছে (Kathamrita)। বলে কাপ্তেনের ওখানে দেখা হবে।”

    নরেন্দ্রের কত গুণ—ছোট নরেণের গুণ

    “নরেন্দ্রের খুব উঁচু ঘর—নিরাকারের ঘর। পুরুষের সত্তা।

    “এতো ভক্ত আসছে, ওর মতো একটি নাই।

    “এক-একবার বসে বসে খতাই। তা দেখি, অন্য পদ্ম কারু দশদল, কারু ষোড়শদল, কারু শতদল কিন্তু পদ্মমধ্যে নরেন্দ্র সহস্রদল!

    “অন্যেরা কলসী, ঘটি এ-সব হতে পারে,—নরেন্দ্র জালা।

    “ডোবা পুষ্করিণী মধ্যে নরেন্দ্র বড় দীঘি! যেমন হালদার-পুকুর।

    “মাছের মধ্যে নরেন্দ্র রাঙাচক্ষু বড় রুই, আর সব নানারকম মাছ—পোনা, কাঠি বাটা, এই সব।

    “খুব আধার,—অনেক জিনিস ধরে। বড় ফুটোওলা বাঁশ!

    “নরেন্দ্র কিছুর বশ নয়। ও আসক্তি, ইন্দ্রিয়-সুখের বশ নয়। পুরুষ পায়রা। পুরুষ পায়রার ঠোঁট ধরলে ঠোঁট টেনে ছিনিয়ে লয়,—মাদী পায়রা চুপ করে থাকে।

    “বেলঘরের তারককে মৃগেল বলা যায়।

    “নরেন্দ্র পুরুষ, গাড়িতে তাই ডান দিকে বসে। ভবনাথের মেদী ভাব ওকে তাই অন্যদিকে বসতে দিই!

    “নরেন্দ্র সভায় থাকলে আমার বল।”

    শ্রীযুক্ত মহেন্দ্র মুখুজ্জে আসিয়া প্রণাম করিলেন। বেলা আটটা হইবে। হরিপদ, তুলসীরাম, ক্রমে আসিয়া প্রণাম করিয়া বসিলেন। বাবুরামের জ্বর হইয়াছে,—আসিতে পারেন নাই।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) মাস্টারাদির প্রতি — ছোট নরেন এলো না? মনে করেছে, আমি চলে গেছি। (মুখুজ্জের প্রতি) কি আশ্চর্য! সে (ছোট নরেন) ছেলেবেলায় স্কুল থেকে এসে ঈশ্বরের জন্য কাঁদত। (ঈশ্বরের জন্য) কান্না কি কমেতে হয়!

    “আবার বুদ্ধি খুব। বাঁশের মধ্যে বড় ফুটোওলা বাঁশ!

    “আর আমার উপর সব মনটা। গিরিশ ঘোষ বললে (Kathamrita), নবগোপালের বাড়ি যেদিন কীর্তন হয়েছিল, সেদিন (ছোট নরেন) গিছিল,—কিন্তু ‘তিনি কই’ বলে আর হুঁশ নাই,—লোকের গায়ের উপর দিয়েই চলে যায়!

    “আবার ভয় নাই—যে বাড়িতে বকবে। দক্ষিণেশ্বরে তিনরাত্রি সমানে থাকে।”

LinkedIn
Share