Category: পরম্পরা

Get updated History and Heritage and Culture and Religion related news from the Madhyom news portal madhyom.com, West Bengal leading news portal Madhyom.com

  • Ramakrishna 323: “শুদ্ধাত্মা কিরূপ—যেমন চুম্বক পাথর অনেক দূরে আছে, কিন্তু ছুঁচ নড়ছে, চুম্বক পাথর চুপ করে আছে নিষ্ক্রিয়”

    Ramakrishna 323: “শুদ্ধাত্মা কিরূপ—যেমন চুম্বক পাথর অনেক দূরে আছে, কিন্তু ছুঁচ নড়ছে, চুম্বক পাথর চুপ করে আছে নিষ্ক্রিয়”

    দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ  

    সপ্তম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৬শে অক্টোবর
    মাতৃসেবা ও শ্রীরামকৃষ্ণ—হাজরা মহাশয়

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—ওর মা রামলালের কাছে অনেক দুঃখ করেছে; তাই বললুম, তিনদিনের জন্য না হয় যাও, একবার দেখা দিয়ে এসো; মাকে কষ্ট দিয়ে কি ইশ্বরসাধনা হয়? আমি বৃন্দাবনে রয়ে যাচ্ছিলাম, তখন মাকে মনে পড়ল; ভাবলুম—মা যে কাঁদবে; তখন আবার সেজোবাবুর সঙ্গে এখানে চলে এলুম।

    “আর সংসারে যেতে জ্ঞানীর ভয় কি (Kathamrita)?”

    মহিমাচরণ (সহাস্যে)—মহাশয়! জ্ঞান হলে তো।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে)—হাজরার সবই হয়েছে, একটু সংসারে মন আছে—ছেলেরা রয়েছে, কিছু টাকা ধার রয়েছে। মামীর সব অসুখ সেরে গেছে, একটু কসুর আছে! (মহিমাচরণ প্রভৃতি সকলের হাস্য)

    মহিমা—কোথায় জ্ঞান হয়েছে, মহাশয় (Ramakrishna)?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (হাসিয়া)—না— গো তুমি জান না। সব্বাই বলে, হাজরা একটি লোক, রাসমণির ঠাকুরবাড়িতে আছে। হাজরারই নাম করে, এখানকার নাম কেউ করে? (সকলের হাস্য)

    হাজরা—আপনি নিরুপম—আপনার উপমা নাই, তাই কেউ আপনাকে বুঝতে পারে না।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তবেই নিরুপমের সঙ্গে কোন কাজ হয় না; তা এখানকার নাম কেউ করবে কেন?

    মহিমা—মহাশয়! ও কি জানে? আপনি যেরূপ উপদেশ দেবেন ও তাই করবে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—কেন, তুমি ওকে বরং জিজ্ঞাসা কর; ও আমায় বলেছে, তোমার সঙ্গে আমার লেনা-দেনা নাই।

    মহিমা—ভারী তর্ক করে (Kathamrita)!

    শ্রীরামকৃষ্ণ—ও মাঝে মাঝে আমায় আবার শিক্ষা দেয়। (সকলের হাস্য) তর্ক যখন করে, হয়তো আমি গালাগালি দিয়ে বসলুম। তর্কের পর মশারির ভিতর হয়তো শুয়েছি; আবার কি বলেছি মনে করে বেরিয়ে এসে হাজরাকে প্রণাম করে যাই, তবে হয় (Kathamrita)!

    বেদান্ত ও শুদ্ধাত্মা 

    (হাজরার প্রতি)—“তুমি শুদ্ধাত্মাকে ঈশ্বর বল কেন? শুদ্ধাত্মা নিষ্ক্রিয়, তিন অবস্থার সাক্ষিস্বরূপ। যখন সৃষ্টি, স্থিতি প্রলয় কার্য ভাবি তখন তাঁকে ঈশ্বর বলি। শুদ্ধাত্মা কিরূপ—যেমন চুম্বক পাথর অনেক দূরে আছে, কিন্তু ছুঁচ নড়ছে—চুম্বক পাথর চুপ করে আছে নিষ্ক্রিয়।”

  • Hanuman Jayanti 2025: আজ দেশজুড়ে বজরংবলীর আরাধনা, জানুন কখন হনুমান চালিশা পড়লে কাটবে সর্ব সঙ্কট?

    Hanuman Jayanti 2025: আজ দেশজুড়ে বজরংবলীর আরাধনা, জানুন কখন হনুমান চালিশা পড়লে কাটবে সর্ব সঙ্কট?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আজ হনুমান জয়ন্তী (Hanuman Jayanti)। ভক্তদের বিশ্বাস, চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে ভগবান হনুমানের জন্ম হয়েছিল। বিশ্বাস মতে, এই পবিত্র দিনে হনুমান চালিশা পাঠ করে বজরংবলীর পুজো করলে মনের সকল বাসনা পূরণ হয়। দেশজুড়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এই উৎসবটি জাঁকজমকভাবে উদযাপন করেন। হনুমানজিকে বলা হয় সংকটমোচন। বিশ্বাস করা হয়, রামভক্ত হনুমান কলিযুগেও জীবিত আছেন। তাঁর নাম শুনলেই সকল প্রকার কষ্ট ও ভয় দূর হয়ে যায়। হনুমান ভক্তরা দর্শনের জন্য মন্দিরের বাইরে লম্বা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।

    হনুমান জয়ন্তীর গুরুত্ব

    হনুমানজিকে শ্রী রামের সবচেয়ে বড় ভক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাঁর সাহায্যে শ্রী রাম রাবণকে বধ করেন এবং মাতা সীতাকে অযোধ্যায় ফিরিয়ে আনেন। ঈশ্বরের প্রতি তাঁর অটল ভক্তি এবং অপরিসীম শক্তির জন্য পরিচিত, হনুমান সাহস, নিঃস্বার্থ সেবা এবং নিষ্ঠার প্রতীক। তাঁর উপাসনা জীবনের সমস্ত বাধা দূর করে এবং নেতিবাচক শক্তি থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।

    হনুমান জয়ন্তী ২০২৫ তারিখ এবং শুভ সময়

    এই বছর হনুমান জন্মোৎসব ১২ এপ্রিল, শনিবার পালিত হবে। প্রতি বছর চৈত্র পূর্ণিমায় এই উৎসব পালিত হয়। এবার পূর্ণিমা তিথি ১২ এপ্রিল ব্রহ্ম মুহুর্তে ০৩:২১ মিনিটে শুরু হবে এবং ১৩ এপ্রিল ভোর ০৫:৫১ মিনিটে শেষ হবে। হনুমান জয়ন্তীতে পুজোর প্রথম শুভ সময় ১২ এপ্রিল সকাল ৭:৩৪ টা থেকে ৯:১২ টা পর্যন্ত। এর পরে, দ্বিতীয় শুভ সময় হবে সন্ধে ৬.৪৬ থেকে রাত ৮টা ০৮ মিনিট পর্যন্ত।

    হনুমান চালিশা পাঠ ও পুজো পদ্ধতি

    হনুমান জয়ন্তীর দিনটিকে অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়। এই দিনে ব্রহ্ম মুহুর্তে ঘুম থেকে উঠুন। স্নান করুন। পরিষ্কার পোশাক পরে পুজো করুন। এরপর হনুমানজিকে তাঁর প্রিয় নৈবেদ্য উৎসর্গ করুন। তাতে বোঁদের লাড্ডু, মিষ্টি পান, গুড় এবং কলা দিতে ভুলবেন না। অনেক ভক্ত এই উপলক্ষে উপোসও করেন। এই দিনে, যদি কেউ সত্যিকারের হৃদয়ে হনুমান চালিশা বা সুন্দর কাণ্ড কাণ্ড পাঠ করে, তার সমস্ত ইচ্ছা হনুমানজি নিজেই পূরণ করেন। শাস্ত্রবিদদের মতে, হনুমান চালিশার এমন কিছু শ্লোক আছে, যা পাঠ করলে সমস্ত দুঃখ-দুর্দশা দূর হয়। এর সঙ্গে ভক্তরা সম্পদ এবং বুদ্ধিমত্তার আশীর্বাদ লাভ করতে পারবেন। ভক্তদের বিশ্বাস হনুমান চালিশা দ্বারা সমস্ত ইচ্ছা পূরণ হয়। কোনও ব্যক্তি হয়তো সমস্যায় পড়েছেন এবং সামনের দিকের সমস্ত পথ বন্ধ বলে মনে হচ্ছে। সেই সময় তিনি যদি হনুমান চালিশা পাঠ করেন, তাহলে ওই ব্যক্তির সমস্ত ইচ্ছা পূরণ হয়। এমনকী, জীবনের সমস্ত বাধা-বিপত্তিও দূর হয়।

  • Ramakrishna 322: “একবার বাড়িতে গিয়ে মার সঙ্গে দেখা করে এস, মাকে কষ্ট দিয়ে কখন ঈশ্বরকে ডাকা হয়?”

    Ramakrishna 322: “একবার বাড়িতে গিয়ে মার সঙ্গে দেখা করে এস, মাকে কষ্ট দিয়ে কখন ঈশ্বরকে ডাকা হয়?”

    দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ  

    সপ্তম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৬শে অক্টোবর
    মাতৃসেবা ও শ্রীরামকৃষ্ণ—হাজরা মহাশয়

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের (Ramakrishna) ঘরের পূর্ব বারান্দায় হাজরা মহাশয় বসিয়া জপ করেন। বয়স ৪৬।৪৭ হইবে। ঠাকুরের দেশের লোক। অনেকদিন হইতে বৈরাগ্য হইয়াছে—বাহিরে বাহিরে বেড়ান, কখন কখন বাড়িতে গিয়া থাকেন। বাড়িতে কিছু জমি-টমি আছে, তাতেই স্ত্রী-পুত্রকন্যাদের ভরণপোষণ হয়। তবে প্রায় হাজার টাকা দেনা আছে, তজ্জন্য হাজরা মহাশয় সর্বদা চিন্তিত থাকেন ও কিসে শোধ যায়, সর্বদা চেষ্টা করেন। কলিকাতায় সর্বদা যাতায়াত আছে, সেখানে ঠনঠনে নিবাসী শ্রীযুক্ত ঈশানচন্দ্র মুখোপাধ্যায় মহাশয় তাঁহাকে সাতিশয় যত্ন করেন ও সাধুর ন্যায় সেবা করেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁহাকে যত্ন করে রেখেছেন, কাপড় ছিঁড়ে গেলে কাপড় কিনে দেওয়ান, সর্বদা সংবাদ লন ও ঈশ্বরীয় কথা তাঁহার সঙ্গে সর্বদা হয়ে থাকে। হাজরা মহাশয় বড় তার্কিক। প্রায় কথা (Kathamrita) কহিতে কহিতে তর্কের তরঙ্গে ভেসে একদিকে চলে যেতেন। বারান্দায় আসন করে সর্বদা জপের মালা লয়ে জপ করতেন।

    হাজরা মহাশয়ের মাতাঠাকুরানীর (Ramakrishna) অসুখ সংবাদ আসিয়াছে। রামলালকে দেশ থেকে আসবার সময় তিনি হাতে ধরে অনেক করে বলেছিলেন, খুড়ো মহাশয়কে আমার কাকুতি জানিয়ে বলো তিনি যেন প্রতাপকে বলে-কয়ে দেশে পাঠিয়ে দেন; একবার যেন আমার সঙ্গে দেখা হয়। ঠাকুর তাই হাজরাকে বলেছিলেন, “একবার বাড়িতে গিয়ে মার সঙ্গে দেখা করে এসো; তিনি রামলালকে অনেক করে বলে দিয়েছেন। মাকে কষ্ট দিয়ে কখন ঈশ্বরকে ডাকা হয়? একবার দেখা দিয়ে বরং চলে এসো।”

    ভক্তের মজলিস ভাঙিলে পর, মহিমাচরণ হাজরাকে সঙ্গে করিয়া ঠাকুরের কাছে উপস্থিত হইলেন। মাস্টারও আছেন।

    মহিমাচরণ (শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতি, সহাস্যে) — মহাশয়! আপনার কাছে দরবার আছে। আপনি কেন হাজরাকে বাড়ি যেতে বলছেন? আবার সংসারে (Kathamrita) যেতে ওর ইচ্ছা নাই।

  • Gajan Utsav: বাংলায় শুরু গাজনের উৎসব, চৈত্রশেষে মহাদেবের আরাধনায় মেতে ওঠেন ভক্তরা

    Gajan Utsav: বাংলায় শুরু গাজনের উৎসব, চৈত্রশেষে মহাদেবের আরাধনায় মেতে ওঠেন ভক্তরা

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: চৈত্র শেষে গাজনের ঢাক (Gajan Utsav)। গ্রাম থেকে শহর শোনা যাচ্ছে ঢাক-ঢোল-কাঁসরের আওয়াজ। বাংলা বছরের শেষ উৎসব হল গাজন। এই উৎসবে দেবাদিদেব মহাদেবের আরাধনায় মেতে ওঠেন ভক্তরা। গাজন উৎসবে জাতপাতের বেড়াজাল টপকে সকলেই সামিল হন শিব আরাধনায়। এবছরের গাজন শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার, মদন ত্রয়োদশী থেকে। চলবে সোমবার, চৈত্র সংক্রান্তি পর্যন্ত। প্রসঙ্গত, মদন ত্রয়োদশী হল হিন্দু ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ তিথি। যা চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে পালিত হয়। এই ত্রয়োদশীতে ভগবান বিষ্ণুর পুজো করা হয়। একইসঙ্গে প্রেমদেব মদন বা কামদেবের নামও যুক্ত, তাই এটি মদন ত্রয়োদশী নামেই পরিচিত।

    গাজন (Gajan) শব্দের উৎপত্তি

    গবেষকরা জানাচ্ছেন, গাজন (Gajan Utsav) শব্দের উৎপত্তি ‘গর্জন’ থেকে। অনেকের ধারণা, শিব সাধনার সময় সন্ন্যাসীদের হুঙ্কার বা রব থেকেই গাজন শব্দের উৎপত্তি। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণেও মেলে গাজনের উল্লেখ। পুরাণের প্রকৃতিখণ্ডে লেখা রয়েছে, ‘‘চৈত্র মাস্যথ মাঘেবা যোহর্চ্চয়েৎ শঙ্করব্রতী। করোতি নর্ত্তনং ভক্ত্যা বেত্রবানি দিবাশিনম্।। মাসং বাপ্যর্দ্ধমাসং বা দশ সপ্তদিনানি বা। দিনমানং যুগং সোহপি শিবলোক মহীয়তে।।’’ এর অর্থ চৈত্রে কিংবা মাঘে এক-সাত দশ-পনেরো কিংবা তিরিশ দিন হাতে বেতের লাঠি নিয়ে শিবব্রতী হয়ে নৃত্য ইত্যাদি করলে মানুষের শিবলোক প্রাপ্ত হয়।

    জনশ্রুতি অনুযায়ী, শিবের সঙ্গে কালির বিবাহ সম্পন্ন হয়

    অনেক গবেষকের ধারণা, গাজন (Gajan Utsav) উৎসবে রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব। আবার বাংলার মঙ্গলকাব্যতেও গাজনের উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন ধর্মমঙ্গল কাব্যে রয়েছে এর বিস্তৃত বিবরণ। তবে অন্য একটি অংশের মতে, গা শব্দ বলতে গ্রামকে বোঝায়। আর, জন শব্দ বলতে জনসাধারণকে বোঝায়। অর্থাৎ গ্রামের জনসাধারণের যা উৎসব তাই গাজন। জনশ্রুতি রয়েছে, গাজনই হল সেই দিন যেদিন শিবের সঙ্গে কালির বিবাহ সম্পন্ন হয়। আরও লৌকিক কথা হল, গাজনের সন্ন্যাসীরা হলেন আসলে শিবের বরপক্ষ।

    গাজন উৎসবের তিনটি অংশ

    গাজন উৎসবের তিনটি অংশ থাকে। যথা- ঘাট সন্ন্যাস, নীলব্রত এবং চড়ক। অনেক জায়গাতে গাজন উৎসব (Gajan Utsav) চৈত্র মাসের প্রথম দিন থেকেই ভক্ত সন্ন্যাসীরা পালন করতেন, সেটা অনেক আগেকার কথা অবশ্য। তবে বর্তমান সময়ে চৈত্র সংক্রান্তির সাত দিন আগে অথবা তিন দিন আগে থেকেই কঠোরব্রত পালন করেন সন্ন্যাসীরা। এই সময়ে পরিচ্ছন্ন বস্ত্র ধারণ করে হবিষ্যান্ন গ্রহণ করেন সন্ন্যাসীরা। এবছর নীলব্রত পড়েছে রবিবার, ১৩ এপ্রিল। পরের দিন, অর্থাৎ, সোমবার ১৪ এপ্রিল, চৈত্র সংক্রান্তির দিন অনুষ্ঠিত হবে চড়ক পুুজো।

    অনেক জায়গাতে মুখোশ নৃত্যের প্রচলন দেখা যায়

    গাজনে অনেক জায়গাতে মুখোশ নৃত্যের প্রচলন দেখা যায়। যা স্থানীয় ভাষায় বোলান গান নামেও পরিচিত। এগুলি বর্ধমান, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, নদিয়া বীরভূম জেলাতে দেখা যায়। এই সময়ে শিব-গৌরী সাজেন অনেকেই। এর পাশাপাশি নন্দী, ভৃঙ্গি ভুত-প্রেত, দৈত্য, দানব প্রভৃতি ধরনের সং সেজেও নৃত্য করেন সবাই (Gajan Utsav)। লৌকিক ছড়া, আবৃত্তি গানও করা হয়। গাজনের ঠিক পরের দিন অনুষ্ঠিত হয় নীল পুজো। গ্রাম্য মহিলারা সন্তানদের মঙ্গল কামনায় এ দিন ফল, আতপ চাল, অর্থ দান করে থাকেন।

    প্রথম গাজন পুজোর প্রচলন কবে

    পৌরাণিকভাবে গাজন উৎসবের (Gajan Utsav) সূচনা নিয়ে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে। কথিত আছে, বান নামে এক রাজা ছিলেন প্রবল শিব ভক্ত। তিনি দেবাদিদেব মহাদেবকে তুষ্ট করতে কঠোর তপস্যা করেন। শিব ভক্তির সেই সূত্র মেনে এখনও পর্যন্ত সন্ন্যাসীরা চড়কের বান পরেন। কাঁটার উপরে ঝাঁপও দেন। গাজন যেন এক প্রকার কৃচ্ছসাধনের ব্রত পালন করেন সন্ন্যাসীরা। আগুন ঝাঁপ, কাঁটা ঝাঁপ কপাল ফোঁড়া ইত্যাদি দেখা যায়। গবেষকরা বলছেন, ১৪৮৫ সালের রাজা সুন্দর আনন্দ ঠাকুর প্রথম চড়ক পুজোর প্রচলন করেন। সেই থেকেই এই প্রথা মেনে আসছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।

    অন্ত্যজ শ্রেণির নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকেই সন্ন্যাস ধর্ম পালন করেন

    গাজনের এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ভূত-প্রেত, পুনর্জন্ম প্রভৃতি বিষয়। এক সময়ে গাজনের (Gajan Utsav) সন্ন্যাসীরা হুড়কো দিয়ে নিজেদেরকে চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুত বেগে ঘুরতেন। সেসময় ব্রিটিশ সরকার আইন প্রণয়ন করে এই নিয়ম-নীতি বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে বর্তমান সময়ে আজও অনেক স্থানে এই রীতি দেখা যায়। গাজনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, এই সময়ে অন্ত্যজ শ্রেণির নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকেই সন্ন্যাস ধর্ম পালন করতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে আবার দেখা যায় শিব-পার্বতী সেজে কেউ কেউ ভিক্ষা পাত্র নিয়ে বের হন। সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে আতপ চাল, কাঁচা আম, কাঁচা কলা প্রভৃতি সংগ্রহ করেন।

    গ্রামবাংলায় লোকপ্রিয় গাজন

    পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গ সর্বত্রই গাজন উৎসব দেখা যায়। মালদা জেলায় গম্ভিরা উৎসব (Gajan Utsav) পালিত হয় এই সময়। কোথাও তা চৈত্র সংক্রান্তি থেকে হয়, কোথাও তা আবার পয়লা বৈশাখে হয়। চার দিন ধরে চলে এই উৎসব। একদিকে যেমন শিব আরাধনা চলে, তেমনই অন্যদিকে দৈনন্দিন জীবনে নানা সমস্যার কথা ভক্তরা দেবাদিদেব মহাদেবের উদ্দেশে বলতে থাকেন। সেখানে সমস্ত ধরনের কথাই খোলামেলা বলা হয়। রাজনীতি থেকে জীবনের বঞ্চনা কোনও কিছুই বাদ যায় না। পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলির পাশাপাশি কলকাতাতেও দেখা যায় চৈত্র সংক্রান্তির সং সাজা। দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরে সঙ বের হয়। কলকাতার জেলে পাড়ার সঙ্গে কথাও কম বেশি সকলেই জানেন। এর পাশাপাশি কালীঘাটের নকুলেশ্বর তলা সহ বেশ কিছু জায়গায় আজও গাজন পালিত হয়।

    পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত গাজনের মেলা

    চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহ জুড়ে সন্ন্যাসী বা ভক্তদের মাধ্যমে শিবের গাজন অনুষ্ঠিত হয়। চৈত্র সংক্রান্তিতে চড়ক পূজার সঙ্গে এই উৎসবের সমাপ্তি ঘটে। গাজন সাধারণত তিনদিন ধরে চলে। এই উৎসবের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল মেলা। চৈত্রসংক্রান্তির গাজনে কালী নাচ একটি উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান। ধর্মের গাজনের বিশেষ অঙ্গ হল নরমুণ্ড বা গলিত শব নিয়ে নৃত্য বা মড়াখেলা (কালিকা পাতারি নাচ)। জ্যৈষ্ঠমাসে মনসার গাজনে মহিলা সন্ন্যাসী বা ভক্ত্যারা অংশ নেয়, তারা চড়কের সন্ন্যাসীদের মতোই অনুষ্ঠান পালন করে। বর্ধমান জেলার পাঁড়ুই গ্রামের শিবের গাজন যা পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় গাজন এর মধ্যে অন্যতম। এখানে প্রতি বছর আঠাশ ফলের দিন অর্থাৎ আঠাশে চৈত্র, শ্মশান চিরন নামে বিশাল আচার অনুষ্ঠান হয়। যা প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো।

    বাংলার কয়েকটি জনপ্রিয় গাজন উৎসব

    পূর্ব বর্ধমান: শ্রীখণ্ড গ্রামের গাজন বাবা দুগ্ধ কুমার শিবের গাজন হিসেবে বিখ্যাত।
    মালদা: মালদায় গাজনের নাম গম্ভীরা।
    জলপাইগুড়ি: জলপাইগুড়িতে গাজনের নাম গমীরা।
    বাঁকুড়া: বাঁকুড়া জেলার ছাতনা থানার ঝাঁটিপাহাড়ী গ্রামের গাজনও খুব বিখ্যাত। তবে তা চৈত্র মাসে নয়, বরং জ্যৈষ্ঠ মাসের ২৫/২৬ তারিখ নাগাদ পালিত হয়। এই অনুষ্ঠান হুজুগে গাজন উৎসব নামে পরিচিত।

  • Ramakrishna 322: “নিত্য থেকে লীলা আরম্ভ হল, মহাকারণ থেকে স্থূল, সূক্ষ্ম…স্বপ্ন, সুষুপ্তি সব অবস্থা এসে পড়ল”

    Ramakrishna 322: “নিত্য থেকে লীলা আরম্ভ হল, মহাকারণ থেকে স্থূল, সূক্ষ্ম…স্বপ্ন, সুষুপ্তি সব অবস্থা এসে পড়ল”

    দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ  

    ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৬শে অক্টোবর
    বেদান্তবিচারে—মায়াবাদ ও শ্রীরামকৃষ্ণ

    মায়াবাদ ও বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ—জ্ঞানযোগ ও ভক্তিযোগ 

    মহিমাচরণ—এ বেশ সামঞ্জস্য,—নিত্য থেকেই লীলা, আবার লীলা থেকেই নিত্য।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—জ্ঞানীরা দেখে সব স্বপ্নবৎ। ভক্তেরা সব অবস্থা লয়। জ্ঞানী দুধ দেয় ছিড়িক ছিড়িক করে। (সকলের হাস্য) এক-একটা গরু আছে—বেছে বেছে খায়; তাই ছিড়িক ছিড়িক দুধ। যারা অত বাছে না আর সব খায়, তারা হুড়হুড় করে দুধ দেয়। উত্তম ভক্ত—নিত্য লীলা দুই লয়। তাই নিত্য থেকে মন নেমে এলেও তাঁকে সম্ভোগ করতে পারে। উত্তম ভক্ত হুড়হুড় করে দুধ (Kathamrita) দেয়। (সকলের হাস্য)

    মহিমা—তবে দুধে একটু গন্ধ হয়। (সকলের হাস্য)

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে)—হয় বটে, তবে একটু আওটাতে হয়। আগুনে আউটে নিতে হয়। জ্ঞানাগ্নির উপর একটু দুধটা চড়িয়ে দিতে হয়, তাহলে আর গন্ধটা থাকবে না। (সকলের হাস্য)

    ওঁকার ও নিত্যলীলাযোগ 

    (মহিমার প্রতি)—“ওঁকারের ব্যাখ্যা তোমরা কেবল বল ‘অকার উকার মকার’।”

    মহিমাচরণ (Ramakrishna)—অকার, উকার, মকার—কিনা সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয়।

    শ্রীরামকৃষ্ণ(Ramakrishna)—আমি উপমা দিই ঘন্টার টং শব্দ। ট-অ-অ-ম-ম-। লীলা থেকে নিত্যে হয়; স্থূল, সূক্ষ্ম, কারণ থেকে মহাকারণে লয়। জাগ্রত, স্বপ্ন, সুষুপ্তি থেকে তুরীয়ে লয়। আবার ঘণ্টা বাজল, যেম মহাসমুদ্রে একটা গুরু জিনিস পড়ল আর ঢেউ আরম্ভ হল। নিত্য থেকে লীলা আরম্ভ হল, মহাকারণ থেকে স্থূল, সূক্ষ্ম, কারণ শরির দেখা দিল—সেই তুরীয় থেকেই জাগ্রত, স্বপ্ন, সুষুপ্তি সব অবস্থা এসে পড়ল। আবার মহাসমুদ্রের ঢেউ মহাসমুদ্রেই লয় হল। নিত্য ধরে ধরে লীলা, আবার লীলা ধরে নিত্য। আমি টং শব্দ উপমা দিই। আমি ঠিক এই সব দেখেছি। আমায় দেখিয়ে দিয়েছে চিৎ সমুদ্র, অন্ত নাই। তাই থেকে এইসব লীলা উঠল, আর ওইতেই লয় হয়ে গেল। চিদাকাশে কোটি ব্রহ্মাণ্ডের উৎপত্তি, আবার ওইতেই লয় হয়, তোমাদের বইয়ে কি আছে, অত আমি জানি না।

    মহিমা—যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা তো শাস্ত্র লেখেন নাই। তাঁরা নিজের ভাবেই বিভোর, লিখবেন (Kathamrita)  কখন! লিখতে গেলেই একটু হিসাবী বুদ্ধির দরকার। তাঁদের কাছে শুনে অন্য লোকে লিখেছে।

  • Ramakrishna 328: “চাতক চায় কেবল ফটিক জল,  পিপাসায় প্রাণ যায়, উঁচু হয়ে আকাশের জল পান করতে চায়”

    Ramakrishna 328: “চাতক চায় কেবল ফটিক জল,  পিপাসায় প্রাণ যায়, উঁচু হয়ে আকাশের জল পান করতে চায়”

    দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    দশম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ৯ই নভেম্বর

    সঞ্চয় ও তিন শ্রেণীর সাধু 

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) বিজয়াদির প্রতি—সাধুর তিন শ্রেণী। উত্তম, মধ্যম অধম। উত্তম যারা খাবার জন্যে চেষ্টা করেন না। মধ্যম ও অধম যেমন দণ্ডী-ফণ্ডী। মধ্যম, তারা ‘নমো নারায়ণ’! বলে দাঁড়ায়। যারা অধম তারা না দিলে ঝগড়া করে। (সকলের হাস্য)

    “উত্তম শ্রেণীর সাধুর অজগরবৃত্তি। বসে খাওয়া পাবে। অজগর নড়ে না। একটি ছোকরা সাধু —বাল-ব্রহ্মচারী— ভিক্ষা করতে গিছিল, একটি মেয়ে এসে ভিক্ষা দিলে। তার বক্ষে স্তন দেখে সাধু মনে করলে বুকে ফোঁড়া হয়েছে, তাই জিজ্ঞাসা করলে। পরে বাড়ির গিন্নীরা বুঝিয়ে দিলে যে, ওর গর্ভে ছেলে হবে বলে ঈশ্বর স্তনেতে দুগ্ধ দিবেন; তাই ঈশ্বর আগে থাকতে তার বন্দোবস্ত করছেন। এই কথা শুনে ছোকরা সাধুটি অবাক্‌। তখন সে বললে, তবে আমার ভিক্ষা করবার দরকার নেই; আমার জন্যও খাবার আছে।”

    ভক্তেরা কেহ কেহ মনে করিতেছেন, তবে আমাদেরও তো চেষ্টা না করলে হয়।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—যার মনে আছে চেষ্টা দরকার, তার চেষ্টা করতেই হবে।

    বিজয়—ভক্তমালে একটি বেশ গল্প আছে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—তুমি বলো না।

    বিজয়—আপনিই বলুন না।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—না তুমিই বলো! আমার অত মনে নাই। প্রথম প্রথম শুনতে হয়। তাই আগে আগে ও-সব শুনতাম।

    ঠাকুরের অবস্থা—এক রামচিন্তা—পূর্ণজ্ঞান ও প্রেমের লক্ষণ

    শ্রীরামকৃষ্ণ— আমার এখন সে অবস্থা নয়। হনুমান বলেছিল (Kathamrita), আমি তিথি-নক্ষত্র জানি না, এক রামচিন্তা করি।

    “চাতক চায় কেবল ফটিক জল। পিপাসায় প্রাণ যায়, উঁচু হয়ে আকাশের জল পান করতে চায়। গঙ্গা-যমুনা সাত সমুদ্র জলে পূর্ণ। সে কিন্তু পৃথিবীর জল খাবে না।

    “রাম-লক্ষ্মণ পম্পা সরোবরে গিয়েছেন। লক্ষ্মণ দেখিলেন, একটি কাক ব্যাকুল হয়ে বারবার জল খেতে যায়, কিন্তু খায় না। রামকে জিজ্ঞাসা করতে তিনি বললেন, ভাই, এ কাক পরমভক্ত। অহর্নিশি রামনাম জপ করছে! এদিকে জলতৃষ্ণায় ছাতি ফেটে যাচ্ছে, কিন্তু খেতে পারছে না। ভাবছে খেতে গেলে পাছে রামনাম জপ ফাঁক যায়! হলধারীকে পূর্ণিমার দিন বললুম, দাদা! আজ কি অমাবস্যা (Kathamrita)? (সকলের হাস্য)

  • Mahaveer Jayanti: সকল জীবকে সম্মান করার কথা বলতেন মহাবীর, আজ জন্ম জয়ন্তীতে জানুন তাঁর বাণী

    Mahaveer Jayanti: সকল জীবকে সম্মান করার কথা বলতেন মহাবীর, আজ জন্ম জয়ন্তীতে জানুন তাঁর বাণী

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: জৈন ধর্মের ২৪তম তীর্থঙ্কর হলেন বর্ধমান মহাবীর। আজ বৃহস্পতিবার ১০ এপ্রিল দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে মহাবীর জয়ন্তী (Mahaveer Jayanti)। প্রতি বছর চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে মহাবীর জয়ন্তী পালিত হয়। এই বিশেষ দিনটি জৈন সম্প্রদায়ের মানুষেরা আড়ম্বরের সঙ্গে পালন করে থাকেন। মহাবীর তাঁর জীবদ্দশায় অহিংসা ও আধ্যাত্মিক স্বাধীনতার প্রচার করেছিলেন এবং মানুষকে সকল জীবের প্রতি সম্মান করতে শিখিয়েছিলেন। তিনি সত্য ও অহিংসার মতো বিশেষ শিক্ষার মাধ্যমে বিশ্বকে সঠিক পথ দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন। অসংখ্য মানুষকে জীবনের আধ্যাত্মিক মার্গ দেখিয়েছিলেন তিনি।

    মহাবীরের জীবন (Mahaveer Jayanti)

    কথিত আছে যে, ভগবান মহাবীর বিহারের কুন্দলপুরের রাজ ঘরানায় ৫৯৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শৈশবে তাঁর নাম ছিল বর্ধমান। ৩০ বছর বয়সে তিনি সিংহাসন ত্যাগ করে আধ্যাত্মিকতার পথে হাঁটেন। জৈন ধর্মে বিশ্বাস করা হয় যে, ১২ বছরের কঠোর নীরব তপস্যার পর ভগবান মহাবীর তাঁর ইন্দ্রিয়কে জয় করে ছিলেন। নির্ভীক, সহনশীল এবং অহিংস হওয়ার কারণে তাঁকে মহাবীর নাম দেওয়া হয়েছিল। ৭২ বছর বয়সে তিনি পাওয়াপুরী থেকে মোক্ষলাভ করেন। সাধকদের মধ্যে মহাবীর যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁকে শান্তি, সম্প্রীতি, পবিত্রতা, ধর্ম প্রচারকের একজন বলে মনে করা হতো। মহাবীর ছিলেন জৈন ধর্মের সব থেকে বড় গুরু এবং ২৪ তম সর্বশেষ তীর্থঙ্কর।

    কীভাবে পালন করা হয় এই দিনটি

    সর্বোপরি মহাবীর জয়ন্তীর (Mahavir Jayanti 2025) উৎসব জৈন ধর্মের প্রতিষ্ঠাতাকে উৎসর্গ করা হয়। মহাবীর জয়ন্তীর দিন, জৈন ধর্মের লোকেরা প্রভাতফেরি, শোভাযাত্রা বের করেন। তার পরে মহাবীরের মূর্তি সোনা ও রুপোর কলসে অভিষেক করা হয়। এই সময়, জৈন সম্প্রদায়ের গুরু ভগবান মহাবীরের (Mahavir Jayanti) শিক্ষার কথা বলা হয় এবং সেগুলিকে অনুসরণ করতে শেখানো হয়।

    মহাবীরের বাণী:-

    ১) কোনও প্রাণী বা জীবকে আঘাত, গালিগালাজ, নিপীড়ন, দাসত্ব করানো, অপমান, যন্ত্রণা দেওয়া, নির্যাতন বা হত্যা করা অনুচিত।

    ২) রাগ থেকেই আরও রাগের জন্ম দেয়। ক্ষমা ও ভালোবাসা আরও ক্ষমা ও ভালোবাসার দিকে পরিচালিত করে।

    ৩) নিজে বাঁচো, সকলকে বাঁচতে দাও, কাউকে আঘাত কোরোনা। জীবন সকলের কাছে প্রিয়।

    ৪) আনন্দেই হোক বা কষ্টেই হোক, সুখেই হোক বা দুঃখে, সকল প্রাণীকে সেই নজরেই দেখা উচিত, যেভাবে আমরা নিজেদের দেখি।

    ৫) অহিংসাই হল সবচেয়ে বড় ধর্ম।

  • Ramakrishna 321: “বেলের সার বলতে গেলে শাঁসই বুঝায়, যারই শাঁস, তারই বিচি, তারই খোলা”

    Ramakrishna 321: “বেলের সার বলতে গেলে শাঁসই বুঝায়, যারই শাঁস, তারই বিচি, তারই খোলা”

    দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ  

    ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৬শে অক্টোবর
    বেদান্তবিচারে—মায়াবাদ ও শ্রীরামকৃষ্ণ

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) মহিমাচরণের প্রতি—বেদান্ত বিচারে, সংসার মায়াময়,—স্বপ্নের মতো, সব মিথ্যা। যিনি পরমাত্মা, তিনি সাক্ষিস্বরূপ—জাগ্রত, স্বপন, সুষুপ্তি তিন অবস্থারই সাক্ষিস্বরূপ। এ-সব তোমার ভাবের কথা। স্বপ্নও যত সত্য, জাগরণও সেইরূপ সত্য। একটা গল্প বলি শোন। তোমার ভাবের—

    “এক দেশে একটি চাষা থাকে। ভারী জ্ঞানী। চাষবাস করে—পরিবার আছে, একটি ছেলে অনেকদিন পরে হয়েছে; নাম হারু। ছেলেটির উপর বাপ-মা দুজনেরই ভালবাসা; কেননা, সবে ধন নীলমণি। চাষাটি ধার্মিক, গাঁয়ের সব লোকেই ভালবাসে (Kathamrita)। একদিন মাঠে কাজ করছে, এমন সময় একজন এসে খপর দিলে, হারুর কলেরা হয়েছে। চাষাটি বাড়ি গিয়ে অনেক চিকিৎসা করালে কিন্তু ছেলেটি মারা গেল। বাড়ির সকলে শোকে কাতর কিন্তু চাষাটির যেন কিছুই হয় নাই। উলটে সকলকে বুঝায় যে, শোক করে কি হবে? তারপর আবার চাষ করতে গেল। বাড়ি ফিরে এসে দেখে, পরিবার আরও কাঁদছে। পরিবার বললে, ‘তুমি নিষ্ঠুর (Ramakrishna)—ছেলেটার জন্য একবার কাঁদলেও না?’ চাষা তখন স্থির হয়ে বললে, ‘কেন কাঁদছি না বলব? আমি কাল একটা ভারী স্বপ্ন দেখেছি। দেখলাম যে, রাজা হয়েছি আর আট ছেলের বাপ হয়েছি—খুব সুখে আছি। তারপর ঘুম ভেঙে গেল। এখন মহা ভাবনায় পড়েছি—আমার সেই আট ছেলের জন্য শোক করব, না, তোমার এই এক ছেলে হারুর জন্য শোক করব?’

    “চাষা জ্ঞানী, তাই দেখছিল স্বপ্ন অবস্থাও যেমন মিথ্যা, জাগরণ অবস্থাও তেমনি মিথ্যা; এক নিত্যবস্তু সেই আত্মা।

    “আমি সবই লই। তুরীয় আবার জাগ্রত, স্বপ্ন, সুষুপ্তি। আমি তিন অবস্থাই লই। ব্রহ্ম আবার মায়া, জীব, জগৎ আমি সবই লই। সব না নিলে ওজনে কম পড়ে (Kathamrita)।”

    একজন ভক্ত—ওজনে কেন কম পড়ে? (সকলের হাস্য)

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—ব্রহ্ম—জীবজগৎবিশিষ্ট। প্রথম নেতি নেতি করবার সময় জীবজগৎকে ছেড়ে দিতে হয়। অহংবুদ্ধি যতক্ষণ, ততক্ষণ তিনিই সব হয়েছেন, এই বোধ হয়, তিনিই চতুর্বিংশতি তত্ত্ব হয়েছেন।

    “বেলের সার বলতে গেলে শাঁসই বুঝায়। তখন বিচি আর খোলা ফেলে দিতে হয়। কিন্তু বেলটা কত ওজনে ছিল বলতে গেলে শুধু শাঁস ওজন করলে হবে না। ওজনের সময় শাঁস, বিচি, খোলা সব নিতে হবে। যারই শাঁস, তারই বিচি, তারই খোলা।

    “যাঁরই নিত্য, তাঁরই লীলা।

    “তাই আমি নিত্য, লীলা সবই লই (Kathamrita)। মায়া বলে জগৎসংসার উড়িয়ে দিই না। তাহলে যে ওজনে কম পড়বে।

  • Ramakrishna 320: “আমি তো টাকার জন্য যাই না—আমি হরিনাম শুনতে যাই—আর তুমি লাট সাহেব”

    Ramakrishna 320: “আমি তো টাকার জন্য যাই না—আমি হরিনাম শুনতে যাই—আর তুমি লাট সাহেব”

    দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    পঞ্চম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৬শে অক্টোবর
    গৃহস্থাশ্রমকথা-প্রসঙ্গে—নির্লিপ্ত সংসারী

    “খুব ভক্তি (Ramakrishna)! আমি বরাহনগরে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, তা আমায় ছাতা ধরে! ওর বাড়িতে লয়ে গিয়ে কত যত্ন! বাতাস করে—পা টিপে দেয়—আর নানা তরকারি করে খাওয়ায়। আমি একদিন ওর বাড়িতে পাইখানায় বেহুঁশ হয়ে গেছি। ও তো আচারী, পাইখানার ভিতর আমার কাছে গিয়ে পা ফাঁক করে বসিয়ে দেয়। অত আচারী, ঘৃণা করলে না।

    “কাপ্তেনের অনেক খরচা। কাশীতে ভায়েরা থাকে, তাদের দিতে হয়। মাগ আগে কৃপণ ছিল, এখন এত বিব্রত হয়েছে যে সবরকম খরচ করতে পারে না।

    “কাপ্তেনের পরিবার আমায় বললে যে, সংসার ওঁর (Ramakrishna) ভাল লাগে না। তাই মাঝে বলেছিল, সংসার ছেড়ে দেব। মাঝে মাঝে ছেড়ে দেব, ছেড়ে দেব করত।

    “ওদের বংশই ভক্ত। বাপ লড়ায়ে যেত। শুনেছি লড়ায়ের সময় এক-হাতে শিবপূজা, একহাতে তরবার খোলা, যুদ্ধ করত।

    “লোকটা ভারী আচারী। আমি কেশব সেনের কাছে যেতুম, তাই এখানে একমাস আসে নাই। বলে, কেশব সেন ভ্রষ্টাচার—ইংরাজের সঙ্গে খায়, ভিন্ন জাতে মেয়ের বিয়ে দিয়েছে, জাত নাই। আমি (Ramakrishna) বললুম, আমার সে সবের দরকার কি? কেশব হরিনাম করে, দেখতে যাই, ঈশ্বরীয় কথা শুনতে যাই—আমি কুলটি খাই, কাঁটায় আমার কি কাজ? তবুও আমায় ছাড়ে না; বলে তুমি কেশব সেনের ওখানে কেন যাও? তখন আমি বললুম, একটু বিরক্ত হয়ে, আমি তো টাকার জন্য যাই না—আমি হরিনাম শুনতে যাই—আর তুমি লাট সাহেবের বাড়িতে যাও কেমন করে? তারা ম্লেচ্ছ, তাদের সঙ্গে থাকো কেমন করে? এই সব বলার পর তবে একটু থামে।

    “কিন্তু খুব ভক্তি। যখন পূজা করে, কর্পূরের আরতি করে। আর পূজা করতে করতে আসনে স্তব করে। তখন আর-একটি মানুষ। যেন তন্ময় হয়ে যায়।”

  • Ramakrishna 319: “কাপ্তেনের বেদ, বেদান্ত, শ্রীমদ্ভাগবত, গীতা অধ্যাত্ম—এ-সব কণ্ঠস্থ, তুমি আলাপ করে দেখো।”

    Ramakrishna 319: “কাপ্তেনের বেদ, বেদান্ত, শ্রীমদ্ভাগবত, গীতা অধ্যাত্ম—এ-সব কণ্ঠস্থ, তুমি আলাপ করে দেখো।”

    দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ  

    পঞ্চম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৬শে অক্টোবর

    গৃহস্থাশ্রমকথা-প্রসঙ্গে—নির্লিপ্ত সংসারী

    “দেখলাম, যোগ ভোগ দুই-ই আছে; অনেক ছেলেপুলে, ছোট ছোট; ডাক্তার এসেছে; তবেই হল, অত জ্ঞানী হয়ে সংসার নিয়ে সর্বদা থাকতে হয়। বললুম (Kathamrita), তুমি কলির জনক। ‘জনক এদিক উদিক দু’দিক রেখে খেয়েছিল দুধের বাটি’। তুমি সংসারে থেকে ঈশ্বরে মন রেখেছো শুনে তোমায় দেখতে এসেছি; আমায় ঈশ্বরীয় (Ramakrishna) কথা কিছু শুনাও।

    “তখন বেদ থেকে কিছু কিছু শুনালে। বললে, এই জগৎ যেন একটি ঝাড়ের মতো, আর জীব হয়েছে—এক-একটি ঝাড়ের দীপ। আমি এখানে পঞ্চবটীতে যখন ধ্যান করতুম ঠিক ওইরকম দেখেছিলাম। দেবেন্দ্রের কথার সঙ্গে মিলল দেখে ভাবলুম, তবে তো খুব বড়লোক। ব্যাখ্যা করতে বললাম—তা বললে (Kathamrita) ‘এ জগৎ কে জানত?—ঈশ্বর মানুষ করেছেন, তাঁর মহিমা প্রকাশ করবার জন্য। ঝাড়ের আলো না থাকলে সব অন্ধকার, ঝাড় পর্যন্ত দেখা যায় নাঞ্চ।”

    ব্রাহ্মসমাজে ‘অসভ্যতা’—কাপ্তেন, ভক্ত গৃহস্থ 

    “অনেক কথাবার্তার পর দেবেন্দ্র খুশি হয়ে বললে, ‘আপনাকে উৎসবে (ব্রহ্মোৎসবে) আসতে হবে!’ আমি বললাম (Kathamrita), সে ঈশ্বরের ইচ্ছা; আমার তো এই অবস্থা দেখছ!—কখন কি ভাবে রাখেন।’ দেবেন্দ্র বললে, ‘না আসতে হবে; তবে ধুতি আর উড়ানি পরে এসো,—তোমাকে এলোমেলো দেখে কেউ কিছু বললে, আমার কষ্ট হবে।’ আমি বললাম, ‘তা পারব না। আমি বাবু হতে পারব না।’ দেবেন্দ্র, সেজোবাবু সব হাসতে (Ramakrishna) লাগল।

    “তারপরদিনই সেজোবাবুর কাছে দেবেন্দ্রর চিঠি এল—আমাকে উৎসব দেখতে যেতে বারণ করেছে। বলে—অসভ্যতা হবে, গায়ে উড়ানি থাকবে না। (সকলের হাস্য)

    (মহিমার প্রতি)—“আর-একটি আছে—কাপ্তেন। সংসারী বটে, কিন্তু ভারী ভক্ত। তুমি আলাপ করো।

    “কাপ্তেনের বেদ, বেদান্ত, শ্রীমদ্ভাগবত, গীতা অধ্যাত্ম—এ-সব কণ্ঠস্থ। তুমি আলাপ করে দেখো।

    “খুব ভক্তি! আমি বরাহনগরে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, তা আমায় ছাতা ধরে! ওর বাড়িতে লয়ে গিয়ে কত যত্ন! বাতাস করে—পা টিপে দেয়—আর নানা তরকারি করে খাওয়ায়। আমি একদিন ওর বাড়িতে পাইখানায় বেহুঁশ হয়ে গেছি। ও তো আচারী, পাইখানার ভিতর আমার কাছে গিয়ে পা ফাঁক করে বসিয়ে দেয়। অত আচারী, ঘৃণা করলে না।

LinkedIn
Share