Category: পরম্পরা

Get updated History and Heritage and Culture and Religion related news from the Madhyom news portal madhyom.com, West Bengal leading news portal Madhyom.com

  • Ramakrishna 320: “আমি তো টাকার জন্য যাই না—আমি হরিনাম শুনতে যাই—আর তুমি লাট সাহেব”

    Ramakrishna 320: “আমি তো টাকার জন্য যাই না—আমি হরিনাম শুনতে যাই—আর তুমি লাট সাহেব”

    দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ

    পঞ্চম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৬শে অক্টোবর
    গৃহস্থাশ্রমকথা-প্রসঙ্গে—নির্লিপ্ত সংসারী

    “খুব ভক্তি (Ramakrishna)! আমি বরাহনগরে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, তা আমায় ছাতা ধরে! ওর বাড়িতে লয়ে গিয়ে কত যত্ন! বাতাস করে—পা টিপে দেয়—আর নানা তরকারি করে খাওয়ায়। আমি একদিন ওর বাড়িতে পাইখানায় বেহুঁশ হয়ে গেছি। ও তো আচারী, পাইখানার ভিতর আমার কাছে গিয়ে পা ফাঁক করে বসিয়ে দেয়। অত আচারী, ঘৃণা করলে না।

    “কাপ্তেনের অনেক খরচা। কাশীতে ভায়েরা থাকে, তাদের দিতে হয়। মাগ আগে কৃপণ ছিল, এখন এত বিব্রত হয়েছে যে সবরকম খরচ করতে পারে না।

    “কাপ্তেনের পরিবার আমায় বললে যে, সংসার ওঁর (Ramakrishna) ভাল লাগে না। তাই মাঝে বলেছিল, সংসার ছেড়ে দেব। মাঝে মাঝে ছেড়ে দেব, ছেড়ে দেব করত।

    “ওদের বংশই ভক্ত। বাপ লড়ায়ে যেত। শুনেছি লড়ায়ের সময় এক-হাতে শিবপূজা, একহাতে তরবার খোলা, যুদ্ধ করত।

    “লোকটা ভারী আচারী। আমি কেশব সেনের কাছে যেতুম, তাই এখানে একমাস আসে নাই। বলে, কেশব সেন ভ্রষ্টাচার—ইংরাজের সঙ্গে খায়, ভিন্ন জাতে মেয়ের বিয়ে দিয়েছে, জাত নাই। আমি (Ramakrishna) বললুম, আমার সে সবের দরকার কি? কেশব হরিনাম করে, দেখতে যাই, ঈশ্বরীয় কথা শুনতে যাই—আমি কুলটি খাই, কাঁটায় আমার কি কাজ? তবুও আমায় ছাড়ে না; বলে তুমি কেশব সেনের ওখানে কেন যাও? তখন আমি বললুম, একটু বিরক্ত হয়ে, আমি তো টাকার জন্য যাই না—আমি হরিনাম শুনতে যাই—আর তুমি লাট সাহেবের বাড়িতে যাও কেমন করে? তারা ম্লেচ্ছ, তাদের সঙ্গে থাকো কেমন করে? এই সব বলার পর তবে একটু থামে।

    “কিন্তু খুব ভক্তি। যখন পূজা করে, কর্পূরের আরতি করে। আর পূজা করতে করতে আসনে স্তব করে। তখন আর-একটি মানুষ। যেন তন্ময় হয়ে যায়।”

  • Ramakrishna 319: “কাপ্তেনের বেদ, বেদান্ত, শ্রীমদ্ভাগবত, গীতা অধ্যাত্ম—এ-সব কণ্ঠস্থ, তুমি আলাপ করে দেখো।”

    Ramakrishna 319: “কাপ্তেনের বেদ, বেদান্ত, শ্রীমদ্ভাগবত, গীতা অধ্যাত্ম—এ-সব কণ্ঠস্থ, তুমি আলাপ করে দেখো।”

    দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ  

    পঞ্চম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৬শে অক্টোবর

    গৃহস্থাশ্রমকথা-প্রসঙ্গে—নির্লিপ্ত সংসারী

    “দেখলাম, যোগ ভোগ দুই-ই আছে; অনেক ছেলেপুলে, ছোট ছোট; ডাক্তার এসেছে; তবেই হল, অত জ্ঞানী হয়ে সংসার নিয়ে সর্বদা থাকতে হয়। বললুম (Kathamrita), তুমি কলির জনক। ‘জনক এদিক উদিক দু’দিক রেখে খেয়েছিল দুধের বাটি’। তুমি সংসারে থেকে ঈশ্বরে মন রেখেছো শুনে তোমায় দেখতে এসেছি; আমায় ঈশ্বরীয় (Ramakrishna) কথা কিছু শুনাও।

    “তখন বেদ থেকে কিছু কিছু শুনালে। বললে, এই জগৎ যেন একটি ঝাড়ের মতো, আর জীব হয়েছে—এক-একটি ঝাড়ের দীপ। আমি এখানে পঞ্চবটীতে যখন ধ্যান করতুম ঠিক ওইরকম দেখেছিলাম। দেবেন্দ্রের কথার সঙ্গে মিলল দেখে ভাবলুম, তবে তো খুব বড়লোক। ব্যাখ্যা করতে বললাম—তা বললে (Kathamrita) ‘এ জগৎ কে জানত?—ঈশ্বর মানুষ করেছেন, তাঁর মহিমা প্রকাশ করবার জন্য। ঝাড়ের আলো না থাকলে সব অন্ধকার, ঝাড় পর্যন্ত দেখা যায় নাঞ্চ।”

    ব্রাহ্মসমাজে ‘অসভ্যতা’—কাপ্তেন, ভক্ত গৃহস্থ 

    “অনেক কথাবার্তার পর দেবেন্দ্র খুশি হয়ে বললে, ‘আপনাকে উৎসবে (ব্রহ্মোৎসবে) আসতে হবে!’ আমি বললাম (Kathamrita), সে ঈশ্বরের ইচ্ছা; আমার তো এই অবস্থা দেখছ!—কখন কি ভাবে রাখেন।’ দেবেন্দ্র বললে, ‘না আসতে হবে; তবে ধুতি আর উড়ানি পরে এসো,—তোমাকে এলোমেলো দেখে কেউ কিছু বললে, আমার কষ্ট হবে।’ আমি বললাম, ‘তা পারব না। আমি বাবু হতে পারব না।’ দেবেন্দ্র, সেজোবাবু সব হাসতে (Ramakrishna) লাগল।

    “তারপরদিনই সেজোবাবুর কাছে দেবেন্দ্রর চিঠি এল—আমাকে উৎসব দেখতে যেতে বারণ করেছে। বলে—অসভ্যতা হবে, গায়ে উড়ানি থাকবে না। (সকলের হাস্য)

    (মহিমার প্রতি)—“আর-একটি আছে—কাপ্তেন। সংসারী বটে, কিন্তু ভারী ভক্ত। তুমি আলাপ করো।

    “কাপ্তেনের বেদ, বেদান্ত, শ্রীমদ্ভাগবত, গীতা অধ্যাত্ম—এ-সব কণ্ঠস্থ। তুমি আলাপ করে দেখো।

    “খুব ভক্তি! আমি বরাহনগরে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, তা আমায় ছাতা ধরে! ওর বাড়িতে লয়ে গিয়ে কত যত্ন! বাতাস করে—পা টিপে দেয়—আর নানা তরকারি করে খাওয়ায়। আমি একদিন ওর বাড়িতে পাইখানায় বেহুঁশ হয়ে গেছি। ও তো আচারী, পাইখানার ভিতর আমার কাছে গিয়ে পা ফাঁক করে বসিয়ে দেয়। অত আচারী, ঘৃণা করলে না।

  • Ramakrishna 318: “যার ব্রহ্মজ্ঞান হয়েছে তার কি ‘আমি পণ্ডিত’, ‘আমি জ্ঞানী’, ‘আমি ধনী’; বলে অভিমান থাকতে পারে?”

    Ramakrishna 318: “যার ব্রহ্মজ্ঞান হয়েছে তার কি ‘আমি পণ্ডিত’, ‘আমি জ্ঞানী’, ‘আমি ধনী’; বলে অভিমান থাকতে পারে?”

    দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ  

    পঞ্চম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৬শে অক্টোবর

    গৃহস্থাশ্রমকথা-প্রসঙ্গে—নির্লিপ্ত সংসার

    আজ মহিমাচরণের সহিত ঠাকুরের (Ramakrishna) কথাবার্তা শুনিয়া কোন ভক্ত ভাবছেন, ঠাকুর তো সংসারত্যাগ করতে বললেন না—বরং বলছেন সংসার কেল্লাস্বরূপ, এই কেল্লায় থেকে কাম, ক্রোধ ইত্যাদির সহিত যুদ্ধ করিতে পারা যায়। আবার বলছেন, সংসারে থাকবে না তো কোথায় থাকবে? কেরানি জেল থেকে বেরিয়ে এসে কেরানির কাজই করে। অতএব একরকম বলা হল জীবন্মুক্ত সংসারেও থাকতে পারে। আদর্শ—কেশব সেন? তাঁকে বলেছিলেন, “তোমারই ল্যাজ খসেছে—আর কারুর হয় নাই (Kathamrita)।” কিন্তু একটা কথা আছে, ঠাকুর কেবল বলছেন, মাঝে মাঝে নির্জনে থাকতে হবে। চারাগাছে বেড়া দিতে হবে—নচেৎ ছাগল-গরুতে খেয়ে ফেলবে। গাছের গুঁড়ি হয়ে গেলে চারিদিকের বেড়া ভেঙে দাও আর না দাও; এমন কি হাতি বেঁধে দিলেও গাছের কিছু হবে না। নির্জনে থেকে থেকে জ্ঞানলাভ করে—ঈশ্বরে ভক্তিলাভ করে সংসারে এসে থাকলে কিছু ভয় নাই। তাই নির্জনবাস কথাটি কেবল বলছেন।

    ভক্তেরা এরূপ চিন্তা করিতেছেন। শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) কেশবের কথার পর, আর দু-একটি সংসারী ভক্তের কথা বলিতেছেন।

    শ্রীদেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর—যোগ ও ভোগ 

    শ্রীরামকৃষ্ণ (মহিমাচরণাদির প্রতি)—আবার সেজোবাবুর সঙ্গে দেবেন্দ্র ঠাকুরকে দেখতে গিছলাম। সেজোবাবুকে বললুম, “আমি শুনেছি দেবেন্দ্র ঠাকুর ঈশ্বরচিন্তা করে, আমার তাকে দেখবার ইচ্ছা হয়।” সেজোবাবু বললে, “আচ্ছা বাবা, আমি তোমায় নিয়ে যাব, আমরা হিন্দু কলেজে একক্লাসে পড়তুম, আমার সঙ্গে বেশ ভাব আছে।” সেজোবাবুর সঙ্গে অনেকদিন পরে দেখা হল। দেখে দেবেন্দ্র বললে, তোমার একটু বদলেছে — তোমার ভুঁড়ি হয়েছে। সেজোবাবু আমার কথা বললে, ইনি তোমায় দেখতে এসেছেন — এনি ঈশ্বর ঈশ্বর (Ramakrishna) করে পাগল। আমি লক্ষণ দেখবার জন্য দেবেন্দ্রকে বললুম, “দেখি গা, তোমার গা।” দেবেনদ্র গায়ের জামা তুললে, দেখলাম—গৌরবর্ণ, তার উপর সিঁদুর ছড়ানো। তখন দেবেন্দ্রের চুল পাকে নাই।

    “প্রথম যাবার পর একটু অভিমান দেখেছিলাম। তা হবে না গা? অত ঐশ্বর্য, বিদ্যা, মান-সম্ভ্রম? অভিমান দেকে সেজোবাবুকে বললুম (Kathamrita), আচ্ছা অভিমান জ্ঞানে হয়, না অজ্ঞানে হয়? যার ব্রহ্মজ্ঞান হয়েছে তার কি ‘আমি পণ্ডিত’, ‘আমি জ্ঞানী’, ‘আমি ধনী’; বলে অভিমান থাকতে পারে?

    “দেবেন্দ্রের সঙ্গে কথা কইতে কইতে আমার হঠাৎ সেই অবস্থাটি হল। সেই অবস্থাটি হলে কে কিরূপ লোক দেখতে পাই। আমার ভিতর থেকে হি-হি করে একটা হাসি উঠল। যখন ওই অবস্থাটা হয়, তখন পণ্ডিত-ফণ্ডিত তৃণ-জ্ঞান হয়! যদি দেখি, পণ্ডিতের বিবেক-বৈরাগ্য নাই, তখন খড়কুটোর মতো বোধ হয়। তখন দেখি যেন শকুনি খুব উঁচুতে উঠেছে কিন্তু ভাগাড়ের দিকে নজর।

  • Ram Navami: একাধিক শুভ যোগ রাম নবমীতে, কোন কোন রাশির ভাগ্য ফিরছে?

    Ram Navami: একাধিক শুভ যোগ রাম নবমীতে, কোন কোন রাশির ভাগ্য ফিরছে?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: প্রতিবছর চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের নবমী তিথিতে পালিত হয়ে রাম নবমী (Ram Navami)। জ্য়োতিষীরা বলছেন, ২০২৫ সালের রাম নবমীতে (Ram Navami 2025) বিরলযোগ তৈরি হয়েছে। যা অত্যন্ত শুভ ফল দায়ী। এদিনে শ্রীরামের পুজো করলে ভক্তদের মনোবাসনা পূরণ হবে বলে জানাচ্ছেন জ্যোতিষীরা। জানা যাচ্ছে এবারের রাম নবমীতে সর্বার্থ সিদ্ধি যোগ, অমৃত সিদ্ধি যোগ ও রবি যোগ- এই তিন যোগ তৈরি হয়েছে। অত্যন্ত বিরল এই ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। এই সময় যেকোনও শুভ কাজ করলে, মিলবে শুভ ফল, আসবে টাকা।

    রবি পুষ্য যোগের কাকতালীয় সংযোগ ১৩ বছর পরে

    জ্যোতিষীরা জানাচ্ছেন, রাম নবমীতে (Ram Navami) রবি পুষ্য যোগের কাকতালীয় সংযোগের ঘটনা একেবারে ১৩ বছর পর ঘটছে। পুষ্য নক্ষত্রকে সৌভাগ্য এবং সম্পদ এর নক্ষত্র বলে মানা হয়। এর শুভ প্রভাবে বিপুল লক্ষ্মীলাভ হয়। বৃষ, মকর ও কুম্ভ রাশির জাতক জাতিকারা রাম নবমীতে রবি পুষ্য নক্ষত্রের শুভ প্রভাবের সুবিধা পাবেন। এরফলে চাকরি পাওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

    রামনবমীর পুজোর শুভ সময়

    চলতি বছর চৈত্র মাসের শুক্লাপক্ষের নবমী (Ram Navami) তিথি শুরু হয়েছে ৫ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭ টা ২৬ মিনিট থেকে। চলবে আজ রবিবার ৬ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭ টা ২২ মিনিট পর্যন্ত। রাম নবমীতে রামলালার পুজোর শুভ সময় হল সকাল ১১ টা ০৮ মিনিট থেকে দুপুর ১ টা ৩৯ মিনিট পর্যন্ত। শাস্ত্রবিদরা বলছেন, রাম নবমীর (Ram Navami 2025) দিনে নিয়ম মেনে পুজো করলে জীবনে সফলতা চলতেই থাকবে। এতে আপনার আর্থিক দিকে যথেষ্ট লাভ হবে। রাম নবমীর দিন সকালে উঠেই প্রথমে বাসি ঘর পরিষ্কার করুন। তারপরে স্নান করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জামা কাপড় পরুন। এরপর বাড়ির কাছে রামের মন্দিরে যান। এই বিশেষ দিনে রামের পাশাপাশি সীতা, লক্ষণ ও হনুমানজির পুজো করুন।

  • Ram Navami: ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে আবির্ভূত হন বিষ্ণুর সপ্তম অবতার, জানুন রাম নবমীর মাহাত্ম্য

    Ram Navami: ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে আবির্ভূত হন বিষ্ণুর সপ্তম অবতার, জানুন রাম নবমীর মাহাত্ম্য

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: হিন্দু ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব রাম নবমী (Ram Navami 2025)। ধর্মীয় ধারণা অনুযায়ী এই তিথিতে রামচন্দ্রের জন্মোৎসব পালিত হয়। শাস্ত্র মতে চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের নবমী তিথিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রাম। তাই এই তিথিটি রাম নবমী নামে পরিচিত। এ বছর চৈত্র মাসের শুক্লাপক্ষের নবমী (Ram Navami) তিথি শুরু হয়েছে ৫ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭ টা ২৬ মিনিট থেকে। চলবে আজ রবিরার ৬ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭ টা ২২ মিনিট পর্যন্ত। রাম নবমীতে পুজোর শুভ সময় হল সকাল ১১ টা ০৮ মিনিট থেকে দুপুর ১ টা ৩৯ মিনিট পর্যন্ত।

    রাম নবমীর গুরুত্ব

    শাস্ত্র মতে ভগবান বিষ্ণু বিভিন্ন যুগে নানা অবতারে মর্তে আবির্ভুত হয়েছিলেন। ত্রেতা যুগে তিনি ভগবান রামের (Ram Navami 2025) অবতারে অযোধ্যার রাজা দশরথ ও রানি কৌশল্যার ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন। সংসারকে নানা বিষয়ে শিক্ষাদান করতেই তিনি মর্তে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। অধর্মকে নাশ করে ধর্মকে স্থাপন করা, অশুভ শক্তির বিনাশ করে শুভশক্তি সূচনাই হল রাম নবমীর (Ram Navami 2025) মূল উদ্দেশ্য। প্রাচীন ভারতের হিন্দু ধর্মগ্রন্থনুযায়ী ভগবান বিষ্ণু হলেন বিশ্ব সংসারের পালক। বিশ্ব সংসারের সকল মানুষকে ন্যায়পরায়ণতা ও সত্যের পথ প্রদর্শন করতে এবং মিথ্যার উপর সত্যের জয় প্রতিষ্ঠা করতে শিখিয়েছেন ভগবান রাম। ভগবান রামের উল্লেখ যে শুধুমাত্র প্রাচীন ধর্ম গ্রন্থে পাওয়া যায় তা নয়, জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থেও শ্রীরামের উল্লেখ রয়েছে।

    কেন পালন করা হয় রাম নবমী

    রাম নবমী (Ram Navami 2025) হিন্দুধর্মের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান। মন, প্রাণ ও দেহকে পবিত্র করার জন্য এই উৎসবটি পালন করা হয়। অশুভ শক্তির অপসারণ ও ঐশ্বরিক শক্তির আগমনের জন্য রামনবমী উৎসব পালিত হয়। ভগবান রাম অত্যাচারী রাক্ষসরাজ রাবণকে বধ করার জন্য পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শত্রুদের বিনাশ করে, অধর্মকে ধ্বংস করে পৃথিবীতে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শ্রীরাম। তিনি তাঁর পিতার নির্দেশে রাজবাড়ির ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্য ত্যাগ করে বনবাসী হয়েছিলেন। পিতৃসত্য পালনের জন্য চোদ্দ বছর বনবাসে থেকে তিনি রাবণকে বধ করে অযোধ্যায় ফিরেছিলেন। এই চোদ্দ বছর শ্রীরামের জীবনে নানা ঝড়, বাধা, বিপত্তির, ঘাত-প্রতিঘাত সহ প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে থেকেও তিনি নিজ লক্ষ্যে স্থির ছিলেন। তাঁর রাজ্যে প্রজারা সুখে শান্তিতে বাস করত এবং সেই রাজ্যের সমৃদ্ধি ও ন্যায়বিচার অব্যাহত ছিল। এই জন্য রামের শাসনের অনুসরণে সুশাসিত রাজ্যকে ‘রামরাজ্য’ বলা হয়।

    কীভাবে পালন করবেন রাম নবমী

    চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের ব্রহ্ম মুহূর্তে উঠে রাম ও সীতাকে প্রণাম করে দিন শুরু করুন। ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে বাড়ির প্রবেশদ্বারে আমপাতার তোরণ টাঙান। রঙ্গোলি বানাতে পারেন। এই তিথিতে ধ্বজা লাগানো শুভ। এর পর স্নান করে ব্রতর সংকল্প গ্রহণ করুন। এই তিথিতে হলুদ রঙের নতুন পোশাক পরে পুজো করা শুভ ফলদায়ী। এর পর সূর্যকে জলের অর্ঘ্য প্রদান করুন। ঠাকুরঘরে একটি চৌকিতে লাল বা হলুদ আসন বিছিয়ে রাম পরিবারের প্রতিমা বা ছবি স্থাপন করুন। এর পর আহ্বান মন্ত্র উচ্চারণ করে রামচন্দ্রের ধ্যান করুন। পঞ্চোপচার নিয়মে রাম, লক্ষ্মণ, সীতা ও বজরংবলীর পুজো করুন। এ সময়ে রাম চালিসা বা রাম স্তোত্র পাঠ করতে ভুলবেন না। অবশেষে আরতী করে রামচন্দ্রের কাছে সুখ-সমৃদ্ধি ও ধন লাভের প্রার্থনা করুন।

    ধর্মের প্রতিষ্ঠা

    এই উৎসবের দিন সকালে হিন্দুদের আদি দেবতা সূর্য দেবকে জল প্রদান করে, সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী সূর্য দেবতার আশীর্বাদ গ্রহণ করা হয়। রাম নবমী (Ram Navami 2024) উপলক্ষ্যে ধার্মিক ব্যক্তিরা সমগ্র দিন জুড়ে বৈদিক মন্ত্র পাঠ করেন।  এই দিনটিতে রাম কথার বর্ণনা করে, রাম কাহিনী পড়ে দিনটি পালন করা হয়। অনেকে মন্দিরে যান, অনেকে বাড়িতে রামের মূর্তিতে পুজো করেন। এদিন মন্দ শক্তিকে পরাজিত করে ভালোর প্রতিষ্ঠা করা হয়, অর্ধমকে নিক্ষেপ করে ধর্মের প্রতিষ্ঠা করা হয়। এদিন নিষ্ঠা নিয়ে পুজো করলে মনের অনেক আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়। ভগবানের কৃপায় সব ধরনের সংকট থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। অনেকে রাম নবমীর দিন ভগবান রামের সঙ্গেই দেবী দুর্গারও পুজো করেন।

    শপথ নেওয়ার দিন রাম নবমী (Ram Navami)

    ভগবান বিষ্ণুর সপ্তম অবতার রাম। হিন্দুধর্মে রাম অন্তঃহীন প্রেম, সাহস, শান্তি, শক্তি, ভক্তি, কর্তব্য ও মূল্যবোধের দেবতা। তিনি শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মেরই নন। তিনি হলেন ভারতীয় ভূখণ্ডের সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। এই ঐতিহ্যকে ভাগ করা সম্ভব নয়। রামের নাম ভারতে বসবাসকারী কোটি কোটি নাগরিককে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত করে। বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক চেতনার মহান দূত হলেন ‘শ্রীরাম’। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, ‘রামচন্দ্র হলেন আদর্শ পুত্র, আদর্শ স্বামী, আদর্শ পিতা সর্বোপরি আদর্শ নৃপতি’। তাই শ্রীরামচন্দ্রের জন্মদিনটি ভারতবাসী তথা হিন্দুদের কাছে পবিত্র দিন, শপথ নেওয়ার দিন। ‘রাম নবমী’ (Ram Navami 2025) উৎসব হল মিলনের উৎসব, ভালোবাসার উৎসব, পবিত্রতার উৎসব, সত্য ও ধর্মস্থাপনের উৎসব।

  • Ramakrishna 317: “শুধু জ্ঞানের অক্ষয় ভাণ্ডার নহে,—ঈশ্বরপ্রেম ‘কলসে কলসে ঢালে তবু না ফুরায়’”

    Ramakrishna 317: “শুধু জ্ঞানের অক্ষয় ভাণ্ডার নহে,—ঈশ্বরপ্রেম ‘কলসে কলসে ঢালে তবু না ফুরায়’”

    দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ  

    পঞ্চম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৬শে অক্টোবর

    গৃহস্থাশ্রমকথা-প্রসঙ্গে—নির্লিপ্ত সংসারী

    শ্রীযুক্ত মহিমাচরণাদি ভক্তেরা বসিয়া শ্রীরামকৃষ্ণের (Ramakrishna) হরিকথামৃত পান করিতেছেন। কথাগুলি যেন বিবিধ বর্ণের মণিরত্ন, যে যত পারেন কুড়াইতেছেন—কিন্তু কোঁচড় পরিপূর্ণ হয়েছে, এত ভার বোধ হচ্ছে যে উঠা যায় না। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আধার, আর ধারণা হয় না। সৃষ্টি হইতে এ পর্যন্ত যত বিষয়ে মানুষের হৃদয়ে যতরকম সমস্যা উদয় হয়েছে, সব সমস্যা পূরণ হইতেছে। পদ্মলোচন, নারায়ণ শাস্ত্রী, গৌরী পণ্ডিত, দয়ানন্দ সরস্বতী ইত্যাদি শাস্ত্রবিৎ পণ্ডিতেরা অবাক্‌ হয়েছেন। দয়ানন্দ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে (Ramakrishna) যখন দর্শন করেন ও তাঁহার সমাধি অবস্থা দেখিলেন, তখন আক্ষেপ করে বলেছিলেন, আমরা এত বেদ-বেদান্ত কেবল পড়েছি, কিন্তু এই মহাপুরুষে তাহার ফল দেখিতেছি; এঁকে দেখে প্রমাণ হল যে পণ্ডিতেরা কেবল শাস্ত্র মন্থন করে ঘোলটা খান, এরূপ মহাপুরুষেরা মাখনটা সমস্ত খান। আবার ইংরেজী পড়া কেশবচন্দ্র সেনাদি পণ্ডিতেরাও ঠাকুরকে দেখে অবাক্‌ হয়েছেন। ভাবেন, কি আশ্চর্য, নিরক্ষর ব্যক্তি এ-সব কথা কিরূপে বলছেন। এযে ঠিক যীশুখ্রীষ্টের মতো কথা! গ্রাম্য ভাষা। সেই গল্প করে বুঝান—যাতে পুরুষ, স্ত্রী, ছেলে সকলে অনায়াসে বুঝিতে পারে (Kathamrita)। যীশু ফাদার (পিতা) ফাদার (পিতা) করে পাগল হয়েছিলেন, ইনি মা মা করে পাগল। শুধু জ্ঞানের অক্ষয় ভাণ্ডার নহে,—ঈশ্বরপ্রেম ‘কলসে কলসে ঢালে তবু না ফুরায়’। ইনিও যীশুর মতো ত্যাগী, তাঁহারই মতো ইঁহারও জ্বলন্ত বিশ্বাস। তাই কথাগুলির এত জোর। সংসারী লোক বললে তো এত জোর হয় না; তারা ত্যাগী নয়, তাদের জ্বলন্ত বিশ্বাস কই? কেশব সেনাদি পণ্ডিতেরা আরও ভাবেন,—এই নিরক্ষর লোকের এত উদারভাব কেমন করে হল! কি আশ্চর্য! কোনরূপ বিদ্বেষভাব নাই (Kathamrita)! সব ধর্মাবলম্বীদের আদর করেন—কাহারও সহিত ঝগড়া নাই।

    আজ মহিমাচরণের সহিত ঠাকুরের কথাবার্তা শুনিয়া কোন ভক্ত ভাবছেন, ঠাকুর তো সংসারত্যাগ করতে বললেন না — বরং বলছেন সংসার কেল্লাস্বরূপ, এই কেল্লায় থেকে কাম, ক্রোধ ইত্যাদির সহিত যুদ্ধ করিতে পারা যায়। আবার বলছেন, সংসারে থাকবে না তো কোথায় থাকবে? কেরানি জেল থেকে বেরিয়ে এসে কেরানির কাজই করে। অতএব একরকম বলা হল জীবন্মুক্ত সংসারেও থাকতে পারে। আদর্শ — কেশব সেন? তাঁকে বলেছিলেন, “তোমারই ল্যাজ খসেছে — আর কারুর হয় নাই।”

  • Annapurna Puja 2025: আজ অন্নপূর্ণা পুজো, কতক্ষণ থাকছে তিথি? জানুন দেবীর পৌরাণিক আখ্যান

    Annapurna Puja 2025: আজ অন্নপূর্ণা পুজো, কতক্ষণ থাকছে তিথি? জানুন দেবীর পৌরাণিক আখ্যান

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আজ অন্নপূর্ণা পুজো। চৈত্র মাসের শুক্লা অষ্টমী তিথিতে পূজিতা হন দেবী অন্নপূর্ণা (Annapurna Puja 2025)। তবে এর পাশাপাশি গ্রাম বাংলাতে নবান্ন উৎসবের সময়ও অন্নপূর্ণা পুজোর রীতি দেখা যায়। সেটা অগ্রহায়ণ মাসে সম্পন্ন হয়। মনে করা হয় বাংলায় অন্নপূর্ণা দেবীর মাহাত্ম্য প্রচারিত হয়েছে কাশী থেকেই। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, কাশী বিশ্বনাথ মন্দির দর্শন করতে গেলে পুজো দিতে হয় মা অন্নপূর্ণাকে। হিন্দুদের বিশ্বাস, বাবা বিশ্বনাথ কাশীধামের নির্মাণকর্তা এবং মা অন্নপূর্ণা সমগ্র কাশী ধামের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এবারের অন্নপূর্ণা পুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ অর্থাৎ ৫ এপ্রিল। পঞ্জিকা মতে, শুক্রবার রাত ১টা ৩৯ মিনিট (ইংরেজি মতে শনিবার) পর্যন্ত সপ্তমী ছিল। তারপরেই শুরু হয়েছে অষ্টমী তিথি। আজ শনিবার রাত ১২টা ২৩ মিনিট (ইংরেজি মতে রবিবার) পর্যন্ত অষ্টমী তিথি থাকছে।

    পঞ্জিকা অনুযায়ী অন্নপূর্ণা পুজোর (Annapurna Puja) নির্ঘণ্ট:

    পূর্বাহ্ন ৯ টা ৩৭ মিনিটের মধ্যে শ্রীশ্রীবাসন্তীদুর্গাদেবীর অষ্টমী বিহিত পূজা।

    রাত্রি ১১ টা ১৭ মিনিট গতে ১২ টা ৫ মিনিটের মধ্যে দেবীর অর্দ্ধরাত্রবিহিত পূজা।

    রাত্রি ১১ টা ৫৯ মিনিট গতে সন্ধিপূজারম্ভ।

    রাত্রি ১২ টা ২৩ মিনিট গতে বলিদান। আর তারপর নবমী তিথি পড়ে যাবে।

    এদিন কাশী ধামে আয়োজিত হয় অন্নকূট উৎসব

    অন্নপূর্ণা পুজোর দিনে কাশী ধামে আয়োজিত হয় অন্নকূট উৎসব। আমিষ ভোজন, মাদক পান, ধূমপান প্রভৃতি থেকে দূরে থাকেন এই দিন ভক্তরা। কাউকে কোনওরকম কটু কথাও বলেন না ভক্তরা। যাতে তাদের ব্যবহারে কেউ অন্য কেউ কষ্ট পায়। এদিন ভক্তরা ব্রত পালন করেন এবং মিথ্যা কথা বলেন না। সাদা পোশাকে পুজোয় (Annapurna Puja 2025) দিতে দেখা যায় ভক্তদের। হিন্দুদের বিশ্বাস অন্নকূট উৎসবে কোনও ভিক্ষুককে পিতলের পাত্রে আতপ চাল দান করলে অত্যন্ত শুভ ফল পাওয়া যায়।

    ভরতচন্দ্র রায়গুনাকর দেবী অন্নপূর্ণার কথা উল্লেখ করেছেন

    দেবী অন্নপূর্ণার (Annapurna Puja 2025) যে কোনও বিগ্রহ দেখলেই বোঝা যায়, তাঁর হাত থেকে অন্ন গ্রহণ করছেন দেবাদিদেব মহাদেব। বাংলাতে ভরতচন্দ্র রায়গুনাকর দেবী অন্নপূর্ণার কথা উল্লেখ করেছেন। সেখানে মা অন্নপূর্ণার মাহাত্ম্যও বর্ণনা করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্ন শব্দের অর্থ হল ধান আর পূর্ণা শব্দের অর্থ পূর্ণ। প্রচলিত অনেক কাহিনী রয়েছে মা অন্নপূর্ণাকে নিয়ে। তার মধ্যে অন্যতম হলো কাশীর পৌরাণিক আখ্যান।

    পৌরাণিক কাহিনী জানুন

    পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, শিব পার্বতী বিবাহের পরে দাম্পত্য জীবন সুখেই কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু শিবের আর্থিক অনটনের কারণে দাম্পত্য সমস্যা শুরু হয়। সে সময়ে ভোলেনাথের সঙ্গে মা পার্বতীর (Annapurna Puja 2025) মতবিরোধ শুরু হয় মাতা পার্বতী কৈলাস ত্যাগ করেন। মাতা পার্বতীর এই সিদ্ধান্তের পরেই দেখা যায় মহামারি এবং নানা সংকট ভক্তরা তখন আকুল হয়ে পড়েন। তাঁরা দেবাদিদেব মহাদেবকে ডাকতে থাকেন। সেই সময়ই ভিক্ষার ঝুলিকে কাঁধে তুলে নেন মহাদেব। কিন্তু দেবীর মায়ায় কোথাও ভিক্ষা জোটে না। মহাদেব তখন জানতে পারেন কাশীতে এক নারী সকলকে অন্ন দান করছেন। তখন ভোলেনাথ সেখানে উপস্থিত হন। চিনতে পারেন তিনি মাতা অন্নপূর্ণাকে (Annapurna Puja 2025)। মহাদেব মায়ের কাছে ভিক্ষা প্রার্থনা করেন এবং সেই ভিক্ষা গ্রহণ করেই মহামারি এবং খাদ্যাভাব থেকে ভক্তকুলকে রক্ষা করেন বলে মনে করা হয়। চৈত্র মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে সেখানে মানে কাশী ধামে মায়ের আবির্ভাব হয়েছিল বলে মানা হয়। তাই তখন থেকেই সেখানে মায়ের পুজো প্রচলন। অন্য আরেকটি পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। সেই পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে দেবী পার্বতীর মায়ায় কোথাও ভিক্ষা পাননি দেবাদিদেব মহাদেব। তবে তা বুঝতে পারেন শিব। কৈলাসে ফিরে পায়েস পিঠে খেয়ে তৃপ্ত হন দেবাদিদেব। তখন থেকেই নাকি অন্নপূর্ণা পুজোর প্রচলন।

    মায়ের প্রিয় ভোগ কী জানেন

    মা অন্নপূর্ণাকে মা দুর্গার আরেক রূপ মানা হয়। বাংলার অন্নদামঙ্গল কাব্যে প্রথম মেলে এই দেবীর (Annapurna Puja 2025) উল্লেখ। শক্তির অপর রূপ মানা হয় মা অন্নপূর্ণাকে তিনি সকলের অন্ন যোগান। মা অন্নপূর্ণার প্রিয় ভোগ হল- মুগের ডাল, ভাত, শাক, ভাজা, মোচার ঘন্ট, আর ছানার ডালনা। ভক্তদের বিশ্বাস, এইভাবে সাজিয়ে মাকে ভোগ নিবেদন করলে তিনি খুশি হন এবং বছরভর সুখ ও শান্তি, সমৃদ্ধিতে ভরে ওঠে ভক্তের জীবন।

  • Ramakrishna 316: “যতদিন অবিদ্যার ল্যাজ না খসে, ততদিন সংসার-জলে পড়ে থাকে, জ্ঞান হলে মুক্ত হয়ে বেড়াতে পারে”

    Ramakrishna 316: “যতদিন অবিদ্যার ল্যাজ না খসে, ততদিন সংসার-জলে পড়ে থাকে, জ্ঞান হলে মুক্ত হয়ে বেড়াতে পারে”

    দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ  

    চতুর্থ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৬শে অক্টোবর
    সন্ন্যাস ও গৃহস্থাশ্রম—ঈশ্বরলাভ ও ত্যাগ—ঠিক সন্ন্যাসী কে

    একজন ভক্ত (Ramakrishna)—‘রামের ইচ্ছা’ গল্পটি কি?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—কোন এক গ্রামে একটি তাঁতী থাকে। বড় ধার্মিক, সকলেই তাকে বিশ্বাস করে আর ভালবাসে। তাঁতী হাটে গিয়ে কাপড় বিক্রি করে। খরিদ্দার দাম জিজ্ঞাসা করলে বলে, রামের ইচ্ছা, সুতার দাম একটাকা, রামের ইচ্ছা মেহন্নতের দাম চারি আনা, রামের ইচ্ছা, মুনাফা দুই আনা। কাপড়ের দাম রামের ইচ্ছা একটাকা ছয় আনা। লোকের এত বিশ্বাস যে তৎক্ষণাৎ দাম ফেলে দিয়ে কাপড় নিত। লোকটি ভারী ভক্ত, রাত্রিতে খাওয়াদাওয়ার পরে অনেকক্ষণ চণ্ডীমণ্ডপে বসে ঈশ্বরচিন্তা করে, তাঁর নামগুণকীর্তন করে। একদিন অনেক রাত হয়েছে, লোকটির ঘুম হচ্ছে না, বসে আছে, এক-একবার তামাক খাচ্ছে; এমন সময় সেই পথ দিয়ে একদল ডাকাত ডাকাতি করতে যাচ্ছে। তাদের মুটের অভাব হওয়াতে ওই তাঁতীকে এসে বললে, আয় আমাদের সঙ্গে—এই বলে হাত ধরে টেনে নিয়ে চলল। তারপর একজন গৃহস্থের বাড়ি গিয়ে ডাকাতি করলে। কতকগুলো জিনিস তাঁতীর মাথায় দিলে। এমন সময় পুলিশ এসে পড়ল। ডাকাতেরা পালাল, কেবল তাঁতীটি মাথায় মোট ধরা পড়ল। সে রাত্রি তাকে হাজতে রাখা হল। পরদিন ম্যাজিস্টার সাহেবের কাছে বিচার। গ্রামের লোক জানতে পেরে সব এসে উপস্থিত। তারা সকলে বললে, ‘হুজুর! এ-লোক কখনও ডাকাতি করতে পারে না’। সাহেব তখন তাঁতীকে জিজ্ঞাসা করলে, ‘কি গো, তোমার কি হয়েছে বল’। তাঁতী বললে, ‘হুজুর! রামের ইচ্ছা, আমি রাত্রিতে ভাত খেলুম। তারপরে রামের ইচ্ছা, আমি চণ্ডীমণ্ডপে বসে আছি, রামের ইচ্ছা অনেক রাত হল। আমি, রামের ইচ্ছা, তাঁর চিন্তা করছিলাম আর তাঁর নাম গুনগাণ করছিলাম।

    এমন সময়ে রামের (Ramakrishna) ইচ্ছা, একদল ডাকাত সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিল। রামের ইচ্ছা তারা আমায় ধরে টেনে লয়ে গেল। রামের ইচ্ছা, তারা এক গৃহস্থের বাড়ি ডাকাতি করলে। রামের ইচ্ছা, আমার মাথায় মোট দিল। এমন সময় রামের ইচ্ছা, পুলিস এসে পড়ল। রামের ইচ্ছা, আমি ধরা পড়লুম। তখন রামের ইচ্ছা, পুলিসের লোকেরা হাজতে দিল। আজ সকালে রামের ইচ্ছা, হুজুরের কাছে এনেছে’।

    “অমন ধার্মিক লোক দেখে, সাহেব তাঁতীটিকে ছেড়ে দিবার হুকুম দিলেন। তাঁতী রাস্তায় বন্ধুদের বললে, রামের ইচ্ছা, আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। সংসার করা, সন্ন্যাস করা, সবই রামের ইচ্ছা। তাই তাঁর উপর সব ফেলে দিয়ে সংসারে (Kathamrita) কাজ কর।

    “তা না হলে আর কিই বা করবে?

    “একজন কেরানি জেলে গিছিল। জেল খাটা শেষ হলে, সে জেল থেকে বেরিয়ে এল। এখন জেল থেকে এসে, সে কি কেবল ধেই ধেই করে নাচবে? না, কেরানিগিরিই করবে?

    “সংসারী যদি জীবন্মুক্ত হয়, সে মনে করলে অনায়াসে সংসারে থাকতে পারে। জার জ্ঞানলাভ হয়েছে, তার এখান সেখান নাই। তার সব সমান। যার সেখানে আছে, তার এখানেও আছে।

    পূর্বকথা—কেশব সেনের সঙ্গে কথা—সংসারে জীবন্মুক্ত 

    “যখন কেশব সেনকে বাগানে প্রথম দেখলুম, বলেছিলাম—‘এরই ল্যাজ খসেছে’। সভাসুদ্ধ লোক হেসে উঠল। কেশব বললে, তোমারা হেসো না, এর কিছু মানে আছে, এঁকে জিজ্ঞাসা করি। আমি বললাম, যতদিন বেঙাচির ল্যাজ না খসে, তার কেবল জলে থাকতে হয়, আড়ায় উঠে ডাঙায় বেড়াতে পারে না; যেই ল্যাজ খসে, আমনি লাফ দিয়ে ডাঙায় পড়ে। তখন জলেও থাকে, আবার ডাঙায়ও থাকে। তেমনি মানুষের যতদিন অবিদ্যার ল্যাজ না খসে, ততদিন সংসার-জলে পড়ে থাকে। অবিদ্যার ল্যাজ খসলে—জ্ঞান হলে, তবে মুক্ত হয়ে বেড়াতে পারে, আবার ইচ্ছা হলে সংসারে থাকতে পারে (Kathamrita)।”

  • Basanti Puja: চৈত্র শুক্লপক্ষে দেবী মহামায়ার আরাধনা করেন রাজা সুরথ, জানুন বাসন্তী পুজোর ইতিহাস

    Basanti Puja: চৈত্র শুক্লপক্ষে দেবী মহামায়ার আরাধনা করেন রাজা সুরথ, জানুন বাসন্তী পুজোর ইতিহাস

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: হিন্দুশাস্ত্রমতে বসন্তকালে চৈত্র শুক্লপক্ষে আয়োজিত হয় বাসন্তী পুজো। পুরাণ অনুযায়ী, সমাধি নামক বৈশ্যের সঙ্গে মিলে রাজা সুরথ বসন্তকালে ঋষি মেধসের আশ্রমে দেবী দুর্গার আরাধনা করেন। যা পরে বাসন্তী পুজো (Basanti Puja) নামে প্রসিদ্ধ হয়। দেবী দুর্গার প্রথম পুজারী হিসাবে চণ্ডীতে রাজা সুরথের উল্লেখ রয়েছে।

    কবে থেকে পুজো, দেবীর আগমন কিসে

    চলতি বছরে বাসন্তীপুজো ৩ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে। এই পুজোর ষষ্ঠীই হল অশোক ষষ্ঠী। মূলত, সপ্তমী তিথি বাসন্তী পুজো, অষ্টমীতে অন্নপূর্ণার আরাধনা, নবমীই হল রাম নবমী। দেশের নানান জায়গায় যখন চৈত্র নবরাত্রির পার্বনে অনেকে উৎসবে মেতে রয়েছেন, তখন বাংলা এই চৈত্রের শুক্লপক্ষে দেবী বাসন্তীর আরাধনায় মেতে ওঠে। শাস্ত্রমতে বলা হচ্ছে, চলতি বছর দেবীর আগমন হবে গজে। আর দেবীর গমনও হতে চলেছে গজে। জ্যোতিষমতে বলা হচ্ছে, দেবীর বাহন যদি গজ বা হাতি হয়, তাহলে তার ফলাফল হয় শস্য শ্য়ামলা বসুন্ধরা। এতে মনে করা হয় বিশ্বে অর্থ, সমৃদ্ধি বাড়ে।

    রাজা সুরথের কাহিনী

    রাজা সুরথকে চিত্রগুপ্তবংশী রাজা (চিত্রগুপ্তের বংশধর) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে দুর্গা সপ্তশতী দেবী মাহাত্ম্য এবং মার্কণ্ডেয় পুরাণে। সুরথ সুশাসক ও যোদ্ধা হিসেবে বেশ খ্যাত ছিলেন। কোনও যুদ্ধে নাকি তিনি কখনও হারেননি। কিন্তু প্রতিবেশী রাজ্য একদিন তাঁকে আক্রমণ করে এবং সুরথ পরাজিত হন। এই সুযোগে তাঁর সভাসদরাও লুটপাট চালায়। কাছের মানুষের এমন আচরণে স্তম্ভিত হয়ে যান সুরথ। বনে ঘুরতে ঘুরতে তিনি মেধাসাশ্রমে পৌঁছোন। ঋষি তাঁকে সেখানেই থাকতে বলেন। কিন্তু রাজা শান্তি পান না।

    বাসন্তী পুজোর সূচনা

    এর মধ্যে একদিন তাঁর সমাধির সঙ্গে দেখা হয়। তিনি জানতে পারেন, সমাধিকেও তাঁর স্ত্রী এবং ছেলে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তবুও তিনি স্ত্রী-ছেলের ভালোমন্দ এখনও ভেবে চলেছেন। তাঁরা দুজনেই তখন ভাবলেন, যাদের কারণে তাদের সব কিছু হারিয়েছে, তাদের ভালো আজও তাঁরা কামনা করছেন। ঋষিকে একথা বলায়, তিনি বলেন সবই মহামায়ার ইচ্ছা। এরপর ঋষি মহামায়ার কাহিনি বর্ণনা করেন। ঋষির উপদেশেই রাজা কঠিন তপস্যা শুরু করেন। পরে মহামায়ার আশীর্বাদ পেতেই বসন্ত কালের শুক্ল পক্ষে রাজা পুজো শুরু করেন। শুরু হয় বাসন্তী পুজো (Basanti Puja)। এই পুজো এখন কয়েকটি বাড়িতেই শুধু হয়।

  • Ramakrishna 315: “সংসারে কাম, ক্রোধ এই সবের সঙ্গে, নানা বাসনার সঙ্গে, আসক্তির সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়”

    Ramakrishna 315: “সংসারে কাম, ক্রোধ এই সবের সঙ্গে, নানা বাসনার সঙ্গে, আসক্তির সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়”

    দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ  

    চতুর্থ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৪, ২৬শে অক্টোবর
    সন্ন্যাস ও গৃহস্থাশ্রম—ঈশ্বরলাভ ও ত্যাগ—ঠিক সন্ন্যাসী কে?

     

    সংসারত্যাগ কি দরকার? 

    মহিমা—তাঁর উপর মন গেলে আর কি সংসার থাকে?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—সে কি? সংসারে থাকবে না তো কোথায় যাবে? আমি দেখছি যেখানে থাকি, রামের অযোধ্যায় আছি। এই জগৎসংসার রামের অযোধ্যা। রামচন্দ্র গুরুর কাছে জ্ঞানলাভ করবার পর বললেন, আমি সংসারত্যাগ করব। দশরথ তাঁকে বুঝাবার জন্য বশিষ্ঠকে পাঠালেন। বশিষ্ঠ দেখলেন, রামের তীব্র বৈরাগ্য। তখন বললেন, “রাম, আগে আমার সঙ্গে বিচার কর, তারপর সংসারত্যাগ করো। আচ্ছা, জিজ্ঞাসা করি, সংসার কি ঈশ্বর ছাড়া? তা যদি হয় তুমি ত্যাগ কর।” রাম দেখলেন, ঈশ্বরই জীবজগৎ সব হয়েছেন। তাঁর সত্তাতে সমস্ত সত্য বলে বোধ হচ্ছে। তখন রামচন্দ্র (Ramakrishna) চুপ করে রইলেন।

    “সংসারে কাম, ক্রোধ এই সবের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়, নানা বাসনার সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়, আসক্তির সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়। যুদ্ধ কেল্লা থেকে হলেই সুবিধা (Kathamrita)। গৃহ থেকে যুদ্ধই ভাল;—খাওয়া মেলে, ধর্মপত্নী অনেকরকম সাহায্য করে। কলিতে অন্নগত প্রাণ—অন্নের জন্য সাত জায়গায় ঘুরার চেয়ে এক জায়গাই ভাল। গৃহে, কেল্লার ভিতর থেকে যেন যুদ্ধ করা।

    “আর সংসারে থাকো ঝড়ের এঁটো পাত হয়ে। ঝড়ের এঁটো পাতাকে কখনও ঘরের ভিতরে লয়ে যায়, কখনও আঁস্তাকুড়ে। হাওয়া যেদিকে যায়, পাতাও সেইদিকে যায়। কখনও ভাল জায়গায়, কখনও মন্দ জায়গায়! তোমাকে এখন সংসারে ফেলেছেন, ভাল, এখন সেই স্থানেই থাকো—আবার যখন সেখান থেকে তুলে ওর চেয়ে ভাল জায়গায় লয়ে ফেলবেন, তখন যা হয় হবে।”

    সংসারে আত্মসমর্পণ (Resignation) রামের ইচ্ছা 

    “সংসারে রেখেছেন তা কি করবে (Kathamrita)? সমস্ত তাঁকে সমর্পণ করো—তাঁকে (Ramakrishna) আত্মসমর্পণ করো। তাহলে আর কোন গোল থাকবে না। তখন দেখবে, তিনিই সব করছেন। সবই রামের ইচ্ছা।”

    একজন ভক্ত—‘রামের ইচ্ছা’ গল্পটি কি?

LinkedIn
Share