Category: পরম্পরা

Get updated History and Heritage and Culture and Religion related news from the Madhyom news portal madhyom.com, West Bengal leading news portal Madhyom.com

  • Ramakrishna 466: কালি ঘরে কাজ করার সময় মাকে বললাম, “মা, হৃদে বলছে কিছু সিদ্ধাই চাই

    Ramakrishna 466: কালি ঘরে কাজ করার সময় মাকে বললাম, “মা, হৃদে বলছে কিছু সিদ্ধাই চাই

    গভীর ধ্যানে ইন্দ্রিয়ের সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়। মন বহির্মুখী থাকে না—যেন বার-বাড়িতে কপাট পড়ল। ইন্দ্রিয়ের পাঁচটি বিষয়: রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, শব্দ—বাহিরে পড়ে থাকে।

    “ধ্যানের সময় প্রথম প্রথম ইন্দ্রিয়ের বিষয় সকল সামনে আসে—গভীর ধ্যানে সে সকল আর আসে না—বাহিরে পড়ে থাকে। ধ্যান করতে করতে আমাদের কত কি দর্শন হয়। প্রত্যক্ষ দেখলাম—সামনে টাকায় কাঠি, শাল, একখানা সুন্দর টালি—তাদের মধ্যে কি সুন্দর জ্যোৎস্নার আভা—সব বাহিরের বস্তু।

    সমস্ত জিনিস বার থেকে দেখা যায়! তাদের ভিতরে দেখলাম— নাড়ীভূড়ি, রক্ত, মল, কফ, নাল, প্রস্রাব এই সব।

    [ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ — গুরুগিরি ও বেশ্যাবৃত্তি]

    শ্রীযুক্ত গিরিশ ঠাকুরের নাম করিয়া ব্যারাম ভাল করিব — এই কথা মাঝে মাঝে বলিতেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (গিরিশ প্রভৃতি ভক্তদের প্রতি) — যাহারা ঈশ্বরবুদ্ধি তাঁরা সিঁড়াই চায়। ব্যারাম ভাল করা, মোক্ষম লাভ, জিতানো, জলে হেঁটেই চলে যাওয়া — এই সব। যাহারা শুদ্ধভক্ত তাঁরা ঈশ্বরের পাদপদ্ম ছাড়া কিছুই চায় না। হৃদয়ে একদিন বললেম, ‘মা! মার কাছে কিছু শক্তি চাই, কিছু সিঁড়াই চাই।’ আমার বালকের স্বভাব। — কালীঘাটে জপ করিবার সময় মাকে বলিলাম, মা বলছে কিছু সিঁড়াই চাইতে। অমনি দেখিতে দিলেন সামনে এসে পেঁচাটে ফিকে উড়ু হয়ে বসলো—

    কালি ঘরে কাজ করার সময় মাকে বললাম, “মা, হৃদে বলছে কিছু সিদ্ধাই চাই।” হঠাৎ সামনে একজন বুড়ো বেশ্যা এসে উবু হয়ে বসে পড়ল। তার বয়স চল্লিশের কাছাকাছি। ধামা পোঁদ, কালো পেড়ে কাপড় পরা, এবং পড়পড় করে হাগছে। যাদের একটু সিদ্ধাই থাকে, তাদের জন্য এই পরিস্থিতি অবাক করা। অনেকের ইচ্ছা হয় গুরুগিরি করা; পাঁচজনে একসাথে মানে শীর্ষ সেবক হিসেবে আচরণ করছে। মানুষ বলে, “গুরুচরণের ভাইয়েরা আজকাল বেশ কিছু লোক আসছে-যাচ্ছে।” শীষ্য সেবক অনেক হয়েছে, ঘরে জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

  • Ramakrishna 466: ধ্যানে এইরূপ একাগ্রতা হয়, অন্য কিছু দেখা যায় না, শোনাও যায় না

    Ramakrishna 466: ধ্যানে এইরূপ একাগ্রতা হয়, অন্য কিছু দেখা যায় না, শোনাও যায় না

    “ধ্যানে এইরূপ একাগ্রতা হয়, অন্য কিছু দেখা যায় না, শোনাও যায় না। স্পর্শবোধ পর্যন্ত হয় না। সাপ গায়ের উপর দিয়ে চলে যায়, জানিতে পারে না। যে ধ্যান করে সেও বুঝিতে পারে না—সাপটাও জানিতে পারে না।

    “গভীর ধ্যানে ইন্দ্রিয়ের সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়। মন বহির্মুখী থাকে না—যেন বার-বাড়িতে কপাট পড়ল। ইন্দ্রিয়ের পাঁচটি বিষয়: রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, শব্দ—বাহিরে পড়ে থাকে।

    “ধ্যানের সময় প্রথম প্রথম ইন্দ্রিয়ের বিষয় সকল সামনে আসে—গভীর ধ্যানে সে সকল আর আসে না—বাহিরে পড়ে থাকে। ধ্যান করতে করতে আমাদের কত কি দর্শন হয়। প্রত্যক্ষ দেখলাম—সামনে টাকায় কাঠি, শাল, একখানা সুন্দর টালি—তাদের মধ্যে কি সুন্দর জ্যোৎস্নার আভা—সব বাহিরের বস্তু।

    সমস্ত জিনিস বার থেকে দেখা যায়! তাদের ভিতরে দেখলাম— নাড়ীভূড়ি, রক্ত, মল, কফ, নাল, প্রস্রাব এই সব।

    [ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ — গুরুগিরি ও বেশ্যাবৃত্তি]

    শ্রীযুক্ত গিরিশ ঠাকুরের নাম করিয়া ব্যারাম ভাল করিব — এই কথা মাঝে মাঝে বলিতেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (গিরিশ প্রভৃতি ভক্তদের প্রতি) — যাহারা ঈশ্বরবুদ্ধি তাঁরা সিঁড়াই চায়। ব্যারাম ভাল করা, মোক্ষম লাভ, জিতানো, জলে হেঁটেই চলে যাওয়া — এই সব। যাহারা শুদ্ধভক্ত তাঁরা ঈশ্বরের পাদপদ্ম ছাড়া কিছুই চায় না। হৃদয়ে একদিন বললেম, ‘মা! মার কাছে কিছু শক্তি চাই, কিছু সিঁড়াই চাই।’ আমার বালকের স্বভাব। — কালীঘাটে জপ করিবার সময় মাকে বলিলাম, মা বলছে কিছু সিঁড়াই চাইতে। অমনি দেখিতে দিলেন সামনে এসে পেঁচাটে ফিকে উড়ু হয়ে বসলো—

  • Ramakrishna 465: গভীর ধ্যানে ইন্দ্রিয়ের সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়

    Ramakrishna 465: গভীর ধ্যানে ইন্দ্রিয়ের সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়

    “গভীর ধ্যানে বাহ্যজ্ঞানশূন্য হয়। একজন ব্যাধ পাখি মারবার জন্য তাগ করছে। কাছ দিয়ে বর চলে যাচ্ছে, সমস্ত ব্যবসায়ীরা, কত কোলাহল, বাজার, গাড়ি, ঘোষা — কতক্ষণ ধরে কাছ নিয়ে চলে গেল। ব্যাধের কিন্তু লেশ নাই। সে জানিতে পারলো না যে কাছ দিয়ে বর চলে গেল।

    “একজন একলা একটি পুকুরের ধারে মাছ ধরছে। অনেকক্ষণ পরে ফাঁসাটা নড়তে লাগল, মাঝে মাঝে কাট হতে লাগল। সে তখন ছিপ হাতে করে টান মারবার উদ্যোগ করিতেছে। এমন সময় একজন পথিক কাছে এসে জিজ্ঞাসা করিতেছে, মহাশয়, অমুক বাঁড়ুজ্জেদের বাড়ি কোথায় বলতে পারেন? সে ব্যক্তি শ্ল্ধ নাই। তার হাত কাঁপিতেছে, কেবল ফাঁসার দিকে দৃষ্টি। তখন পথিক বিরক্ত হয়ে চলেগেল। সে অনেক দূরে চলে গিয়েছে, এমন সময় ফাঁসাটা ডুবে গেল, আর…

    ও ব্যক্তি টান মেরে মাছটাকে আড়ায় তুলল। তখন গাছটা দিয়ে মুখ পুঁতে, চিৎকার করে পাখিটাকে ডাকছে—ওহে—শোনা—শোনা! পাখি ফিরিতে চায় না, অনেক ডাকাডাকি পর ফিরিল। এসে বলছে, কেন মুখ্যধম, আবার ডাকছ কে? তখন সে বলল, তুমি আমায় কি বলছিলে? পাখি বললে, তখন অত্যন্ত করে জিজ্ঞাসা করলুম—আর এখন বলছ কি বললে! সে বলল, তখন যে ফানায় ডুবছিল, তাই আমি কিছুই শুনিতে পাই নাই।

    “ধ্যানে এইরূপ একাগ্রতা হয়, অন্য কিছু দেখা যায় না শোনাও যায় না। স্পর্শবোধ পর্যন্ত হয় না। সাপ গায়ের উপর দিয়ে চলে যায়, জানিতে পারে না। যে ধ্যান করে সেও বুঝিতে পারে না—সাপটাও জানিতে পারে না।

    “গভীর ধ্যানে ইন্দ্রিয়ের সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়। মন বহির্মুখী থাকে না—যেন বার-বাড়িতে কপাট পড়ল। ইন্দ্রিয়ের পাঁচটি বিষয়: রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ, শব্দ—বাহিরে পড়ে থাকে।

    “ধ্যানের সময় প্রথম প্রথম ইন্দ্রিয়ের বিষয় সকল সামনে আসে—গভীর ধ্যানে সে সকল আর আসে না—বাহিরে পড়ে থাকে। ধ্যান করতে করতে আমাদের কত কি দর্শন হয়। প্রত্যক্ষ দেখলাম—সামনে টাকায় কাঠি, শাল, একখানা সুন্দর টালি—তাদের মধ্যে কি সুন্দর জ্যোৎস্নার আভা—সব বাহিরের বস্তু।

  • Swami Vivekananda: ‘‘সিস্টার্স অ্যান্ড ব্রাদার্স অফ আমেরিকা…’’, ১৩২তম বর্ষপূর্তিতে ফিরে দেখা স্বামীজির শিকাগো ভাষণ

    Swami Vivekananda: ‘‘সিস্টার্স অ্যান্ড ব্রাদার্স অফ আমেরিকা…’’, ১৩২তম বর্ষপূর্তিতে ফিরে দেখা স্বামীজির শিকাগো ভাষণ

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আজ ১১ সেপ্টেম্বর, স্বামী বিবেকানন্দের (Swami Vivekananda) শিকাগো ভাষণের ১৩২তম বর্ষপূর্তি। ১৮৯৩ সালের এই দিনেই বিশ্বধর্ম সম্মেলনে হিন্দু ধর্মের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন শ্রী রামকৃষ্ণের শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ। তাঁর শিকাগো ভাষণের শুরুতেই তিনি বলেছিলেন, ‘‘সিস্টার্স অ্যান্ড ব্রাদার্স অফ আমেরিকা…’’ এখানেই প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে করতালি চলতে থাকে। কারণ প্রথমবারের জন্য বিশ্ববাসীকে কেউ ‘ভাই ও বোন’ বলে সম্বোধন করেন শিকাগো ধর্ম সম্মেলনে। তাঁর আগের বক্তারা প্রত্যকেই ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান’ বলেই সম্বোধন করেছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ সেখানে তুলে ধরেন ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর কথা (Vivekananda Chicago Speech)। ভারতের সীমাহীন সভ্যতার কথা। ভারতবর্ষের সনাতন সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও পরম্পরার কথা। সেখানেই শোনান এদেশের ধর্মীয় সহিষ্ণুতার কথা। ভারতবর্ষ কোনও ধর্মের ওপর কখনও আঘাত হানেনি, সে কথাও সেখানে তুলে ধরেন স্বামীজি। বিশ্ব মঞ্চে স্বামীজির ভাষণ সেদিন আলোড়ন তৈরি করে। ভারতীয় সভ্যতার মর্যাদা ব্যাপকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন স্বামীজি তাঁর নিজের ভাষণের মধ্য দিয়ে। তাঁর সেদিনের ভাষণের নির্বাচিত কিছু অংশের বিশ্লেষণ নীচে করা হল।

    পৃথিবীর মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন সন্ন্যাসী-সমাজের পক্ষ হইতে আমি আপনাদিগকে ধন্যবাদ জানাইতেছি

    ‘‘হে আমার আমেরিকাবাসী ভগিনী ও ভ্রাতৃবৃন্দ, আজ আপনারা আমাদিগকে যে আন্তরিক ও সাদর অভ্যর্থনা করিয়াছেন, তাহার উত্তর দিবার জন্য উঠিতে গিয়া আমার হৃদয় অনির্বচনীয় আনন্দে পরিপূর্ণ হইয়া গিয়াছে। পৃথিবীর মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন সন্ন্যাসী-সমাজের পক্ষ হইতে আমি আপনাদিগকে ধন্যবাদ জানাইতেছি। সর্বধর্মের যিনি প্রসূতি-স্বরূপ, তাঁহার নামে আমি আপনাদিগকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করিতেছি। সকল জাতি ও সম্প্রদায়ের অন্তর্গত কোটি কোটি হিন্দু নরনারীর হইয়া আমি (Swami Vivekananda) আপনাদিগকে ধন্যবাদ দিতেছি।’’

    আমরা শুধু সকল ধর্মকেই সহ্য করিনা, সকল ধর্মকেই আমরা সত্য বলিয়া বিশ্বাস করি

    ‘‘এই সভামঞ্চে সেই কয়েকজন বক্তাকেও আমি ধন্যবাদ জানাই, যাঁহারা প্রাচ্যদেশীয় প্রতিনিধিদের সম্বন্ধে এরূপ মন্তব্য প্রকাশ করিলেন যে, অতি দূরদেশবাসী জাতিসমূহের মধ্য হইতে যাঁহারা এখানে সমাগত হইয়াছেন, তাঁহারাও বিভিন্ন দেশে পরধর্মসহিষ্ণুতার ভাব প্রচারের গৌরব দাবি করিতে পারেন। যে ধর্ম জগৎকে চিরকাল পরমতসহিষ্ণুতা ও সর্বাধিক মত স্বীকার করার শিক্ষা দিয়া আসিতেছে, আমি সেই ধর্মভুক্ত বলিয়া নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করি। আমরা শুধু সকল ধর্মকেই সহ্য করি না, সকল ধর্মকেই আমরা সত্য বলিয়া বিশ্বাস করি। যে ধর্মের পবিত্র সংস্কৃত ভাষায় ইংরেজি ‘এক্সক্লুশন’ (ভবার্থঃ বহিষ্হকরণ, পরিবর্জন) শব্দটি অনুবাদ করা যায় না, আমি সেই ধর্মভুক্ত বলিয়া গর্ব অনুভব করি। যে জাতি পৃথিবীর সকল ধর্মের ও সকল জাতির নিপীড়িত ও আশ্রয়প্রার্থী জনগণকে চিরকাল আশ্রয় দিয়া আসিয়াছে, আমি (Swami Vivekananda) সেই জাতির অর্ন্তভুক্ত বলিয়া নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করি।’’

    আমরাই ইহুদীদের খাঁটি বংশধরগণের অবশিষ্ট অংশকে সাদরে হৃদয়ে ধারণ করিয়া রাখিয়াছি

    ‘‘আমি আপনাদের এ কথা বলিতে গর্ব অনুভব করিতেছি যে, আমরাই ইহুদিদের খাঁটি বংশধরগণের অবশিষ্ট অংশকে সাদরে হৃদয়ে ধারণ করিয়া রাখিয়াছি; যে বৎসর রোমানদের ভয়ংঙ্কর উৎপীড়নে তাহদের পবিত্র মন্দির বিধ্বস্ত হয়, সেই বৎসরই তাহারা দক্ষিণভারতে আমাদের মধ্যে আশ্রয়লাভের জন্য আসিয়াছিলেন। জরাথুষ্ট্রের অনুগামী মহান পারসিক জাতির অবশিষ্টাংশকে যে ধর্মাবলম্বীগণ আশ্রয় দান করিয়াছিল এবং আজ পর্যন্ত যাহারা তাঁহাদিগকে প্রতিপালন করিতেছেন, আমি তাঁহাদেরই অন্তর্ভুক্ত।’’

    যত মত তত পথের কথা (Vivekananda Chicago Speech)

    ‘‘বিভিন্ন নদীর উৎস বিভিন্ন স্থানে, কিন্তু তাহারা সকলে যেমন এক সমুদ্রে তাহাদের জলরাশি ঢালিয়া মিলাইয়া দেয়, তেমনই হে ভগবান, নিজ নিজ রুচির বৈচিত্র্যবশতঃ সরল ও কুটিল নানা পথে যাহারা চলিয়াছে, তুমিই তাহাদের সকলের একমাত্র লক্ষ্য। পৃথিবীতে এযাবৎ অনুষ্ঠিত সম্মেলনগুলির মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ মহাসম্মেলনে গীতা-প্রচারিত সেই অপূর্ব মতেরই সত্যতা প্রতিপন্ন করিতেছি, সেই বাণীই ঘোষণা করিতেছিঃ ‘যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহম্। মম বর্ত্মানুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ।।’ (যে কোনও ব্যক্তি যে ভাব আশ্রয় করিয়া আসুক না কেন, আমি তাহাকে সেই ভাবেই অনুগ্রহ করিয়া থাকি। হে অর্জুন মনুষ্যগণ সর্বতোভাবে আমার পথেই চলিয়া থাকে)।’’

    সাম্পদায়িকতা, গোঁড়ামি ও এগুলির ভয়াবহ ফলস্বরূপ ধর্মোন্মত্ততা এই সুন্দর পৃথিবীকে বহুকাল অধিকার করিয়া রাখিয়াছে

    ‘‘সাম্পদায়িকতা, গোঁড়ামি ও এগুলির ভয়াবহ ফলস্বরূপ ধর্মোন্মত্ততা এই সুন্দর পৃথিবীকে বহুকাল অধিকার করিয়া রাখিয়াছে। ইহারা পৃথিবীকে হিংসায় পূর্ণ করিয়াছে, বরাবার ইহাকে নরশোণিতে সিক্ত করিয়াছে, সভ্যতা ধ্বংস করিয়াছে এবং সমগ্র জাতিকে হতাশায় মগ্ন করিয়াছে। এই-সকল ভীষণ পিশাচগুলি যদি না থাকিত, তাহা হইলে মানবসমাজ আজ পূর্বাপেক্ষা অনেক উন্নত হইত। তবে ইহাদের মৃত্যুকাল উপস্থিত; এবং আমি সর্বতোভাবে আশা করি, এই ধর্ম-মহাসমিতির সন্মানার্থ আজ যে ঘণ্টাধ্বনি নিনাদিত হইয়াছে, তাহাই সর্ববিধ ধর্মোন্মত্ততা, তরবারি অথবা লিখনীমুখে অনুষ্ঠিত সর্বপ্রকার নির্যাতন এবং একই লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর ব্যক্তিগণের মধ্যে সর্ববিধ অসদ্ভাবের সম্পূর্ণ অবসানের বার্তা ঘোষণা করুক।’’

    খেতড়ির রাজা অজিত সিংহের সাহায্যে স্বামীজি পৌঁছান আমেরিকা

    খুব সহজে অবশ্য স্বামীজির (Swami Vivekananda) আমেরিকা সফর সম্পন্ন হয়নি। উত্তর-পূর্ব রাজস্থানে খেতড়ির রাজা অজিত সিং স্বামী বিবেকানন্দকে শিকাগো যাওয়ার জন্য ‘ওরিয়েন্ট’ জাহাজে ফার্স্ট ক্লাসের টিকিট কিনে দেন বলে জানা যায়। কিন্তু সেখানে গিয়েও তাঁকে সহ্য করতে হয়েছিল দারুণ দুঃখ-কষ্ট। তিনি শিকার হন বর্ণ-বিদ্বেষের। কারণ তৎকালীন আমেরিকায় পাশ্চাত্যের লোকেদের কাছে এই ভারত ছিল অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া। শিকাগো পৌঁছে শেষ পর্যন্ত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন হেনরি রাইটের ব্যক্তিগত পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে বিবেকানন্দ (Swami Vivekananda) ওই সম্মেলনে বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন (Vivekananda Chicago Speech)।

  • Ramakrishna 464: গভীর ধ্যানে বাহ্যজ্ঞানশূন্য হয়

    Ramakrishna 464: গভীর ধ্যানে বাহ্যজ্ঞানশূন্য হয়

    “আমি সর্বপ্রকার সাধন করেছিলাম। সাধনা তিন প্রকার—সাত্ত্বিক, রাজসিক, তামসিক। সাত্ত্বিক সাধনায় তাঁকে ব্যাকুল হয়ে ডাকে বা তাঁর নামটি শুনে নিয়ে থাকে। আর কোনো ফললাভ নেই। রাজসিক সাধনে নানারকম প্রক্রিয়া—এতবার পুষ্পচর্চন করতে হবে, এত তীর্থ করতে হবে, পঞ্চগব্য করতে হবে; যজ্ঞোপবীতধার পুজা করতে হবে ইত্যাদি। তামসিক সাধন—তোমাকে আঘাত করে সাধনা। জয় কালী! কি, তুই খাস নির্নিমেষ। এই গলায় ছুরি দে। যদি দিয়া না দিস্ এ সাধনায় ফললাভ নাই। —যেমন তন্ত্রের সাধনা।

    “সে অবস্থায় (সাধনার অবস্থায়) অদ্ভুত সব দর্শন হত, আমার রমন প্রত্যক্ষ দেখলাম। আমার মতো রূপ একরকম আমার শরীরের ভিতর প্রবেশ করল। আর মড়কসম প্রতাপে পদ্মের মতো রমন করতে লাগল। ঘটল হৃদয়ে হয়েছিল—ঠাকুর বলতেন রমন কথার আর একটি পদ প্রবর্তিত হয়—আর উদ্বোধিত হয় রমন। এইরূপ মূর্তিমান, স্থাণু, অচঞ্চল, অনাহত, বিভক্ত, অখণ্ড, সহজাত সকল প্রত্যক্ষ ফুটে উঠত। আর নিচে মূর্ছা ছিল উদ্বোধক হল, প্রত্যক্ষ দেখলাম।”

    [ধ্যানযোগ সাধনা — ‘নিবৃত নিস্পন্দমিরপ্রদীপস্ফূর’]

    “সাধনার সময় আমি ধ্যান করতে করতে আবেশ করতাম প্রভূপদের শিখা—
    যখন হওয়া নাই, একটুও নড়ে না — তার আবেশ করতাম।

    “গভীর ধ্যানে বাহ্যজ্ঞানশূন্য হয়। একজন ব্যাধ পাখি মারবার জন্য তাগ করছে। কাছ দিয়ে বর চলে যাচ্ছে, সমস্ত ব্যবসায়ীরা, কত কোলাহল, বাজার, গাড়ি, ঘোষা — কতক্ষণ ধরে কাছ নিয়ে চলে গেল। ব্যাধের কিন্তু লেশ নাই। সে জানিতে পারলো না যে কাছ দিয়ে বর চলে গেল।

    “একজন একলা একটি পুকুরের ধারে মাছ ধরছে। অনেকক্ষণ পরে ফাঁসাটা নড়তে লাগল, মাঝে মাঝে কাট হতে লাগল। সে তখন ছিপ হাতে করে টান মারবার উদ্যোগ করিতেছে। এমন সময় একজন পথিক কাছে এসে জিজ্ঞাসা করিতেছে, মহাশয়, অমুক বাঁড়ুজ্জেদের বাড়ি কোথায় বলতে পারেন? সে ব্যক্তি শ্ল্ধ নাই। তার হাত কাঁপিতেছে, কেবল ফাঁসার দিকে দৃষ্টি। তখন পথিক বিরক্ত হয়ে চলেগেল। সে অনেক দূরে চলে গিয়েছে, এমন সময় ফাঁসাটা ডুবে গেল, আর…

  • Ramakrishna 463: সাধনা তিন প্রকার—সাত্ত্বিক, রাজসিক, তামসিক

    Ramakrishna 463: সাধনা তিন প্রকার—সাত্ত্বিক, রাজসিক, তামসিক

    রামলালকে নিয়ে সর্বদা বেড়াতাম, কখনো খাওয়াইতাম, আবার কখনো রাধা-কৃষ্ণের ভাবনায় থাকতাম। ঐরূপে সর্বদা দর্শন হতো। আবার কখনো গৌরাঙ্গের ভাবনায় থাকতাম। দুই ভাবের মিলন এবং প্রকৃতিভাবের মিলন—ঐরূপে সর্বদা দর্শন হতো।

    কখনো অবস্থা বদলে গিয়েছিল। সবকিছু একে একে অনুভব করতে লাগলাম। ঈশ্বরদী ও রূপ ভালো লাগল না, বললাম, “কিন্তু তোমাদের বিচার আছে।” তখন তাদের তলায় রাখলাম। ঘরে যত ঈশ্বরী বা পট বা ছবি ছিল, সব খুলে ফেললাম। কেউ বলছিল, “অখণ্ড সত্যিটা আনন্দ” আমি সেই আদি পুরুষকে চিন্তা করতে লাগলাম।

    “আমি সর্বপ্রকার সাধন করেছিলাম। সাধনা তিন প্রকার—সাত্ত্বিক, রাজসিক, তামসিক। সাত্ত্বিক সাধনায় তাঁকে ব্যাকুল হয়ে ডাকে বা তাঁর নামটি শুনে নিয়ে থাকে। আর কোনো ফললাভ নেই। রাজসিক সাধনে নানারকম প্রক্রিয়া—এতবার পুষ্পচর্চন করতে হবে, এত তীর্থ করতে হবে, পঞ্চগব্য করতে হবে; যজ্ঞোপবীতধার পুজা করতে হবে ইত্যাদি। তামসিক সাধন—তোমাকে আঘাত করে সাধনা। জয় কালী! কি, তুই খাস নির্নিমেষ। এই গলায় ছুরি দে। যদি দিয়া না দিস্ এ সাধনায় ফললাভ নাই। —যেমন তন্ত্রের সাধনা।

    “সে অবস্থায় (সাধনার অবস্থায়) অদ্ভুত সব দর্শন হত, আমার রমন প্রত্যক্ষ দেখলাম। আমার মতো রূপ একরকম আমার শরীরের ভিতর প্রবেশ করল। আর মড়কসম প্রতাপে পদ্মের মতো রমন করতে লাগল। ঘটল হৃদয়ে হয়েছিল—ঠাকুর বলতেন রমন কথার আর একটি পদ প্রবর্তিত হয়—আর উদ্বোধিত হয় রমন। এইরূপ মূর্তিমান, স্থাণু, অচঞ্চল, অনাহত, বিভক্ত, অখণ্ড, সহজাত সকল প্রত্যক্ষ ফুটে উঠত। আর নিচে মূর্ছা ছিল উদ্বোধক হল, প্রত্যক্ষ দেখলাম।”

    [ধ্যানযোগ সাধনা — নির্বাণ নিল্লিপ্তসিদ্ধিপ্রদীপ]

    “সাধনার সময় আমি রামণ করতে করতে আবার কৃতজ্ঞ হৃদয়ে পিয়া—”

  • Ramakrishna 462: কেউ বলছিল, “অখণ্ড সত্যিটা আনন্দ” আমি সেই আদি পুরুষকে চিন্তা করতে লাগলাম

    Ramakrishna 462: কেউ বলছিল, “অখণ্ড সত্যিটা আনন্দ” আমি সেই আদি পুরুষকে চিন্তা করতে লাগলাম

    শ্রীরামকৃষ্ণ (ভক্তদের প্রতি) সে সময়ে ধ্যানে দেখতে পেতাম সত্যি সত্যি—একজনের কাছে ফুল হাতে বসে আছি, ভয় দেখাচ্ছে, যদি ঈশ্বরের পাদপথে মন না রাখি, চুল পর্যন্ত আমার বাড়ি মারবে। ঠিক মন না হলে বুকেও আঘাত হবে।

    নিত্য, লীলা, যোগ, পুরুষ, প্রকৃতি, বিবেক—এই সব ভাবনা চলত।

    কখনো মা এমন অবস্থা দেখাতেন যে নিত্য থেকে মন নেমে নেমে নীলায় চলে যেত, আবার কখনো লীলার মাধ্যমে নিত্যর মন উঠত। যখন লীলায় মন নেমে আসত, তখন কখনো সীতারামকে রাতদিন চিন্তা করতাম, আর সীতারামের রূপ দর্শন হতো। রামলালকে নিয়ে সর্বদা বেড়াতাম, কখনো খাওয়াইতাম, আবার কখনো রাধা-কৃষ্ণের ভাবনায় থাকতাম। ঐরূপে সর্বদা দর্শন হতো। আবার কখনো গৌরাঙ্গের ভাবনায় থাকতাম। দুই ভাবের মিলন এবং প্রকৃতিভাবের মিলন—ঐরূপে সর্বদা দর্শন হতো।

    কখনো অবস্থা বদলে গিয়েছিল। সবকিছু একে একে অনুভব করতে লাগলাম। ঈশ্বরদী ও রূপ ভালো লাগল না, বললাম, “কিন্তু তোমাদের বিচার আছে।” তখন তাদের তলায় রাখলাম। ঘরে যত ঈশ্বরী বা পট বা ছবি ছিল, সব খুলে ফেললাম।

    কেউ বলছিল, “অখণ্ড সত্যিটা আনন্দ” আমি সেই আদি পুরুষকে চিন্তা করতে লাগলাম।

     

  • Ramakrishna 461: ঠাকুর আনন্দে গাড়িতে যাচ্ছেন

    Ramakrishna 461: ঠাকুর আনন্দে গাড়িতে যাচ্ছেন

    মেয়েভক্তগণ অনেকেই আসিয়াছেন। তাহারা চিত্রের আড়ালে বসিয়া ঠাকুরের দর্শন করিতেছেন।
    মোহিনীর পরিবারও আসিয়াছেন — পূর্বশ্রেষ্ঠ উৎপাদনে ব্যয় — তিনি ও তাহার নাম্য সঙ্গিনী অনেকেই আসিয়াছেন, এই বিশ্বাস যে ঠাকুরের কাছে নিঃসন্দেহে শান্তিলাভ হইবে।

    আজ ১লা বৈশাখ, চৈত্র কৃষ্ণ একাদশী, ১২ই এপ্রিল, ১৮৮৫, শুক্রবার, বেলা ৩টা হইবে।

    মাস্টার আসিয়া দেখিলেন, ঠাকুর ভক্তের মজলিস করিয়া বসিয়া আছেন ও নিজের সাম্প্রতিক বিবরণ ও নানাবিধ আধ্যাত্মিক অবস্থার বর্ণনা করিতেছেন।
    মাস্টার আসিয়া ঠাকুরকে ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিলেন ও তাহার কাছে আসিয়া বসিলেন।

    ঠাকুর আনন্দে গাড়িতে যাচ্ছেন।

    ১। শ্রীউপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, ঠাকুরের ভক্ত ও “বসুমতী’র” সম্পাদক।

    ২। শ্রীঅমরকুমার সেন, ঠাকুরের ভক্ত ও কবি। ইনি “শ্রীরামকৃষ্ণ পদ্য” লিখিয়া চিরস্মরণীয় হইয়াছেন। বাঁকুড়া জেলার অন্তঃপাড়া ময়নাপুর গ্রাম ইহার জন্মভূমি।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (ভক্তদের প্রতি) সে সময়ে ধ্যানে দেখতে পেতাম সত্যি সত্যি—একজনের কাছে ফুল হাতে বসে আছি, ভয় দেখাচ্ছে, যদি ঈশ্বরের পাদপথে মন না রাখি, চুল পর্যন্ত আমার বাড়ি মারবে। ঠিক মন না হলে বুকেও আঘাত হবে।

    নিত্য, লীলা, যোগ, পুরুষ, প্রকৃতি, বিবেক—এই সব ভাবনা চলত।

    কখনো মা এমন অবস্থা দেখাতেন যে নিত্য থেকে মন নেমে নেমে নীলায় চলে যেত, আবার কখনো লীলার মাধ্যমে নিত্যর মন উঠত। যখন লীলায় মন নেমে আসত, তখন কখনো সীতারামকে রাতদিন চিন্তা করতাম, আর সীতারামের রূপ দর্শন হতো। রামলালকে নিয়ে সর্বদা বেড়াতাম, কখনো খাওয়াইতাম, আবার কখনো রাধা-কৃষ্ণের ভাবনায় থাকতাম। ঐরূপে সর্বদা দর্শন হতো। আবার কখনো গৌরাঙ্গের ভাবনায় থাকতাম। দুই ভাবের মিলন এবং প্রকৃতিভাবের মিলন—ঐরূপে সর্বদা দর্শন হতো।

     

     

  • Bharat: সপ্তপদী থেকে সপ্তসিন্ধু, ভারতীয় সভ্যতার প্রেক্ষাপটে ‘সাত’ সংখ্যার তাৎপর্য

    Bharat: সপ্তপদী থেকে সপ্তসিন্ধু, ভারতীয় সভ্যতার প্রেক্ষাপটে ‘সাত’ সংখ্যার তাৎপর্য

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সংখ্যার জগৎ শুধু গণিতের অঙ্কেই সীমাবদ্ধ নয়। দর্শন, ধর্ম, আধ্যাত্মিকতা এবং সভ্যতার গভীরেও রয়েছে এর তাৎপর্য। ভারতীয় (Bharat) সভ্যতা, পৃথিবীর প্রাচীন এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক, সেখানে প্রতিটি সংখ্যার এক একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ‘সাত’ (৭) সংখ্যা (Number seven) এক অনন্য স্থান অধিকার করেছে। সময়, স্থান, ধর্মীয় আচার, পুরাণকথা, সামাজিক রীতি কিংবা আধ্যাত্মিকতা—সবেতেই ‘সাত’ তার রহস্যময় গুরুত্ব নিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে।

    সূর্য ও রথসপ্তমী: জীবনের শক্তি

    প্রতি বছরের মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের সপ্তমী তিথিতে পালিত হয় রথসপ্তমী বা সূর্য-সপ্তমী। সূর্যকে হিন্দু ধর্মের দেবতা মানা হয়। এই দিনে সূর্য পূজিত হন জীবনের ধারক শক্তি হিসেবে। পুরাণ মতে, সূর্যের রথ টেনে নিয়ে যায় সাতটি ঘোড়া, আর আধুনিক বিজ্ঞান বলছে সূর্যালোকে ভেঙে যায় সাতটি রঙে—লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল, আকাশী ও বেগুনি। অতএব, সূর্য ও সাতের যোগসূত্র কেবল পুরাণেই নয়, বিজ্ঞানের ভিত্তিতেও প্রতিফলিত।

    সপ্তলোক: মহাবিশ্বের সাত স্তর

    হিন্দু (Bharat) দর্শনে মহাবিশ্বকে সাতটি জ্যোতির্ময় স্তরে বিভক্ত করা হয়েছে,ভূলোক,ভুবর্লোক,স্বর্লোক,মহালোক,জনলোক,তপোলোক,সত্যলোক। এই সাতটি স্তর মানুষের চেতনাবিকাশের বিভিন্ন ধাপের প্রতীক। নিচের দিকে রয়েছে পাতাললোকসমূহও, যা জড়তা ও অন্ধকারকে নির্দেশ করে। ফলে ‘সাত’ সংখ্যা একদিকে ঊর্ধ্বগামী আধ্যাত্মিক যাত্রা আবার অন্যদিকে নিচের স্তরের অচেতন জগতেরও প্রতিচ্ছবি।

    সপ্তর্ষি: জ্ঞানের সাত দিশারী

    ঋষিদের মধ্যে সপ্তর্ষি—অত্রি, ভরদ্বাজ, গৌতম, জামদগ্নি, কশ্যপ, বশিষ্ঠ ও বিশ্বামিত্র—ভারতীয় (Bharat) জ্ঞানের মূল স্তম্ভ। তাঁরা শুধু দর্শন ও বেদীয় জ্ঞানের ধারকই নন, বরং মানব সমাজকে শৃঙ্খলা, নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার পথ দেখিয়েছেন। আকাশে ধ্রুবতারা ঘিরে যে নক্ষত্রমণ্ডলীকে আমরা ‘সপ্তর্ষিমণ্ডল’ বলি, সেটি আজও তাঁদের অমর অবদানের প্রতীক।

    সপ্তচিরঞ্জীবী: অমরত্বের প্রতীক

    ভারতীয় (Bharat) পুরাণে সাত চিরঞ্জীবীর কথা বলা হয়েছে। তাঁরা হলেন—অশ্বত্থামা, মহাবলী, ব্যাসদেব, হনুমান, বিভীষণ, কৃপাচার্য ও পরশুরাম। বিশ্বাস করা হয়, এঁরা যুগে যুগে বেঁচে থাকবেন এবং মানবজাতিকে পথ দেখাবেন। এটি ‘অমরত্ব’ ও ‘অবিনশ্বর শক্তির’ প্রতীক, যা সময়কে ছাপিয়ে চিরন্তন সত্যে প্রতিষ্ঠিত।

    সপ্তসিন্ধু: সভ্যতার প্রাণশক্তি

    ভারতীয় (Bharat) সভ্যতার গোড়াপত্তন নদীনির্ভর সমাজে। প্রাচীন বৈদিক সাহিত্যে উল্লেখিত সপ্তসিন্ধু—গঙ্গা, যমুনা, গোদাবরী, সরস্বতী, নর্মদা, সিন্ধু ও কাবেরী—ভারতীয় জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই নদীগুলো শুধু ভৌগোলিক নয়, আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও জীবনদাত্রী।

    সপ্তদ্বীপ: পৃথিবীর ধারণা

    প্রাচীন ভারতীয় কল্পনায় পৃথিবী বিভক্ত সাত দ্বীপে—জম্বুদ্বীপ, প্লক্ষ, শাল্মল, কুশ, ক্রোঞ্চ, শক ও পুষ্কর। এগুলো আসলে পৃথিবী ও মহাবিশ্বকে বোঝার প্রচেষ্টা, যা ভৌগোলিক কল্পনার পাশাপাশি মহাজাগতিক দৃষ্টিও উপস্থাপন করে।

    সপ্তরঙ: রঙের রহস্য

    বৃষ্টির পরে আকাশে যে ইন্দ্রধনু দেখা যায়, সেটি সাতটি (Number seven) রঙে গঠিত। এই সাত রঙ সৃষ্টির বৈচিত্র্য, জীবনচক্রের বহুমাত্রিকতা ও প্রকৃতির সৌন্দর্যকে প্রতিফলিত করে।

    সপ্তদিবস: সময়ের ছন্দ

    মানবসভ্যতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার সপ্তাহের ধারণা। সাত দিনকে কেন্দ্র করে সময়চক্র আবর্তিত হয়—রবি, সোম, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনি। এভাবে মানুষের কাজকর্ম, আচার, এমনকি জ্যোতিষ শাস্ত্রও সাত দিনের সঙ্গে সংযুক্ত।

    সপ্তপুরী: মুক্তির তীর্থ

    ভারতীয় ধর্মে সাতটি মোক্ষদায়িনী নগরী—অযোধ্যা, মথুরা, মায়া (হরিদ্বার), কাশী, কাঞ্চী, উজ্জয়িনী ও দ্বারকা। এগুলোকে বলা হয় সপ্তপুরী, যা মোক্ষ বা মুক্তি অর্জনের পবিত্র ক্ষেত্র।

    সপ্তপদী: বিবাহের বন্ধন

    ভারতীয় বিবাহ প্রথায় দম্পতি সাত পা (সপ্তপদী) এগিয়ে যান এবং প্রতিটি পদক্ষেপে এক একটি শপথ গ্রহণ করেন। এই সাত শপথেই বিবাহের পূর্ণতা আসে। অতএব, বিবাহ শুধু সামাজিক প্রতিষ্ঠান নয়, আধ্যাত্মিক ও নৈতিক চুক্তি হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত।

    সপ্ত মাতৃকা: দেবী শক্তির বহুরূপ

    তন্ত্র ও পুরাণে সাত মাতৃকা দেবী—ব্রাহ্মী, মহেশ্বরী, কৌমারী, বৈষ্ণবী, বারাহী, ইন্দ্রাণী ও চামুণ্ডা—নারী শক্তির বিভিন্ন দিককে প্রতীকীভাবে উপস্থাপন করেন। তাঁরা সৃষ্টির শক্তি, ধ্বংস ও পুনর্গঠনের ধারক।

    ভারতীয় সভ্যতায় ‘সাত’

    ভারতীয় সভ্যতায় ‘সাত’ সংখ্যা কেবল গণনার অঙ্ক নয়, বরং সময়, স্থান, আচার, আধ্যাত্মিকতা ও সংস্কৃতির বহুমাত্রিক প্রতীক।
    রথসপ্তমী থেকে শুরু করে সপ্তলোক, সপ্তর্ষি, সপ্তসিন্ধু, সপ্তপুরী কিংবা সপ্তপদী—সবক্ষেত্রেই ‘সাত’ জীবন, শক্তি, চিরন্তন সত্য, মুক্তি ও ঐক্যের প্রতীক হয়ে আছে। অতএব, ‘সাত’ ভারতের আধ্যাত্মিক জীবনের সঙ্গে যুক্ত। যা যুগে যুগে সভ্যতাকে একত্রিত করেছে এবং আজও মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে রয়েছে।

  • Ramakrishna 460: ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কলকাতায় শ্রীযুক্ত বলরামের বৈঠকখানায় ভক্তসমাবেশে বসিয়া আছেন

    Ramakrishna 460: ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কলকাতায় শ্রীযুক্ত বলরামের বৈঠকখানায় ভক্তসমাবেশে বসিয়া আছেন

    দেবেন্দ্র এবার ঠাকুরকে বাড়ির ভিতর লইয়া যাইতেছেন। সেখানে ঠাকুরকে জল খাওয়াইবার ইচ্ছা। ঠাকুর ভিতরে গেলেন। ঠাকুর সহসাইদলের বাড়ির ভিতর হইতে ফিরিয়া আসিলেন ও আবার বৈঠকখানায় উপস্থিত হইলেন। ভক্তরা কাছে বসিয়া আছেন। উপেন্দ্র ও অক্ষয় ঠাকুরের দুই পাশে বসিয়া পদসেবা করিতেছেন। ঠাকুর দেশের বাড়ির মেয়েদের কথা বলিতেছেন — “বেশ মেয়েরা, পাদরগেয়ে মেয়ে কি না! খুব ভক্তি।”

    ঠাকুর আছাড়ায়? নিজে আনন্দে গান গাহিতেছেন! কি ভাবে গান গাহিতেছেন? নিজের অবস্থা স্মরণ করিয়া তাহার কি ভাবাবেশ হইল? তাই কি গান গাহি গাহিতেছেন?

    গান – সহজ মানুষ না হলে সহজকে না যায় চেনা।

    গান – দরবেশা দাড়ারে, সাধের কড়ওয়া কিস্তুধারী দাড়ারে, ও তোর ভাব (রূপ) নেহারি।।

    গান – এসেছেন এক ভাবে ফকিরা। (ও সে) হিন্দুর ঠাকুর, মুসলমানের পীর।।

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কলকাতায় শ্রীযুক্ত বলরামের বৈঠকখানায় ভক্তসমবেশে বসিয়া আছেন। গিরিশ, মাস্টার, বলরাম — ক্ৰমে ছোট নবেন, পুণ্য, নিত্য, পূর্ণ, মল্লিক, মুকুন্দ ইত্যাদি — অনেক ভক্ত উপস্থিত আছেন। ক্ৰমে ব্রাহ্মসমাজের শ্রীযুক্ত শ্রীলোকনাথ সান্যাল, জয়গোপাল সেন প্রভৃতি অনেকেই ভক্ত আসিলেন। মেয়েভক্তগণ অনেকেই আসিয়াছেন। তাহারা চিত্রের আড়ালে বসিয়া ঠাকুরের দর্শন করিতেছেন। মোহিনীর পরিবারও আসিয়াছেন — পূর্বশ্রেষ্ঠ উৎপাদনে ব্যয় — তিনি ও তাহার নাম্য সঙ্গিনী অনেকেই আসিয়াছেন, এই বিশ্বাস যে ঠাকুরের কাছে নিঃসন্দেহে শান্তিলাভ হইবে।

    আজ ১লা বৈশাখ, চৈত্র কৃষ্ণ একাদশী, ১২ই এপ্রিল, ১৮৮৫, শুক্রবার, বেলা ৩টা হইবে।

    মাস্টার আসিয়া দেখিলেন, ঠাকুর ভক্তের মজলিস করিয়া বসিয়া আছেন ও নিজের সাম্প্রতিক বিবরণ ও নানাবিধ আধ্যাত্মিক অবস্থার বর্ণনা করিতেছেন। মাস্টার আসিয়া ঠাকুরকে ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিলেন ও তাহার কাছে আসিয়া বসিলেন।

LinkedIn
Share