Category: পরম্পরা

Get updated History and Heritage and Culture and Religion related news from the Madhyom news portal madhyom.com, West Bengal leading news portal Madhyom.com

  • Ramakrishna 218: “তিনিই আস্তিক, তিনিই নাস্তিক; তিনিই ভাল, তিনিই মন্দ; তিনিই সৎ, তিনিই অসৎ; এ-সব অবস্থা তাঁরই”

    Ramakrishna 218: “তিনিই আস্তিক, তিনিই নাস্তিক; তিনিই ভাল, তিনিই মন্দ; তিনিই সৎ, তিনিই অসৎ; এ-সব অবস্থা তাঁরই”

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িমধ্যে

    ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ৫ই জুন

    হাজরার সঙ্গে কথা — গুরুশিষ্য-সংবাদ

    বেলা পাঁচটা হইয়াছে। ঠাকুর (Ramakrishna) বারান্দার কোলে যে সিঁড়ি, তাহার উপর বসিয়া আছেন। রাখাল, হাজরা ও মাস্টার কাছে বসিয়া আছেন। হাজরার ভাব ‘সোঽহম্‌’।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (হাজরার প্রতি)—হাঁ, সব গোল মেটে; তিনিই আস্তিক, তিনিই নাস্তিক; তিনিই ভাল, তিনিই মন্দ; তিনিই সৎ, তিনিই অসৎ; জাগা, ঘুম এ-সব অবস্থা তাঁরই; আবার তিনি এ-সব অবস্থার পার।

    “একজন চাষার বেশি বয়সে একটি ছেলে হয়েছিল। ছেলেটিকে খুব যত্ন করে। ছেলেটি ক্রমে বড় হল। একদিন চাষা ক্ষেতে কাজ করছে, এমন সময় একজন এসে খবর (Kathamrita) দিলে যে, ছেলেটির ভারী অসুখ। ছেলে যায় যায়। বাড়িতে এসে দেখে, ছেলে মারা গেছে। পরিবার খুব কাঁদছে, কিন্তু চাষার চক্ষে একটুও জল নাই। পরিবার প্রতিবেশীদের কাছে তাই আরও দুঃখ করতে লাগল যে, এমন ছেলেটি গেল এঁর চক্ষে একটু জল পর্যন্ত নাই। অনেকক্ষণ পরে চাষা পরিবারকে সম্বোধন করে বললে, ‘কেন কাঁদছি না জানো? আমি কাল স্বপন দেখেছিলুম যে, রাজা হয়েছি, আর সাত ছেলের বাপ হয়েছি। স্বপনে দেখলুম যে, ছেলেগুলি রূপে গুণে সুন্দর। ক্রমে বড় হল বিদ্যা ধর্ম উপার্জন কল্লে। এমন সময় আমার ঘুম ভেঙে (Kathamrita) গেল; এখন ভাবছি যে, তোমার ওই এক ছেলের জন্য কাঁদব, কি আমার সাত ছেলের জন্য কাঁদব।’ জ্ঞানীদের মতে স্বপন অবস্থাও যেমন সত্য, জাগা অবস্থাও তেমনি সত্য।

    “ঈশ্বরই (Ramakrishna) কর্তা, তাঁর ইচ্ছাতেই সব হচ্ছে।”

    হাজরা—কিন্তু বোঝা বড় শক্ত। ভূকৈলাসের সাধুকে কত কষ্ট দিয়ে এক রকম মেরে ফেলা হল। সাধুটিকে সমাধিস্থ পেয়েছিল। কখন মাটির ভিতরে পোঁতে, কখন জলের ভিতর রাখে, কখন গায়ে ছেঁকা দেয়! এইরকম করে চৈতন্য করালে। এই সব যন্ত্রণায় দেহত্যাগ হল। লোকে যন্ত্রণাও দিলে, আর ঈশ্বরের (Ramakrishna) ইচ্ছাতে মারাও গেল!

     আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 217: “কি অবস্থাই গিয়েছে, এখানে খেতুম না, বরাহনগরে, কি দক্ষিণেশ্বরে, কি এঁড়েদয়ে…বামুনের বাড়ি গিয়ে পড়তুম”

    Ramakrishna 217: “কি অবস্থাই গিয়েছে, এখানে খেতুম না, বরাহনগরে, কি দক্ষিণেশ্বরে, কি এঁড়েদয়ে…বামুনের বাড়ি গিয়ে পড়তুম”

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িমধ্যে

    পঞ্চম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ৫ই জুন

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের প্রথম প্রেমোন্মাদ কথা

    পূর্বকথা—দেবেন্দ্র ঠাকুর, দীন মুখুজ্জে ও কোয়ার সিং 

    আজও অমাবস্যা, মঙ্গলবার, ইং ৫ই জুন, ১৮৮৩ খ্রীষ্টাব্দ। শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) কালীবাড়িতে আছেন। রবিবারেই ভক্ত-সমাগম বেশি হয়, আজ মঙ্গলবার বলিয়া বেশি লোক  নাই। রাখাল ঠাকুরের কাছে আছেন। হাজরাও আছেন, ঠাকুরের ঘরের সামনে বারান্দায় আসন করিয়াছেন (Kathamrita) । মাস্টার গত রবিবারে আসিয়াছেন ও কয়দিন আছেন।

    সোমবার রাত্রে মা-কালীর নাটমন্দিরে কৃষ্ণযাত্রা হইয়াছিল। ঠাকুর খানিকক্ষণ শুনিয়াছিলেন। এই যাত্রা রবিবার রাত্রে হইবার কথা ছিল, কিন্তু হয় নাই বলিয়া সোমবারে হইয়াছে।

    মধ্যাহ্নে খাওয়া-দাওয়ার পর ঠাকুর নিজের প্রেমোন্মাদ অবস্থা আবার বর্ণনা করিতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি)—কি অবস্থাই গিয়েছে। এখানে খেতুম না। বরাহনগরে, কি দক্ষিণেশ্বরে, কি এঁড়েদয়ে, কোন বামুনের বাড়ি গিয়ে পড়তুম। আবার পড়তুম অবেলায়। গিয়ে বসতুম, মুখে কোন কথা নাই। বাড়ির লোক কোন কথা জিজ্ঞাসা করলে কেবল বলতুম, আমি এখানে খাব। আর কোন কথা নাই। আলমবাজারে রাম চাটুজ্যের বাড়ি যেতুম। কখনও দক্ষিণেশ্বরে সাবর্ণ চৌধুরীদের বাড়িতে। তাদের বাড়ি খেতুম বটে, কিন্তু ভাল লাগত না—কেমন আঁষ্টে গন্ধ!

    “একদিন ধরে বসলুম, ‘দেবেন্দ্র ঠাকুরের বাড়ি যাব।’ সেজোবাবুকে বললুম (Kathamrita), দেবেন্দ্র ঈশ্বরের (Ramakrishna) নাম করে, তাকে দেখব, আমায় লয়ে যাবে? সেজোবাবু—তার আবার ভারী অভিমান, সে সেধে লোকের বাড়ি যাবে? এগু-পেছু করতে লাগল। তারপর বললে, ‘হাঁ, দেবেন্দ্র আর আমি একসঙ্গে পড়েছিলুম, তা চল বাবা, নিয়ে যাব।’

    “একদিন শুনলুম বাগবাজারের পোলের কাছে দীন মুখুজ্জে বলে একটি ভাল লোক আছে — ভক্ত। সেজোবাবুকে ধরলুম দীন মুখুজ্জের বাড়ি যাব। সেজোবাবু কি করে, গাড়ি করে নিয়ে গেল। বাড়িটি ছোট, আবার মস্ত গাড়ি করে এক বড় মানুষ এসেছে। তারাও অপ্রস্তুত, আমরাও অপ্রস্তুত। তার আবার ছেলের পৈতে। কোথায় বসায়? আমরা পাশের ঘরে যাচ্ছিলুম, তা বলে উঠল ও ঘরে মেয়েরা, যাবেন না। মহা অপ্র্রস্তুত। সেজোবাবু ফেরবার সময় বললে, ‘বাবা! তোমার কথা আর শুনব না।’ আমি হাসতে লাগলুম।

    “কি অবস্থাই গেছে। কুমার সিং সাধু-ভোজন করাবে, আমায় নিমন্ত্রণ কল্লে। গিয়ে দেখলুম, অনেক সাধু এসেছে। আমি বসলে পরে সাধুরা কেউ কেউ পরিচয় জিজ্ঞাসা (Kathamrita) কল্লে; যাই জিজ্ঞাসা করা, আমি আলাদা বসতে গেলুম। ভাবলুম, অত খবরে কাজ কি। তারপর যেই সকলকে পাতা পেতে খেতে বসালে, কেউ কিছু না বলতে বলতে আমি আগে খেতে লাগলুম। সাধুরা কেউ কেউ বলতে লাগল শুনতে পেলুম, ‘আরে এ কেয়া রে’।”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 216: “পরমধন এই পরশমণি, যা চাবি তাই দিতে পারে, কত মণি পড়ে আছে আমার চিন্তামণির নাচ দুয়ারে”

    Ramakrishna 216: “পরমধন এই পরশমণি, যা চাবি তাই দিতে পারে, কত মণি পড়ে আছে আমার চিন্তামণির নাচ দুয়ারে”

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িমধ্যে

    চতুর্থ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ৪ঠা জুন

    মণিলাল প্রভৃতি সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ ও নিরাকারবাদ

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—বলিস কি রে?

    ভগবতী—হাঁ, নাম লেখা আছে, “শ্রীমতী ভগবতী দাসী।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ (ঈষৎ হাসিয়া)—বেশ বেশ।

    এই সময়ে ভগবতী সাহস পাইয়া ঠাকুরকে পায়ে হাত দিয়া প্রণাম করিল।

    বৃশ্চিক দংশন করিলে যেমন লোক চমকিয়া উঠে ও অস্থির হইয়া দাঁড়াইয়া পড়ে, শ্রীরামকৃষ্ণ সেইরূপ অস্থির হইয়া ‘গোবিন্দ’ ‘গোবিন্দ’(Ramakrishna) এই নাম উচ্চারণ করিতে করিতে দাঁড়াইয়া পড়িলেন। ঘরের কোণে গঙ্গাজলের একটি জালা ছিল—এখনও আছে। হাঁপাইতে হাঁপাইতে যেন ত্রস্ত (Kathamrita) হইয়া সেই জালার কাছে গেলেন। পায়ের যেখানে দাসী স্পর্শ করিয়াছিল গঙ্গাজল লইয়া সে-স্থান ধুইতে লাগিলেন।

    দু-একটি ভক্ত যাঁহারা ঘরে ছিলেন তাঁহারা অবাক্‌ ও স্তব্ধ হইয়া একদৃষ্টে এই ব্যাপার দেখিতেছেন। দাসী জীবন্মৃতা হইয়া বসিয়া আছে। দয়াসিন্ধু পতিতপাবন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দাসীকে সম্বোধন (Kathamrita) করিয়া করুণামাখা স্বরে বলিতেছেন, “তোরা অমনি প্রণাম করবি।” এই বলিয়া আবার আসন গ্রহণ করিয়া দাসীকে ভুলাইবার চেষ্টা করিতেছেন। বলিলেন, “একটু গান শোন।”

    তাহাকে গান শুনাইতেছেন(Kathamrita) :

    (১) — মজলো আমার মন-ভ্রমরা শ্যামাপদ-নীলকমলে।
    (শ্যামাপদ-নীলকমলে,— কালীপদ-নীলকমলে।)

    (২) — শ্যামাপদ আকাশেতে ম ঘুড়িখান উড়তেছিল।
    কুলুষের কুবাতাস পেয়ে গোপ্তা খেয়ে পড়ে গেল।

    (৩)—আপনাতে আপনি থেকো মন যেও নাকো কারু ঘরে।
    যা চাবি তাই  বসে পাবি, খোঁজ নিজ অন্তঃপুরে ॥
    পরমধন এই পরশমণি, যা চাবি তাই দিতে পারে ৷
    কত মণি পড়ে আছে আমার চিন্তামণির নাচ দুয়ারে ॥

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Gita Jayanti: ভগবদ গীতা হল মানব সভ্যতার জীবন্ত দলিল,  এক ঐতিহাসিক আদর্শ মানবজীবন দর্শন

    Gita Jayanti: ভগবদ গীতা হল মানব সভ্যতার জীবন্ত দলিল, এক ঐতিহাসিক আদর্শ মানবজীবন দর্শন

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: গীতা জয়ন্তীর (Gita Jayanti) মূল উদ্দেশ্য হল ভগবদ গীতাকে সম্মান জানানো। একটি পরিপূর্ণ এবং নৈতিক সুমার্জিত মানব জীবনের জন্য গীতার দর্শন ও আধ্যাত্মবোধের একান্ত ভাবে প্রয়োজনীয়। গীতায় মূলত ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পরম মিত্র অর্জুনের উদ্দেশে বাণী দিয়েছেন। কুরুক্ষেত্রের ধর্ম যুদ্ধে অর্জুনের মনে তৈরি হওয়া দ্বিধাকে দূর করে, ফলের আশা না করে কর্মকেই প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলেছেন। ফলে তাতে গভীরভাবে মানব জীবনের কর্তব্যবোধ, বিশ্বদর্শন এবং মানবতাবাদকে প্রতিফলিত হয়েছে। তবে এই গীতার তত্ত্ব এবং দর্শন (Human Life Philosophy) ভারতীয় জীবন পরম্পরা এবং মূল্যবোধকে গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।

    জীবনের সুখ কীভাবে পরিমাপ হবে (Gita Jayanti)?

    গীতায় সুখের সাধনা কীভাবে করতে হয় এবং যথার্থ মানবজীবনের তৃপ্তি কীভাবে অর্জন করতে হয় এই তত্ত্বকথা রয়েছে। মানব জীবনের নানা অভিজ্ঞতা এবং অন্তর্ভাব থেকে উদ্ভূত হয়। আত্মসচেতনতা থেকে জীবনের উচ্চ পর্যায়ে উত্তরণ করে গীতার বাণী। পরিবর্তিত সময়ে জীবনকে নানা মাত্রায় প্রবাহিত করার মাধ্যমে এই সুখের সত্যতা অনুভব হয়। তাই ভগবদ গীতার ভগবৎ তত্ত্ব হল সম্পূর্ণ মানব জীবনের প্রকাশ মাত্র। তাই গীতা স্থান, পাত্র, কাল, বর্ণ, ধর্ম, জাতি নির্বিশেষে সকলের জন্য প্রযোজ্য।

    কেবল মাত্র ধর্মশাস্ত্র নয় গীতা

    গীতা কেবল মাত্র ধর্মশাস্ত্র নয়, এটি এমন একটি দার্শনিক গ্রন্থ যে সর্বজনীন ভাবে প্রযুক্ত। গীতা, রক্ত মাংসে গড়া মানব জীবনের নীতি কথা। কোনটা ভুল, কোনটা ঠিক, কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা এই সব বিষয়ে জানতে সাহায্য করে। মানুষের আবেগ, চ্যালেঞ্জ এবং নানা আকাঙ্খাগুলিকে পথ দেখায়। তাই একে কেবল মাত্র ধর্মীয় ভাবনায় ভাবলে হবে না। মানব জীবনের রাগ, লোভ, দ্বেষ, ক্ষোভ, প্রেম, তৃপ্তি এবং জ্ঞান বিষয়েও নৈতিকতার পাঠ দেয়। কাকে দমন করে কাকে সম্প্রসারণ করতে হবে সেই শিক্ষাও দেয় গীতা। তাই শুধু মাত্র হিন্দুশাস্ত্র হিসেবে বিচার করলে গীতাকে একটি সামান্য সীমায় বেঁধে রাখা হবে। গীতার ব্যাপ্তি বিশ্বচরাচর।

    জগতের নানা প্রকার জীবের মধ্যে মানবজাতি তুলনায় অনেক বেশি জটিল জীব। মানুষের শরীর, মন, বুদ্ধি, চেতনা, অহংকার থাকে। সেই জন্য আর বাকি দশটা জীবের তুলনায় মানুষের চলন অন্যরকম। মানুষের অভিপ্রায়গুলি যদি ত্রুটি যুক্ত হয় তাহলে জীবনকে দুঃখ বা নেগেটিভ শক্তির দিকে নিয়ে যায়। তাই জীবনকে সঠিক ভাবে পরিচালনার জন্য গীতার দেখানো পথকে অবলম্বন করতে হবে। গীতা সবসময় রাগ, ক্রোধ, ভয়, বিস্ময়-সহ রিপুগুলিকে নিয়ন্ত্রণ এবং দমনের উপদেশ দেয়। গীতা শান্ত, ধৈর্য, উদার, বিনয়ের কথা বলে। মানুষকে পূর্ণমানব তথা ঈশ্বরজ্ঞানের দর্শন করাতে চায়। প্রেম, করুণা, প্রজ্ঞা এবং ত্যাগ ভাব দিয়ে জীবনকে (Human Life Philosophy) সিদ্ধান্ত নিতে শেখায় গীতা।

    সভ্যতার জীবন্ত দলিল গীতা

    গীতাকে (Gita Jayanti) বলা হয়েছে, গীতা হল সভ্যতার জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। গীতায় তোলা অর্জুনের প্রশ্ন এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ বিশ্বমানব সভ্যতার (Human Life Philosophy) একটা দলিল। শুধুমাত্র মুখ নিঃসৃত বাণী নয়। সভ্যতার বিকাশে রাজরাজাদের গল্প, রাজত্ব-সাম্রাজ্য, যুদ্ধ, আধিপত্য, প্রজাদের প্রতি কর্তব্য, অধিকার, নীতি-নৈতিকতার পাঠ, দুর্বলকে কীভাবে সবল করতে হবে সেই দিকের ইঙ্গিত স্পষ্ট ভাবে রয়েছে। তাই গীতাকে কোনও সময়েই অপ্রাসঙ্গিক বলা যায় না। অন্যায়কে পরাজয় করতে শেষ শক্তি দিয়ে কীভাবে বিজয় প্রাপ্ত হতে হয় এই কথা কৌরব-পাণ্ডবের যুদ্ধে স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে।

    আরও পড়ুনঃ ‘‘আরও দৃঢ় পদক্ষেপ করুক ভারত সরকার’’, বাংলাদেশে হিন্দু-নির্যাতন রোধে বার্তা আরএসএসের

    গীতা জয়ন্তীর উদ্দেশ্য

    গীতা জয়ন্তীর (Gita Jayanti) মূল উদ্দেশ্য হল বিশ্ববাসীর সামনে গীতার মাহাত্মকে আরও বেশি করে প্রচার প্রসার করা। এখানে দেওয়া উপদেশগুলির সূক্ষ্ম বিচার বিবেচনা করে জীবনের প্রতি পদে পদে ব্যবহারিক প্রয়োগ করা। গীতার জ্ঞানকে মন্থন করে ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিফলন ঘটানোই একমাত্র উদ্দেশ্য। সুখ দুঃখের সঙ্গে ক্ষণস্থায়ী আনন্দকে চিরন্তন করতে কর্ম এবং ত্যাগের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। মানবজীবনের উন্নত পথ প্রদর্শক। এটি হল ভারতের একটি জ্বলন্ত প্রদীপের শিখা। যার আলোতে বিশ্বকে আলোকিত করে যাচ্ছে। মানবজীবনে (Human Life Philosophy) মূল উদ্দেশ্যকে প্রতিফলিত করছে।     

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 215: “হাড়পেকে, কোটরচোখ, ট্যারা—এরকম অনেক লক্ষণ আছে, তাদের বিশ্বাস সহজে হয় না”

    Ramakrishna 215: “হাড়পেকে, কোটরচোখ, ট্যারা—এরকম অনেক লক্ষণ আছে, তাদের বিশ্বাস সহজে হয় না”

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িমধ্যে

    চতুর্থ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ৪ঠা জুন

    মণিলাল প্রভৃতি সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ ও নিরাকারবাদ

    মাস্টার—আচ্ছা, কোন কোন ঘটনা মেলে নাই, এমন কি হয়েছে?

    শ্রীরামকৃষ্ণ—না, সে-সময় সব মিলত (Kathamrita)। সে-সময় তাঁর নাম করে যা বিশ্বাস করতুম, তাই মিলে যেত! (মণিলালকে) তবে কি জানো, সরল উদার না হলে এ বিশ্বাস হয় না।

    “হাড়পেকে, কোটরচোখ, ট্যারা—এরকম অনেক লক্ষণ আছে, তাদের বিশ্বাস সহজে হয় না। ‘দক্ষিণে কলাগাছ উত্তরে পুঁই, একলা কালো বিড়াল কি করব মুই’।” (সকলের হাস্য)।

    ভগবতী দাসীর প্রতি দয়া—শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) ও সতীত্বধর্ম 

    সন্ধ্যা হইল। দাসী আসিয়া ঘরে ধুনা দিয়া গেল। মণিলাল প্রভৃতি চলিয়া যাবার পর দু-একজন ভক্ত এখনও আছেন। ঘর নিস্তব্ধ। ধুনার গন্ধ, ঠাকুর ছোট খাটটিতে উপবিষ্ট। মার চিন্তা করিতেছেন! মাস্টার মেঝেতে বসিয়া আছেন। রাখালও আছেন।

    কিয়ৎক্ষণ পরে বাবুদের দাসী ভগবতী আসিয়া দূর হইতে প্রণাম করিল। ঠাকুর বসিতে বলিলেন (Kathamrita)। ভগবতী খুব পুরাতন দাসী। অনেক বৎসর বাবুদের বাড়িতে আছে। ঠাকুর তাহাকে অনেকদিন ধরিয়া জানেন। প্রথম বয়সে স্বভাব ভাল ছিল না। কিন্তু ঠাকুর দয়ার সাগর পতিতপাবন, তাহার সহিত অনেক পুরানো কথা কহিতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—এখন তো বয়স হয়েছে। টাকা যা রোজগার করলি, সাধু বৈষ্ণবদের খাওয়াচ্ছিস তো?

    ভগবতী (ঈষৎ হাসিয়া)—তা আর কি করে বলব?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—কাশী, বৃন্দাবন, এ-সব হয়েছে?

    ভগবতী (ঈষৎ সঙ্কুচিত হইয়া)—তা আর কি করে বলব (Kathamrita)? একটা ঘাট বাঁধিয়ে দিইছি। তাতে পাথরে আমার নাম লেখা আছে।

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 214: “কুবীর বলত সাকার আমার মা, নিরাকার আমার বাপ, কাকো নিন্দো, কাকো বন্দো, দোনো পাল্লা ভারী!”

    Ramakrishna 214: “কুবীর বলত সাকার আমার মা, নিরাকার আমার বাপ, কাকো নিন্দো, কাকো বন্দো, দোনো পাল্লা ভারী!”

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িমধ্যে

    চতুর্থ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ৪ঠা জুন

    মণিলাল প্রভৃতি সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ ও নিরাকারবাদ

    মণিলাল (শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতি)—আহ্নিক করবার সময় তাঁকে কোন্‌খানে ধ্যান করব?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—হৃদয় তো বেশ ডঙ্কামারা জায়গা, সেইখানে ধ্যান করো।

    বিশ্বাসেই সব—হলধারীর নিরাকারে বিশ্বাস—শম্ভুর বিশ্বাস 

    মণিলাল ব্রহ্মজ্ঞানী, নিরাকারবাদী। ঠাকুর তাঁহাকে লক্ষ্য করিয়া বলিতেছেন (Kathamrita), “কুবীর বলত, সাকার আমার মা, নিরাকার আমার বাপ। কাকো নিন্দো, কাকো বন্দো, দোনো পাল্লা ভারী!

    “হলধারী দিনে সাকারে, আর রাতে নিরাকারে থাকত। তা যে ভাবই আশ্রয় কর, ঠিক বিশ্বাস হলেই হল। সাকারেতেই বিশ্বাস কর, আর নিরাকারেই বিশ্বাস কর, কিন্তু ঠিক ঠিক হওয়া চাই।”

    পূর্বকথা—প্রথম উন্মাদ—ঈশ্বর কর্তা না কাকতালীয় 

    “শম্ভু মল্লিক বাগবাজার থেকে হেঁটে নিজের বাগানে আসত। কেউ বলেছিল, ‘অত রাস্তা, কেন গাড়ি করে আস না, বিপদ হতে পারে।’ তখন শম্ভু মুখ লাল করে বলে উঠেছিল, ‘কি, তাঁর নাম করে বেরিয়েছি আবার বিপদ!’ বিশ্বাসেতেই সব হয়! আমি বলতুম (Kathamrita), অমুককে যদি দেখি, তবে বলি সত্য। অমুক খাজাঞ্চী যদি আমার সঙ্গে কথা কয়! তা যেটা মনে করতুম, সেইটেই মিলে যেত!”

    মাস্টার ইংরেজী ন্যায়শাস্ত্র পড়িয়াছিলেন। সকাল বেলার স্বপন মিলিয়া যায় (coincidence of dreams with actual events) এটি কুসংস্কার হইতে উৎপন্ন, এ-কথা পড়িয়াছিলেন (Chapter on Fallacies) তাই তিনি জিজ্ঞাসা করিতেছেন —

    মাস্টার—আচ্ছা, কোন কোন ঘটনা মেলে নাই, এমন কি হয়েছে?

    শ্রীরামকৃষ্ণ(Ramakrishna)—না, সে-সময় সব মিলত। সে-সময় তাঁর নাম করে যা বিশ্বাস করতুম, তাই মিলে যেত! (মণিলালকে) তবে কি জানো, সরল উদার না হলে এ বিশ্বাস হয় না।

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 213: “গুরুর কৃপা হলে আর কোন ভয় নাই! তিনি জানিয়ে দেবেন, তুমি কে, তোমার স্বরূপ কি”

    Ramakrishna 213: “গুরুর কৃপা হলে আর কোন ভয় নাই! তিনি জানিয়ে দেবেন, তুমি কে, তোমার স্বরূপ কি”

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িমধ্যে

    তৃতীয় পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ৪ঠা জুন

    মণিলাল প্রভৃতি সঙ্গে — ঠাকুর “অহেতুক কৃপাসিন্ধু”

    গুরুকৃপায় মুক্তি ও স্বরূপদর্শন—ঠাকুরের অভয়দান 

    এইবার ঠাকুর ভক্তদের অভয় (Kathamrita) দিতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) (মাস্টারের প্রতি)—কেউ কেউ মনে করে, আমার বুঝি জ্ঞানভক্তি হবে না, আমি বুঝি বদ্ধজীব। গুরুর কৃপা হলে কিছুই ভয় নাই। একটা ছাগলের পালে বাঘ পড়েছিল। লাফ দিতে গিয়ে, বাঘের প্রসব হয়ে ছানা হয়ে গেল। বাঘটা মরে গেল, ছানাটি ছাগলের সঙ্গে মানুষ হতে লাগল। তারাও ঘাস খায়, বাঘের ছানাও ঘাস খায়। তারাও “ভ্যা ভ্যা” করে, সেও “ভ্যা ভ্যা” করে। ক্রমে ছানাটা খুব বড় হল। একদিন ওই ছাগলের পালে আর-একটা বাঘ এসে পড়ল। সে ঘাসখেকো বাঘটাকে দেখে অবাক্‌! তখন দৌড়ে এসে তাকে ধরলে। সেটাও “ভ্যা ভ্যা” করতে লাগলে। তাকে টেনে হিঁচড়ে জলের কাছে নিয়ে গেল। বললে, “দেখ, জলের ভিতর তোর মুখ দেখ—ঠিক আমার মতো দেখ। আর এই নে খানিকটা মাংস—এইটে খা।” এই বলে তাকে জোর করে খাওয়াতে লাগল। সে কোন মতে খাবে না—“ভ্যা ভ্যা” করছিল। রক্তের আস্বাদ পেয়ে খেতে আরম্ভ করলে। নূতন বাঘটা বললে, “এখন বুঝিছিস, আমিও যা তুইও তা; এখন আয় আমার সঙ্গে বনে চলে আয়।”

    “তাই গুরুর কৃপা হলে আর কোন ভয় নাই! তিনি জানিয়ে দেবেন, তুমি কে, তোমার (Ramakrishna) স্বরূপ কি।

    “একটু সাধন করলেই গুরু বুঝিয়ে দেন, এই এই। তখন সে নিজেই বুঝতে পারবে, কোন্‌টা সৎ, কোন্‌টা অসৎ। ঈশ্বরই সত্য, এ-সংসার অনিত্য।”

    কপট সাধনাও ভাল—জীবন্মুক্ত সংসারে থাকতে পারে 

    “এক জেলে রাত্রে এক বাগানে জাল ফেলে মাছ চুরি করছিল। গৃহস্থ জানতে পেরে, তাকে লোকজন দিয়ে ঘিরে ফেললে। মশাল-টশাল নিয়ে চোরকে খুঁজতে এল। এদিকে জেলেটা খানিকটা ছাই মেখে, একটা গাছতলায় সাধু হয়ে বসে আছে। ওরা অনেক খুঁজে দেখে, জেলে-টেলে কেউ নেই, কেবল গাছতলায় একটি সাধু ভস্মমাখা ধ্যানস্থ। পরদিন পাড়ায় খবর হল, একজন ভারী সাধু ওদের বাগানে এসেছে। এই যত লোক ফল ফুল সন্দেশ মিষ্টান্ন দিয়ে সাধুকে প্রণাম করতে এল। অনেক টাকা-পয়সাও সাধুর সামনে পড়তে লাগল। জেলেটা ভাবল কি অশ্চর্য! আমি সত্যকার সাধু নই, তবু আমার উপর লোকের এত ভক্তি। তবে সত্যকার সাধু হলে নিশ্চয়ই ভগবানকে পাব, সন্দেহ নাই।

    “কপট সাধনাতেই এতদূর চৈতন্য হল। সত্য সাধন হলে তো কথাই নাই। কোন্‌টা সৎ কোন্‌টা অসৎ বুঝতে (Kathamrita) পারবে। ঈশ্বরই সত্য, সংসার অনিত্য।”

    একজন ভক্ত ভাবিতেছেন, সংসার অনিত্য? জেলেটো তো সংসারত্যাগ করে গেল। তবে যারা সংসারে আছে, তাদের কি হবে? তাদের কি ত্যাগ করতে হবে? শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)  অহেতুক কৃপাসিন্ধু—অমনি বলিতেছেন (Kathamrita), “যদি কেরানিকে জেলে দেয়, সে জেল খাটে বটে, কিন্তু যখন জেল থেকে তাকে ছেড়ে দেয়, তখন সে কি রাস্তায় এসে ধেই ধেই করে নেচে বেড়াবে? সে আবার কেরানিগিরি জুটিয়ে লেয়, সেই আগেকার কাজই করে। গুরুর কৃপায় জ্ঞানলাভের পরেও সংসারে জীবনন্মুক্ত হয়ে থাকা যায়।”

    এই বলিয়া ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) সংসারী লোকদের অভয় দিলেন।

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 212: “রক্তের আস্বাদ পেয়ে খেতে আরম্ভ করলে, নূতন বাঘটা বললে, বুঝিছিস, আমিও যা তুইও তা..বনে চলে আয়”

    Ramakrishna 212: “রক্তের আস্বাদ পেয়ে খেতে আরম্ভ করলে, নূতন বাঘটা বললে, বুঝিছিস, আমিও যা তুইও তা..বনে চলে আয়”

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িমধ্যে

    তৃতীয় পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ৪ঠা জুন

    মণিলাল প্রভৃতি সঙ্গে — ঠাকুর “অহেতুক কৃপাসিন্ধু”

    আহারের পর ঠাকুর একটু বিশ্রাম করিতেছেন। গাঢ় নিদ্রা নয়, তন্দ্রার ন্যায়। শ্রীযুক্ত মণিলাল মল্লিক (পুরাতন ব্রহ্মজ্ঞানী) আসিয়া ঠাকুরকে (Ramakrishna) প্রণাম করিলেন ও আসন গ্রহণ করিলেন। ঠাকুর তখনও শুইয়া আছেন। মণিলাল এক-একটি কথা কহিতেছেন। ঠাকুরের অর্ধনিদ্রা অর্ধজাগরণ অবস্থা। এক-একবার উত্তর দিতেছেন (Kathamrita)।

    মণিলাল—শিবনাথ নিত্যগোপালকে সুখ্যাতি করেন। বলেন, বেশ অবস্থা।

    ঠাকুর তখনও শুইয়া—চক্ষে যেন নিদ্রা আছে। জিজ্ঞাসা করিতেছেন, “হাজরাকে ওরা কি বলে?” ঠাকুর উঠিয়া বসিলেন। মণিলালকে ভবনাথের ভক্তির কথা বলিতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ(Ramakrishna)—আহা, তার কি ভাব! গান না করতে করতে চক্ষে জল আসে। হরিশকে দেখে একেবারে ভাব। বলে, এরা বেশ আছে। হরিশ বাড়ি ছেড়ে এখানে মাঝে মাঝে থাকে কিনা।

    মাস্টারকে জিজ্ঞাসা করিতেছেন, “আচ্ছা ভক্তির কারণ কি? ভবনাথ এ-সব ছোকরার কেন উদ্দীপন হয়?”

    মাস্টার চুপ করিয়া আছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—কি জানো? মানুষ সব দেখতে একরকম, কিন্তু কারুর ভিতর ক্ষীরের পোর! যেমন পুলির ভিতর কলাইয়ের ডালের পোরও থাকতে পারে, ক্ষীরের পোরও থাকতে পারে, কিন্তু দেখতে একরকম। ঈশ্বর জানবার ইচ্ছা, তাঁর উপর প্রেমভক্তি — এরই নাম ক্ষীরের পোর।

    গুরুকৃপায় মুক্তি ও স্বরূপদর্শন—ঠাকুরের অভয়দান 

    এইবার ঠাকুর ভক্তদের অভয় দিতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) (মাস্টারের প্রতি)—কেউ কেউ মনে করে, আমার বুঝি জ্ঞানভক্তি হবে না, আমি বুঝি বদ্ধজীব। গুরুর কৃপা হলে কিছুই ভয় নাই। একটা ছাগলের পালে বাঘ পড়েছিল। লাফ দিতে গিয়ে, বাঘের প্রসব হয়ে ছানা হয়ে গেল। বাঘটা মরে গেল, ছানাটি ছাগলের সঙ্গে মানুষ হতে লাগল। তারাও ঘাস খায়, বাঘের ছানাও ঘাস খায়। তারাও “ভ্যা ভ্যা” করে, সেও “ভ্যা ভ্যা” করে (Kathamrita)। ক্রমে ছানাটা খুব বড় হল। একদিন ওই ছাগলের পালে আর-একটা বাঘ এসে পড়ল। সে ঘাসখেকো বাঘটাকে দেখে অবাক্‌! তখন দৌড়ে এসে তাকে ধরলে। সেটাও “ভ্যা ভ্যা” করতে লাগলে। তাকে টেনে হিঁচড়ে জলের কাছে নিয়ে গেল। বললে, “দেখ, জলের ভিতর তোর মুখ দেখ—ঠিক আমার মতো দেখ। আর এই নে খানিকটা মাংস—এইটে খা।” এই বলে তাকে জোর করে খাওয়াতে লাগল। সে কোন মতে খাবে না—“ভ্যা ভ্যা” করছিল। রক্তের আস্বাদ পেয়ে খেতে আরম্ভ করলে। নূতন বাঘটা বললে, “এখন বুঝিছিস, আমিও যা তুইও তা; এখন আয় আমার সঙ্গে বনে চলে আয়।”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Mahaparinirvan Diwas: আম্বেদকরের কাছে ভারতীয় আধ্যাত্মবাদই সামজিক সাম্যতার মূলসূত্র, মার্কসবাদ নয়, কেন জানেন?

    Mahaparinirvan Diwas: আম্বেদকরের কাছে ভারতীয় আধ্যাত্মবাদই সামজিক সাম্যতার মূলসূত্র, মার্কসবাদ নয়, কেন জানেন?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আজ ৬ ডিসেম্বর বাবা সাহেব আম্বেদকরের (Dr. Ambedkar) মহাপ্রয়াণ দিবস (Mahaparinirvan Diwas)। তিনি ভারতের সংবিধানের খসড়া রচনা করে পিছিয়ে থাকা বর্গের মানুষের অধিকার এবং কর্তব্য নিয়ে দীর্ঘ সংগ্রাম করেছিলেন। সামাজিক বৈষম্য, ন্যায় বিচার, জাতপাত, অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন করেছিলেন। আজের দিনকে তাই সামাজিক সমতা দিবসও বলা হয়। তাঁকে পণ্ডিত নেহেরু পরিচালিত কংগ্রেস সরকার সেই মান্যতা কোনও দিন দেয়নি। তবে তিনি হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করলেও, ভারতীয় সংস্কৃতিকে ত্যাগ করেননি, বৌদ্ধ ধর্মকে গ্রহণ করেছিলেন। একই ভাবে পাশ্চাত্য মার্কসবাদ এবং কমিউনিজেমের মিথ্যাচার, বৈষম্য, বিভাজন, লিঙ্গ বৈষম্যের, পুঁজিবাদ, শ্রেণী শত্রুর মতো ভাবনার বিরুদ্ধে নিজের স্পষ্ট মত রেখেছিলেন।

    ভারতীয় সভ্যতার একটা গড়ন রয়েছে (Mahaparinirvan Diwas)

    বাবা সাহেব (Mahaparinirvan Diwas) খুব নিবিড় ভাবে বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেন যে ভারতের সংস্কৃতি, সমাজতত্ত্ব, দর্শন, আধাত্মবাদকে পাশ্চাত্য ভাবনার আদলে দেখলে চলবে না। প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের ভূ-খণ্ডের স্থান-কাল-পাত্র এক রকম নয়। মার্কসের শ্রেণী সংগ্রাম, ঐতিহাসিক বস্তুবাদ, দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ, পুঁজি, উদ্বৃত্ত মূল্য, শ্রেণী শোষণের এবং দুনিয়ার মজদুর এক হও – এই সব ভাবনা দিয়ে ভারতীয় সমাজ-সংস্কৃতি এবং জীবন অভিপ্রায়কে বোঝা সম্ভব নয়। পুঁজিবাদকে উৎখাত করতে শ্রেণী সংগ্রাম, বিপ্লবের ভাবনা ইউরোপে কাজ করলেও ভারতবর্ষের সমাজ মনের পরিবর্তন এই ভাবে সম্ভব নয়। ভারতীয় জতি, বর্ণ, ধর্মের নানা সাংস্কৃতিক স্তরের মাত্রা রয়েছে। ভারতীয় সভ্যতার নিজেস্ব কিছু মানদণ্ড রয়েছে তাকে নজর না রেখে পাশ্চাত্য ভাবনাকে চাপিয়ে দেওয়াকে কোনও দিন ঠিক বলে মনে করতেন না বাবা সাহেব (Dr. Ambedkar)। কারণ ভারতীয় সভ্যতার নিজেস্ব গড়ন রয়েছে। ভারতীয় সমাজের সমস্যাকে সমাধান করতে ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন।

    কমিউনিজেম সামজিক বৈষম্যের জন্মদেয়

    মার্কসবাদী তাত্ত্বিকেরা বৌদ্ধ ধর্মের সঙ্গে মিলিয়ে সমাজের সাম্যতাকে ব্যাখ্যা করে থাকেন। কিন্তু বাবা সাহেব (Dr. Ambedkar) মানতেন যে বৌদ্ধ ধর্মের সাম্য, করুণা, অহিংসার সঙ্গে কমিউনিজেম বা মার্কসবাদের তেমন কোনও সামঞ্জস্য নেই। কারণ মার্কসবাদ যেভাবে সামাজিক অর্থনীতি, শ্রমিক, পুঁজিবাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নির্মাণ করে শ্রেণীশোষণকে হাতিয়ার করে বিপ্লববাদের জন্ম দিয়ে পরিবর্তন আনতে চায়, তাতে কতকগুলি আরও গভীর সমস্যার জন্ম দেয়। সমাজের সর্বহারা তত্ত্বের মধ্যে দিয়ে এক বর্গের মানুষের সঙ্গে অপর আরেক বর্গের মানুষের মধ্যে বিরাট প্রভেদ সৃষ্টি হয়। এই আর্থিক পরিবর্তন এবং বিপ্লবের সঙ্গে বৌদ্ধধর্মের অহিংসা, সাম্য এবং করুণার কোনও সম্পর্ক নেই। কামিউনিজেম দ্বারা সামাজিক বর্ণ বৈষম্য, জাতি বৈষম্য এবং আর্থিক বৈষম্য আরও বৃদ্ধি পায়। হিংসা বাড়ে, বিপ্লবের নামে যুদ্ধ সংগ্রাম হয়। সমাধানের কোনও রাস্তা আসে না। অপর দিকে বৌদ্ধ ধর্ম অনেক বেশি শান্তিপূর্ণ সামাজিক অবস্থানের কথা বলে। নির্বাণ (Mahaparinirvan Diwas) বা মুক্তি বা সংযম ব্যক্তি নির্ভর, তা ব্যক্তি থেকে সমাজের মুক্তির কথা বলে।

    আধ্যাত্মবাদের মধ্যে কীভাবে লুকিয়ে রয়েছে সাম্যবাদ

    বাবা সাহেব (Dr. Ambedkar) বৌদ্ধ ধর্মের প্রাসঙ্গিকতাকে ভারতের জন্য আদর্শ বলে মনে করেছিলেন। কারণ এই ধর্ম অশান্তি নয় সম্প্রীতি এবং অহিংসার কথা বেশি বলে। সামাজিক ন্যায় বিচার সহানুভূতি দিয়ে আন্তরিক কাঠামোকে নির্মাণ করা প্রয়োজন। সাম্য এবং ভাতৃত্বনীতির উপর মূল্যবোধের কাঠামোকে নির্মাণ করতে হবে। তিনি বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে বলেছিলেন, “বৌদ্ধধর্ম হল একটি সর্ব শ্রেষ্ঠ উপহার, যা ভারত বিশ্ববাসীকে দিয়েছে। এই ধর্ম আমাদের শেখায় যে অসমতার নিরাময় হিংসার দ্বারা নয়, পরস্পরের মধ্যে শান্তি, ভালোবাসা এবং বোঝাপড়ার মাধ্যমে সম্ভব।” ফলে বৌদ্ধ ধর্মই পারে একমাত্র সামাজিক ভাবে জাতপাতের শৃঙ্খলকে ভেঙে ফেলতে। সত্যকারের সাম্যবাদী সমাজ গঠনের চাবিকাঠি ভারতীয় দর্শন এবং আধ্যাত্মবাদের মধ্যে কীভাবে লুকিয়ে রয়েছে, তার অন্বেষণ করেছেন তিনি। তাই বাবা সাহেব নির্বাণের (Mahaparinirvan Diwas) আগের মুহূর্ত পর্যন্ত মার্কসবাদকে গ্রহণ করেননি। গ্রহণ করেছেন ভারতীয় ধর্ম দর্শন এবং সংস্কৃতিকে।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 211: “রামলীলা দেখতে গেলুম…সাক্ষাৎ সীতা, রাম, লক্ষ্মণ, হনুমান, বিভীষণ, তাদের সব পূজা করতে লাগলুম”

    Ramakrishna 211: “রামলীলা দেখতে গেলুম…সাক্ষাৎ সীতা, রাম, লক্ষ্মণ, হনুমান, বিভীষণ, তাদের সব পূজা করতে লাগলুম”

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িমধ্যে

    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ৪ঠা জুন

    পূর্বকথা—শ্রীরামকৃষ্ণের প্রেমোন্মাদ ও রূপদর্শন

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—উঃ, কি অবস্থাই গেছে! প্রথম যখন এই অবস্থা হল দিনরাত কোথা দিয়ে যেত, বলতে পারিনা। সকলে বললে, পাগল হল। তাই তো এরা বিবাহ দিলে। উন্মাদ অবস্থা;—প্রথম চিন্তা হল, পরিবারও এইরূপ থাকবে, খাবে-দাবে। শ্বশুরবাড়ি গেলুম, সেখানে খুব সংকীর্তন। নফর, দিগম্বর বাঁড়ুজ্যের বাপ এরা এল! খুব সংকীর্তন। এক-একবার ভাবতুম, কি হবে। আবার বলতুম, মা, দেশের জমিদার যদি আদর করে, তাহলে বুঝব সত্য। তারাও সেধে এসে কথা (Kathamrita) কইত।

    পূর্বকথা—সুন্দরীপূজা ও কুমারীপূজা—রামলীলা-দর্শন—গড়ের মাঠে বেলুনদর্শন—সিওড়ে রাখাল-ভোজন—জানবাজারে মথুরের সঙ্গে বাস 

    “কি অবস্থাই গেছে। একটু সামান্যতেই একেবারে উদ্দীপন হয়ে যেত। সুন্দরীপূজা কল্লুম! চৌদ্দ বছরের মেয়ে। দেখলুম, সাক্ষাৎ মা। টাকা দিয়ে প্রণাম কল্লুম।

    “রামলীলা দেখতে গেলুম। একেবারে দেখলুম, সাক্ষাৎ সীতা, রাম, লক্ষ্মণ, হনুমান, বিভীষণ। তখন যারা সেজেছিল, তাদের সব পূজা করতে লাগলুম।

    “কুমারীদের এনে তখন পূজা করতুম। দেখতুম, সাক্ষাৎ মা।

    “একদিন বকুলতলায় দেখলুম, নীল বসন পরে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে, বেশ্যা। দপ্‌ করে একেবারে সীতার উদ্দীপন। ও মেয়েকে ভুলে গেলুম; কিন্তু দেখলুম, সাক্ষাৎ সীতা লঙ্কা থেকে উদ্ধার হয়ে রামের (Ramakrishna) কাছে যাচ্ছেন। অনেকক্ষণ বাহ্যশূন্য হয়ে সমাধি অবস্থা হয়ে রইল।

    “আর-একদিন গড়ের মাঠে বেড়াতে গিছলুম। বেলুন উঠবে—অনেক লোকের ভিড়। হঠাৎ নজরে পড়ল, একটি সাহেবের ছেলে গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ত্রিভঙ্গ হয়ে। যাই দেখা, অমনি শ্রীকৃষ্ণের উদ্দীপন। সমাধি হয়ে গেল।

    “সিওড়ে রাখাল-ভোজন করালুম। তাদের হাতে হাতে সব জলপান দিলুম (Kathamrita)! দেখলুম, সাক্ষাৎ ব্রজের রাখাল। তাদের জলপান থেকে আবার খেতে লাগলুম!

    “প্রায় হুঁশ থাকত না। সেজোবাবু জানবাজারের বাড়িতে নিয়ে দিন কতক রাখলে। দেখতে লাগলুম, সাক্ষাৎ মার দাসী হয়েছি। বাড়ির মেয়েরা আদবেই লজ্জা করত না, যেমন ছোট ছেলেকে বা মেয়েকে দেখলে কেউ লজ্জা করে না। আন্দির সঙ্গে—বাবুর মেয়েকে জামাই-এর কাছে শোয়াতে যেতুম।

    “এখনও একটু তাতেই উদ্দীপন হয়ে যায়। রাখাল জপ করতে করতে বিড় বিড় করত। আমি দেখে স্থির থাকতে পারতুম না। একেবারে ইশ্বরের উদ্দীপন হয়ে, বিহ্বল হয়ে যেতুম।”

    ঠাকুর প্রকৃতিভাবের কথা আরও বলিতে লাগিলেন। আর বললেন, “আমি একজন কীর্তনীয়াকে মেয়ে-কীর্তনীর ঢঙ সব দেখিয়েছিলুম। সে বললে (Kathamrita)  ‘আপনার এ-সব ঠিক ঠিক। আপনি এ-সব জানলেন কেমন করে’।”

    এই বলিয়া ঠাকুর (Ramakrishna) ভক্তদের মেয়ে-কীর্তনীয়ার ঢঙ দেখাইতেছেন। কেহই হাস্য সংবরণ করিতে পারিলেন না।

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

LinkedIn
Share