Category: পরম্পরা

Get updated History and Heritage and Culture and Religion related news from the Madhyom news portal madhyom.com, West Bengal leading news portal Madhyom.com

  • Bhai Phonta: আজ ভাইফোঁটা! এর নেপথ্যে রয়েছে একাধিক পৌরাণিক কাহিনী

    Bhai Phonta: আজ ভাইফোঁটা! এর নেপথ্যে রয়েছে একাধিক পৌরাণিক কাহিনী

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: জলযোগে বিভিন্ন রকমের মিষ্টি জাতীয় খাবার, লুচি, ঘুগনি। দুপুরে মাংস অথবা মাছ-ভাত। ভাইফোঁটা মানেই যে কোনও বাঙালি বাড়ির পাতে এগুলি থাকবেই‌। সকাল থেকেই বাঙালি বাড়িতে ব্যস্ততা তুঙ্গে ওঠে‌‌। একদিকে জলযোগের আয়োজন তো অন্যদিকে সাজগোজ। ভাই-দাদারা পাঞ্জাবি পড়বে তো দিদি-বোনেরা শাড়ি। হিন্দু ধর্মের যে কোনও পুজো বা ব্রত সম্পন্ন হয় পরিবার, আত্মীয়স্বজনের মঙ্গল কামনার উদ্দেশে। ভাইফোঁটা (Bhai Phonta) হল ভাই ও বোনের মঙ্গল কামনার ব্রত। উভয়ের জীবনেই যেন সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি বিরাজ করে , সেই প্রার্থনাই ভাই-বোনেরা একে অপরের উদ্দেশে করে থাকেন এই বিশেষ তিথিতে। বাঙালির ঘরোয়া এই উৎসবে অন্যান্য পুজোর মতো রীতি, আচার বা মন্ত্রোচ্চারণ সেভাবে নেই বললেই চলে। ছড়ার মতো পাঠ করা হয় –
    ‘‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, 
    যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
    যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, 
    আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা।’’

    দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভাইফোঁটার (Bhai Phonta) আলাদা আলাদা নাম

    ভাইফোঁটা (Bhai Phonta) যেন বাঙালির নিজস্ব উৎসব। সবকিছুতেই বাঙালি মোড়ক। তবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভাইফোঁটার বিভিন্ন নাম রয়েছে। উত্তর ও পশ্চিম ভারতের এই উৎসব ভাইদুজ (Bhai Dooj) নামে পরিচিত। সেখানে ভাইফোঁটা পাঁচ-দিনব্যাপী দীপাবলি উৎসবের শেষদিন। আবার, মহারাষ্ট্র, গোয়া ও কর্নাটকে ভাইফোঁটাকে বলে ভাইবিজ। নেপালে ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে এই উৎসব পরিচিত ভাইটিকা নামে পরিচিত। ভাঁইফোটা, ভাই ও বোনদের  উপহার পাওয়ার দিনও বটে। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে আধুনিক প্রজন্মকে ভাঁইফোটার দিন ভাই ও বোনদের জন্য পছন্দ মতো ‘গিফট আইটেম’ কিনতে দেখা যায়। কোথাও কোথাও সামাজিক সদ্ভাবনার উদ্দেশে গণ ভাইফোঁটার আয়োজন করা হয়।

    যমুনা ও যমের পৌরাণিক আখ্যান

    ভাইফোঁটার (Bhai Phonta) নেপথ্যে  রয়েছে বেশ কয়েকটি পৌরাণিক কাহিনী। কথিত আছে, সূর্যদেব ও তার পত্নী সংজ্ঞার, যমুনা নামে কন্যা এবং যম নামে পুত্র ছিল। পুত্র কন্যা সন্তানের জন্মের পরে সূর্যদেবের উত্তাপ স্ত্রী সংজ্ঞা সহ্য করতে পারতেন না। তিনি তখন নিজের প্রতিলিপি ছায়াকে স্বর্গলোকে রেখে মর্তে নেমে আসেন। সংজ্ঞার প্রতিরূপ হওয়ার কারণে, দেবতারা ছায়াকে চিনতে পারে না। স্বর্গে বিমাতা ছায়া যমুনা ও যমের প্রতি দুর্ব্যবহার করতে শুরু করেন। কিন্তু ছায়ার মোহে অন্ধ সূর্যদেব কোনও প্রতিবাদ না করায় অত্যাচারের মাত্রা দিনের পর দিন বাড়তেই থাকে। এভাবেই একদিন বিমাতা কর্তৃক স্বর্গরাজ্য থেকে বিতাড়িত হন যমুনা।  যমুনার বিয়ে হয় এক উচ্চ বংশ জাত পরিবারে। বিয়ের পর দীর্ঘকাল যমুনাকে দেখতে না পেয়ে মনে আকুলতা তৈরী হয় যমের। এরপরই মন শান্ত করতে দিদির বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় যম। কালী পুজোর দুদিন পরে যমুনার বাড়ি পৌঁছায় যম। ভাইয়ের আগমনে, নানা রকমের খাবারের আয়োজন করেন দিদি যমুনা। দিদির আন্তরিকতায় ও ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে দিদিকে উপহার স্বরূপ বরদান প্রার্থনা করতে বলেন যম। সেই সময় যমুনা ভাইয়ের কাছে প্রার্থনা করেন যে, ‘ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার দিন প্রত্যেক ভাই যেন তার বোনের কথা স্মরণ করে এবং প্রত্যেক বোন যেন তার ভাইয়ের মঙ্গল ময় দীর্ঘ জীবন কামনা করে।’ তখন থেকেই নাকি ভাইফোঁটার প্রচলন।

    অন্যান্য পৌরাণিক গল্প

    অন্য একটি পৌরাণিক কাহিনী হল ,  নরকাসুর বধের পূর্বে শ্রী কৃষ্ণ , সুভদ্রার কাছে আসেন। সুভদ্রা তখন শ্রী কৃষ্ণের মঙ্গল ও বিজয় কামনা করে , কপালে ফোঁটা (Bhai Phonta) দিয়ে মিষ্টি খেতে দেন শ্রী কৃষ্ণকে। এরপরই নরকাসুরকে বধ করেন শ্রী কৃষ্ণ।  আবার আরও একটি কাহিনী হলো, বালির হাতে পাতালে বন্দি হন ভগবান বিষ্ণু। তখন মাতা লক্ষ্মী বালিকে ভাই হিসেবে স্বীকার করে তাঁর কপালে তিলক এঁকে দেন। বালি উপহার স্বরূপ মাতা লক্ষ্মীকে কিছু দিতে চাইলে , দেবী লক্ষ্মী ভগবান বিষ্ণুকে চেয়ে নেন। তখন থেকেই নাকি ভাঁইফোটা প্রচলিত। অন্য একটি কাহিনী অনুযায়ী, জৈন ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা মহাবীরের নির্বাণকালে তাঁর ভাই রাজা নন্দীবর্ধন খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। সেই সময় বোন সুদর্শনা রাজা নন্দীবর্ধনকে সান্ত্বনা দেন এবং এই পরিস্থিতি থেকে তাঁকে উদ্ধার করেন। অনেকের ধারনা, সেইসময় থেকেই ভাইফোঁটা অথবা ভাইদুজের (Bhai Dooj)।

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 182: “ঈশ্বরের সহিত কথা—শ্রীরামকৃষ্ণের দর্শন—কৃষ্ণ সর্বময়..হে দীনবন্ধু প্রাণবল্লভ! গোবিন্দ!”

    Ramakrishna 182: “ঈশ্বরের সহিত কথা—শ্রীরামকৃষ্ণের দর্শন—কৃষ্ণ সর্বময়..হে দীনবন্ধু প্রাণবল্লভ! গোবিন্দ!”

    শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ও বলরাম-মন্দিরে

    অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ৮ই এপ্রিল

    শ্রীরামকৃষ্ণের ঈশ্বরাবেশ, তাঁহার মুখে ঈশ্বরের বাণী

    শ্রীযুক্ত অধর সেনের দ্বিতীয় দর্শন—গৃহস্থের প্রতি উপদেশ

    পুত্রশোক—“জীব সাজ সমরে” 

    ঠাকুর অধরের কুশল পরিচয় লইলেন। অধর তাঁহার বন্ধুর পুত্রশোকের কথা নিবেদন করিলেন। ঠাকুর (Ramakrishna) অপনার মনে গান গাহিতেছেন:

    জীব সাজ সমরে, রণবেশে কাল প্রবেশ তোর ঘরে।
    ভক্তিরথে চড়ি, লয়ে জ্ঞানতূণ, রসনাধনুকে দিয়ে প্রেমগুণ,
    ব্রহ্মময়ীর নাম ব্রহ্ম-অস্ত্র তাহে সন্ধান করে ॥
    আর এক যুক্তি রণে, চাই না রথরথী, শত্রুনাশে জীব হবে সুসঙ্গতি,
    রণভূমি যদি করে দাশরথি ভাগীরথীর তীরে ॥

    “কি করবে? এই কালের জন্য প্রস্তুত হও। কাল ঘরে প্রবেশ করেছে, তাঁর নামরূপ অস্ত্র লয়ে যুদ্ধ করতে হবে, তিনিই কর্তা। আমি বলি (Kathamrita), যেমন করাও, তেমনি করি; যেমন বলাও তেমনি বলি; আমি যন্ত্র, তুমি যন্ত্রী; আমি ঘর, তুমি ঘরণী; আমি গাড়ি, তুমি ইঞ্জিনিয়ার।

    “তাঁকে আম্‌মোক্তারি দাও! ভাল লোকের উপর ভার দিলে অমঙ্গল হয় না। তিনি যা হয় করুন।

    “তা শোক হবে না গা? আত্মজ! রাবণ বধ হল; লক্ষণ দৌড়িয়ে গিয়ে দেখলেন (Kathamrita)। দেখেন যে, হাড়ের ভিতর এমন জায়গা নাই — যেখানে ছিদ্র নাই। তখন বললেন, রাম! তোমার বাণের কি মহিমা! রাবণের শরীরে এমন স্থান নাই, যেখানে ছিদ্র না হয়েছে! তখন রাম বললেন, ভাই হাড়ের ভিতর যে-সব ছিদ্র দেখছ, ও বাণের জন্য নয়। শোকে তার হাড় জরজর হয়েছে। ওই ছিদ্রগুলি সেই শোকের চিহ্ন। হাড় বিদীর্ণ করেছে।

    “তবে এ-সব অনিত্য। গৃহ, পরিবার, সন্তান দুদিনের জন্য। তালগাছই সত্য। দু-একটা তাল খসে পড়েছে। তার আর দুঃখ কি?

    “ঈশ্বর (Ramakrishna) তিনটি কাজ করেছেন — সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয়। মৃত্যু আছেই। প্রলয়ের সময় সব ধ্বংস হয়ে যাবে, কিছুই থাকবে না। মা কেবল সৃষ্টির বীজগুলি কুড়িয়ে রেখে দেবেন। আবার নূতন সৃষ্টির সময় সেই বীজগুলি বার করবেন। গিন্নীদের যেমন ন্যাতা-কাঁতার হাঁড়ি থাকে। (সকলের হাস্য) তাতে শশাবিচি, সমুদ্রের ফেনা নীলবড়ি ছোট ছোট পুটলিতে বাঁধা থাকে।”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Govardhan Puja: আজ দেশজুড়ে ভক্তরা মেতে উঠেছেন গোবর্ধন পুজোয়, জানুন এর মাহাত্ম্য

    Govardhan Puja: আজ দেশজুড়ে ভক্তরা মেতে উঠেছেন গোবর্ধন পুজোয়, জানুন এর মাহাত্ম্য

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দীপাবলি ও কালীপুজোর পর্ব মিটে যেতেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মেতে উঠেছেন গোবর্ধন পুজোয় (Govardhan Puja)। আজ শনিবার ২ নভেম্বর সারা দেশ জুড়ে মহাসমারোহে পালিত হচ্ছে গোবর্ধন পুজো। এই উৎসবে সাধারণত কৃষ্ণভক্তরা অংশগ্রহণ করেন এবং এই দিনে তাঁরা ভগবানের উদ্দেশে বিশেষ প্রার্থনাও করেন। গোবর্ধন পুজোর দিনে অনেকে বাড়িতে গোবর থেকে গোবর্ধন (Govardhan Puja) পাহাড়ের মূর্তিও তৈরি করেন এবং ভগবান কৃষ্ণের জন্য বিশেষ পুজো করা হয়। এই দিনেই নতুন ফসল থেকে অন্নকূটও দেওয়া হয়। এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে এই পুজোয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ (Lord Krishna) প্রসন্ন হন এবং তাঁর আশীর্বাদে ঘরে কখনও খাবারের অভাব হয় না।

    গোবর্ধন পুজোর (Govardhan Puja) পৌরাণিক আখ্যান

    মনে করা হয়, বিশেষ এই তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পুজো করলে তাঁর আশীর্বাদপ্রাপ্ত হন ভক্তরা। মথুরা-বৃন্দাবন সহ উত্তর ভারতে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় গোবর্ধন পুজো। কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের প্রতিপদ তিথিতেই এই পুজো অনুষ্ঠিত হয়। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, দীপাবলির ঠিক পরের দিনে গিরি গোবর্ধনকে তাঁর আঙুলের ডগায় তুলেছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং সেই গোবর্ধন পাহাড়ের নিচেই আশ্রয় নিয়েছিলেন বৃন্দাবনের সকল মানুষ। পৌরাণিক আখ্যান অনুযায়ী, তারপর থেকেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে গোবর্ধন পুজো। পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, দেবরাজ ইন্দ্রের পুজো করতেন বৃন্দাবনবাসী। ভালো বর্ষা ও উৎকৃষ্ট মানের ফসলের আশাতেই চলত এই পুজো। বৃন্দাবনবাসীরা ছিলেন অত্যন্ত গরিব, তাই দেবরাজ ইন্দ্রের পুজোর জন্য তাঁকে বিপুল পরিমাণ ভোগ নিবেদন করতে হত, যা শ্রীকৃষ্ণের পছন্দ হয়নি। শ্রীকৃষ্ণ মনে করতেন, সেই ভোগ ইন্দ্রকে না দিয়ে বৃন্দাবনের গরিবদের খাওয়ানো উচিত। এর পরবর্তীকালে শ্রীকৃষ্ণের কথা মেনে নেন বৃন্দাবনবাসী এবং ইন্দ্রের পুজো না করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। তখনই দেবরাজ ইন্দ্র প্রচন্ড ক্ হন বৃন্দাবনবাসীর ওপর। এরপরেই বৃন্দাবনের সাধারণ মানুষের ওপর রেগে গিয়ে প্রবল বৃষ্টি নামান দেবরাজ ইন্দ্র। বৃষ্টিতে বৃন্দাবন তখন ভেসে যাচ্ছে, তখন একথা জানতে পেরে বৃন্দাবনবাসীকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। নিজের আঙুলের ডগায় গোবর্ধন পাহাড়কে অনায়াসে তুলে ফেলেন তিনি। বৃষ্টির হাত থেকে বৃন্দাবনবাসী বাঁচতে গোবর্ধন পাহাড়ের নিচে আশ্রয় নেয়। এরপরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে প্রবল বৃষ্টি বন্ধ করেন দেবরাজ ইন্দ্র।

    পালিত হয় অন্নকূট উৎসবও

    দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই দিনটিতে অন্নকূট উৎসবও পালন করতে দেখা যায় অনেককে। এই দিনে, প্রত্যেকে তাঁদের বাড়ি থেকে চাল, ডাল, শাকসবজি এবং অন্যান্য খাবারের মতো বিভিন্ন ধরনের খাবার সংগ্রহ করে এবং এক জায়গায় রাখেন ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে (Lord Krishna) অর্পণ করে। এর সঙ্গে, ভগবানকে ৫৬ ভোগের একটি বিশেষ নৈবেদ্যও দেওয়া হয়। ৫৬ ভোগ মানে দিনের ৮ ঘণ্টা অনুসারে প্রতি ঘন্টায় ৭ প্রকারের খাবার ভগবানকে নিবেদন করা হয়। এই নৈবেদ্য ভগবান কৃষ্ণের (Govardhan Puja) প্রতি ভালোবাসা এবং উৎসর্গের প্রতীক। কলকাতার বহু মন্দির ও পরিবারেও অন্নকূট উৎসব পালিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় উৎসব হয় বাগবাজারের মদনমোহন মন্দিরে। সেখানে ১১৫ রকমের রান্না করা, ১২০ রকমের মিষ্টির ভোগ অর্পণ করা হয়ে থাকে। মোচা, থোড়, কুমড়ো এসব তো থাকেই, এর পাশাপাশি ফুচকা, আইসক্রিমও অর্পণ করেন অনেকে। আসলে, গোবর্ধন পুজোর দিনে যে অন্নকূট উৎসব হয় তা হল সম্পদ এবং প্রাচুর্যের প্রতীক। মনে করা হয়, এই দিন অন্নকূট উৎসব পালন করলে কোনও অভাব থাকে না।

    জ্যোতিষশাস্ত্রেও উল্লেখযোগ্য দিন

    গোবর্ধন পুজোর (Govardhan Puja) এই বিশেষ দিনটি জ্যোতিষ শাস্ত্রেও অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য বলে মনে করা হয়। এই বিশেষ দিনে কিছু কাজ করা হলে সৌভাগ্য আসতে পারে বলেই ধারণা অনেকের। জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে, গোবর্ধন পুজোর দিন, গরুকে স্নান করিয়ে দেওয়ার পরে তিলক লাগিয়ে, ৭ বার প্রদক্ষিণ করলে অর্থভাগ্য ফিরে যায়।

    গোবর্ধন পুজোর তাৎপর্য

    গোবর্ধন পুজোতে ভারতীয় সভ্যতা ও পরম্পরার প্রতিফলনও দেখা যায়।

    প্রকৃতিকে শ্রদ্ধা: গোবর্ধন পুজোর দিনটি আমাদের প্রকৃতিমাতাকে শ্রদ্ধা করতে শেখায়। প্রকৃতির ভরপুর সংস্থানকেও পুজো করতে শেখায়। তার কারণ, পাহাড়, নদী, অরণ্য অথবা মাঠ এগুলি থেকে আমাদের প্রতিদিনকার খাদ্য, পানীয় ও এবং বাসস্থানের বন্দোবস্ত হয়। তাই বর্তমান যুগে গোবর্ধন পুজোর মাধ্যমে প্রকৃতিদেবীকে রক্ষা করারও একটি বার্তা দেওয়া হয়।

    ভগবানে বিশ্বাস:  গোবর্ধন পুজো, আমাদেরকে শেখায় যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস রাখা ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, বৃন্দাবনের সাধারণ মানুষ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ওপরে ভরপুর ভরসা করেছিল, ইন্দ্রদেবের ক্রোধ থেকে বাঁচতে। পরে ভগবানের আশীর্বাদেই বৃন্দাবনে নাগরিকরা সুরক্ষিত হন।

    অহঙ্কার না করা: গোবর্ধন পুজো আমাদের অহঙ্কার না করতে শেখায়। নিজের ক্ষমতার দম্ভে বৃন্দাবনবাসীর ওপরে প্রয়োগ করেছিলেন দেবরাজ ইন্দ্র এবং এর মাধ্যমেই তিনি বৃন্দাবনবাসীর ওপর বদলা নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ইন্দ্রের সেই দর্পকে চূর্ণ করেন। আমাদের সর্বদাই মনে রাখতে হবে, অহঙ্কার এবং দম্ভ বিনাশের কারণ হয়।

    গোবর্ধন পাহাড়ের চারিপাশে ভক্তদেরকে হাঁটতে দেখা যায়

    গোবর্ধন পুজো সারা দেশজুড়ে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়। মথুরা এবং বৃন্দাবনে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল এই উৎসব। এই দিন কৃষ্ণভক্তরা বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের পালন করে থাকেন। গোবর্ধন পাহাড়ের চারিপাশে ভক্তদেরকে হাঁটতে দেখা যায়। সেখানেই তাঁরা প্রার্থনা জানান ও মন্ত্র পাঠ করেন ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করেন। এর মাধ্যমে প্রতিফলিত হয় প্রকৃতি এবং আধ্যাত্মিকতার প্রতি তাদের সমর্পণভাব।

    এই দিন গো মাতারও পুজো করেন অনেকে

    হিন্দু ধর্মে গরুর এক আলাদা মর্যাদা রয়েছে। গোবর্ধন পুজো হল সেই দিন, যেদিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা গরুকে পুজো করে। বিভিন্ন গ্রাম এবং গ্রামীণ অঞ্চলগুলিতে এদিন গরুকে স্নান করানো হয়। ফুল দিয়ে পুজো করা হয়। গরুকে বিশেষ খাবার খেতে দেওয়া হয়। এই আচার অনুষ্ঠানই প্রতিফলিত করে যে ভারতীয় সভ্যতা,সংস্কৃতি ও কৃষিক্ষেত্রে গরু ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

    মহারাষ্ট্রে বর্ষগণনা শুরু হয়

    অন্যদিকে মহারাষ্ট্রে গোবর্ধন পুজো বালি প্রতিপদ নামে পরিচিত। এই দিনে সেখানে নতুন বছরেরও সূচনা হয় বলে মনে করা হয়। মারাঠীরা তাঁদের স্ত্রীদের বিশেষ উপহার প্রদান করেন এই বিশেষ দিনে। দম্পতিরা নিজেদের সমৃদ্ধি ও সুখী জীবনের জন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেন।

    গুজরাতের গোবর্ধন পুজো

    গুজরাতে গোবর্ধন পুজোর বিশেষ স্থান রয়েছে। এই দিনেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে বিশেষ ভোগ অর্পণ করেন গুজরাতিরা এবং নানারকমের আধ্যাত্মিক ও ভক্তিগীতিতে ভরে ওঠে কৃষ্ণ মন্দিরগুলি। বিশেষ কিছু অঞ্চলে মাটির তৈরি গোবর্ধন পাহাড়ের প্রতিকৃতি তৈরি করা হয় এবং তা পুজো করা হয়।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Bhai Phota 2024: ভাইফোঁটা নিয়ে রয়েছে নানান পৌরাণিক আখ্যান, জানেন সেই গল্প?

    Bhai Phota 2024: ভাইফোঁটা নিয়ে রয়েছে নানান পৌরাণিক আখ্যান, জানেন সেই গল্প?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভাইফোঁটা (Bhai Phota 2024) বাঙালিদের চিরকালীন সম্প্রীতির উত্‍সব। বাঙালির ঘরে ঘরে ভাই-বোনদের ভিতর এই মিষ্টি-মধুর মঙ্গলময় উৎসব, যার নাম ভাইফোঁটা, সেটিকেই মহারাষ্ট্র, গুজরাটের মতো পশ্চিম ভারতে বলা হয় ভাইদুজ। আবার কর্ণাটক, গোয়ায় ভাইফোঁটাকে বলে ভাইবিজ। উত্তরবঙ্গেই ভাইফোঁটাকে বলে ভাইটিকা। হিন্দুদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই উত্‍সব ঘিরে রয়েছে নানান পৌরাণিক কাহিনী।  

    যম-যমুনার গল্প

    কথিত, সূর্য ও তাঁর স্ত্রী সংজ্ঞার ছিল যমুনা নামে এক কন্যা ও যম নামে এক পুত্র। পুত্র ও কন্যা সন্তানের জন্মদানের পর সূর্যের উত্তাপ স্ত্রী সহ্য করতে না পেরে প্রতিলিপি ছায়ার কাছে রেখে চলে যান। সংজ্ঞার প্রতিরূপ হওয়ায় কেউ ছায়াকে চিনতে পারে না। ছায়ার কাছে ওই দুই সন্তান কখনও মায়ের মমতা, ভালবাসা পায়নি। দিনের পর দিন ধরে অত্যাচার করতে থাকে। অন্য দিকে, সংজ্ঞার প্রতিলিপি ছায়াকে বুঝতে না পেরে সূর্যদেবও কোনও দিন কিছু বলেননি। ছায়ার ছলে স্বর্গরাজ্য থেকে বিতাড়িত হন যমুনা। এক সময় যমুনার বিয়েও হয়। বিয়ে হয়ে যমের থেকে অনেক দূরে সংসার করতেন যমুনা। দীর্ঘ কাল ধরে দিদিকে দেখতে না পেয়ে মন কাঁদে যমের। মন শান্ত করতে এক দিন দিদির বাড়ি চলে যান যমরাজ। প্রিয় ভাইয়ের আগমনে হাসি ফোটে দিদির মুখেও। দিদির আতিথেয়তা ও স্নেহে মুগ্ধ হয়ে ফেরত যাওয়ার সময় যম একটি বর চাইতে বলেন যমুনাকে। তখন যমুনা বলেছিলেন, এই দিনটি ভাইদের মঙ্গল কামনা চেয়ে প্রত্যেক বোন যেন ভ্রাতৃদ্বিতীয়া হিসেবে পালন করে। সেই বর দান করে যম পিতৃগৃহে চলে যান। যমের মঙ্গল কামনায় এ দিনটি পালন করায় যমরাজ অমরত্ব লাভ করেন। 

    কৃষ্ণ-সুভদ্রার কাহিনী

    আরও এক পৌরাণিক কাহিনিতে বলা হয়েছে, একসময় বালির হাতে পাতালে বন্দি ছিলেন বিষ্ণু। সেইকারণে চরম বিপদের মুখে পড়লেন স্বর্গের সব দেবতারা। কোনও ভাবেই যখন বিষ্ণুকে উদ্ধার করা যাচ্ছে না, ঠিক সেই সময় লক্ষ্মীর উপর সকলে ভরসা করতে শুরু করেন। নারায়ণকে উদ্ধার করা জন্য় লক্ষমী বালিকে ভাই পাতিয়ে ফেলেন। তাকে ফোঁটাও দেন লক্ষ্মী। সেই দিনটি ছিল কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয় তিথি। ফোঁটা পেয়ে লক্ষ্মীকে উপহার দিতে চাইলে লক্ষ্মী তখন বিষ্ণুর মুক্তি চেয়ে উপহার চেয়ে নেন। ভাইফোঁটা নিয়ে কৃষ্ণ ও সুভদ্রার উপাখ্যানও শোনা যায়। কথিত রয়েছে, ধনত্রয়োদশীর পরের দিন চতুর্দশী তিথিতে নরকাসুরকে বধ করেন কৃষ্ণ। তারপর দ্বারকায় ফিরে আসলে বোন সুভদ্রার আনন্দের সীমা থাকে না। কৃষ্ণের আদরের বোন হল সুভদ্রা। কৃষ্ণকে অনেকদিন পর দেখতে পেয়ে তার কপালে বিজয়তিলক পরিয়ে দেন। কপালে ফোঁটা দিয়ে দাদাকে মিষ্টিও খেতে দেন। সেই থেকে নাকি ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে ভাইফোঁটা উত্‍সব পালন করা হয়।

    আরও পড়ুন: নদিয়ার মাজদিয়ার ১১২ বছরের ‘ডাকাতে কালী’র কাহিনি আজও যেন গায়ে কাঁটা দেয়!

    জৈন ধর্মের কাহিনী

    চতুর্দশ শতাব্দীর পুথি অনুসারে, জৈন ধর্মের অন্যতম প্রচারক মহাবীর বর্ধমানের মহাপ্রয়াণের পরে তাঁর অন্যতম সঙ্গী রাজা নন্দীবর্ধন মানসিক এবং শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েন। সেই সময়ে তাঁর বোন অনসূয়া নন্দীবর্ধনকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে। সেখানে অনেক প্রার্থনার পরে নন্দীবর্ধন বোনের কাছে অনশন ভঙ্গ করেন। এই কাহিনি সত্যি হলে ভাইফোঁটা উৎসবের (Bhai Phota 2024) বয়স আড়াই হাজার বছরের বেশি। কারণ, মহাবীরের প্রয়াণে হয়েছিলেন ৫২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। ছোট-বড় এরকম নানা গল্প কহিনীকে মনে রেখে কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে, কালীপুজোর পরের পরের দিন ভাইফোঁটা উৎসবটি পালিত হয়। এদিন বোনেরা ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় উপবাস রেখে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 181: “ছেলে কাঁদে কতক্ষণ? যতক্ষণ না স্তন পান করতে পায়, তারপরই কান্না বন্ধ হয়ে যায়”

    Ramakrishna 181: “ছেলে কাঁদে কতক্ষণ? যতক্ষণ না স্তন পান করতে পায়, তারপরই কান্না বন্ধ হয়ে যায়”

    শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ও বলরাম-মন্দিরে

    অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ৮ই এপ্রিল

    শ্রীরামকৃষ্ণের ঈশ্বরাবেশ, তাঁহার মুখে ঈশ্বরের বাণী

    শ্রীযুক্ত অধর সেনের দ্বিতীয় দর্শন—গৃহস্থের প্রতি উপদেশ

    “বিষয়ী লোকদের রোখ নাই। হল হল; না হল না হল। জলের দরকার হয়েছে কূপ খুঁড়ছে। খুঁড়তে, খুঁড়তে যেমন পাথর বেরুল, অমনি সেখানটা ছেড়ে দিলে। আর-এক জায়গা খুঁড়তে বালি পেয়ে গেল; কেবল বালি বেরোয়। সেখানটাও ছেড়ে দিলে। যেখানে খুঁড়তে আরম্ভ করেছে, সেইখানেই খুঁড়বে তবে তো জল পাবে।

    “জীব যেমন কর্ম করে, তেমনি ফল পায়। তাই গানে আছে:

    দোষ কারু নয় গো মা।
    আমি স্বখাত সলিলে ডুবে মরি শ্যামা।

    “আমি আর আমার অজ্ঞান। বিচার করতে গেলে যাকে আমি আমি করছ, দেখবে তিনি আত্মা বই আর কেউ নয়। বিচার কর — তুমি শরীর না মাংস, না আর কিছু? তখন দেখবে, তুমি কিছুও নও। তোমার কোন উপাধি নাই। তখন আবার ‘আমি কিছু করি নাই, আমার দোষও নাই, গুণও নাই। পাপও নাই, পুণ্যও নাই।’

    “এটা সোনা, এটা পেতল—এর নাম অজ্ঞান। সব সোনা—এর নাম জ্ঞান।”

    ঈশ্বরদর্শনের লক্ষণ—শ্রীরামকৃষ্ণ কি অবতার? 

    “ঈশ্বরদর্শন হলে বিচার বন্ধ হয়ে যায়। ঈশ্বরলাভ করেছে, অথছ বিচার করছে, তাও আছে। কি কেউ ভক্তি নিয়ে তাঁর নামগুণগান করছে।

    “ছেলে কাঁদে কতক্ষণ? যতক্ষণ না স্তন পান করতে পায়। তারপরই কান্না বন্ধ হয়ে যায়। কেবল আনন্দ। আনন্দে মার দুধ খায়। তবে একটি কথা আছে। খেতে খেতে মাঝে মাঝে খেলা করে, আবার হাসে।

    “তিনিই সব হয়েছেন। তবে মানুষে তিনি বেশি প্রকাশ। যেখানে শুদ্ধসত্ত্ব বালকের স্বভাব — হাসে, কাঁদে, নাচে, গায় — সেখানে তিনি সাক্ষাৎ বর্তমান।”

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Bhaiphonta 2024: ‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা’, জেনে নিন রবিবার ভাইকে টিকা পরানোর শুভ সময়

    Bhaiphonta 2024: ‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা’, জেনে নিন রবিবার ভাইকে টিকা পরানোর শুভ সময়

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: কার্তিকের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে পালিত হয় ভাইফোঁটা উৎসব। ‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা’-এই মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে ভাই-এর দীর্ঘাষু কামনা করে বোন। আর ভাই বোনকে রক্ষা করার অঙ্গীকার করে বছর বছর। এর পর ভাইকে মিষ্টিমুখ করানো এবং প্রীতি উপহার বিনিময়, হাসি-ঠাট্টা, মজা করে কাটানোর উৎসব হল ভাইফোঁটা।

    ভাতৃদ্বিতীয়ার গল্প

    ভাইবোনের ভালবাসার সম্পর্ক দৃঢ় করার উৎসব হল ভাইফোঁটা বা ভ্রাতৃদ্বিতীয়া। কথিত রয়েছে, এই বিশেষ তিথিতে যমরাজ তাঁর বোন যমুনার থেকে ফোঁটা নিয়েছিলেন। এই উৎসব তাই যমন দ্বিতীয়া নামে পরিচিত। হিন্দুশাস্ত্রের আরেকটি মতে নরকাসুরকে বধ করে ফেরার পর শ্রীকৃষ্ণ তাঁর বোন সুভদ্রার কাছে ফোঁটা নেন এই দ্বিতীয়া তিথিতে। শ্রীকৃষ্ণের কপালে জয়টিকা পরিয়ে মিষ্টি খেতে দিয়েছিলেন সুভদ্রা। সেই থেকেই সম্ভবত ভাইফোঁটার প্রচলন। 

    কখন ফোঁটা দেবেন

    ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেওয়ার জন্য এবছর বোনেদের হাতে রয়েছে মাত্র ২ ঘণ্টা সময়। দুপুর ১টা ১০ মিনিটে এই ভাইফোঁটার শুভ সময় শুরু হবে। শুভ সময় শেষ হবে দুপুর ৩ টে ২২ মিনিটে। এই সময়ের মধ্যেই সারতে হবে ভাইফোঁটা। এদিন ভাইকে আসন বা কোনও চৌকিতে উত্তর দিকে বা উত্তর পূর্ব দিকে মুখ করে বসিয়ে ফোঁটা দিন। ভাইকে কখনও মেঝেতে বসিয়ে ফোঁটা দেবেন না। এদিন ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় বোনরা উপবাস পালন করেন সারাদিন। গোটা দিন জুড়ে ভাইয়ের জন্য নানান রকমের পদ রান্না করেন তাঁরা। এই বিশেষ দিন ভাই বোনের অবিচ্ছেদ্য ভালোবাসাকে উদযাপন করে পালিত হয় ভাইফোঁটা। এই ভাইফোঁটা উৎসব ঘিরে বাংলার ঘরে ঘরে নানান রসনার আয়োজন হয়। বিশেষত নানান রকমের মিষ্টি তৈরি হয়। পাঁচ রকমের ভাজা, পায়েস, হরেক রকমের পদ প্রস্তুত করা হয়।

    বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে–

    দ্বিতীয়া তিথি শুরু–

    বাংলা– ১৬ কার্তিক, শনিবার।

    ইংরেজি– ২ নভেম্বর, শনিবার।

    সময়– রাত ৮টা ২৩ মিনিট।

    দ্বিতীয়া তিথি শেষ–

    বাংলা– ১৭ কার্তিক, রবিবার।

    ইংরেজি– ৩ নভেম্বর, রবিবার।

    সময়– রাত ১০টা ৬ মিনিট।

    গুপ্তপ্রেশ পঞ্জিকা অনুসারে –

    দ্বিতীয়া তিথি শুরু –

    বাংলা– ১৬ কার্তিক, শনিবার।

    ইংরেজি– ২ নভেম্বর, শনিবার।

    সময়– সন্ধ্যা ৬টা ৫৩ মিনিট ২৪ সেকেন্ড।

    দ্বিতীয়া তিথি শেষ –

    বাংলা– ১৭ কার্তিক, রবিবার।

    ইংরেজি– ৩ নভেম্বর, রবিবার।

    সময়– রাত ৮টা ১৫ মিনিট ১২ সেকেন্ড।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

     

  • Kali Puja 2024: নদিয়ার মাজদিয়ার ১১২ বছরের ‘ডাকাতে কালী’র কাহিনি আজও যেন গায়ে কাঁটা দেয়!

    Kali Puja 2024: নদিয়ার মাজদিয়ার ১১২ বছরের ‘ডাকাতে কালী’র কাহিনি আজও যেন গায়ে কাঁটা দেয়!

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ডাকাতি করে এসে ডাকাতরা করত মা কালীর পুজোl তাই নাম ডাকাতে কালীl এই পুজোর বয়স ১১২ বছরের মতো l ভীষণ জাগ্রত এই কালী। পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস। নদিয়ার মাজদিয়ার ঘোষপাড়ায় এই ডাকাতে কালীতলায় ধুমধাম করে পুজো (Kali Puja 2024) হচ্ছে এবারেও l প্রাচীন এই পুজোকে ঘিরে রয়েছে দারুণ কাহিনিl

    তরতাজা যুবক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, তাঁরা ডাকাতি করবেন

    স্থানীয় শিক্ষক সুকুমার ঘোষের কাছ থেকে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় ১১২ বছর আগে ওই গ্রামের মানুষের দিন কাটছিল অভাব-অনটনের মধ্যে দিয়েl অনেকেই পাচ্ছিলেন না দুবেলা দুমুঠো খাবারl সেই করুণ অবস্থা দেখে ব্যথিত হয়ে পড়লেন গ্রামবাসীরা। ওই গ্রামের কয়েকজন তরতাজা যুবক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, তাঁরা ডাকাতি করবেনl ডাকাতি করেই জোগাড় করবেন গ্রামের মানুষের জন্য খাবারl তখন চলছে কড়া ব্রিটিশ শাসনl আচমকা ওই যুবকেরা খবর পেলেন, ঢাকার দিকে যাচ্ছে ব্রিটিশদের মালবাহী ট্রেনl ওই ট্রেনেই তাঁরা ডাকাতি করার সিদ্ধান্ত নেন। রাত হয়ে গিয়েছে। মাজদিয়ার ইছামতী ব্রিজের ওপর দিয়ে ব্রিটিশদের মালবাহী ট্রেনটি যাচ্ছিল কু-ঝিক ঝিক করেl হাতে লন্ঠনের লাল আলো দেখিয়ে ব্রিজের ওপরই দাঁড় করিয়ে দেওয়া হল ট্রেনটিকেl সময় নষ্ট না করে ট্রেনের বগি থেকে কাপড়ের বান্ডিল বেশ কয়েকটা ফেলে দেওয়া হল নদীর জলেl লুট করা হল খাদ্যসামগ্রীওl এরপর ডাকাতরা লাল আলো নিয়ে সরে যেতেই ট্রেন ছাড়ে। ট্রেন বেরিয়ে গেল ঠিকই, কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই খবর পৌঁছে গিয়েছিল ব্রিটিশ বাহিনীর কাছেl শুরু হয়ে গেল খোঁজ-খোঁজl ডাকাতদলের লোকজন আশ্রয় নিয়েছিলেন জঙ্গলেl ব্রিটিশ বাহিনী নদীতে ফেলা কাপড়ের বান্ডিলের হদিশ পায়নি l সেই কাপড় তুলে ও লুট করা খাদ্যসামগ্রী ওই ডাকাতেরা গ্রামের মানুষের মধ্যে বিলি করেন। কিন্তু যারা করেছে এই কাজ, তাদের সন্ধানে ব্রিটিশ পুলিশদের খোঁজখবর চলছিল কড়াভাবেইl

    ‘মা, তুমি বাঁচিয়ে দাও, আমরা তোমার পুজো দেব’ (Kali Puja 2024)

    ডাকাতে কালীপুজো কমিটির সভাপতি সুমন ঘোষের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, ওই ডাকাতদলে ছিলেন দুলাল প্রামাণিক, হেমন্ত বিশ্বাস, ভরত সর্দার, কৃত্তিবাস মিত্র, অবিনাশ ক্যারিয়া, গিরীন্দ্রনাথ ঘোষ নামে কয়েকজন যুবকl ব্রিটিশবাহিনীর কাছে ধরা পড়ার ভয়ে জঙ্গলেই কাটতে লাগল তাঁদের সময়l সেই সময় তাঁরা স্মরণ করেছিলেন মা কালীকেl বলেছিলেন, ‘মা, তুমি বাঁচিয়ে দাওl আমরা তোমার পুজো দেবl ‘অলৌকিকভাবেই সেবার তাঁদের সন্ধান পায়নি বৃটিশের পুলিশl ফিরে যেতে হয় তাদেরl ব্রিটিশবাহিনীর ফিরে যাওয়ার পরদিনই ছিল অমাবস্যা,কালীপুজোl জঙ্গল থেকে বেরিয়ে একটি বেল ও নিমগাছের পাশেই বেদি বানিয়ে ডাকাতরা করেছিলেন মা কালীর পুজোর আয়োজনl

    ডাকাতি করা জিনিসপত্র তাঁরা বিলিয়ে দিতেন

    জোর করে ভূদেব মালাকার নামে একজন প্রতিমাশিল্পীকে ধরে এনে ঠাকুর বানানো হলl গ্রামের চক্রবর্তী পরিবারের লোককে দিয়ে বাধ্য করানো হল পুজো করতেl প্রতিমা বানিয়ে সঙ্গে সঙ্গে রং করিয়ে পাটে তোলা হলl সেই সময়ের ডাকাত হেমন্ত বিশ্বাসের পরিবারের সদস্য সুনীল বিশ্বাসের কাছ থেকে জানা যায় সেদিনের অনেক কাহিনি-ইl যদিও সেদিন যাঁরা ডাকাত বলে পরিচিত ছিলেন, তাঁদের মাজদিয়ার ঘোষপাড়ার মানুষ সম্মানের চোখেই দেখেন বলে জানালেন প্রাক্তন শিক্ষক সুকুমার ঘোষ। তাঁদের বক্তব্য, ‘ওঁরা ডাকাতি করতেন ঠিকই, তবে কোনও দিন মানুষ খুন করেননিl শুধু তাই নয়, ডাকাতি করা জিনিসপত্র তাঁরা বিলিয়ে দিতেন গ্রামের মানুষের মধ্যেইl তাঁরাই আবার ডাকাতির টাকা-পয়সা দিয়ে করতেন মায়ের পুজোl তাই এখানে মা কালী ডাকাতে কালী বলেই পরিচিতl যদিও সেদিনের সেই ডাকাতদের পরিবারের উত্তরসূরীরা কেউ শিক্ষক, কেউ পুলিশে, কেউ সেনাবহিনীতে কাজ করেনl ডাকাত হেমন্ত বিশ্বাসের পরিবারের সদস্য সুনীল বিশ্বাস একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ছিলেন। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বছরে অন্য সময় তাঁরা ডাকাতি না করলেও ডাকাতি ছিল মাকে স্মরণ করার একটা পন্থা। তাইতো কালীপুজোর আগে ওঁদের ডাকাতি করা চাই-ইl নইলে যে মায়ের পুজো (Kali Puja 2024) হবে নাl

    কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি, ট্রেজারিতেও ডাকাতি

    একবার ডাকাতি আটকাতে পুলিশ (Nadia) ওঁদের থানায় নিয়ে গিয়ে আটকে রাখল সন্দেহের বশে l থানার সামনে চাদর-কম্বল মুড়ি দিয়ে ওঁরা ষোল-সতেরো জন শুয়ে থাকলl পরদিনই কালীপুজোl কী হবে? অনেক রাত হয়ে গিয়েছেl গ্রামের কয়েকজন পুলিশের নজর এড়িয়ে ওঁদের চাদর-কম্বলের তলায় আশ্রয় নিলl ওঁরা বেড়িয়ে গেলেন ডাকাতি করতেl ডাকাতি সেরে ডাকাতির মালপত্র এক জায়গায় রেখে ওঁরা নিজেদের জায়গায় ফিরে এসে কম্বলের তলায় শুয়ে পড়েl যারা আগে থেকে ছিল, তারা বেরিয়ে আসেl পুলিশ বুঝতে পারেনিl পরদিন ওঁরা ছাড়া পেয়ে মায়ের পুজো দিলেনl বাকি সামগ্রী গ্রামের মানুষদের বিলিয়ে দেনl আসলে ওঁরা সব সময়ই মাকে স্মরণ করতেনl ডাকাতি করতেন গরিব মানুষদের জন্যl জানা যায়, ওঁরা কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি, ট্রেজারিতেও ডাকাতি করেছেনl

    ‘কথা দে, আর তোরা ডাকাতি করবি না’ (Kali Puja 2024)

    বাংলাদেশের দর্শনাতে একবার ডাকাতি করতে যাওয়ার পর ঘটেছিল একটা অদ্ভুত ঘটনাl ওইখানেই কর আদায়ের দায়িত্বে ছিলেন যে রানি, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, ডাকাতদল হানা দিয়েছেl এখান থেকে ডাকাতরা ডাকাতি করতে গিয়ে অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী হন। দেখেন, ঢোকার মুখে যেন স্বয়ং মা দাঁড়িয়েl যিনি বলেন, তোরা কথা দে, আর তোরা ডাকাতি করবি নাl আসলে ওঁদের শিক্ষা দিতে ওই রানি নিজেই নগ্ন হয়ে মা কালীর রূপ নিয়েছিলেনl হ্যাঁ, সেদিনের পর থেকে ওঁরা ডাকাতি বন্ধ করে দেনl ‘পরবর্তীকালে গ্রামের ঘোষপাড়ায় চাঁদা তুলে মায়ের মন্দির গড়ে তোলেনl আজও ডাকাতদের সেই কালী-ই ডাকাতে কালী নামে পুজো হয়ে আসছেl আর যেখানে নিমগাছ তলায় (Nadia) প্রথম কালীপুজো করেছিলেন ডাকাতরা, সেই থানে গ্রামের মহিলারা আজও সকাল-সন্ধ্যায় পূজা দেন ভক্তি ভরে। এই কালী এখানকার মানুষের কাছে অত্যন্ত জাগ্রতl বহু মানুষ এখানে মায়ের পুজো দেনl পুজোর দিন হয় পাঁঠা বলিl

    জল-বাতাসা সহ মাকে মিষ্টিমুখ

    প্রথা মেনে ভাতৃদ্বিতীয়ার দিন কাঁধে করে পুরো মাজদিয়া বাজার ঘুরে ডাকাতে কালীকে বিসর্জন করা হত। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এখন টানা গাড়িতে করে বিসর্জিত হয় ডাকাতে কালী মাথাভাঙা নদীতে। কালী মা বাজারের মধ্যে প্রতিটি দোকানের সামনে পৌঁছানো মাত্রই দোকানদাররা জল-বাতাসা সহ মাকে মিষ্টিমুখ করান। শোভাযাত্রায় হাজার হাজার পুরুষ-মহিলা পা মেলান। বলা যেতেই পারে, ডাকাতে কালী এখন এলাকার মানুষের কাছে একটা আবেগ (Kali Puja 2024)।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Kali Puja 2024: ১০৮টি নরমুণ্ড দিয়ে চলত তন্ত্রমতে দেবীর উপাসনা! পুজো হয় মদ, কাঁচা মাংস দিয়ে

    Kali Puja 2024: ১০৮টি নরমুণ্ড দিয়ে চলত তন্ত্রমতে দেবীর উপাসনা! পুজো হয় মদ, কাঁচা মাংস দিয়ে

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আদিগঙ্গার পাড়ে কয়েকশো বছরের প্রাচীন মন্দিরবাজারের দক্ষিণ বিষ্ণুপুর শ্মশান। এই শ্মশানেই আগে ভিড় জমাতেন তান্ত্রিক ও সাধকরা। শব সাধনায় বসতেন অনেকেই। এখনও শ্মশানে ঢুকলে গা ছমছমে পরিবেশ। স্থানীয়দের বিশ্বাস, তান্ত্রিকদের সাধনার জোরে আজও রাতের অন্ধকারে জেগে ওঠে শ্মশান। ১১০ বছর আগে এই শ্মশান লাগোয়া জঙ্গলের মধ্যে টালির ছাউনির নীচে কালীপুজো (Kali Puja 2024) শুরু করেছিলেন তান্ত্রিক মণিলাল চক্রবর্তী। ১০৮টি নরমুণ্ড দিয়ে চলত তন্ত্রমতে দেবীর উপাসনা। সেই থেকেই শ্মশানে পূজিত হয়ে আসছেন মা করুণাময়ী কালী।

    কালীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুজো শুরু (Kali Puja 2024) 

    শ্যামাকালী পুজোর দিন আজও এলাকার হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান এই মন্দিরে। স্থানীয়দের মুখে মুখে প্রচলিত আছে, তন্ত্রের দীক্ষা নিয়ে শ্মশানে সাধনা শুরু করেছিলেন ব্রাহ্মণ মণিলাল চক্রবর্তী। কালীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে শ্মশান লাগোয়া জঙ্গলের মধ্যে পুজো শুরু করেন তিনি। দেবী নিত্যপুজোর ইচ্ছা প্রকাশ করলে পাকাপাকি ভাবে তৈরি করা হয় মন্দির। গঙ্গার তীরে ঘন জঙ্গল। সেই জঙ্গলে বাস ছিল হিংস্র জীবজন্তুদের। কোনও ভাবে মানুষের প্রবেশ ছিল না। সেই জঙ্গল সাফ করে জঙ্গলের মধ্যেই তৈরি হয় মন্দির। দেবীমূর্তির পিছনে বসানো হয় ১০৮টি নরমুণ্ড। এইসব নরমুণ্ড হল অপঘাতে মৃত্যু যাদের হয়েছিল, তাদের মাথার খুলি, এমনটাই জানা যায়। সামনে পঞ্চমুণ্ডির আসন মায়ের বেদির নীচে দেওয়া হয় নরমুণ্ড। মায়ের মূর্তি মাটি ছাড়া তৈরি হয় বালি-সিমেন্ট দিয়ে কংক্রিটের। এখানে তন্ত্রমতে দেবীকে পুজো দেওয়া হলেও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ বলি। কালীপুজোর দিন প্রথমে শ্মশানে আসা শবদেহকে আত্মার শান্তি কামনা করে পুজো দিয়ে তারপরেই ১০৮টি নরমুণ্ড পুজো দেওয়া হয়। তারপরেই শুরু হয় মা কালীর পুজো (Kali Puja 2024)। পুজোর দিন মদ, কাঁচা মাংস ও শোল মাছ দিয়ে পুজো করা হয়।

    আধুনিকতার ছোঁয়া

    মণিলালের মৃত্যুর পর থেকে তাঁর পুত্র ৮০ ঊর্ধ শ্যামল চক্রবর্তী মন্দিরের দায়িত্ব সামলে আসছেন। তিনিই এখন প্রধান সেবাইত। শ্যামলবাবু বললেন, ‘‘বাবার মৃত্যুর পর কাকা ফণীভূষণ চক্রবর্তীর কাছ থেকে তন্ত্রের শিক্ষা নিতে থাকি। পরে করুণাময়ী মন্দিরে মায়ের নিত্যপুজো (Kali Puja 2024) শুরু করি। পুজোর দিন দূরদূরান্ত থেকে বহু ভক্ত আসেন এই পুজো দেখতে। ভক্তদের মনস্কামনার জন্য মন্দিরের সামনে একাধিক ঢিল বেঁধে রাখা হয়। তবে এক সময় এই মন্দিরে আসতে ভক্তরা ভয় পেত। চারিদিকে গা ছমছমে ভাব। অন্ধকার জঙ্গল এখন অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বসার জায়গা। লাগানো হয়েছে আলো। কিছুটা হলেও আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়েছে মন্দির চত্বর (South 24 parganas)।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 180: “বিষয়ী লোকদের রোখ নাই, হল হল না হল না হল, জলের দরকার হয়েছে কূপ খুঁড়ছে”

    Ramakrishna 180: “বিষয়ী লোকদের রোখ নাই, হল হল না হল না হল, জলের দরকার হয়েছে কূপ খুঁড়ছে”

    শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ও বলরাম-মন্দিরে

    অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ৮ই এপ্রিল

    শ্রীযুক্ত অধর সেনের দ্বিতীয় দর্শন—গৃহস্থের প্রতি উপদেশ

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) সমাধিস্থ। ছোট খাটটিতে বসিয়া আছেন। ভক্তেরা চতুর্দিকে উপবিষ্ট। শ্রীযুক্ত অধর সেন কয়টি বন্ধুসঙ্গে আসিয়াছেন। অধর ডেপুটি ম্যাজিস্ট্র্রেট। ঠাকুরকে এই দ্বিতীয় দর্শন করিতেছেন। অধরের বয়স ২৯/৩০। অধরের বন্ধু সারদাচরণ পুত্রশোকে সন্তপ্ত। তিনি স্কুলের ডেপুটি ইন্‌স্পেক্টর ছিলেন; পেনশন লইয়া, এবং আগেও তিনি সাধন-ভজন করিতেন। বড় ছেলেটি মারা যাওয়াতে কোনরূপে সান্ত্বনালাভ করিতে পারিতেছেন না। তাই অধর ঠাকুরের নাম শুনাইয়া তাঁহার কাছে লইয়া আসিয়াছেন। অধরের নিজেরও ঠাকুরকে দেখিবার অনেকদিন হইতে ইচ্ছা ছিল।

    সমাধি ভঙ্গ হইল। ঠাকুর দৃষ্টিপাত করিয়া দেখিলেন, একঘর লোক তাঁহার দিকে চাহিয়া রহিয়াছেন। তখন তিনি আপনা-আপনি কি বলিতেছেন।

    ঈশ্বর কি তাঁর মুখ দিয়া কথা কহিতেছেন ও উপদেশ দিতেছেন?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—বিষয়ী লোকের জ্ঞান কখনও দেখা দেয়। এক-একবার দীপ শিখার ন্যায়। না, না, সূর্যের একটি কিরণের ন্যায়। ফুটো দিয়ে যেন কিরণটি আসছে। বিষয়ী লোকের ঈশ্বরের নাম করা—অনুরাগ নাই। বালক যেমন বলে, তোর পরমেশ্বরের দিব্যি। খুড়ী-জেঠীর কোঁদল শুনে “পরমেশ্বরের দিব্যি” শিখেছে (Kathamrita)!

    “বিষয়ী লোকদের রোখ নাই। হল হল; না হল না হল। জলের দরকার হয়েছে কূপ খুঁড়ছে। খুঁড়তে, খুঁড়তে যেমন পাথর বেরুল, অমনি সেখানটা ছেড়ে দিলে। আর-এক জায়গা খুঁড়তে বালি পেয়ে গেল; কেবল বালি বেরোয়। সেখানটাও ছেড়ে দিলে। যেখানে খুঁড়তে আরম্ভ করেছে, সেইখানেই খুঁড়বে (Kathamrita) তবে তো জল পাবে।

    আরও পড়ুনঃ “আবার সেই সমাধি! আবার নিস্পন্দন দেহ, স্তিমিতি লোচন, দেহ স্থির

    আরও পড়ুনঃ দেখিয়াই ঠাকুর উচ্চহাস্য করিয়া ছোকরাদের বলিয়া উঠিলেন, “ওই রে আবার এসেছে”

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

  • Ramakrishna 179: “ঠাকুর সমাধিস্থ! কেবল চক্ষের বাহিরের কোণ দিয়া আনন্দধারা পড়িতেছে”

    Ramakrishna 179: “ঠাকুর সমাধিস্থ! কেবল চক্ষের বাহিরের কোণ দিয়া আনন্দধারা পড়িতেছে”

    শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বর-মন্দিরে ও বলরাম-মন্দিরে

    সপ্তদশ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৩, ৮ই এপ্রিল

    শ্রীরামলাল প্রভৃতির গান ও শ্রীরামকৃষ্ণের সমাধি

    তুমি হে উপায়, তুমি হে উদ্দেশ্য, তুমি স্রষ্টা পাতা তুমি হে উপাস্য,
    দণ্ডদাতা পিতা, স্নেহময়ী মাতা, ভবার্ণবে কর্ণধার (তুমি) ॥

    শ্রীরামকৃষ্ণ (ভক্তদের প্রতি Ramakrishna)—আহা কি গান! “তুমি সর্বস্ব আমার!” গোপীরা অক্রুর আসবার পর শ্রীমতীকে বললে (Kathamrita), রাধে! তোর সর্বস্ব ধন হরে নিতে এসেছে! এই ভালবাসা। ভগবানের জন্য এই ব্যাকুলতা।

    আবার গান চলিতে লাগিল:

    (১)— ধোরো না ধোরো না রথচক্র রথ কি চক্রে চলে,
    যে চক্রের চক্রের চক্রী হরি যার চক্রে জগৎ চলে।

    (২)—প্যারী! কার তরে আর, গাঁথ হার যতনে।

    গান শুনিতে (Kathamrita) শুনিতে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ গভীর সমাধিসিন্ধুমধ্যে মগ্ন হইলেন! ভক্তেরা একদৃষ্টে ঠাকুরের দিকে অবাক্‌ হইয়া দেখিতেছেন। আর সাড়াশব্দ নাই। ঠাকুর সমাধিস্থ! হাতজোড় করিয়া বসিয়া আছেন, যেমন ফটোগ্রাফে দেখা যায়। কেবল চক্ষের বাহিরের কোণ দিয়া আনন্দধারা পড়িতেছে।

    ঈশ্বরের সহিত কথা—শ্রীরামকৃষ্ণের (Ramakrishna) দর্শন—কৃষ্ণ সর্বময় 

    অনেকক্ষণ পরে ঠাকুর (Ramakrishna) একটু প্রকৃতস্থ হইলেন। কিন্তু সমাধির মধ্যে যাঁকে দর্শন করিতেছিলেন, তাঁর সঙ্গে কি কথা কহিতেছেন। একটি-আধটি কেবল ভক্তদের কানে পৌঁছিতেছে। ঠাকুর আপনা-আপনি বলিতেছেন, “তুমিই আমি আমিই তুমি। তুমি খাও, তুমি আমি খাও!… বেশ কিন্তু কচ্ছ।

    “এ কি ন্যাবা লেগেছে। চারিদিকেই তোমাকে দেখছি!

    “কৃষ্ণ হে দীনবন্ধু প্রাণবল্লভ! গোবিন্দ!”

    প্রাণবল্লভ! গোবিন্দ! বলিতে (Kathamrita) বলিতে আবার সমাধিস্থ হইলেন। ঘর নিস্তব্ধ। ভক্তগণ মহাভাবময় ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে (Ramakrishna)—অতৃপ্ত-নয়নে বারবার দেখিতেছেন।

    আরও পড়ুনঃ “ধ্যান করবার সময় তাঁতে মগ্ন হতে হয়, উপর উপর ভাসলে কি জলের নিচে রত্ন পাওয়া যায়?”

    আরও পড়ুনঃ “সচ্চিদানন্দলাভ হলে সমাধি হয়, তখন কর্মত্যাগ হয়ে যায়”

    আরও পড়ুনঃ “তিনি দাঁড়াইলে ঠাকুর বলিলেন, বলরাম! তুমি? এত রাত্রে?”

    আরও পড়ুনঃ “তিনি দাঁড়াইলে ঠাকুর বলিলেন, বলরাম! তুমি? এত রাত্রে?”

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের  Whatsapp, FacebookTwitter, Telegram এবং Google News পেজ।

LinkedIn
Share