Category: পরম্পরা

Get updated History and Heritage and Culture and Religion related news from the Madhyom news portal madhyom.com, West Bengal leading news portal Madhyom.com

  • Ramnami: ভগবান রামের নামে শরীরে ট্যাটু আঁকে এই জনজাতি সমাজ 

    Ramnami: ভগবান রামের নামে শরীরে ট্যাটু আঁকে এই জনজাতি সমাজ 

    শুভ্র চট্টোপাধ্যায়: ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান। সনাতন ধর্মে এই ধারণা বহু পুরনো। ভগবানের কাছে উচ্চ নীচ ভেদ নেই, ভেদ নেই ধনী দরিদ্রের। এই বার্তা দিতেই ছত্তিশগড়ের প্রত্যন্ত জনজাতি এলাকার রামনামি (Ramnami) সমাজের মানুষজন তাঁদের শরীরের বিভিন্ন অংশে ভগবান রামের নাম লেখা  ট্যাটু করে। চোখের পাতা থেকে নাক, কান কোনও কিছুই বাদ যায়না। বর্তমান যুবসমাজের কাছে ট্যাটু খুবই পছন্দের, আধুনিকতার ছোঁয়ায় ট্যাটু আজ দেশ বিদেশে সমান জনপ্রিয়। কিন্তু ভারতবর্ষের একটি পিছিয়ে পড়া সমাজ এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে শরীরে ট্যাটু ছাপিয়ে সামাজিক বার্তা দিচ্ছে এমন খবর হয়ত দেশের বড় অংশের মানুষের কাছে নেই। কথিত আছে কোনও এক সময়ে রামনামি (Ramnami) সমাজকে মন্দিরে প্রবেশ করতে এবং হিন্দু দেবতাদের পুজো করার অনুমতি দেয়নি তৎকালীন উচ্চবর্ণের লোকেরা, তখন থেকেই ভগবান সর্বত্র বিরাজমান এই বার্তা দিতে ভগবান রামের নাম লিখে তারা সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে নিয়েছিল এবং তুলসীদাস রচিত রামচরিত মানস নিত্য পাঠ করতে শুরু করেছিল।

     

    গবেষকরা মনে করেন রামের নামে ট্যাটু করার কারণেই এই জনজাতি সমাজের নাম হয়েছে রামনামি (Ramnami) সমাজ। এদের সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অবিচ্ছেদ্য অংশ হল রামনাম। শুধুমাত্র শরীরের বিভিন্ন অংশ নয়, তাদের বাড়িঘর থেকে পোশাক পরিচ্ছদ সবকিছুতেই রামনামের ছাপ রয়েছে। দেহে উল্কি আঁকা ছত্তিশগড়ের জনজাতি সমাজের মানুষজনের কাছে অনেক পুরনো অভ্যাস। কিন্তু ভগবানের নামে ট্যাটুর কোনও পুরনো রেকর্ড নেই বলেই জানাচ্ছেন গবেষকরা। রামনামি (Ramnami) সমাজই এক্ষেত্রে প্রথম এবং শেষ উদাহরণ।  

    রামনামি (Ramnami) আন্দোলন

    বিশেষজ্ঞদের মত অনুসারে উনিশ শতকে মধ্য ভারতে বিভিন্ন সামাজিক-ধর্মীয় আন্দোলন শুরু হয়েছিল। এবং এই আন্দোলনগুলি মূলত কোনও প্রচলিত প্রথা যা অস্পৃশ্যতার সমর্থক ছিল, সেগুলির বিরুদ্ধে। প্রাচীন এই আন্দোলনগুলির মধ্যে একটি ছিল কবিরপন্থী এবং অপরটি হল গুরু ঘাসীদাসের সতনামি আন্দোলন। এই আন্দোলনগুলি ছিল মূলত অস্পৃশ্যতা এবং জাতিভেদপ্রথার বিরুদ্ধে। 

    অনেক ঐতিহাসিক রামনামি (Ramnami) সমাজকে সতনামী আন্দোলনের একটি শাখা বলে মনে করেন। প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে, এই আন্দোলন তথাকথিত নিম্নবর্ণের এক কৃষক পুত্র পরশুরাম ভরদ্বাজ শুরু করেছিলেন। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ছত্তিশগড়ের জাঞ্জগীর-চাম্পা জেলার চরপাড়া গ্রামে তাঁর জন্ম হয়েছিল। শোনা যায়, খুব ছোটবেলায় রামায়ণের গল্পে তিনি প্রেরণা পেতেন। শৈশবে তিনি নিয়মিতভাবে চাষের কাজে বাবার সঙ্গে মাঠে যেতেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে বিয়ে হয় পরশুরামের। পরশুরাম পড়াশোনা করতে খুব ভালোবাসতেন।

    কথিত আছে পরশুরাম একবার  কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হন এবং কুষ্ঠরোগকে সেসময় পাপ মানা হত। সমাজ জীবন থেকে তাই পরশুরাম সরে যান এবং একজন সন্ন্যাসীর জীবনযাপন করার সিদ্ধান্ত নেন। কথিত আছে, এই সময়ে তিনি একজন ঋষির সংস্পর্শে আসেন। শোনা যায়, ওই ঋষি তাঁকে আশীর্বাদ করেছিলেন এবং রামায়ণ পড়া চালিয়ে যেতে বলেছিলেন। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে পরশুরাম আবিষ্কার দেখেন তিনি কুষ্ঠমুক্ত হয়ে গেছে পরিবর্তে “রাম-রাম” শব্দটি তাঁর বুকে ছাপ আকারে লেখা রয়েছে। এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়তেই পরশুরামের খ্যাতি দূরদূরান্ত অবধি পৌঁছে যায়। তারপর থেকেই পরশুরাম রামায়ণ এবং রামনামের মাহাত্ম্য প্রচার করতে শুরু করেন। স্থানীয় মানুষজনের ভিড় বাড়তে থাকে থাঁর বাসস্থানে। কয়েকদিনের মধ্যেই তাঁর বাসস্থান একটি তীর্থক্ষেত্রের রূপ নেয়। প্রথমে তাঁর তাঁর কাছে দীক্ষা নেন চারজন শিষ্য। জানা যায় তাঁর প্রথম চারজন শিষ্য ভক্তির প্রতীক হিসেবে কপালে ‘রাম-রাম’ ট্যাটু করিয়েছিলেন।

    গুরু পরশুরামের উপদেশ

    পরশুরাম তাঁর শিষ্যদের উপদেশ দিতেন। তিনি ছিলেন সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে। সারাজীবন জাতিভেদ প্রথা এবং অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন তিনি। তাঁর সামাজিক আন্দোলনের মূলভিত্তিই ছিল রামনাম এবং রামায়ণ। মূলত তাঁর সহজ সরল উপাসনা পদ্ধতি দেখে অনেক মানুষই এই রামনামের আন্দোলনে অংশ নেয়।

      

    ঐতিহাসিকদের মতে রামনাম ট্যাটুর এই আন্দোলন তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজের বিরোধীতার মুখে পড়ে। আক্রমণও হয়েছিল রামনামি সমাজের উপর। ঘটনার বিচার চেয়ে আদালতের দারস্থ হতে হয় তৎকালীন রামনামি সমাজের নেতাদের। রক্ষণশীল সমাজের দাবি ছিল ‘রাম’ নাম উচ্চারণ করার অধিকার  শুধুমাত্র উচ্চবর্ণের লোকেদেরই আছে। আদালতের বিচারক রক্ষণশীল সমাজের এই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। আদালত সেসময় রায় দেয়,ভগবান রামের নাম যে কেউ ব্যবহার করতে পারেন।  রামনামি সমাজের কাছে আদালতের এই রায় ছিল বড় জয়।

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।

  • Michael Madhusudan Dutta: মধুকবির জন্মদিনে তাঁর জীবনকথা জানুন

    Michael Madhusudan Dutta: মধুকবির জন্মদিনে তাঁর জীবনকথা জানুন

    শুভ্র চট্টোপাধ্যায়: মধু কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutta)  আজকের দিনে ১৮২৪ সালে অধুনা বাংলাদেশের যশোরের সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন রাজনারায়ণ দত্ত ও তার প্রথমা পত্নী জাহ্নবী দেবীর একমাত্র সন্তান। কাজী নজরুল ইসলামের মতো তাঁকেও অনেক ক্ষেত্রে বিদ্রোহী কবি বলা হয়ে থাকে। প্রহসন এবং নাটক লেখাতে তিনি অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাঙলার নবজাগরণের সময়ে তিনি ছিলেন অগ্রগণ্য সাহিত্যিক।

    শিক্ষাজীবন

    শৈশবে মাতা জাহ্নবী দেবীর কাছেই তিনি রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ প্রভৃতি গল্পের ছলে শুনতেন। সাগরদাঁড়িতেই মধুসূদন দত্তের বাল্যকাল অতিবাহিত হয় বলে জানা যায়। তেরো বছর বয়সে মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutta)  যখন কলকাতায় আসেন, তখন তাঁর বয়স ১৩। এরপর তিনি হিন্দু কলেজে (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন। হিন্দু কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক ডিরোজিওর ভাবনাতেও তিনি গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন বলে জানা যায়। তাঁর সহপাঠীদের মধ্যে ছিলেন ভূদেব মুখোপাধ্যায়, রাজনারায়ণ বসু, গৌরদাস বসাক, প্যারীচরণ সরকার প্রমুখ, যাঁরা পরবর্তীকালে নিজের নিজের ক্ষেত্রে প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই বিদেশে গিয়ে মহাকবি হওয়াকে তিনি জীবনের লক্ষ্য মেনে নেন। 

    খ্রীষ্টধর্ম গ্রহণ

    ১৮৪৩ সালে রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে মধুসূদন (Michael Madhusudan Dutta)  খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। এরপর ওই বছরেই ৯ ফেব্রুয়ারি মিশন রো-তে অবস্থিত ওল্ড মিশন চার্চ নামে এক অ্যাংলিক্যান চার্চে গিয়ে তিনি খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁকে দীক্ষিত করেছিলেন পাদ্রী ডিলট্রি। তখন থেকে মধুসূদন দত্ত (Michael Madhusudan Dutta)  পরিচিত হন “মাইকেল মধুসূদন দত্ত” নামে। জানা যায় পুত্রের এমন সিদ্ধান্তের কারণে রাজনারায়ণ দত্ত তাঁর বিধর্মী পুত্রকে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করেন।

    কর্মজীবন

     পড়াশোনা শেষ করে মধুকবি (Michael Madhusudan Dutta)  তৎকালীন মাদ্রাজ বর্তমানে চেন্নাইতে চলে যান। কথিত আছে, নিজের পাঠ্যপুস্তক বিক্রি করে সেই টাকায় মাদ্রাজ গিয়েছিলেন তিনি। স্থানীয় খ্রিষ্টানদের সাহায্যে এখানে তিনি একটি স্কুলে ইংরেজি শিক্ষকের চাকরি পান। তখন থেকেই বিভিন্ন ইংরেজি পত্রিকায় লিখতে শুরু করেন মধুকবি। মাত্র ২৫ বছর বয়সেই তিনি দ্য ক্যাপটিভ লেডি নামের প্রথম কাব্যটি রচনা করেন। লেখক হিসাবে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে কবির। 
    মাদ্রাজে থাকাকালীন তিনি রেবেকা ম্যাকটিভিস নামে এক ইংরেজ তরুণীকে বিবাহ করেন। মাদ্রাজ থেকে চলে যাওয়ার আগে রেবেকার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তাঁর। এরপর কবি ইংল্যান্ডে আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন সেখান থেকে ১৮৬০ সালে ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে চলে যান। এখানেই এমিলিয়া হেনরিয়েটা সোফিয়া নামে এক ফরাসি তরুণীকে বিবাহ করেন তিনি। বিদেশে গিয়ে নিদারুণ দারিদ্রে দিন কাটতে থাকে তাঁর। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টায় তিনি আইন পড়া শেষ করে ভারতে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন । এমত অবস্থায় বন্ধু গৌরদাস বসাককে মধু কবি দ্য ক্যাপটিভ লেডি উপহার পাঠান, গৌরদাস সেটিকে বেথুন সাহেবের কাছে উপহার হিসেবে পাঠান। অভিভূত বেথুন সাহেব মধু কবিকে চিঠি লিখে দেশে ফিরে আসতে বলেন এবং বাংলায় সাহিত্য রচনা করতে পরামর্শ দেন। ১৮৫৬ সালে মধুসূদন (Michael Madhusudan Dutta)  কলকাতায় ফিরে আসেন। এইসময়ই তিনি লেখেন,

    হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন;–
    তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি,
    পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ
    পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।
    কাটাইনু বহু দিন সুখ পরিহরি!
    অনিদ্রায়, অনাহারে সঁপি কায়, মনঃ,
    মজিনু বিফল তপে অবরেণ্যে বরি;–
    কেলিনু শৈবালে, ভুলি কমল-কানন!

    স্বপ্নে তব কুললক্ষ্মী কয়ে দিলা পরে, —
    “ওরে বাছা, মাতৃকোষে রতনের রাজি,
    এ ভিখারী-দশা তবে কেন তোর আজি?
    যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, যারে ফিরি ঘরে।”
    পালিলাম আজ্ঞা সুখে’ পাইলাম কালে
    মাতৃভাষা-রূপ খনি, পূর্ণ মণিজালে‍‍‍‍‍‍‍‍‍‌‌‌।। 

    উল্লেখযোগ্য রচনা

    ১৮৬০ সালে তিনি রচনা করেন দুটি প্রহসন, ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ এবং ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ এবং একটি নাটক ‘পদ্মাবতী’। ওই বছরেই তিনি অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখেন ‘তিলোত্তমাসম্ভব’ কাব্য। এরপর একে একে তিনি রচনা করেন ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’ (১৮৬১) ‘ব্রজাঙ্গনা’ কাব্য (১৮৬১), ‘কৃষ্ণকুমারী’ নাটক (১৮৬১), ‘বীরাঙ্গনা’ কাব্য (১৮৬২), চতুর্দশপদী কবিতা (১৮৬৬)।

    ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর সমাধিস্থলে লেখা রয়েছে,

    ‘দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি তব
    বঙ্গে! তিষ্ঠ ক্ষণকাল! এ সমাধি স্থলে
    (জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতি
    বিরাম) মহীর পদে মহা নিদ্রাবৃত
    দত্তকুলোদ্ভব কবি শ্রীমধুসূদন!
    যশোরে সাগরদাঁড়ি কপোতাক্ষ-তীরে
    জন্মভূমি, জন্মদাতা দত্ত মহামতি
    রাজনারায়ণ নামে, জননী জাহ্নবী’
     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ। 

     

     

     

  • Sital Sasthi: শীতল ষষ্ঠীর দিন গোটা সেদ্ধ কেন খেতে হয় জানেন?

    Sital Sasthi: শীতল ষষ্ঠীর দিন গোটা সেদ্ধ কেন খেতে হয় জানেন?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: মাঝে আর ১টা দিন বাকি, তারপরেই বাঙালি মেতে উঠবে সরস্বতী পুজোর আরাধনায়। অল্পবয়সী ছেলেদের দেখা যাবে পাঞ্জাবি পাজামার সাজে, মেয়েরা পড়বে শাড়ি। স্কুল, কলেজ সমেত যেকোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সকলের সঙ্গে পাত পেড়ে খিচুড়ি প্রসাদ গ্রহন! এটাইতো সরস্বতী পুজো। সরস্বতী পুজো বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত। এর ঠিক পরের দিন হয় ষষ্ঠী। বাঙালি বাড়িতে এদিন গোটা সেদ্ধ খাওয়ার রীতি দেখা যায়। শীতল ষষ্ঠীর (Sital Sasthi) ব্রত পালন করেন বাঙালি মহিলারা। ব্রত পালনের পর সন্তানদের মঙ্গল কামনায় হলুদ আর দইয়ের ফোঁটা পরিয়ে দেন মায়েরা। শীতল ষষ্ঠী গ্রাম বাংলার চলতি ভাষায় শেতলা ষষ্ঠী (Sital Sasthi) নামেও পরিচিত। বছরভর বাঙালি বাড়িতে বিভিন্ন ষষ্ঠী পুজোর মধ্যে অন্যতম হল শীতল ষষ্ঠী (Sital Sasthi)।

    এদিন গোটা সেদ্ধ কেন খাওয়া হয়

    শীতল ষষ্ঠীর (Sital Sasthi) দিন বাঙালি বাড়িতে উনুন জ্বলেনা। মানে এখনকার দিনে গ্যাস ওভেন। বাঙালি বাড়িতে এদিন অরন্ধন পালিত হয়। অনেকে মনে করেন, শীতল খাদ্য গ্রহণের রীতির পিছনে রয়েছে  বিজ্ঞানসম্মত এবং সামাজিক ব্যাখ্যা। বসন্ত পঞ্চমী সাধারণত হয় শীত ও বসন্তের মাঝামাঝি সময়ে। এ সময় শরীরে জীবাণুর বাসা বাঁধতে শুরু করে। তাই এইদিন গোটা সেদ্ধ খাওয়ার রীতি রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। 

    এই গোটা সেদ্ধর মধ্যে কী কী থাকে ?

    গোটা মুগ, বকড়াই, গোটা শিম, গোটা আলু, রাঙা আলু, কুলিবেগুন, কড়াইশুঁটি, পালংশাক। এগুলি লবণ আর লঙ্কা দিয়ে সেদ্ধ করা হয়ে থাকে। অনেকে এর মধ্যে গোটা মশলা দেন তবে বেশিরভাগই কোনও মশলা না দিয়েই গোটাসেদ্ধ তৈরি করেন।  সরস্বতী পুজোর পর দিন সকালে  ষষ্ঠী থাকতে থাকতে হয় ষষ্ঠীপুজো হয়। তারপর হয় বাড়ির শীল, নোড়ার পুজো। ফুল, প্রসাদ দিয়ে শীল-নোড়ার পুজো করার পরে দইয়ের ফোঁটা দেওয়া হয় শীল-নোড়াতে। 

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।   

     

     

  • Hemu Kalani: ইতিহাসে উপেক্ষিত বীর হেমু কালানির কথা জানুন

    Hemu Kalani: ইতিহাসে উপেক্ষিত বীর হেমু কালানির কথা জানুন

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী ইতিহাসে উপেক্ষিত হয়ে থেকে গেছেন যাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন হেমু কালানি (Hemu Kalani)।

    জন্ম ও শিক্ষা

     ২৩ মার্চ ১৯২৪ সালে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের ওল্ড শুক্কুরে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হয় হেমুর। হেমুর (Hemu Kalani) পিতার নাম ছিল পেসুমল কালানি এবং মাতার নাম জেঠিবাঈ কালানি। হেমু ছিলেন তাঁর ভাইদের মধ্যে সবথেকে বড়। শুক্কুররেই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন বলে জানা যায় এবং তাঁর উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন হয় শুক্কুরের তিলক উচ্চ বিদ্যালয়ে। তাঁর কাকা ছিলেন ডক্টর মনঘরাম কালানি। যিনি ছিলেন সেখানকার কংগ্রেস নেতা এবং একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। দেশ সেবার জন্য যাবতীয় প্রেরণা হেমু কালানি (Hemu Kalani) তাঁর কাকার কাছ থেকেই পেয়েছিলেন বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন।

    বিপ্লবী সংগঠনে যোগদান

    ১৯৪২ সালে মহাত্মা গান্ধী শুরু করেছিলেন ভারত ছাড়ো আন্দোলন, সেই আন্দোলনে হেমু কালানি (Hemu Kalani) ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হন। সক্রিয়ভাবে এই আন্দোলনে তিনি অংশগ্রহণও করেন বলে জানা যায়। তিনি সেখানে স্বরাজ সেনা নামের একটি বিপ্লবী দলের সঙ্গে যুক্ত হন এবং কিছুদিনের মধ্যেই এই সংগঠনের শীর্ষে পৌঁছে যান। এই বিপ্লবী সংগঠনের যাবতীয় কাজকর্ম গোপনে চলত।

    বিপ্লবী ক্রিয়াকলাপ

    সীমান্ত গান্ধী বলা হত খান আব্দুল গফফর খানকে তিনি উত্তর-পশ্চিম প্রদেশে তৈরি করেছিলেন খোদায়ে খিদমতগার বাহিনী। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন সেখানে প্রবল আকার ধারণ করেছিল এই কারণে। ইতিমধ্যে ১৯৪২ সালের ২ অক্টোবর বিপ্লবী সংগঠন স্বরাজ সেনার কাছে একটি বার্তা আসে যে একটি ট্রেনে করে ব্রিটিশ সেনারা তাদের যাবতীয় যুদ্ধ সরঞ্জাম নিয়ে যাবে কোয়েটা থেকে রোহরি পর্যন্ত। সে সময়ে বিপ্লবী সংগঠন স্বরাজ সেনা তাদের গোপন বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয় যে শুক্কুরের কাছেই এই ট্রেনের ফিসপ্লেট খুলে নেওয়া হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের এই গোপন বৈঠকের তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। দায়িত্বে ছিলেন বিপ্লবী হেমু কালানি (Hemu Kalani) এবং তাঁর সঙ্গে আরও দুজন সহযোগী। বাকি দুজন কোনওভাবে পালিয়ে গেলেও ধরা পড়ে যান হেমু কালানি (Hemu Kalani)। ব্রিটিশ পুলিশ তাঁর ওপর ২২ দিন ধরে ব্যাপক অত্যাচার করে। কিন্তু কোনওভাবেই হেমু কালানি তাঁর বাকি দুই সহকারীর নাম এবং বিপ্লবী সংগঠনের বিষয়ে কোনরকম তথ্য দেননি।

    ১৯ বছর বয়সী হেমুকে ব্রিটিশ সরকার রাজদ্রোহী ঘোষণা করে এবং তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেই সময়ে সিন্ধ প্রদেশে চলছিল মার্শাল শাসন এবং তাঁর মামলা চলছিল শুক্কুরের হায়দ্রাবাদের মার্শাল কোর্টে। এই ধরনের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকে স্বমূলে শেষ করতে একটি উপযুক্ত দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য পরবর্তীকালে এই মামলার রায় যাবজ্জীবন থেকে মৃত্যুদণ্ডতে রূপান্তরিত করা হয়। হেমু কালানির (Hemu Kalani) জনপ্রিয়তা তখন উপলব্ধি করে ব্রিটিশ সরকার। ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দেয় সমগ্র সিন্ধ প্রদেশে। আজকের দিনে ২১ জানুয়ারি ১৯৪৩ সালে ফাঁসি হয়েছিল বিপ্লবী হেমু কালানির। ফাঁসির মঞ্চে এই বিপ্লবী স্লোগান দিতে থাকেন ইনকিলাব জিন্দাবাদ এবং ভারত মাতা কী জয়। কারা কর্তৃপক্ষ যখন তাঁকে তাঁর শেষ ইচ্ছার কথা জানাতে বলে, তখন এই অকুতোভয় বিপ্লবী হেমু বলেন, জাতীয় সংগীত গাইতে গাইতে তিনি মৃত্যু বরণ করতে চান। হেমু কালানির এই আত্মত্যাগের কারণে ২৩ জানুয়ারি ১৯৪৩ সালে সিন্ধি যুব দিবস এবং শহীদ দিবস পালিত হয় তৎকালীন সিন্ধ প্রদেশে। মহান এই বিপ্লবীর দেহ সৎকার করা হয় সিন্ধু নদীর তীরে।
    ২১ অগাস্ট ২০০৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ি, হেমু কালানির (Hemu Kalani) স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করেন সংসদ ভবনে।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।

  • Ratanti Kali Puja: রটন্তী কালীপুজো করলে কী কী ফল পাওয়া যায় জানেন?

    Ratanti Kali Puja: রটন্তী কালীপুজো করলে কী কী ফল পাওয়া যায় জানেন?

    শুভ্র চট্টোপাধ্যায়: বাংলায় কালীপুজো বেশ প্রাচীন। দশ মহাবিদ্যার একটি বিদ্যা হল মা কালী। এমনিতে কালীপুজো বিভিন্ন স্থানে, বছরের নানা সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। স্থান এবং বছরের পুজোর সময় অনুযায়ী মা কালীর আলাদা আলাদা নামও রয়েছে। যেমন স্থানীয় নাম হিসেবে প্রসিদ্ধ হয়ে রয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরের বোল্লা কালীপুজো আবার বিভিন্ন ডাকাতদের কালী পুজোও যথেষ্ট প্রসিদ্ধ। ভবানী পাঠকের কালীপুজো, দেবী চৌধুরানীর কালীপুজো, রঘু ডাকাতের কালীপুজো এগুলি খুবই প্রসিদ্ধ। এছাড়া সারা বছর ধরে বিভিন্ন সময় আরও অনেক কালীপুজো ধুমধাম করে আমাদের বাঙালী বাড়িতে হয়ে থাকে। যেমন জৈষ্ঠ্য মাসে ফলহারিণী কালীপুজো হয়, কার্তিক মাসে হয় দীপান্বিতা কালীপুজো। পৌষ মাসে পৌষকালী পুজো হয়। কিছু জায়গায় আবার রক্ষাকালী পুজো খুবই বিখ্যাত। মাঘ মাসে চতুর্দশী তিথিতে সম্পন্ন হয় রটন্তী কালীপুজো (Ratanti Kali Puja)। সারা বছরের বিভিন্ন কালীপুজোগুলি প্রতিটি অমাবস্যায় সম্পন্ন হয়, কিন্তু একমাত্র রটন্তী কালীপুজো (Ratanti Kali Puja) চতুর্দশী তিথিতে সম্পন্ন হয়।

    রটন্তী কালীপুজো (Ratanti Kali Puja) নিয়ে কী বলেছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব?

    দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের রটন্তী কালীপুজো (Ratanti Kali Puja) খুব ধুমধাম করে পালন করা হয়। মন্দিরে ঘাটে বহুভক্ত এ দিন স্নান করেন।  ভক্তদের বিশ্বাস রয়েছে যে এদিনের স্নানের ফলে জীবনের সুখ শান্তি বর্ষিত হয় এবং বাধা বিঘ্ন সমস্ত কিছু দূর হয়ে যায়। কথিত আছে ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব একবার বলেছিলেন যে রটন্তী কালীপুজোর (Ratanti Kali Puja) ভোরে দেখলাম আমাদের দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গায় স্বর্গ থেকে দেবতারা নেমে এসে স্নান করছেন। এই কারণে ভক্তদের বিশ্বাস রয়েছে যে এই দিনে দেবতারা স্বয়ং দক্ষিণেশ্বরের ঘাটে আবির্ভূত হন। তাই খুব ভোরে পুণ্য স্নান করতে আসেন ভক্তরা। বিশ্বাস অনুযায়ী, এই দিনে দক্ষিণেশ্বরের ঘাটে পুণ্যস্নান করাটাকে পবিত্র বলে মনে করা হয়। 

    রটন্তী কালীপুজোর (Ratanti Kali Puja) পৌরাণিক আখ্যান

    রটন্তী শব্দটি এসেছে মনে করা হয় ‘রটনা’ থেকে যার অর্থ প্রচার হওয়া বা কোনও কিছু প্রচারিত করা। ভক্তদের বিশ্বাস রয়েছে এই বিশেষ তিথিতে দেবী কালীর মহিমা চারিদিকে রটে যায়। তাই এই কালীপুজো রটন্তী কালীপুজো (Ratanti Kali Puja) নামে প্রচলিত। পুরাণমতে জানা যায় এদিনই দেবী ছিন্নমস্তার আবির্ভাব হয়েছিল। দেবী ছিন্নমস্তা হলেন শিবজায়া পার্বতীর একটি স্বরূপ। দেবী পার্বতী তাঁর সহচরীদের খিদে মেটানোর জন্য নিজের মুন্ডচ্ছেদ করে রক্তের প্রবল ধারা তৈরি করেছিলেন এবং প্রকট হয়েছিলেন এই মূর্তিতে। 

    ভক্তদের বিশ্বাস রয়েছে যে রটন্তী কালীপুজো (Ratanti Kali Puja) করলে জীবনে কখনও দাম্পত্য কলহ আসে না এবং অবাঞ্ছিত কারণে যাঁরা দাম্পত্য সুখ পাননি তাঁরা রটন্তী কালী (Ratanti Kali Puja) আরাধনার মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে সেই সুখ পেতে পারেন।

    বিভিন্ন বাড়িতে বাঙালি বাড়িতে ধুমধাম করে সাদরে রটন্তী কালীপূজা (Ratanti Kali Puja) হয়। ভক্তদের বিশ্বাস রয়েছে যে ভক্তি, নিষ্ঠা, পবিত্রতা সহকারে যদি মায়ের আরাধনা করা হয় তাহলে মা ভক্তের ডাকে সাড়া দেন এবং সমস্ত আশীর্বাদ ভক্তদের উপর বর্ষিত করেন।

    রটন্তী কালীপুজোর (Ratanti Kali Puja) শেষে গৃহস্থ বাড়িতে ভক্তদের খিচুড়ি প্রসাদ খাওয়ানোর রীতি রয়েছে। বাঙালি বাড়িতে সকলে উঠোনে ত্রিপল বিছিয়ে, জাতপাত নির্বিশেষে পাত পেড়ে মায়ের প্রসাদ গ্রহণ করেন। 

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।

  • Maharana Pratap: মহারাণা প্রতাপের প্রয়াণ দিবসে জানুন তাঁর অমর বীরত্বগাথা

    Maharana Pratap: মহারাণা প্রতাপের প্রয়াণ দিবসে জানুন তাঁর অমর বীরত্বগাথা

    শুভ্র চট্টোপাধ্যায়: ১৫৯৭ সালে আজকের দিনেই  ৫৬ বছর বয়সে মহারানা প্রতাপ (Maharana Pratap) প্রয়াত হন। ভারত ইতিহাসে অমরস্থান রয়েছে তাঁর।

    রাজ্যাভিষেক

    রাজপুত্র হওয়ার পরেও পিতৃপ্রদত্ত সিংহাসন তিনি পাননি,ভূ-ভারতে একমাত্র রাজা যিনি সৈন্য দের সাথে জঙ্গলে খাবারের অভাবে ঘাসের তৈরী রুটি খেতেন তবুও তাঁর কঠিন পণ ছিল বিধর্মী রাজার কাছে আত্মসমর্পণ কখনো করবেন না। শুধুমাত্র মানুষ-ই নয় ,পশুপক্ষীরাও তাঁর অনুগামী প্রজা ছিল। তাঁর প্রিয় ঘোড়া চেতক তাঁকে বাঁচাতে নিজে জীবন আহুতি দিয়েছিল এবং বিপক্ষ দলের সেনাপতি হাতি সওয়ার মান সিং কে প্রথম যুদ্ধ তাঁর ঘোড়ার সাথেই করতে হয়েছিল। 
    রণনিপুণ, যোগ্য মহারাণাকে (Maharana Pratap) উত্তরসূরী না করে উদয় সিং তাঁর ছোট রাণীর কথায় ঐ রাণীর গর্ভের সন্তান জগমলকে রাজা ঘোষণা করেন। প্রজাদরদী ,যোদ্ধা, জনপ্রিয় মহারাণাকে (Maharana Pratap) পাল্টা রাজা ঘোষণা করেন মেবারের সামন্তরা। ১৫৭২ সালে আরাবল্লী উপত্যকায় নির্জন জায়গা গোগুন্দাতে তাঁর রাজ্যাভিষেক করেন মেবারের প্রজা, সৈন্য এবং সামন্তরা। রাজপুত্রের রাজ্যাভিষেক রাজপরিবারের বদলে জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে করছে- ইতিহাসে এমন নজির খুব কম দেখা যায়।

    হলদিঘাটির যুদ্ধ

    মেবারের স্বাধীনতা রক্ষায় ১৫৭৬ এর ১৮ই জুন হলদিঘাটিতে শুরু হলো মোঘলদের সাথে মহারাণার (Maharana Pratap) প্রবল যুদ্ধ। মহারাণার (Maharana Pratap) প্রথম অতর্কিত আক্রমনে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আকবরের সেনা ,রণে ভঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যায় তারা। একথা বলছেন মুসলিম ঐতিহাসিক বদাউনি। এরপর ফিরে আসে মোঘল বাহিনী । রক্ততলাই নামক স্থানে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়।
     ঐতিহাসিক ডঃ ত্যাগী বলছেন- দুপক্ষেই তখন রাজপুত সেনা যুদ্ধ করছে, বেশভূষা তাদের এক  । মোঘল মুসলিম সৈন্যরা তখন তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চায় তীর ছুঁড়বো কীভাবে !! বুঝতেই পারছিনা কোনদল শত্রু এবং কোনদল মিত্র ! জবাব আসে – যাদের গায়েই লাগুক তীর, মরবে তো সেই কাফের ।
    মানসিং এর তলোয়ারের চোটে আহত চেতককে সঙ্গে করে আহত রাজা  যুদ্ধ জারি রেখেছিলেন। এমন সময় ঝালাবিদা নামের তাঁর এক সৈন্য এসে তাঁকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে  অনুরোধ করেন‌। ঝালাবিদা মহারাণা সেজেই যুদ্ধ করতে থাকেন এবং জীবন আহুতি দেন । মহারাণার (Maharana Pratap) বিপক্ষে যুদ্ধ করতে এসেছিলেন তাঁর নিজের আরেক ভাই শক্তি সিং । ক্ষমতার মোহে এবং ভয়ে বহু রাজপুত আত্মসমর্পণ করেছিল বিদেশী মোঘলদের কাছে এবং মাতৃভূমির প্রতি, স্বধর্মের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। ইতিহাস তাদের কাউকে মনে রাখেনি। ইতিহাস মনে রেখেছে চেতককে, ঝালাবিদাকে, মহারাণার (Maharana Pratap) ঘাসের রুটিকে। 

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।

  • Makar Sankranti: জানেন সনাতন ধর্মে মকর সংক্রান্তি এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?

    Makar Sankranti: জানেন সনাতন ধর্মে মকর সংক্রান্তি এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?

    শুভ্র চট্টোপাধ্যায়: আজ মকর সংক্রান্তি (Makar Sankranti)। হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন শাস্ত্রে এই দিনটির গুরুত্ব সম্পর্কে লেখা রয়েছে। যেমন জ্যোতিষশাস্ত্রে মকর সংক্রান্তি (Makar Sankranti) হল এক বিশেষ দিন যে দিন সূর্য ধনু রাশি থেকে মকর রাশিতে প্রবেশ করে। সৌর ক্যালেন্ডার অনুসারে, প্রতি বছর ১৪ জানুয়ারী মকর সংক্রান্তি উৎসব পালিত হয়। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে এই বছর সূর্য ১৪ জানুয়ারী রাত ৮.২১ টায় মকর রাশিতে প্রবেশ করবে। এদিন বাঙলার ঘরে ঘরে পিঠে পুলি খাওয়ার রীতি রয়েছে। গ্রাম বাংলায় পৌষবুড়িও করে শিশুরা।

    দেশের বিভিন্ন রাজ্যে মকর সংক্রান্তির (Makar Sankranti) দিন নানা উৎসব

    শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ নয়, মকর সংক্রান্তিকে (Makar Sankranti) কেন্দ্র করে সারা দেশ জুড়ে পালিত হয় নানা উৎসব। যেমন তামিলনাড়ুতে হয় পোঙ্গল, মূলত এই উৎসব হল দেবরাজ ইন্দ্রের পূজা। আবার পাঞ্জাব হরিয়ানাতে হয় লোহরি, আগুন জ্বালিয়ে তার চারপাশে এদিন মহিলারা গান গাইতে গাইতে ঘোরেন এবং আগুনে চিড়ে, মুড়ি ইত্যাদি আহুতি দেওয়া হয়। উত্তরপ্রদেশে এই উৎসব খিচড়ি উৎসব নামে পরিচিত। এদিন ভক্তরা গঙ্গাস্নান করেন। মাঘ মেলার শুরু হয় সেখানে। গুজরাটে এদিন ঘুড়ি ওড়ানোর রীতি দেখা যায়, বড়রা ছোটদের উপহার দেয়। গুজরাটে এই উৎসব উত্তরায়ণ নামে প্রসিদ্ধ। আসামে, মকর সংক্রান্তি (Makar Sankranti) উৎসব মাঘ বিহু এবং ভোগালী বিহু নামে পরিচিত।

    এদিন থেকেই বসন্তের আগমন হয় বলে বিশ্বাস

    মকর সংক্রান্তি (Makar Sankranti) থেকে আবহাওয়ার পরিবর্তন শুরু হয় এবং এদিনই বসন্তের আগমন ঘটে। এমনটাই জানা যায় বিভিন্ন হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী। মকর সংক্রান্তির (Makar Sankranti) পরথেকেই দিনের দৈর্ঘ্য বড় হতে থাকে এবং রাত ছোট হতে থাকে। 

    মকর সংক্রান্তির (Makar Sankranti) অন্য গুরুত্ব

    মকর সংক্রান্তিতে (Makar Sankranti) সূর্য দক্ষিণায়ন থেকে উত্তরায়ণে যায়। হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রে দক্ষিণায়ণ হল দেবতাদের রাত এবং উত্তরায়ণ হল দেবতাদের দিন। এই দিনে পূজা ও দান করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ভক্তদের বিশ্বাস রয়েছে, এই দিনে দান করলে এর ফল বহুগুণ হয়।

    এদিনই দেহত্যাগ করেন পিতামহ ভীষ্ম

    পুরাণ মতে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধকালে নিজের প্রাণত্যাগ করার জন্য মকর সংক্রান্তির (Makar Sankranti) তিথিকেই নির্বাচন করেছিলেন পিতামহ ভীষ্ম। 

    কপিল মুনির আশ্রম হয়ে গঙ্গা এদিন সাগরে মিশেছিল 

    পুরাণ মতে, এই তিথিতেই ভগীরথের পিছু চলতে চলতে কপিল মুনির আশ্রম হয়ে সাগরে মিশে যান গঙ্গা। তাই এই উপলক্ষে গঙ্গাসাগর মেলার আয়োজন করা হয়। কপিল মুনির আশ্রমে লক্ষ লক্ষ ভক্তদের ভিড় দেখা যায় এদিন। মকর সংক্রান্তির (Makar Sankranti) পূণ্য স্নান করেন ভক্তরা।

    অন্য পৌরাণিক মতে এদিন পুত্র শনির গৃহে প্রবেশ করেন সূর্য

    পৌরাণিক আখ্যান অনুযায়ী, শনিদেব কালো তিল দিয়ে সূর্য পুজো করেন। শনির পুজোয় প্রসন্ন সূর্য আশীর্বাদ করেন তাঁকে। আশীর্বাদে তিনি বলেন, শনির অপর ঘর মকরে যখন তিনি প্রবেশ করবেন সেদিন মর্ত্য লোক ধন-ধান্যে ভরে যাবে। সূর্যের মকরে প্রবেশ করার তিথিই মকর সংক্রান্তি (Makar Sankranti) নামে পরিচিত।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ। 

  • Swami Vivekananda: আজ জাতীয় যুব দিবস, স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে পড়ুন তাঁর কিছু অমর বাণী

    Swami Vivekananda: আজ জাতীয় যুব দিবস, স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে পড়ুন তাঁর কিছু অমর বাণী

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: আজ জাতীয় যুব দিবস। উত্তর কলকাতার সিমলা অঞ্চলে ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের আজকের দিনেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। এবছর তাঁর ১৬০তম জন্মবার্ষিকী উৎসব পালিত হচ্ছে সারাদেশ ব্যাপী। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের ১১ই সেপ্টেম্বর আমেরিকার শিকাগোতে বিশ্বধর্ম সম্মেলনে সনাতন ধর্ম, সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিষয়ে তরুণ সন্ন্যাসীর যুক্তিবাদী বক্তব্য সমাদৃত হয় বিশ্বের সমস্ত দেশ থেকে আগত সমস্ত ধর্মের ধর্ম গুরুদের কাছে। গুরু রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের কাছে দীক্ষা লাভ করার পরে তরুণ বিবেকানন্দ সারা ভারতবর্ষ পরিক্রমা করেছিলেন। ধ্যানমগ্ন হয়েছিলেন কন্যাকুমারীতে বসে। উপলব্ধি করেছিলেন ভারতভূমিকে। ঠাকুর রামকৃষ্ণের কাছে দীক্ষালাভ করার পরে তাঁর গুরুভাইদের নিয়ে থাকতেন বরানগর মঠে। তখনকার দিনে তাঁর দিনযাপনের চিত্র ফুটে উঠেছে শঙ্করের লেখা অচেনা অজানা বিবেকানন্দ গ্রন্থে। সে সময়ে রাত্রে নিদ্রার জন্য একটি বালিশ অবধি ছিলনা নতুন সন্ন্যাসীদের কাছে। মাথায় ইঁট নিয়ে রাত কাটতো গুরু রামকৃষ্ণদেবের এই শিষ্যদের। প্রায়ই তরুণ বিবেকানন্দ তাঁর গুরুভাইদের রসিকতা করে বলতেন, নরম দেখে একটা ইঁট দে তো।

    বরানগর মঠে থাকাকালীন প্রথম জীবনে রামকৃষ্ণদেবের শিষ্যরা মুষ্টি ভিক্ষার দ্বারাই দিনযাপন করতেন। কলাপাতায় ভাত জুটতো, তরকারি বলতে থাকতো নুন গোলা জল।
    তরুণ সন্ন্যাসীর নিজের ভাষায় “কতবার ক্ষুধায় মাথা ঘুরে পড়ে গেছি, চোখে অন্ধকার দেখেছি, আবার আমি দাঁড়িয়ে উঠেছি এবং বলেছি জয় ব্রহ্ম। আমার ক্ষুধা নেই, আমার তৃষ্ণা নেই, আমার মৃত্যু নেই, আমিই ব্রহ্ম।”

    শিকাগো ধর্মসম্মেলনের ঠিক পরে আমেরিকাতে তরুণ সন্ন্যাসী জনপ্রিয় হন সাইক্লোনিক মঙ্ক, এই উপাধিতে। সে সময় আমেরিকাতে বহু স্থানে তিনি বক্তব্য রাখেন, পরবর্তীকালে ভারতবর্ষে ফিরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর অমর সৃষ্টি বেলুড়মঠ।

    আজকে তাঁর কিছু বাণী সম্পর্কে আমরা আলোচনা করব

    আমায় মানুষ কর

    হে ভারত, এই পরানুবাদ, পরানুকরণ, পরামুখাপেক্ষা, এই দাসসুলভ দুর্বলতা, এই ঘৃণিত জঘন্য নিষ্ঠুরতা-এইমাত্র সম্বলে তুমি উচ্চাধিকার লাভ করিবে? এই লজ্জাকর কাপুরুষতাসহায়ে তুমি বীরভোগ্যা স্বাধীনতা লাভ করিবে? হে ভারত, ভুলিও না—তোমার নারীজাতির আদর্শ সীতা, সাবিত্রী, দময়ন্তী; ভুলিও না—তোমার উপাস্য উমানাথ সর্বত্যাগী শঙ্কর; ভুলিও না-তোমার বিবাহ, তোমার ধন, তোমার জীবন ইন্দ্রিয়সুখের-নিজের ব্যক্তিগত সুখের জন্য নহে; ভুলিও না—তুমি জন্ম হইতেই ‘মায়ের’ জন্য বলিপ্রদত্ত; ভুলিও না—নীচজাতি, মূর্খ, দরিদ্র, অজ্ঞ, মূচি, মেথর তোমার রক্ত, তোমার ভাই! হে বীর, সাহস অবলম্বন কর; সদর্পে বল—আমি ভারতবাসী, ভারতবাসী আমার ভাই। বল—মূর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র ভারতবাসী, ব্রাহ্মণ ভারতবাসী, চণ্ডাল ভারতবাসী আমার ভাই, ভারতবাসী আমার প্রাণ, ভারতের দেবদেবী আমার ঈশ্বর, ভারতের সমাজ আমার শিশুশয্যা, আমার যৌবনের উপবন, আমার বার্ধক্যের বারাণসী; বল ভাই—ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ, ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ; আর বল দিন-রাত, ‘হে গৌরীনাথ, হে জগদম্বে, আমায় মনুষ্যত্ব দাও; মা, আমার দুর্বলতা কাপুরুষতা দূর কর, আমায় মানুষ কর।

    অসীম ধৈর্য, অসীম সাহস

    পিছনে তাকিও না শুধু সামনের দিকে তাকাও অসীম শক্তি অসীম উদোম অসীম সাহস এবং অসীম ধৈর্য কোন মহান কর্ম সম্পাদন করতে পারে।

    বীরভোগ্যা বসুন্ধরা

    ঈশ্বর তাঁর বীর পুত্রদের সমুদ্রবক্ষেও রক্ষা করেন।

    উপনিষদের বাণী

    উত্তিষ্ঠত জাগ্রত প্রাপ্য বরান নিবোধত, উপনিষদের এই বাণীকে আত্মস্থ করতে বলেছিলেন তরুণ সন্ন্যাসী। ওঠো, জাগো, নিজের প্রাপ্য নিজে বুঝে নাও।

     

  • Ancient Indian Scientists: প্রাচীন ভারতের চিকিৎসাবিদ সুশ্রুত, পদার্থবিদ কণাদের অজানা গল্পগুলো জানুন

    Ancient Indian Scientists: প্রাচীন ভারতের চিকিৎসাবিদ সুশ্রুত, পদার্থবিদ কণাদের অজানা গল্পগুলো জানুন

    শুভ্র চট্টোপাধ্যায়: বিগত পর্বে আমরা আলোচনা করেছি প্রাচীন ভারতের গণিত চর্চা সম্পর্কে। আজকে আমরা প্রাচীন ভারতের দুইজন খ্যাতনামা বিজ্ঞানী (Ancient Indian Scientists) সুশ্রুত এবং মহর্ষি কণাদের জীবনী এবং কাজ সম্পর্কে জানব।

    প্রথম পর্ব: সনাতন ধর্মে ঋষি এবং বেদের ভূমিকা জানুন

    সুশ্রুত

    সুশ্রুত ছিলেন একজন প্রাচীন ভারতীয় চিকিৎসক। বলা ভালো, শল্য চিকিৎসার জনক ছিলেন তিনি। তাঁর রচিত গ্রন্থ “সুশ্রুত সংহিতা” চিকিৎসা শাস্ত্রের একটি অমূল্য গ্রন্থ হিসেবে পরিগণিত হয়। প্রাচীন বিভিন্ন হিন্দু শাস্ত্রে তাঁকে বিশ্বামিত্রের পুত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। আচার্য সুশ্রুত, প্লাস্টিক সার্জারি জনক হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে আজ সমাদৃত।

    দ্বিতীয় পর্ব: আলোর গতিবেগ, মহাকর্ষ বল, পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্ব নির্ণয়ের বিষয়ে বেদে কী বলা আছে জানেন?

    সুশ্রুতের চিকিৎসার পদ্ধতি নিয়ে অনেক রকমের কাহিনী প্রচলিত আছে। সে সব  কাহিনীগুলি সম্পর্কে একটু জানা যাক। কথিত আছে আজ থেকে প্রায় ২৬০০ বছর আগেকার কথা, সে সময় বর্তমান ভারতের বারাণসীর কাছাকাছি কোনও একটি জনপদ ছিল। একদিন মধ্যরাত্রে এক চিকিৎসকের দরজায় হঠাৎ এক আগুন্তক উপস্থিত হল। জোরে জোরে দরজার কড়া নাড়ছেন আর চিকিৎসককে ডাকছেন। দরজা খুলতেই ওই আগুন্তক চিকিৎসকের পায়ের উপরে এসে পড়ল এবং কাঁদতে থাকল। চিকিৎসক লক্ষ্য করলেন আগুন্তকের নাক কাটা গেছে এবং ঝরঝর করে রক্ত পড়ছে।
    আচার্য সুশ্রুত তাকে অভয় বাণী দিলেন যে সব ঠিক হয়ে যাবে। শান্ত হয়ে বসো। এরপর ওই ব্যক্তিকে মাদুরের উপর বসালেন চিকিৎসক। জল ও ভেষজ নির্যাস দিয়ে তার মুখ পরিষ্কার করলেন। তারপর কিছুটা মদ্যপান করালেন রোগীটিকে। কিছুক্ষণের মধ্যে রোগী ঝিমিয়ে পড়ল। এবার একটি লতা থেকে বড় মাপের একটি পাতা ছিড়ে নিয়ে নাকের উপর বসিয়ে, নাকের মাপ অনুযায়ী পাতাটি চারপাশ থেকে কেটে নিলেন, এরপর রোগীর গাল থেকে ঠিক পাতার মাপের কিছুটা মাংস আগুনে পুড়িয়ে ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে সেটি তার বিকৃত নাকের উপর বসিয়ে নাকের মতো করে মুড়ে দিলেন এবং নিখুঁত সেলাই করে জুড়ে দিলেন সেই নতুন নাক। তার আগে অবশ্য দুটো সরু নল নাকের অস্থায়ী ছিদ্র হিসেবে স্থাপন করেছিলেন সুশ্রুত। গালে যে অংশ থেকে মাংস কেটে নেওয়া হয়েছিল সেখানে ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করা হয়েছিল তার আগেই। এরপর রোগীটিকে কিছু ওষুধ পত্র দিয়ে সেগুলি নিয়মিত খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দিলেন। এমন অজস্র কাহিনী প্রচলিত রয়েছে প্রাচীন ভারতীয় এই শল্যচিকিৎসক সম্পর্কে।
    আনুমানিকভাবে ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আচার্য সুশ্রুত। শোনা যায় বিশ্বামিত্র মুনির বংশধর ছিলেন তিনি। কথিত আছে, বারাণসীতে দেবদাস ধন্বন্তরির কাছে চিকিৎসাবিদ্যা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছিলেন সুশ্রুত। পরে শল্যবিদ্যার পাশাপাশি চিকিৎসার অন্যান্য শাখাতেও তিনি সমান দক্ষতা অর্জন করেন। শল্যবিদ্যার প্রথাগত পদ্ধতির উদ্ভাবক এবং ব্যাখ্যাকার ছিলেন আচার্য সুশ্রুত। সংস্কৃত ভাষায় তাঁর লেখা সুশ্রুত সংহিতা চিকিৎসাশাস্ত্রের একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। এই গ্রন্থে তিনি শল্য চিকিৎসার জন্য ১২ রকমের যন্ত্রপাতির কথা বলেছেন। সুশ্রুত সংহিতাতে ১৮৪টি অধ্যায় রয়েছে, এখানে তিনি আলোচনা করেছেন ১১২০টি বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে। ৭০০ এর অধিক বিভিন্ন উদ্ভিদের কথা তিনি এই গ্রন্থে বলেছেন যেখান থেকে ওষুধ তৈরি করা যায়, ৬৪ ধরনের খনিজেরও আলোচনা তিনি এই গ্রন্থে করেছেন যা থকে ওষুধ তৈরি হতে পারে। ৫৭ ধরনের প্রাণীজ উৎসের কথা বলেছেন যেখান থেকে ওষুধ তৈরি হতে পারে। সুশ্রুতই ছিলেন প্রথম চিকিৎসক যিনি পেট কেটে সন্তান প্রসব করানোর কথা বলেছেন, অর্থাৎ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে যার নাম “সিজারিয়ান সেকশন”। মূত্রস্থলীতে জমা পাথর বের করা, দেহের ভেঙে যাওয়া হাড় জুড়ে দেওয়া, চোখের ছানি অপারেশনের বিভিন্ন কাহিনী শোনা যায় সুশ্রুত সম্পর্কে। এখন যেমন রোগীকে অজ্ঞান করে অস্ত্র প্রচার করা হয় তখন তিনি রোগীকে মদ্যপান করাতেন। শিক্ষক হিসেবেও তিনি অনেক গুণী ছিলেন। লাউ, তরমুজ কেটে শিষ্যদের অস্ত্রোপচারের প্রাথমিক পাঠ দিতেন এবং ছুরি কীভাবে ধরতে হয় সেগুলো শেখাতেন। শল্যচিকিৎসা এবং ওষুধপত্র সম্পর্কে  গ্রিক দার্শনিক হিপোক্রিটাসের লেখা শপথ আজও নিতে হয় ডাক্তারি ছাত্রদের। সুশ্রুত তারও প্রায় দেড়শ বছর আগে তাঁর শিষ্যদের জন্য এমন শপথ চালু করেন।

    তৃতীয় পর্ব: প্রাচীন ভারতের গণিত চর্চা 

    মহর্ষি কণাদ

    সপ্তম শ্রেণীতেই পড়ানো হয় পরমাণুর গঠন সংক্রান্ত অধ্যায়। ডালটনের তাঁর পরমাণুবাদে পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার আগে ভারতীয় ঋষি কনাদ পদার্থের ক্ষুদ্রতম অংশ সম্পর্কে ধারণা দিয়ে যান। কনাদ ভারতীয় দার্শনিক (Ancient Indian Scientists) ছিলেন বলে মনে করা হয় এবং খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৬০০ বছর আগে তিনি পরমাণুর ধারণা দেন। তিনি বলেন যে সমস্ত পদার্থই ক্ষুদ্র কণিকা দ্বারা তৈরি। মহর্ষি কণাদ আরও বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন কনভুক, কনভক্ষ, যোগী, উলুক, কাশ্যপ। কথিত আছে দিনের বেলায় গহন অরণ্যে গভীর ধ্যানে তিনি মগ্ন থাকতেন এবং যখন রাত্রিবেলায় সবাই নিদ্রিত থাকতো তখন তিনি খাবারের সন্ধানে বের হতেন এরকম বৃত্তি উলূক বা প্যাঁচারই হয় সাধারণত। তাই অনেকে মনে করেন তাঁর উলূক নামকরণ হয়েছে। মহাভারতের শান্তি পর্বে এরকম একটি কাহিনীর উল্লেখ রয়েছে যদিও সেটি কণাদ সম্পর্কে বলা হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়না। শ্লোকটি হল, উলুকঃ পরমো বিপ্র মার্কন্ডেয় মহামুনিঃ।

     আরও কথিত আছে যে কণাদ কঠোর যোগাভ্যাসের ফলে ভগবান শিবের বরপ্রাপ্ত হন। শিব কণাদের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে উলূকের রূপ ধরে তাঁর সম্মুখে আবির্ভূত হন এবং ছটি পদার্থের উপদেশ দান করেন, বায়ু পুরাণেও কণাদের উল্লেখ পাওয়া যায়। এখানে বলা হচ্ছে যে কণাদ ছিলেন পরম শৈব। আবার কণাদ এই নাম ন্যায়-কন্দলিতেও উল্লেখ রয়েছে। ক্ষেতে পড়ে থাকা শস্য কণা ভক্ষণ করতেন বলেই তাঁকে কণভূক বা কণভক্ষ বলা হত বলে অনেকে মনে করেন। আবার এটাও মনে করা হয় যে কণাদ কাশ্যপ গোত্রীয় ছিলেন বলে তাঁর দর্শনকে কাশ্যপীয় দর্শন বলা হয়। কণাদের দর্শন বৈশেষিক দর্শন নামে পরিচিত।

    হিন্দু পৌরাণিক আখ্যান অনুযায়ী কনাদ ছিলেন পদার্থ বিজ্ঞানী (Ancient Indian Scientists)। তিনি বিশেষ নামক একটি সূক্ষ্ম পদার্থ আবিষ্কার করেছিলেন। তাঁর মতে পদার্থ মূলত ১০ প্রকার। এর মধ্যে ছয়টি ভাব পদার্থ এবং বাকি চারটি অভাব পদার্থ। ছয়টি ভাব পদার্থ হল দ্রব্য, গুণ, কর্ম, সামান্য, বিশেষ, সমব্যয়। অভাব পদার্থগুলি হল প্রাগ অভাব, ধ্বংস অভাব, অনন্য অভাব, অত্যন্ত অভাব।পদার্থের পরমাণু সম্পর্কে প্রথম তথ্য ও প্রদান করেছিলেন এই প্রাচীন ভারতীয় দার্শনিক। তাঁর মতে একমাত্র পরমাণু সত্ রূপ নিত্য পদার্থ এবং সমস্ত জড় পদার্থ পরমাণুর সংযোগের ফলে উৎপন্ন হয়েছে।
    ভারতীয় ষড়দর্শনের মধ্যে অন্যতম হলো বৈশেষিক দর্শন। এই দর্শনের প্রবক্তা স্বয়ং ভারতীয় দার্শনিক কণাদ। এই দর্শনে উল্লিখিত পদার্থ তত্ত্বের জ্ঞান প্রাচীনকালে যে কোন ছাত্রদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হতো।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ। 

     
  • kalpataru Utsav: ‘কল্পতরু উৎসব’-এর মাহাত্ম্য জানুন

    kalpataru Utsav: ‘কল্পতরু উৎসব’-এর মাহাত্ম্য জানুন

    শুভ্র চট্টোপাধ্যায়: নতুন বছরের পয়লা দিন বলে কথা। তারপর আবার রবিবার। শীতের আমেজ বাঙালি উপভোগ করবে পিকনিকের আনন্দে। এ আর নতুন কী! তবে ফি বছর ১ জানুয়ারির গুরুত্ব বাঙালির কাছে অন্যভাবেও রয়েছে, এদিন কল্পতর উৎসব (kalpataru Utsav)। এদিনই বিশ্ব বিখ্যাত হিন্দু ধর্মের প্রচারক স্বামী বিবেকানন্দের গুরু, ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব তাঁর শিষ্যদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, “তোমাদের চৈতন্য হউক”। 

    ঠাকুরের সংক্ষিপ্ত জীবনী

    পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার আরামবাগ মহকুমার কামারপুকুর গ্রামে ১৮৩৬ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি এক দরিদ্র বৈষ্ণব ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায় এবং চন্দ্রমণি দেবীর সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। কথিত আছে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে গয়া তীর্থ ভ্রমণে গিয়ে ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায়, গদাধর বিষ্ণুকে স্বপ্নে দর্শন করেন। তাই নিজের চতুর্থ সন্তানের নাম তিনি রাখলেন গদাধর চট্টোপাধ্যায়। দাদা রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে ১৮৫৫ সালে গদাধর চট্টোপাধ্যায়ের কলকাতায় আগমন ঘটে। কারণ মাহিষ্য সমাজের জমিদার পত্নী রানী রাসমণি দক্ষিণেশ্বরে কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেছেন। রানীমা প্রধান পুরোহিতের দায়িত্বভার অর্পণ করেছেন কামারপুকুরের রামকুমারের হাতে। তরুণ গদাধর দাদাকে পূজা-অর্চনাতে সাহায্য করবেন। ১ বছরের মধ্যে ছন্দপতন। আকস্মিকভাবেই ১৮৫৬ সালে মৃত্যু হল রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন গদাধর চট্টোপাধ্যায়। দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরের প্রধান পুরোহিতের দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন তিনি। মন্দিরের ঠিক উত্তর-পশ্চিম কোনে তরুণ পুরোহিতের জন্য একটি ছোট্ট ঘর বরাদ্দ করা হল। শোনা যায় এরপরেই রানী রাসমনির জামাতা মথুর বাবু গদাধর চট্টোপাধ্যায়ের নামকরণ রামকৃষ্ণ করেন, তবে এ নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে, কেউ কেউ বলেন যে তাঁর এই নামকরণ করেন ঠাকুরের অন্যতম গুরু তোতাপুরী। প্রথাগত শিক্ষা তাঁর কিছুই ছিলনা সেভাবে। কিন্তু মুখে মুখে বলে দিতেন হিন্দু শাস্ত্রের সমস্ত গূঢ়তত্ত্ব, অতি সরলভাষায়, একেবারে গল্পের ছলে। এজন্য তাঁকে গল্পের রাজাও বলা হয়। পরবর্তীকালে তাঁর এই বাণী সংকলিত হয় কথামৃত নামক গ্রন্থে। এরমধ্যে ঠাকুরের বিবাহ সম্পন্ন হয় কামারপুকুরের তিন মাইল উত্তর-পশ্চিমে জয়রামবাটী গ্রামের রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের কন্যা সারদাদেবীর সঙ্গে। সেটা ১৮৫৯ সালে। এতদিনে বঙ্গীয় শিক্ষিত সমাজ তাঁকে গুরুর আসনে বসিয়ে ফেলেছে। শিষ্য তালিকায় স্থান পেয়েছেন কেশব চন্দ্র সেন সমেত অন্যান্য গন্যমান্যরা। 

    ১ জানুয়ারী ১৮৮৬

     শরীরে মারণ রোগ বাসা বাঁধলে, ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকারের নির্দেশে তিনি নিজেকে গৃহবন্দী রাখেন প্রায় এক মাস। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি কাশীপুর উদ্যান বাড়িতে উপস্থিত রয়েছেন প্রায় ৩০ জন মতো গৃহী ভক্ত। সকলে হাতে ফুল নিয়ে উপস্থিত। আজ ঠাকুরের দর্শন পাওয়া যাবে। ঘড়ির কাঁটায় তখন ঠিক দুপুর তিনটে। দোতলা ঘর থেকে তিনি নেমে এলেন বাগানে। পরনে সেই চিরাচরিত পোশাক। লাল পেড়ে ধুতি। উপস্থিত গৃহী ভক্তরা তাঁদের হাতে রাখা ফুল ঠাকুরের চরণে অঞ্জলি দিতে থাকেন। কথিত আছে, ঠাকুর তখন নাট্যকার গিরিশ ঘোষকে বলেন, “হ্যাঁ গো,তুমি যে আমার নামে এত কিছু চারিদিকে বলো, তো আমি আসলে কী”? গিরিশ ঘোষ উত্তর দিলেন, “তুমিই নররূপ ধারী পূর্ণব্রহ্ম ভগবান, আমার মত পাপী তাপীদের মুক্তির জন্যই তোমার মর্ত্যে আগমন”। সবাই তখন ঠাকুরের চরণ স্পর্শ করল এবং ঠাকুর বললেন, “তোমাদের চৈতন্য হউক”।

    কিন্তু এদিনের উৎসবকে কল্পতরু (kalpataru Utsav) কেন বলা হয়?

    এর জন্য অবশ্য আমাদের পুরাণে ফিরতে হবে। হরিবংশ ইত্যাদি পুরাণে ‘কল্পতরু’র (kalpataru Utsav) উল্লেখ রয়েছে। দেবতা এবং অসুরদের মধ্যে সমুদ্র মন্থন হয়েছিল, পুরাণ অনুযায়ী সমুদ্র মন্থনকালে অমৃত, লক্ষ্মীদেবী, ঐরাবত ইত্যাদির সঙ্গে উঠে আসে একটি বৃক্ষ-ও। যাকে পারিজাত বৃক্ষ বলা হতো। পরবর্তীতে দেবরাজ ইন্দ্রের বিখ্যাত নন্দনকাননের স্থান পায় এই পারিজাত বৃক্ষ এবং সেখান থেকে স্ত্রী সত্যভামার আবদারে শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীতে নিয়ে আসেন এই বৃক্ষ। এই পারিজাত বৃক্ষকে-ই ‘কল্পতরু’ বলা হয়েছে। অর্থাৎ সেই বৃক্ষ, যার কাছে যা চাওয়া হয় তাই পাওয়া যায়। কল্পতরু উৎসবের (kalpataru Utsav) দিন ঠাকুরের ভক্তরা তাঁকে অবতার রূপে মেনে নেন। কথিত আছে, সেদিন উপস্থিত সমস্ত ভক্তের মনোবাঞ্ছা ঠাকুরের কৃপায় পূরণ হয়েছিল। ভক্তদের বিশ্বাস রয়েছে, এই দিন ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব সকলের মনের ইচ্ছা পূরণ করেন।

     

      দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ।    

LinkedIn
Share