Category: পরম্পরা

Get updated History and Heritage and Culture and Religion related news from the Madhyom news portal madhyom.com, West Bengal leading news portal Madhyom.com

  • Gouri Sen: ‘লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন’, কে এই গৌরী সেন, কেনই বা তিনি মিথ হয়ে উঠেছেন, জানেন কি ?

    Gouri Sen: ‘লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন’, কে এই গৌরী সেন, কেনই বা তিনি মিথ হয়ে উঠেছেন, জানেন কি ?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন। এই কথাটা আম বাঙালির কাছে বহুদিন আগেই প্রবাদবাক্যে পরিণত হয়েছে। এখন মনে হতেই পারে, আদৌ কি গৌরী সেন (Gouri Sen) বলে কেউ ছিলেন, না নিছক কাল্পনিক একটি নাম। আর যদি সত্যিই গৌরী সেন বলে কেউ থাকেন, তাহলে তাঁর বাড়ি কোথায়? তিনি বিপুল অর্থের অধিকারীই বা কী করে হলেন। আর তিনি কী এমন করেছিলেন যার জন্য তিনি এখনও মিথ হয়ে রয়েছেন। এসব প্রশ্ন সকলের মনেই ঘুরপাক খাওয়াটাই স্বাভাবিক। গৌরী সেনকে নিয়ে অজানা সেই সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছি আমরা।

    গৌরী সেনের বাড়ি কোথায়? তাঁর পারিবারিক অবস্থাই বা কেমন ছিল? (Gouri Sen)

    হুগলির সপ্তগ্রাম ছিল সেই সময় খুব সমৃদ্ধ নগর। প্রচুর বিত্তশালী মানুষের বসবাস ছিল। সেই সপ্তগ্রামেই গৌরী সেনের (Gouri Sen) পূর্ব পুরুষ অনিরুদ্ধ সেন বাস করতেন। পরবর্তীকালে কালের নিয়মে সরস্বতী নদী জৌলুস হারাতেই সপ্তগ্রামের গুরুত্ব কমতে শুরু করে। সরস্বতীর পরিবর্তে ভাগীরথী নদীতে রমরমিয়ে ব্যবসা শুরু হয়। হুগলিতে রাজকীয় বন্দর গড়ে ওঠে। ভাগীরথী নদীর মাধ্যমে চলে ব্যবসা বাণিজ্য। ভাগীরথী নদী তখন থেকে এই এলাকায় হুগলি নদী হিসেবে পরিচিত লাভ করে। সেই হুগলির বালিতে অনিরুদ্ধ সেন তাঁর দুই পুত্র নন্দরাম এবং পরাণচন্দ্রকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। নন্দরামের সাত সন্তান ছিল। তারমধ্যে গৌরীশঙ্কর ছিল সব থেকে ছোট। ১৬৪৮ সালে গৌরীশঙ্কর সেন (Gouri Sen) জন্মগ্রহণ করেন। এই গৌরীশঙ্করই পরবর্তীকালে দানবীর গৌরী সেন হিসেবে সুবে বাংলায় নাম করেন।

    গৌরী সেন কী করতেন? (Gouri Sen)

    গৌরী সেনের (Gouri Sen) পূর্ব পুরুষ হলধর সেন ছিলেন খুব প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তবে, তা ছিল সপ্তগ্রামে। হলধর সেনের বংশধর হিসেবে গৌরী সেনের বাবা নন্দরামের আর্থিক অবস্থা খুব ভালো ছিল না। ফলে, সামান্য পুঁজি নিয়ে মাত্র ১৬ বছর বয়সে গৌরী সেন ব্যবসা শুরু করেন। সেই সময় কলকাতার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী বৈষ্ণবচরণ শেঠের সঙ্গে অংশীদারী ব্যবসা শুরু করেন তিনি। সেই সময় মোটা কাপড়, শস্য, তেল, রাংতার ভালো বাজার ছিল। বড়বাজার ছিল তাঁর ব্যবসার ক্ষেত্র। বিভিন্ন জায়গা থেকে শস্য নিয়ে গৌরী সেন চাহিদা মতো নৌকা করেই জলপথে বিভিন্ন জায়গায় তা রফতানি করতেন। তাঁর সততা ও বুদ্ধির জোরে ব্যবসায় খুব তাড়াতাড়ি তিনি শ্রীবৃদ্ধি করেন।

    গৌরীশঙ্কর থেকে দানবীর গৌরী সেন হয়ে ওঠার কাহিনী কেমন ছিল, জানেন কি?

    প্রতিটি মানুষের জীবনে একটি টার্নিং পয়েন্ট থাকে। গৌরী সেনের (Gouri Sen) কর্মজীবনে এটাই ছিল টার্নিং পয়েন্ট। তবে, কাহিনীটা অলৌকিক মনে হতে পারে। জনশ্রুতি থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়। ১৬ বছর বয়সে ব্যবসা শুরু করার কয়েক বছরের মধ্যেই রফতানি কারবার তাঁর বেশ জমে ওঠে। ব্যবসার সূত্র ধরেই মেদিনীপুরে ভৈরবচন্দ্র নামে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁর সখ্যতা গড়ে ওঠে। সেই সময় রাংতার ব্যবসা রমরমিয়ে চলত। বন্ধুর চাহিদা মতো সাত নৌকা শুদ্ধ রাংতা মেদিনীপুরে ভৈরবের কাছে তিনি পাঠিয়ে দেন। পথে একজন সাধু তাঁর একটি নৌকায় তাঁকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। সাধু একটি নৌকায় চেপে বসেন। মেদিনীপুর ঘাটে নৌকা লাগে। ভৈরবের কর্মচারী রাংতা নিয়ে যাওয়ার জন্য নৌকায় ওঠেন। কিন্তু, অলৌকিভাবে সেই রাংতা সবই রুপোয় পরিণত হয়। ভৈরবচন্দ্র ওই রুপো আত্মসাত্ না করেই ফের হুগলি ঘাটে তা পাঠিয়ে দেন। চন্দননগরে জলপথ প্রহরী সব নৌকা বাজেয়াপ্ত করেন। হাকিমের কাছে গৌরী সেনকে তলব করা হয়। তবে, হাকিম তাঁকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে বেকসুর খালাস করে দেন।

    জনশ্রুতি রয়েছে, দেবাদিদেব মহাদেব সাধু বেশেই তাঁর নৌকায় চেপেছিলেন। রাংতা থেকে রুপোয় রুপান্তরিত হওয়া, হাকিমের বেকসুর খালাস করে দেওয়ার পিছনেও মহাদেব রয়েছেন। পরে, তাঁকে স্বপ্নাদেশ দিয়ে রুপো ভর্তি নৌকা নেওয়ার কথা বলা হয়। একইসঙ্গে স্বপ্নাদেশে শিবের মন্দির প্রতিষ্ঠার তিনি নির্দেশ পান। সেই রুপো বিক্রি করে রাতারাতি প্রচুর টাকার মালিক হলেন তিনি। স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পর তিনি বাড়িতে শিবের মন্দিরও প্রতিষ্ঠা করেন। বিপুল পরিমাণ অর্থের অধিকারী হয়ে তিনি সবসময় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। কারও অর্থের অভাবে বিয়ে হচ্ছে না, কেউ চিকিত্সা করাতে পারছেন না, তিনি ত্রাতা হয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়াতেন। অনেকে আবার মিথ্যা গরিবের কথা বলে তাঁর কাছ থেকে টাকা আদায় করে সেই টাকায় ফূর্তি করতেন। অনেকে তাঁকে বুঝে-শুনে অর্থ খরচ করার পরামর্শ দিতেন, তিনি তাঁদের বলেছিলেন, মহাদেবের কৃপায় আমি এই বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছি, এই অর্থের মালিক আমি নই, আমি ভান্ডারি মাত্র। তাই, যখন যার প্রয়োজন হবে তাঁকে আমি অর্থ দিয়ে সাহায্য করব। টাকার অভাবে কারও কোনও কাজ পড়ে থাকবে না। লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন। আমৃত্য সেই কথা তিনি রেখেছিলেন। তাঁর কাছে এসে কেউ খালি হাতে ফিরে যেতেন না।

    গৌরী সেনের মৃত্যু ও তাঁর উত্তরসূরীরা কোথায় বসবাস শুরু করেন?

    গৌরী সেনের (Gouri Sen) মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের লোকজন রাস্তায় মোহর ছড়িয়ে তাঁকে গঙ্গায় নিয়ে যান। হুগলির বালির বাড়িতেই তাঁর শ্রাদ্ধ হয়। তাঁর দুই সন্তান হরেকৃষ্ণ ও মুরলীধর। গৌরী সেনের মৃত্যুর পর মুরলীধর হুগলির বালির বাড়ি ছেড়ে কলকাতায় এসে বসবাস শুরু করেন। আর হরেকৃষ্ণ বালির বাড়িতে রয়ে যান। হরেকৃষ্ণের দুই সন্তান ছিলেন বিশ্বেশ্বর ও ভীমচাঁদ। বিশ্বেশ্বরের পরিবারের লোকজন সকলেই কলকাতায় চলে যান। ভীমচাঁদ ও তাঁর উত্তরসূরীরা হুগলির বালির বাড়িতেই বসবাস করেন। কালের নিয়মে তাঁর বংশধরেরা আজ কোথায় তা জানা নেই। তবে, মানুষের জন্য কাজ করা গৌরী সেনের সেই কাজের মধ্যে দিয়ে তিনি এখনও আম বাঙালির কাছে অমর হয়ে রয়েছেন।

     

    দেশের খবরদশের খবরসব খবরসবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

  • Freedom Struggle: রাষ্ট্রপতির শুভেচ্ছা বার্তায় মাতঙ্গিনী হাজরা ও কনকলতা বড়ুয়ার নাম, জানুন তাঁদের ইতিহাস

    Freedom Struggle: রাষ্ট্রপতির শুভেচ্ছা বার্তায় মাতঙ্গিনী হাজরা ও কনকলতা বড়ুয়ার নাম, জানুন তাঁদের ইতিহাস

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: স্বাধীনতা দিবসে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। তিনি বলেন, ‘‘আমি সম্মান জানাই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের (Freedom Struggle)। যাঁদের আত্মবলিদানের কারণেই আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে। মাতঙ্গিনী হাজরা, কনকলতা বড়ুয়ার মতো সমস্ত মহিলা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আমি শ্রদ্ধা জানাই যাঁরা ভারত মায়ের চরণে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন।’’ রাষ্ট্রপতি তাঁর শুভেচ্ছা বার্তায় মাতঙ্গিনী হাজরা এবং কনকলতা বড়ুয়ার নাম উল্লেখ করেছেন। আজকে আমরা জানবো এই দুই মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীর (Freedom Struggle) সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

    মাতঙ্গিনী হাজরার ইতিহাস

    পশ্চিমবঙ্গের স্বাধীনতা সংগ্রামী (Freedom Struggle) ছিলেন মাতঙ্গিনী হাজরা, ৭৩ বছর বয়সে ভারতছাড়ো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার সময় ব্রিটিশ সরকারের গুলি তাঁকে ঝাঁঝরা করে দেয়। তমলুকের এই স্বাধীনতা সংগ্রামী গান্ধী বুড়ি নামেও পরিচিত। জানা যায়, মাতঙ্গিনী হাজরার জন্ম হয়েছিল তমলুকের হোগলা নামক গ্রামে ১৮৬৯ সালে। তাঁর প্রাথমিক জীবন সম্পর্কে সেভাবে কোনও তথ্য পাওয়া যায় না। কিন্তু সরকারের আর্কাইভ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী মাতঙ্গিনী হাজরা (Freedom Struggle) ছিলেন একজন গরিব কৃষক কন্যা। যিনি তাঁর প্রথাগত শিক্ষা খুব বেশি দূর টেনে নিয়ে যেতে পারেননি। মাত্র ১২ বছর বয়সে মাতঙ্গিনী হাজরার বিবাহ হয় ত্রিলোচন হাজরার সঙ্গে। তাঁর স্বামীর বয়স তখন ৬০ বছর। মাতঙ্গিনী হাজরার যখন ১৮ বছর বয়স, তখন ত্রিলোচন হাজরা মারা যান। তাঁর কোনও সন্তান ছিল না। স্বামীর মৃত্যুর পরে মাতঙ্গিনী হাজরা সমাজ এবং দেশের কাজে নিজেদের উৎসর্গ করেন (Freedom Struggle)। ১৯ শতকের শুরুর দিকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ভারতবর্ষে নতুনভাবে বিস্তার লাভ করতে থাকে। এতেই প্রভাবিত হতে থাকেন মাতঙ্গিনী হাজরা। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী মণি ভৌমিকের লেখা ‘কোড নেম গড’ বইতে বলছেন, ‘‘মাতঙ্গিনী মহাত্মা গান্ধীর প্রতি খুব শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। যে কারণে তাঁকে গান্ধী বুড়ি নামে ডাকা হতো।’’  
    মাতঙ্গিনী হাজরা সম্পর্কে জানা যায় ১৯৩৩ সালে তমলুক শহরে একটি বিক্ষোভের সময় তিনি জাতীয় পতাকা হাতে গভর্নরের ব্যালকনির সামনে পৌঁছে যান এবং সেখানে স্লোগান দিতে থাকেন ‘গো ব্যাক লাট সাহেব’। ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে হেনস্তা করে। তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়। এবং ৬ মাস এর জন্য তাঁর জেল হয়।  ৬১ বছর বয়সে মাতঙ্গিনী হাজরা ফের একবার গ্রেফতার হন। ১৯৩০ সালে আইন অমান্যের সময় (Freedom Struggle)। 

    এরপর ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেন মহাত্মা গান্ধী। ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় ছয় হাজার বিক্ষোভকারীর (Freedom Struggle) সঙ্গে সামনে থেকে মিছিলে হাঁটতে থাকেন ৭৩ বছর বয়সী মাতঙ্গিনী হাজরা। এই বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্য ছিল যে তমলুক পুলিশ স্টেশনকে ব্রিটিশদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া। থানার সামনে মিছিল আসতেই পুলিশ বাধা সৃষ্টি করলে মাতঙ্গিনী হাজরা তাদেরকে আবেদন জানান যে মিছিলে গুলি যেন চালানো না হয়। এবং তখনই ব্রিটিশ পুলিশের রাইফেল গর্জে ওঠে তিন তিনবার। মাতঙ্গিনী হাজরার বুক ঝাঁঝরা করে দেয় ব্রটিশ পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি বলতে থাকেন ‘বন্দেমাতরম’ এরপরেই সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার। এবং ব্রিটিশ শাসন মুক্ত হয় তমলুক। পরবর্তীকালে ১৯৪৪ সালে মহাত্মা গান্ধীর অনুরোধে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার ভেঙে দেওয়া হয়।

    কনকলতা বড়ুয়ার ইতিহাস 

    কনকলতা বড়ুয়াছিলেন অসমের অন্যতম স্বাধীনতা সংগ্রামী। ভারতছাড়ো আন্দোলনে তিনি শহীদ হয়েছিলেন। কনকলতা বড়ুয়ার যখন ১৭ বছর বয়স তখন তিনি মৃত্যু বাহিনীতে যোগ দেন। অসমের গোহপুর পুলিশ স্টেশনের সামনে ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৪২ সালে বিক্ষোভরত (Freedom Struggle) অবস্থায় পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয় কনকলতা বড়ুয়ার শরীর। ডিব্রুগড় ইউনিভার্সিটি প্রফেসর শিলা বোড়া বলছেন, ‘‘ওই ঘটনার মাত্র দুদিন আগেই তিনি মৃত্যু বাহিনীতে যোগদান করেছিলেন। গুলিতে লুটিয়ে পড়ার পরেও যতক্ষণ তিনি বেঁচে ছিলেন ততক্ষণ পর্যন্ত জাতীয় পতাকাকে তিনি মাটিতে পড়তে দেননি।’’

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।

  • Howrah to Hooghly Rail: ১৫ অগাস্ট ১৮৫৪, হাওড়া-হুগলি রেল চলাচল শুরু, জানুন সেই ইতিহাস

    Howrah to Hooghly Rail: ১৫ অগাস্ট ১৮৫৪, হাওড়া-হুগলি রেল চলাচল শুরু, জানুন সেই ইতিহাস

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ১৮৪৫ সালের জুন মাসে ইস্ট ইন্ডিয়া রেল কোম্পানি (Howrah to Hooghly Rail) প্রতিষ্ঠিত হয়। যার প্রাথমিক মূলধন ছিল এক কোটি পাউন্ড। এই কোম্পানির উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লির মধ্যে একটি রেল যোগাযোগ স্থাপন করা। এর অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন রোল্যান্ড ম্যাকডোনাল্ড স্টিফেনসন। ইনি পরবর্তীকালে নাইট উপাধিও পেয়েছিলেন। বলা হয় যে স্টিফেনসনের রক্তেই নাকি রেলপথ ছিল। কারণ তাঁর মামা ছিলেন কিংবদন্তি জর্জ স্টিফেনসন। যাঁকে ‘ফাদার অফ রেলওয়েস’ বলা হয়। এর পরবর্তীকালে রোল্যান্ড স্টিফেনসন কলকাতা থেকে দিল্লি পর্যন্ত প্রস্তাবিত রেলপথের একটি সমীক্ষা করেন। এর পরের তিন বছর ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানি ব্রিটিশ সরকারের অনুমতি এবং অনুমোদন না পাওয়ার জন্য কাজ আটকে ছিল। পরবর্তীকালে কলকাতা থেকে রানীগঞ্জ পর্যন্ত ১৮৫০ সালে ট্রেন চালানোর (Howrah to Hooghly Rail) জন্য একটি অনুমোদন পাওয়া যায়। এরপরে তিন বছর স্টিফেনসন রেলওয়ে ট্রাকগুলি পর্যবেক্ষণ করেন এবং তিনি দেখেন যে তার মধ্যে কলকাতা থেকে পান্ডুয়া পর্যন্ত ট্রাক রেল চালানোর জন্য প্রস্তুত ছিল। জানা যায়, পরবর্তীকালে গুডউইল জাহাজে রেলের কোচ আসছিল ভারতে। যা সাগরদ্বীপের কাছে ডুবে যায়। এরপর প্রধান ইঞ্জিনিয়ার জর্জ টার্নবুল কলকাতার এক গাড়ি প্রস্তুত সংস্থার থেকে ডিজাইন করেন। এর ফলেই সময় নষ্ট হতে থাকে। পরবর্তীকালে ব্রিটেন থেকে ইঞ্জিন আনার কথা ছিল। কিন্তু তা ভুল করে অস্ট্রেলিয়াতে চলে যায় ভুল যোগাযোগের কারণে। অন্যদিকে ফরাসি সরকারেরও বাধার মুখে পড়ে রেলপথ নির্মাণের কাজ। তারা বলে যে চন্দননগরের ওপর দিয়ে রেল যাবে না। এভাবেই পিছতে থাকে ভারতে রেলপথে নির্মাণের কাজ।

    ২৮ জুন ১৮৫৪ হাওড়া-পান্ডুয়া রেল চলাচল

    পরবর্তীকালে ২৮ জুন ১৮৫৪ সালে হাওড়া থেকে পান্ডুয়া পর্যন্ত প্রথম সফলভাবে রেল ইঞ্জিন চলে (Howrah to Hooghly Rail)। এবং হাওড়া থেকে হুগলি পর্যন্ত একটি রেল ট্রায়াল রান সম্পন্ন করে ১১ অগাস্ট ১৮৫৪। সেখান ইঞ্জিনে ইন্ডিয়ান গেজেটের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। পরের দিন এ নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্টও বের করা হয়। সেই ট্রেন হাওড়া থেকে ছাড়ে সকাল সাড়ে আটটায় এবং হুগলি পৌঁছায় সকাল থেকে এগারোটায়। সেই ট্রেনে উপস্থিত সাংবাদিকরা বলেন যে জার্নি ছিল খুবই সুখকর। সেখানে প্রস্তাব দেওয়া হয় কলকাতা এবং হাওড়ার মধ্যে একটি ব্রিজ স্থাপনের।

    ১৫ অগাস্ট ১৮৫৪ হাওড়া-হুগলি রেল চলাচল (Howrah to Hooghly Rail)

    ১৮৫৪ সালের ১২ অগাস্ট ইন্ডিয়ান গেজেট নিউজ পেপারে নোটিশ দেওয়া হয়, চলতি মাসের ১৫ তারিখ মঙ্গলবার হাওড়া থেকে হুগলির মধ্যে ট্রেন চলবে। সেখানে বলা হয়, হাওড়া থেকে এই ট্রেন ছাড়বে সকাল সাড়ে দশটায় এবং বিকাল সাড়ে পাঁচটায়। অন্যদিকে হুগলি থেকে (Howrah to Hooghly Rail) এই ট্রেন ছাড়বে সকাল ৮টা ১৩ এবং বিকাল ৩টে ৩৮-এ। এর মধ্যবর্তী স্টপেজ গুলি হল বালি, শ্রীরামপুর, চন্দননগর। এবং ১ সেপ্টেম্বর থেকে ট্রেন চলাচল করবে হাওড়া থেকে পান্ডুয়া পর্যন্ত। যে সমস্ত নাগরিক মান্থলি পাস নিতে আগ্রহী তাঁদেরকে আবেদন করতে বলা হচ্ছে নিকটবর্তী রেলস্টেশনে (Howrah to Hooghly Rail)। তারপরে এই মান্থলি পাশের ভাড়া স্থির করা হবে। এবং কোনও মান্থলি পাস আগামী বছরের এক জানুয়ারির আগে শুরু হবে না। এই নোটিসের নিচে নাম লেখা ছিল রোনাল ম্যাকডোনাল্ড এবং তারিখ দেখেছিল ১২ অগাস্ট ১৮৫৪ কলকাতা।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।

  • Heritage Building: হাওড়ায় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি যেন আস্ত সংগ্রহশালা

    Heritage Building: হাওড়ায় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি যেন আস্ত সংগ্রহশালা

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: অমর কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা একটিও গল্প বা উপন্যাস পড়েননি, এমন বাঙালি বোধহয় বিরল। হুগলির দেবানন্দপুর, পরে বিহারের ভাগলপুর, সাবেক বার্মা অধূনা মায়ানমার, হাওড়া শহরের বাজেশিবপুর ইত্যাদি জায়গায় থেকেছেন শরৎবাবু। তবে তাঁর শেষ জীবনের আবাসস্থল হাওড়া জেলার পশ্চিম সীমান্তের গ্রাম সামতাবেড় (Heritage Building)। ১৯২৬ থেকে ১৯৩৮, প্রায় বারো বছর তিনি কাটিয়েছিলেন নিজের কেনা এই বাড়িটিতে। জীবনের শেষ উপন্যাস বিপ্রদাস লিখেছিলেন এখানে বসেই।

    স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি (Heritage Building) দেখতে আসেন বহু মানুষ

    প্রচুর মানুষ এখানে আসেন তাঁর স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি দেখতে। দেখতে আসেন বহু কালজয়ী গল্প-উপন্যাসের স্রষ্টার সাধনস্থল। ২০০৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার হেরিটেজ অ্যাক্ট আইন অনুসারে এটিকে ঐতিহ্য ভবন (Heritage Building) ঘোষণা করে। অমর কথা সাহিত্যিকের আবক্ষ মূর্তি উদ্বোধন করেন তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত। লাল টালিতে ছাওয়া দোতলা বার্মিজ প্যাটার্নের বাড়িটি তাঁর বার্মাতে থাকার কথা মনে করিয়ে দেয়। নিস্তব্ধ পরিবেশ যেন মন কেমনের অনুভূতি বহন করে। নীরব গাম্ভীর্য সমীহ আদায় করে নেয়। অনতিদূরেই রূপনারায়ণ নদীর তীর বেড়ানোর পক্ষে আদর্শ। কলকাতা বা অন্যান্য জায়গা থেকে অনেকেই আসেন এখানে পিকনিক করতে। মানুষ আসেন ঢিল ছোড়া দূরত্বে রূপনারায়ন নদীর তীরের পিকনিক স্পটে। এপারে হাওড়া ওপারে মেদিনীপুর। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছর জানুয়ারিতে শুরু হয় শরৎ মেলা। পানিত্রাস স্কুল মাঠে চলে এক সপ্তাহ ধরে।

    কীভাবে যাবেন?

    হাওড়া স্টেশন থেকে দক্ষিণ পূর্ব রেলপথে হাওড়া-খড়্গপুর শাখার দেউলটি স্টেশন থেকে মাত্র পনেরো-কুড়ি মিনিটের পথ সামতাবেড়। সরাসরি গাড়িতে করেও আসা যায়। সাঁতরাগাছি হয়ে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে। এ পথে টোটো চলে বেশি। স্টেশন থেকে টোটো বুকিং করেও আসা যায়। ঘুরে আসা যায় কাছাকাছি নাউপালা বাংলো। স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে শরৎবাবুর বাড়ি শরৎ কুঠী (Heritage Building) বলেই পরিচিত হয়ে গিয়েছে। পানিত্রাস রোড হয়ে পঞ্চায়েতের বানানো ঢালাই রাস্তা ধরে মিনিট পাঁচেক গেলেই শরৎচন্দ্রের বাড়ি।

    গড়ে উঠেছে সংগ্রহশালা

    ব্যক্তিগত উদ্যোগে শরৎচন্দ্রের ব্যবহৃত জিনিসপত্র নিয়ে একটি সংগ্রহশালা গড়ে উঠেছে এখানে। সাধারণত সকাল ৭টা থেকে ১২টা ও বিকেল ৪টে থেকে ৫.৩০ পর্যন্ত বাড়িটি সাধারণের জন্য খোলা থাকে। এখানে রয়েছে শরৎচন্দ্রের ব্যবহৃত বুক সেলফ, খাট, আরাম কেদারা, গড়গড়া, ভালভ্ সিস্টেম রেডিও, দেওয়াল ঘড়ি, রাধাকৃষ্ণের মূর্তি প্রভৃতি। রয়েছে হোমিওপ্যাথি ওষুধের শিশি যা তিনি গরীব মানুষের অসুখ-বিসুখে দিতেন। সবই বেশ ঝকঝকে তকতকে অবস্থায় রয়েছে। আর রয়েছে রোমাঞ্চকর অনুভূতি জাগানো সেই টেবিল ও চেয়ার। যেখানে বসেই সৃষ্টি হয়েছে মর্মস্পর্শী সাহিত্যের মণিমাণিক্য মহেশ, অভাগীর স্বর্গ, পল্লিসমাজ প্রভৃতি। বাড়ির ভিতরে তাঁর নিজের হাতে লাগানো পেয়ারা গাছ ও উল্টো দিকের জল টলটলে দিঘিটি হলো রামের সুমতির পটভূমি। গল্প অনুযায়ী রামের অতি প্রিয় এই গাছটি ও কার্তিক গণেশ খ্যাত দিঘির মাছ দুটির স্মৃতি যেন বইয়ের পাতা থেকে বাস্তবে উঠে আসে। পল্লিসমাজের রমেশ, রমা প্রভৃতি চরিত্রগুলি আজও যেন হেঁটে চলে ফেরে এখানে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গেও এই বাড়িটি (Heritage Building) জড়িয়ে রয়েছে। পরাধীন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অন্যতম আশ্রয়স্থল ছিল এই বাড়ি। এখানে একসময় এসেছেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, বিপিনবিহারী গাঙ্গুলী, বাঘাযতীন প্রমুখ।

    সময় বের করে যাওয়াই যায়

    শহর কলকাতার যান্ত্রিক জীবন থেকে একটু সময় বের করে আসাই যায় সামতাবেড় (Heritage Building)। খানিকটা গ্রাম্য পরিবেশ, সবুজের সমারোহ, নদীর ধার ভালোই লাগবে। মনে সাহিত্য ভাবনা না এলেও এক অন্য অনুভূতি যে হবেই তা হলফ করে বলা যায়। আর শরৎচন্দ্রের বাড়ি এলে তো নিজেকে হারিয়ে ফেলাই হবে! একটু অনিয়ম হবে? হোক না! শ্রীকান্তরা কোনকালেই বা নিয়ম মেনে চলতে চেয়েছে? শ্রীকান্তরা যে চিরকালের মূর্তিমান অনিয়ম!

     

    দেশের খবরদশের খবরসব খবরসবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

  • Vidyasagar: ২৯ জুলাই বিদ্যাসাগরের প্রয়াণ দিবস! জানুন তাঁর সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপলব্ধি

    Vidyasagar: ২৯ জুলাই বিদ্যাসাগরের প্রয়াণ দিবস! জানুন তাঁর সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপলব্ধি

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ২৯ জুলাই ১৮৯১ সালে মহাপ্রয়াণ হয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের (Vidyasagar)। বাংলার নবজাগরণের অন্যতম ঋত্বিক ছিলেন তিনি। ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তাঁর জীবনভর সংগ্রাম ইতিহাসে স্থান পেয়েছে। বিধবা বিবাহ প্রচলনের তিনিই ছিলেন অন্যতম হোতা।  বোধোদয়, বর্ণপরিচয়, কথামালা, চরিতাবলী, ঋজুপাঠ প্রভৃতি অসংখ্য গ্রন্থ তিনি রচনা করেছেন ।  এছাড়াও রঘুবংশ, সর্বদর্শ সংগ্রহ, কুমারসম্ভব , কাদম্বরী, মেঘদূত, উত্তররামচরিত, অভিজ্ঞান শকুন্তলম প্রভৃতি গ্রন্থ সম্পাদনা করেন। ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভগবতী দেবীর সন্তান পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (Vidyasagar) ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বিদ্যাসাগরের বর্ণনা

    কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিদ্যাসাগর (Vidyasagar) সম্পর্কে বলছেন, ‘‘গোপালের জীবনী লেখকের নিজের জীবনে, গোপালের সহিত কোনও কোনও অংশে এবং রাখালের সহিত বেশীরভাগ অংশের মিল পাওয়া যেত, প্রতিবেশী মথুর মণ্ডলের স্ত্রীকে রাগানোর জন্য যে প্রকার সভ্য বিগর্হিত আচরণ তিনি করেছিলেন, বর্ণপরিচয়ে সর্বজননিন্দিত রাখাল বেচারাও বোধহয় সেরুপ আচরণ কখনও করেনি। এই ক্ষীণতেজ দেশে আর কতগুলো রাখাল এবং তার জীবনী লেখকের আবির্ভাব ঘটলে বাঙালি জাতির শীর্ণ চরিত্রের অপবাদ ঘুচে যেতে পারতো।’’ কবিগুরুর আরও সংযোজন , ‘‘এই তার্কিক, দাম্ভিক, হৃদয়হীন জাতির প্রতি বিদ্যাসাগরের (Vidyasagar) ছিল এক তীব্র ঘৃণা , তিনি নিজের মধ্যে যা উপলব্ধি করতেন , চারপাশে আর কারও মধ্যে খুঁজে পেতেন না। তাঁর চারপাশের লোকজনেরা ভুরি পরিমাণ  বাক্য রচনা করতে পারত কিন্তু তিল পরিমাণ আত্মত্যাগ করতে পারতো না। বিদ্যাসাগরের (Vidyasagar) চরিত্র সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে জয় লাভ করেছে । যে অবস্থায় মানুষ নিজের নিকট নিজেই প্রধান দয়ার পাত্র সে অবস্থায় তিনি অন্যদের দয়া করতেন।  স্কলারশিপের টাকার পুরোটাই ব্যয় করতেন সহপাঠীদের মিষ্টি খাওয়াতে। প্রচুর সম্পত্তি নিয়েও কোনও রাজপুত্র যা পাননি এই দরিদ্র পিতার দরিদ্র সন্তান পেলেন সেই সর্বোচ্চ সম্মান ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

  • Indian Railways: ট্রেনের টিকিটের ৫ অঙ্কের নম্বরে লুকিয়ে কোন অজানা রহস্য?

    Indian Railways: ট্রেনের টিকিটের ৫ অঙ্কের নম্বরে লুকিয়ে কোন অজানা রহস্য?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ট্রেনে চড়তে কে না ভালোবাসে? আট থেকে আশি, সবারই ট্রেনের (Indian Railways) প্রতি এক অগাধ ভালোবাসা। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াতে সব থেকে আরামদায়ক ও দ্রুততম মাধ্যমও হল ট্রেন। আর এই পরিষেবা ভারতীয়রা ১৭০ বছর ধরে পেয়ে আসছেন। এর মধ্যেই ঘটে গিয়েছে অনেক বিবর্তন, কয়লার ইঞ্জিন থেকে ডিজেল চালিত ইঞ্জিন আর এখন ইলেকট্রিক ইঞ্জিন। এই ভারতীয় রেলের এমন কিছু নিয়মবিধি আছে, যেগুলি হয়তো অনেকেরই অজানা। আসলে সাধারণ মানুষ সেগুলি নিয়ে ভাবার কথা মাথায়ও আনতে পারেন না। কিন্তু সেগুলি জানলে অবাকই হবেন। আজ আমরা এই প্রতিবেদনে এমনই অজানা তথ্য জানব ভারতীয় রেলের টিকিটের সম্বন্ধে। টিকিটের গায়ে থাকে একটি ৫ অঙ্কের নম্বর, যার মধ্যে লুকিয়ে থাকে অসংখ্য তথ্য।

    ট্রেনের (Indian Railways) টিকিটের নম্বরের মধ্যে কী তথ্য লুকিয়ে থাকে?

    ট্রেনের টিকিট লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন রয়েছে অসংখ্য নম্বর। প্রত্যেকটি নম্বরের অনেক তাৎপর্য আছে। আপনার ভ্রমণ ও ট্রেন সংক্রান্ত প্রায় সমস্ত নথি এই টিকিটের মধ্যেই থাকে। তার মধ্যে যেটি সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বহন করে, সেটি ৫ অঙ্কের একটি নম্বর। এই সংখ্যাটি আপনার গন্তব্যের সমস্ত খুঁটিনাটি বলে দিতে পারে। জেনে নেওয়া যাক এই রকমই কিছু লুকিয়ে থাকা তথ্য। 

    ট্রেনের (Indian Railways) টিকিটের মধ্যে থাকা 0 থেকে 9 নম্বরগুলির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। যদি আপনার টিকিটের প্রথমে 0 নম্বরটি থাকে, তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে সেটি কোনও স্পেশাল ট্রেন, অর্থাৎ এই ট্রেনটি কোনও হলিডে স্পেশাল বা গ্রীষ্মকালীন স্পেশাল বা অন্যান্য কোনও স্পেশাল ট্রেন হতে পারে। 
    আবার অপরদিকে আপনার টিকিটের প্রথম সংখ্যাটা যদি 1 অথবা 2 হয়, তাহলে আপনাকে বুঝতে হবে এই ট্রেনটি দীর্ঘ পথ যাত্রা করে। আবার এই দুটি সংখ্যা থাকলে আপনাকে বুঝতে হবে এটি শতাব্দী, রাজধানী,গরিব রথ, দূরন্তর মতো বিশেষ শ্রেণির ট্রেন।

    আরও কিছু নম্বরের উদাহরণ, যা বিশেষ মানে বহন করে

    টিকিটের প্রথম সংখ্যাটি যদি 3 হয়, তবে জানতে হবে এই ট্রেনটি কলকাতা শহরতলির একটি ট্রেন (Indian Railways)। আবার মেট্রো শহর যেমন নয়াদিল্লি সেকেন্দ্রাবাদ, চেন্নাই ইত্যাদি শহরের শহরতলির ট্রেন হলে এতে টিকিটের প্রথম সংখ্যা 4 দিয়ে শুরু হবে। প্রথমে যদি 5 থাকে, তাহলে জানতে হবে এটি একটি যাত্রীবাহী ট্রেন। 6 ও 7 থাকলে সেটি যথাক্রমে MEMU ও DEMU ট্রেন। আর কিছু সংরক্ষিত ট্রেনের জন্য টিকিট নম্বর 8 দিয়ে শুরু হয়। আর মুম্বই সাবারবান ট্রেনের জন্য প্রথম সংখ্যাটি থাকে 9।

    দ্বিতীয় সংখ্যাটিরও বিশেষ অর্থ থাকে, কী সেটি?

    দ্বিতীয় সংখ্যাটি রেলের বিভাগ সম্বন্ধে আমাদের জানান দেয়। যদি কোনও রেলের (Indian Railways) প্রথম সংখ্যাটি 0, 1 অথবা 2 দিয়ে শুরু হয়, তাহলে বাকি 4 টি সংখ্যা রেলের জোন ও বিভাগ সমন্ধে আমাদের জানান দেয়। 
    সেন্ট্রাল রেলওয়ে, নর্থ সেন্ট্রাল রেলওয়ে, ওয়েস্ট সেন্ট্রাল রেলওয়ের জন্য দ্বিতীয় সংখ্যাটি থাকবে 0।
    পূর্ব মধ্য রেলওয়ে এবং পূর্ব রেলের জন্য থাকবে 3।
    উত্তর-উত্তর পশ্চিম এবং উত্তর মধ্য রেলওয়ের জন্য থাকে 4 নম্বর।
    জাতীয় পূর্ব ও উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের জন্য থাকে 5 নম্বর।
    দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম রেলওয়ের জন্য থাকে 6।
    দক্ষিণ-মধ্য এবং দক্ষিণ-পশ্চিম রেলওয়ের জন্য 7।
    সাউদার্ন ইস্টার্ন এবং ইস্ট কোস্ট রেলওয়ের জন্য থাকে 8।
    উত্তর-পশ্চিম এবং পশ্চিম মধ্য রেলওয়েতে থাকে 9।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

  • Jarawas: ১৫ বছর একসঙ্গে ওঠাবসা, জারোয়াদের কাছের মানুষ পদ্মশ্রী ডাঃ রতনচন্দ্র কর

    Jarawas: ১৫ বছর একসঙ্গে ওঠাবসা, জারোয়াদের কাছের মানুষ পদ্মশ্রী ডাঃ রতনচন্দ্র কর

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সমগ্র পৃথিবীর এমন অনেক উপজাতি বা আদিবাসী গোষ্ঠী আছে, যাঁরা এখনও সভ্য সমাজের আলোতে পৌঁছাতে পারেনি। সেরকমই ভারতীয় উপ মহাদেশের এক জাতিগোষ্ঠী হল জারোয়া, যাঁদের বসবাস দক্ষিণ আন্দামান এবং মধ্য আন্দামানের পূর্ব দিকে। এই আদিবাসী গোষ্ঠী (Jarawas) তাঁদের অঞ্চল ছাড়া বাকি সভ্য সমাজের সাথে যে কোনও রকম সম্পর্ক রাখা এড়িয়ে চলে। তাঁরা নিজস্ব সমাজ, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বর্তমানে এই আদিবাসী গোষ্ঠীর আনুমানিক সংখ্যা ২০০ থেকে ৪০০-র মধ্যে। এই জারোয়া নামের অর্থ “পৃথিবীর মানুষ”। শুনলে অবাক হবেন, এক বাঙালি ডাক্তার এই জারোয়া আদিবাসী গোষ্ঠীর সাথে জড়িয়ে ছিলেন দীর্ঘ সময় ধরে।

    কী পরিচয় এই ডাক্তারের?

    ডাক্তার রতনচন্দ্র কর একজন জেনারেল ফিজিশিয়ান এবং কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের একজন প্রাক্তন ছাত্র। তিনি আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে একজন স্বাস্থ্য আধিকারিক হিসেবে কাজ করেছেন এবং দীর্ঘ সময় আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের জারোয়া উপজাতিদের (Jarawas) সামনে থেকে চিকিৎসা করেছেন। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে থাকাকালীন নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি “জারোয়াস অফ দ্য আন্দামান” নামক একটি বইও লেখেন। ভারত সরকার সাম্প্রতিক বছরে তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করেছে।

    কীভাবে তিনি জারোয়াদের (Jarawas) সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেন?

    প্রচলিত তথ্য অনুযায়ী, জারোয়া (Jarawas) উপজাতিরা যেহেতু সভ্য সমাজ থেকে অনেকটাই পিছিয়ে, তাই এঁরা সভ্য সমাজের মানুষদের সাথে সম্পর্ক রাখা এড়িয়ে চলে। ১৯৯৮ সালে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে হামের মতো রোগের প্রাদুর্ভাব খুব বেড়ে যায়। সেই সময় ডক্টর রতনচন্দ্র কর নিজে সমস্ত ঝুঁকি নিয়ে জারোয়াদের মধ্যে উপস্থিত থেকে তাঁদের সামনে থেকে চিকিৎসা করেন। তিনি জারোয়াদের এই সময় খুব সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু এটি মোটেও প্রথমে সহজ কাজ ছিল না। যখন জারোয়ারা হামের মতো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করে, তখন অনেকে মারাও গিয়েছিল। এই ঘটনাটি উপজাতি পরিদর্শনকারী কল্যাণ কর্মকর্তাদের নজরে এলে কেন্দ্র সরকারকে তাঁরা অনুরোধ করে, তাঁদের চিকিৎসার জন্য একজন ডাক্তার নিয়োগ করার। এই সূত্রেই ডাক্তার রতনচন্দ্র করের জারোয়াদের সাথে সংযোগ স্থাপনের ভিত তৈরি হয়।

    প্রথম দিন জারোয়াদের (Jarawas) মাঝে পৌঁছানোর অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

    ডাক্তার রতনচন্দ্র কর যেদিন প্রথম জারোয়া দ্বীপে গিয়ে পৌঁছান, সেদিন তিনি লক্ষ্য করেন, তীর-ধনুক হাতে অনেক জারোয়া তাঁর দিকে সন্দেহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। প্রথমে মনে হয়েছিল, তাঁরা যেন সভ্য সমাজের মানুষ দেখে ভীত। কিন্তু সেই উপদ্বীপে থাকা জারোয়া (Jarawas) বাচ্চাদের জন্য ডাক্তার নারকেল এবং কলা নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁদের উপহার দেওয়ার জন্য। সেই উপহার দেওয়াতে তাঁদের ডাক্তারের ওপর বিশ্বাস জন্মায় এবং তাঁকে একটি কুঁড়ে ঘরে নিয়ে যায় তাঁরা। সেখানে তাঁকে মাংস রান্না করে খাওয়ায় জারোয়ারা। এদের কাছে জারোয়া ভাষা শিখেছিলেন তিনি, যাতে আরও ভালো সংযোগ স্থাপন করতে পারেন।

    ভাষার সমস্যা কীভাবে কাটালেন?

    জারোয়াদের আস্থা অর্জন এবং তাঁদের সাথে তাদের মতানুযায়ী আচরণ করা মোটেও সহজ কাজ ছিল না ডাক্তারের পক্ষে। সেখানকার সমস্ত মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য তাঁকে এক দরজা থেকে আরেক দরজাতে ভিজিট করতে হয়েছিল। সেখানে ছিল ভীষণ ভাষার বাধা। তাই তাঁদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছিল। আস্তে আস্তে তিনি তাঁদের চিকিৎসার জন্য তাঁদের বিশেষ সম্মান প্রদান করেন এবং ওষুধগুলির সঠিক ব্যবহার তাঁদেরকে শেখাতে শুরু করেন। এসবের মাঝেই কয়েক মাসের মধ্যে তিনি জারোয়া ভাষা শিখেছিলেন এবং এক বছরের মধ্যে তিনি সাবলীল ভাবে জারোয়া (Jarawas) ভাষায় কথা বলতে শুরু করেন। অপরদিকে জারোয়াদেরও তিনি অনেক বাংলা ভাষা শিখিয়েছিলেন। আস্তে আস্তে ডাক্তারের প্রতি এবং তাঁর চিকিৎসার প্রতি জারোয়ারা সম্মান প্রদর্শন করতে থাকে এবং খুব পরিচিত এবং কাছের মানুষ হয়ে ওঠেন তিনি।

    পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত

    ডাক্তার রতনচন্দ্র কর এই জারোয়া (Jarawas) দ্বীপে ১৯৯৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তাঁদের সেবায় এবং চিকিৎসায় নিয়োজিত ছিলেন। এখনও পর্যন্ত সেখানকার মানুষ তাকে মনে রেখেছে।
    সম্প্রতি ২০২৩ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করেছে এবং তিনি বর্তমানে জারোয়াদের ডাক্তার নামেই পরিচিতি লাভ করেছেন।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

  • Durga Puja: দুর্গাপুজোর কাউন্টডাউন শুরু! কীসে আসছেন দেবী? গমনই বা কীসে?

    Durga Puja: দুর্গাপুজোর কাউন্টডাউন শুরু! কীসে আসছেন দেবী? গমনই বা কীসে?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দুর্গাপুজোর কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। রথের দিন থেকেই দুর্গাপুজোর (Durga Puja) প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। সেদিন কাঠামো পুজো হয়। কলকাতা সহ রাজ্যের বেশ কিছু জনপ্রিয় পুজোতে খুঁটি পুজোর কাজও সম্পন্ন হয় সেদিন। এবারের দুর্গাপুজোর মহালয়া ১৪ অক্টোবর। সেসময় প্রকৃতি সাজবে নতুন ভাবে। কাশফুলে ভরে যাবে চারিদিক। প্রকৃতি জানান দেবে ‘মা আসছেন’।

    ২০২৩ সালে দেবীর আগমন ও গমন কীসে হবে? এর ফলাফলই বা কী?

    হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী ২০২৩ সালে দেবী দুর্গার আগমন হবে ঘোড়ায়। শাস্ত্র বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘোড়ায় আগমন খুব একটা শুভ বার্তা দেয় না। পঞ্জিকা অনুসারে ঘোড়ায় আগমন ‘ছত্রভঙ্গ’এর প্রতীক। ফলে দেবীর আগমন কালে ধ্বংস ও অস্থিরতার বার্তা রয়েছে। আবার মা উমার (Durga Puja) গমনও হবে ঘোড়ায়। অর্থাৎ ফলাফল সেই একই থাকছে। অস্থিরতা ও ধ্বংস।

    দেবীর (Durga Puja) আগমন ও গমনে সপ্তমী তিথি তাৎপর্যপূর্ণ কেন?

    হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, প্রতি বছর দেবীর আগমন ও গমনের বাহন নিয়ে নির্দিষ্ট ব্যাখা রয়েছে। কোনওটাতে শুভফল এবং কোনওটাতে অশুভ! শাস্ত্র বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘‘প্রতি বছরের দুর্গাপুজোয় সপ্তমীর দিনটি সপ্তাহের কোন বারে পড়ছে তার ওপর নির্ধারিত হয় দেবী কোন বাহনে আসছেন, সেই বিষয়টি। চলতি বছরে দুর্গাপুজোর সপ্তমী পড়েছে শনিবার।’’ চলতি বছরে দেবীর আগমন ও গমন দুটোই ঘোড়াতে। ঘোড়ায় আগমন বা গমন এমনিতেই অশুভ মানা হয়। তার উপর দেবীর আগমন ও গমন একই বাহনে হলে, তা খুব একটা শুভ ফল দেয় না বলেই জানাচ্ছেন শাস্ত্রবিদরা।

    ২০২৩ সালের দুর্গা পুজোর (Durga Puja) নির্ঘণ্ট

    মহালয়া- ১৪ অক্টোবর। এদিন পিতৃপক্ষের অবসান ঘটে। দেবীপক্ষের সূচনা হয় সেদিন থেকেই। মহালয়ার পরের দিন দেবীপক্ষের প্রতিপদ তিথি শুরু হয়।

    মহাষষ্ঠী- ২০ অক্টোবর, ২০২৩, শুক্রবার

    মহাসপ্তমী- ২১ অক্টোবর, ২০২৩, শনিবার

    মহাঅষ্টমী – ২২ অক্টোবর, ২৩২৩, রবিবার

    মহানবমী- ২৩ অক্টোবর, ২০২৩, সোমবার

    বিজয়া দশমী- ২৪ অক্টোবর, ২০২৩, মঙ্গলবার

    কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো- ২৮ অক্টোবর, ২০২৩, শনিবার

    কালীপুজো – ১২ নভেম্বর, ২০২৩, রবিবার

    ভাইফোঁটা- ১৪ নভেম্বর, ২০২৩, মঙ্গলবার

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

  • Tala Tank: কলকাতায় মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে টালা ট্যাঙ্ক, চমকপ্রদ এর ইতিহাস!

    Tala Tank: কলকাতায় মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে টালা ট্যাঙ্ক, চমকপ্রদ এর ইতিহাস!

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ব্রিটিশদের কথা ভাবলে ভারতীয়দের ওপর অত্যাচার, জোর-জুলুমের কথাই বেশি মাথায় আসে। কিন্তু তাদের শাসিত ভারতে ব্রিটিশরা এমন সব স্থাপত্য দিয়ে গিয়েছে, যেগুলির ভূমিকাও উপেক্ষা করার নয়। ব্রিটিশদের এই ধরনের কৃতিত্বের মধ্যে অন্যতম হল কলকাতায় অবস্থিত ‘টালা ট্যাঙ্ক’। এই সুবিশাল ওভারহেড রিজার্ভারটি শুধু ভারত নয়, সমগ্র বিশ্বের বৃহত্তম ওভারহেড জলের ট্যাঙ্ক (Tala Tank)। এটি কোনও সাধারণ ট্যাঙ্ক নয়। এর পিছনে আছে অনেক ইতিহাস।

    কী উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছিল এই ট্যাঙ্ক (Tala Tank)?

    ব্রিটিশ আমলে ধীরে ধীরে কলকাতা যখন একটি পূর্ণ শহরে পরিণত হচ্ছে, সেই সময় পরিষেবা বাড়ানো ছিল ব্রিটিশদের মূল লক্ষ্য। তার মধ্যে সব থেকে বেশি যেটির প্রয়োজন ছিল, তা হল নাগরিকদের জন্য পানীয় জলের ব্যবস্থা করা। আর সেই উদ্দেশ্যেই কয়েকটি পুকুর খনন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হেদুয়া, ওয়েলিংটন স্কোয়ার, ভবানীপুরের পুকুর থেকে সেই সময় কলকাতায় পানীয় জল সরবরাহ শুরু হয়। কিন্তু, শহর আরও বাড়তে থাকলে পানীয় জলের প্রয়োজনও বাড়তে থাকে। এই সমস্যাকে মাথায় রেখে তৎকালীন পৌর ইঞ্জিনিয়ার মিস্টার ডেভেরাল তাঁর সহকারী মিস্টার পিয়ার্স-এর সাথে মিলিতভাবে ১৯০১ সালে একটি ওভারহেড ট্যাঙ্ক (Tala Tank) তৈরির প্রস্তাব তুলে ধরেন। এই প্রস্তাবটি ১৯০২ সালে গ্রহণ করা হয়। 

    কত খরচ হয় এই ওভারহেড জলের ট্যাঙ্ক (Tala Tank) নির্মাণে?

    ১৯০৩ সালে পুরসভায় নিযুক্ত হন নতুন ইঞ্জিনিয়ার ডব্লু বি ম্যাকক্যাবে। তিনি এই প্রস্তাব দেখেন এবং কিছু রদবদল করার সিদ্ধান্ত নেন, যাতে কলকাতার মানুষ আরও উন্নত জল পরিষেবা পেতে পারে। আর এই প্রস্তাবে সম্মতি জানায় সমস্ত পৌরসভা। এই সময় ট্যাঙ্কটি (Tala Tank) নির্মাণ করতে তিনি ৬৯ লক্ষ ১৭ হাজার ৮৭৪ টাকা খরচ ধার্য করেন, যা ছিল আগের অঙ্কের থেকে অনেকটাই বেশি। কিন্তু এতে পূর্ণ সমর্থন ছিল সবার।

    কোথায় এবং কীভাবে নির্মিত হয় এই ট্যাঙ্কটি (Tala Tank)?

    ১৯০৯ সালে বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার এডওয়ার্ড বেকার এই ট্যাঙ্ক নির্মাণের (Tala Tank) সূচনা করেন। ফাউন্ডেশনের কাজ শুরু করে টি সি মুখার্জি অ্যান্ড কোম্পানি। কংক্রিট ফাউন্ডেশনের কাজ শুরু করে স্যার রাজেন্দ্রলাল মুখার্জির মার্টিন অ্যান্ড কোম্পানি। আর তার সাথে বাকি কাজে যুক্ত ছিল লিডসের ক্লেটন কোম্পানি। 
    প্রথমে যে স্থানে ট্যাঙ্কটি নির্মাণ করা হবে, সেখানে পুকুরগুলি বোজানোর কাজ শুরু হয়। পুকুরগুলিকে জলশূন্য করে চারদিকে শালবল্লার খুঁটি দিয়ে ২০-২৫ ফুট পাইল করে খোয়া দিয়ে ভর্তি করে স্টিম রোলার দিয়ে সমান করা হয়। এর ওপর বোল্ড স্টিল জয়েন্টের ওপর স্তম্ভগুলিকে দাঁড় করানো হয়। ১৯১১-র ১২ জানুয়ারি এর কাজ শেষ হয় এবং এই বছরেই ১৬ই মে এটি চালু করা হয়। এটি ছিল ১১০ ফুট উঁচু, ১৬ ফুট গভীরতা বিশিষ্ট, ১ লক্ষ বর্গফুট আয়তনের। এর জলধারণ ক্ষমতা  ৯ লক্ষ গ্যালন। গোটাটা চারটি কম্পার্টমেন্টে ভাগ করা হয়, যাতে জল পরিষেবা বন্ধ না রেখেই অন্য একটি ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করা যায়। 

    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং ১৯৬২ ও ১৯৭১-এর যুদ্ধে লক্ষ্য ছিল টালা ট্যাঙ্ক (Tala Tank) ধ্বংস করা

    ভারতীয় ইতিহাসের ঐতিহ্যবাহী অতীত বহন করে চলেছে এই টালা ট্যাঙ্ক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই ট্যাঙ্ককে লক্ষ্য করে জাপানিরা পর পর অনেকগুলি বোমা নিক্ষেপ করে। কিন্তু ধ্বংস করতে পারেনি একে। মাত্র নয়টি বোমার ক্ষতচিহ্ন পাওয়া যায়। ১৯৬২ ও ১৯৭১-এর যুদ্ধেও চিন ও পাকিস্তানের লক্ষ্য ছিল এই ট্যাঙ্ক। কিন্তু তারাও কোনও ক্ষতি করতে পারেনি। আজও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে এই টালা ট্যাঙ্ক। আজও তা (Tala Tank) কলকাতার জল পরিষেবার একমাত্র আধার হিসাবে জল পৌঁছে দিচ্ছে গোটা শহর জুড়ে।

    আর বর্তমানে পরিচিতি পেয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম ওভারহেড জলের ট্যাঙ্ক হিসেবে।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Google News পেজ।

  • Hul Diwas: ৩০ জুন ‘হুল’ দিবস! জানুন সাঁওতাল বিদ্রোহের ইতিহাস

    Hul Diwas: ৩০ জুন ‘হুল’ দিবস! জানুন সাঁওতাল বিদ্রোহের ইতিহাস

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন ব্রিটিশ শক্তির ভিত কেঁপে উঠেছিল সাঁওতাল বিদ্রোহে। এই আন্দোলনের ধ্বনি ছিল ‘হুল’ (Hul Diwas), যার আক্ষরিক অর্থ বিদ্রোহ। ফি বছর ৩০ জুন পালিত হয় ‘হুল দিবস’। একই পরিবারের ছয় ভাইবোনের (সিধু, কানু, বিরসা, চাঁদ, ভৈরব, আর দুই বোন ফুলমণি এবং ঝানু মুর্মু ) নেতৃত্বে এই জনজাতি আন্দোলন শুধুমাত্র ভারত নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ‘সাঁওতাল বিদ্রোহ’ এক দৃষ্টান্তও বটে। শাসকের শোষণ, অত্যাচার, বঞ্চনার বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে অধিকার চাওয়ার এই সংগ্রাম আজও প্রেরণার স্রোত। সিপাহী বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল ১৮৫৭ সালে। তার আগে ১৮৫৫ তে এই বিদ্রোহ ব্রিটিশ ভারতের প্রথম সশস্ত্র সংগ্রাম বলে মনে করেন অনেক ঐতিহাসিক।

    কেন অস্ত্র হাতে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন সহজ, সরল সাঁওতালরা?

    সহজ, সরল জনজাতিদের জল-জঙ্গলের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে থাকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ভূমির ওপর কর চাপায় তারা। যা আদায় করত কোম্পানির লেঠেল বাহিনী। এছাড়া সাঁওতাল রমণীদেরও খারাপ নজরে দেখা হত। যা কখনও মেনে নিতে পারেনি সাঁওতালরা। বঞ্চিত ক্ষোভ পূঞ্জীভূত হতে হতে তা বিদ্রোহের আকার নেয়। বর্তমান ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ জেলার ভাগনাদিহির মাঠে শুরু হয় জমায়েত। গবেষকদের মতে, আশপাশের চারশোর বেশি গ্রামের সাঁওতাল সেদিন জড়ো হয়েছিলেন অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে। সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে। ঐতিহাসিকদের মতে, সেদিন জমায়েত হয়েছিল প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি জনজাতি সমাজের মানুষজন। শুধুমাত্র ইংরেজ নয়, পাশাপাশি স্থানীয় জমিদার ও মহাজনরাও সাঁওতালিদের ওপর জোর-জুলুম ও অত্যাচার চালাত। সেখানেই প্রাপ্য দাবি ছিনিয়ে নিতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন জনজাতির বীর সন্তানরা। এরপরেই শুরু হয় যুদ্ধ। বিদ্রোহের থেকে যুদ্ধ বলাই ভালো। কারণ ব্রিটিশ সেনাকে সেদিন নামতে হয়েছিল বীর জনজাতিদের বিরুদ্ধে লড়তে। ‘হুল’ ‘হুল’ ধ্বনিতে সেদিন আকাশ-বাতাস কেঁপে উঠেছিল বর্তমান ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড, বাংলার পুরুলিয়া প্রভৃতি এলাকার।

    ভাগনাদিহি থেকে কলকাতার অভিমুখে সশস্ত্র পদযাত্রা

    সিধু-কানুর নেতৃত্বে ভাগনাদিহি থেকে কলকাতার অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করে প্রায় ৩০ হাজার সাঁওতাল। পরবর্তীকালে দেশ অনেক গণপদযাত্রার সাক্ষী থেকেছে। কিন্তু আজ থেকে ১৬৮ বছর আগে অধিকারের দাবিতে এমন পদযাত্রা যে কোনও স্বাধীনতাকামী মানুষের মনকে নাড়া দেয়। ঐতিহাসিকদের মতে, পদযাত্রার সময় অত্যাচারী দারোগা মহেশাল দত্ত ছয়-সাতজন সাঁওতাল নেতাকে বিনা অপরাধে গ্রেফতার করে। এরপর ব্রিটিশ পুলিশ সিধু ও কানুকে গ্রেফতার করতে উদ্যত হলে বিক্ষুব্ধ সাঁওতাল বিপ্লবীরা ৭ জুলাই পাঁচকাঠিয়া নামক স্থানে মহাজন কেনারাম ভগত, মহেশাল দত্ত সহ ইংরেজ পক্ষের ১৯ জনকে হত্যা করেন এবং সেখানেই সাঁওতাল বিদ্রোহের আগুন প্রজ্বলিত হয়। গবেষকরা বলছেন, এরপর টানা আট মাস ধরে চলে সাঁওতাল বিদ্রোহ। দাপট, শৌর্য, বীরত্বে তখন ওই অঞ্চলগুলিতে শেষ হয় ব্রিটিশ আধিপত্য। ২১ জুলাই কাতনা গ্রামে ইংরেজ বাহিনী বিপ্লবীদের কাছে পরাজয় স্বীকার করে। রণে ভঙ্গ দেয় ব্রিটিশরা।

    জুলাই মাসেই বীরভূম জেলার তৎকালীন জনপদ নাগপুর বাজার ধ্বংস করে বিদ্রোহীরা। অভিযোগ, সেখানে সাঁওতাল জনগণকে ন্যায্যমূল্যে পণ্য দেওয়ার পরিবর্তে অত্যাচার করা হত। ১৮৫৫ সালের অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে সিধু-কানুর বিরুদ্ধে ইংরেজ সরকার ‘অস্বা সামরিক আইন’ (অস্ত্রশস্ত্র বহনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা) জারি করে। কিন্তু আন্দোলনের সামনে এখানেও পিছু হঠতে হয় ব্রিটিশদের। ১৮৫৬ সালের ৩ জানুয়ারি সামরিক আইন প্রত্যাহার করে তারা। আট মাসব্যাপী বিদ্রোহের শেষ পর্যায়ে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ইংরেজদের সঙ্গে লড়াইয়ে সিধু নিহত হন এবং বিপ্লব সংগঠিত করার অপরাধে কানু মুর্মুকে ফাঁসি দেওয়া হয়। বিদ্রোহের অন্যতম বীরাঙ্গনা ফুলমণি মুর্মুকে ব্রিটিশ সেপাইরা নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও হত্যা করে তাঁর লাশ রেললাইনে ফেলে রেখে যায়, এমনটাই মত কোনও কোনও গবেষকদের। আজও এই বীরাঙ্গনা জনজাতি সমাজে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে আছেন।

    সাঁওতাল বিদ্রোহ (Hul Diwas) আমাদের সামনে এক দৃষ্টান্ত। যা স্মরণ করায় অন্যায়ের শিকার হয়ে সারাজীবন মাথা নিচু করার থেকে, মাথা উঁচু করে প্রতিবাদ অনেক সম্মানের, অনেক মর্যাদার।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

LinkedIn
Share