Tag: কথামৃত

  • Ramakrishna 419: শকুনি খুব উঁচুতে উড়ে, কিন্তু নজর থাকে ভাগাড়ে — কোথায় মরা

    Ramakrishna 419: শকুনি খুব উঁচুতে উড়ে, কিন্তু নজর থাকে ভাগাড়ে — কোথায় মরা

    কর্তাটি তখন খুব ব্যস্ত হয়ে চিঠির খোঁজ শুরু করলেন। অনেকক্ষণ ধরে, অনেকজন মিলে খুঁজে শেষে চিঠিখানা পাওয়া গেল। তখন তিনি খুব আনন্দে, অতি যত্নে চিঠিখানা হাতে নিয়ে পড়তে লাগলেন—দেখতে লাগলেন কী লেখা রয়েছে। লেখা ছিল: ‘পাঁচ সের সন্দেশ পাঠাবে, একখানা কাপড় পাঠাবে’—আরও কত কী!

    তখন আর চিঠির দরকার রইল না। চিঠি ফেলে দিয়ে তিনি সন্দেশ, কাপড় আর অন্যান্য জিনিস কিনতে বেরিয়ে পড়লেন।

    চিঠির দরকার কতক্ষণ? যতক্ষণ সন্দেশ, কাপড় ইত্যাদির খবর জানা না যায়। খবর জেনে গেলে নিজে কর্মে প্রবৃত্ত হতে হয়।

    ঠিক এইরকমই—শাস্ত্রও কেবল ঈশ্বরকে পাবার উপায়ের কথা বলে। কিন্তু খবর সব জেনে গেলে নিজে সাধনা শুরু করতে হয়। তবেই তো বস্তু (ঈশ্বর) লাভ হয়।

    শুধু পাণ্ডিত্যে কী হবে?
    অনেক শ্লোক, অনেক ছাত্র পণ্ডিতের জানা থাকতে পারে, কিন্তু যার সংসারে আসক্তি আছে,
    যার কামিনী-কাঞ্চনে মনে মনে ভালোবাসা আছে,
    তার শাস্ত্রধারণা হয় নাই।
    মিছে পড়া।
    পাঁজিতে লিখেছে — “বিচারে জল”, কিন্তু পাঁজি টিপলে এক ফোঁটাও পড়ে না।
    সকলের হাস্য।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে):”পণ্ডিত খুব লম্বা লম্বা কথা বলে, কিন্তু নজর কোথায়? কামিনির, কাঞ্চনের, দেহের, সোনার (টাকার) প্রতি।”

    শকুনি খুব উঁচুতে উড়ে, কিন্তু নজর থাকে ভাগাড়ে — কোথায় মরা।

    নরেন্দ্র খুব ভালো — গাইতে, বাজাতে, পড়াশোনায়, বিদ্যায়।
    এদিকে জিতেন্দ্র, বিবেক, বৈরাগ্য আছে।
    সত্যবাদী, অনেক গুণ।

    মাস্টারের প্রতি কেমন রে? কেমন গা? খুব ভালো নয়।

    মাস্টার: “আজ্ঞে হ্যাঁ, খুব ভালো।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ: “মাস্টারের প্রতি দেখো — ওর (গিরিশের) খুব অনুরাগ আর বিশ্বাস।”

    মাস্টার অবাক হইয়া গিরিশকে একদৃষ্টে দেখিতেছেন।
    গিরিশ ঠাকুরের কাছে কয়েকদিন আসিতেছেন মাত্র।
    মাস্টার কিন্তু দেখিলেন — যেন পূর্ব পরিচিত, অনেক দিনের আলাপ।
    পরম আত্মীয় যেন — এক সূত্রে গাঁথা মণিগণের একটি মণি।

  • Ramakrishna 418: পথ ও উপায় জেনে নেওয়ার পর আর বই-শাস্ত্রের কী দরকার?

    Ramakrishna 418: পথ ও উপায় জেনে নেওয়ার পর আর বই-শাস্ত্রের কী দরকার?

    শ্রীরামকৃষ্ণ: “সুরেশ তুমি তো! কে ইনি?”

    সুরেশ (হাসিতে হাসিতে): “আজ্ঞে, হ্যাঁ, আমার বরদা।”

    (সকলের হাস্য।)

    গিরিশ (ঠাকুরের প্রতি): “আচ্ছা মহাশয়, আমি ছেলেবেলায় কিছু লেখাপড়া করিনি, তবু লোকে বলে বিদ্বান।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি): “মহিমা চক্রবর্তী অনেক শাস্ত্র-অস্ত্র দেখেছে, শুনেছে। খুব আধার।” “কেমন গা?”

    মাস্টার: “আজ্ঞে, হ্যাঁ।”

    গিরিশ: “কি বিদ্যা! ও অনেক দেখেছে—ওতে আর ভুলি না।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ (হাসিতে হাসিতে) – এখানকার ভাব কী জানো? বই, শাস্ত্র—এইসব কেবল ঈশ্বরের কাছে পৌঁছাবার পথ বলে দেয়। পথ ও উপায় জেনে নেওয়ার পর আর বই-শাস্ত্রের কী দরকার? তখন নিজে কাজ করতে হয়।

    একজন একখানা চিঠি পেয়েছিল। কুটুমবাড়িতে তত্ত্ব করতে হবে—কী কী জিনিস নিতে হবে, চিঠিতে সব লেখা ছিল। কিন্তু জিনিস কিনতে যাবার সময় চিঠিখানা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।

    কর্তাটি তখন খুব ব্যস্ত হয়ে চিঠির খোঁজ শুরু করলেন। অনেকক্ষণ ধরে, অনেকজন মিলে খুঁজে শেষে চিঠিখানা পাওয়া গেল। তখন তিনি খুব আনন্দে, অতি যত্নে চিঠিখানা হাতে নিয়ে পড়তে লাগলেন—দেখতে লাগলেন কী লেখা রয়েছে। লেখা ছিল: ‘পাঁচ সের সন্দেশ পাঠাবে, একখানা কাপড় পাঠাবে’—আরও কত কী!

    তখন আর চিঠির দরকার রইল না। চিঠি ফেলে দিয়ে তিনি সন্দেশ, কাপড় আর অন্যান্য জিনিস কিনতে বেরিয়ে পড়লেন।

    চিঠির দরকার কতক্ষণ? যতক্ষণ সন্দেশ, কাপড় ইত্যাদির খবর জানা না যায়। খবর জেনে গেলে নিজে কর্মে প্রবৃত্ত হতে হয়।

    ঠিক এইরকমই—শাস্ত্রও কেবল ঈশ্বরকে পাবার উপায়ের কথা বলে। কিন্তু খবর সব জেনে গেলে নিজে সাধনা শুরু করতে হয়। তবেই তো বস্তু (ঈশ্বর) লাভ হয়।

  • Ramakrishna 417: শ্রী রামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি) “ও! স্কুলে দাঁত বার করবে, গান গাইতে যত লজ্জা!”

    Ramakrishna 417: শ্রী রামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি) “ও! স্কুলে দাঁত বার করবে, গান গাইতে যত লজ্জা!”

    ১৮৮৫, ১১ই মার্চ — ভক্ত সংঘে ভজনানন্দে ঠাকুর গান শুনিবেন, এই ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন। বলরামের বৈঠকখানার এক ঘর লোক; সকলেই তাঁহার পানে চাহিয়া আছেন—কি বলেন, শুনিবেন? কি করেন, দেখিবেন।

    শ্রীযুক্ত তারাপদ গাইতেছেন: “কেশব গুরু করুণাধীনে কুঞ্জকাননচারি মাধব, মনমোহন, মুরলীধারী। হরিবল, হরিবল, হরিবল মন আমার। ব্রজকিশোর, কালীয়-হর, কাতর-ভয়-ভঞ্জন, নয়ন বাঁকা বাঁকা, শিখী পাখা, রাধিকা হৃদয়রঞ্জন। গোবর্ধন-ধারণ, বন-কুসুম-ভূষণ, দামোদর, কংস-দর্প-হারী— শ্যামরসো রসবিহারী। হরিবোল, হরিবোল…”

    শ্রীরামকৃষ্ণ গিরিশের প্রতি: এই গানটি খুব উতরেছে। গায়কের প্রতি— “নিতাই-এর গান গাইতে পারো।”

    আবার গান হইল, নিতাই গাইতেছেন: “কিশোরীর প্রেম নিবি আয়, প্রেমের জোয়ার বয়ে যায়। বই ছেড়ে প্রেম শতধারে, যে যত চায়, তত পায়। প্রেমের কিশোরী প্রেম বিলায়, সাধ করি রাধার প্রেমে বল রে হরি। প্রেমে প্রাণ মত্ত করে, প্রেম তরঙ্গে প্রাণ না চায়— রাধার প্রেমে হরি বলি, আয়, আয়, আয়।”

    সকলেই মাস্টারকে অনুরোধ করিতেছেন, “তুমি একটি গান গাও।”
    মাস্টার একটু লাজুক, ফিসফিস করে মাফ চাহিতেছেন।

    গিরিশ (ঠাকুরের প্রতি সহাস্য): “মহাশয়, মাস্টার কোন মতে গান গাইছে না।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ বিরক্ত হইয়া, “ও! স্কুলে দাঁত বার করবে, গান গাইতে যত লজ্জা!”

    মাস্টার মুখ চুন করে খানিকক্ষণ বসিয়া রহিলেন।

    শ্রীযুক্ত সুরেশ মিত্র একটু দূরে বসে ছিলেন।
    ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ তাহার দিকে সস্নেহ দৃষ্টিপাত করিয়া শ্রীযুক্ত গিরিশ ঘোষকে দেখাইয়া সহস্র বদনে কথা কহিতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ:
    “সুরেশ তুমি তো! কে ইনি?”

    সুরেশ (হাসিতে হাসিতে):
    “আজ্ঞে, হ্যাঁ, আমার বরদা।”

    (সকলের হাস্য।)

    গিরিশ (ঠাকুরের প্রতি):
    “আচ্ছা মহাশয়, আমি ছেলেবেলায় কিছু লেখাপড়া করিনি, তবু লোকে বলে বিদ্বান।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি): “মহিমা চক্রবর্তী অনেক শাস্ত্র-অস্ত্র দেখেছে, শুনেছে। খুব আধার।” “কেমন গা?”

    মাস্টার: “আজ্ঞে, হ্যাঁ।”

    গিরিশ: “কি বিদ্যা! ও অনেক দেখেছে—ওতে আর ভুলি না।”

  • Ramakrishna 416: ঠাকুর গান শুনিবেন, এই ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন, বলরামের বৈঠকখানায় এক ঘর লোক

    Ramakrishna 416: ঠাকুর গান শুনিবেন, এই ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন, বলরামের বৈঠকখানায় এক ঘর লোক

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে)- রোসো, চুপচাপ করে থাকো, এর নামে একে বদনাম উঠছে।

    অন্য চিন্তা চমৎকার—ব্রাহ্মণের প্রতিগ্রহ করার ফল।

    আবার নরেন্দ্রর কথা পরিল।

    একজন ভক্ত- এখন তত আছেন না কেন?

    শ্রীরামকৃষ্ণ- অন্য চিন্তা চমৎকার! কালিদাস হয় বুদ্ধিহীনা।

    বলরাম- শিব গুহর বাড়ির ছেলে অন্নদা গুহর কাছে খুব আনাগোনা আছে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ- হ্যাঁ, একজন অফিসওয়ালার বাড়িতে এরা সব যায়। সেখানে তারা ব্রাহ্মসমাজ করে।

    একজন ভক্ত: তার নাম তারাপদ।

    বলরাম (হাসিতে): ব্রাহ্মণরা বলে অন্নদা গুহ লোকটার বড় অহংকার।

    শ্রীরামকৃষ্ণ: ব্রাহ্মণদের ওসব কথা শুনো না। তাদের তো জানো—না দিলেই খারাপ লোক, দিলেই ভালো। সকলের হাস্য! অন্নদাকে আমি জানি, ভালো লোক।

    ১৮৮৫, ১১ই মার্চ — ভক্ত সংঘে ভজনানন্দে
    ঠাকুর গান শুনিবেন, এই ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন। বলরামের বৈঠকখানার এক ঘর লোক; সকলেই তাঁহার পানে চাহিয়া আছেন—কি বলেন, শুনিবেন? কি করেন, দেখিবেন।

    শ্রীযুক্ত তারাপদ গাইতেছেন:
    “কেশব গুরু করুণাধীনে কুঞ্জকাননচারি
    মাধব, মনমোহন, মুরলীধারী।
    হরিবল, হরিবল, হরিবল মন আমার।
    ব্রজকিশোর, কালীয়-হর, কাতর-ভয়-ভঞ্জন,
    নয়ন বাঁকা বাঁকা, শিখী পাখা, রাধিকা হৃদয়রঞ্জন।
    গোবর্ধন-ধারণ, বন-কুসুম-ভূষণ,
    দামোদর, কংস-দর্প-হারী—
    শ্যামরসো রসবিহারী।
    হরিবোল, হরিবোল…”

    শ্রীরামকৃষ্ণ গিরিশের প্রতি:
    এই গানটি খুব উতরেছে।
    গায়কের প্রতি— “নিতাই-এর গান গাইতে পারো।”

    আবার গান হইল, নিতাই গাইতেছেন:
    “কিশোরীর প্রেম নিবি আয়, প্রেমের জোয়ার বয়ে যায়।
    বই ছেড়ে প্রেম শতধারে,
    যে যত চায়, তত পায়।
    প্রেমের কিশোরী প্রেম বিলায়,
    সাধ করি রাধার প্রেমে বল রে হরি।
    প্রেমে প্রাণ মত্ত করে, প্রেম তরঙ্গে প্রাণ না চায়—
    রাধার প্রেমে হরি বলি,
    আয়, আয়, আয়।”

  • Ramakrishna 415: একজন অফিসওয়ালার বাড়িতে এরা সব যায়, সেখানে তারা ব্রাহ্মসমাজ করে

    Ramakrishna 415: একজন অফিসওয়ালার বাড়িতে এরা সব যায়, সেখানে তারা ব্রাহ্মসমাজ করে

    অর্থাৎ বাইরে থেকে পবিত্রতা দেখালেও ভেতরে যদি কিছু না থাকে, তাহলে শুধু ভণ্ডামি।

    চুনিলাল — এঁর (মাস্টার) ছোট নরেন, বাবুরাম, ও পরে নারায়ণ, পল্টু, তেজো, চন্দ্র — এরা সব ওঁর কাছে পড়তে আসে। কথা উঠেছে যে উনি (চুনিলাল) তাদের এখানে এনেছেন, আর তাদের পড়াশোনা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। মাস্টারের নামে দোষ দিচ্ছে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ — তাদের কথা কে বিশ্বাস করবে?

    এই সকল কথাবার্তা হচ্ছিল, এমন সময় নারায়ণ এসে ঠাকুরকে প্রণাম করল। নারায়ণ গৌরবর্ণ, বয়স ১৭-১৮ বছর, স্কুলে পড়ে। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ তাকে খুব ভালোবাসেন — তাকে দেখার জন্য, তাকে খাওয়ানোর জন্য ব্যাকুল থাকেন। তার জন্য দক্ষিণেশ্বরে বসে বসে কাঁদেন। নারায়ণকে তিনি সাক্ষাৎ নারায়ণ (ভগবান) বলে মনে করেন।

    গিরিশ (নারায়ণ দৃষ্টে-) কে খবর দিলে? মাস্টারি দেখছি সব ছাড়লে, সকলের হাস্য।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে)- রোসো, চুপচাপ করে থাকো, এর নামে একে বদনাম উঠছে।

    অন্য চিন্তা চমৎকার—ব্রাহ্মণের প্রতিগ্রহ করার ফল।

    আবার নরেন্দ্রর কথা পরিল।

    একজন ভক্ত- এখন তত আছেন না কেন?

    শ্রীরামকৃষ্ণ- অন্য চিন্তা চমৎকার! কালিদাস হয় বুদ্ধিহীনা।

    বলরাম- শিব গুহর বাড়ির ছেলে অন্নদা গুহর কাছে খুব আনাগোনা আছে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ- হ্যাঁ, একজন অফিসওয়ালার বাড়িতে এরা সব যায়। সেখানে তারা ব্রাহ্মসমাজ করে।

    একজন ভক্ত: তার নাম তারাপদ।

    বলরাম (হাসিতে): ব্রাহ্মণরা বলে অন্নদা গুহ লোকটার বড় অহংকার।

    শ্রীরামকৃষ্ণ: ব্রাহ্মণদের ওসব কথা শুনো না। তাদের তো জানো—না দিলেই খারাপ লোক, দিলেই ভালো। সকলের হাস্য! অন্নদাকে আমি জানি, ভালো লোক।

  • Ramakrishna 413: কামিনী-কাঞ্চনে আসক্তি গেলেই মন ও বুদ্ধি শুদ্ধ হয়

    Ramakrishna 413: কামিনী-কাঞ্চনে আসক্তি গেলেই মন ও বুদ্ধি শুদ্ধ হয়

    শ্রীরামকৃষ্ণ (গিরিশের প্রতি): “ঈশ্বরের সব ধারণা কে করতে পারে? তাঁর বড় ভাবটাও পারে না, আবার ছোট ভাবটাও পারে না। আর সব ধারণা করা কি দরকার? তাঁকে প্রত্যক্ষ করতে পারলেই হলো। তাঁর অবতারকে দেখলেই তাঁকে দেখা হলো। যদি কেউ গঙ্গার কাছে গিয়ে গঙ্গাজল স্পর্শ করে, সে বলে—’গঙ্গা দর্শন, স্পর্শ করে এলুম।’ সব গঙ্গাটা হরিদ্বার থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত হাত দিয়ে ছুঁতে হয় না। তোমার পা-টা যদি ছুঁই, তোমায় ছোঁয়া হলো। যদি সাগরের কাছে গিয়ে একটু জল স্পর্শ করো, তাহলে সাগর স্পর্শ করাই হল। অগ্নিতত্ত্ব সব জায়গায় আছে, তবে কাঠে বেশি।”

    গিরিশ (হাসিতে হাসিতে): “যেখানে আগুন পাব, সেইখানেই আমার দরকার।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ (হাসিতে হাসিতে): “অগ্নিতত্ত্ব কাঠে বেশি, ঈশ্বরতত্ত্ব খোঁজো—মানুষে খুঁজবে, মানুষের মধ্যেই তিনি বেশি প্রকাশ হন। যে মানুষকে দেখলে ভক্তি উথলে পড়ে ঈশ্বরের জন্য, তিনি অবতীর্ণ হয়েছেন।”

    প্রেমে ভক্তি উথলে পড়ছে ঈশ্বরের জন্য; তার প্রেমে মাতোয়ারা হলে, সেই মানুষে যেন নিশ্চিতভাবে ঈশ্বর অবতীর্ণ হয়েছেন।
    “মাস্টার” (শ্রী রামকৃষ্ণ) তো আছেনই, তবে তাঁর শক্তির প্রকাশ কোথাও কম, কোথাও বেশি। অবতারে তাঁর শক্তি বেশি প্রকাশ পায়। কখনো কখনো সেই শক্তি পূর্ণভাবে প্রকাশিত হয়—তখন তা শক্তিরই অবতার।

    শ্রী রামকৃষ্ণ- এই মনের গোচর নন বটে, কিন্তু শুদ্ধ মনের গোচর।
    এটা বুদ্ধির দ্বারা ধরা যায় না, কিন্তু শুদ্ধ বুদ্ধির দ্বারা ধরা যায়। কামিনী-কাঞ্চনে আসক্তি গেলেই মন ও বুদ্ধি শুদ্ধ হয়।
    তখন শুদ্ধ মন ও শুদ্ধ বুদ্ধি একত্রে—সেই শুদ্ধ মনের গোচরে তিনি ধরা দেন।”

    ঋষি-মুনিরা কি তাঁকে দেখেননি?
    তাঁর চৈতন্যের দ্বারা তাঁকে চৈতন্যরূপেই সাক্ষাৎ করেছেন।

    গিরিশ (সহাস্যে) “নরেন্দ্র তর্কে আমার কাছে হেরেছে!”

    শ্রী রামকৃষ্ণ- না আমায় বলেছে, গিরিশ ঘোষ মানুষের অবতার, এটা তুমি বিশ্বাস করো।”
    এখন আমি আর কী বলব! আমার বিশ্বাসের উপর কিছু বলার নেই।

    গিরিশ (সহাস্যে), “সে মহাশয়! আমরা সব হল-ঘরে কথা বলছি, কিন্তু মাস্টার ঠোঁট চেপে বসে আছেন। কেমন বলেন, মহাশয়?”

  • Ramakrishna 412: যদি কেউ গঙ্গার কাছে গিয়ে গঙ্গাজল স্পর্শ করে, সে বলে—গঙ্গা দর্শন, স্পর্শ করে এলুম

    Ramakrishna 412: যদি কেউ গঙ্গার কাছে গিয়ে গঙ্গাজল স্পর্শ করে, সে বলে—গঙ্গা দর্শন, স্পর্শ করে এলুম

    শ্রীরামকৃষ্ণ (গিরিশের প্রতি): “তুমি একবার নরেন্দ্রের সঙ্গে বিচার করে দেখো, সে কি বলে।”

    গিরিশ: “স্বাচ্ছন্দ্যে—নরেন্দ্র বলে, ঈশ্বর অনন্ত। যা কিছু আমরা দেখি, শুনি—জিনিসটি কি, ব্যক্তিটি কি—সবই তাঁর অংশ। এপর্যন্ত আমাদের বলবার জো নাই।
    অনন্ত আকাশ, তার আবার অংশ কী? অংশ হয় না।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ: “ঈশ্বর অনন্ত, হোন আর যত বড়—তিনি ইচ্ছা করলে তাঁর ভিতরের সারবস্তু মানুষের ভিতর দিয়ে আসতে পারেন, ও আসেন। তিনি অবতার হয়ে থাকেন। এটি উপমা দিয়ে বুঝানো যায় না, অনুভব হওয়া চাই, প্রত্যক্ষ হওয়া চাই।
    উপমার দ্বারা কতটা আভাস পাওয়া যায়। গরুর মধ্যে সিমটা যদি ছোঁয়াও, গরুকে ছোঁয়া হলো। পা-টা বা লেজটা ছুঁলেও গরুটাকে ছোঁয়া হলো।
    কিন্তু আমাদের পক্ষে গরুর ভিতরের সারপদার্থ হচ্ছে দুধ। সেই দুধ বাটিতে দিয়ে আসে।
    সেইরূপ, প্রেমেও ভক্ত শেখাবার জন্য ঈশ্বর মানুষ-দেহ ধারণ করে, সময়ে সময়ে অবতীর্ণ হন।”

    গিরিশ: “নরেন্দ্র বলে, তাঁকে কি সব ধারণা করা যায়? তিনি তো অনন্ত।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ (গিরিশের প্রতি): “ঈশ্বরের সব ধারণা কে করতে পারে? তাঁর বড় ভাবটাও পারে না, আবার ছোট ভাবটাও পারে না।
    আর সব ধারণা করা কি দরকার? তাঁকে প্রত্যক্ষ করতে পারলেই হলো। তাঁর অবতারকে দেখলেই তাঁকে দেখা হলো।
    যদি কেউ গঙ্গার কাছে গিয়ে গঙ্গাজল স্পর্শ করে, সে বলে—’গঙ্গা দর্শন, স্পর্শ করে এলুম।’
    সব গঙ্গাটা হরিদ্বার থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত হাত দিয়ে ছুঁতে হয় না।
    তোমার পা-টা যদি ছুঁই, তোমায় ছোঁয়া হলো।
    যদি সাগরের কাছে গিয়ে একটু জল স্পর্শ করো, তাহলে সাগর স্পর্শ করাই হল।
    অগ্নিতত্ত্ব সব জায়গায় আছে, তবে কাঠে বেশি।”

    গিরিশ (হাসিতে হাসিতে):
    “যেখানে আগুন পাব, সেইখানেই আমার দরকার।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ (হাসিতে হাসিতে):
    “অগ্নিতত্ত্ব কাঠে বেশি, ঈশ্বরতত্ত্ব খোঁজো—মানুষে খুঁজবে, মানুষের মধ্যেই তিনি বেশি প্রকাশ হন। যে মানুষকে দেখলে ভক্তি উথলে পড়ে ঈশ্বরের জন্য, তিনি অবতীর্ণ হয়েছেন।”

  • Ramakrishna 410: অপরাহ্নে ভক্তসংঘে অবতারবাদ ও শ্রীরামকৃষ্ণ

    Ramakrishna 410: অপরাহ্নে ভক্তসংঘে অবতারবাদ ও শ্রীরামকৃষ্ণ

    মাস্টারের সঙ্গে তখন ছোট নরেন সম্বন্ধে অনেক কথা হচ্ছিল। এমন সময় উপস্থিত ভক্তদের একজন বললেন— “মাস্টার মহাশয়, আপনি কি আজ স্কুলে যাবেন না?”

    শ্রীরামকৃষ্ণ: “ক’টা বাজে?”

    ভক্ত: “একটা বাজতে দশ মিনিট বাকি।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি): “তুমি যাও, তোমার দেরি হচ্ছে। একে তো কাজ ফেলে এসেছো।”

    (লাটুর প্রতি): “রাখাল কোথায়?”

    ভক্ত: “লাটু তো বাড়ি চলে গেছে।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ: “আমার সঙ্গে দেখা না করে?”

    অপরাহ্নে ভক্তসংঘে অবতারবাদ ও শ্রীরামকৃষ্ণ

    স্কুলের ছুটির পর মাস্টার আসিয়া দেখিতেছেন। ঠাকুর বলরামের বৈঠকখানায় ভক্তের মজলিস করিয়া বসিয়া আছেন। ঠাকুরের মুখে মধুর হাসি, সেই হাসি ভক্তদের মুখে প্রতিবিম্বিত হইতেছে। মাস্টারকে ফিরিয়া আসিতে দেখিয়া, তিনি প্রণাম করিলেন। ঠাকুর তাহাকে তাহার কাছে আসিয়া বসিতে ইঙ্গিত করিলেন।

    শ্রীযুক্ত গিরিশ ঘোষ, মিত্র, বলরাম, লাডু, চুনিলাল ইত্যাদি ভক্ত উপস্থিত আছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (গিরিশের প্রতি): “তুমি একবার নরেন্দ্রের সঙ্গে বিচার করে দেখো, সে কি বলে।”

    গিরিশ: “স্বাচ্ছন্দ্যে—নরেন্দ্র বলে, ঈশ্বর অনন্ত। যা কিছু আমরা দেখি, শুনি—জিনিসটি কি, ব্যক্তিটি কি—সবই তাঁর অংশ। এপর্যন্ত আমাদের বলবার জো নাই।
    অনন্ত আকাশ, তার আবার অংশ কী? অংশ হয় না।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ: “ঈশ্বর অনন্ত, হোন আর যত বড়—তিনি ইচ্ছা করলে তাঁর ভিতরের সারবস্তু মানুষের ভিতর দিয়ে আসতে পারেন, ও আসেন। তিনি অবতার হয়ে থাকেন। এটি উপমা দিয়ে বুঝানো যায় না, অনুভব হওয়া চাই, প্রত্যক্ষ হওয়া চাই।
    উপমার দ্বারা কতটা আভাস পাওয়া যায়। গরুর মধ্যে সিমটা যদি ছোঁয়াও, গরুকে ছোঁয়া হলো। পা-টা বা লেজটা ছুঁলেও গরুটাকে ছোঁয়া হলো।
    কিন্তু আমাদের পক্ষে গরুর ভিতরের সারপদার্থ হচ্ছে দুধ। সেই দুধ বাটিতে দিয়ে আসে।
    সেইরূপ, প্রেমেও ভক্ত শেখাবার জন্য ঈশ্বর মানুষ-দেহ ধারণ করে, সময়ে সময়ে অবতীর্ণ হন।”

  • Ramakrishna 410: ছোটবেলায় আমি কাঁদতাম,  ঈশ্বর কেন দেখা দিচ্ছেন না

    Ramakrishna 410: ছোটবেলায় আমি কাঁদতাম, ঈশ্বর কেন দেখা দিচ্ছেন না

    মাস্টার ব্যস্ত হয়ে একে একে সমস্ত কাজ করতে লাগলেন—তিনি ঠাকুরের পায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন, গামছা নিংড়াচ্ছেন, জামা শুকোতে দিচ্ছেন। এর মধ্যেই শ্রীরামকৃষ্ণ নানা কথা বলছেন, উপদেশ দিচ্ছেন।

    ঠাকুর- “এই যে মাস্টার, আমার হ্যাঁগা অস্বস্তিকর যন্ত্রণা কদিন ধরে হচ্ছে। বল তো, কেন হচ্ছে? এখন আর কোনও ধাতব জিনিসে হাত দিতে পারি না। একবার একটা ধাতব বাটিতে হাত দিয়েছিলাম, সঙ্গে সঙ্গে মনে হল চিংড়ি মাছের কাঁটা ফুটল যেন—কনকন করতে লাগল। তখন ভাবলাম গামছা দিয়ে ঢাকা দিয়ে তুলতে পারি কিনা। কিন্তু যাই হাতে দিই, অমনি হাতটা ঝনঝন করতে থাকে, খুব বেদনাও হয়।”

    “শেষে মাকে প্রার্থনা করলাম, ‘মা, আর এমন কর্ম করব না। মা, এবার মাফ করো।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে):
    “হ্যা গা, ছোট নরেন এসেছে। আশা করছে, বাড়িতে গিয়ে কিছু বলবে। খুব শুদ্ধ ছেলে— মেয়েদের সঙ্গ সে করে না।”

    মাস্টার: “আর খোলটা খুব বড়।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ: “হ্যাঁ। আবার বলি, ঈশ্বরের কথা একবার শুনলে আমার মনে থেকে যায়। ছোটবেলায় আমি কাঁদতাম, ‘ঈশ্বর কেন দেখা দিচ্ছেন না?’ ”

    মাস্টারের সঙ্গে তখন ছোট নরেন সম্বন্ধে অনেক কথা হচ্ছিল। এমন সময় উপস্থিত ভক্তদের একজন বললেন— “মাস্টার মহাশয়, আপনি কি আজ স্কুলে যাবেন না?”

    শ্রীরামকৃষ্ণ: “ক’টা বাজে?”

    ভক্ত: “একটা বাজতে দশ মিনিট বাকি।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি): “তুমি যাও, তোমার দেরি হচ্ছে। একে তো কাজ ফেলে এসেছো।”

    (লাটুর প্রতি): “রাখাল কোথায়?”

    ভক্ত: “লাটু তো বাড়ি চলে গেছে।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ: “আমার সঙ্গে দেখা না করে?”

  • Ramakrishna 409: মাস্টার সেবা করিতে জানেন না, তাই ঠাকুর নিজেই তাঁকে সেবা শেখাচ্ছেন

    Ramakrishna 409: মাস্টার সেবা করিতে জানেন না, তাই ঠাকুর নিজেই তাঁকে সেবা শেখাচ্ছেন

    তখন ঠাকুর আহার করার জন্য বৈঠকখানায় একটু বিশ্রাম নিচ্ছেন। মাঝে মাঝে থলি থেকে কিছু মসলা, কাবাব বা চিনি ইত্যাদি খাচ্ছেন। অল্পবয়স্ক ভক্তরা চারদিকে ঘিরে বসে আছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (হাসতে হাসতে): “হে, তুমি যে এখন এলে! স্কুল নেই?”

    মাস্টার: “স্কুল থেকে আসছি, এখন বিশেষ কাজ নেই।”

    ভক্ত (হাসতে হাসতে): “মহাশয় স্কুল পালিয়ে এসেছেন!”

    (সকলের হাস্য)

    মাস্টার (হাসি): “হায়! কে যেন টেনে আনলে!”

    ঠাকুর যেন কিছুটা চিন্তিত হয়ে উঠলেন। তারপর মাস্টারকে পাশে বসিয়ে কত কথা বললেন। তারপর বললেন,
    “আমার গামছাটা একটু নিংড়ে দাও তো গো, আর জামাটা শুকোতে দাও। পাটা একটু কামড়াচ্ছে, একটু হাত বুলিয়ে দিতে পারো?”

    মাস্টার সেবা করিতে জানেন না, তাই ঠাকুর নিজেই তাঁকে সেবা শেখাচ্ছেন। মাস্টার ব্যস্ত হয়ে একে একে সমস্ত কাজ করতে লাগলেন—তিনি ঠাকুরের পায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন, গামছা নিংড়াচ্ছেন, জামা শুকোতে দিচ্ছেন। এর মধ্যেই শ্রীরামকৃষ্ণ নানা কথা বলছেন, উপদেশ দিচ্ছেন।

    ঠাকুর- “এই যে মাস্টার, আমার হ্যাঁগা অস্বস্তিকর যন্ত্রণা কদিন ধরে হচ্ছে। বল তো, কেন হচ্ছে? এখন আর কোনও ধাতব জিনিসে হাত দিতে পারি না। একবার একটা ধাতব বাটিতে হাত দিয়েছিলাম, সঙ্গে সঙ্গে মনে হল চিংড়ি মাছের কাঁটা ফুটল যেন—কনকন করতে লাগল। তখন ভাবলাম গামছা দিয়ে ঢাকা দিয়ে তুলতে পারি কিনা। কিন্তু যাই হাতে দিই, অমনি হাতটা ঝনঝন করতে থাকে, খুব বেদনাও হয়।”

    “শেষে মাকে প্রার্থনা করলাম, ‘মা, আর এমন কর্ম করব না। মা, এবার মাফ করো।”

LinkedIn
Share