Tag: রামকৃষ্ণ কথা

  • Ramakrishna 515: “সুলক্ষণ শালগ্রাম,—বেশ চক্র থাকবে,—গোমুখী…আর সব লক্ষণ থাকবে—তাহলে ভগবানের পূজা হয়”

    Ramakrishna 515: “সুলক্ষণ শালগ্রাম,—বেশ চক্র থাকবে,—গোমুখী…আর সব লক্ষণ থাকবে—তাহলে ভগবানের পূজা হয়”

    ৪৯ শ্রীশ্রীরথযাত্রা বলরাম-মন্দিরে

    চতুর্থ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১৪ই জুলাই
    পূর্বকথা—৺কাশীধামে শিব ও সোনার অন্নপূর্ণাদর্শন—
    অদ্য ব্রহ্মাণ্ডকে শালগ্রাম রূপে দর্শন

    বেলা দশটা বাজিয়াছে। ঠাকুর (Ramakrishna) ভক্তসঙ্গে কথা কহিতেছেন। মাস্টার গঙ্গাস্নান করিয়া আসিয়া ঠাকুরকে প্রণাম করিলেন ও কাছে বসিলেন।

    ঠাকুর ভাবে পূর্ণ হইয়া কত কথাই বলিতেছেন। মাঝে মাঝে অতি গুহ্য দর্শনকথা একটু একটু বলিতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—সেজোবাবুর সঙ্গে যখন কাশী গিয়েছিলাম, মণিকর্ণিকার ঘাটের কাছ দিয়ে আমাদের নৌকা যাচ্ছিল। হঠাৎ শিবদর্শন। আমি নৌকার ধারে এসে দাঁড়িয়ে সমাধিস্থ। মাঝিরা হৃদেকে বলতে লাগল — ‘ধর! ধর!’ পাছে পড়ে যাই। যেন জগতের যত গম্ভীর নিয়ে সেই ঘাটে দাঁড়িয়ে আছেন। প্রথমে দেখলাম দূরে দাঁড়িয়ে তারপর কাছে আসতে দেখলাম (Kathamrita), তারপর আমার ভিতরে মিলিয়ে গেলেন!

    “ভাবে দেখলাম, সন্ন্যাসী হাতে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। একটি ঠাকুরবাড়িতে ঢুকলাম — সোনার অন্নপূর্ণাদর্শন হল!

    “তিনিই এই সব হয়েছেন, — কোন কোন জিনিসে বেশি প্রকাশ।

    (মাস্টারাদির প্রতি)—“শালগ্রাম তোমরা বুঝি মান না—ইংলিশম্যানরা মানে না। তা তোমরা মানো আর নাই মানো। সুলক্ষণ শালগ্রাম,—বেশ চক্র থাকবে,—গোমুখী। আর সব লক্ষণ থাকবে—তাহলে ভগবানের পূজা হয়।”

    মাস্টার—আজ্ঞা, সুলক্ষণযুক্ত মানুষের ভিতর যেমন ঈশ্বরের বেশি প্রকাশ।

    শ্রীরামকৃষ্ণ(Ramakrishna) —নরেন্দ্র আগে মনের ভুল বলত, এখন সব মানছে।

    ঈশ্বরদর্শনের কথা বলিতে বলিতে ঠাকুরের ভাবাবস্থা হইয়াছে। ভাব-সমাধিস্থ। ভক্তেরা একদৃষ্টে চুপ করিয়া দেখিতেছেন। অনেকক্ষণ পরে ভাব সম্বরণ করিলেন ও কথা কহিতে লাগিলেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি) — কি দেখছিলাম। ব্রহ্মাণ্ড একটি শালগ্রাম। — তার ভিতর তোমার দুটো চক্ষু দেখছিলাম(Kathamrita)!

    মাস্টার ও ভক্তেরা এই অদ্ভুত, অশ্রুতপূর্ব দর্শনকথা অবাক্‌ হইয়া শুনিতেছেন। এই সময় আর-একটি ছোকরা ভক্ত, সারদা, প্রবেশ করিলেন ও ঠাকুরকে প্রণাম করিয়া উপবেশন করিলেন।

  • Ramakrishna 514: “জল স্থির থাকলেও জল,—হেললে দুললেও জল…হেলা দোলা থেমে গেলেও সেই জল”

    Ramakrishna 514: “জল স্থির থাকলেও জল,—হেললে দুললেও জল…হেলা দোলা থেমে গেলেও সেই জল”

    ৪৯ শ্রীশ্রীরথযাত্রা বলরাম-মন্দিরে

    তৃতীয় পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১৪ই জুলাই

    শ্রীশ্রীরথযাত্রা দিবসে বলরাম-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে

    মাস্টার—আমাদের সব নিচে যাওয়া উচিত ছিল।

    পূর্বকথা—আশ্বিনের ঝড়ে শ্রীরামকৃষ্ণ—৫ই অক্টোবর, ১৮৬৪ খ্রী:

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—যে ঘরে বাস, তারই এই দশা! এতে আবার লোকে অহংকার। (মাস্টারকে) তোমার আশ্বিনের ঝড় মনে আছে?

    মাস্টার—আজ্ঞা (Kathamrita), হাঁ। তখন খুব কম বয়স—নয়-দশ বছর বয়স—একঘরে একলা ঠাকুরদের ডাকছিলাম!

    মাস্টার বিস্মিত হইয়া ভাবিতেছেন—ঠাকুর হঠাৎ আশ্বিনের ঝড়ের দিনের কথা জিজ্ঞাসা করিলেন কেন? আমি যে ব্যাকুল হয়ে কেঁদে একাকী একঘরে বসে ঈশ্বরকে প্রার্থনা করেছিলাম, ঠাকুর কি সব জানেন ও আমাকে মনে করাইয়া দিতেছেন? উনি কি জন্মাবধি আমাকে গুরুরূপে রক্ষা করিতেছেন?

    শ্রীরামকৃষ্ণ—দক্ষিণেশ্বরে অনেক বেলায়—তবে কি কি রান্না হল। গাছ সব উলটে পড়েছিল! দেখ যে ঘরে বাস, তারই এ-দশা!

    “তবে পূর্ণজ্ঞান হলে মরা মারা একবোধ হয়। মলেও কিছু মরে না — মেরে ফেল্লেও কিছু মরে না যাঁরই লীলা তাঁরই নিত্য। সেই একরূপে নিত্য, একরুপে লীলা। লীলারূপ ভেঙে গেলেও নিত্য আছেই। জল স্থির থাকলেও জল,—হেললে দুললেও জল। হেলা দোলা থেমে গেলেও সেই জল।”

    ঠাকুর (Ramakrishna) বৈঠকখানা ঘরে ভক্তসঙ্গে আবার বসিয়াছেন। মহেন্দ্র মুখুজ্জে, হরিবাবু, ছোট নরেন ও অন্যান্য অনেকগুলি ছোকরা ভক্ত বসিয়া আছেন। হরিবাবু একলা একলা থাকেন ও বেদান্তচর্চা করেন। বয়স ২৩।২৮ হবে। বিবাহ করেন নাই। ঠাকুর তাহাকে বড় ভালবাসেন। সর্বদা তাঁহার কাছে যাইতে বলেন। তিনি একলা একলা থাকতে চান বলিয়া হরিবাবু ঠাকুরের কাছে অধিক যাইতে পারেন না।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (হরিবাবুকে) — কি গো, তুমি অনেকদিন আস নাই।

    হরিবাবুকে উপদেশ—অদ্বৈতবাদ ও বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ—বিজ্ঞান

    “তিনি একরূপে নিত্য, একরূপে লীলা। বেদান্তে কি আছে?—ব্রহ্ম সত্য জগৎ মিথ্যা। কিন্তু যতক্ষণ ‘ভক্তের আমি’ রেখে দিয়েছে, ততক্ষণ লীলাও সত্য। ‘আমি’ যখন তিনি পুছে ফেলবেন, তখন যা আছে তাই আছে। মুখে বলা (Kathamrita) যায় না। যতক্ষণ ‘আমি’ রেখে দিয়েছেন, ততক্ষণ সবই নিতে হবে। কলাগাছের খোল ছাড়িয়া ছাড়িয়া মাজ পাওয়া যায়। কিন্তু খোল থাকলেই মাজ আছে। মাজ থাকলেই খোল আছে। খোলেরই মাজ, মাজেরই খোল। নিত্য বললেই লীলা আছে বুঝায়। লীলা বললেই নিত্য আছে বুঝায়।

  • Ramakrishna 513: “ডোবাতে হাতি নামলে জল তোলপাড় হয়ে যায়,— ক্ষুদ্র আধার হলেই ভাব উপছে পড়ে”

    Ramakrishna 513: “ডোবাতে হাতি নামলে জল তোলপাড় হয়ে যায়,— ক্ষুদ্র আধার হলেই ভাব উপছে পড়ে”

    ৪৯ শ্রীশ্রীরথযাত্রা বলরাম-মন্দিরে

    তৃতীয় পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১৪ই জুলাই

    শ্রীশ্রীরথযাত্রা দিবসে বলরাম-মন্দিরে ভক্তসঙ্গে

    আজ শ্রীশ্রীরথযাত্রা। মঙ্গলবার (৩১শে আষাঢ়, ১২৯২, শুক্লা দ্বিতীয়া, ১৪ই জুলাই, ১৮৮৫)। অতি প্রতূষ্যে ঠাকুর উঠিয়া একাকী নৃত্য করিতেছেন ও মধুর কণ্ঠে নাম করিতেছেন।

    মাস্টার আসিয়া প্রণাম করিলেন। ক্রমে ভক্তেরা আসিয়া প্রণাম করিয়া ঠাকুরের কাছে উপবিষ্ট হইলেন। ঠাকুর পূর্ণর জন্য বড় ব্যাকুল। মাস্টারকে দেখিয়া তাঁরই কথা কহিতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) — তুমি পূর্ণকে দেখে কিছু উপদেশ দিতে?

    মাস্টার — আজ্ঞা, চৈতন্যচরিত পড়তে বলেছিলাম, — তা সে সব কথা বেশ বলতে পারে। আর আপনি বলেছিলেন, সত্য ধরে রাখতে, সেই কথাও বলেছিলাম।

    শ্রীরামকৃষ্ণ — আচ্ছা ‘ইনি অবতার’ এ-সব কথা জিজ্ঞাসা (Kathamrita) করলে কি বলত।

    মাস্টার — আমি বলেছিলাম, চৈতন্যদেবের মতো একজনকে দেখবে তো চল।

    শ্রীরামকৃষ্ণ — আর কিছু?

    মাস্টার — আপনার সেই কথা। ডোবাতে হাতি নামলে জল তোলপাড় হয়ে যায়, — ক্ষুদ্র আধার হলেই ভাব উপছে পড়ে।

    “মাছ ছাড়ার কথায় বলেছিলাম, কেন অমন করলে। হইচই হবে।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) — তাই ভাল। নিজের ভাব ভিতরে ভিতরে থাকাই ভাল।

    ভূমিকম্প ও শ্রীরামকৃষ্ণ — জ্ঞানীর দেহ ও দেহনাশ সমান

    প্রায় সাড়ে ছয়টা বাজে। বলরামের বাটী হইতে মাস্টার গঙ্গাস্নানে যাইতেছেন। পথে হঠাৎ ভূমিকম্প। তিনি তৎক্ষণাৎ ঠাকুরের ঘরে ফিরিয়া আসিলেন। ঠাকুর বৈঠকখানা ঘরে দাঁড়াইয়া আছেন। ভক্তেরাও দাঁড়াইয়া আছেন। ভূমিকম্পের কথা হইতেছে। কম্প কিছু বেশি হইয়াছিল। ভক্তেরা অনেকে ভয় পাইয়াছেন।

    মাস্টার — আমাদের সব নিচে যাওয়া উচিত ছিল।

    পূর্বকথা — আশ্বিনের ঝড়ে শ্রীরামকৃষ্ণ — ৫ই অক্টোবর, ১৮৬৪ খ্রী:

    শ্রীরামকৃষ্ণ — যে ঘরে বাস, তারই এই দশা! এতে আবার লোকে অহংকার। (মাস্টারকে) তোমার আশ্বিনের ঝড় মনে আছে?

    মাস্টার — আজ্ঞা, হাঁ। তখন খুব কম বয়স — নয়-দশ বছর বয়স — একঘরে একলা ঠাকুরদের ডাকছিলাম (Kathamrita)!

    মাস্টার বিস্মিত হইয়া ভাবিতেছেন — ঠাকুর হঠাৎ আশ্বিনের ঝড়ের দিনের কথা জিজ্ঞাসা করিলেন কেন? আমি যে ব্যাকুল হয়ে কেঁদে একাকী একঘরে বসে ঈশ্বরকে প্রার্থনা করেছিলাম, ঠাকুর কি সব জানেন ও আমাকে মনে করাইয়া দিতেছেন? উনি কি জন্মাবধি আমাকে গুরুরূপে রক্ষা করিতেছেন?

  • Ramakrishna 512: “চৈতন্যকে ভেবে কি অচৈতন্য হয়? — ঈশ্বরকে চিন্তা করে কেউ কি বেহেড হয়?—তিনি যে বোধস্বরূপ!”

    Ramakrishna 512: “চৈতন্যকে ভেবে কি অচৈতন্য হয়? — ঈশ্বরকে চিন্তা করে কেউ কি বেহেড হয়?—তিনি যে বোধস্বরূপ!”

    ৪৯ শ্রীশ্রীরথযাত্রা বলরাম-মন্দিরে

    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১৩ই জুলাই
    কামিনী-কাঞ্চনত্যাগ ও পূর্ণাদি
    তেজচন্দ্রের সংসারত্যাগের প্রস্তাব

    ছটা বাজে। গিরিশের ভ্রাতা অতুল, ও তেজচন্দ্রের ভ্রাতা আসিয়াছেন। ঠাকুর (Ramakrishna) ভাবসমাধিস্থ হইয়াছেন। কিয়ৎক্ষণ পরে ভাবে বলিতেছেন, “চৈতন্যকে ভেবে কি অচৈতন্য হয়? — ঈশ্বরকে চিন্তা করে কেউ কি বেহেড হয়?—তিনি যে বোধস্বরূপ!”

    আগন্তুকদের ভিতর কেউ কি মনে করিতেছিলেন যে, বেশি ঈশ্বরচিন্তা করিয়া ঠাকুরের মাথা খারাপ হইয়া গিয়াছে?

    এগিয়ে পড়’—কৃষ্ণধনের সামান্য রসিকতা

    ঠাকুর কৃষ্ণধন (Ramakrishna) নামক ওই রসিক ব্রাহ্মণকে বলিতেছেন — “কি সামান্য ঐহিক বিষয় নিয়ে তুমি রাতদিন ফষ্টিনাষ্টি করে সময় কাটাচ্ছ। ওইটি ঈশ্বরের দিকে মোড় ফিরিয়ে দাও। যে নুনের হিসাব করতে পারে, সে মিছরির হিসাবও করতে পারে।”

    কৃষ্ণধন (সহাস্যে) — আপনি টেনে নিন!

    শ্রীরামকৃষ্ণ—আমি কি করব, তোমার চেষ্টার উপর সব নির্ভর করছে। ‘এ মন্ত্র নয় — এখন মন তোর!’

    “ও সামান্য রসিকতা ছেড়ে ঈশ্বরের পথে এগিয়ে পড়,—তারে বাড়া, তারে বাড়া,—আছে! ব্রহ্মচারী কাঠুরিয়াকে এগিয়ে পড়তে বলেছিল (Kathamrita)। সে প্রথমে এগিয়ে দেখে চন্দনের কাঠ, — তারপর দেখে রূপার খনি,— তারপর সোনার খনি,— তারপর হীরা মাণিক!”

    কৃষ্ণধন — এ-পথের শেষ নাই!

    শ্রীরামকৃষ্ণ — যেখানে শান্তি সেইখানে ‘তিষ্ঠ’।

    ঠাকুর একজন আগন্তুক সম্বন্ধে বলিতেছেন —

    “ওর ভিতর কিছু বস্তু দেখতে পেলেম না। যেন ওলম্বাকুল।”

    সন্ধ্যা হইল। ঘরে আলো জ্বালা হইল। ঠাকুর জগন্মাতার চিন্তা ও মধুর স্বরে নাম করিতেছেন। ভক্তেরা চতুর্দিকে বসিয়া আছেন।

    কাল রথযাত্রা। ঠাকুর আজ এই বাটীতেই রাত্রিবাস করিবেন।

    অন্তঃপুরে কিঞ্চিৎ জলযোগ করিয়া আবার ঘরে ফিরিলেন। রাত প্রায় দশটা হইবে। ঠাকুর মণিকে বলিতেছেন, ‘ওই ঘর থেকে (অর্থাৎ পার্শ্বের পশ্চিমের ছোট ঘর থেকে) গামছাটা আন তো’।

    ঠাকুরের (Ramakrishna) সেই ছোট ঘরটিতেই শয্যা প্রস্তুত হইয়াছে। রাত সাড়ে দশটা হইল। ঠাকুর শয়ন করিলেন।

    গ্রীষ্মকাল। ঠাকুর মণিকে বলিতেছেন(Kathamrita), “বরং পাখাটা আনো।” তাঁহাকে পাখা করিতে বলিলেন। রত বারটার সময় ঠাকুরের একটু নিদ্রাভঙ্গ হইল। বলিলেন, “শীত করছে, আর কাজ নাই।”

  • Ramakrishna 511: “ঠাকুর কর্তাভজাদের সম্বন্ধে অনেক কথা বলিলেন,—রূপ, স্বরূপ, রজঃ, বীজ, পাকপ্রণালী ইত্যাদি”

    Ramakrishna 511: “ঠাকুর কর্তাভজাদের সম্বন্ধে অনেক কথা বলিলেন,—রূপ, স্বরূপ, রজঃ, বীজ, পাকপ্রণালী ইত্যাদি”

    ৪৯ শ্রীশ্রীরথযাত্রা বলরাম-মন্দিরে

    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১৩ই জুলাই
    কামিনী-কাঞ্চনত্যাগ ও পূর্ণাদি

    তেজচন্দ্রের সংসারত্যাগের প্রস্তাব 

    ঠাকুর তেজচন্দ্রের সহিত কথা কহিতেছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (তেজচন্দ্রের প্রতি) — তোকে এত ডেকে পাঠাই, — আসিস না কেন? আচ্ছা, ধ্যান-ট্যান করিস, তা হলেই আমি সুখী হব। আমি তোকে আপনার বলে জানি, তাই ডাকি।

    তেজচন্দ্র — আজ্ঞা, আপিস যেতে হয়, — কাজের ভিড়।

    মাস্টার (সহাস্যে) — বাড়িতে বিয়ে, দশদিন আপিসের ছুটি নিয়েছিলেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—তবে!— অবসর নাই, অবসর নাই! এই বললি সংসারত্যাগ করবি।

    নারাণ—মাস্টার মহাশয় একদিনে বলেছিলেন—wilderness of this world — সংসার অরণ্য।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি)—তুমি ওই গল্পটা বল তো, এদের উপকার হবে। শিষ্য ঔষধ খেয়ে অজ্ঞান হয়ে আছে। গুরু এসে বললেন, এর প্রাণ বাঁচতে পারে, যদি এই বড়ি কেউ খায়। এ বাঁচবে কিন্তু বড়ি যে খাবে সে মরে যাবে।

    “আর ওটাও বল—খ্যাঁচা ম্যাঁচা। সেই হঠযোগী যে মনে করেছিল যে পরিবারাদি — এরাই আমার আপনার লোক।”

    মধ্যাহ্নে ঠাকুর শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের প্রসাদ পাইলেন (Kathamrita)। বলরামের জগন্নাথদেবের সেবা আছে। তাই ঠাকুর বলেন, ‘বলরামের শুদ্ধ অন্ন।’ আহারান্তে কিঞ্চিৎ বিশ্রাম করিলেন।

    বৈকাল হইয়াছে। ঠাকুর ভক্তসঙ্গে (Kathamrita) সেই ঘরে বসিয়া আছেন। কর্তাভজা চন্দ্রবাবু ও রসিক ব্রাহ্মণটিও আছেন। ব্রাহ্মণটির স্বভাব একরকম ভাঁড়ের ন্যায়,—এক-একটি কথা কন আর সকলে হাসে।

    ঠাকুর কর্তাভজাদের সম্বন্ধে অনেক কথা বলিলেন,—রূপ, স্বরূপ, রজঃ, বীজ, পাকপ্রণালী ইত্যাদি।

    ঠাকুরের ভাবাবস্থা—শ্রীযুক্ত অতুল ও তেজচন্দ্রের ভ্রাতা

    ছটা বাজে। গিরিশের ভ্রাতা অতুল, ও তেজচন্দ্রের ভ্রাতা আসিয়াছেন। ঠাকুর ভাবসমাধিস্থ হইয়াছেন। কিয়ৎক্ষণ পরে ভাবে বলিতেছেন, “চৈতন্যকে ভেবে কি অচৈতন্য হয়? — ঈশ্বরকে চিন্তা করে কেউ কি বেহেড হয়?—তিনি যে বোধস্বরূপ!”

    আগন্তুকদের ভিতর কেউ কি মনে করিতেছিলেন যে, বেশি ঈশ্বরচিন্তা করিয়া ঠাকুরের মাথা খারাপ হইয়া গিয়াছে?

    এগিয়ে পড়’—কৃষ্ণধনের সামান্য রসিকতা

    ঠাকুর কৃষ্ণধন (Ramakrishna) নামক ওই রসিক ব্রাহ্মণকে বলিতেছেন — “কি সামান্য ঐহিক বিষয় নিয়ে তুমি রাতদিন ফষ্টিনাষ্টি করে সময় কাটাচ্ছ। ওইটি ঈশ্বরের দিকে মোড় ফিরিয়ে দাও। যে নুনের হিসাব করতে পারে, সে মিছরির হিসাবও করতে পারে।”

  • Ramakrishna 510: “আমি আর কি?—তিনি। আমি যন্ত্র, তিনি যন্ত্রী, আমার ভিতর ঈশ্বরের সত্তা রয়েছে! তাই এত লোকের আকর্ষণ বাড়ছে”

    Ramakrishna 510: “আমি আর কি?—তিনি। আমি যন্ত্র, তিনি যন্ত্রী, আমার ভিতর ঈশ্বরের সত্তা রয়েছে! তাই এত লোকের আকর্ষণ বাড়ছে”

    ৪৯ শ্রীশ্রীরথযাত্রা বলরাম-মন্দিরে

    দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১৩ই জুলাই
    কামিনী-কাঞ্চনত্যাগ ও পূর্ণাদি

    বিনোদ, দ্বিজ, তারক, মোহিত, তেজচন্দ্র, নারাণ, বলরাম, অতুল 

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) মাস্টারের প্রতি— আচ্ছা, লোকের তিল তিল করে ত্যাগ হয়, এদের কি অবস্থা।

    “বিনোদ বললে, ‘স্ত্রীর সঙ্গে শুতে হয়, বড়ই মন খারাপ হয় (Kathamrita)।’

    “দেখো, সঙ্গ হউক আর নাই হউক, একসঙ্গে শোয়াও খারাপ। গায়ের ঘর্ষণ, গায়ের গরম!

    “দ্বিজর কি অবস্থা! কেবল গা দোলায় আর আমার পানে তাকিয়ে থাকে, একি কম? সব মন কুড়িয়ে আমাতে এল, তাহলে তো সবই হল।”

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কি অবতার? 

    “আমি আর কি?—তিনি। আমি যন্ত্র, তিনি যন্ত্রী। এর (আমার) ভিতর ঈশ্বরের সত্তা রয়েছে! তাই এত লোকের আকর্ষণ বাড়ছে। ছুঁয়ে দিলেই হয়! সে টান সে আকর্ষণ ঈশ্বরেরই আকষর্ণ।

    “তারক (বেলঘরের) ওখান থেকে (দক্ষিণেশ্বর থেকে) বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। দেখলাম, এর ভিতর থেকে শিখার ন্যায় জ্বল্‌ জ্বল্‌ করতে করতে কি বেরিয়ে গেল,—পেছু পেছু!

    “কয়েকদিন পরে তারক আবার এল (দক্ষিণেশ্বরে)। তখন সমাধিস্থ হয়ে তার বুকে পা দিলে (Kathamrita)— এর ভিতর যিনি আছেন।

    “আচ্ছা, এমন ছোকরাদের মতন আর কি ছোকরা আছে!”

    মাস্টার — মোহিতটি বেশ। আপনার কাছে দু-একবার গিয়েছিল। দুটো পাশের পড়া আছে, আর ঈশ্বরে খুব অনুরাগ।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)— তা হতে পারে, তবে অত উঁচু ঘর নয়। শরীরের লক্ষণ তত ভাল নয়। মুখ থ্যাবড়ানো।

    “এদের উঁচুঘর। তবে শরীরধারণ করলেই বড় গোল। আবার শাপ হল তো সাতজন্ম আসতে হবে। বড় সাবধানে থাকতে হয়! বাসনা থাকলেই শরীরধারণ।”

    একজন ভক্ত — যাঁরা অবতার দেহধারণ করে এসেছেন(Kathamrita), তাঁদের কি বাসনা — ?

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) — দেখেছি, আমার সব বাসনা যায় নাই। এক সাধুর আলোয়ান দেখে বাসনা হয়েছিল, ওইরকম পরি। এখনও আছে। জানি কিনা আর-একবার আসতে হবে।

    বলরাম (সহাস্যে) — আপনার জন্ম কি আলোয়ানের জন্য? (সকলের হাস্য)

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)— একটা সৎ কামনা রাখতে হয়। ওই চিন্তা করতে করতে দেহত্যগ হবে বলে। সাধুরা চারধামের একধাম বাকী রাখে। অনেকে জগন্নাথক্ষেত্র বাকী রাখে। তাহলে জগন্নাথ চিন্তা করতে করতে শরীর যাবে।

    গেরুয়া পরা একব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করিয়া অভিবাদন করিলেন। তিনি ভিতরে ভিতরে ঠাকুরের নিন্দা করেন, তাই বলরাম হাসিতেছেন। ঠাকুর অন্তর্যামী, বলরামকে বলিতেছেন — “তা হোক, বলুকগে ভণ্ড।”

  • Ramakrishna 509: “তিনি নানারূপে দর্শন দেন, কখন নররূপে, কখন চিন্ময় ঈশ্বরীয় রূপে, রূপ মানতে হয়, কি বল?”

    Ramakrishna 509: “তিনি নানারূপে দর্শন দেন, কখন নররূপে, কখন চিন্ময় ঈশ্বরীয় রূপে, রূপ মানতে হয়, কি বল?”

    ৪৯ শ্রীশ্রীরথযাত্রা বলরাম-মন্দিরে

    প্রথম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১৩ই জুলাই

    পূর্ণ, ছোট নরেন, গোপালের মা

    “দৈবস্বভাব—দেবতার প্রকৃতি। এতে লোকভয় কম থাকে। যদি গলায় মালা, গায়ে চন্দন, ধূপধুনার গন্ধ দেওয়া যায়; তাহলে সমাধি হয়ে যায়!—ঠিক বোধ হয়ে যায় যে, অন্তরে নারায়ণ আছেন—নারায়ণ দেহধারণ (Ramakrishna) করে এসেছেন। আমি টের পেয়েছি।”

    পূর্বকথা—সুলক্ষণা ব্রাহ্মণির সমাধি—রণজিতের ভগবতী কন্যা

    “দক্ষিণেশ্বরে যখন আমার প্রথম এইরুপ অবস্থা হল, কিছুদিন পরে একটি ভদ্রঘরে বামুনের মেয়ে এসেছিল। বড় সুলক্ষণা। যাই গলায় মালা আর ধূপধুনা দেওয়া হল অমনি সমাধিস্থ। কিছুক্ষণ পরে আনন্দ,—আর ধারা পড়তে লাগল। আমি তখন প্রণাম করে বললুম, ‘মা, আমার হবে?’ তা বললে, ‘হাঁ!’ তবে পূর্ণকে আর একবার দেখা। তা দেখবার সুবিধা কই?

    “কলা বলে বোধ হয়। কি আশ্চর্য অংশ শুধু নয়, কলা!

    “কি চতুর!—পড়াতে নাকি খুব।—তবে তো ঠিক ঠাওরেছি!

    “তপস্যার জোরে নারায়ণ সন্তান হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ও-দেশে যাবার রাস্তায় রণজিত রায়ের দীঘি আছে। রণজিত রায়ের ঘরে ভগবতী কন্যা হয়ে জন্মেছিলেন। এখনও চৈত্রমাসে মেলা হয়। আমার বড় যাবার ইচ্ছা হয়!—আর এখন হয় না।

    “রণজিত রায় ওখানকার জমিদার ছিল। তপস্যার জোরে তাঁকে কন্যারূপে পেয়েছিল। মেয়েটিকে বড়ই স্নেহ করে। সেই স্নেহের গুণে তিনি আটকে ছিলেন, বাপের কাছ ছাড়া প্রায় হতেন না। একদিন সে জমিদারির কাজ করছে, ভারী ব্যস্ত; মেয়েটি ছেলের স্বভাবে কেবল বলছে, ‘বাবা, এটা কি; ওটা কি।’ বাপ অনেক মিষ্টি করে বললে — ‘মা, এখন যাও, বড় কাজ পড়েছে।’ মেয়ে কোনমতে যায় না। শেষে বাপ অন্যমনস্ক হয়ে বললে, ‘তুই এখান থেকে দূর হ’। মা তখন এই ছুতো করে বাড়ি থেকে চলে গেলেন। সেই সময় একজন শাঁখারী রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। তাকে ডেকে শাঁখা পরা হল। দাম দেবার কথায় বললেন, ঘরের অমুক কুলুঙ্গিতে টাকা আছে, লবে। এই বলে সেখান থেকে চলে গেলেন, আর দেখা গেল না। এদিকে শাঁখারী টাকার জন্য ডাকাডাকি করছে। তখন মেয়ে বাড়িতে নাই দেখে সকলে ছুটে এল। রণজিত রায় নানাস্থানে লোক পাঠালে সন্ধান করবার জন্য। শাঁখারীর টাকা সেই কুলুঙ্গিতে পাওয়া গেল। রণজিত রায় কেঁদে কেঁদে বেড়াচ্ছেন, এমন সময় লোকজন এসে বললে, যে, দীঘিতে কি দেখা যাচ্ছে। সকলে দীঘির ধারে গিয়ে দেখে যে শাঁখাপরা হাতটি জলের উপর তুলেছেন। তারপর আর দেখা গেল না। এখনও ভগবতীর পূজা ওই মেলার সময় হয়—বারুণীর দিনে (Kathamrita)।

    (মাস্টারকে)—“এ সব সত্য।”

    মাস্টার—আজ্ঞা, হাঁ।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—নরেন্দ্র এখন এ-সব বিশ্বাস করে।

    “পূর্ণর বিষ্ণুর অংশে জন্ম। মানসে বিল্বপত্র দিয়ে পূজা করলুম, তা হল না;—তুলসী-চন্দন দিলাম, তখন হল!

    “তিনি নানারূপে দর্শন দেন। কখন নররূপে, কখন চিন্ময় ঈশ্বরীয় রূপে। রূপ মানতে হয়। কি বল?”

    মাস্টার—আজ্ঞা, হাঁ!

    গোপালের মার প্রকৃতিভাব ও রূপদর্শন

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—কামারহাটির বামনী (গোপালের মা) কত কি দেখে! একলাটি গঙ্গার ধারে একটি বাগানে নির্জন ঘরে থাকে, আর জপ করে। গোপাল কাছে শোয়! (বলিতে বলিতে ঠাকুর চমকিত হইলেন)। কল্পনায় নয়, সাক্ষাৎ! দেখলে গোপালের হাত রাঙা! সঙ্গে সঙ্গে বেড়ায়!—মাই খায়!—কথা কয়! নরেন্দ্র শুনে কাঁদলে!

    “আমি আগে অনেক দেখতুম। এখন আর ভাবে তত দর্শন হয় না। এখন প্রকৃতিভাব কম পড়ছে। বেটাছেলের ভাব আসছে। তাই ভাব অন্তরে, বাহিরে তত প্রকাশ নাই।

    “ছোট নরেনের পুরুষভাব,—তাই মন লীন হয়ে যায়। ভাবাদি নাই। নিত্যগোপালের প্রকৃতিভাব। তাই খ্যাঁচা ম্যাঁচা;—ভাবে তার শরীর লাল হয়ে যায়।”

  • Ramakrishna 508: “সাশ্রুনয়নে—আহা! পরমার্থের সংযোগ, ঈশ্বরের জন্য ব্যাকুল না হলে এইরূপ হয় না।”

    Ramakrishna 508: “সাশ্রুনয়নে—আহা! পরমার্থের সংযোগ, ঈশ্বরের জন্য ব্যাকুল না হলে এইরূপ হয় না।”

    ৪৯ শ্রীশ্রীরথযাত্রা বলরাম-মন্দিরে

    প্রথম পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১৩ই জুলাই

    পূর্ণ, ছোট নরেন, গোপালের মা

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) বলরামের বাড়ির বৈঠকখানায় ভক্তসঙ্গে বসিয়া আছেন। (৩০শে আষাঢ়, ১২৯২) আষাঢ় শুক্লা প্রতিপদ, সোমবার, ১৩ই জুলাই, ১৮৮৫, বেলা ৯টা।

    কল্য শ্রীশ্রীরথযাত্রা। রথে বলরাম ঠাকুরকে নিমন্ত্রণ করিয়া আনিয়াছেন। বাড়িতে শ্রীশ্রীজগন্নাথ-বিগ্রহের নিত্য সেবা হয়। একখানি ছোট রথও আছে,—রথের দিন রথ বাহিরের বারান্দায় টানা হইবে (Kathamrita)।

    ঠাকুর মাস্টারের সহিত কথা কহিতেছেন। কাছে নারাণ, তেজচন্দ্র, বলরাম ও অন্যান্য অনেক ভক্তেরা। পূর্ণ সম্বন্ধে কথা হইতেছে। পূর্ণের বয়স পনর হইবে। ঠাকুর মাস্টারের সহিত কথা কহিতেছেন। কাছে নারাণ, তেজচন্দ্র, বলরাম ও অন্যান্য অনেক ভক্তেরা। পূর্ণ সম্বন্ধে কথা হইতেছে। পূর্ণের বয়স পনর হইবে। ঠাকুর তাঁহাকে দেখিবার জন্য ব্যাকুল হইয়াছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি) — আচ্ছা, সে (পূর্ণ) কোন পথ দিয়ে এসে দেখা করবে? — দ্বিজকে ও পূর্ণকে তুমিই মিলিয়ে দিও।

    “এক সত্তার আর এক বয়সের লোক, আমি মিলিয়ে দিই। এর মানে আছে। দুজনেরই উন্নতি হয়। পূর্ণর কেমন অনুরাগ দেখেছ।”

    মাস্টার—আজ্ঞা হাঁ, আমি ট্রামে করে যাচ্ছি, ছাদ থেকে আমাকে দেখে, রাস্তার দিকে দৌড়ে এল,—আর ব্যাকুল হয়ে সেইখান থেকেই নমস্কার করলে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) সাশ্রুনয়নে—আহা! আহা!—কি না ইনি আমার পরমার্থের (পরমার্থলাভের জন্য) সংযোগ করে দিয়েছেন। ঈশ্বরের জন্য ব্যাকুল না হলে এইরূপ হয় না।

    পূর্ণের পুরুষত্তা, দৈবস্বভাব,—তপস্যার জোরে নারায়ণ সন্তান

    “এ তিনজনের পুরুষসত্তা—নরেন্দ্র, ছোট নরেন আর পূর্ণ। ভবনাথের নয়—ওর মেদী ভাব (প্রকৃতিভাব)।

    “পূর্ণর যে অবস্থা, এতে হয় শীঘ্র দেহনাশ হবে—ঈশ্বরলাভ হল, আর কেন;—বা কিছুদিনের মধ্যে তেড়েফুঁড়ে বেরুবে (Kathamrita)।

     

  • Ramakrishna 507: “গুরুগিরি করা ভাল নয়। ঈশ্বরের আদেশ না পেলে আচার্য হওয়া যায় না, যে নিজে বলে, ‘আমি গুরু’ সে হীনবুদ্ধি”

    Ramakrishna 507: “গুরুগিরি করা ভাল নয়। ঈশ্বরের আদেশ না পেলে আচার্য হওয়া যায় না, যে নিজে বলে, ‘আমি গুরু’ সে হীনবুদ্ধি”

    ৪৮ শ্রীরামকৃষ্ণ কাপ্তেন, নরেন্দ্র প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে

    চতুর্থ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১৩ই জুন
    অহংকারই বিনাশের কারণ ও ঈশ্বরলাভের বিঘ্ন

    পূর্বকথা—কেশব ও গৌরী—সোঽহম্‌ অবস্থার পর দাসভাব 

    ভক্ত ও পূজাদি—ঈশ্বর ভক্তবৎসল—পূর্ণজ্ঞানী 

    “ঈশ্বরই (Ramakrishna) কর্তা আর সব তাঁর যন্ত্রস্বরূপ।

    “তাই জ্ঞানীরও অহংকার করবার জো নাই। মহিম্নস্তব যে লিখেছিল, তার অহংকার হয়েছিল। শিবের ষাড় যখন দাঁত বার করে দেখালে, তখন তার অহংকার চূর্ণ হয়ে গেল। দেখলে, এক-একটি দাঁত এক-এক মন্ত্র। তার মানে কি জানো? এ-সব মন্ত্র অনাদিকাল ছিল। তুমি কেবল উদ্ধার করলে।

    “গুরুগিরি করা ভাল নয়। ঈশ্বরের আদেশ না পেলে আচার্য হওয়া যায় না। যে নিজে বলে, ‘আমি গুরু’ সে হীনবুদ্ধি। দাঁড়িপাল্লা দেখ নাই? হালকা দিকটা উঁচু হয়, যে ব্যক্তি নিজে উঁচু হয়, সে হালকা। সকলেই গুরু হতে যায়! — শিষ্য পাওয়া যায় না!”

    ত্রৈলোক্য ছোট খাটটির উত্তরে ধারে মেঝেতে বসিয়াছিলেন। ত্রৈলোক্য গান গাইবেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলিতেছেন, “আহা! তোমার কি গান!” ত্রৈলোক্য তানপুরা লইয়া গান করিতেছেন—

    তুঝ্‌সে হাম্‌নে দিল্‌কো লাগায়া, যো কুছ্‌ হ্যায় সব্‌ তুঁহি হ্যায় ॥

    গান   —  তুমি সর্বস্ব আমার (হে নাথ!) প্রাণাধার সারাৎসার।
    নাহি তোমা বিনে কেহ ত্রিভুবনে আপনার বলিবার ॥

    গান শুনিয়া ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ভাবে বিভোর হইতেছেন। আর বলিতেছেন, “আহা! তুমিই সব! আহা! আহা!” গান সমাপ্ত হইল। ছয়টা বাজিয়া গিয়াছে। ঠাকুর মুখ ধুইতে ঝাউতালর দিকে যাইতেছেন। সঙ্গে মাস্টার।

    ঠাকুর হাসিতে হাসিতে গল্প করিতে করিতে যাইতেছেন। মাস্টারকে হঠাৎ বলিলেন, “কই তোমরা খেলে না? আর ওরা খেলে না?”

    ঠাকুর ভক্তদের প্রসাদ দিবার জন্য ব্যস্ত হইয়াছেন।

    নরেন্দ্র ও ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ

    আজ সন্ধ্যার পর ঠাকুরের কলিকাতায় যাইবার কথা আছে। ঝাউতলা থেকে ফিরিবার সময় মাস্টারকে বলিতেছেন,—“তাই তো কার গাড়িতে যাই?”

    সন্ধ্যা হইয়াছে। ঠাকুরের ঘরে প্রদীপ জ্বালা হইল ও ধুনা দেওয়া হইতেছে। ঠাকুরবাড়িতে সব স্থানে ফরাশ আলো জ্বালিয়া দিল! রোশনচৌকি বাজিতেছে। এবার দ্বাদশ শিব মন্দিরে, বিষ্ণুঘরে ও কালীঘরে আরতি হইবে।

    ছোট খাটটিতে বসিয়া ঠাকুরদের নাম কীর্তনান্তর ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) মার ধ্যান করিতেছেন। আরতি হইয়া গেল। কিয়ৎক্ষণ পরে ঠাকুর এদিক-ওদিক পায়চারি করিতেছেন ও ভক্তদের সঙ্গে মাঝে মাঝে কথা কহিতেছেন। আর কলিকাতায় যাইবার জন্য মাস্টারের সঙ্গে পরামর্শ করিতেছেন।

    এমন সময়ে নরেন্দ্র আসিয়া উপস্থিত। সঙ্গে শরৎ ও আরও দুই-একটি ছোকরা। তাঁহারা আসিয়া ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিলেন।

    নরেন্দ্রকে দেখিয়া ঠাকুরের স্নেহ উথলিয়া পড়িল। যেমন কচি ছেলেকে আদর করে, ঠাকুর নরেন্দ্রের মুখে হাত দিয়া আদর (Kathamrita) করিতে লাগিলেন ও স্নেহপূর্ণ স্বরে বলিলেন, “তুমি এসেছ!”

    ঘরের মধ্যে পশ্চিমাস্য হইয়া ঠাকুর দাঁড়াইয়া আছেন। নরেন্দ্র ও আর কয়টি ছোকরা ঠাকুরকে প্রণাম করিয়া পূর্বাস্য হইয়া তাঁহার সম্মুখে কথা কহিতেছেন। ঠাকুর মাস্টারের দিকে মুখ ফিরাইয়া বলিতেছেন, “নরেন্দ্র এসেছে, আর যাওয়া যায়? লোক দিয়ে নরেন্দ্রকে ডেকে পাঠয়েছিলাম; আর যাওয়া যায়? কি বল?”

    মাস্টার—যে আজ্ঞা, আজ তবে থাক্‌।

    শ্রীরামকৃষ্ণ—আচ্ছা কাল যাব, হয় নৌকায় নয় গাড়িতে। (অন্যান্য ভক্তদের প্রতি) তোমরা তবে এস আজ, রাত হল।

    ভক্তেরা সকলে একে এক প্রণাম করিয়া বিদায় (Kathamrita) গ্রহণ করিলেন।

  • Ramakrishna 506: “একটি সাপ ব্যাঙকে তাড়া করে আসছে, আর কামড়াতে গিয়ে তার বিষ, ওই খুলির ভিতর পড়ে গেল”

    Ramakrishna 506: “একটি সাপ ব্যাঙকে তাড়া করে আসছে, আর কামড়াতে গিয়ে তার বিষ, ওই খুলির ভিতর পড়ে গেল”

     ৪৮ শ্রীরামকৃষ্ণ কাপ্তেন, নরেন্দ্র প্রভৃতি ভক্তসঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে

    চতুর্থ পরিচ্ছেদ

    ১৮৮৫, ১৩ই জুন
    অহংকারই বিনাশের কারণ ও ঈশ্বরলাভের বিঘ্ন

    পূর্বকথা—কেশব ও গৌরী—সোঽহম্‌ অবস্থার পর দাসভাব 

    ভক্ত ও পূজাদি—ঈশ্বর ভক্তবৎসল—পূর্ণজ্ঞানী 

    “লোকটি অমনি ব্যাকুল হয়ে সেই ঔষধ খুঁজতে স্বাতী নক্ষত্রে বেরুল! এমন সময়ে বৃষ্টি হচ্ছে। তখন ব্যাকুল হয়ে ঈশ্বরকে বলছে, ঠাকুর (Ramakrishna)! এইবার মরার মাথা জুটিয়ে দাও। খুঁজতে খুঁজতে দেখে, একটি মরার খুলি, তাতে স্বাতী নক্ষত্রের জল পড়েছে; তখন সে আবার প্রার্থনা করে বলতে লাগল, দোহাই ঠাকুর! এইবার আর কটি জুটিয়া দাও—ব্যাঙ ও সাপ! তার যেমন ব্যাকুলতা তেমনি সব জুটে গেল। দেখতে দেখতে একটি সাপ ব্যাঙকে তাড়া করে আসছে, আর কামড়াতে গিয়ে তার বিষ, ওই খুলির ভিতর পড়ে গেল (Kathamrita)।

    “ঈশ্বরের শরণাগত হয়ে, তাঁকে ব্যাকুল হয়ে ডাকলে, তিনি শুনবেনই শুনবেন—সব সুযোগ করে দেবেন।”

    কাপ্তেন—কেয়া দৃষ্টান্ত!

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna)—হাঁ, তিনি সুযোগ করে দেন। হয়তো,— বিয়ে হল না, সব মন ঈশ্বরকে দিতে পারলে, হয়তো ভায়েরা রোজগার করতে লাগল বা একটি ছেলে মানুষ হয়ে গেল, তাহলে তোমায় আর সংসার দেখতে হল না। তখন তুমি অনায়াসে ষোল আনা মন ঈশ্বরকে দিতে পার। তবে কামিনী-কাঞ্চন ত্যাগ না হলে হবে না। ত্যাগ হলে তবে অজ্ঞান অবিদ্যা নাশ হয়। আতস কাঁচের উপর সূর্যের কিরণ পড়লে কত জিনিস পুড়ে যায়। কিন্তু ঘরের ভিতর ছায়া, সেখানে আতস কাঁচ লয়ে গেলে ওটি হয় না। ঘর ত্যাগ করে বাহিরে এসে দাঁড়াতে হয়।

    ঈশ্বরলাভের পর সংসার—জনকাদির

    “তবে জ্ঞানলাভের পর কেউ সংসারে থাকে। তারা ঘর-বার দুইই দেখতে পায়। জ্ঞানের আলো সংসারের ভিতর পড়ে, তাই তারা ভাল, মন্দ, নিত্য, অনিত্য,— এ-সব সে আলোতে দেখতে পায়।

    “যারা অজ্ঞান, ঈশ্বরকে (Ramakrishna) মানে না, অথচ সংসারে আছে, তারা যেন মাটির ঘরের ভিতর বাস করে। ক্ষীণ আলোতে শুধু ঘরের ভিতরটি দেখতে পায়! কিন্তু যারা জ্ঞানলাভ করেছে, ঈশ্বরকে জেনেছে, তারপর সংসারে আছে, তারা যেন সার্সীর ঘরের ভিতর বাস করে। ঘরের ভিতরও দেখতে পায়, ঘরের বাহিরের জিনিসও দেখতে (Kathamrita) পায়। জ্ঞান-সূর্যের আলো ঘরের ভিতরে খুব প্রবেশ করে। সে ব্যক্তি ঘরের ভিতরের জিনিস খুব স্পষ্টরূপে দেখতে পায়,—কোন্‌টি ভাল, কোন্‌টি মন্দ, কোন্‌টি নিত্য, কোন্‌টি অনিত্য।

LinkedIn
Share