Tag: রামকৃষ্ণ পরমহংস

  • Ramakrishna 399: নিজের হৃদয়ে হাত রাখিয়া রামকৃষ্ণ বলিলেন, “এর ভিতর যদি কিছু থাকে, অজ্ঞান ও অবিদ্যা একেবারে চলে যায়

    Ramakrishna 399: নিজের হৃদয়ে হাত রাখিয়া রামকৃষ্ণ বলিলেন, “এর ভিতর যদি কিছু থাকে, অজ্ঞান ও অবিদ্যা একেবারে চলে যায়

    কাঁচা সুপারি বা কাঁচা বাদামের ভিতরের সুপারি বা বাদাম শাঁস থেকে তফাৎ করা যায় না। কিন্তু পাকা অবস্থায় সুপারি বা বাদাম আলাদা, শাঁস আলাদা হয়ে যায়। পাকা অবস্থায় রস শুকিয়ে যায়—ব্রহ্মজ্ঞান হলে বিষয় শুকিয়ে যায়।

    কিন্তু সে জ্ঞান বড় কঠিন—বললেই ব্রহ্মজ্ঞান হয় না। কেউ জ্ঞানের ভান করে, একজন বড় মিথ্যা কথা কইতো—আবার এদিকে বলতো, “আমার ব্রহ্মজ্ঞান হয়েছে।”

    কোন লোক তাকে তিরস্কার করাতে এসে বললে, “কেন, জগত তো স্বপ্নবৎ। সবই যদি মিথ্যা হয়, তবে সত্য কথাটাই কি ঠিক? মিথ্যাটাও মিথ্যা, সত্যটাও মিথ্যা!”

    শ্রী রামকৃষ্ণ ভক্তদের সঙ্গে মেঝেতে মাদুরের উপর বসিয়া আছেন। ভক্তদের বলিতেছেন, “আমার পায়ে একটু হাত বুলিয়ে দে তো।” ভক্তেরা পদসেবা করিতেছেন।
    মাস্টারের প্রতি সহাস্যে, “এই পদসেবার অনেক মানে আছে।”

    আবার নিজের হৃদয়ে হাত রাখিয়া বলিতেছেন, “এর ভিতর যদি কিছু থাকে, অজ্ঞান ও বিদ্যা একেবারে চলে যায়।”
    হঠাৎ শ্রী রামকৃষ্ণ গম্ভীর হইলেন, যেন কী গূঢ় কথা বলিবেন।

    শ্রী রামকৃষ্ণ মাস্টারের প্রতি—
    “এখানে অপর লোক কেউ নাই। সেদিন হরিশ কাছে ছিল। দেখলাম খোলটি ছেড়ে সচিদানন্দ বাহিরে এলো, এসে বললে ‘আমি যুগে যুগে অবতার।’
    তখন ভাবলাম বুঝি মনের খেয়ালে ওইসব কথা বলছি।
    তারপর চুপ করে থেকে দেখলাম— তখন দেখি আপনি বলছেন, ‘শক্তির আরাধনা চৈতন্য করেছিল।’”

    ভক্তেরা সকলে অবাক হইয়া শুনিতে চান। কেউ কেউ ভাবিতে চান— সচিদানন্দ ভগবান কি শ্রী রামকৃষ্ণের রূপ ধারণ করিয়া আমাদের কাছে বসিয়া আছেন? ভগবান কি আবার অবতীর্ণ হইয়াছেন?

    শ্রী রামকৃষ্ণ কথা কহিতেছেন, মাস্টারকে সম্বোধন করিয়া আবার বলিতেছেন, “দেখলাম পূর্ণ আবির্ভাব, তবে সত্য, গুণের ঐশ্বর্য।”

    ভক্তরা সকলে অবাক হইয়া এই সকল কথা শুনিতেছেন।

  • Ramakrishna 398: আত্মাটি যেন ভিতরে নড়নড় করে, তেমনি এই বিষয়বুদ্ধির জল শুকিয়ে গেলে আত্মজ্ঞান হয়

    Ramakrishna 398: আত্মাটি যেন ভিতরে নড়নড় করে, তেমনি এই বিষয়বুদ্ধির জল শুকিয়ে গেলে আত্মজ্ঞান হয়

    তখন ব্যাসদেব যমুনাকে সম্মোধন করিয়া বলিলেন— “যমুনা, আমি যদি কিছু না খেয়ে থাকি, তাহলে তোমার জল দুই ভাগ হয়ে যাক, আর মাঝখানে রাস্তা হোক, আমরা যেন পার হতে পারি।”

    ঠিক তেমনি হলো— যমুনার জল দুই ভাগ হয়ে গেল, মাঝখানে ওপারে যাবার পথ হলো। সেই পথ দিয়েই ব্যাসদেব ও গোপীরা সকলে পার হয়ে গেলেন।

    আমি খাই নাই—তার মানে এই যে, আমি সেই শুদ্ধাত্মা, শুদ্ধার্থ, নির্লিপ্ত প্রকৃতির পাঠ; তার ক্ষুধা-তৃষ্ণা নেই, জন্ম-মৃত্যু নাই, অজর-অমর, সুমেরুবৎ।

    যার এই ব্রহ্মজ্ঞান হয়েছে, সে জীবনমুক্ত। সে ঠিক বুঝতে পারে যে আত্মা আলাদা আর দেহ আলাদা। ভগবানকে দর্শন করলে দেখার তো বুদ্ধিই আর থাকে না। দুটি আলাদা—যেমন নারকেলের জল শুকিয়ে গেলে শাঁস আলাদা আর খোল আলাদা হয়ে যায়। আত্মাটি যেন ভিতরে নড়নড় করে, তেমনি এই বিষয়বুদ্ধির জল শুকিয়ে গেলে আত্মজ্ঞান হয়; আত্মা আলাদা আর দেহ আলাদা বোধ হয়।

    কাঁচা সুপারি বা কাঁচা বাদামের ভিতরের সুপারি বা বাদাম শাঁস থেকে তফাৎ করা যায় না। কিন্তু পাকা অবস্থায় সুপারি বা বাদাম আলাদা, শাঁস আলাদা হয়ে যায়। পাকা অবস্থায় রস শুকিয়ে যায়—ব্রহ্মজ্ঞান হলে বিষয় শুকিয়ে যায়।

    কিন্তু সে জ্ঞান বড় কঠিন—বললেই ব্রহ্মজ্ঞান হয় না। কেউ জ্ঞানের ভান করে, একজন বড় মিথ্যা কথা কইতো—আবার এদিকে বলতো, “আমার ব্রহ্মজ্ঞান হয়েছে।”

    কোন লোক তাকে তিরস্কার করাতে এসে বললে, “কেন, জগত তো স্বপ্নবৎ। সবই যদি মিথ্যা হয়, তবে সত্য কথাটাই কি ঠিক? মিথ্যাটাও মিথ্যা, সত্যটাও মিথ্যা!”

    আত্মাটি যেন ভিতরে নড়নড় করে, তেমনি এই বিষয়বুদ্ধির জল শুকিয়ে গেলে আত্মজ্ঞান হয়

  • Ramakrishna 397: জ্ঞান সদর মহল পর্যন্ত যেতে পারে, কিন্তু ভক্তি অন্দর মহলে যায়

    Ramakrishna 397: জ্ঞান সদর মহল পর্যন্ত যেতে পারে, কিন্তু ভক্তি অন্দর মহলে যায়

    (এই বলিয়া তাহার দিকে একদৃষ্টে সর্বদা তাকাইয়া রহিলেন, যেন তাহার হৃদয়ের অন্তরতম প্রদেশের সমস্ত ভাব দেখিতেছেন। মোহিনী মোহন কী ভাবিতেছিলেন—‘ঈশ্বরের জন্য সব যাওয়াই ভালো।’)

    কিয়ৎক্ষণ পরে ঠাকুর আবার বলিতেছেন—

    “ভাগবত পণ্ডিতকে একটি পাশ দিয়ে ঈশ্বর রেখে দেন—তা না হলে ভাগবত কে শুনাবে? রেখে দেন লোক শিক্ষার জন্য। মা সেইজন্য সংসারে রেখেছেন।”

    এইবার ব্রাহ্মণ যুবকটিকে সম্মোধন করিয়া বলিতেছেন—

    (জ্ঞানযোগ ও ভক্তিযোগ, ব্রহ্মজ্ঞানীর অবস্থা ও জীবন্মুক্ত)

    শ্রীরামকৃষ্ণ যুবকের প্রতি বলিতেছেন— “তুমি জ্ঞানচর্চা ছেড়ে ভক্তি নাও। ভক্তিই সার। আজ তোমার কি, তিন দিন হলো?”

    ব্রাহ্মণ যুবক হাত জোড় করে বলিল— “আজ্ঞে, হ্যাঁ।”

    শ্রীরামকৃষ্ণ বলিলেন— “বিশ্বাস করো, নির্ভর করো। তাহলেই নিজের কিছু করতে হবে না—মা কালী সব করবেন।

    জ্ঞান সদর মহল পর্যন্ত যেতে পারে, কিন্তু ভক্তি অন্দরমহলে যায়।
    শ্রদ্ধাপূর্ণ, নির্লিপ্ত—বিদ্যা ও অবিদ্যা তাঁর ভেতরেই আছে। তিনি নির্লিপ্ত।
    যেমন, বায়ুতে কখনও সুগন্ধ, কখনও দুর্গন্ধ থাকে—তবু বায়ু নিজে নির্লিপ্ত।

    ব্যাসদেব যমুনা পার হচ্ছিলেন। গোপীরাও সেখানে উপস্থিত—তারাও পার হবেন।
    দধি, দুধ, ননী বিক্রি করতে যাচ্ছেন, কিন্তু নৌকা ছিল না।
    কেমন করে পার হবেন—সকলেই ভাবিতেছেন।

    এমন সময় ব্যাসদেব বলিলেন—
    “আমার বড় ক্ষুধা পেয়েছে।”

    তখন গোপীরা তাঁকে ক্ষীর, সর, ননী—সব খাওয়াতে লাগলেন।
    ব্যাসদেব প্রায় সবই খেয়ে ফেলিলেন।

    তখন ব্যাসদেব যমুনাকে সম্মোধন করিয়া বলিলেন—
    “যমুনা, আমি যদি কিছু না খেয়ে থাকি, তাহলে তোমার জল দুই ভাগ হয়ে যাক, আর মাঝখানে রাস্তা হোক, আমরা যেন পার হতে পারি।”

    ঠিক তেমনি হলো—
    যমুনার জল দুই ভাগ হয়ে গেল, মাঝখানে ওপারে যাবার পথ হলো।
    সেই পথ দিয়েই ব্যাসদেব ও গোপীরা সকলে পার হয়ে গেলেন।

  • Ramakrishna 396: আপনা আপনি ভক্তি আসা—সংস্কার না থাকলে হয় না

    Ramakrishna 396: আপনা আপনি ভক্তি আসা—সংস্কার না থাকলে হয় না

    ঠাকুর ছোট নরেনকে একদৃষ্টে দেখিতেছেন। দেখিতে দেখিতে সমাধিস্ত হইলেন। শুদ্ধার্থ ভক্তের ভিতর ঠাকুর কি নারায়ণ দর্শন করিতেছেন!

    ভক্তেরা এক দৃষ্টে সেই সমাধি চিত্র দেখিতেছেন।

    কিয়ৎ পরে সমাধি ভঙ্গ হইল, ঠাকুরের বায়ু স্থির হইয়া গিয়েছিল। এইবার দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিলেন। ক্রমে বহির্জগতে মন আসিতেছে। ভক্তদের দিকে দৃষ্টিপাত করিতেছেন।

    এখনও ভাবস্থ হইয়া রহিয়াছেন। এবার প্রত্যেক ভক্তকে সম্বোধন করিয়া কাহার কী হইবে ও কাহার কীরূপ অবস্থা, কিছু কিছু বলিতেছেন।

    ছোট নরেনের প্রতি —
    “তোকে দেখবার জন্য ব্যাকুল হচ্ছিলাম। তোর হবে, এক একবার। আচ্ছা, তুই কী ভালোবাসিস—জ্ঞান না ভক্তি?”
    ছোট নরেন: “শুধু ভক্তি।”
    শ্রীরামকৃষ্ণ: “আমাকে না জানলে ভক্তি কাকে করবি?”
    (মাস্টারকে দেখাইয়া সহাস্যে)
    “তবে শ্রদ্ধার! তা যে কালে বলেছে—শুধু ভক্তি চাই, এর অবশ্য মানে আছে।
    আপনা আপনি ভক্তি আসা—সংস্কার না থাকলে হয় না। এইটি প্রেমভক্তির লক্ষণ।
    জ্ঞানভক্তি—বিচার করা ভক্তি।”

    ছোট নরেনের প্রতি: “দেখি তোর শরীর, জামা খোল দেখি। বেশ বুকের আয়তন! তোর হবে। মাঝে মাঝে আসিস।”

    ঠাকুর এখনও ভাবস্থ। অন্য ভক্তদের সস্নেহে এক একজনকে সম্বোধন করিয়া আবার বলিতেছেন—

    পল্টুর প্রতি: “তোরও হবে, তবে একটু দেরিতে হবে।”

    বাবুরামের প্রতি: “তোকে টানছি না কেন? শেষে কী একটা হাঙ্গামা হবে!”

    মোহিনী মোহনের প্রতি:
    “তুমি তো আছই—একটু বাকি আছে, সেটুকু গেলে কর্মকাজ, সংসার—কিছু থাকে না। সব কাজ যাওয়া কি ভালো?”

    (এই বলিয়া তাহার দিকে একদৃষ্টে সর্বদা তাকাইয়া রহিলেন, যেন তাহার হৃদয়ের অন্তরতম প্রদেশের সমস্ত ভাব দেখিতেছেন। মোহিনী মোহন কী ভাবিতেছিলেন—‘ঈশ্বরের জন্য সব যাওয়াই ভালো।’)

    কিয়ৎক্ষণ পরে ঠাকুর আবার বলিতেছেন—

    “ভাগবত পণ্ডিতকে একটি পাশ দিয়ে ঈশ্বর রেখে দেন—তা না হলে ভাগবত কে শুনাবে? রেখে দেন লোক শিক্ষার জন্য। মা সেইজন্য সংসারে রেখেছেন।”

  • Ramakrishna 395: দেখো দেখি, কোথায় গঙ্গাস্নানে এসেছে, যত সংসারের কথা

    Ramakrishna 395: দেখো দেখি, কোথায় গঙ্গাস্নানে এসেছে, যত সংসারের কথা

    অভিনয় দৃষ্টি ভক্তরা সকলেই হো হো করিয়া হাসিতে লাগিলেন। পল্টু হাসিয়া গড়াগড়ি দিতেছেন। ঠাকুর পল্টুর দিকে তাকাইয়া মাস্টারকে বলিতেছেন, ছেলে মানুষ কিনা তাই হেসে গড়াগড়ি দিচ্ছে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ- পল্টুর প্রতি সহাস্যে তোর বাবাকে এসব কথা বলিস নি। যাও একটু টান ছিল তাও যাবে। ওরা একে ইংলিশ ম্যান লোক।

    আহ্নিক জপ ও গঙ্গা স্নানের সময়কথা

    ভক্তদের প্রতি- অনেকে আহ্নিক করিবার সময় যত রাজ্যের কথা কয়। কিন্তু কথা কইতে নাই। তাই ঠোঁট বুঝে যত প্রকার ইশারা করতে থাকে। এটা নিয়ে এসো, ওটা নিয়ে এসো। হু উহু এইসব করে।

    আবার কেউ মালা জপ করছে। তার ভেতর থেকেই মাছ দর করে। জপ করতে করতে হয়তো আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, ওই মাছটা। যত হিসাব সেই সময়।

    কেউ হয়তো গঙ্গাস্নান করতে এসেছে। সে সময় কোথা ভগবান চিন্তা করবে, গল্প করতে বসে গেল। যত রাজ্যের গল্প। তোর ছেলের বিয়ে হল, কি গয়না দিলে! অমুকের বড় ব্যামো, অমুক শ্বশুরবাড়ি থেকে এসেছে কিনা, অমুক কনে দেখতে গিয়েছিল, তার দাওয়াত হওয়া সাধ আহ্লাদ খুব করবে। হরিশ আমার বড় ন্যাওটা। আমায় ছেড়ে এক দণ্ড থাকতে পারে না। এতদিন আসতে পারিনি। মা অমুকের মেয়ের পাকা দেখা বড় ব্যস্ত ছিলাম।

    দেখো দেখি, কোথায় গঙ্গাস্নানে এসেছে, যত সংসারের কথা

    ঠাকুর ছোট নরেনকে একদৃষ্টে দেখিতেছেন। দেখিতে দেখিতে সমাধিস্ত হইলেন। শুদ্ধার্থ ভক্তের ভিতর ঠাকুর কি নারায়ণ দর্শন করিতেছেন!

    ভক্তেরা এক দৃষ্টে সেই সমাধি চিত্র দেখিতেছেন।

    কিয়ৎ পরে সমাধি ভঙ্গ হইল, ঠাকুরের বায়ু স্থির হইয়া গিয়েছিল। এইবার দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিলেন। ক্রমে বহির্জগতে মন আসিতেছে। ভক্তদের দিকে দৃষ্টিপাত করিতেছেন।

  • Ramakrishna 394: ঠাকুর পল্টুর দিকে তাকাইয়া মাস্টারকে বলিতেছেন, ছেলে মানুষ কিনা তাই হেসে গড়াগড়ি দিচ্ছে

    Ramakrishna 394: ঠাকুর পল্টুর দিকে তাকাইয়া মাস্টারকে বলিতেছেন, ছেলে মানুষ কিনা তাই হেসে গড়াগড়ি দিচ্ছে

    ঠাকুরের জন্য মোহিনী মোহন চ্যাংড়া করিয়া সন্দেশ আনিয়াছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ- সন্দেশ কার?

    বাবুরাম- মোহিনীকে দেখাইয়া দিলেন।

    ঠাকুর ‘প্রণব’ উচ্চারণ করিয়া সন্দেশ স্পর্শ করিলেন ও কিঞ্চিৎ গ্রহণ করিয়া প্রসাদ করিয়া দিলেন। অতঃপর সেই সন্দেশ লইয়া ভক্তদের দিতেছেন। কী আশ্চর্য, ছোট নরেনকে ও দুই-একটি ছোকরা ভক্তকে নিজে খাওয়াইয়া দিতেছেন।

    শ্রী রামকৃষ্ণ মাস্টারের প্রতি- এর একটি মানে আছে। নারায়ণ শুদ্ধাত্মাদের ভিতরে বেশি প্রকাশ। ও দেশে যখন যেতুম, ঐরূপ ছেলেদের কারও কারও মুখে নিজে খাবার দিতাম। চিনে শাঁখারি বলত, উনি আমাদের খাইয়ে দেন না কেন? কেমন করে দেব, কেউ ভাজ মেগো, কেউ অমুক মেগো। খাইয়ে দেবে?

    সমাধি মন্দিরে ভক্তদের সম্বন্ধে মহাবাক্য?

    ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ শুদ্ধ ভক্তদিগকে পাইয়া আনন্দে ভাসিতেছেন ও ছোট খাটটিতে বসিয়া বসিয়া তাহাদিগকে কীর্তনীয়া ঢং দেখাইয়া হাসিতেছেন। কীর্তনি সেজেগুজের সম্প্রদায়ের সঙ্গে গান গাইতেছে কীর্তনি দাঁড়াইয়া হাতের রঙিন রুমাল মাঝে মাঝে ঢং করিয়া কাশিতেছে। নথ তুলিয়া থুথু ফেলিতেছে। আবার যদি কোনও বিশিষ্ট ব্যক্তি আসিয়া পড়ে গান গাইতেই তাহাকে অভ্যর্থনা করিতেছে ও বলিতেছে, আসুন আবার মাঝে মাঝে হাতের কাপড় সরাইয়া তাবিজ অনন্ত ও বাউটি ইত্যাদি অলংকার দেখাইতেছে।

    অভিনয় দৃষ্টি ভক্তরা সকলেই হো হো করিয়া হাসিতে লাগিলেন। পল্টু হাসিয়া গড়াগড়ি দিতেছেন। ঠাকুর পল্টুর দিকে তাকাইয়া মাস্টারকে বলিতেছেন, ছেলে মানুষ কিনা তাই হেসে গড়াগড়ি দিচ্ছে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ- পল্টুর প্রতি সহাস্যে তোর বাবাকে এসব কথা বলিস নি। যাও একটু টান ছিল তাও যাবে। ওরা একে ইংলিশ ম্যান লোক।

  • Ramakrishna 393: “ওগো, তুমি আমার কী করলে গো! আমার যে বাবা-মা আছে গো!”

    Ramakrishna 393: “ওগো, তুমি আমার কী করলে গো! আমার যে বাবা-মা আছে গো!”

    বাবুরাম (সহাস্যে)- আমি ওইটি চাই।

    বাবুরাম (সহাস্যে)- আপনি নিয়ে আসুন

    শ্রী রামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি)- রাখাল ছিল সে এক। তার বাপের মত ছিল। এরা থাকলে হাঙ্গামা হবে।

    (বাবুরামের প্রতি)- তুই দুর্বল। তোর সাহস কম। দেখ দেখি ছোট নরেন কেমন বলে আমি এক্কেবারে এসে থাকব।
    এতক্ষণে ঠাকুর ছোকরা ভক্তদের মধ্যে আসিয়া মেঝেতে মাদুরের উপর বসিয়া আছেন। মাস্টার তাঁহার কাছে বসিয়া আছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারকে)- আমি কামিনী কাঞ্চন-ত্যাগী খুঁজছি। মনে করি, এ বুঝি থাকবে। সকলেই এক একটা ওজর করে।

    একটা ভূত সঙ্গী সঙ্গী খুঁজছিল। শনি-মঙ্গলবারে অপঘাতে মৃত্যু হলে ভূত হয়—তাই সে ভূতটা যেই দেখত, কেউ ছাদ থেকে পড়ে গেছে কি হোঁচটে মূর্ছিত হয়ে পড়েছে, অমনি দৌড়ে যেত। এই মনে করে যে, এটার অপঘাতে মৃত্যু হয়েছে, এবার ভূত হবে, আর আমার সঙ্গী হবে। কিন্তু তার এমনই কপাল যে, যাকেই দেখে, সব শালারা বেঁচে ওঠে—সঙ্গী আর জোটে না।

    দেখ না, রাখাল পরিবার পরিবার করে বলে, “আমার স্ত্রীর কী হবে?” নরেন্দ্র বুকে হাত দেওয়াতে বেহুঁশ হয়ে গিয়েছিল, তখন বলে, “ওগো, তুমি আমার কী করলে গো! আমার যে বাবা-মা আছে গো!”

    আমায় তিনি এ অবস্থায় রেখেছেন কেন? চৈতন্যদেব সন্ন্যাস করলেন—সবাই প্রণাম করবে বলে; যারা একবার নমস্কার করবে, তারা উদ্ধার হয়ে যাবে।

    ঠাকুরের জন্য মোহিনী মোহন চ্যাংড়া করিয়া সন্দেশ আনিয়াছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ- সন্দেশ কার?

    বাবুরাম- মোহিনীকে দেখাইয়া দিলেন।

    ঠাকুর ‘প্রণব’ উচ্চারণ করিয়া সন্দেশ স্পর্শ করিলেন ও কিঞ্চিৎ গ্রহণ করিয়া প্রসাদ করিয়া দিলেন। অতঃপর সেই সন্দেশ লইয়া ভক্তদের দিতেছেন। কী আশ্চর্য, ছোট নরেনকে ও দুই-একটি ছোকরা ভক্তকে নিজে খাওয়াইয়া দিতেছেন।

  • Ramakrishna 392: অজ্ঞান কাঁটা তুলবার জন্য জ্ঞান কাঁটা জোগাড় করতে হয়

    Ramakrishna 392: অজ্ঞান কাঁটা তুলবার জন্য জ্ঞান কাঁটা জোগাড় করতে হয়

    জজ অনুকূল মুখোপাধ্যায় জামাইয়ের ভাই আসিয়াছেন

    শ্রী রামকৃষ্ণ- তুমি নরেন্দ্র কে জানো?

    জামাইয়ের ভাই- আজ্ঞে হ্যাঁ নরেন্দ্র বুদ্ধিমান ছোকরা।

    শ্রী রামকৃষ্ণ (ভক্তদের প্রতি)- ইনি ভালো লোক। যে কালে নরেন্দ্রের সুখ্যাতি করেছেন, সেদিন নরেন্দ্র এসেছিল। ত্রৈলোকের সঙ্গে সেদিন গান গাইলে কিন্তু ও গানটি সেদিন আলুনি লাগলো।

    বাবুরাম ও দুদিক রাখা, জ্ঞান-অজ্ঞানের পার হও

    ঠাকুর বাবুরামের দিকে চাহিয়া কথা কহিতেছেন। মাস্টার যে স্কুলে অধ্যাপনা করেন, বাবুরাম সে স্কুলে এন্ট্রান্স ক্লাসে পড়েন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (বাবুরামের প্রতি)- তোর বই কই, পড়াশোনা করবি না

    মাস্টারের প্রতি- ও দুদিক রাখতে চায়।

    বড় কঠিন পথ। একটু তাঁকে জানলে কি হবে। বশিষ্ঠ দেব তারই পুত্র শোক হল। লক্ষণ অবাক হয়ে রামকে জিজ্ঞাসা করলেন। রাম বললেন, ভাই আর আশ্চর্য কি, যার জ্ঞান আছে তার অজ্ঞান আছে। ভাই তুমি জ্ঞান-গানের পার হও। পায়ে কাঁটা ফুটলে, আরেকটি কাঁটা খুঁজে আনতে হয়। সেই কাঁটা দিয়ে প্রথম কাঁটা তুলতে হয়। তারপর দুটি কাঁটাই ফেলে দিতে হয়। তাই অজ্ঞান কাঁটা তুলবার জন্য জ্ঞান কাঁটা জোগাড় করতে হয়। তারপর জ্ঞান-অজ্ঞানের পারে যেতে হয়।

    বাবুরাম (সহাস্যে)- আমি ওইটি চাই।

    বাবুরাম (সহাস্যে)- আপনি নিয়ে আসুন

    শ্রী রামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি)- রাখাল ছিল সে এক। তার বাপের মত ছিল। এরা থাকলে হাঙ্গামা হবে।

    (বাবুরামের প্রতি)- তুই দুর্বল। তোর সাহস কম। দেখ দেখি ছোট নরেন কেমন বলে আমি এক্কেবারে এসে থাকব।

    এতক্ষণে ঠাকুর ছোকরা ভক্তদের মধ্যে আসিয়া মেঝেতে মাদুরের উপর বসিয়া আছেন। মাস্টার তাঁহার কাছে বসিয়া আছেন।

  • Ramakrishna 391: নরেন্দ্রের উপর যত ব্যাকুলতা হয়েছিল এর উপর (ছোট নরেনের) তত হয় নাই

    Ramakrishna 391: নরেন্দ্রের উপর যত ব্যাকুলতা হয়েছিল এর উপর (ছোট নরেনের) তত হয় নাই

    ঠাকুর ছোটখাটটিতে বসিয়া আছেন। ছোকরা ভক্তদের দেখিতেছেন ও আনন্দে বিভোর হইতেছেন। রাখাল এখন দক্ষিণেশ্বরে আসেন না। কয় মাস বলরামের সহিত বৃন্দাবনে ছিলেন। ফিরিয়া আসিয়া এখন বাটিতে আছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) – রাখাল এখন পেনশন খাচ্ছে। বৃন্দাবন থেকে এসে এখন বাড়িতে থাকে। বাড়িতে পরিবার আছে। কিন্তু আবার বলেছে হাজার টাকা মাহিনা দিলে ও চাকরি করবে না। এখানে শুয়ে শুয়ে বলত, তোমাকেও ভালো লাগেনা। এমনই তার একটি অবস্থা হয়েছিল।

    ভবনাথ বিয়ে করেছে কিন্তু সমস্ত রাত্রি স্ত্রীর সঙ্গে কেবল ধর্মকথা কয়। ঈশ্বরের কথা নিয়ে দুজনে থাকে, আমি বললাম পরিবারের সঙ্গে একটু আমোদ আহ্লাদ করবি। তখন রেগে রোক করে বললে কি আমরাও আমদ আহ্লাদ নিয়ে থাকব।

    ঠাকুর এইবার নরেন্দ্রের কথা কহিতেছেন।

    শ্রী রামকৃষ্ণ ভক্তদের প্রতি- কিন্তু নরেন্দ্রের উপর যত ব্যাকুলতা হয়েছিল এর উপর (ছোট নরেনের) তত হয় নাই।

    (হরিপদর প্রতি)- তুই গিরিশ ঘোষের বাড়ি যাস?

    হরিপদ- আমাদের বাড়ির কাছে বাড়ি প্রায় যায়।

    শ্রীরামকৃষ্ণ- নরেন্দ্র চায়

    হরিপদ- আজ্ঞে হ্যাঁ। কখন কখন দেখতে পায়।

    শ্রীরামকৃষ্ণ- গিরিশ ঘোষ যা বলে তাতে ও কি বলে।

    হরিপদ- তর্কে হেরে গেছেন

    শ্রী রামকৃষ্ণ- না আসে বললে, গিরিশ ঘোষের এখন এত বিশ্বাস। আমি কেন কোন কথা বলবো।

    জজ অনুকূল মুখোপাধ্যায় জামাইয়ের ভাই আসিয়াছেন

    শ্রী রামকৃষ্ণ- তুমি নরেন্দ্র কে জানো?

    জামাইয়ের ভাই- আজ্ঞে হ্যাঁ নরেন্দ্র বুদ্ধিমান ছোকরা।

    শ্রী রামকৃষ্ণ (ভক্তদের প্রতি)- ইনি ভালো লোক। যে কালে নরেন্দ্রের সুখ্যাতি করেছেন, সেদিন নরেন্দ্র এসেছিল। ত্রৈলোকের সঙ্গে সেদিন গান গাইলে কিন্তু ও গানটি সেদিন আলুনি লাগলো।

  • Ramakrishna 390: ঠাকুর ছোটখাটটিতে বসিয়া আছেন, ছোকরা ভক্তদের দেখিতেছেন ও আনন্দে বিভোর হইতেছেন

    Ramakrishna 390: ঠাকুর ছোটখাটটিতে বসিয়া আছেন, ছোকরা ভক্তদের দেখিতেছেন ও আনন্দে বিভোর হইতেছেন

    শ্রীরামকৃষ্ণ (Ramakrishna) (মাস্টারের প্রতি)- আমার এসব বিচার ভালো লাগেনা।

    শ্রী রামকৃষ্ণ (রামের প্রতি)- থাম তোমার একে অসুখ

    মাস্টারের প্রতি- আমার এসব ভালো লাগেনা। আমি কাঁদতুম। আর বলতুম, মা এ বলছে এই এই। ও বলছে আর একরকম। কোনটা সত্য তুই আমায় বলে দে।

    শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তসঙ্গে আনন্দে বসিয়া আছেন। বাবুরাম ছোট নরেন, পল্টু, হরিপদ, মোহিনী মোহন ইত্যাদি ভক্তেরা মেঝেতে বসে আছেন। একটি ব্রাহ্মণ যুবক দুই-তিন দিন ঠাকুরের কাছে আছেন। তিনিও বসিয়া আছেন। আজ শনিবার ২৫ শে ফাল্গুন ৭ মার্চ ১৮৮৫। বেলা আন্দাজ তিনটা আর চৈত্র কৃষ্ণা সপ্তমী।

    শ্রী শ্রী মা, নহবতে আজকাল আছেন তিনি মাঝে মাঝে ঠাকুরবাড়িতে আসিয়া থাকেন। শ্রীরামকৃষ্ণের সেবার জন্য। মোহিনী মোহনের সঙ্গে স্ত্রী। নবীন বাবুর মা গাড়ি করিয়া আসিয়াছেন। মেয়েরা নহবতে গিয়া শ্রী শ্রী মাকে দর্শন ও প্রণাম করিয়া সেই খানেই আছেন। ভক্তেরা একটু সরে গেলে ঠাকুরকে আসিয়া প্রণাম করিবেন। ঠাকুর ছোটখাটটিতে বসিয়া আছেন। ছোকরা ভক্তদের দেখিতেছেন ও আনন্দে বিভোর হইতেছেন। রাখাল এখন দক্ষিণেশ্বরে আসেন না। কয় মাস বলরামের সহিত বৃন্দাবনে ছিলেন। ফিরিয়া আসিয়া এখন বাটিতে আছেন।

    শ্রীরামকৃষ্ণ (সহাস্যে) – রাখাল এখন পেনশন খাচ্ছে। বৃন্দাবন থেকে এসে এখন বাড়িতে থাকে। বাড়িতে পরিবার আছে। কিন্তু আবার বলেছে হাজার টাকা মাহিনা দিলে ও চাকরি করবে না। এখানে শুয়ে শুয়ে বলত, তোমাকেও ভালো লাগেনা। এমনই তার একটি অবস্থা হয়েছিল।

    ভবনাথ বিয়ে করেছে কিন্তু সমস্ত রাত্রি স্ত্রীর সঙ্গে কেবল ধর্মকথা কয়। ঈশ্বরের কথা নিয়ে দুজনে থাকে, আমি বললাম পরিবারের সঙ্গে একটু আমোদ আহ্লাদ করবি। তখন রেগে রোক করে বললে কি আমরাও আমদ আহ্লাদ নিয়ে থাকব।

LinkedIn
Share