Tag: 150 Years of Vande Mataram

  • 150 Years of Vande Mataram: ‘বন্দে মাতরম শব্দ হাজার অনুভূতি দ্বারা আবৃত, খুব সহজে মাতৃভূমির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে এই মন্ত্র’, বললেন প্রধানমন্ত্রী

    150 Years of Vande Mataram: ‘বন্দে মাতরম শব্দ হাজার অনুভূতি দ্বারা আবৃত, খুব সহজে মাতৃভূমির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে এই মন্ত্র’, বললেন প্রধানমন্ত্রী

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সাল ১৮৭৬। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সংস্কৃত ও বাংলার মিশ্রণে লিখলেন ‘বন্দে মাতরম’। জাতীয়তাবোধে কেঁপে উঠল বাঙালি। উদ্বেলিত হল আসমুদ্র হিমাচল। ১৮৮২ সালে গানটি প্রকাশিত হল আনন্দমঠ উপন্যাসে। আগামী বছর সেই ‘বন্দে মাতরম’ স্তোত্রের দেড়শো বছর পূর্ণ হতে চলেছে। তাই সেই বিশেষ সময়কে আরও বিশেষ করে তুলতে উদ্যোগী হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নয়া দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে জাতীয় গান ‘বন্দে মাতরম্‌’ – এর সার্ধশতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষ্যে বর্ষব্যাপী উদযাপনের সূচনা করলেন মোদি। ৭ নভেম্বর, ২০২৫ থেকে শুরু হয়ে এই উদযাপন চলবে ৭ নভেম্বর, ২০২৬ পর্যন্ত।

    বর্ষব্যাপী অনুষ্ঠানের সূচনা

    ভারতের জাতীয় স্তোত্র-এর দেড়শো বছর উপলক্ষে এদিন বিশেষ উদযাপনের কথা ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জনসাধারণের কাছেও আর্জি রাখলেন, ‘বন্দেমাতরম’-এর দেড়শো বছরকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য। এদিন সকাল সাড়ে নটা নাগাদ অনুষ্ঠানের সূচনা করেন মোদি। প্রধানমন্ত্রী এই উপলক্ষ্যে একটি স্মারক ডাকটিকিট ও স্মারক মুদ্রার আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন। যে কালজয়ী রচনা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রেরণা যুগিয়েছিল এবং এখনও জাতীয় গর্ব ও ঐক্যবোধ’কে জাগিয়ে তোলে, তার সার্ধশতবর্ষ পূর্তি উদযাপনের সূচনা হল এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মূল অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, সকাল ৯টা ৫০ মিনিট নাগাদ দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় ‘বন্দে মাতরম্‌’ – এর পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ সমবেতভাবে গাওয়া হয়। সমাজের সর্বস্তরের নাগরিকরা এতে অংশগ্রহণ করেন।

    ভারতের ঐক্য ও আত্মসম্মানবোধের জাগ্রত চেতনা

    ১৮৭৫ সালের ৭ নভেম্বর অক্ষয় নবমীর পুণ্যতিথিতে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এই গান লিখেছিলেন বলে মনে করা হয়। তাঁর আনন্দমঠ উপন্যাস যখন বঙ্গদর্শন পত্রিকায় পর্বে পর্বে প্রকাশিত হচ্ছিল, তখন তাতে এই গানটি প্রথম দেখা যায়। পরবর্তীকালে ১৮৮২ সালে আনন্দমঠ উপন্যাসটি বই হিসেবে প্রকাশিত হয়। সেই সময়ে ভারত সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে চলছিল এবং জাতীয় পরিচয় ও ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চেতনা ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছিল। মাতৃভূমিকে শক্তি, সমৃদ্ধি ও দেবত্বের মূর্ত প্রতীক হিসেবে অভিবাদন জানিয়ে এই গানটি ভারতের ঐক্য ও আত্মসম্মানবোধের জাগ্রত চেতনাকে কাব্যিক রূপ দেয়। অচিরেই এটি স্বদেশপ্রেমের মূর্ত প্রতীক হয়ে ওঠে।

    বন্দেমাতরম সভ্যতার ভিত্তি

    অনুষ্ঠান থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের জাতীয় স্তোত্র বন্দেমাতরম সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করে। এই গানের প্রথম লাইনটাই প্রতিটি ভারতীর মনে অনুভূতির জোয়ার তৈরি করতে সক্ষম। কারণ, বন্দেমাতরম এই একটা শব্দই হাজার অনুভূতি দ্বারা আবৃত। যা খুব সহজ ভাবে মাতৃভূমির সঙ্গে আকর্ষণ তৈরি করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশের ১৪০ কোটি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখার ক্ষমতা রয়েছে বন্দেমাতরমের মধ্যে। যদি কোনও বিপদ আসে, তখন বন্দেমাতরম স্তুতি করুন। এটাই আমাদের দেশাত্মবোধকে জাগিয়ে রাখতে সক্ষম হবে।’

    কংগ্রেসকে নিশানা মোদির

    প্রধানমন্ত্রী মোদির কথায়,  বেদ ভারতীয় সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করার সময় এই অনুভূতি জাগিয়ে তুলেছিল যে, পৃথিবী মাতা এবং আমি তার সন্তান। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘বন্দেমাতরম’ লিখে মাতৃভূমি এবং তার সন্তানদের মধ্যে সম্পর্ককে একই ভাবে আবেগের জগতের এক মন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। সেই সঙ্গে কংগ্রেসকে নিশানা করে প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার বলেন, ‘‘ভোটব্যাঙ্ক সুরক্ষিত রাখতে দেশের সুরক্ষার সঙ্গে আপস করা হয়েছে। কংগ্রেস ব্রিটিশের দাস ছিল। ওরা বন্দেমাতরমের একটি অংশ বাদ দিয়ে দিয়েছিল। এর মধ্যেই নিহিত ছিল দেশভাগের বীজ।

    বন্দে মাতরম্-এর মূল অনুভূতি হলো ভারত, মা ভারতী

    প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে দেশের ঐক্য, আত্মবিশ্বাস ও অবিচল দেশপ্রেমের বার্তা প্রতিধ্বনিত হয়। তাঁর মতে, বন্দে মাতরম্ কেবল একটি গান নয়, বরং এটি ভারতের আত্মা ও মাতৃভূমির প্রতি অসীম শ্রদ্ধা ও গৌরবের প্রতীক, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ভারতবাসীকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। তিনি আরও বলেন, “বন্দে মাতরম্-এর মূল অনুভূতি হলো ভারত, মা ভারতী। ভারত এক এমন জাতি, যে অতীতের প্রতিটি আঘাত সহ্য করেও আরও উজ্জ্বল রূপে উঠে এসেছে, এবং ঐক্য ও সহযোগিতার মাধ্যমে অমরত্ব অর্জন করেছে।” আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, “আমাদের এমন একটি জাতি গড়ে তুলতে হবে, যা জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষে থাকবে।”  তিনি আরও বলেন, “যখন শত্রু আমাদের নিরাপত্তা ও সম্মানে সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে আঘাত করার সাহস দেখিয়েছিল, তখন বিশ্ব দেখেছে — ভারত কীভাবে দুর্গার রূপ ধারণ করে নিজের সম্মান রক্ষা করতে জানে।” প্রধানমন্ত্রী মোদির কথায়, “‘বন্দে মাতরম্‌’ ছিল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের কণ্ঠস্বর, এটি প্রতিটি ভারতবাসীর অনুভূতিকে প্রকাশ করেছিল। এই শব্দবন্ধ আজও আমাদের বর্তমানকে আত্মবিশ্বাসে ভরিয়ে তোলে এবং এমন সাহস দেয় যে কোনও লক্ষ্যই আমাদের নাগালের বাইরে নয়।”

  • 150 Years of Vande Mataram: ‘‘এই শব্দ ভারতীয়দের মধ্যে অনুরণন তৈরি করে’’ বন্দে মাতরম-এর ১৫০ বছর উদযাপনে নানা কর্মসূচি রাজ্য বিজেপির

    150 Years of Vande Mataram: ‘‘এই শব্দ ভারতীয়দের মধ্যে অনুরণন তৈরি করে’’ বন্দে মাতরম-এর ১৫০ বছর উদযাপনে নানা কর্মসূচি রাজ্য বিজেপির

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত বন্দে মাতরমের ১৫০ বছর পূর্তি (150 Years of Vande Mataram) উদযাপনে বছরভর নানা কর্মসূচি নিয়েছে রাজ্য বিজেপি। বিজেপি সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শুধু ব্রিটিশ ভারতেই নয়, বর্তমান যুগে দাঁড়িয়েও স্কুল কলেজ থেকে শুরু করে সীমান্তে সেনা বাহিনী, রাজনৈতিক দল বন্দে মাতরমের কথা উল্লেখ করে। এই শব্দ ভারতীয়দের মধ্যে এক অনুরণন তৈরি করে।’’ শমীকের কথায়, ‘‘যে বন্দে মাতরম ধ্বনি নিয়ে বহু বিপ্লবী ফাঁসির দড়ি নিজের গলায় তুলে নিয়েছিলেন, যে বন্দে মাতরম ধ্বনির জন্য মাতঙ্গিনী হাজরারা নিজের বুকে গুলি টেনে নিয়েছিলেন সেই বন্দে মাতরমের বিরুদ্ধে কংগ্রেস পথে নেমেছিল দিল্লিতে। তারা বলেছিল এই গান মুসলিমদের পক্ষে গাওয়া সম্ভব নয়। যখন কংগ্রেস দিল্লির রাস্তায় প্রতিবাদ মিছিল নামালো তখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যথেষ্ট জনপ্রিয়তা ছিল, তিনি প্রতিবাদ করতে পারতেন কিন্তু তা তিনি করেননি।’’

    বন্দে মাতরমকে খন্ডিত করে কংগ্রেস

    শমীক বলেন, ‘‘১৯৩৭ সালে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির একটি সভা হয়। তারা সেদিন বন্দে মাতরমকে খন্ডিত করে দিয়েছিলেন। আমরা চাই এই প্রজন্ম সংক্ষিপ্ত বন্দে মাতরম নয়, পূর্ণাঙ্গ বন্দে মাতরম এর রূপ জানুক। আমাদের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং সর্বভারতীয় নেতারা এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন।’’ শমীক জানান, ৬১ জায়গায় অখণ্ড বন্দে মাতরম গাওয়া হবে। আগামী এক মাস ব্যাপী এই কর্মসূচি চলবে। এই কর্মসূচিতে হুগলিতে যে বন্দে মাতরম ভবন আছে সেখানে বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনশল উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়াও উত্তর ২৪ পরগনার কাঁঠালপাড়ায় যেখানে বঙ্কিমচন্দ্রের পৈতৃক বাসভবন রয়েছে সেখানে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ড. সুকান্ত মজুমদার উপস্থিত থাকবেন, মুর্শিদাবাদের লালগোলায় উপস্থিত থাকবেন রাহুল সিনহা, কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে উপস্থিত থাকবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, উত্তর ২৪ পরগনায় উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব।

    ভারত-আত্মার প্রতীক বন্দে মাতরম

    শমীকের কথায়, ‘‘আমরা গর্বিত যে বন্দে মাতরম আমাদের বাংলার মাটিতে লেখা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীকালে বন্দে মাতরম নিয়ে বিতর্কে অংশগ্রহণ করে সৌগত রায় বলেছিলেন বন্দে মাতরম এর মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা আছে। তৎকালীন বাম জামানার মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন তাঁর ভাবলে আশ্চর্য লাগে কীভাবে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মত একজন প্রতিভাবান ঔপন্যাসিক আনন্দমঠের মতো উপন্যাস লিখেছিলেন। বন্দে মাতরম ভারতবর্ষের সমস্ত প্রান্তের, সমস্ত ভাষার ব্যবধানকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। আজ সেই বন্দে মাতরামের বিরুদ্ধে যখন রাজনৈতিক দলগুলি প্রতিবাদ জানায় তখন তা অত্যন্ত লজ্জার। তিনি বলেন, ‘‘আনন্দমঠের ইতিহাস এই প্রজন্মের জানা দরকার এবং সেই সঙ্গে বন্দে মাতরমের মধ্যে দিয়ে ভারত-আত্মা, ভারতীয় সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের যে প্রতিধ্বনি হয়েছে তার সৃষ্টিকাল, যাত্রা সম্পর্কে জানা দরকার। তাই সারা বছর ব্যাপী আমরা নানাবিধ কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে সেটিকে উদযাপন করব।’’

LinkedIn
Share