মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal) গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাল বিজেপি। এক পুলিশ অফিসারকে দেওয়া বীরভূমের ওই তৃণমূল নেতার সাম্প্রতিক হুমকির ঘটনায় বিধানসভায় আলোচনা দাবি করেন বিজেপি বিধায়করা। কিন্তু বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন, এই যুক্তি দিয়ে বিরোধীদের প্রস্তাব খারিজ করে দেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই বিজেপির বিধায়করা বিক্ষোভে শামিল হন। ওয়াকআউট করেন তাঁরা। অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করতে হবে, বুধবার এই দাবিতে উত্তাল হয় বিধানসভা। বিজেপি বিধায়করা বিক্ষোভ দেখিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন।
কেন নিশানায় অনুব্রত
বোলপুরের আইসি-কে ফোন করে হুমকি, কদর্য ভাষায় তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে কথা- গোটা বিষয়ে চলতি মাসের শুরু থেকেই তপ্ত বাংলার রাজনীতি। ঘরে-বাইরে চাপে পড়তে হয়েছে অনুব্রত মণ্ডলকে। দলের নির্দেশে ক্ষমাও চেয়েছেন, দিয়েছেন হাজিরাও। কিন্তু বিষয়টি থিতিয়ে পড়তে দিতে নারাজ বিজেপি। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিধানসভা উত্তাল করেন বিজেপি বিধায়করা। মঙ্গলবার অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal) ইস্যুতে বিধানসভায় মুলতবি প্রস্তাব আনে বিজেপি। অধিবেশনের শুরুতেই মহিলা বিজেপি বিধায়করা অনুব্রত মণ্ডলের কুকথা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁদের দাবি, অনুব্রত মোবাইলে যেভাবে পুলিশ অফিসার ও তাঁর মা এবং স্ত্রীর প্রতি কদর্য ভাষা ব্যবহার করেছেন, তাতে মহিলা সমাজ অপমানিত। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে ঠিক কী পদক্ষেপ করা হয়েছে।
ওয়াকআউট বিজেপি বিধায়কদের
আইসিকে কদর্যভাষায় হুমকি দিয়েও ধরাছোঁয়ার বাইরে কেষ্ট। বুধবার বিজেপি বিধায়করা প্রশ্ন তোলেন, অনুব্রত (Anubrata Mondal) কীভাবে সরকারি কর্মচারীকে গালি দিয়েও রুরাল ডেভলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান পদে বহাল থাকবেন? বিজেপি একটি মুলতুবি প্রস্তাব আনে। কিন্তু সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি বিধায়করা তখন বিক্ষোভ দেখিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। শুরু হয় ওয়াকআউট। প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই বিজেপির হাত ধরে একটি অডিও ক্লিপ সামনে আসে। তাতেই শোনা যায় বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছেন অনুব্রত। ছেড়ে কথা বলা হয়নি তাঁর পরিবারের মহিলা সদস্যদেরও। এই অডিও ক্লিপ ভাইরাল হতেই শোরগোল পড়ে যায় রাজনৈতিক মহলে।
বিজেপি বিধায়কদের প্রশ্ন
এদিন অধিবেশন থেকে ওয়াক আউট করে বাইরে এসে সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রস্তাব পাঠ করেন ডাবগ্রাম – ফুলবাড়ির বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়। কেন এখনও অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal) বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি রাজ্য সরকার সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। বিজেপির মহিলা বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে দাঁড়িয়ে শিখাদেবী বলেন, ‘যে ভাবে একজন পুলিশ আধিকারিকের মা ও স্ত্রীর প্রতি যে নোংরা ভাষা অনুব্রত মণ্ডল প্রয়োগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর হাত তাঁর মাথায় থাকায় এখনও তাঁকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। কোনও মহিলার মান সম্মান বলে কিছু জানেন না উনি। অথচ সরকারের কোনও হেলদোল নেই। তৃণমূল কংগ্রেস করে বলে সে সব দিক থেকে ছাড় পেয়ে যাচ্ছে।’
জাতীয় মহিলা কমিশনের চিঠি
অনুব্রতর অডিওকাণ্ডে (Anubrata Mondal Viral Audio Controversy) এবার রিভিউ অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট চাইল জাতীয় মহিলা কমিশন। ৫ দিনের মধ্যে তথ্য-সহ রিপোর্ট জমা দিতে হবে। বীরভূমের পুলিশ সুপারকে চিঠি দিল জাতীয় মহিলা কমিশন। অডিওকাণ্ডে এর আগেই পুলিশের অ্যাকশন টেকেন রিপোর্টে অসন্তোষপ্রকাশ করেছিল কমিশন। সূত্রের খবর, পুলিশের রিপোর্টের সঙ্গে দেওয়া হয়নি কোনও এফআইআর কপি। রিপোর্টের সঙ্গে দেওয়া হয়নি অভিযুক্তর মেডিক্যাল রিপোর্টও।
রিভিউ অ্যাকশন রিপোর্ট তলব
অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal) অডিও ভাইরাল হওয়ার পর ডিজিকে চিঠি পাঠায় কমিশন। কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, জানতে চাওয়া হয়। মহিলা কমিশনের চিঠির উত্তর দেন বীরভূমের পুলিশ সুপার। আর এবার রিভিউ অ্যাকশন রিপোর্ট চাওয়া হল। জাতীয় মহিলা কমিশনের নির্দেশ, অবিলম্বে অভিযুক্তর মোবাইল বাজেয়াপ্ত করতে হবে। গোটা ঘটনায় স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন। যা ধারা আছে তার সঙ্গে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৭৯, ৩৫২ ও ৭৪ নম্বর ধারা যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে তারা। এর মধ্যে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৭৪ নম্বর ধারা জামিন অযোগ্য। চিঠিতে জাতীয় মহিলা কমিশন উল্লেখ করেছে, ‘আইসি-র মোবাইল বাজেয়াপ্ত, অথচ অভিযুক্তর কোনও ডিজিটাল ডিভাইস বাজেয়াপ্ত হয়নি! একই অপরাধ কোনও সাধারণ নাগরিক করলে, তাকে থাকতে হত জেলে এক্ষেত্রে অভিযুক্ত খোলামেলা ঘুরে বেড়াচ্ছে, আইন প্রভাবশালীর ক্ষেত্রে বিপরীত হতে পারে না। উর্দি পরা বাহিনী রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা অপরাধীদের থেকে নিজের পরিবারকে রক্ষা করতে না পারলে, তাতে বিপজ্জনক বার্তা যায়।’