Tag: Baloch Movement

  • Pakistan Train Hijack: বালোচ আন্দোলনের জন্য দায়ী জিন্নার বিশ্বাসঘাতকতা!

    Pakistan Train Hijack: বালোচ আন্দোলনের জন্য দায়ী জিন্নার বিশ্বাসঘাতকতা!

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: দিন তিনেক আগে পাকিস্তানের বালোচিস্তানে হাইজ্যাক (Pakistan Train Hijack) করা হয়েছিল জাফর এক্সপ্রেস। পণবন্দি করা হয়েছিল বহু যাত্রীকে। পাকিস্তানের অভিযোগ, জাফর এক্সপ্রেস অপহরণের ছক কষা হয়েছে আফগানিস্তান থেকে (Baloch Movement)। ট্রেন অপহরণের পর থেকেই এমনই অভিযোগ ও দাবি তুলেছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যে বলে পাল্টা দাবি তালিবানের।

    বালোচিস্তান (Pakistan Train Hijack)

    পাকিস্তানের চারটি প্রদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও কম জনবহুল এলাকা বালুচিস্তান। ১১ মার্চ এখান থেকেই জাফর এক্সপ্রেস ছিনতাই করেছিল বালোচ বিদ্রোহীরা। পণবন্দি করা হয়েছিল নিরাপত্তা কর্মী-সহ ১০০ জন যাত্রীকে। এই বিদ্রোহের মূল কারণ বালোচবাসীর সঙ্গে পাকিস্তানের জনক মহম্মদ আলি জিন্নার বিশ্বাঘাতকতা। ১৯৪৭ সালের ১৪ অগাস্ট জন্ম হয় পাকিস্তানের। তার ঠিক পরের বছর থেকেই সদ্যোজাত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হাতে অস্ত্র তুলে নেন বালোচ জাতীয়তাবাদীরা। তারপর থেকে অশান্তি লেগেই রয়েছে পাকিস্তানের এই অংশে। ব্যাপক হিংসার ঘটনা ঘটেছে ১৯৫৮-৫৯, ১৯৬২-৬৩, ১৯৭৩-৭৭ সালে। ২০০৩ সাল থেকে প্রায়ই ঘটছে হিংসার ঘটনা।

    হাইজ্যাক আস্ত এক্সপ্রেস ট্রেন

    চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটল গত ১১ মার্চ। এদিন বালুচ বিদ্রোহীরা হাইজ্যাক করে আস্ত একটা এক্সপ্রেস ট্রেন। পণবন্দি করা হয় যাত্রীদের। বালুচিস্তান একটি শুষ্ক এলাকা (Pakistan Train Hijack)। খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তানের পাঞ্জাব-প্রভাবিত রাজনীতির দ্বারা উপেক্ষিত এলাকা। বালুচবাসী অর্থনৈতিকভাবে নিপীড়িত। তাদের খনিজ সম্পদ আহরণ করে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থায়নে ব্যবহার করা হয়েছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, বালুচবাসীর অসন্তোষের অন্যতম কারণ এটাই। বালুচবাসীর অসন্তোষের অন্যতম লক্ষ্য হল গওদর বন্দর। চিনের সহায়তায় এই বন্দরের উন্নয়ন করছে পাকিস্তান। বালুচ বিদ্রোহীরা চিনা কর্মীদর ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। প্রসঙ্গত, গওদর বন্দরটি চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের একটা অংশ।

    রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের সাক্ষী

    ‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স রিভিউ’য়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “বালোচ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতৃত্ব বিভক্ত। ফলস্বরূপ, বালোচ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন তার লক্ষ্য বা কৌশলের ক্ষেত্রে একক নয়।” সশস্ত্র বিদ্রোহের সর্বশেষ পর্বটি শুরু হয় ২০০৪ সালে। ২০০৬ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে প্রভাবশালী বালোচ নেতা আকবর খান বুগতি নিহত হওয়ার পর এটি আরও তীব্রতা পায় (Baloch Movement)। বুগতি বেশি স্বায়ত্তশাসন, সম্পদের নিয়ন্ত্রণ এবং বালুচিস্তানের প্রাকৃতিক গ্যাস আয় থেকে ন্যায্য ভাগ দাবি করছিলেন। প্রসঙ্গত, এর আগে সাতের দশকে বালোচবাসী বিদ্রোহের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের সাক্ষী হয়েছিলেন (Pakistan Train Hijack)।

    রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের সাক্ষী

    ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে। ওই বছরই স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ। তার পরেই অক্সিজেন পান বালোচবাসী। বালোচিস্তানে ন্যাশনাল আওয়ামি পার্টির নেতারা স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে উদ্দীপিত হয়েছিলেন। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, মারি, মেঙ্গল এবং বুগতি গোত্রপ্রধানদের নেতৃত্বে প্রায় ৫৫ হাজার বালোচ যোদ্ধা ৮০ হাজার পাকিস্তানি সেনার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। পাকিস্তান বিমান বাহিনী বালোচিস্তানের বিভিন্ন গ্রামে বোমা বর্ষণ করে। তার ফলে নিহত হন হাজার হাজার সাধারণ বালোচবাসী। একাত্তরের সংঘর্ষ এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে ইরান আশঙ্কা করেছিল বালোচ জাতীয়তাবাদের প্রভাব তাদের এলাকায় হয়ত ছড়িয়ে পড়বে। সেই আশঙ্কায়, পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা দিয়েছিল তারা।

    বালোচ বিদ্রোহীদের জন্য মজুত করা অস্ত্র উদ্ধার

    ১৯৭৭ সালে জেনারেল জিয়াউল হক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ভুট্টোকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেন। পরে উপজাতিদের ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। বালোচিস্তান থেকে প্রত্যাহার করা হয় সেনা। তার পরেই বালোচিস্তানে অবসান ঘটে সশস্ত্র সংগ্রামের। প্রথমে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টো এই দাবিগুলো প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তার জেরেই ঢেউ ওঠে প্রতিবাদের (Baloch Movement)। ১৯৭৩ সালে ভুট্টো বালুচিস্তানের প্রাদেশিক সরকার প্রধান আকবর খান বুগতিকে বরখাস্ত করেন। তিনি দাবি করেন, ইরাকি দূতাবাস থেকে বালোচ বিদ্রোহীদের জন্য মজুত করা অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এই অজুহাতে তিনি জানিয়ে দেন, বালুচিস্তানে হবে ব্যাপক সামরিক অভিযান। এরই ফলে একটি পূর্ণাঙ্গ সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হয়। এই সংগ্রাম চলেছিল ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত, টানা চার বছর ধরে। এই ঘটনা চতুর্থ বালুচিস্তান সংঘাত নামে পরিচিত (Pakistan Train Hijack)।

    “ওয়ান ইউনিট” পরিকল্পনা

    ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান চালু করে “ওয়ান ইউনিট” পরিকল্পনা। এর মাধ্যমে দেশটির প্রদেশগুলি পুনর্গঠিত করা হয়। এই পরিকল্পনায় বালোচিস্তানকে অন্যান্য প্রদেশের সঙ্গে একীভূত করা হয়। তার জেরে স্বায়ত্তশাসন খর্ব হয় বালোচিস্তানের। এতেই খেপে যান বালোচ নেতারা। ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয় নেতাদের মধ্যে। কালাতের খান, নওরোজ খান ১৯৫৮ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু করেন পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ। ১৯৫৯ সালে পাকিস্তান নওরোজ খানকে আত্মসমর্পণে রাজি করায়। সেজন্য পাক সরকার তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করে বলে অভিযোগ। তাঁকে ক্ষমা করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। যদিও আত্মসমর্পণ করার পর রুদ্রমূর্তি ধারণ করে তৎকালীন পাক সরকার। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তাঁকে ও তাঁর ছেলেদের গ্রেফতার করা হয়। মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় তাঁর পাঁচ আত্মীয়কে।

    ক্ষোভের আগুন উসকে দেয়

    পাক সরকারের এই বিশ্বাসঘাতকতা বালোচবাসীদের মধ্যে ক্ষোভের আগুন আরও উসকে দেয়। যার জেরে আরও জোরালো হয় স্বাধীনতাকামী আন্দোলন। তবে বালোচিস্তান বিদ্রোহ শুরুর বীজ অঙ্কুরিত হয় ১৯৪৭ সালে, পাকিস্তান যখন বিচ্ছিন্ন হয় ভারতের থেকে। বালোচিস্তান অঞ্চলটি আগে চারটি দেশীয় রাজ্য হিসেবে ছিল—কালাত, খারান, লাস বেলা এবং মাকরান। সেই সময় তাদের সামনে তিনটি বিকল্প ছিল—ভারতের সঙ্গে যোগদান, পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়া, আর না হয় স্বাধীনতা বজায় রাখা। জিন্নার প্রভাবে তিনটি রাজ্য পাকিস্তানের সঙ্গে মিশে যায় (Pakistan Train Hijack)। কালাতের শাসক খান মীর আহমেদ ইয়ার খান, যিনি খান অব কালাত নামেও পরিচিত, তিনিই বেছে নেন স্বাধীনতা।

    জিন্নাকে তার আইনি উপদেষ্টা

    ১৯৪৬ সালে খান অব কালাত জিন্নাকে তার আইনি উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করেন। তিনি যাতে ব্রিটিশ ক্রাউনের সামনে তাঁর মামলা উপস্থাপন করতে পারেন, তাই এই ব্যবস্থা। ১৯৪৭ সালের ৪ অগাস্ট দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বালোচবাসীর স্বাধীনতার সিদ্ধান্ত সমর্থিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন লর্ড মাউন্টব্যাটেন, খান অব কালাত এবং জওহরলাল নেহরু। ছিলেন জিন্না স্বয়ংও। জিন্নার জোরালো দাবির ফলে খারান ও লাস বেলাকে কালাতের সঙ্গে একীভূত করে একটি সম্পূর্ণ বালুচিস্তান গঠনের পরিকল্পনা করা হয় (Baloch Movement)। প্রসঙ্গত, বালোচরা কখনওই “ওয়ান ইউনিট” নীতিকে মেনে নেয়নি। পাঁচ বছরের মধ্যেই, ১৯৬৩ সালে বালুচিস্তানে তৃতীয় বালোচ বিদ্রোহ দেখা দেয়।

    বিদ্রোহের লক্ষ্য

    শের মুহাম্মদ বিজরানি মারির নেতৃত্বে, এই বিদ্রোহের লক্ষ্য ছিল বালোচিস্তানের গ্যাস সম্পদের রাজস্ব ভাগাভাগির জন্য পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, “ওয়ান ইউনিট” পরিকল্পনার বিলুপ্তি এবং বালোচ বিদ্রোহীদের মুক্তি। এই বিদ্রোহ শেষ হয় ১৯৬৯ সালে সাধারণ ক্ষমার মাধ্যমে। বন্দি বালোচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৯৭০ সালে “ওয়ান ইউনিট” নীতি বাতিল করার পর বালোচিস্তানকে পাকিস্তানের চারটি প্রদেশের একটি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। পরে অবশ্য স্বাধীনতা লাভ করে বালোচিস্তান। তবে সেটা মাত্র ২২৬ দিনের জন্য। পরে বালুচবাসীর ইচ্ছায় নয়, বরং জিন্নার বিশ্বাসঘাতকতা ও ইসলামাবাদের সামরিক শক্তির মাধ্যমে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হয়। ৭৫ বছর আগের এই বিশ্বাসঘাতকতা ও অঞ্চল (Baloch Movement) এবং জনগণের শোষণ আজও বালুচ জনগণের সশস্ত্র প্রতিরোধের মূল কারণ হিসেবে রয়ে গেছে (Pakistan Train Hijack)।

LinkedIn
Share