মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারত বিরোধিতাই কাল হয়েছে বাংলাদেশের (India Bangladesh Relation)! যতই দিন যাচ্ছে ততই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা ভালোই বুঝতে পারছেন ভারত-বিরোধী মনোভাব পোষণ করায় কী খেসারতটাই না দিতে হচ্ছে! বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ডই হল রেডিমেড পোশাক শিল্প। এটিই একমাত্র শিল্প যা দেশের মোট রফতানির প্রায় ৮৫ শতাংশ এবং (India) মোট জিডিপির ১৩ শতাংশ অবদান রাখে। প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ এই পোশাক শিল্পে কাজ করেন। এঁদের সিংহভাগই নারী।
করোনা পর্যায়ে বাংলাদেশকে সাহায্য ভারতের (India Bangladesh Relation)
করোনা অতিমারির সময় যখন সারা বিশ্বে মাস্ক, মেডিক্যাল টেক্সটাইল, গ্লাভস এবং হাসপাতালের পোশাকের ব্যাপক চাহিদা ছিল, তখন বাংলাদেশের কাছে বিক্রির জন্য পণ্য মজুত থাকলেও, বিশ্ববাজারে সরবরাহের উপায় ছিল না। ভারতেরও বিশ্বব্যাপী পণ্য পৌঁছে দেওয়ার কোনও উপায় ছিল না। তা সত্ত্বেও পড়শি দেশকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিল ভারত। সেই সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের সরবরাহ শৃঙ্খলা সংশোধনের জন্য নয়াদিল্লির কাছে সাহায্য চেয়েছিল। এরপর ভারত বাংলাদেশকে সাহায্যের পাশাপাশি তার জন্য নিজেদের সরবরাহ শৃঙ্খলার দরজাও খুলে দেয়। ভারত বাংলাদেশকে নিজ বন্দর ও বিমানবন্দরের মাধ্যমে ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা দেয়, অতিমারির বাজারে যা বাংলাদেশকে বিশেষ মাইলেজ দেয়।
পণ্য সরবরাহের পর্যাপ্ত ক্ষমতা নেই
বাংলাদেশের বন্দর ও বিমানবন্দরগুলির বিশ্বব্যাপী পণ্য সরবরাহের পর্যাপ্ত ক্ষমতা নেই। তাছাড়া, বাংলাদেশ যদি নিজেদের বিমানবন্দর ও বন্দর থেকে পণ্য বিক্রি করে, তাহলে এর খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। উল্টোদিকে, কলকাতা থেকে পণ্য পাঠানোর খরচ পড়ে কিলোগ্রাম প্রতি মাত্র ২ থেকে ২.৫ মার্কিন ডলার। কিন্তু সরাসরি বাংলাদেশ থেকে একই পণ্য পাঠালে কিলোগ্রাম প্রতি ৫ থেকে ৬ মার্কিন ডলার খরচ হয়। তাই ভারত (India) যখন বাংলাদেশকে ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা দিয়েছিল, তা বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের কাছে গেম-চেঞ্জার হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল। সেই সময় ভারত বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নামমাত্র ফি নিয়েছিল (India Bangladesh Relation)।
ভারতের মাটি ব্যবহার করে পণ্য বিক্রি
বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ভারতের মাটি ব্যবহার করে তাঁদের পণ্য বিক্রি করতেন। ভারতীয় রুটে পণ্য ভারতের বন্দর ও বিমানবন্দরে আনা হত, তারপর সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সে পাঠানো হত। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ট্রাকযোগে পেট্রাপোল-বেনাপোলের মতো ভারতের স্থল বন্দরে পণ্য আনতেন। পরে সেগুলি কলকাতা, হলদিয়া, নহবা শেভার মতো বড় বড় বন্দর বা দিল্লি ও কলকাতার বিমানবন্দরে পাঠানো হতো। সেখান থেকে সমুদ্রপথে বা আকাশপথে বিশ্বব্যাপী পণ্য সরবরাহ করা হত। অর্থাৎ, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা যদি নিজ দেশ থেকে কোনও পণ্য ইউরোপের দেশে পাঠাতেন, তাহলে ভারতের মাধ্যমে পাঠানোর তুলনায় খরচ তিন গুণ বেড়ে যেত।
ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা বাতিল
ভারত বাংলাদেশকে প্রদত্ত ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা বাতিলের কারণ হিসেবে নিজেদের বন্দর ও বিমানবন্দরে বাড়তে থাকা জটিলতার উল্লেখ করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা একে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলেই মনে করছেন। রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত অকারণে এমন ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা বন্ধ করেনি। এর আগে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে স্থলবন্দরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল এবং ভারত থেকে সুতা (India) আমদানিকে টার্গেট করেছিল। বাংলাদেশের এহেন আচরণ ভারত পছন্দ করেনি। তাছাড়া, মহম্মদ ইউনূস যখন বেইজিংয়ে ভারতের ‘চিকেন নেক’কে টার্গেট করার চেষ্টা করেছিলেন, বস্তুত তখনই ভারতের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। ভারতের জন্য একটি ‘রেড লাইন’ টানা প্রয়োজন হয়ে পড়ে এবং তারা সেটিই করেছে। তবে ভারত ইউনূসকে তাঁর ভুল সংশোধনের শেষ একটি সুযোগ দিয়েছিল। ব্যাংককে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে ইউনূসের বৈঠকের জন্য অপেক্ষা করেছিল। কিন্তু তার পরেও যখন ইউনূস নিজেকে সংশোধন করেননি, তখনই ভারত বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা বাতিল করে দেয় (India Bangladesh Relation)।
১৭০টি কারখানা বন্ধ
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের বেক্সিমকো শিল্প পার্কে ইতিমধ্যেই ১৭০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শুধুমাত্র এই একটি শিল্পাঞ্চলেই চাকরি খুইয়েছেন ৪০ হাজার মানুষ। এখন বাংলাদেশকে তার পণ্য প্রথমে শ্রীলঙ্কা, মলদ্বীপ বা পাকিস্তানে পাঠিয়ে তারপর রফতানি করতে হবে। এটি ব্যয়বহুল হবে। যার ফলে বাংলাদেশি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে কমে যাবে বিক্রি (India)। বাংলাদেশ ভারতীয় স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করেছে। ইউনূস প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের রফতানিকারীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে অনেক কম দামে সুতা কিনতেন। বাংলাদেশের সুতা আমদানিতে ভারতের ওপর নির্ভরতা অত্যন্ত বেশি ছিল। এই সুতা আমদানির ৯৫ শতাংশই আসে ভারত থেকে। কিন্তু এখন তাকে অন্যান্য দেশ থেকে কিনতে হবে। যার জন্য গুণতে হবে চড়া দর (India Bangladesh Relation)।
ইউনূস শুনতে পাচ্ছেন?