মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সোশ্যাল সাইট থেকে ঢাকার অলিগলি— বাংলাদেশে এখন ভারত-বিদ্বেষ (India Bangladesh Relation) চূড়ান্ত। যে ভারতের হাত ধরে বাংলাদেশের সৃষ্টি, সেই ভারত-বৈরিতা এখনকার বাংলাদেশ সরকারের বৈশিষ্ট্য। হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই ভারতের (India) সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে বাংলাদেশের (Bangladesh)। কিন্তু ভারত ছাড়া বাংলাদেশ যে কতটা অচল, তা স্পষ্ট হল বাংলাদেশ রেলওয়ের (Bangladesh Railway) সাম্প্রতিক প্রকাশিত তথ্যে। জানা গিয়েছে, অর্থ সংকটের কারণে বাংলাদেশে রেলের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প থমকে রয়েছে। বাংলাদেশের অভিযোগ, ভারত সরকার ছ’বছর আগে এইসব প্রকল্পের জন্য ঋণ (Loan) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনও অর্থ বরাদ্দ করেনি। এর ফলে, প্রকল্পগুলির বাস্তবায়ন শুরু করা সম্ভব হয়নি।
কেন সাহায্য করবে ভারত?
ওপার বাংলার সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছয় বছর আগে বাংলাদেশ রেলের একাধিক প্রকল্পের জন্য ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নয়াদিল্লি। কিন্তু আজ অবধি সেই টাকা পায়নি ঢাকা। এর ফলে ওই প্রকল্পগুলির কাজ থমকে গিয়েছে। এই বিষয়ে একাধিক বার নরেন্দ্র মোদি সরকারকে চিঠি দিয়েও লাভ হয়নি। যদিও পালটা প্রশ্ন উঠছে, হাসিনা পরবর্তী সময়ে যে ভারতকে কথায় কথায় বিষোদগার করছে মহম্মদ ইউনূস সরকার এবং পদ্মাপাড়ের রাজনৈতিক দলগুলি, কোন ভরসায় তাদের অর্থসাহায্য করবে ভারত?
সাতটি রেল প্রকল্প আটকে
বাংলাদেশে (India Bangladesh Relation) এই মূহূর্তে সাতটি রেল প্রকল্প রয়েছে যা ভারতের টাকায় হওয়ার কথা। যার মধ্যে রয়েছে খুলনা-দর্শনা রেল লাইন প্রকল্প, সিরাজগঞ্জ-বগুরা ন্যারো এবং ব্রড গেজ লাইন প্রকল্প। ভারত এখনও ঋণ না দেওয়ায় এই দুই প্রকল্পের কাজ শুরুই করা যায়নি। তবে আরও দুটি প্রকল্পে কাজ চলছে ভারতের ঋণের টাকায়। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-টঙ্গি তৃতীয় এবং চতুর্থ লাইনের কাজ, ৩৮ শতাংশ এই কাজ এগিয়েছে। সেই সঙ্গে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ নির্মাণের কাজ এগিয়েছে ৫১ শতাংশ। এখানেই শেষ নয়, ভারতের টাকায় বাংলাদেশে খুলনা-মোংলা রেলপথ এবং আখাউড়া-আগরতলা লাইনের কাজ হওয়ার কথা ছিল। এই কাজ অনেকটা এগোলেও শেষ হয়নি। রেলের কাজের সঙ্গে নিযুক্ত ভারতীয় শ্রমিকরা এখনও ফেরেননি বাংলাদেশে। সেই সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে না ভারতের টাকাও, তাই মাথায় হাত বাংলাদেশের। প্রকল্পগুলি আদৌ কী ভাবে শেষ হবে সেই নিয়েই চিন্তায় বাংলাদেশ সরকার। এছাড়া, দিনাজপুর-কাউনিয়া রেলপথের জন্য ভারত ঋণ বরাদ্দ করলেও কাজ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
ভারত বিদ্বেষ বাড়ছে
শেখ হাসিনা পরবর্তী সময় বাংলাদেশে ক্রমাগত ভারত বিদ্বেষ বাড়ছে। সে দেশের ক্ষমতায় থাকা কিছু নেতা বারবার নয়াদিল্লিকে (India Bangladesh Relation) নিশানা করছেন। কখনও যুদ্ধের জিগির তুলছেন তো কখনও দেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার জন্য দায়ী করছে ভারতকে। বিষয়গুলি নিয়ে এতদিন ‘চুপ’ থাকলেও সম্প্রতি ঢাকাকে কড়া বার্তা দিয়েছে নয়াদিল্লি। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায় বাংলাদেশ, তা স্পষ্ট করতে হবে, দ্বিচারিতা চলবে না। একদিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মহম্মদ ইউনূস বলছেন, “ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই।” অন্যদিকে তাঁরই সরকারের অন্য়ান্য উপদেষ্টারা নয়াদিল্লিকে নিশানা করছেন। বারবার অসম্মান করছেন। দেশে ক্রমাগত সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অত্যাচার বাড়ছে। এভাবে চলতে পারে না বলে জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ভারতের প্রতি তাদের সরকারি অবস্থান স্পষ্ট করুক বাংলাদেশ। দুদেশের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি করতে হলে, হিন্দুদের উপর অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। ভারত-বিরোধী মন্তব্যও বন্ধ করতে হবে বলে জানান বিদেশমন্ত্রী।
বিকল্প অর্থায়নের উপায় খুঁজুক বাংলাদেশ
বাংলাদেশ (India Bangladesh Relation) রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ঢাকা-টঙ্গি এবং কুলাউড়া-শাহবাজপুর প্রকল্পের জন্য ভারত আদৌ টাকা দেবে কি না, তা জানতে চেয়ে গত ডিসেম্বরে নয়াদিল্লিকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও উত্তর আসেনি। অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে, বর্তমান রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ভারত হয়তো অর্থ বরাদ্দ নাও করতে পারে। আসলে, ঢাকার দ্বিচারিতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে কূটনৈতিক মহলে। যে বাংলাদেশ নিয়মিত ‘ভারত বিদ্বেষ ছড়ানো অভ্যেস করে ফেলেছে, সেখানে রেল প্রকল্পে অর্থসাহায্য করবে কেন নয়াদিল্লি! এমনকী যেখানে প্রতিবেশী দেশ দখল করারও হুঁশিয়ারি দেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা, সেখানে কোন ভরসায় ফিরবেন ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার ও শ্রমিকরা? এই অবস্থায়, বিকল্প অর্থায়নের উপায় খুঁজতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে।