মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করে দিয়েছে ভারত। দক্ষিণ কাশ্মীরের পাহেলগাঁওকাণ্ডের জেরে এই পদক্ষেপ করেছে (IWT) ভারত। এতে একদিকে যেমন বিপাকে পড়েছে পাকিস্তান। তেমনি অন্যদিকে, আখেরে লাভ হয়েছে ভারতের। সিন্ধু অববাহিকার তিন পশ্চিমাঞ্চলীয় নদী সিন্ধু, ঝিলাম এবং চেনাবের জল আরও ভালোভাবে ব্যবহারের জন্য একাধিক বিকল্প সম্ভাবনা পরীক্ষা করে দেখছে ভারত। এর মধ্যে চেনাব (চন্দ্রভাগা) নদী থেকে রাভি (ইরাবতী) নদীতে জল স্থানান্তরের জন্য ১০-১২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সুড়ঙ্গ নির্মাণের প্রস্তাবও রয়েছে। ইন্ডাস ওয়াটার্স ট্রিটি (আইডব্লিউটি) অনুযায়ী, ভারত পূর্বাঞ্চলীয় নদীগুলো –শতদ্রু, ইরাবতী এবং বিয়াসের (বিপাশা) জল ব্যবহারের দাবিদার। আর পাকিস্তান পেয়ে থাকে পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলির জল ব্যবহারের অধিকার।
ভারতের অধিকার (IWT)
পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত হয়ে যাওয়ার পরে এখন সব জলের ওপর কায়েম হয়েছে ভারতের অধিকার। চেনাব নদীতে একটি টানেল নির্মাণের প্রস্তাবটি উঠে এসেছে দুটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে। এই বৈঠক দুটির একটি হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, অন্যটি হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভাপতিত্বে। দুই বৈঠকেই আলোচনা হয়েছে তিনটি পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীর জল কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে। বৈঠকগুলিতে উপস্থিত ছিলেন পিএমও, স্বরাষ্ট্র, বিদ্যুৎ এবং জলশক্তি মন্ত্রক-সহ বিভিন্ন মন্ত্রকের পদস্থ কর্তারা।
জোড়া বৈঠক
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন এক পদস্থ কর্তা সংবাদ মাধ্যমে বলেন, “এটি বিবেচনাধীন একটি বিকল্প। চেনাবে টানেল নির্মাণের প্রযুক্তিগত ও সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চালানোর নির্দেশ জলশক্তি মন্ত্রককে দেওয়া হয়েছে। কেবলমাত্র যদি এটি সম্ভবপর বলে প্রমাণিত হয়, তবেই আমরা প্রকল্পটি এগিয়ে নেব। সমীক্ষা শেষ হলে কী পরিমাণ জল এবং কোন জায়গা থেকে সরবরাহ করা যাবে – এসব তথ্যই স্পষ্ট হয়ে যাবে।” তিনি বলেন, “চেনাবে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির কাজ দ্রুত শেষ করার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে জম্মু-কাশ্মীরে কিশতোয়ার জেলায় অবস্থিত চারটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ৮৫০ মেগাওয়াট রাতলে, ১ হাজার মেগাওয়াট পাকাল দুল, ৬২৪ মেগাওয়াট কিরু এবং ৫৪০ মেগাওয়াট কওয়ারের কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। আর এক সরকারি কর্তা বলেন, “পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলিতে চারটি প্রস্তাবিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিদ্যুৎ মন্ত্রককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে (IWT)।
সুড়ঙ্গ ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ
এগুলির মধ্যে রয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরে অবস্থিত ১ হাজার ৮৫৬ মেগাওয়াটের সাওয়ালকোট, ৯৩০ মেগাওয়াটের কীরথাই-২ হাজার ২৬০ মেগাওয়াটের দুলহাস্তি পর্যায়-২ এবং ২৪০ মেগাওয়াটের উরি ১ পর্যায় -২ প্রকল্প।” সুড়ঙ্গ ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ যে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প, তা স্বীকার করে নেন বৈঠকে উপস্থিত কর্তারা। তিনি বলেন, “এগুলিতে সময় লাগবে। তবে বর্তমানেই পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলিতে আমাদের পরিকাঠামোর ক্ষমতা বাড়ানো শুরু করা উচিত বলে মনে করা হয়েছে।” স্বল্পমেয়াদে ভারত পূর্বাঞ্চলীয় ও পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলিতে যে জলাধারগুলি রয়েছে, সেগুলিতে ড্রাউনডাউন ফ্লাশিং বা পলি অপসারণ পদ্ধতি পরিচালনার কথাও বিবেচনা করছে। সিন্ধু জল চুক্তি অনুযায়ী জলাধারে ড্রাউনডাউন ফ্লাশিং নিষিদ্ধ। ফ্লাশিং না করলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জলাধারে পলি জমে দীর্ঘমেয়াদে সেগুলি অকার্যকর হয়ে পড়ে। ওই কর্তা বলেন, “যেহেতু আইডব্লিউটি বর্তমানে স্থগিত রয়েছে, ভারত পূর্বাঞ্চলীয় নদীগুলির জলাধারেও ড্রাউনডাউন ফ্লাশিং করতে পারবে, যা চুক্তি অনুযায়ী অনুমোদিত নয় (IWT)।”
ইন্ডাস জল চুক্তি
১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্ততায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ইন্ডাস জল চুক্তি। এই চুক্তি অনুযায়ী, ভারতকে ইরাবতী, বিয়াস ও শতদ্রুর পূর্বাংশের জল ব্যবহারের সম্পূর্ণ অধিকার দেওয়া হয়েছে, যা সিন্ধু নদ ব্যবস্থার মোট জলের প্রায় ২০ শতাংশ। অন্যদিকে, পাকিস্তানকে পশ্চিমাংশের সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব নদীর জল ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা সিন্ধু নদের প্রায় ৮০ শতাংশ জল বহন করে। এই চুক্তি অনুসারে, ভারত এই তিনটি পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীর জল “অ-খরচযোগ্য” উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে। যেমন, নদীর প্রবাহভিত্তিক জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, কৃষি ও গৃহস্থালির কাজে এই জল ব্যবহার করা যেতে পারে। “রান-অফ-দ্য-রিভার” প্রকল্প বলতে বোঝায় এমন বিদ্যুৎকেন্দ্র যেখানে জলাধার নির্মাণ ছাড়াই সরাসরি নদীর প্রবাহ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রভূত সম্ভাবনা
ভারত পূর্বের নদীগুলির নিজের ভাগের প্রায় ৯৫ শতাংশ জল বাঁধের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ব্যবহার করলেও, পশ্চিমের নদীগুলির জল ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো এখনও গড়ে ওঠেনি। পশ্চিমের তিন নদীতে ভারতের নির্মিত প্রধান জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে বাগলিহার, সলাল ও কিশনগঙ্গা (IWT)। এক সরকারি আধিকারিকের মতে, “বর্তমানে আইডাব্লুটি স্থগিত থাকায় ভারত এই সুযোগে পশ্চিমের নদীগুলিতে থাকা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলিকে দ্রুত শেষ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জল সংরক্ষণের নতুন পরিকাঠামো গড়ে তুলতে চাইছে।” প্রসঙ্গত, বর্তমানে পশ্চিমের নদীগুলি থেকে ভারত যে জল ব্যবহার করতে পারে, তা দিয়ে ১৮ হাজার ৫৬৯ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে (IWT)।