Tag: Citizenship Ammendment Act

Citizenship Ammendment Act

  • CAA: লোকসভা নির্বাচনের আগেই লাগু হচ্ছে সিএএ! নাগরিকত্ব পাচ্ছেন কারা?

    CAA: লোকসভা নির্বাচনের আগেই লাগু হচ্ছে সিএএ! নাগরিকত্ব পাচ্ছেন কারা?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: বেজে গিয়েছে লোকসভা নির্বাচনের দামামা। তার আগেই লাগু হয়ে যেতে পারে সিএএ (CAA)। কিছু দিন আগেই বঙ্গ সফরে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তখনই তিনি বলেছিলেন, “আজ আমি আপনাদের সামনে বলে যাচ্ছি, সিএএ হচ্ছে এই দেশের আইন। একে কেউ আটকাতে পারবে না।”

    কী বলছেন অমিত শাহ?

    শাহ এও বলেছিলেন, “পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সরকার তৈরি হওয়া মানে শরাণার্থীদের সিএএর মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেওয়া। আর দিদি, শরাণার্থী ভাইদের বিভ্রান্ত করেন যে সিএএ হবে, হবে না। আইন বানিয়ে কেন্দ্র আটকে গিয়েছে।” এর পরেই তিনি বলেন, “আমি আপনাদের সামনে বলে যাচ্ছি, সিএএ হবেই।” তার পর থেকেই চলছিল জল্পনা। শেষমেশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক আধিকারিকের দাবি, শীঘ্রই আইনটি কার্যকর করা হতে পারে। তার পরেই যোগ্যদের দেওয়া হতে পারে ভারতীয় নাগরিকত্ব (CAA)।

    কী বলছেন কেন্দ্রীয় আধিকারিক?

    তিনি বলেন, “আমরা শীঘ্রই সিএএ নিয়ম জারি করতে যাচ্ছি। আইনটি চার বছরেরও বেশি সময় বিলম্বিত হয়েছে এবং আইনটি বাস্তবায়নের জন্য বিধি প্রয়োজন।” ওই আধিকারিক বলেন, “বিধি প্রস্তুত। অনলাইন পোর্টালও প্রস্তুত। পুরো প্রক্রিয়াটি হবে অনলাইনে।” তিনি জানান, আবেদনকারীদের অবশ্যই ঘোষণা করতে হবে যে তারা ভ্রমণ সংক্রান্ত কোনও নথি ছাড়াই ভারতে প্রবেশ করেছে। আবেদনকারীদের কাছ থেকে কোনও নথি চাওয়া হবে না।

    উনিশের ডিসেম্বর মাসে লোকসভা ও রাজ্যসভায় পাশ হয় সিএএ বিল। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনও মেলে। তার পরেও ওই আইন লাগু করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির সম্মতি পাওয়ার ছ’মাসের মধ্যে কোনও আইনের রুল জারি করতে হবে। অথবা লোকসভা ও রাজ্যসভার কাছ থেকে তা বাড়ানোর অনুরোধ করতে হবে। রাষ্ট্রপতির সম্মতির পর প্রতি ছ’ মাস অন্তর ওই আইনের ধারা তৈরির জন্য অতিরিক্ত সময় চেয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।  

    আরও পড়ুুন: ইজরায়েলের নিঁখুত ড্রোন নিশানা, খতম হামাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা আল-অরৌরি

    প্রসঙ্গত, সিএএ আন্দোলনের জেরে এ পর্যন্ত ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সিএএর (CAA) সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হয়েছে একাধিক পিটিশন। এই আইন অনুযায়ী, ২০১৫ সালের আগে প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা অ-মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। নাগরিকত্ব পাবেন হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ।

     

    দেশের খবরদশের খবরসব খবরসবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

  • Citizenship Ammendment Act: সিএএ মামলার শুনানি শুরু সুপ্রিম কোর্টে, কবে থেকে জানেন?

    Citizenship Ammendment Act: সিএএ মামলার শুনানি শুরু সুপ্রিম কোর্টে, কবে থেকে জানেন?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (Citizenship Ammendment Act), সংক্ষেপে সিএএ (CAA) মামলার শুনানি হবে ৬ ডিসেম্বর। মঙ্গলবার এই নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) প্রধান বিচারপতি ইউইউ ললিত (UU Lalit)। তিনি অবসর নেবেন ৮ নভেম্বর। তার ঠিক দু দিন আগেই শুরু হবে শুনানি। সিএএ-র বিরুদ্ধে আবেদনপত্র জমা পড়েছে ২৫০টি। এর মধ্যে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে ২৩২টি। এই আবেদন নিয়ে কেন্দ্র, অসম, ত্রিপুরা সরকার ও আবেদনকারীদের অবস্থান জানাতে তিন সপ্তাহ সময়ও দেওয়া হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের তরফে। যেহেতু ললিত অবসর নেবেন ৮ তারিখে, তাই শুনানি হবে অন্য বেঞ্চে। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা প্রধান বিচারপতি ইউইউ ললিত, বিচারপতি এস রবীন্দ্র ভাট এবং বেলা এম ত্রিবেদীর বেঞ্চে জানান, সিএএ ক্ষতিকর নয় বলে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। তবে সময় চাওয়া হয়েছে রাজ্যগুলির স্বার্থে।

    ২০১৯ সালে তৈরি হয় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (Citizenship Ammendment Act)। এই আইনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন এবং পার্শি সম্প্রদায়ের মানুষকে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই তালিকায় রাখা হয়নি মুসলমানদের। তার জেরেই শুরু হয় সমালোচনা।

    এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টে মূল আবেদন হিসেবে ধরা হয়েছে ইন্ডিয়ান মুসলিম লিগের আবেদনপত্রটি। তাদের দাবি, আইনটি সমতার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করেছে। ধর্মের ভিত্তিতে অবৈধভাবে আসা নাগরিকদের একটি অংশকে নাগরিকত্ব দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এর পর দেশের শীর্ষ আদালতের তরফে কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, চার সপ্তাহের মধ্যে এ ব্যাপারে তাদের অবস্থান জানাতে। হাইকোর্টগুলিকেও নির্দেশ দিয়েছিল সেখানে চলা এ সংক্রান্ত শুনানি স্থগিত রাখতে।

    আরও পড়ুন: রাজ্যে শীঘ্রই চালু হবে সিএএ! নাগরিক সংশোধনী বিল নিয়ে আশার আলো দেখালেন শুভেন্দু

    মুসলিম লিগের পাশাপাশি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (Citizenship Ammendment Act) বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ, রাষ্ট্রীয় জনতা দলের মনোজ ঝা, তৃণমূল কংগ্রেসের মহুয়া মৈত্র, এআইএমআইএমের আসাদউদ্দিন ওয়াইসিও। আবেদন করেছিল জমিয়ত-উলেমা-ই-হিন্দ, অল অসম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, পিস পার্টি, সিবিআই, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রিহাই মঞ্চের মতো কয়েকটি সংগঠনও। আইনজীবী এমএল শর্মা এবং আইনের বেশ কিছু পড়ুয়াও আবেদন করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টে।

    প্রসঙ্গত, সোমবারই গুজরাটের দুই জেলায় বসবাসকারী তিন দেশের সংখ্যালঘুদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি ঘোষণা করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। এদিন এই মর্মে জারি হয়েছে নির্দেশিকাও। তবে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকর না হওয়ায় ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের আওতায় এই পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।

     

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ। 

  • Citizenship Ammendment Act: পশ্চিমবঙ্গেও সিএএ প্রয়োগ হবে, সুবিধা পাবেন মতুয়ারাও, ঘোষণা শুভেন্দুর

    Citizenship Ammendment Act: পশ্চিমবঙ্গেও সিএএ প্রয়োগ হবে, সুবিধা পাবেন মতুয়ারাও, ঘোষণা শুভেন্দুর

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: এক যাত্রায় পৃথক ফল হবে না। গুজরাটের পর পশ্চিমবঙ্গেও সিএএ (Citizenship Ammendment Act) প্রয়োগ হবে। এতে নমঃশুদ্রদের সুবিধা হবে। মঙ্গলবার এ কথা বলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)।

    গুজরাটের (Gujarat) মেহসানা ও আনন্দ জেলায় বসবাসকারী পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্শি ও খ্রিস্টানদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। জেলা আধিকারিকদের এই মর্মে শংসাপত্র দেওয়ার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে এ দেশে অন্তত পাঁচ বছর বসবাস করতে হয়। এ ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না। গুজরাটের এই খবরেই যারপরনাই উচ্ছ্বসিত রাজ্যের বিরোধী দলনেতা।

    নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (Citizenship Ammendment Act) নিয়ে নন্দীগ্রামের বিধায়ক বলেন, এটা তো সিএএ-র অংশ। সিএএ-র বাস্তবায়ন শুরু হয়ে গেল। ভারতবর্ষের অংশ পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গেও হয়ে যাবে। সিএএ আইন দুটো সংসদেই পাশ করা আছে। আমরা অপেক্ষা করছিলাম। নিশ্চয় রুল হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, এই একই রুলে পশ্চিমবঙ্গে মতুয়া সমাজ, নমঃশুদ্র সমাজ তাঁরা ভিসা করতে গেলে, পারমিট করতে গেলে, চাকরির ক্লিয়ারেন্স নিতে গেলে বলা হয়, ৭১এর আগের দলিল আনো, সেই সমস্যা আর থাকল না। শুভেন্দু বলেন, এক যাত্রায় পৃথক ফল হয় না। গুজরাটে যখন বাস্তবায়ন হয়ে গিয়েছে, নিশ্চয় রুল ফ্রেম করে ফেলেছে ভারত সরকার।

    আরও পড়ুন: তিন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সংখ্যালঘু শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব, বড় পদক্ষেপ কেন্দ্রের

    সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (Citizenship Ammendment Act) প্রয়োগ করা হবে বলে বারংবার বলেছে কেন্দ্র। উনিশের ভোটের আগে সিএএ প্রয়োগের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল বিজেপি। তার পুরস্কারও পেয়েছিল পদ্ম শিবির। মতুয়াদের একটা বিরাট অংশের সমর্থন গিয়ে পড়েছিল গেরুয়া ঝুলিতে। ভোট পর্ব চুকে যাওয়ার পরেও সিএএ কেন লাগু হয়নি, সে প্রশ্নও ওঠে। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বনগাঁর সাংসদ বিজেপির শান্তনু ঠাকুর। শান্তনু কেন্দ্রের মন্ত্রীও। পরে সিএএ প্রয়োগ করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয় কেন্দ্রের তরফে। শান্ত হন শান্তনু। প্রসঙ্গত, ৬ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে শুরু হবে সিএএ শুনানি।

     

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের Facebook এবং Twitter পেজ। 

  • CAA: নাগরিকত্বের স্বীকৃতি ছাড়া যে কোনও মুহূর্তেই উদ্বাস্তুরা হারাতে পারেন তাঁদের সারা জীবনের অর্জন

    CAA: নাগরিকত্বের স্বীকৃতি ছাড়া যে কোনও মুহূর্তেই উদ্বাস্তুরা হারাতে পারেন তাঁদের সারা জীবনের অর্জন

     

    মোহিত রায়

     

    যাঁরা নিত্য বিপদসংকুল জীবনযাপনে বাধ্য হন, তাঁরা ক্রমশঃ সেই বিপদের সম্ভাব্যতা ও ভয়াবহতা সম্পর্কে উদাসীন হয়ে যান। যে নির্মাণ শ্রমিক বাঁশের নড়বড়ে মাচায় কোনও নিরাপত্তার বন্দোবস্ত ছাড়াই রোজ কাজ করে যান তাঁর কাছে কোনও তথ্য পৌঁছয় না যে প্রতি বছরে কতজন এরকম নির্মাণ শ্রমিক দুর্ঘটনায় সম্মুখীন হন। কোনও বিপদ, সত্যি বা মিথ্যে, নিয়ে অনেক আলোচনা হলে মানুষ ভয় পায়। অর্থাৎ যে কোনও বিপদ সম্পর্কে, তার সম্ভাব্যতা বা ভয়াবহতা যাই হোক না কেন, মানুষের ভয় উদ্রেকের জন্য দরকার তা নিয়ে যথেষ্ট হৈচৈ করা। ভয় = বিপদ + হৈচৈ। যে সব ঘটনা বেশ হৈ চৈ ফেলে, টিভিতে চোখের সামনে আতঙ্ক ছড়ায় – খুন, জখম, আগুন – এসব খবর নিয়ে সংবাদমাধ্যম বেশ হৈচৈ করে। কিন্তু যে বিপদ নীরবে আসে যেমন সর্পাঘাতে মৃত্যু (ভারতে বছরে গড়ে ৫৮০০০ জন, প্রতিদিন প্রায় ১৬০ জন) তা নিয়ে খুব একটা কথাবার্তা হয় না। পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ থেকে আসা নাগরিকত্বহীন লক্ষ লক্ষ মানুষ যে কোনও দিন আইনের নীরব সর্পাঘাতের অপেক্ষায় আছেন। বেশিরভাগ সেটা জেনেও ওই বাঁশের মাঁচার নির্মাণ শ্রমিকটির মতন ভবিতব্যের হাতে সব ছেড়ে বসে থাকেন। 

    নাগরিক না হলে কি হয়? ভারতের নাগরিকত্ব না থাকলে বা বিদেশ থেকে এসে এখানে থাকার উপযুক্ত কাগজপত্র না থাকলে আপনি দেশের ফরেনার্স অ্যাক্ট (বিদেশি আইন) ১৯৪৬ অনুযায়ী আপনি বিদেশি বলে গণ্য হবেন। এই অপরাধের জন্য সাজা পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাবাস হতে পারে এবং তারপর আপনি যে দেশের নাগরিক সেই দেশে আপনাকে ফেরত পাঠানো হতে পারে। কিন্তু এসবের থেকেও বড় কথা এতদিন ধরে আপনার অর্জিত অর্থে সঞ্চিত ব্যাঙ্কের টাকা, আপনার বাড়ি, গাড়ি – সবই বেআইনি বলে প্রশ্নের মুখে পড়বে। আপনি শুধু নন, ১৯৮৭-র ১ জুলাইয়ের পর আপনার ছেলেমেয়ের জন্ম হলে তারাও বেআইনি বিদেশি। সুতরাং মেয়ে বিদেশে পড়তে যাবে বলে যে পাসপোর্ট করিয়েছিলেন সেটার আর কোনও দাম নেই। আপনি সরকারি চাকরি করেন, আপনার ছেলেও কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি সবে পেয়েছে – এই সবই আপনি ও আপনার পুত্র হারাতে পারেন। অর্থাৎ আপনার অস্তিত্ব – আর্থিক, সাংসারিক সবই নির্ভর করছে নাগরিকত্বের উপর।

    আপনি বলবেন – আমার আধার কার্ড আছে, ভোটার কার্ড আছে, প্যান কার্ড আছে, রেশন কার্ড আছে।  এ সবই কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের দেওয়া পরিচয়পত্র। আর কি চাই। অনেক ছোটবড় নেতারাও তাই বলে বেড়াচ্ছেন। শ্রীমতী আলোরানি সরকার ভারতের নির্বাচন কমিশনের ছাড়পত্র নিয়ে ২০১৬ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির হয়ে ও ২০২১ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ২০২১-এর নির্বাচনের পর কলকাতা হাইকোর্টে নির্বাচন সংক্রান্ত একটি মামলায় (GA 4 of 2022 EP/2/2021) আলোরানি সরকারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশি নাগরিকত্বের অভিযোগ আসে। আলোরানি সরকার নিজেকে ভারতীয় নাগরিক বলে দাবি করেন। গত ২০ মে বিচারক বিবেক চৌধুরী তাঁর রায়ে আলোরানি সরকারকে ভারতীয় নাগরিক মানতে অস্বীকার করেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আলোরানি সরকার ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করেছেন। এই নিবন্ধে আমরা আদালতে থাকা এই মামলার বিষয়ে আলোচনা কেবলমাত্র নাগরিকত্বের বিষয়ে সীমাবদ্ধ রাখব, মামলার অন্যান্য বিষয়ে নয়।
     
    আলোরানি সরকারের কিন্তু আধার কার্ড ইত্যাদি সবই ছিল কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে “এটা বলা নিষ্প্রয়োজন যে পাসপোর্ট, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড, আধার কার্ড ভারতের নাগরিকত্বের কোনও প্রমাণ নয়।” আলোরানি সরকারের দাবি ছিল যে তিনি জন্মসূত্রে ভারতীয় কারণ তিনি ১৯৬৯ সালে বৈদ্যবাটিতে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু আদালত দেখেছে যে তাঁর বাবা-মা থাকেন বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) পিরোজপুর জেলায়। ছোটবেলায় আলোরানি তাঁর কাকার বাড়ি বৈদ্যবাটি চলে আসেন। ফলে তিনি ভারতে জন্মগ্রহণ করেননি। তিনি ১৯৫৫-এর নাগরিকত্ব আইনের বিভিন্ন ধারায় নাগরিকত্বের আবেদন করার সুযোগ থাকলেও তা তিনি করেননি।

    আলোরানি এসেছিলেন পূর্ব পাকিস্তান থেকে ফলে তিনি ১৯৫৫-র নাগরিকত্ব আইন বিভিন্ন ধারায় নাগরিকত্বের আবেদন করার যোগ্য ছিলেন। কিন্তু ১৯৭২ সালের পর বাংলাদেশ থেকে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবার জন্য আবেদনের কোনও ব্যবস্থাই এতকাল ছিল না। সুতরাং এদেশে তাঁরা বেআইনি বিদেশি। এর প্রতিকারে ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে বলা হয়েছে যে, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সালের আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে অথবা আশঙ্কায় যেসব ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন ও পার্শি সম্প্রদায়ের মানুষ ভারতে এসেছেন, যাঁদের ১৯২০ সালের পাসপোর্ট আইন ও ১৯৪৬ সালের বিদেশি আইন থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে – তাঁরা বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বলে গণ্য হবেন না। 

    কিন্তু এই আইনের রুলস বা বিধি না চালু হওয়ার দরুণ উদ্বাস্তুরা আইন হওয়া সত্ত্বেও নাগরিক হতে পারছেন না। বাংলাদেশ থেকে আগত হিন্দু উদ্বাস্তুদের উপর পুলিশ তাদের প্রয়োজন মতো নাগরিকত্বহীনতার অভিযোগ এনে, ফরেনার্স অ্যাক্ট (বিদেশি আইন) দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের বিভিন্ন ধরণের সমস্যায় ফেলছে – ভয় দেখিয়ে উৎকোচ নেওয়া থেকে শুরু করে কারাবাস। উদ্বাস্তু আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত মানুষরা এরকম অনেক ঘটনা জানেন, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে আগত প্রায় দুই কোটি হিন্দু-মুসলমানের এই ভীষণ সমস্যা সাম্প্রতিক কয়েক বছর বাদ দিলে গত ৪০ বছরে সংবাদমাধ্যমে বা মানবাধিকার চর্চায় কখনও স্থান পায়নি। নীরব সর্পাঘাত কিন্তু ঘটেই চলেছে।

    ২০০৬ সালে একটি রাজনৈতিক দলের অভিযোগে হুগলির বলাগড়ের ৩৫ জন উদ্বাস্তুকে পুলিশ ফরেনার্স অ্যাক্টে গ্রেফতার করে দীর্ঘদিন জেলবন্দি রাখে। এঁরা সবাই গৃহস্থ মানুষ কোনও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নন। ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড, জমির দলিল সব থাকা সত্ত্বেও আদালত তার কোনও মূল্য দেয়নি। ২০২০ সালে গোবরডাঙ্গা পুলিশ স্থানীয় সাংবাদিক রাজু দেবনাথকে গ্রেফতার করে কয়েকটি অপরাধ সংক্রান্ত মামলার সঙ্গে ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা দেয়। রাজু দেবনাথের দাবি, গোবরডাঙ্গা থানার পুলিশ আধিকারিকদের কিছু অপরাধমূলক কাজ জনসমক্ষে আনায় তাঁর বিরুদ্ধে এইসব মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যে রাজু দেবনাথের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড, প্যান কার্ড দিয়ে নাগরিকত্ব প্রমাণ করা যায়নি। সম্প্রতি রাজু দেবনাথ জামিনে ছাড়া পেয়েছেন।

    তাহলে বলাগড়ের উদ্বাস্তুরা, আলোরানি সরকার বা রাজু দেবনাথ – ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড, প্যান কার্ড – কোনটাই তাঁদের নাগরিকত্ব দেয়নি। সুতরাং অনেক দলের নেতারা গলা ফাটিয়ে, চটি প্রচার পুস্তিকায় অনেক যুক্তিতর্ক লিখলেও, এইসব কার্ড যে আদালতে মূল্যহীন তা বারবার প্রমাণিত। আরও মনে রাখবেন, সব ক্ষেত্রে আপনার বিরুদ্ধে কেউ মামলা করলে সাক্ষ্যপ্রমাণের দায়িত্ব – যে অভিযোগ করেছে তাঁর। কিন্তু একমাত্র ফরেনার্স অ্যাক্ট (বিদেশি আইন) ১৯৪৬-এ মামলা হলে প্রমাণের দায়িত্ব অভিযোগকারীর নয়, আপনার। সুতরাং আপনার ও পরিবারের ভবিষ্যৎ, অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা – সব নির্ভর করছে আপনার আইনি নাগরিকত্বের প্রমাণে। আর এই নাগরিকত্বহীনতার সর্পাঘাতে বিদ্ধ হতে পারেন শুধু সাধারণ উদ্বাস্তুরা নন, বিদ্ধ হতে পারেন গোপন উদ্বাস্তু পশ্চিমবঙ্গের অনেক জনপ্রতিনিধি, বিধায়ক, সাংসদ, রাজ্য ও কেন্দ্রের মন্ত্রী। এখনই সচেষ্ট না হলে নীরবে সর্পাঘাতের জন্য তৈরি থাকুন। 

LinkedIn
Share