Tag: Companies exit from Bengal

  • West Bengal Trade: ৬,৬৮৮টি সংস্থার রাজ্যছাড়া! বাণিজ্যে বেহাল বাংলা, রাজ্যে শাসনব্যবস্থার কী বার্তা দেয় এই ট্রেন্ড?

    West Bengal Trade: ৬,৬৮৮টি সংস্থার রাজ্যছাড়া! বাণিজ্যে বেহাল বাংলা, রাজ্যে শাসনব্যবস্থার কী বার্তা দেয় এই ট্রেন্ড?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: এক সময় শিল্প ও উদ্যোগের ক্ষেত্রে দেশের অগ্রগামী রাজ্য (West Bengal Trade) ছিল পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু গত এক দশকে রাজ্য থেকে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলির ধারাবাহিক প্রস্থান (Companies exit from Bengal) এখন এক গভীর সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত দশ বছরে ৬,৬৮৮টি সংস্থা তাদের রেজিস্টার্ড অফিস পশ্চিমবঙ্গ থেকে অন্য রাজ্যে সরিয়ে নিয়েছে। চুপচাপ বড় বড় সংস্থা নিজেদের অফিস সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। এই ঘটনায় কোনও প্রতিবাদও হয়নি তৃণমূল-শাসিত বাংলায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সংস্থাগুলি নিজেদের অফিস সরে নিয়ে গিয়েছে মহারাষ্ট্র, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশের মতো বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে। উদ্যোগপতিদের কথায়, ওই রাজ্যগুলিতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ এবং নীতির স্থিতিশীলতা স্পষ্ট।

    ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছনো

    রাজ্যে (West Bengal Trade) পালা বদলের পর ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রহ সরকারের ক্ষমতায় আসার সময় থেকে শুরু হয় শিল্পপতির ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’ নীতি। কিন্তু ২০১৫–১৬ থেকে ২০১৭–১৮ পর্যন্ত সময়টা হল সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। এই তিন বছরে ২,৮১৪টি কোম্পানি রাজ্য ছেড়েছে। যা রাজ্য ত্যাগের মোট সংস্থার প্রায় ৪২ শতাংশ। ২০১৭–১৮ সালে সর্বাধিক ১,০২৭টি কোম্পানি রাজ্যছাড়া হয়, যা ছিল ইঙ্গিতবহ। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক দিক হল, ১০০-রও বেশি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি, যারা স্টক এক্সচেঞ্জে লিস্টেড, তারাও পশ্চিমবঙ্গ ছাড়ে। এরা কেবলমাত্র আর্থিক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বহু মানুষের চাকরি এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার সঙ্গে জড়িত। এই সরে যাওয়া দেশের বিনিয়োগ-বাজারে পশ্চিমবঙ্গের ভাবমূর্তি নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন তোলে।

    বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিই ‘প্রেফার্ড ডেস্টিনেশন’

    পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে যে সব সংস্থা (Companies exit from Bengal) চলে গিয়েছে, দেখা যায় তাদের সবচেয়ে পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিই। মহারাষ্ট্র (১,৩০৮টি), দিল্লি (১,২৯৭টি) ও উত্তরপ্রদেশে(৮৭৯টি) সরে যায় সংস্থাগুলি। মোট ৩,৪৮৪টি কোম্পানি, প্রায় ৫২ শতাংশ, এই তিন রাজ্যেই সরে গিয়েছে। ছত্তিশগড়, গুজরাট, রাজস্থান, অসমের মতো রাজ্যগুলিও তালিকায় রয়েছে। এই রাজ্যগুলিতে শিল্পনীতির মধ্যে স্পষ্টতা, স্থায়িত্ব এবং বাস্তবায়নের ইচ্ছা রয়েছে। বিপরীতে, কংগ্রেস বা তৃণমূল-শাসিত রাজ্যগুলি বিনিয়োগের পক্ষে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ, বলেই মনে করছেন উদ্যোগপতিরা।

    প্রতিশ্রুতি বনাম বাস্তবতা

    বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি আসে। কিন্তু রিপোর্ট বলছে, যেখানে পশ্চিমবঙ্গ ₹৩৯,১৩৩ কোটির বিনিয়োগে চতুর্থ স্থানে ছিল (IEM Part A), সেখানে বাস্তবায়িত বিনিয়োগে (IEM Part B) মাত্র ₹৩,৭৩৫ কোটি টাকা রাজ্যে এসেছে। এক বছরে আরও কমেছে—২০২৩ সালে যা ছিল ₹৪,৯৩০ কোটি। এই ব্যাপক ফারাক বিনিয়োগকারীদের (Companies exit from Bengal) আস্থাহীনতার স্পষ্ট প্রতিফলন। কথা আর কাজে বিরাট ব্যবধান শিল্পপতিদের দ্বিধাগ্রস্ত করছে।

    শিল্পোন্নয়ন-পরিকাঠামোয় পিছিয়ে পড়া রাজ্য

    পশ্চিমবঙ্গ এখনও ইন্ডিয়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল ল্যান্ড ব্যাঙ্কের (India Industrial Land Bank) অংশ নয়, যেখানে দেশের ২,৮৮৪টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের তথ্য রয়েছে। এটা রাজ্যের প্রশাসনিক অনীহা ও স্বচ্ছতার অভাবকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়। এমনকি এফডিআই (বিদেশি বিনিয়োগ) ক্ষেত্রেও পশ্চিমবঙ্গ ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম রাজ্য হয়েও ১১তম স্থানে রয়েছে, যা এক অদ্ভুত বৈপরীত্য তুলে ধরে।

    নীতির অস্পষ্টতা মূল সমস্যা

    শিল্পোন্নয়ন ব্যর্থতার অন্যতম প্রধান উদাহরণ হল সিঙ্গুর আন্দোলনের উত্তরাধিকার। টাটার ন্যানো কারখানা আটকে যাওয়ার পরে, তৃণমূল সরকার ‘হ্যান্ডস-অফ’ ভূমি নীতি গ্রহণ করে। ফলে রাজ্য (West Bengal Trade) শিল্পের জন্য জমি দিতে অস্বীকার করে এবং কোম্পানিগুলিকে হাজার হাজার জমির মালিকের সঙ্গে নিজেরা চুক্তি করতে হয়—যা বড় শিল্পপ্রকল্পের ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে ওঠে। সম্প্রতি, ২০২৫ সালের এপ্রিলে, রাজ্য সরকার হঠাৎ করেই ১৯৯৩ সাল থেকে চালু থাকা আটটি শিল্প ভর্তুকি প্রকল্প বন্ধ করে দেয়। ডালমিয়া ভারত ও বিরলা কর্পোরেশনের মতো কোম্পানি এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ৪৩০ কোটি টাকার বেশি দাবি আটকে গেছে।

    রাজনৈতিক ভাষণ দিয়ে উন্নয়ন হয় না

    রাজ্যজুড়ে কর্মসংস্থানের (Companies exit from Bengal) ঘাটতি বাড়ছে। দক্ষ পেশাজীবীরা রাজ্য ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গের জিএসডিপি (GSDP)-তে জাতীয় জিডিপি (GDP)-র অংশীদারিত্ব ১৯৬০–৬১ সালের ১০.৫% থেকে কমে ২০২৩–২৪ অর্থবর্ষে ৫.৬ শতাংশে নেমে এসেছে। এই পতন কেবলমাত্র পরিসংখ্যান নয়, একটি বড় আঞ্চলিক অসাম্যের চিত্র। ৬,৬৮৮টি কোম্পানির রাজ্য ছেড়ে চলে যাওয়া কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। আজকের বিশ্বে শুধুমাত্র রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা দিয়ে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না। বিনিয়োগের জন্য চাই স্থিতিশীল নীতি, জমির স্বচ্ছতা, এবং প্রশাসনিক সদিচ্ছা। পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal Trade) অবস্থা থেকে বোঝা যায়, শাসনব্যবস্থা উন্নয়নবান্ধব না হলে, শিল্প আসবে না, কর্মসংস্থান হবে না, আর রাজ্য দীর্ঘমেয়াদে কেন্দ্রনির্ভর হয়ে পড়বে।

LinkedIn
Share