মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: সামনেই বিহার বিধানসভা নির্বাচন (Bihar Assembly Election)। তার আগে বড় রাজনৈতিক ধাক্কা খেল রাজ্যের আরজেডি (RJD) নেতৃত্ব। দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালত ‘ল্যান্ড ফর জবস’ ও ‘আইআরসিটিসি দুর্নীতি’ মামলায় রাষ্ট্রীয় জনতা দলের সুপ্রিমো ও প্রাক্তন রেলমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব, তাঁর স্ত্রী তথা বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ি দেবী, এবং বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব-সহ একাধিক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছে। আদালতের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিহার নির্বাচনের আগে লালু পরিবারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও দুর্বল হল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহল মহল।
‘ল্যান্ড ফর জবস’ মামলায় চার্জ গঠন
সিবিআই-এর অভিযোগ অনুযায়ী, ২০০৪ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে রেলমন্ত্রী থাকার সময় লালু প্রসাদ যাদব গ্রুপ-ডি পদের চাকরির বিনিময়ে প্রার্থীদের কাছ থেকে তাঁদের জমি বা সম্পত্তি খুব কম দামে নিজের পরিবারের নামে নেন। এই মামলায় ২০২২ সালের মে মাসে সিবিআই চার্জশিট দাখিল করে, যেখানে লালু যাদব, রাবড়ি দেবী, তেজস্বী যাদব, মিসা ভারতীসহ মোট ১৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তদন্তে দাবি করা হয়েছে, পাটনা ও তার আশপাশের বেশ কিছু জমি লালু পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের নামে হস্তান্তর করা হয়েছিল। আদালত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০ ধারা (প্রতারণা), ১২০বি (ষড়যন্ত্র) এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৩(২) ও ১৩(১)(ডি) ধারায় চার্জ গঠন করেছে। শেষ দু’টি ধারা শুধুমাত্র লালু যাদবের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এদিন আদালতে লালু, রাবড়ি ও তেজস্বী- তিনজনেই জানিয়েছেন তাঁরা বিচারের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। রাবড়ি দেবী বলেন, “এই মামলা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা।”
আইআরসিটিসি দুর্নীতি মামলা
এই মামলাটি ২০০৪ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে লালু প্রসাদ যাদবের রেলমন্ত্রী থাকাকালীন আইআরসিটিসি হোটেল রক্ষণাবেক্ষণের চুক্তি প্রদান সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, দু’টি হোটেলের রক্ষণাবেক্ষণের চুক্তি বিজয় ও বিনয় কোচারের মালিকানাধীন সুজাতা হোটেলস প্রাইভেট লিমিটেড-কে বেআইনিভাবে দেওয়া হয়েছিল। মামলায় মোট ১৪ জন অভিযুক্ত রয়েছেন। আদালত ২৯ মে মামলার শুনানি শেষ করেছিল, সেই থেকে রায় সংরক্ষণ করে, এবং পরে ২৪ সেপ্টেম্বর বিচারক অভিযুক্তদের হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেন। সিবিআই ২০১৭ সালে লালু যাদব এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে। সিবিআই দিল্লির আদালতকে বলেছিল যে সমস্ত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের জন্য পর্যাপ্ত তথ্য রয়েছে। রবিবার (১২ অক্টোবর) দিল্লিতে পৌঁছে সোমবার আদালতে হাজিরা দিতে যান লালু প্রসাদ যাদব। অসুস্থতার কারণে তিনি হুইলচেয়ারে করে আদালতে আসেন। তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন স্ত্রী রাবড়ি দেবী, ছেলে তেজস্বী যাদব ও ঘনিষ্ঠ সহযোগী প্রেমচাঁদ গুপ্ত। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, এই মামলায় একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত রয়েছে। পাশাপাশি আদালত জানিয়েছে, এই মামলায় লালু পরিবারের প্রত্যক্ষ আর্থিক সুবিধা পেয়েছে, যদিও ঘুষের সরাসরি প্রমাণ আপাতত পাওয়া যায়নি। বিহার নির্বাচনের ঠিক আগে আদালতের এই সিদ্ধান্তকে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, লালু পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন আরজেডি-র ভাবমূর্তিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।