মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ভারত-মার্কিন বন্ধুত্ব আপাতত শিকেয়। ভারতকে (India) নতি স্বীকার করাতে দু’দফায় ভারতীয় পণ্যের ওপর মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Trump Tariff Threats)। তবে তার কোনও প্রভাব যে নয়াদিল্লির ওপর পড়েনি, তা বলাই বাহুল্য। কারণ ট্রাম্পের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই ভারত বাড়িয়ে গিয়েছে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনার পরিমাণ। প্রসঙ্গত, এই রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়েই ভারত-মার্কিন সম্পর্কের অবনতি হয়। গত কয়েক সপ্তাহে ট্রাম্প রাশিয়ান তেল কেনা ও মস্কোর সঙ্গে ব্যবসা করার কারণে ভারতের ওপর বড় ধরনের শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
অর্থনৈতিক সুবিধাকেই অগ্রাধিকার (India)
জানা গিয়েছে, অগাস্ট মাসে এখনও পর্যন্ত ভারত প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ ব্যারেল তেল রাশিয়া থেকে কিনছে। অপরিশোধিত তেল কেনার সময় ভারতীয় রিফাইনারিগুলির অর্থনৈতিক সুবিধাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে ভারত। গ্লোবাল ডেটা ও অ্যানালিটিক্স সংস্থা কেপলার (Kpler) জানিয়েছে, অগাস্টের প্রথমার্ধে ভারত প্রতিদিন প্রায় ৫২ লক্ষ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে, যার মধ্যে ৩৮ শতাংশই এসেছে রাশিয়া থেকে। এই সময়ে ভারত প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ ব্যারেল তেল রাশিয়া থেকে কিনেছে। জুলাই মাসে এই সংখ্যাটাই ছিল ১৬ লাখ।
তেল আমদানি কমেছে ইরাক-আমেরিকা থেকে
একই সময়ে ইরাক থেকে তেল আমদানি কমে এসে দাঁড়িয়েছে প্রতিদিন ৭.৩ লাখ ব্যারেল এবং সৌদি আরব থেকে আমদানি ৭ লাখ ব্যারেল থেকে কমে ৫.২৬ লাখ ব্যারেলে নেমেছে। কেপলারের তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিদিন ২.৬৪ লাখ ব্যারেল তেল আমদানি করেছে ভারত। এর ফলে আমেরিকা পরিণত হয়েছে ভারতের পঞ্চম বৃহত্তম তেল সরবরাহকারীর দেশে। কেপলারের প্রধান গবেষণা বিশ্লেষক সুমিত ঋতোলিয়া বলেন, “ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থিতিশীল রয়েছে। ভারতের রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি অগাস্ট মাসেও স্থিতিশীল রয়েছে। এমনকি ট্রাম্প প্রশাসন ২০২৫ সালের জুলাই মাসের শেষে শুল্ক ঘোষণা করার পরেও আমদানিতে ভাঁটা পড়েনি।” ঋতোলিয়া বলেন, “পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হলে তা সম্ভবত সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে অক্টোবরের মধ্যে পৌঁছানো জাহাজগুলির মাধ্যমেই স্পষ্ট হবে।”
ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা চালিয়ে যেতে চায়
প্রসঙ্গত, ভারতীয় (India) পণ্যের ওপর চড়া শুল্ক আরোপের আগে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, ভারত রাশিয়ার সঙ্গে ব্যাপক বাণিজ্য করছে এবং এর মাধ্যমে পরোক্ষভাবে ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে রাশিয়াকে সাহায্য করছে। ট্রাম্পের এই দাবিকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে ভারত সাফ জানিয়ে দেয়, অর্থনৈতিক ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই নেওয়া হবে (Trump Tariff Threats)। ভারতের সর্ববৃহৎ তেল বিপণন সংস্থা (ওএমসি) ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এএস সাহনি জানান, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা চালিয়ে যেতে চায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির কারণে এই কেনাকাটা বন্ধ হয়নি। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, “কোনও বিরতি নেই। সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক বিবেচনার ভিত্তিতে আমরা কেনাকাটা চালিয়ে যাচ্ছি। অর্থাৎ যদি দাম ও অপরিশোধিত তেলের গুণাগুণ আমাদের প্রক্রিয়াকরণের পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তবে আমরা কিনি। আমদানি বাড়ানো বা কমানোর জন্য কোনও বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। আমরা সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক বিবেচনার ওপর ভিত্তি করেই অপরিশোধিত তেল কিনছি (India)।”
ভারতের অভিপ্রায় অপরিবর্তিতই
তিনি ইঙ্গিত দেন, রাশিয়ান তেল কেনার ক্ষেত্রে ভারতের অভিপ্রায় অপরিবর্তিতই রয়েছে। সাহনি বলেন, “রাশিয়ান তেল কেনা কখনওই নিষিদ্ধ ছিল না এবং ভারতের কেনার সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক কারণে।” তিনি বলেন, “এ ধরনের কেনা চলতেই থাকবে যতক্ষণ না নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। আমাদের কাছে (সরকারের পক্ষ থেকে) কেনা বাড়ানো বা কমানোর কোনও নির্দেশ আসেনি। আমরা স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি।” তিনি বলেন, “আমাদের না বেশি কেনার জন্য (Trump Tariff Threats) বলা হচ্ছে, না কম কেনার জন্য, সেটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হোক বা অন্য কোনও দেশ। আমাদের কার্যক্রম অর্থনৈতিক বিবেচনাই নির্ধারণ করে (India)।”
রাশিয়ান তেলের অংশ
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের আগে ভারতের মোট অপরিশোধিত তেল আমদানির মধ্যে রাশিয়ান তেলের অংশ ছিল এক শতাংশেরও কম। তবে, পশ্চিমী দেশগুলির নিষেধাজ্ঞার পর ভারত সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশীয় জ্বালানির চাহিদা মেটাতে রাশিয়া থেকে আমদানি বাড়িয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। বর্তমানে ভারতের মোট তেলের চাহিদার ৩০ শতাংশই রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল দিয়ে পূরণ করা হয়। পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে (Trump Tariff Threats) বলা হয়েছে, এপ্রিল-জুন এই ত্রৈমাসিকে আইওসি রিফাইনারিগুলিতে প্রক্রিয়াজাত হওয়া মোট অপরিশোধিত তেলের প্রায় ২২-২৩ শতাংশই ছিল রাশিয়া থেকে আমদানিকৃত (India)।