মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: হিন্দু ধর্ম অনুসারে মৃত্যুতে আমাদের শুধু শরীর বিনষ্ট হয়। আত্মা অবিনশ্বর। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে আমরা যেমন জীর্ণ পোশাক ছেড়ে নতুন পোশাক পরি, তেমন আত্মাও জীর্ণ দেহ ত্যাগ করে নতুন দেহে প্রবেশ করে। মৃত্যু নিয়ে আমাদের চিন্তা -ভাবনা অনেক গভীরে। মৃত্যুর (Death Study) পরেও কি জীবনকে অনুভব করতে পারে মানুষ? হৃদস্পন্দন, রক্তপ্রবাহ থেমে যাওয়ার পরেও কি সক্রিয় থাকে মস্তিষ্ক, অন্তত কিছু ক্ষণ? মস্তিষ্কে আন্দোলিত হয় কোনও তরঙ্গ যা কি না মৃত্যুর অতলে তলিয়ে যাওয়ার সময়ও তুলে ধরে ফেলে আসা জীবনের ছবি? সাম্প্রতিক একটি গবেষণা এই সব প্রশ্নকেই উস্কে দিল। যা হৃদস্পন্দন, রক্ত প্রবাহ পুরোপুরি থেমে যাওয়ার পরের কিছু ক্ষণ ধরে মস্তিষ্কে কী কী ঘটে সেই সব ঘটনাই রেকর্ড করল। এই প্রথম।
আত্মার শরীর ত্যাগ
মৃত্যুর পর (Death Study) নিথর হয়ে যায় দেহ। কিন্তু আত্মার শেষও (Soul Leaving the Body) কি মৃত্যুতে? কোনও ব্যক্তির শরীর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলে, সঙ্গে সঙ্গে আত্মাও কি শেষ হয়ে যায়, না কি আরও কিছু ক্ষণ শরীরে বিরাজ করে আত্মা? এ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে চমকপ্রদ তথ্য উঠে এল। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, চিকিৎসকরা যদি কাউকে মৃত ঘোষণা করেও দেন, তার পরও কিছু ক্ষণ মস্তিষ্ক কার্যকর থাকে। ওই সময়ই শরীর থেকে বেরিয়ে যায় আত্মা। মৃত্যুর আগের মুহূর্তে মানবশরীরে ঠিক কী ঘটে, তা নিয়ে গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মৃত্যু পথগামী রোগী, যাঁর কোনও হৃদস্পন্দন নেই, রক্তচাপও নেই, অথচ মস্তিষ্ক কিছু ক্ষণ সক্রিয় থাকে। একঝলকে কোনও শক্তি যেন খেলে যায়, যা শরীর থেকে আত্মার বেরিয়ে যাওয়ার প্রমাণ। অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট এবং মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডঃ স্টুয়ার্ট হামেরফ জানিয়েছেন, এর রোগীকে পর্যবেক্ষণ করে শরীর থেকে আত্মা বেরিয়ে যাওয়ার প্রমাণ মিলেছে।
কী ঘটে মৃত্যুর পর
ইউনিভার্সিটি অফ অ্যারিজোনার অধ্যাপক ডঃ হামেরফ জানিয়েছেন, ক্লিনিক্যালি ডেড এক রোগী, অর্থাৎ যাঁকে মৃত ঘোষণা করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা, তাঁর মস্তিষ্কে নজরদারি চালানো হয়। ব্যবহার করা হয় ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রামের (EEG) সেন্সর। রোগীর মৃত্যুর পরও ওই সেন্সরে অদ্ভূত এক শক্তির ঝলক ধরা পড়ে। ডঃ হামেরফ বলেন, “সব কিছু চলে গিয়েছিল, হঠাৎ শ্শ্শ্…হৃদস্পন্দন নেই, রক্তচাপ নেই, কিন্তু কার্যকলাপ চলছে। হতে পারে সেটি মৃত্যুর কাছাকাছি কোনও অভিজ্ঞতা, অথবা শরীর থেকে আত্মার বেরিয়ে যাওয়া।” আমেরিকার পত্রিকা নিউ ইয়র্ক পোস্টে ডঃ হামেরফ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে।
মৃত্যুর পর শক্তির বিচ্ছুরণ
শরীর নিথর হয়ে যাওয়ার পর মস্তিষ্কের ওই কার্যকলাপকে গামা সিক্রোনি নামক কার্যকলাপের বিস্ফোরণ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। এটি একটি মস্তিষ্কে খেলে যাওয়া এক ধরনের তরঙ্গ, যা আমাদের সচেতন চিন্তা, সচেতনতা এবং উপলব্ধির সঙ্গে সংযুক্ত। ইইজি-তে সেই কার্যকলাপই ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছেন ডঃ হামেরফ। তিনি জানিয়েছেন, ৩০ থেকে ৯০ সেকেন্ড পর্যন্ত এই কার্যকলাপ স্থায়ী হতে পারে। মৃত ঘোষণা করে দেওয়ার পরও চলে। ৫০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটে বলে জানিয়েছেন ডঃ হামেরফ। ক্ষণস্থায়ী ওই কার্যকলাপকে অনেকে নিউরনের ‘শেষ নিঃশ্বাস’ বলেন।
চেতনার অবলুপ্তি, বলছে বিজ্ঞান
ডঃ হামেরফের মতে, আসলে চেতনা (Soul Leaving the Body) শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়ারই প্রতীক ওই কার্যকলাপ। তাঁর মতে, চেতনা ধরে রাখতে বেশি শক্তির প্রয়োজন পড়ে না শরীরের। মস্তিষ্কের একেবারে গভীরে লুকিয়ে থাকে চেতনা। মানবশরীর যখন শেষ হয়, তাই একেবারে শেষে চেতনার অবলুপ্তি ঘটে। এ প্রসঙ্গে একটি গবেষণাপত্রেরও উল্লেখ করেন ডঃ হামেরফ, যার নেতৃত্বে ছিলেন ডঃ রবিন লেস্টার কারহার্ট-হ্যারিস। মানসিক স্বাস্থ্য এবং আচরণের উপর ওষুধের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেন তিনি। ইইজি-র পর্যবেক্ষণে এমআরআই করা হয় অনেকের, যেখানে সকলকে সাইকো অ্যাক্টিভ কমপাউন্ড দেওয়া হয়েছিল। চোখ বুজে সকলে শুয়েছিলেন। নড়াচড়া বারণ ছিল। সেই অভিজ্ঞতা কেমন ছিল, তা পরীক্ষার পর ব্যাখ্যাও করতে হয় সকলকে।
জীবনের চিরন্তন সত্য মৃত্যু
প্রত্যেক জীবন্ত প্রাণীর জীবনে মৃত্যু অনিবার্য। এই পৃথিবীতে যার জন্ম হয়েছে, তার মৃত্যু হবেই। তবে মৃত্যু ঠিক কবে এবং কী ভাবে আমাদের সামনে আসবে, তা আমরা কেউ জানি না। কিন্তু আমাদের জীবনে আর কিছু ঘটুক বা না ঘটুক, মৃত্যু ঘটবেই। আর এই সত্য আমরা কেউ পরিবর্তন করতে পারি না। হিন্দুধর্মের অন্যতম শাস্ত্রগ্রন্থ হল গরুঢ় পুরাণ। এই শাস্ত্রে মৃত্যু ও মৃত্যুর পরের অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। গরুঢ় পুরাণে শ্রীবিষ্ণু নিজের বাহন গরুঢ় পাখিকে মানুষের কর্মফলের ভিত্তিতে যে মৃত্যুযন্ত্রণা ও মৃত্যুর পরের কষ্ট ভোগ করতে হয়, তার বর্ণনা দিয়েছেন ও কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। আধুনিক বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত মৃত্যুর পরের রহস্য ভেদ করার চেষ্টা করছে। আগামী দিনে এ নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ডঃ হামেরফ।