মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: এক সপ্তাহ আগেই পরিচয়পত্র দেখে বাস থেকে নামিয়ে ৯ জন পাকিস্তানিকে গুলি করে হত্যা করেছিল বালুচ স্বাধীনতাকামীরা (Baloch Rebels)। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতের ঘটনা। ঘটনাটি ঘটেছিল ঝোব জেলার সুর-ডাকাই এলাকায় জাতীয় সড়কে। সেই ঘটনার রেশ কাটার আগেই ফের খবরের শিরোনামে বালুচিস্তান। ১৬ জুলাই রাতের দিকে কালাত জেলার নেমারঘ এলাকায় একটি বাসে হামলা চালায় স্বাধীনতাকামীরা।
দু’দিক থেকেই বাসে গুলি (Baloch Rebels)
বাসটিতে ছিলেন পাক সেনারা। বাসটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কুয়েটা-করাচি আরসিডি জাতীয় সড়ক ধরে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই রাস্তার দু’দিক থেকেই বাসটিতে গুলি চালায় সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা। ঘটনায় বেশ কয়েকজন পাক সেনা নিহত হন। গুরুতর জখম হয়েছেন আরও অনেকেই। কড়া নিরাপত্তায় নিহত পাক সেনাদের দেহ এবং জখমদের কালাত সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে হাসপাতাল চত্বরে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। তাই ঠিক কতজন নিহত হয়েছেন, জখমই বা হয়েছেন কতজন, তা জানা যায়নি (Pakistani Soldiers Killed)।
বাসে ছিলেন সেনাকর্মীরাও
পাকিস্তানের সরকারি আধিকারিকরা ঘটনাটিকে সাধারণ একটি বেসরকারি বাসে হামলা হিসেবে উল্লেখ করলেও, ইধি ফাউন্ডেশনের উদ্ধারকারী দল ও সূত্রের খবর, বাসটিতে সেনাকর্মীদের পাশাপাশি ছিলেন পাকিস্তানের সাধারণ মানুষও। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও গোষ্ঠী আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘটনার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয়নি, তবে জুলাই মাসের শুরু থেকে কালাত ও আশপাশের এলাকায় সামরিক বাহিনীর ওপর একাধিক প্রাণঘাতী হামলা চালানোর কারণে বালুচ স্বাধীনতাকামীদেরই সন্দেহ করা হচ্ছে। পাকিস্তানের আধিকারিকদের একাংশের মতে, এই হামলার পদ্ধতি পূর্ব পরিকল্পিত। রাস্তার দু’দিক থেকে চালানো আক্রমণ যা একটি কৌশলগত জাতীয় সড়কের ওপর হয়েছে (Baloch Rebels), তা থেকে স্পষ্ট এটি একটি সামরিক পরিবহণ টার্গেট করে হামলা চালানো হয়েছে। তাঁদের মতে, এটি বালুচ লিবারেশন আর্মির অপারেশনের বৈশিষ্ট্য।
জাতীয় সড়ক অবরোধ ঘিরে তুলকালাম
গত ১১ জুলাই বালুচ স্বাধীনতাকামীরা আরসিডি জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছিলেন চার ঘণ্টা ধরে। অবরোধের জেরে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ হওয়ায় রাস্তায় সার দিয়ে দাঁড়িয়ে যায় গাড়ি। অবরোধ তুলতে গেলে পাকিস্তান সেনার সঙ্গে স্বাধীনতাকামীদের গুলির লড়াই হয়। সেদিনও নিহত হন দুই পাক সেনা। এর পরে পরেই কালাত ও খারানে একাধিক প্রাণঘাতী হামলা চালানো হয়। এর মধ্যে স্নাইপার হামলা, বোমা বিস্ফোরণ এবং অতর্কিত হামলাও রয়েছে। এই সব অভিযানে কমপক্ষে ১১ জন পাক সেনা নিহত হন। জখমও হন ১২-১৩জন পাক সেনা (Pakistani Soldiers Killed)।
মৃতের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ
কালাত সিভিল হাসপাতালে সংবাদ মাধ্যমের প্রবেশ নিষিদ্ধ করায় সন্দেহ আরও গাঢ় হয়েছে। কারণ নিহত এবং আহতদের এই হাসপাতেলেই নিয়ে আসা হয়েছিল। গণমাধ্যমের কর্মীদের হাসপাতালে ঢুকতে না দেওয়ার পাশাপাশি ওই অঞ্চলে মোবাইলের নেটওয়ার্কও মাঝে মাঝেই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। জানা গিয়েছে, এটি পাক প্রশাসনের একটি কৌশল, যা বড় ধরনের বিদ্রোহী দমন অভিযানের সময় প্রায়ই ব্যবহার করা হয় (Baloch Rebels)।
কী বলছে সরকার
পাক সরকারের মুখপাত্র শাহিদ রিন্দ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বাসটির তিনজন যাত্রী নিহত এবং আরও সাতজন আহত হয়েছেন। তবে তিনি নিশ্চিত করেননি, নিহতদের মধ্যে কোনও সেনা সদস্য ছিলেন কি না। যদিও উদ্ধারকারী কর্মীদের তরফে পরস্পরবিরোধী তথ্যগুলি থেকে জানা গিয়েছে (Pakistani Soldiers Killed), সরকারি বিবৃতিতে মৃতের সংখ্যা যা বলা হচ্ছে, প্রকৃত সংখ্যাটা হতে পারে তার অনেক বেশি।
গেরিলা যুদ্ধ কৌশল
বিশেষজ্ঞদের মতে, এদিনের হামলাটি বালুচ স্বাধীনতাকামীদের, বিশেষ করে বালুচ লিবারেশন আর্মির পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং পরিকাঠামোর বিরুদ্ধে যৌথ গেরিলা যুদ্ধ কৌশলের এক নয়া উচ্চতায় পৌঁছনোর ইঙ্গিত দেয়। গত দু’সপ্তাহের মধ্যে বালুচ স্বাধীনতাকামীরা যেসব হামলা চালিয়েছে, সেগুলি হল – ৫ জুলাই শেখারিতে একটি সেনা চৌকিতে ভারী অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে ৫জন সেনাকে হত্যা এবং আরও ৫জনকে জখম করা। ১২ জুলাই বেনচায় একটি সেনা কনভয়ের ওপর পূ্র্ব পরিকল্পিত ঘেরাও এবং হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় ৩জন সেনাকে (Baloch Rebels)। ১৩ জুলাই খারানে ডিআইজি অফিস লক্ষ্য করে তিনটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। স্নাইপার হামলা এবং চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর সংশ্লিষ্ট লজিস্টিক অপারেশনে ব্যাঘাতও ঘটানো হয় বিভিন্ন জেলায়। বালুচ লিবারেশন আর্মির মুখপাত্র আজাদ বালুচ এক বিবৃতিতে জানান, “এই সব কর্মসূচি হচ্ছে অধিকারের দখল ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলনের অংশ। যতক্ষণ (Pakistani Soldiers Killed) না স্বাধীন ও মুক্ত বালুচিস্তান প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, ততক্ষণ এই ধরনের হামলা চলতেই থাকবে (Baloch Rebels)।”