Tag: disqualification

  • Bhagavad Gita: “ভগবদগীতা ভারতীয় সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অংশ”, রায় মাদ্রাজ হাইকোর্টের

    Bhagavad Gita: “ভগবদগীতা ভারতীয় সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অংশ”, রায় মাদ্রাজ হাইকোর্টের

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: “ভগবদগীতা (Bhagavad Gita) কোনও ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, বরং এটি নৈতিক বিজ্ঞান এবং ভারতীয় সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অংশ।” ঠিক এমনই মন্তব্য করলেন মাদ্রাজ হাইকোর্টের (Madras HC) বিচারপতি জিআর স্বামীনাথন। তাঁর মতে, ভগবদ গীতার শিক্ষা দিলেই কোনও ট্রাস্টকে ধর্মীয় বলা যাবে না এবং সেই কারণে বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন (FCRA), ২০১০–এর অধীনে নিবন্ধন অস্বীকার করাও যায় না। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আদালত ভারতীয় চেতনায় গভীরভাবে প্রোথিত যে সত্যটিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছে, তা হল গীতা কোনও সাম্প্রদায়িক ধর্মগ্রন্থ নয়, এটি একটি সভ্যতাগত জ্ঞানভান্ডার।

    জনকল্যাণমূলক ট্রাস্টের এফসিআরএ আবেদন (Bhagavad Gita)

    এই মামলার সূত্রপাত একটি জনকল্যাণমূলক ট্রাস্টের এফসিআরএ আবেদন খারিজ হওয়া থেকে। সংশ্লিষ্ট ট্রাস্টটি বেদান্ত, সংস্কৃত, যোগশাস্ত্র ও ভগবদগীতার শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি প্রাচীন পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণের কাজেও যুক্ত ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এই আবেদনটি এই অনুমানের ভিত্তিতে খারিজ করে যে, এই কার্যকলাপগুলি ধর্মীয় প্রকৃতির। ঔপনিবেশিক যুগের ভুল ধারণা থেকে উৎসারিত এই আমলাতান্ত্রিক যুক্তিকে সংবিধানসম্মত স্পষ্টতার ভিত্তিতে মাদ্রাজ হাইকোর্ট স্পষ্টভাবে খারিজ করে দেয়।

    ভগবদগীতা কোনও ধর্মীয় গ্রন্থ নয়

    এর পরেই বিচারপতি স্বামীনাথনের মন্তব্য, “ভগবদগীতা কোনও ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, বরং এটি নৈতিক বিজ্ঞান এবং ভারতীয় সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি শুধু একটি আইনি সিদ্ধান্ত নয়, এটি একটি সভ্যতাগত ঘোষণা। গীতা উপাসনা, আচার বা কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্বের গ্রন্থ নয়। এটি একটি দার্শনিক সংলাপ, যা কর্তব্য, কর্ম, নেতৃত্ব, নৈতিকতা, অনাসক্তি এবং জটিল পরিস্থিতিতে ন্যায়সঙ্গতভাবে (Madras HC) কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় অন্তর্নিহিত শৃঙ্খলার কথা বলে। মন্দির নয়, যুদ্ধক্ষেত্রকে পটভূমি হিসেবে বেছে নেওয়াই প্রতীকী, এটি জীবনের নৈতিক দ্বন্দ্বের প্রতিচ্ছবি, ধর্মীয় বিধান নয় (Bhagavad Gita)।”

    নিষ্কাম কর্মের তত্ত্ব

    হাজার হাজার বছর ধরে ভগবদগীতা ভারতের নৈতিক দিশারি হিসেবে কাজ করে এসেছে। নিষ্কাম কর্মের তত্ত্ব নিঃস্বার্থ জনসেবার ভিত্তি রচনা করেছে। স্বধর্মের ধারণা অধিকার নয়, দায়িত্বের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। কর্মের মধ্যেও সমত্ব বজায় রাখার শিক্ষা ভারতীয় শাসনব্যবস্থা, যুদ্ধনীতি, বিচারব্যবস্থা এবং ব্যক্তিগত আচরণের বোধকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। এই কারণেই মহাত্মা গান্ধী থেকে লোকমান্য তিলক, শ্রী অরবিন্দ থেকে আধুনিক ব্যবস্থাপনা চিন্তাবিদরা, সকলেই গীতার ভাবধারা থেকে প্রেরণা গ্রহণ করেছেন।

    সভ্যতাগত পক্ষপাত

    হাইকোর্টের এই রায় ভারতীয় শাসনব্যবস্থার এক দীর্ঘদিনের অন্তর্নিহিত বৈপরীত্যকে উন্মোচিত করেছে। পাশ্চাত্য দার্শনিক ঐতিহ্য, অ্যারিস্টটল, প্লেটো, কান্ট – নির্বিবাদে ধর্মনিরপেক্ষ জ্ঞান হিসেবে স্বীকৃত হলেও ভারতীয় দার্শনিক ধারাগুলিকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধর্মীয় তকমা দেওয়া হয়। যোগ আজ বিশ্বজুড়ে একটি সুস্থতা ও কল্যাণমূলক অনুশীলন হিসেবে স্বীকৃত। অথচ ভারতের ভেতরেই তা প্রায়ই আদর্শগত সন্দেহের চোখে দেখা হয়। সংস্কৃত বিশ্বের অন্যতম সূক্ষ্ম ও পরিশীলিত ভাষাতাত্ত্বিক ব্যবস্থাগুলির একটি হলেও, তার শিক্ষাদানকে বহু সময় সাম্প্রদায়িক বলে ভুলভাবে চিহ্নিত করা হয়। বেদান্ত চেতনা ও বাস্তবতার ওপর এক গভীর দার্শনিক অনুসন্ধান, তবু ইউরোপীয় দর্শনশাস্ত্রের সমতুল্য দর্শন হিসেবে তাকে খুব কমই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই বৈষম্য ধর্মনিরপেক্ষতা নয়, এটি এক ধরনের সভ্যতাগত পক্ষপাত(Bhagavad Gita)।

    রায় প্রশ্নাতীত

    সংবিধানের দৃষ্টিতে এই রায় প্রশ্নাতীত। সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদ আইনের সামনে সমতার নিশ্চয়তা দেয় এবং খামখেয়ালি শ্রেণিবিভাগ নিষিদ্ধ করে। কেবল সাংস্কৃতিক উৎসের কারণে ভারতীয় দর্শনের পাঠদানকে পাশ্চাত্য দর্শনের পাঠদানের থেকে আলাদা করে দেখা যায় না। ২৫ ও ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদ ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা করে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, ভারতীয় জ্ঞানের প্রতিটি দিককে ধর্মের সংকীর্ণ সংজ্ঞার মধ্যে আবদ্ধ রাখতে হবে। ভারতের সংবিধান রাষ্ট্রকে সভ্যতার প্রতি বিরূপ হতে বলে না, বরং বলে রাষ্ট্রকে ন্যায্য হতে(Madras HC) ।

    প্রক্রিয়াগত শৃঙ্খলার ওপর আদালতের জোর

    এফসিআরএ ব্যবস্থার অধীনে প্রক্রিয়াগত শৃঙ্খলার ওপর আদালতের জোর দেওয়াটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যাখ্যানের আদেশটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বদলে অনুমাননির্ভর ধারণার ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়েছিল, এবং পূর্ববর্তী কারিগরি ত্রুটিগুলি, যেগুলি ইতিমধ্যেই আইনের আওতায় নিষ্পত্তি হয়েছিল, অযৌক্তিকভাবে আবার অযোগ্যতার কারণ হিসেবে সামনে আনা হয়। বিদেশি তহবিলের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজনীয়, কিন্তু সেই নিয়ন্ত্রণ যেন আদর্শগত প্রহরায় পরিণত হতে না পারে। আদালত যথার্থভাবেই এই নীতিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে যে, জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা ন্যায্যতা, স্পষ্টতা এবং সাংবিধানিক সংযমের সঙ্গে আমাদের সহাবস্থান করতেই হবে (Bhagavad Gita)। ভারত যেভাবে ধর্মনিরপেক্ষতাকে বোঝে, সেই প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ নিজের ঐতিহ্য মুছে ফেলা নয়। এর অর্থ হল, সব পথের প্রতি সম্মান দেখানো, কিন্তু কাউকেই বিশেষ সুবিধা না দেওয়া। এর মানে হল, এই সত্যকে স্বীকৃতি দেওয়া যে সভ্যতাগত গ্রন্থগুলি বিশ্বাস চাপিয়ে না দিয়েই সর্বজনীন নৈতিকতা দান করতে পারে। ভগবদগীতা ঠিক সেটাই করে। গীতা আসক্তিহীন কর্মের শিক্ষা দেয়, অহংকারহীন নেতৃত্বের কথা বলে, এবং বিদ্বেষহীন কর্তব্য পালনের পথ দেখায়। এই মূল্যবোধগুলি সমাজকে শক্তিশালী করে, বিভক্ত করে না(Madras HC) ।

    মাদ্রাজ হাইকোর্টের রায়

    অতএব, মাদ্রাজ হাইকোর্টের রায়টি শুধু এফসিআরএ নিবন্ধনের তাৎক্ষণিক প্রশ্নেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি ভারতীয় প্রজ্ঞার ভুল ব্যাখ্যার বিরুদ্ধে এক সাংবিধানিক সীমারেখাও টেনে দেয়। এই রায় প্রজাতন্ত্রকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে আধুনিক শাসনব্যবস্থা বৌদ্ধিক বিস্মৃতির ওপর দাঁড়াতে পারে না। গীতাকে সাম্প্রদায়িক ধর্মগ্রন্থ নয়, বরং নৈতিক বিজ্ঞান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আদালত সাংবিধানিক ব্যাখ্যাকে সভ্যতাগত বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করেছে (Bhagavad Gita)। ভগবদগীতার শিক্ষা দেওয়া ধর্মপ্রচার নয়, বরং শিক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধের সংক্রমণ হিসেবে পুনরায় নিশ্চিত করে মাদ্রাজ হাইকোর্ট ভারত জাতির প্রতি এক নীরব কিন্তু ঐতিহাসিক সেবা দিয়েছে। এই রায় নিশ্চিত করেছে যে ভারতের আত্মাকে কোনও ব্যুরোক্র্যাটিক অসুবিধা হিসেবে নয়, বরং শক্তির উৎস হিসেবে দেখা হবে।

LinkedIn
Share