Tag: Down Syndrome

  • Down Syndrome: অতিরিক্ত ক্রোমোজোম নয়, ডাউন সিনড্রোম মোকাবিলায় বড় চ্যালেঞ্জ সামাজিক অসচেতনতা!

    Down Syndrome: অতিরিক্ত ক্রোমোজোম নয়, ডাউন সিনড্রোম মোকাবিলায় বড় চ্যালেঞ্জ সামাজিক অসচেতনতা!

    তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল

     

    অতিরিক্ত ক্রোমোজোম নয়, বরং সামাজিক অসচেতনতাই হয়ে উঠছে চ্যালেঞ্জ! ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত নিয়ে নয়া পাঠ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার! সচেতনতা মাসে কী পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ মহল?

    শরীরের জিনগত গঠনে ত্রুটি বাড়ায় জটিলতা। কিন্তু সমাজের অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসচেতনতাই পরিস্থিতি আরও সঙ্কটজনক করে তোলে। তাই বিশেষজ্ঞ মহল ডাউন সিনড্রোম আক্রান্তদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে সামাজিক সচেতনতাকেই মূল হাতিয়ার করতে চাইছেন। অক্টোবর মাস ডাউন সিনড্রোম সচেতনতা মাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, আলাদা ব্যবস্থা নয়। বরং একসঙ্গে সকলে মিলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এই মানুষদের নিয়ে চলাই এ বছরের সচেতনতা কর্মসূচি।

    ডাউন সিনড্রোম কী?

    চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, গর্ভাবস্থায় শিশুদের জিনগত ত্রুটির কারণে ডাউন সিনড্রোম হয়। মানুষের শরীরে ৪৬ ক্রোমোজোম থাকে। কিন্তু ত্রুটির কারণে ডাউন সিনড্রোম আক্রান্তদের শরীরে ৪৭ ক্রোমোজোম থাকে। এর ফলে কোষের গঠন ঠিকমতো হয় না। তাই ডাউন সিনড্রোম আক্রান্তের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঠিকমতো হয় না। বয়সের সঙ্গে বুদ্ধিমত্তা বাড়ে না। ফলে, নিজের কাজ ঠিকমতো করা কিংবা সাধারণ জীবন যাপন করা কঠিন হয়ে যায়। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত জিনঘটিত কারণেই ডাউন সিনড্রোম হয়। বংশানুক্রমিক এই রোগ। তবে অন্যান্য কারণেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় মায়ের অতিরিক্ত বয়স সন্তানের ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত হওয়ার কারণ হতে পারে।

    ভারতে ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত কি বাড়ছে?

    ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩২ হাজার শিশু ডাউন সিনড্রোম নিয়ে জন্ম নেয়। প্রতি ৮০০ জন শিশুর মধ্যে ১ জন ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত। এই পরিস্থিতিতে এই রোগ নিয়ে সচেতনতা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, সন্তান জন্মের আগে বংশানুক্রমিকভাবে কেউ ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত ছিলো কিনা, সে সম্পর্কে হবু মা ও বাবার ওয়াকিবহাল থাকা জরুরি। তাছাড়া, আধুনিক শহুরে জীবনে বহু মেয়েই ৩৫ বছরের পরে মাতৃত্বের পরিকল্পনা করছেন। যা সন্তানের ডাউন সিনড্রোমের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

    কীভাবে ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত চিহ্নিত হয়?

    চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, গর্ভাবস্থায় বেশ কিছু শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভস্থ শিশু ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত কিনা তা জানা যায়। এর পাশপাশি শিশুর জন্মের দেড় থেকে দু’বছরের মধ্যে এই রোগের লক্ষণ স্পষ্ট হয়। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, শিশুর শারীরিক গঠন দেখে বোঝা যায়, শিশুটি এই জিনঘটিত সমস্যায় আক্রান্ত কিনা। তাঁরা জানাচ্ছেন, ডাউন সিনড্রোম আক্রান্তদের মুখের গঠন চ্যাপ্টা হয়। জিভ বড় হয়। কান তুলনামূলকভাবে ছোটো হয়। পাশপাশি হাত-পা সহ শরীরের একাধিক অঙ্গের গঠনে ত্রুটি দেখা যায়। আঙুলে বাড়তি ফাঁক থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে শারীরিক বৃদ্ধি ঠিকমতো হয় না।‌ মস্তিষ্কের বিকাশও ঠিকমতো হয় না। তাই বুদ্ধির বিকাশ ও বয়সের অনুপাতে সমান হয় না।

    ডাউন সিনড্রোম আক্রান্তদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে কোন পথের হদিশ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা?

    বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে জানানো‌ হয়েছে, সচেতনার অভাব ডাউন সিনড্রোম আক্রান্তদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের পথে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই সচেতনতাকেই হাতিয়ার করতে চাইছেন বিশেষজ্ঞ মহল। তাঁরা জানাচ্ছেন, কয়েকটি দিকে বিশেষ খেয়াল রাখলেই ডাউন সিনড্রোম আক্রান্তদের জীবন তুলনামূলক ভাবে সহজ হবে।

    পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সচেতনতা!

    বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, পরিবারের কেউ ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত হলে তাকে একা রাখা উচিত নয়। বরং পরিবারের অন্য সদস্যদের তার প্রতি বাড়তি যত্নবান হওয়া দরকার। তাঁদের পরামর্শ, শিশু ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত হলে তাকে একা ঘরে রেখে দেওয়া কিংবা অন্যদের সঙ্গে মিশতে না দেওয়া একেবারেই উচিত নয়। এতে জটিলতা বাড়ে। বরং পারিবারিক অনুষ্ঠানে সবসময় তাদের নিয়ে যাওয়া দরকার। যাতে সকলের সঙ্গে মেলামেশা করা ডাউন সিনড্রোম আক্রান্তের পক্ষে সহজ‌ হয়। অনেক সময়েই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুকে সকলের সঙ্গে মিশতে দেওয়া হয় না। আবার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এমনকি শিশুরাও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সঙ্গে একাত্ম হতে পারে না। আর এক্ষেত্রেই সচেতনতা জরুরি। আলাদা রকম হলেই তাকে বাদ দেওয়া নয়। বরং একসঙ্গে মিলেমিশে থাকার পারিবারিক মূল্যবোধ ও শিক্ষা প্রয়োজন।

    সময় মতো লাগাতার থেরাপি!

    ডাউন সিনড্রোম আক্রান্তের কথা বলার ক্ষমতা বাড়াতে এবং সাধারণ কাজ করার মতো শারীরিক ক্ষমতা বাড়াতে লাগাতার থেরাপি চালিয়ে যাওয়া জরুরি। এমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, জিনঘটিত জটিলতার কারণেই এই সমস্যা তৈরি হয়। তাই তাদের শারীরিক পরিস্থিতি উন্নতি করতে দক্ষ প্রশিক্ষিত কর্মীদের কর্মশালা জরুরি। তাই ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত শিশুর নিয়মিত স্পিচ থেরাপি এবং অন্যান্য থেরাপি প্রয়োজন।

    স্কুলে লাগাতার সচেতনতা কর্মসূচি!

    শুধুই আলাদা ক্লাসরুম নয়। বরং সকলের সঙ্গে বসে একসঙ্গে পড়াশোনা করা। অন্যান্য সহপাঠীদের থেকে সমান ভালোবাসা পাওয়া সহজ করে দেবে ডাউন সিনড্রোম আক্রান্তের জীবন। এমনটাই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত শিশুও আর পাঁচজন শিশুর সঙ্গে মিশতে চায়। স্বাভাবিক ভাবেই খেলাধুলা করতে চায়। তাদের একসঙ্গে নিয়ে চললে তবেই তাদের জীবনের জটিলতা কমবে। আলাদা রকম হলেও যে একসঙ্গে চলা যায় এই শিক্ষা বছরভর স্কুলে চালাতে হবে। সেটা শুধু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর জন্য নয়, যেকোনও শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা। তাই এ নিয়ে লাগাতার কর্মসূচি পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, শুধুমাত্র আলাদা বিশেষ ক্লাসরুমে ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত শিশুদের রাখলে, বাকিদের থেকে আইসোলেট থাকলে তাদের বিকাশে আরও জটিলতা তৈরি হয়।

     

     

    DISCLAIMER: এই প্রতিবেদনটি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী লেখা। এর সঙ্গে মাধ্যম-এর কোনও সম্পর্ক নেই। মাধ্যম এর কোনও দায় নিচ্ছে না। এখানে বলা যে কোনও উপদেশ পালন করার আগে অবশ্যই কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

LinkedIn
Share