Tag: Dwarka

  • Dwarka: জলের নীচে লীন কৃষ্ণ-কর্মভূমি, ৪ হাজার বছরের পুরনো দ্বারকার সন্ধানে ডুব দিলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা

    Dwarka: জলের নীচে লীন কৃষ্ণ-কর্মভূমি, ৪ হাজার বছরের পুরনো দ্বারকার সন্ধানে ডুব দিলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: শ্রীকৃষ্ণের কর্মভূমি ছিল দ্বারকা নগরী। ৪ হাজার বছরের পুরনো এক শহর। এখানেই রাজপাট চালিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। এবার সেই দ্বারকায় সমুদ্রের নীচে হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসের খোঁজে নামল ভারতের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বা এএসআই-এর আন্ডারওয়াটার আর্কিওলজি উইং। বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই দল গুজরাটের দ্বারকাধীশ মন্দির উপকূলে ও বেট দ্বারকায় সমুদ্রের নিচে হারিয়ে যাওয়া ৪ হাজার বছরের পুরনো শহরের সন্ধান করবে। এই প্রথম মহিলা ডুবুরি-বিজ্ঞানীরাও এই কাজে হাত লাগিয়েছেন। সমুদ্র গর্ভে দেশের ঐতিহ্যশালী ও সাংস্কৃতিক পরম্পরা কী ছিল, তারই খোঁজ শুরু হয়েছে।

    দুই দশক পর ফের অনুসন্ধান

    ২০০৫ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে শেষবার খননকার্য চালানো হয়েছিল দ্বারকা এবং বেট দ্বারকা অঞ্চলে। প্রায় দুই দশক পর, এবার ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষার আন্ডারওয়াটার আর্কিওলজি উইং-এর একটি দল, সমুদ্রের নীচে চলে যাওয়া প্রাচীন বাণিজ্য নগরীর রহস্য উন্মোচন করতে ডুব দিচ্ছেন গুজরাট উপকূলবর্তী আরব সাগরে। বিভিন্ন সময়ে পাওয়া নিদর্শন থেকে মনে করা হয়, এই অঞ্চলে প্রায় ৪০০০ বছর পুরনো এক বন্দর-শহর ছিল। যেখানে বিভিন্ন দেশের জাহাজ আসা-যাওয়া করত। এই রহস্য ও কৌতূহলের নিরসন করতেই গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (প্রত্নতত্ত্ব) অধ্যাপক অলোক ত্রিপাঠীর নেতৃত্বে এএসআই-এর পাঁচ প্রত্নতাত্ত্বিকের একটি দল দ্বারকার উপকূলে জলের নীচে ডুব দিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছেন। দলে রয়েছেন তিন মহিলা— অপরাজিতা শর্মা, পুনম বিন্দ এবং রাজকুমারী বারবিনা। দলের পঞ্চম সদস্য হলেন সহায়তা করেছেন এইচ এ নায়েক।

    কৃষ্ণের কর্মভূমি

    পুরাণে বর্ণিত সপ্তপুরীর অন্যতম দ্বারকা। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, ডুবে যাওয়া প্রাচীন শহর দ্বারকা ছিল কৃষ্ণের কর্মভূমি। লোকশ্রুতি অনুযায়ী, শ্রীকৃষ্ণের দেহাবসানের পরই সূচনা হয় কলিযুগের। আর তখনই দ্বারকা বিলীন হয়ে যায় সমুদ্রগর্ভে। মথুরা থেকে দ্বারকায় এসে কৃষ্ণ নতুন করে যদুবংশ স্থাপন করেছিলেন। গুজরাটের প্রভাসেই দেহত্যাগ করেন কৃষ্ণ। সেই আমলেও দ্বারকার অস্তিত্বের প্রমাণ মেলে। পরে প্রাকৃতিক কারণে সমুদ্র এগিয়ে আসায় অতীতের দ্বারকা বিলীন হয়ে যায় বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

    প্রত্নতত্ত্ব এবং পৌরাণিক কাহিনীর মিল

    প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে, এই ডুবন্ত শহরের কাঠামো এবং কিছু প্রাপ্ত বস্তু হয়তো প্রাকৃতিক গঠন হতে পারে অথবা এগুলির বয়স এবং সময়কাল নিশ্চিত করা কঠিন। তবে, এটি এক বিশাল অধ্যায়ের শুরু যেখানে পৌরাণিক কাহিনী এবং ইতিহাস একত্রিত হতে পারে। ডুবন্ত দ্বারকায় অনেক প্রাচীন বস্তু এবং কাঠামো পাওয়া গিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সুরক্ষা প্রাচীর, পাথরের ব্লক, পিলার, স্টোন অ্যাঙ্কর এবং সেচ ব্যবস্থার অবশেষ রয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত শহরের প্রমাণ হতে পারে, যা প্রাচীন কাল থেকে ঐতিহাসিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। এই অনুসন্ধানগুলির মাধ্যমে আর্কিওলজিস্টরা মহাকাব্য মহাভারতের দ্বারকা শহরের সঙ্গে ঐতিহাসিক দ্বারকার সম্পর্ক সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহের আশা করছেন। এএসআই এর গবেষণা, পৌরাণিক কাহিনী এবং বাস্তবতার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে সহায়ক হবে। যা ভারতের প্রাচীন অতীতকে আরও গভীরভাবে অনুসন্ধান করতে সাহায্য করবে।

    প্রধানমন্ত্রী মোদির দ্বারকা দর্শন

    প্রাথমিক তদন্তের জন্য এএসআই গোমতী ক্রিকের কাছে একটি এলাকা বেছে নিয়েছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বারকাধিশ মন্দির পরিদর্শনের সময় স্কুবা গিয়ার পরে দ্বারকা উপকূলবর্তী সমুদ্রের নীচে ডুব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার পর তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সমুদ্রের গভীরে গিয়ে প্রাচীন দ্বারকা শহর দর্শন করেছি। প্রত্নতাত্ত্বিকরা জলের নীচে লুকিয়ে থাকা দ্বারকা শহর সম্পর্কে অনেক কিছু লিখেছেন। আমাদের ধর্মগ্রন্থেও দ্বারকার কথা বলা হয়েছে।’ তার প্রায় এক বছর পর শুরু হলো নয়া অনুসন্ধান।

    রহস্য উন্মোচন শুরু ১৯৩০ সালে

    দ্বারকার ডুবে থাকা রহস্য উন্মোচনের শুরুটা হয়েছিল ১৯৩০ সালে, হিরানন্দ শাস্ত্রীর হাত ধরে। এর পর ১৯৬৩ সালে জেএম নানাবতী এবং এইচডি সাঙ্কালিয়ার নেতৃত্বে প্রথম বড় মাপের খননকার্য শুরু হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সামুদ্রিক প্রত্নতাত্ত্বিকদের খননকার্যে এই অঞ্চল থেকে প্রচুর প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিল। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে, প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যে একটি প্রাচীন দূর্গের ভিত পাওয়া গিয়েছিল। ইউনেস্কোর মতে, সম্ভবত এর উপরই এক সময় দাঁড়িয়ে ছিল দ্বারকার প্রাচীন নগরীর দেওয়াল। এ ছাড়া বড় বড় পাথরের ব্লক, স্তম্ভ, পাথরের তৈরি নোঙ্গর এবং সেচখালেরও সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। তার আগে ১৯৬৯-৭০ সালে দ্বারকায় সমুদ্রতীরবর্তী অনুসন্ধানে হরপ্পার শেষ থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের অসংখ্য মৃৎপাত্রের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। গত দুই দশকে সামুদ্রিক প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের ফলে বেট দ্বারকা দ্বীপের উপকূলীয় অঞ্চলে বেশ কয়েকটি প্রাচীন আবাসস্থলও আবিষ্কৃত হয়েছে। সামুদ্রিক প্রত্নতাত্ত্বিক এ এস গৌর জানিয়েছেন, এই স্থানগুলি থেকেও প্রচুর পরিমাণে প্রাচীন মৃৎপাত্র পাওয়া গিয়েছে।

LinkedIn
Share