Tag: Electoral

  • Electoral Report Card: বিদায় ২০২৫, কারা হাসল, মুখ থুবড়েই বা পড়ল কারা?

    Electoral Report Card: বিদায় ২০২৫, কারা হাসল, মুখ থুবড়েই বা পড়ল কারা?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: ২০২৫ সালে তুলনামূলকভাবে কম নির্বাচন হলেও ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য পুনর্বিন্যাস দেখা (Electoral Report Card) গিয়েছে। এ বছর মাত্র দুটি বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে-দিল্লি এবং বিহার। এছাড়াও কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও, বছরটি দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তিকেন্দ্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রমাণিত হয়েছে – বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ এবং বিরোধী জোট ‘ইন্ডি’। ২০২৬ সালে নির্ধারিত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী লড়াইয়ের আগে, ২০২৫ সালের রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতির একটি দ্রুত পর্যালোচনা তুলে ধরছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের এই রিপোর্ট কার্ড (Winners Losers)।

    এনডিএ কার্যত একক আধিপত্য (Electoral Report Card)

    ২০২৫ সালে বিজেপি এবং তাদের বৃহত্তর জোট এনডিএ কার্যত একক আধিপত্য বজায় রেখে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। বছরের শুরুতেই বিজেপি বড় সাফল্য পেয়েছে। ২৭ বছর পরে দিল্লিতে ফের ক্ষমতায় ফিরেছে দলটি। আম আদমি পার্টিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়ে বিজেপি অবসান ঘটায় অরবিন্দ কেজরিওয়ালের এক দশকের জমানার। ২০২৫ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বিহারে বিজেপি এবং তাদের শরিক জনতা দল (ইউনাইটেড) অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। ২৪৩ আসনের বিধানসভায় এনডিএ ২০০-র বেশি আসন জিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রতিষ্ঠা করেছে। এই নির্বাচনে বিজেপি একক বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তারা জয়ী হয় ৮৯টি আসনে। শতাংশের বিচারে এর পরিমাণ ৯০ এর কাছাকাছি। বিহারে কোনও শক্তিশালী আঞ্চলিক মুখ না থাকায় বিজেপি মূলত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জাতীয় জনপ্রিয়তার ওপর নির্ভর করে প্রচার চালায়। সেই কৌশলেই হয় বাজিমাত। প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সফল হয় বিজেপি।

    সুদূরপ্রসারী প্রভাব

    ২০২৫ সালে শান্তিতে নির্বাচনী পর্ব মিটলেও, এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। বিজেপি এবং এনডিএ এ বছর নিজেদের রাজনৈতিক আধিপত্য আরও দৃঢ় করেছে। অন্যদিকে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ নিজেদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হয়েছে। ২০২৬ সালের আগে এই নির্বাচনী ফল ভারতের রাজনীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশ (Electoral Report Card) স্পষ্ট করে দিয়েছে বলেই ধারণা ওয়াকিবহাল মহলের। দলটি চলতি বছরে একাধিক উপনির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনেও ভালো ফল করেছে। ফেব্রুয়ারিতে বিজেপি গুরুত্বপূর্ণ মিলকিপুর উপনির্বাচনে জয়লাভ করে। এটি মর্যাদাপূর্ণ অযোধ্যা এলাকা হিসেবে পরিচিত। এই জয়ের মাধ্যমে লোকসভা নির্বাচনে ওই অঞ্চলে যে ধাক্কা খেয়েছিল দলটি, তার কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। নভেম্বরের উপনির্বাচনে ওডিশার নুয়াপাড়া আসনটি বিজেডির হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় বিজেপি (Winners Losers)।

    স্থানীয় স্বশাসন সংস্থার নির্বাচনে বিজেপি

    ডিসেম্বরে মহারাষ্ট্রের স্থানীয় স্বশাসন সংস্থার নির্বাচনে বিজেপি একক বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে আসে—যেখানে তাদের প্রাপ্ত সভাপতি পদ ছিল ১১৭ থেকে ১২৯টি। এর পরেই ছিল একনাথ শিন্ডের শিবসেনা। তারা পেয়েছিল ৫৩–৫৪টি আসন। অজিত পাওয়ারের এনসিপি পেয়েছিল ৩৭টি। কেরালার তিরুবনন্তপুরমে ইতিহাস সৃষ্টি করে বিজেপি। নাগরিক সংস্থার নির্বাচনে রেকর্ড জয়ের পর ভিভি রাজেশ বিজেপির প্রথম নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব (Electoral Report Card) গ্রহণ করেন। এবার দেখা যাক, জয়ের হাসি হাসলেন কারা, মুখ থুবড়েই বা পড়লেন কে কে?

    নিতীশ কুমার

    বন্ধু ও শত্রু দুপক্ষের কাছেই বারবার রাজনৈতিকভাবে শেষ হয়ে গিয়েছেন বলে বিবেচিত হলেও, নিতীশ কুমার আবারও প্রমাণ করলেন যে তিনি ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম বড় ‘সারভাইভার’। ২০২৫ সালে রেকর্ড দশমবারের মতো বিহারের ক্ষমতা ধরে রেখে তিনি সেই নজির গড়েন। জেডি(ইউ) প্রধান হিসেবে তিনি এনডিএকে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে জোরালো জয় এনে দেন এবং নেতৃত্বে পরিবর্তনের দাবির অন্তর্নিহিত চাপ ও তরুণ তেজস্বী যাদবের কঠিন চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও রাজ্যে জনপ্রিয় মুখ হিসেবে উঠে আসেন। ২০২৫ সালে জেডি(ইউ)-র আসনসংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৮৫-তে পৌঁছয়, যা নিতীশকে অ্যান্টি-ইনকামবেন্সি, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত জল্পনা এবং ভোটার ক্লান্তি নিয়ে সব প্রশ্ন উড়িয়ে দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ করে দেয়।

    দেবেন্দ্র ফড়নবিশ

    বিজেপির প্রভাবশালী ব্যাকরুম স্ট্র্যাটেজিস্ট দেবেন্দ্র ফডনবিশ ২০২৫ সালে নীরবে মহারাষ্ট্রে দলের অবস্থান আরও শক্তিশালী করেন, যদিও উপমুখ্যমন্ত্রী শিন্ডের অসন্তোষ প্রকাশের মধ্যে দলের ভেতরে টানাপোড়েন চলছিল। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি ডিসেম্বরের পুরসভা নির্বাচনে বিজেপির জয়ের রূপরেখা তৈরি করেন। এতে বিজেপি ৬,৯৫২টি কাউন্সিলর পদের মধ্যে ৩,৩২৫টি আসন জিতে নেয় এবং ২৮৮টি সংস্থার মধ্যে ১২৯টি সভাপতি পদ দখল করে। সব মিলিয়ে মহাজোট ২০৭টি আসনে জয়ী হয়। শিন্ডে শিবির (Winners Losers) থেকে ভাঙনের আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও ফডনবিশ নাগরিক নির্বাচনের আগে মহাজোটকে ঐক্যবদ্ধ (Electoral Report Card) ও শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখতে সক্ষম হন।

    চিরাগ পাসওয়ান

    এলজেপি (আরভি)-র নেতা চিরাগ পাসওয়ান আবারও বিহারে এনডিএর অন্যতম সবচেয়ে ভরসাযোগ্য মুখ হিসেবে উঠে আসেন এবং জোটের ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেন। কেন্দ্রীয় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পমন্ত্রী পাসওয়ানের দল ২৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৯টিতে জয়ী হয়।

    কেরালায় ইউডিএফ

    কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ কেরালার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে চমকপ্রদ প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে। ইউডিএফ মোট ভোটের ৩৮.৮ শতাংশ পেয়ে শীর্ষে রয়েছে। এই ঐতিহাসিক সাফল্য ক্ষমতার বাইরে থাকা ইউডিএফের জন্য বড়সড় প্রেরণা এবং ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে পিনরাই বিজয়নের নেতৃত্বাধীন এলডিএফের বিরুদ্ধে বাড়তে থাকা অ্যান্টি-ইনকামবেন্সির ইঙ্গিত দেয় (Winners Losers)।

    ইন্ডি জোট

    ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি বিরোধী শক্তি হিসেবে গড়ে ওঠা বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ ২০২৫ সালে কার্যত ভেঙে যায়। জাতীয় রাজনীতির বদলে রাজ্যভিত্তিক অগ্রাধিকার সামনে আসতেই জোটের ভিত নড়বড়ে হয়ে যায়। জোট হিসেবে এবং পৃথকভাবেও বিরোধী দলগুলির জন্য ২০২৫ সালটি ছিল হতাশাজনক, কেরল ছাড়া কোথাও উল্লেখযোগ্য সাফল্য আসেনি।
    চলতি বছরের শুরুতেই আম আদমি পার্টি জানিয়ে দেয়, ইন্ডি জোট শুধুমাত্র লোকসভা নির্বাচনের জন্যই ছিল এবং তারা জোট ছেড়ে বেরিয়ে যায়। পরে বিহার নির্বাচনের আগেই ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা জোট থেকে সরে দাঁড়ায়। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা সম্প্রতি বিরোধীদের অবস্থান সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করে বলেন, ইন্ডি জোট এখন ‘লাইফ সাপোর্টে’। বিহারে ভরাডুবির পর আবারও কংগ্রেসের নেতৃত্বদানের ক্ষমতা (Electoral Report Card) নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, যা ২০২৬ সালের দিকে কঠিন রাজনৈতিক পথের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

    অরবিন্দ কেজরিওয়াল

    আম আদমি পার্টির আহ্বায়কের জন্য ২০২৫ সাল একাধিক দুর্বলতা উন্মোচন করেছে। দীর্ঘ সময় জেলে থাকা, দুর্নীতির অভিযোগ এবং দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সঙ্গে ঘনঘন সংঘাতের জেরে প্রশাসনিক অচলাবস্থা। এর ফলে রাজধানীতে অস্থিরতার একটি ধারণা তৈরি হয়, যা শেষ পর্যন্ত ভোটারদের ‘রিসেট বাটন’ চাপতে প্ররোচিত করে।
    দিল্লিতে টানা দু’টি ভোটে বিপুল জয়ের পর ২০২৫ সালে বিজেপির কাছে ক্ষমতা হারায় আপ। ২০২০ সালের তুলনায় দলটি প্রায় ৪০টি আসন হারিয়ে ব্যাপক ধাক্কা খায়। রাজধানী হাতছাড়া হওয়ার পর, বছর শেষে পাঞ্জাবই আপের একমাত্র রাজ্য যেখানে তারা ক্ষমতায় রয়েছে। ফলে দলের জাতীয় প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে সঙ্কুচিত হয়েছে (Winners Losers)।

    তেজস্বী যাদব

    ২০২০ সালের বিহার নির্বাচনে শক্তিশালী পারফরম্যান্সের পর আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব নিজের ‘বড় মুহূর্তে’র অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু অক্টোবরের নির্বাচনে এনডিএর জোরালো জয়ে তেজস্বী ও তাঁর দল কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়ে। টানা দু’টি নির্বাচনী পরাজয় এখন তাঁর ঝুলিতে, যার ফলে আরজেডির ভিতরে বড় ধরনের পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। কারণ এই দলটি এখনও লালু-রাবড়ি যুগের অন্ধকার অতীতের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে (Electoral Report Card)।

    রাহুল গান্ধী

    যদিও চলতি বছরে কংগ্রেস কোনও বড় নির্বাচনে হারেনি, তবুও এককভাবে বা জোটে রাজ্য নির্বাচন জিততে দলের ধারাবাহিক ব্যর্থতাই রাহুল গান্ধীর অধীনে কংগ্রেসের রাজনৈতিক গতিপথ নির্ধারণ করে চলেছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে আসনসংখ্যা বাড়িয়ে ৯৯-এ পৌঁছে বিরোধী শিবিরে কংগ্রেস একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। এটি দলের জন্য ছিল এক সুবর্ণ সুযোগ। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় কংগ্রেস। ইন্ডি জোট ভেঙে পড়ে, আর বিজেপির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারেননি রাহুল।
    রাহুলের ‘ভোট চুরি’ তত্ত্বও জনমানসে বিশেষ সাড়া ফেলতে পারেনি। সেই কারণেই বিহারের ভোটাররা রাজ্য নির্বাচনে কংগ্রেসকে কার্যত প্রত্যাখ্যান করেছে।

    প্রভাবশালী রাজনৈতিক শক্তি

    বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ ২০২৫ সালে স্পষ্টভাবেই প্রভাবশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বছরটির শুরু ও শেষ- উভয় ক্ষেত্রেই তারা ছিল সাফল্যের শীর্ষে। দিল্লিতে ফের ক্ষমতায় ফেরা থেকে শুরু করে বিহারে নিরঙ্কুশ জয় এবং মহারাষ্ট্রের স্থানীয় স্বশাসন নির্বাচনে শক্তিশালী ফল, সব মিলিয়ে এনডিএর দাপট স্পষ্ট। এর উল্টো দিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডি’ জোট রাজনৈতিক পুঁজি ও জোটগত সমীকরণ—দুই ক্ষেত্রেই বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য প্রত্যাবর্তনের পরেও সেই গতি ধরে রাখতে তারা ব্যর্থ হয়েছে (Winners Losers)। ২০২৬ সালে অসম, কেরল, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচেরিতে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের আগে স্পষ্টতই রাজনৈতিক গতি এনডিএর দিকেই রয়েছে (Electoral Report Card)।

LinkedIn
Share