মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: এতদিন ধরে পাকিস্তান এবং কয়েকটি ভারতবিরোধী সংগঠন এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো কিছু এনজিও — জম্মু-কাশ্মীরের (Kashmir) কবরগুলিকে দেখিয়ে দাবি করত যে, এইসব কবর সাধারণ নাগরিকদের, যাদেরকে ভারতীয় সেনাবাহিনী হত্যা করে গোপনে কবর দিয়েছে। তবে এইসব অভিযোগ আর ধোপে টিকল না (Jammu And Kashmir News)। কারণ, গত ৪ সেপ্টেম্বর ‘সেভ ইয়ুথ ফিউচার ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সংস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এই গবেষণার শিরোনাম ছিল: “কাশ্মীর উপত্যকায় অচিহ্নিত এবং অজ্ঞাত কবর”। এই রিপোর্টটি তারা ছয় বছর ধরে গবেষণা করে তৈরি করেছে, এবং এতে মোট ৪,০৫৬টি কবর চিহ্নিত করা হয়েছে, যা ছড়িয়ে রয়েছে ৩৭৩টি কবরস্থানে। গবেষণায় উঠে এসেছে, এই কবরগুলোর (Kashmir) মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ — প্রায় ৬১.৫% বা ২,৪৯৩টি কবর — বিদেশি জঙ্গিদের, যারা পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীর থেকে অনুপ্রবেশ করে এবং ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে নিহত হয়। অজ্ঞাত পরিচয় জঙ্গিদের অনেকের কাছেই কোনও পরিচয়পত্র ছিল না — ইচ্ছাকৃতভাবেই এমনটা করা হয়, যাতে তাদের সংগঠন ও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা গোপন রাখা যায়। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এটি ছিল পাকিস্তানের যুদ্ধের দায় এড়ানোর এক কৌশল।
এই গবেষণায় পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে কবরগুলোকে
১. অজ্ঞাত পরিচয় বিদেশি জঙ্গি – ২,৪৯৩ জন (৬১.৫%)
২. স্থানীয় জঙ্গি – ১,২০৮ জন (২৯.৮%) – যাদের নাম-পরিচয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে
৩. অচিহ্নিত কবর – ২৭৬টি (৬.৮%) – মূলত বারামুলা জেলায়
4. ভারতের নাগরিক – ৯ জন
5. ১৯৪৭ সালের উপজাতি হামলাকারী – ৭০ জন
ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ওয়াজাহাত ফারুক ভাট কী বললেন?
এই গবেষণা কাশ্মীরের (Kashmir) চারটি সীমান্তবর্তী জেলা — বারামুলা, কুপওয়ারা, বান্দিপোরা ও গান্দেরবালে করা হয়। ফাউন্ডেশনের বক্তব্য অনুযায়ী, এই রিপোর্ট মিথ্যাচার ও ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে প্রমাণ সমেত ভিত্তিক জবাব দিয়েছে। গবেষণার রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ভারতের প্রাক্তন চিফ ইনফরমেশন কমিশনার ওয়াজাহাত হাবিবুল্লা। তিনি বলেন, “এই গবেষণা একটি জটিল সত্যকে প্রমাণ করতে পেরেছে। যা প্রশংসনীয় উদ্যোগ।” ওই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ওয়াজাহাত ফারুক ভাট বলেন, “এই কবরগুলোকে ঘিরে বহু বছর ধরে ভুল ধারণা ও সন্দেহ রয়ে গেছে। আমরা তথ্য-ভিত্তিক গবেষণার মাধ্যমে সমাজে সত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাই।”
ভারতের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র (Jammu And Kashmir News)
এমন অনেক গণকবরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল যেগুলিকে কেন্দ্র করে তথাকথিত ভারত বিরোধী মানবাধিকার সংগঠনগুলো এদেশকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করেছিল (Kashmir)। সংগঠন যেমন — এপিডিপি (জম্মু ও কাশ্মীর নিখোঁজ ব্যক্তিদের আত্মীয়দের সংগঠন), আইপিটিকে (কাশ্মীর বিষয়ক সত্য অনুসন্ধান সংগঠন), এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল — দাবি করেছিল যে এই কবরগুলো নিঁখোজ হয়ে যাওয়া সাধারণ মানুষদের। কিন্তু সেভ ইয়ুথ ফিউচার ফাউন্ডেশন এসব দাবি যে মিথ্যা তা প্রমাণ করেছে।
ভারতের বিরুদ্ধে গণহত্যার গল্প সাজানো হত
সেভ ইয়ুথ ফিউচার ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ডিএনএ টেস্ট বা ফরেনসিক পরীক্ষা ছাড়াই, সব ধরনের মৃত ব্যক্তিকে একই ক্যাটাগরিতে ফেলত এই মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তারা আলাদা করে বোঝায়নি যে কেউ সাধারণ নাগরিক, কেউ স্থানীয় জঙ্গি, আর কেউ বিদেশি জঙ্গি। এভাবেই দিনের পর অপ্রচার করা হয়েছে। জঙ্গি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে পার্থক্য না করে, আগের অনেক মানবাধিকার রিপোর্ট মৃতের সংখ্যা বাড়িয়ে দেখিয়েছে এবং ভারতের বিরুদ্ধে গণহত্যার গল্প সাজিয়েছে।
কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নিয়েকেউ আওয়াজ তোলেনি
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের এক তদন্তে উঠে আসে যে, অনেক কবরেই বিদেশি জঙ্গিদের দেহ রয়েছে, যারা সংঘর্ষে নিহত হয়েছিল। কিন্তু এই সত্যকে উপেক্ষা করা হয়েছিল, কারণ তাদের উদ্দেশ্য ছিল ভারতের বদনাম করা, সত্য খোঁজা নয়। প্রসঙ্গত, বিশ্বজুড়ে এই অচিহ্নিত কবর নিয়ে ভারত বিরোধীরা যত আলোচনা করেছে, তার তুলনায় ১৯৮৯-৯০ সালে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের গণহত্যা নিয়ে কোনও কথা বলা হয়নি। এমনকি যেসব মুসলিম সাধারণ মানুষ জঙ্গিদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের ওপর চালানো হত্যাকাণ্ডও (যেমন: ওন্ধামা – ১৯৯৮, চিট্তিসিংহপোরা – ২০০০, নাদিমার্গ – ২০০৩) এইসব সত্য়ও প্রকাশ পায়নি।
এনিয়ে পাকিস্তান চালাত ছায়াযুদ্ধ
সেভ ইয়ুথ ফিউচার ফাউন্ডেশন স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে এই কবর নিয়ে পাকিস্তান প্রক্সি ওয়ার বা ছায়াযুদ্ধ চালাচ্ছে। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান থেকে সরে যাওয়ার পর পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই কাশ্মীরকে নতুন টার্গেট বানায়। তারা পাকিস্তানি জঙ্গিদের অস্ত্র, অর্থ, প্রশিক্ষণ এবং সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকতে সাহায্য করে। হিজবুল মুজাহিদিন, লস্কর-ই-তৈবা, জইশ-ই-মহম্মদ— এসব সংগঠন কাশ্মীরকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করে। বিদেশি জঙ্গিদের কাছে কোনও পরিচয়পত্র থাকত না, তাই তাদের অনেকেই অপরিচিত জঙ্গি হিসেবে কবর দেওয়া হয়।