Tag: Gajan

Gajan

  • Gajan Utsav: বঙ্গবাসী মেতেছে গাজন উৎসবে! এর প্রচলন কবে থেকে জানেন?

    Gajan Utsav: বঙ্গবাসী মেতেছে গাজন উৎসবে! এর প্রচলন কবে থেকে জানেন?

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: চৈত্র শেষে গাজনের ঢাক (Gajan Utsav)। গ্রাম থেকে শহর শোনা যাচ্ছে ঢাক-ঢোল-কাঁসরের আওয়াজ। বাংলা বছরের শেষ উৎসব হল গাজন। এই উৎসবে দেবাদিদেব মহাদেবের আরাধনায় মেতে ওঠেন ভক্তরা। গাজন উৎসবে জাতপাতের বেড়াজাল টপকে সকলেই সামিল হন শিব আরাধনায়। তবে এর পাশাপাশি আমাদের জেনে রাখতে হবে, গাজন উৎসব ধর্মরাজকে কেন্দ্র করেও হয়।

    গাজন শব্দের উৎপত্তি 

    গবেষকরা জানাচ্ছেন, গাজন (Gajan Utsav) শব্দের উৎপত্তি ‘গর্জন’ থেকে। অনেকের ধারণা, শিব সাধনার সময় সন্ন্যাসীদের হুঙ্কার বা রব থেকেই গাজন শব্দের উৎপত্তি। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণেও মেলে গাজনের উল্লেখ। পুরাণের প্রকৃতিখণ্ডে  লেখা রয়েছে, ‘‘চৈত্র মাস্যথ মাঘেবা যোহর্চ্চয়েৎ শঙ্করব্রতী। করোতি নর্ত্তনং ভক্ত্যা বেত্রবানি দিবাশিনম্।। মাসং বাপ্যর্দ্ধমাসং বা দশ সপ্তদিনানি বা। দিনমানং যুগং সোহপি শিবলোক মহীয়তে।।’’ এর অর্থ চৈত্রে কিংবা মাঘে এক-সাত দশ-পনেরো কিংবা তিরিশ দিন হাতে বেতের লাঠি নিয়ে শিবব্রতী হয়ে নৃত্য ইত্যাদি করলে মানুষের শিবলোক প্রাপ্ত হয়।

    জনশ্রুতি অনুযায়ী, শিবের সঙ্গে কালির বিবাহ সম্পন্ন হয়

    অনেক গবেষকের ধারণা, গাজন (Gajan Utsav) উৎসবে রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব। আবার বাংলার মঙ্গলকাব্যতেও গাজনের উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন ধর্মমঙ্গল কাব্যে রয়েছে এর বিস্তৃত বিবরণ। তবে অন্য একটি অংশের মতে, গা শব্দ বলতে গ্রামকে বোঝায়। আর, জন শব্দ বলতে জনসাধারণকে বোঝায়। অর্থাৎ গ্রামের জনসাধারণের যা উৎসব তাই গাজন। জনশ্রুতি রয়েছে, গাজনই হল সেই দিন যেদিন শিবের সঙ্গে কালির বিবাহ সম্পন্ন হয়। আরও লৌকিক কথা হল, গাজনের সন্ন্যাসীরা হলেন আসলে শিবের বরপক্ষ।

    গাজন উৎসবের তিনটি অংশ

    গাজন উৎসবের তিনটি অংশ থাকে। যথা- ঘাট সন্ন্যাস, নীলব্রত এবং চড়ক। অনেক জায়গাতে গাজন উৎসব (Gajan Utsav) চৈত্র মাসের প্রথম দিন থেকেই ভক্ত সন্ন্যাসীরা পালন করতেন, সেটা অনেক আগেকার কথা অবশ্য। তবে বর্তমান সময়ে চৈত্র সংক্রান্তির সাত দিন আগে অথবা তিন দিন আগে থেকেই কঠোরব্রত পালন করেন সন্ন্যাসীরা। এই সময়ে পরিচ্ছন্ন বস্ত্র ধারণ করে হবিষ্যান্ন গ্রহণ করেন সন্ন্যাসীরা।

    অনেক জায়গাতে মুখোশ নৃত্যের প্রচলন দেখা যায়

    গাজনে অনেক জায়গাতে মুখোশ নৃত্যের প্রচলন দেখা যায়। যা স্থানীয় ভাষায় বোলান গান নামেও পরিচিত। এগুলি বর্ধমান, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, নদিয়া বীরভূম জেলাতে দেখা যায়। এই সময়ে শিব-গৌরী সাজেন অনেকেই। এর পাশাপাশি নন্দী, ভৃঙ্গি ভুত-প্রেত, দৈত্য, দানব প্রভৃতি ধরনের সং সেজেও নৃত্য করেন সবাই (Gajan Utsav)। লৌকিক ছড়া, আবৃত্তি গানও করা হয়। গাজনের ঠিক পরের দিন অনুষ্ঠিত হয় নীল পুজো। গ্রাম্য মহিলারা সন্তানদের মঙ্গল কামনায় এ দিন ফল, আতপ চাল, অর্থ দান করে থাকেন।

    প্রথম চড়ক পুজোর প্রচলন কবে

    পৌরাণিকভাবে গাজন উৎসবের (Gajan Utsav) সূচনা নিয়ে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে। কথিত আছে, বান নামে এক রাজা ছিলেন প্রবল শিব ভক্ত। তিনি দেবাদিদেব মহাদেবকে তুষ্ট করতে কঠোর তপস্যা করেন। শিব ভক্তির সেই সূত্র মেনে এখনও পর্যন্ত সন্ন্যাসীরা চড়কের বান পরেন। কাঁটার উপরে ঝাঁপও দেন। গাজন যেন এক প্রকার কৃচ্ছসাধনের ব্রত পালন করেন সন্ন্যাসীরা। আগুন ঝাঁপ, কাঁটা ঝাঁপ কপাল ফোঁড়া ইত্যাদি দেখা যায়। গবেষকরা বলছেন, ১৪৮৫ সালের রাজা সুন্দর আনন্দ ঠাকুর প্রথম চড়ক পুজোর প্রচলন করেন। সেই থেকেই এই প্রথা মেনে আসছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।

    অন্ত্যজ শ্রেণির নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকেই সন্ন্যাস ধর্ম পালন করেন

    গাজনের এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ভূত-প্রেত, পুনর্জন্ম প্রভৃতি বিষয়। এক সময়ে গাজনের (Gajan Utsav) সন্ন্যাসীরা হুড়কো দিয়ে নিজেদেরকে চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুত বেগে ঘুরতেন। সেসময় ব্রিটিশ সরকার আইন প্রণয়ন করে এই নিয়ম-নীতি বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে বর্তমান সময়ে আজও অনেক স্থানে এই রীতি দেখা যায়। গাজনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, এই সময়ে অন্ত্যজ শ্রেণির নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকেই সন্ন্যাস ধর্ম পালন করতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে আবার দেখা যায় শিব-পার্বতী সেজে কেউ কেউ ভিক্ষা পাত্র নিয়ে বের হন। সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে আতপ চাল, কাঁচা আম, কাঁচা কলা প্রভৃতি সংগ্রহ করেন।

    মালদহ জেলায় গম্ভিরা উৎসব পালিত হয় এই সময়

    পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গ সর্বত্রই গাজন উৎসব দেখা যায়। মালদহ জেলায় গম্ভিরা উৎসব (Gajan Utsav) পালিত হয় এই সময়। কোথাও তা চৈত্র সংক্রান্তি থেকে হয়, কোথাও তা আবার পয়লা বৈশাখে হয়। চার দিন ধরে চলে এই উৎসব। একদিকে যেমন শিব আরাধনা চলে, তেমনই অন্যদিকে দৈনন্দিন জীবনে নানা সমস্যার কথা ভক্তরা দেবাদিদে মহাদেবের উদ্দেশে বলতে থাকেন। সেখানে সমস্ত ধরনের কথাই খোলামেলা বলা হয়। রাজনীতি থেকে জীবনের বঞ্চনা কোনও কিছুই বাদ যায় না। পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলির পাশাপাশি কলকাতাতেও দেখা যায় চৈত্র সংক্রান্তির সং সাজা। দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরে সঙ বের হয়। কলকাতার জেলে পাড়ার সঙ্গে কথাও কম বেশি সকলেই জানেন। এর পাশাপাশি কালীঘাটের নকুলেশ্বর তলা সহ বেশ কিছু জায়গায় আজও গাজন পালিত হয়।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের WhatsappTelegramFacebookTwitter এবং Google News পেজ।

  • Gajan: চৈত্র শেষে গাজন উৎসবে মেতে উঠেছে গ্রাম বাংলা, জানুন এর ঐতিহ্য ও তাৎপর্য

    Gajan: চৈত্র শেষে গাজন উৎসবে মেতে উঠেছে গ্রাম বাংলা, জানুন এর ঐতিহ্য ও তাৎপর্য

    মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: চৈত্র মাসের শেষবেলায় গ্রাম বাংলা মেতে উঠেছে গাজনে (Gajan)। বোলান গানের সুরে দেবাদিদেব মহাদেবের স্মরণ ও পুজো এই বাংলার বহু প্রাচীন রীতি। কত প্রচলিত ছড়া জুড়ে রয়েছে গাজনকে (Gajan) ঘিরে— 

    ‘আমরা দুটি ভাই, শিবের গাজন গাই
    ঠাকুমা গেছে গয়া কাশী 
    ডুগডুগি বাজাই…’

    গাজন (Gajan) শব্দের মানে কী ?

    গবেষকদের মতে, গা শব্দের অর্থ হল গ্রাম। এবং জন মানে জনগণ। বিশ্বাস মতে, এই সময় হর কালীর বিবাহ হয়েছিল। শিব হলেন জনগণের দেবতা। গ্রামের জনগণ সবাই দেবতার বিয়েতে বরযাত্রী যাওয়ার উদ্দেশে সমবেত হন। আবার অন্য একটি মত হল, গাজন (Gajan) শব্দটি এসেছে ‘গর্জন’ থেকে। অনেকে বলেন, সন্ন্যাসীদের হুঙ্কারই শিবসাধনায় গাজন নামে প্রচলিত হয়। বাংলার মঙ্গলকাব্যেও গাজনের উল্লেখ মেলে। ধর্মমঙ্গল কাব্যে রাণী রঞ্জাবতী ধর্মকে তুষ্ট করতে গাজন (Gajan) পালন করেছিলেন বলে উল্লেখ রয়েছে। গাজন বা চরক শুধুই শিবের আরাধনা হলেও এই উৎসব পালিত হয় ধর্মরাজকে ঘিরেও। আর দুই দেবতার পুজোতেই জাতপাতের ভেদাভেদ ভেঙে যে কেউ অংশ নিতে পারে। এটাই বাংলার সংস্কৃতি। নানা ধরণের প্রচলিত লোককথা রয়েছে গাজন (Gajan) নিয়ে। শোনা যায়, শিবভক্ত বান রাজা ইষ্ট দেবতাকে তুষ্ট করতে কঠিন কৃচ্ছ্বসাধনের মধ্য দিয়ে তপস্যা করেন। সেই সূত্র ধরেই চড়কের শিবভক্ত সন্ন্যাসীরা আজও বান ফোঁড়ান, নানা ধরনের ঝাঁপ দেন। যা বেশির ভাগই অত্যন্ত কষ্টের। থাকে নানা অদ্ভূত আচার। জীবনের ঝুঁকিও নেন সন্ন্যাসীরা। বাংলার কোথাও কোথাও গাজনে (Gajan) নরমুণ্ড নিয়ে নাচও দেখা যায়।

    পুরাণেও উল্লেখ রয়েছে গাজনের (Gajan)

    পুরাণেও রয়েছে গাজনের উল্লেখ। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে রয়েছে– ‘‘চৈত্র মাস্যথ মাঘেবা যোহর্চ্চয়েৎ শঙ্করব্রতী। করোতি নর্ত্তনং ভক্ত্যা বেত্রবানি দিবাশিনম্।। মাসং বাপ্যর্দ্ধমাসং বা দশ সপ্তদিনানি বা। দিনমানং যুগং সোহপি শিবলোক মহীয়তে।।’’ অর্থাৎ, চৈত্র মাসে কিংবা কোনও শিবভক্ত যদি মাঘ মাসে এক, সাত, দশ, পনেরো কিংবা তিরিশ দিন বেতের লাঠি হাতে নিয়ে নৃত্য করেন তবে তাঁর শিবলোক প্রাপ্ত হয়।

    গাজন (Gajan) উৎসব

    গ্রামবাংলার পাশাপাশি শহরাঞ্চলেও এখন গাজনের ছবি দেখা যায়। চৈত্র মাসের শুরু থেকেই ধ্বনিত হয় ‘ভোলে বাবা বুড়ো শিব…’। গৃহীরাই সন্ন্যাস নেন। সারাদিন সন্ন্যাসীরা পথে পথে ঘুরে ভিক্ষা করেন। দিনভর উপবাসের পরে ভিক্ষায় মেলা চাল, সবজি রান্না করে খান।

    বিভিন্ন প্রান্তে গাজনের আঞ্চলিক বৈচিত্র দেখা যায়। কোথাও মুখোশ নৃত্য, কোথাও প্রতীকী শিবলিঙ্গ মাথায় নিয়ে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে পথ পরিক্রমা করেন ব্রতধারী সন্ন্যাসীরা। অনেক জেলায় আবার এই সময়ে কালীনাচ দেখা যায়।

    গাজন অংশ হিসেবেই পরের দিন পালিত হয় নীল পুজো। সনাতন সংস্কৃতি মেনে সন্তানের মঙ্গল কামনায় গাজন সন্ন্যাসীদের ফল, আতপচাল, ও অর্থ দান করেন মায়েরা। অনেকে গোটা দিন উপবাস করে শিবের পুজো দেন। কেউ দিনের শেষে সাবু মাখা খান, কেউ রুটি, লুচি। আর চৈত্রের একেবারে শেষ দিনে উদ্‌যাপিত হয় চড়ক। গাজনতলায় হয় চড়কগাছের পুজো। চড়কগাছ মানে একটি লম্বা কাঠের দণ্ড। তার উপরে অনেকটা উঁচুতে আংটায় ঝুলে থাকা জনা সন্ন্যাসীরা ক্রমাগত ঘুরপাক খান। এ দৃশ্য খোদ কলকাতাতেও দেখা যায়।

     

    দেশের খবর, দশের খবর, সব খবর, সবার আগে পেতে ফলো করুন আমাদের FacebookTwitter এবং Google News পেজ।

LinkedIn
Share