মাধ্যম নিউজ ডেস্ক: “কোনও করিডরের কাজ করা যাবে না।” বাংলাদেশের (Bangladesh Army) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান শান্তিতে নোবেল জয়ী মহম্মদ ইউনূসকে এই বার্তাই দিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। মায়ানমারের জন্য প্রস্তাবিত মানবিক (Myanmar) করিডর নিয়ে তাঁর যে আপত্তি রয়েছে, তা ফের মনে করিয়ে দেন তিনি। তিনি এও বলেন, “ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অনির্বাচিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার করিডর বা কোনও বিদেশি দেশের কাছে বন্দর হস্তান্তরের মতো বড় কোনও সিদ্ধান্তও নিতে পারে না।”
করিডর চালুর প্রস্তাব (Bangladesh Army)
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সেই সময় তিনি বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছিলেন মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছতে দেশটির ভেতর দিয়ে একটি করিডর চালু করার জন্য। মায়ানমারের এই রাজ্য দখল করেছে আরাকান আর্মি। তার পর থেকে রাখাইনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এই আরাকান আর্মি বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়। রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবের প্রস্তাবে সম্মতি জানায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। তবে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে জানায়, এ ধরনের সিদ্ধান্ত সব তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই নিতে হবে। বিএনপি এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছে। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তারা আর একটি গাজা হতে চায় না (Myanmar)।
কী বললেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান
বুধবার ঢাকার সেনাবাহিনী সদর দফতরে কর্তাদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সাধারণত, সেনাপ্রধান ২০ থেকে ২৫ মিনিট বা সর্বোচ্চ আধ ঘণ্টার বক্তব্য দিয়ে থাকেন। তবে বুধবার তিনি প্রায় এক ঘন্টা ২০ মিনিট সময় কথা বলেছেন। সেই সময়ে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, “নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার আগে পর্যন্ত কোনও মানবিক করিডর অথবা কোনও বিদেশিকে কোনও বন্দর দেওয়া হবে না। তা করতে হবে বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই। এখানে জাতীয় স্বার্থ দেখতে হবে। জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে করতে হবে।” তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে—এমন কিছুই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মেনে নেবে না। তাঁর বক্তব্য সমর্থন করেন বাহিনীর কর্তারা। সেনানিবাসে অফিসারদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখার সময় সেনাপ্রধান বলেন, “ইউনূস সরকার দেশের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীকে অন্ধকারে রাখছে।” এর পরেই তিনি বলেন, “কোনও করিডরের কাজ করা যাবে না।”
বিএনপির বক্তব্য
প্রবল আন্দোলনের (Bangladesh Army) জেরে গত বছরের ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে বাংলাদেশ ছাড়েন আওয়ামি লিগ নেত্রী শেখ হাসিনা। তার পরেই ক্ষমতার রাশ যায় ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকার দীর্ঘ সময় ধরে দেশ চালাতে পারে না। তাদের প্রধান দায়িত্বই ছিল দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা। কিন্তু ইউনূস সরকার ক্রমাগত নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করে চলেছে। প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগির সরাসরি ইউনূস সরকারকে তোপ দেগে বলেছিলেন, “এই নির্বাচন পিছানোর নেপথ্যে বড় কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে (Myanmar)।” এবার ইউনূসকে হুঁশিয়ারি দিলেন সেনাপ্রধানও। জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।” তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছিল সুষ্ঠভাবে স্বাধীন নির্বাচনের আয়োজন করতে।
সাফ কথা সেনাপ্রধানের
সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে আলোচনায় সেনাপ্রধানের উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। আলোচনায় সেনাপ্রধানকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি কেন রাতে সেনা সদস্যদের নিয়ে মিটিং করেন? সেনাপ্রধানকে এ ধরনের প্রশ্ন করার কারণে, তিনি বুধবার অফিসারদের ফোরামে বেশ উষ্মা প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে, ইউনূস সরকারের প্রতি নিজের ক্ষোভও ব্যক্ত করেন। অন্তর্বর্তী সরকার যাতে সেনার কাজে নাক না গলায়, তাও এদিন স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারে কিছু বিদেশি রয়েছেন, যাঁরা দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করছেন এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতি খারাপ হলে তাঁরা তাঁদের দেশে ফিরে যাবেন।” তাঁর ইঙ্গিতের অভিমুখ যে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের দিকে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না (Bangladesh Army)। এই খলিলুর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা। গত বছর নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই সেনাপ্রধানের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এই খলিলুরই মায়ানমার করিডরের পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছিলেন। সংবিধানে ব্যাপক সংশোধনের ডাক দিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। সে প্রসঙ্গে সেনা প্রধান বলেন, “বড় ধরনের কোনও পরিবর্তন কাম্য নয়।” সেনা প্রধান মনে করিয়ে দেন, আগামীদিনে বাংলাদেশ কোন পথে এগিয়ে যাবে, তা নির্ধারণ করার অধিকার আছে সাধারণ মানুষের দ্বারা নির্বাচিত সরকারের।
বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত!
উল্লেখ্য যে, ইউনূস সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কন্টেনার টার্মিনালের কার্যকলাপ একটি বিদেশি পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের হাতে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশের শিপিং উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “প্রশাসন টার্মিনাল পরিচালনার জন্য একজন বিদেশি অপারেটর নিয়ে আসার পক্ষে।” অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে, বিএনপি এবং জামাত ইসলামি-সহ একাধিক রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের ১২ দলের জোটও সাফ জানিয়েছে, কোনও অবস্থায়ই নিউ মুরিং কন্টেনার টার্মিনাল (Bangladesh Army) বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। চট্টগ্রাম বন্দর কোনও বিদেশি সংস্থাকে লিজ দিলে, সেটাও মেনে নেওয়া হবে না (Myanmar)।